এক সেলিব্রেটি সারাজীবন ভালো ভালো কাজ করেছেন। গ্রহের ভবিষ্যতের কথা ভেবে কী করেননি তিনি! সবাই তাকে এক নামে চেনেন। মনে করুন তার নাম স্যান্ডার। আমাদের গ্রহের একজন দুর্দান্ত বুদ্ধিমান হোমো সেপি। একদিন তিনি আকস্মিক একটি ভুল করে ফেলেন। আর আপনারা সবাই সবকিছু ভুলে গিয়ে অকৃতজ্ঞের মতো তার এটমের চেয়ে ক্ষুদ্র ভুলটির সমালোচনা করতে শুরু করলেন! পরিসংখ্যান অনুযায়ী তার জীবনের ৯৯ শতাংশ কাজই ভালো। আমাদের কী উচিত নয় এক শতাংশ খারাপ চিন্তাকে উপেক্ষা করে তার ৯৯ শতাংশ ভালো চিন্তা নিয়ে কথা বলা?
এক্ষেত্রে আমার উত্তর হলোঃ না, না এবং না!
ভুলেও এ কাজটি করা যাবে না! ঐ এক শতাংশ ভুল নিয়ে গঠনমূলক সমালোচনা শুরু করুন! তাকে মাত্র ১% ভুলের জন্য যৌক্তিকভাবে আক্রমণ করুন। মনে রাখবেন, শিম্পাঞ্জির সাথে আমাদের জেনেটিক্যাল গড়মিল মাত্র ১.৫% কিন্তু এ ১.৫% গড়মিলের কারণে শিম্পাঞ্জি মঙ্গল গ্রহে পার্সিভারেন্স পাঠাতে পারেনা কিন্তু আমরা পারি, সে আগুন কী সেটাই এখনো ভালোভাবে বুঝতে পারেনি কিন্তু আমরা কোয়ান্টাম কম্পিউটার নিয়ে কাজ করছি। যাক এবার আমি আমার বাস্তবভিত্তিক বিজ্ঞানসম্মত যুক্তিটি উপস্থাপন করছি, কেনো কোনো সেলিব্রেটির ৯৯% ভালো চিন্তার জন্য এক শতাংশ খারাপ চিন্তাকে উপেক্ষা করা যাবে না!
আমার যুক্তি হলো, স্যান্ডার যে এক শতাংশ ভুল করেছে সেটা নিয়ে সমালোচনা করা উচিত এজন্যই যে নয়তো ১ শতাংশ ভুল সে বা আমরা এ গ্রহের কেউই কোনোদিন সংশোধন করতে পারবোনা। যার মানে হলো মাত্র ১ নাম্বারের জন্য স্যান্ডার পরিপূর্ণ ভালো মানুষ হওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে। তাকে আমাদের সমালোচনার মাধ্যমে সহযোগিতা করা উচিত! তার এ বিপদের সময় তার পাশে আমাদের দাঁড়ানো উচিত? তাই নয় কি? আপনি কি তার ১ শতাংশ ভুল চিন্তাকে প্রশ্রয় দিয়ে তাকে ১০০ শতাংশ ভালো মানুষ হওয়া থেকে কয়েক বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে সরিয়ে রাখতে চাইছেন? ভালোকে সম্মান জানানো ভালো আর মন্দের সমালোচনা করা তার চেয়েও আরো অনেক ভালো। নয়তোবা তার প্রতি আপনি বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতারণা করলেন, তাইনা? আপনি একজন ষড়যন্ত্রকারী। এ ব্যাপারটা কিন্তু আফ্রিকার জঙ্গলে বসবাসরত আমাদের পূর্বসূরিরা খুব ভালো করেই জানতেন, আর এজন্য এখনো আমরা সেলিব্রেটিদের ভালো দিকের তুলনায় খারাপ বা নেগেটিভ দিক নিয়ে বেশি সংবেদনশীল হয়ে উঠি। ? ( যাক এখানেও অনেক বিবর্তনীয় জটিলতা আছে, ক্ষমা করুন, সেদিকে যাচ্ছিনা। )
মনে করুন, রিচার্ড ডকিন্স অথবা কার্ল স্যাগান একটি ভুল করেছেন। আপনার এক্ষেত্রে কি করা উচিত? মনে রাখবেন, অতি-ক্ষুদ্র ভাইরাসও একটি সিস্টেমকে ডেস্ট্রোয় করে দিতে পারে। স্যাগান একজন সেলিব্রেটি , তার চিন্তার ফ্রিকোয়েন্সি একটি বিরাট কমিউনিটির সাথে তিনি ভাগ করেছেন আর ইন্টারনেট এটাকে মিলিয়ন মানুষের নিকট নিয়ে গেছে, তিনি এখন একটি গ্লোবাল ব্রেন। তার ৯৯ শতাংশ শুদ্ধতা দ্বারা প্রভাবিত হয়ে যদি মানুষ তাকে ক্ষমা করে দেয় তবে কমিউনিটির মধ্যে এই এক শতাংশ ভুল খুব দ্রুত বিস্তার লাভ করবে! জিনপুলে অনেক সময় ১০ টা ভালো জিনের সাথে একটা খারাপ জিন একত্রিত হলে ঐ খারাপ জিন ডেস্ট্রোয় না হয়ে ৯ টি ভালো জিনের প্রভাবে টিকে যায়। তার ৯৯ ভাগ ভালো কথার সাথে একটা ভাইরাল কথা ঠিক এ পদ্ধতিতে সমাজকে আক্রমণ করবে। ব্যন্ডওয়াগন ইফেক্ট ক্রিয়েট হবে যেমন- প্রবীর ঘোষ হাজার হাজার প্রথাবিরোধী কথার মধ্যে একটি ভাইরাল থট ঢুকিয়ে দিয়েছেন যে সমকামীতা মানসিক রোগ! আপনি কি তার ৯৯ ভাগ ভালো চিন্তাকে প্রশ্রয় দিয়ে এক শতাংশকে ভুলে যাবেন? যখন সেটি ৯৯ শতাংশের সাথে লুকিয়ে গোপনে টিকে যাবে তার দায় কি আপনি গ্রহণ করবেন?
আমরা যতই তার ৯৯ ভাগ ভালো চিন্তা নিয়ে আলোচনা করবো, প্রশংসা করবো ততই ১ ভাগ খারাপ চিন্তার বংশবৃদ্ধি সহজ হয়ে যাবে কারণ এত এত মিলিয়ন ভালো চিন্তার মধ্যে কখন যে এক শতাংশ ভাইরাস/ পয়জন সমাজকে গ্রাস করে ফেলছে কেউ সেটা বুঝতেও পারবে না । কেননা কেউ এটা নিয়ে মাথা ঘামায় নি ! মোহাম্মদ মানুষকে যা বলেছে মানুষ তাই মেনে নিয়েছে, জিন, ফেরেস্তা, হুর অথবা গেলমান সবকিছু কারণ সে সেলিব্রেটি এবং সে অনেক ভালো কাজও করেছে, যদি তার ১০০ ভাগই খারাপ কাজ হতো তবে তার ১ শতাংশ মিথ্যা বা খারাপ কাজ আজ সমাজকে গ্রাস করার সুযোগ পেতোনা (আমার এ কথাগুলো অপরিশীলিত কারণ যুক্তির অপজিটে যুক্তি দিতে যেয়ে আমি ব্যাপারটা জেনারেলাইজড করেছি, মোহাম্মদের ৯৯ ভাগ কাজ মোটেও ভালো নয়, স্যরি)। আজকের আধুনিক বিজ্ঞানের যুগেও বড় বড় সেলিব্রেটিরা কোরান তেলোয়াত করে সমাজকে শোনায় আর তারপরই তাদের বক্তব্য সমাজে গ্রহণযোগ্যতা পায়! কোরানের প্রতিটি বক্তব্য বৈজ্ঞানিকভাবে মিথ্যা প্রমাণিত হলেও এদেশের বড় বড় বিজ্ঞানীরা এ মিথ্যা কথাগুলো তেলাওয়াত করেই সমাজে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করে! যেমন বক্তব্যের শুরুতে, আসসালামুয়ালাইম, বক্তব্যের মাঝখানে আলহামদুলিল্লাহ অথবা ইনশাআল্লাহ ইত্যাদি। এ সকল শব্দের মাধ্যমে তারা সমাজের প্রতিটি মানুষের ব্রেনের সাথে এন্ট্যাংগেল হয়ে যায়! এদেশের কত কোটি সেলিব্রেটির নাম বলবো আপনাকে যারা ধর্মকে ব্যবহার করেনি? সেলিব্রেটিরা মিথ্যা বললেও সেটা ঈশ্বরের উক্তি হয়ে যায় তার জীবন্ত প্রমাণ তো প্রভাবশালী ধর্মগুলোই? তাই না? আর তাই অবশ্যই একজন সেলিব্রেটির ১ শতাংশ ভুলকেও ক্ষমা করা উচিত নয়!
মনে রাখবেন, সেলিব্রেটি একজন ব্যক্তি নয়, সে একটি কমিউনিটি। তাই তার ভালো গুণ নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি মন্দ গুণ নিয়েও কথা বলা উচিত। একজন হ্যালিক্সে কমেন্টে করে বলেছিলো, আমাদের প্রবীর ঘোষের ১ শতাংশ ভুলের উপর গুরুত্ব দেয়া উচিত কি না? তার প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে এ আর্টিকেল লেখা! আমি তাকে বলেছি, আমার সন্দেহ কাজ করছে যে আপনি কোন হিসেবে তার ৯৯ ভাগ চিন্তাকে ভালো চিন্তা বা কথা বলছেন! তার অনেক চিন্তাই ভুল কিন্তু ঐ যে ৯৯ ভাগ ভালো চিন্তাকে মূল্যায়ন করতে করতে এখন তার ভুল চিন্তাগুলোও কারো চোখে পড়ছেনা! হোয়াট এ কম্প্রোমাইজ!

আমি আমার অত্যন্ত খারাপ একটা উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য আপনার সাথে ৯৯ ভাগ ভালো কাজ করতে পারি, যেনো আমার প্রতি আপনার বিলিফ জন্ম হয়, আপনি যদি বিশ্বাসের পাহাড়ে চাপা পড়ে আমার ভালো কাজগুলোর দিকেই তাকিয়ে থাকেন তবে কখন যে আপনার চোখ দুটি মহাকাশের সাথে বেধে আমার লোক আপনার পেছন দিক থেকে পিস্তল ঠেকিয়ে আপনার জীবন মার্ডার করে দেবে সেটা আপনি টেরও পাবেন না। গরীব ও অসহায় মানুষের সাথে কোনো মাস্টারমাইন্ড এভাবেই খেলে। মনে করুন, আপনারা পাহাড়ে বাস করেন, আমি আপনাদের পাহাড় থেকে নামাতে চাই , তবে সেটা ভালো ব্যবহারের মাধ্যমে, কোনোপ্রকার বোমাবাজি করে নয় । এ জন্য আমি আপনাকে পাহাড়ের নিচে, ভালো ভালো খাবার, স্কুল, কলেজ, হসপিটার এবং বিশাল বিশাল এপার্টম্যান্ট বানিয়ে দিতে পারি। KADAMBAN মুভিতে এমনটাই করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল একদল পাহাড়িকে নিচে নামিয়ে পাহাড়ের বিশাল ট্রেজার লুট করার জন্য কারণ তাদেরকে অন্য কোনো উপায়ে নামানো সম্ভব হচ্ছিলো না। যখন পাহাড়িরা অস্বীকার করে তখন তাদের উপর চলতে থাকে হামলা!
আপনি যদি আমার তৈরি করে দেয়া স্কুল, কলেজ, ভার্সিটি অথবা হসপিটাল ইত্যাদি ভালো ভালো কর্মের দিকে তাকিয়ে থাকেন তবে আপনি বুঝতেই পারবেন না কখন আমি পরিকল্পিত ভাবে আপনাকে পাহাড় থেকে নামিয়ে দিয়েছি, আপনি শুধু খাবেন, টিভি দেখবেন, বিশাল ইউনিভার্সিটিতে পড়াশুনা করবেন আর ঘুমাবেন ! যদিও সেটা আমার ৯৯ ভাগ ভালো কাজের মধ্যে মাত্র একটা খারাপ কাজ ছিল। আপনি প্রশ্ন করতে পারেন, আরেহ, আমি যদি ইউনিভার্সিটিতে পড়াশুনা করি তাহলে তো আমি তাদের চালাকি একদিন ঠিকই বুঝতে পারবো! মিথ্যা কথা! মোটেও বুঝবেন না! মুসলিম ছেলেমেয়েরা জাতিসংঘের মহাসচিব হয়ে গেলেও ঘুরেফিরে সেই, তাব্বাতইয়াদা আবি লাহাবের মধ্যেই পড়ে থাকে! একজন লেখক যত শতাংশই ভালো কাজ করুক না কেনো, একজন রাষ্ট্র প্রধান যতই মহান হোক না কেনো তার ভুল দিকগুলোকে কখনোই ক্ষমা করা যাবেনা। আমি এটাই বুঝি। এটাই আমার জীবন দর্শন! যদি আমার ভুল হয় তবে আমাকেও সংশোধন করে দিন তবে সেটার মধ্যে থাকুক নীতি, বিবেক ও মানবতাবোধ। অমানবিক ভাবে আপনি আমাকে শুধরাতে আসলে আমিও আপনাকে ভদ্র ভাবে শুধরে দেব, আজ না হয় আগামীকাল!
আরো পড়ুনঃআমার কলম সাইকিয়াট্রিস্ট!