Can't find our books? Click here!

জীবন বর্তমান! মহাবিশ্বের অতীত এবং এর ভবিষ্যত বর্তমান মুহূর্তেই অস্তিত্বশীল। আর এ বর্তমানকে অতিক্রম করে আমাদের মস্তিষ্ক অতীত অথবা ভবিষ্যতে প্রবেশ করতে পারে না। তাই লাপ্লাস বলেছিলেন, ‘মহাবিশ্বের ভবিষ্যতকে প্রেডিক্ট করার জন্য অতীতের মেমরির প্রয়োজন নেই, তুমি বর্তমান মুহূর্তকে জানলেই মহাবিশ্বের ভবিষ্যতকে প্রেডিক্ট করতে পারবে। আর হাইপারস্পেস বর্তমানের সম্ভাবনায় অনুপ্রাণিত একটি মুক্তচিন্তার মঞ্চ! আমরা অভিজিতের অসমাপ্ত চিন্তার প্রতিনিধি। যার মস্তিষ্কের নিউরন থেকে মুক্তমনার মতো একটি গ্রাউন্ড ব্রেকিং মহাজাগতিক ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে! যিনি মুক্তমনার মধ্য দিয়ে আমাদের মস্তিষ্কে বিশ্বাস নিরপেক্ষ চিন্তা গঠন করেছেন এবং বিজ্ঞানভিত্তিক ভাবে আমাদের মহাবিশ্বকে ভাবতে শিখিয়েছেন। যিনি আমাদের শিখিয়েছেন নির্ভয়ে অনন্তের চোখে চোখ রেখে দাঁড়াতে…

সূর্য একটি নক্ষত্র, মহাকাশের সূর্যের মতো অজস্র নক্ষত্র আছে, যে নক্ষত্রগুলি থেকে পৃথিবীতে আলো আসতে মিলিয়ন মিলিয়ন আলোকবর্ষ সময় লাগে। আমরা যখন রাতের বেলায় আমাদের শরীরের দিকে তাকাই, তখন মিলিয়ন বছর অতীতের আলোকতরঙ্গ আমাদের শরীরের তথ্য নিয়ে ইলেক্ট্রিক্যাল পালস আকারে আমাদের চোখে প্রবেশ করে, আমরা মিলিয়ন বছর অতীতের ওয়েভ ফাংশন দিয়ে আমার আমিকে দেখি! অভিজিৎ হয়তো আমাদের পৃথিবীতে নেই কিন্তু এন্ড্রোমিডা গ্যালাক্সিতে এখনো অভিজিৎ আছে। যা হোক, কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে হয়তো বা মুক্তমনা থেকে হাইপারস্পেস একটু আলাদা; তবে সেটা মুক্তমনার সাথে আমাদের আদর্শিক পার্থক্য তৈরি করে না। ধর্মীয় ভাইরাস আমাদের সমস্ত রাষ্ট্রের মনস্তত্বকে দখল করেছে , আর এ ভাইরাসের ভিত্তিতে সমাজে একটি আলাদা মন তৈরি হয়েছে যারা যুক্তি ও বিজ্ঞানের চিরবিরোধী, যারা মুক্তচিন্তাকে সমর্থন করে না, যারা মানুষের চিন্তার স্বাধীনতাকে অস্বীকার করে।

ডেনিয়েল ডেনেট তার GOD VIRUS গ্রন্থে দেখিয়েছেন, ধর্মগুলি ভাইরাসের মতোই মানব মস্তিষ্কে কাজ করে। একজন ব্যক্তির মস্তিষ্কে যদি ক্রিশ্চিয়ান গড ভাইরাস সংক্রমিত হয় তবে সে মুসলিমদের পছন্দ করে না। প্রতিটি গড ভাইরাস টিকে থাকার জন্যে একে অন্যের সাথে প্রতিযোগিতা করে। যেমন মুসলিম ভাইরাস আক্রান্ত একজন ব্যক্তিকে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং দর্শন সকল কিছুর ভেতর দিয়ে এটা বোঝানো হয় যে তাদের ধর্ম অনন্য ও শ্রেষ্ঠ, তাদেরকে তাদের স্বতন্ত্রতা বজায় রাখা উচিত। আর এ স্বতন্ত্রতা বজায় রাখার জন্যে আধুনিক মুসলিম ভাইরাসরা একইসাথে বিবর্তনকে এবং কোয়ান্টাম মেকানিক্সের মতো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারগুলিকে গ্রহণ করে; আবার একইসাথে ধর্মের স্বতন্ত্রতাকে রক্ষা করার জন্যে প্রতিটি হোস্টের মস্তিষ্কে অ্যান্টিবডি তৈরি করে। প্রত্যেকটি ভাইরাস তাদের মস্তিষ্কে বিদ্যমান অন্যান্য গড ভাইরাসদের বিরুদ্ধে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্মভাবে প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করছে, কখনো বিজ্ঞানের আশ্রয়ে আবার কখনো বা নিরপেক্ষতার আশ্রয়ে! একুশ শতকের ঈশ্বর ভাইরাস অনেক দুরন্ত ও দুর্দান্ত, আর তাদেরকে প্রতিহত করার জন্যে জ্ঞান-বিজ্ঞানের দিক থেকে আমাদেরকেও উন্নত হতে হবে।

কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে আমাদের আজকের সমাজের মুক্তমনারা সেই ভাইরাল হোস্টদের তুলনায় জ্ঞান-বিজ্ঞানে অনেক পিছিয়ে! এর কারণ মুক্তচিন্তকরা যখন সমস্ত পৃথিবীর মানুষকে ধর্ম নিরপেক্ষতা এবং বিজ্ঞানমনস্ক চিন্তার গঠনে অনুপ্রাণিত করছিল; তখন একদল তথাকথিত ধার্মিক নিজেদেরকে জ্ঞান-বিজ্ঞানে অনেক এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিল, যাতে করে তারা তাদের ভেতর একপ্রকার নাস্তিক্যবাদ তৈরি করতে পারে, যাতে করে বিজ্ঞান ও দর্শনের মাধ্যমে গড ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তিদের সংক্রমিত করতে পারে, আর তাদেরকেও শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে পারে! দৃশ্যত তারা এক্ষেত্রে একটি কমন সাইকোলজিকে সার্ভাইভাল টুলস হিসেবে ইউজ করছে! প্রতিটি ধর্মীয় ভাইরাস করোনার মতো পৃথিবীতে একটি কমন অ্যালগোরিদম তৈরি করে যেটাকে আমরা সেল্ফ সিমিলারিটি বলতে পারি। মিচিও কাকু তার Future of the Mind গ্রন্থে লিখেছিলেন, ‘যখন আমরা অন্য কারও মস্তিষ্কে Self Similarity দেখি তখন আমাদের মস্তিষ্কের মিরর নিউরন লাইট আপ হয় এবং আমরা সহানুভূতি অনুভব করি! আমরা যারা মুক্তচিন্তায় বিশ্বাসী, আমরা যারা মনে করি যে আমাদের মুক্তচিন্তা করার অধিকার আছে, আমরা যারা মনে করি যে বিজ্ঞান ও দর্শনের ভিত্তিতে আমার ইউনিভার্সের মডেল তৈরি করার অধিকার আমার আছে, আমরা যারা মনে করি মহাবিশ্বের একজন হিসেবে আমি কোটি বছরের চিন্তার প্রথা ভেঙে ফেলতে পারি, আমরা যারা মনে করি যে শ্রডিঙ্গারের তরঙ্গ সমীকরণ অথবা মেটা ইউনিভার্সকেই আমরা আমাদের মহাবৈশ্বিক ধর্ম মনে করতে পারি, তারা। হ্যাঁ, আমাদের জন্যেও একটি কমন সাইকোলজির প্রয়োজন আছে, আমাদেরও নিজস্ব সমাজ প্রয়োজন আছে, আমরাও চাই আমাদের ক্লোন তৈরি হোক, Self similarity তৈরি হোক যার মাধ্যমে আমরা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা মুক্তচিন্তকদের নিয়ে একটি প্লানেটারি ব্রেন সার্কিট গঠন করতে পারব এবং উন্মোচন করতে পারব সত্যিকার জগতের মুখোশ!

আমার জন্যে হাইপারস্পেসের স্বপ্ন ছিল অনেক প্রাচীন, অভিজিত রায়ের মৃত্যুর পরই আমি হাইপারস্পেসের স্বপ্ন দেখি। কিন্তু বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে আমি আমার স্বপ্নকে অবদমিত রাখতে বাধ্য হয়েছি। ২০২০ সালের ১০ ই নভেম্বর বিপ্লব রায় আমার সে স্বপ্নকে আবার তার হৃদয়ের স্পর্শে জাগিয়ে তুলেছেন। মাত্র দুদিনের সংক্ষিপ্ত আলোচনার পর আমরা এ গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তটি গ্রহণ করি।

আর আমাদের এ নতুন পথ চলায় আমার পাশে নিরলসভাবে ছিলেন- এরিকা, মিনহাজ, সাবুদ্দিন, নুরুজ্জামান, মোজাম্মেল, অনু, ফার্সি, রিফাত, দিপু, জয়নাথ, অমীয় এবং লামিয়া সহ আরও অনেকে…!

হাইপারস্পেসের ঐতিহাসিক এ মুহূর্তটির সাথে শেষ পর্যন্ত তাদের নাম জড়িত রেখে তারা তাদের স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা এবং প্রবল ইচ্ছাশক্তির যে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তার জন্য হাইপারস্পেস তাদের নাম সবসময় মনে রাখবে, তাদের মনে রাখবে এদেশের সকল মুক্তমনা এবং বিজ্ঞানমনস্ক মস্তিষ্ক!

Image result for অভিজিত রায়

– এন্ড্রোস লিহন [CEO | HyperSpace]

উৎসর্গ: অভিজিৎ  রায়