Can't find our books? Click here!
নারীর চোখে নীলনদ...

নারীর চোখে নীলনদ…

নারীর চোখ এত অতল কেনো? কেনো তার চোখের রেটিয়ায় সমস্ত মহাবিশ্ব ডুবে যায়? কেনো, মুহূর্তেই চোখে চোখ পড়লে একটা কিছু ঘটে যায়! হেলেন ফিশার তার Anatomy of love ; A Natural History of Matings, Marriage and Why we stray  নামক বইটি’তে চমকপ্রদভাবে ডারউইনের বিবর্তনের আলোকে নারীর চোখের গভীরতা অবিশ্বাস্য সব গবেষণা ও তথ্য উপাত্তের উপর ভর করে তুলে ধরেন। এ চোখ নিয়ে তৈরি হয়েছে অজস্র গান, কবিতা, উপন্যাস। নারীর চোখের গভীরতা মাথা নষ্ট করে দিয়েছিলো আজ থেকে ৪ মিলিয়ন বছর পূর্বে আমাদের আদিম প্রাইমেটদের।
 
কিন্তু কী আছে এ চোখের মাঝে? মূলত, কোর্টশিপের পূর্বে আই কনট্যাক্ট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এই আই কন্ট্যাক্টের গুরুত্ব সম্পর্কে পৃথিবীর প্রায় সকল বিশেষজ্ঞ একমত। নারীর চোখের অন্তহীন রহস্য বোঝার পূর্বে আমাদের প্রথমে বোঝা উচিত আই কন্ট্যাক্ট কেনো এতটা গুরুত্বপূর্ণ? সায়েন্টিফিক আমেরিকাতে ২০১৬ সালের পহেলা জানুয়ারী মেলিন্ডা ওয়েনার মোয়ার একটি আর্টিকেল প্রকাশ করেন, সেখানে বলা হয় আই কনট্যাক্ট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সামাজিক সিগনাল। একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, ৫ দিন বয়সী একজন শিশু একদল লোকের মধ্যে অন্যদের তুলনায় সে ব্যক্তির দিকে সবচেয়ে বেশি তাকায় যে তার সাথে সরাসরি আই কন্ট্যাক্ট  করে। ওহিয়ো বিশ্ববিদ্যালয় এর সাইকিয়াট্রিস্ট জেমস রিথ বলেন, সামাজিক যোগাযোগের সময় আই কনট্যাক্ট কিছু শক্তিশালী তথ্য দেয়।
 
 
ইউএস ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিনের NCBI জার্নালে ২২ মে ২০১৯ সালে Socially Communicative Eye Contact and Gender Affect Memory শিরোনামে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়। (Sophie N. lanthier, Michelle Jarick, Mona J Zhu, Crystal S.J. Byun and Alan Kingstone)। এখানে বলা হয়, একজন ব্যক্তির ছবির তুলনায় তার প্রকৃত উপস্থিতি আমাদের মস্তিষ্কের মেমোরিতে অনেক বেশি প্রভাব বিস্তার করে, ব্যক্তির প্রকৃত উপস্থিতি আমাদের জ্ঞানীয় ধারাকে বদলে দেয়। সামাজিক যোগাযোগের দৃষ্টিকোণে, চোখের দৃষ্টি মেমোরির উপর সরাসরি প্রভাব বিস্তার করে। তাদের ল্যাবরেটরির একটি এক্সপেরিমেন্টে নারী ও পুরুষ ইনভেস্টিকেটর কখনো চোখ চোখ রেখে এবং কখনো না রেখে কিছু শব্দ পড়ে শুনিয়েছিলেন। এ এভারেজ আই কন্ট্যাক্ট শুধু নারী পার্টিশিপেন্টদের শব্দ সনাক্তকরণ প্রক্রিয়াকে উন্নত করেছে। এরপর নারী ইনভেস্টিকেটর তার চোখে চোখ রাখার সময়ের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি করেন , পূনরায় পূর্বের সেই ফলাফলটিই প্রতিধ্বনিত হয়। এখান থেকে প্রমাণিত হয় নারীরা পুরুষের চেয়ে ইনভেস্টিকেটরের আই কনট্যাক্টকে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করে। PubMd, The Eyes have it : The neuroethology, Function and Evolution of Social Gaze  নামক একটি আর্টিকেলে এমরি এনজি বলেন, চোখ হলো সামাজিক যোগাযোগের কেন্দ্রীয় মাধ্যম, যা আমাদের আবেগ ও মানসিক সম্পদের তথ্য বহন করে যা আমরা অন্যের আচরণ ও প্রবণতা বোঝার জন্য ডিকোড করি। The Meaning of Five Pattern একটি আর্টিকেলে Ellworth P. ross বলেন, সামাজিক যোগাযোগের সময়, মানুষ অন্যের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকার সহযাত প্রবণতা প্রকাশ করে। ১৯৭৫ সালে ক্লেইনকি, ১৯৯০ সালে ক্যাম্পবেল তাদের গবেষণাপত্রে বলেন, একজন ব্যক্তির অন্য আর একজনের চোখের ভেতর প্রবেশ করার ক্ষমতা তার বোধশক্তিকে উন্নত করে। ২০০৩ সালে ন্যাচার ও PUBMeD জার্নালে  Gaze bias both reflect and Influence Preference      নামক একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয় সেখানেও বলা হয়, অন্যের চোখের দিকে তাকালে আমাদের আন্ডারেস্টেডিং লেভেল আপডেট হয়। সর্বশেষ ২০০৬ সালে, টিপলার, Long Term gaze Cueing effect: evidence for several of prior states of attention from memory নামক একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন, সেখানেও বলা হয় চোখের দৃষ্টি মেমোরির উপর প্রভাব বিস্তার করে, অন্যের চোখ পড়ার প্রবণতা আপনার বোধশক্তি বাড়িয়ে তোলে। ২০০৯ সালে, সেঞ্জু ও জনসন এমএইস Atypical eye Contact in autism: Model, Mechanism and Development নামক একটি গবেষণাপত্রে বলেন, চোখে চোখ রাখার অক্ষমতা ত্রুটিযুক্ত সামাজিক যোগাযোগ তৈরি করে এবং এটি অটিজম স্পেক্ট্রাম ডিস-অর্ডার এর সাথে সম্পৃক্ত। গুগল স্কলারে ব্যারন ও কোহেন ১৯৯৫ সালে, Mindblindness an Eassy on Autism and theory of Mind নামক একটি আর্টিকেল প্রকাশ করেন, যেখানে বলা হয়, চোখের স্থির দৃষ্টি একটি সামাজিক মনোযোগের সুত্র যা এর সাথে জড়িত নিউরাল ম্যাকানিজম প্রসেস করে। এখান থেকে আমরা একটা হাইপোথেসিস দাঁড় করতে পারি যে , কোর্টশিপের পূর্বে নারী ও পুরুষ যদি প্রোপার আই কন্ট্যাক্ট না করে তবে অটিজম আক্রান্ত রোগীর সাথে তাদের সম্পর্ক গড়ে ওঠার সম্ভাবনা থাকে।
 
 
 
২০১২ সালে Laidlaw KE এবং কিংস্টোন A New look at Social attention; orienting Eyes is not under Volition Control নামক একটি আর্টিকেল প্রকাশ করেন যেখানে বলা হয়, এ সকল স্টাডি দেখায় যে, মানুষ অন্য আর একজন মানুষের চোখের দিকেই সবচেয়ে বেশি তাকায়, মুখের অন্যান্য ফিচারগুলোর দিকে তেমন কোনো গুরুত্ব না দিয়েই। ২০১২ সালে Monsters are People too   নামক একটি গবেষণাপত্রে একই জার্নালে লেভি জে. ফোউলসম্যান ও কিংস্টোন একই ফলাফল প্রকাশ করেন। ২০০৩ সালে প্রকাশিত Eye Remember you : the Effect of Gaze direction on the Face Recognitions in Children and adult  এবং ২০০৬ সালে প্রকাশিত Eye Remember you two: Gaze direction Modulates face Recognition নামক একই জার্নালে প্রকাশিত দুটি আলাদা আলাদা প্রবন্ধে বলা হয়, সরাসরি স্থির চোখে চোখ রেখে কথা বললে ছবি ও শব্দের মেমোরি উন্নত হয়। একই বিষয়ে ২০১৩ সালে Social Communication impairs working Memory Performance নামক আরো একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়! ১৯৮০ সালে Google Scholer এ প্রকাশিত Effect of teacher’s Gaze on Children’s Story Recall শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রবন্ধে বলা হয়, শিক্ষকের স্থির চোখ ছাত্রের একাডেমিক পারফরম্যান্স পরিবর্তন করে দেয়। সেখানে আরো বলা হয়, ক্লাসরুমে শিক্ষার মান বেড়ে যায় যখন ইনস্ট্রাক্টর স্থির চোখে ছাত্রের দিকে তাকায়। ২০১৬ সালের একটি গবেষণাপত্রে বলা [ Helminen, 2016] হয়, একজন পুরুষ যখন চোখে চোখ রেখে অন্য আর একজন পুরুষকে কোনো গল্প বলে তখন তারা সেটা দীর্ঘ সময় মনে রাখতে পারে কিন্তু মেয়েদের মধ্যে এ প্রবণতা কম।
 
 
 
How many other animals make eye contact with their young? | Baby animals, Animals, Animals beautiful

 

 
 
 
 
এরকম অজস্র সহস্র আর্টিকেল ও গবেষণাপত্র পাওয়া যায় শুধুমাত্র চোখের দৃষ্টির উপর। আমরা নারীর চোখের গভীরতা ও পুরুষের আকর্ষণের মনস্তত্ব ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আই কন্ট্যাক্ট সম্পর্কে অনেক বিস্তারিত আলোচনা করেছি। এবার ক্রমশ আমরা চোখের আরো অনেক গভীরে প্রবেশ করবো।
 
 
 

BRAIN FODDER একটি ওয়েবসাইটে The Scientific Evidence Behind the Power of the Gaze নামক একটি আর্টিকেল প্রকাশিত হয়। আর্টিকেলটি অনেকটা এভাবে শুরু হয়েছিলো, মানুষের চোখকে বলা হয় আত্মার জানলা, এটি চিন্তাশীল ও সৃষ্টিশীলকে সম্মোহিত করেছে, এ চোখ ঈশ্বরের চোখ, এটি সত্য ও প্রজ্ঞার চোখ এবং এটি ক্ষমতা! কবিরা সব সময় প্রেমিকের চোখের গুণকীর্তন করেছে, আর সায়েন্স ফিকশন চোখের দৃষ্টি দিয়ে মানুষকে করতে চেয়েছে নিয়ন্ত্রণ! সেখানে বলা হয়, দুটি মানুষের ইন্টারেকশনে চোখ খুব গুরুত্বপূর্ণ, চোখ একে অপরের প্রতি বিশ্বাস বাড়ায়, দুজন একে অপরের প্রতি সন্তুষ্ট হয়। আই কন্ট্যাক্ট শুধু আমাদের মধ্যে নয়, অন্যান্য মামেলদের মধ্যেও প্রচলিত। স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে যারা সর্বপ্রথম অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীদের সাথে আই কন্ট্যাক্ট করতে পারে তারা হয় অন্যদের থেকে প্রভাবশালী ও ক্ষমতাবান, যে সকল প্রাণী পরিপূর্ণভাবে আই কন্ট্যাক্ট করতে পারেনা, তারা হয় সব সময় নিম্ম

সারির।

 
 
বিহেভিয়ারেল সাইকোলজি ম্যাক্স প্লাঙ্ক ইনস্টিটিউটের আইবল-আইবেসফেল্ড মহিলাদের ফ্লার্টারিং আচরণের মধ্যে এক অদ্ভুত প্যাটার্ন দেখতে পান। তিনি একটি সিক্রেট ক্যামেরা নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রে ভ্রমণ করেন, এ ক্যামেরার মাধ্যমে সরাসরি সামনের দিকে হেঁটেই তিনি তার চারপাশের মানুষের ছবি ধারণ করতে পারতেন। তিনি সামোয়া, পাপুয়া, ফ্রান্স, জাপান, আফ্রিকা ও এমাজোনিয়া সহ বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্র ভ্রমণ করেন, তিনি অসংখ্য ফ্লার্টারিং সিকোয়েন্স ধারণ করেন। এখান থেকে নারীদের স্বাভাবিক যৌন আচরণের একটি ইউনিভার্সাল প্যাটার্ন বেরিয়ে আসে। ভিন্ন ভিন্ন এলাকার মানুষ হওয়া সত্ত্বেও তাদের প্রত্যেকের মধ্যে যৌন আচরণের একটি Same Sequence of Expression দেখা যায়। প্রথমে, একজন নারী তার প্রশংসাকারীর তাকিয়ে হাসেন তারপর তার চোখের পাতা ফেলেন, তার মুখটাকে নিচে থেকে পাশে নিয়ে যায় এবং সামনের দিকে তাকায়। বারবার সে তার হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলে, উত্তেজনার সাথে মুখ  চেপে হাসে,  যেনো সে হাতের তালুর পেছনে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। এ ধরণের সিকোয়েন্সিয়াল ছিনালি আচরণ এতটাই স্বতন্ত্র যে, আইবল আইবেসফেল্ড বুঝতে পেরেছিলেন, এটা তাদের সহযাত।
 
 
 
 
 
 
যুগ যুগ পূর্বে নারীদের কোর্টশিপের ইঙ্গিতগুলো বিবর্তিত হয়েছিলো সেকচুয়াল এবং রোমান্টিক ইচ্ছার একটি সিগনাল হিসেবে। অন্যান্য গামবিট যা মানুষ ব্যবহার করে তা সম্ভবত বিবর্তিত হয়েছে আমাদের পূর্বসূরি অতীত থেকে। লাজুক দৃষ্টি হলো একটি ঈশারা যেখানে নারীরা মাথা নাড়ায় এবং লজ্জার দৃষ্টিতে তার প্রার্থীর দিকে তাকায়। নারী পোসিয়ামরাও ঠিক একই কাজ করে, তাদের প্রার্থীর দিকে এগিয়ে যায়, নিজের চোয়াল স্পর্শ করে এবং সরাসরি তার দিকে তাকায়। আবেদনময় মনোযোগ সৃষ্টির জন্য প্রাণীদের মধ্যেও নারীরা বারবার তাদের মাথা নাড়ায়। অন্যান্য প্রাণীদের মতো মানুষও কোর্টিং এর সময় একই আচরণ প্রদর্শন করে। আপনি যদি দেখেন যে, আপনার বস অফিসে হেলান দিয়ে বসে আছে, মাথার পেছনে হাত দুটো জড়ো করেছে, কুনুই উঁচু করেছে এবং বুক প্রসারিত করেছে, তখন কী হবে? সম্ভবত সে তার ডেস্কের পেছনে আসবে, আপনার দিকে এগুবে, হাসবে, পেছনে চাপ দেবে এবং তার শরীরের উপরের অংশ আপনার দিকে উঠিয়ে দেবে। যদি তাই হয়, তবে সে অবচেতনে আপনার উপর তার প্রভাব খাটাচ্ছে। আপনি যদি নারী হয়ে থাকেন তবে সে আপনার সাথে কোর্টিং করবে। প্রাণীদের মধ্যে এ রকম আচরণ দেখা যায়। প্রাণী জগতে “Chest Thrust” একটি অত্যন্ত সাধারণ পোস্ট্রাল মেসেজ। কডফিশ তাদের মাথাকে স্ফিত করে এবং তাদের ফেলভিক পিন প্রসারিত করে। সাপ, ব্যাঙ ও টোড তদের শরীর স্ফিত করে। এন্টিলোপ ও ক্যামিলিওন তাদের আকার প্রসারিত করে। অশ্ব হরিণ তাদের শিং প্রদর্শন করার জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠে। বেড়াল ও প্যাঁচাও স্ফিত হয়। গলদা চিংড়ি তার পায়ের ঢগার উপর দাঁড়ায় এবং তাদের উন্মোক্ত থাবা প্রসারিত করে, গরিলা তার বুকে আঘাত করে, মানুষ শুধু তার বুক প্রসারিত করে। কিন্তু এতসব কিছুর মধ্যে স্থির দৃষ্টি সম্ভবত হিউম্যান কোর্টিং এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্ফূর্তি। নারী এবং পুরুষ মাঝেমাঝেই সম্ভাব্য সঙ্গিনীর দিকে তিন সেকেন্ডের মতো স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে যতক্ষণ না তাদের চোখের পাপড়ি প্রসারিত হয়__ যা এক্সট্রিম ইন্টারেস্টের একটি লক্ষ্মণ। তারপর তারা তাদের চোখের চোখের পাপড়ি ফেলে এবং দূরে তাকায়।
 
 
 
 
 
 
হেলেন ফিশার তার Anatomy of Love গ্রন্থের The Copulatory Gaze নামক একটি অংশে বলেন, স্থির দৃষ্টি আমাদের মস্তিষ্কের সবচেয়ে প্রিমেটিভ অংশকে ট্রিগার করে, দুটি ব্যাসিক ইমোশনের মধ্যে যেটিকে প্রধান মনে করা হয় সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া অথবা পশ্চাদপসরণ। আপনার চোখে যে চোখ দুটি স্থির হয়ে আছে সেগুলোকে আপনি উপেক্ষা করতে পারবেন না। আপনি হেসে ফেলবেন এবং তার সাথে আলাপচারিতায় মেতে উঠবেন। আপনি এদিক সেদিক তাকাবেন, দরজার কিনারায়। কিন্তু প্রথমে আপনি কানের লতি টান দেবেন, আপনার স্যুয়েটারটি টেনেটুনে অযথাই ঠিক করে নেবেন, হাই তুলবেন, আপনার চোখের চশমাটি নড়েচড়ে উঠবে এবং আরোকিছু অর্থহীন অস্থিতিশীলতা দেখা যাবে আপনার মধ্যে, এটি হলো স্থান পরিবর্তনের ঈশারা, আপনার উত্তেজনা প্রশমন করার জন্য যখন আপনি আপনার মনকে প্রস্তুত করবেন এই ডাকে সাড়া দেয়ার জন্য, হয়তো আপনি প্রস্থান করবেন অথবা কোর্টশিপের খেলা খেলতে আপনি সেখানে অবস্থান করবেন।
 
 
 
এ দৃষ্টিকে ইকোলজিস্টরা যৌনসঙ্গমের স্থির দৃষ্টি বলে বা Copulatory Gaze যা আমাদের ইভোল্যুশনারী সাইকির গভীরে খোচিত। শিম্পাঞ্জি ও অন্যান্য প্রাইমেটরা তাদের শত্রুর দিকে স্থির দৃষ্টি স্থাপন করে, হুমকি দেয়ার জন্য; তারা গভীর চোখে একে অপরের দিকে তাকিয়ে থাকে যুদ্ধের পর সংগতির জন্য। স্থির দৃষ্টি যৌনমিলনের সাথেও সম্পৃক্ত যেমনটি বোনোবো ও পিগমি শিম্পাঞ্জির মধ্যে দেখা যায়__বানর হলো একটি সাধারণ শিম্পাঞ্জির সাথে সম্পর্কযুক্ত, ক্ষুদ্র কিন্তু স্মার্ট। এদের কিছুকিছু মানবীয় সৃষ্টি, যারা আজ সান ডিগো চিড়িয়াখানায় বাস করে, যেখানে নারী পুরুষরা নিয়মিত যৌনসঙ্গম করে। কিন্তু ইন্টারকোর্স শুরু হওয়ার পূর্বে, এই কাপলরা একে অন্যের দিকে তাকিয়ে কয়েকটি মুহূর্ত অপচয় করে। আই কন্ট্যাক্টের উপর  বিবিসি এক দূুর্দান্ত আর্টিকেল প্রকাশ করে Why meeting another’s gaze is so powerful – BBC Future। 
 
 
 
 
 
বেবুনও প্রতিটি কোর্টশিপে আই কন্ট্যাক্ট করে। এ প্রাণীটি আমাদের মানবীয় ইভ্যোলুশনারী বৃক্ষ থেকে আজ থেকে ২৫ মিলিয়ন বছর পূর্বে পৃথক হয়ে গেছে আলাদা একটি শাখায়, এখনো এ সাদৃশ্যতা বিদ্যমান। একদিন বিকেলে, একটি মেয়ে বেবুন, থালিয়া নামক একটি পুরুষের নজরে পড়ে। এলেক্স তার দিকে তাকায়। তারা ছিলো পঞ্চাশ ফিট দূরে। সে তার দিকে তাৎক্ষণিক তাকালো। তাই, নারী বেবুনটিও তার দিকে তাকালো, যতক্ষণনা সে তার দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয়। সে আবিষ্টভাবে তার পায়ের তালু আর একটির সাথে স্পর্শ করলো। যতবার মেয়েটি তার দিকে তাকায় সেও তাকায়; প্রতিবার তার দিকে তাকিয়ে থাকে, মেয়েটি তার পায়ে দলাইমলাই করে। অবশেষে এলেক্স থালিয়াকে জড়িয়ে ধরে, তার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকায়, মেয়েটি তার চোখের  দৃষ্টিশক্তি এলেক্সের চোখে প্রদান করে।
 
 
 
মূহুর্তে, সে তার মাথার পেছন দিকে কান দুটো সোজা করে৷ তার চোখের পল্লব সংকোচিত করে এবং নিজের ঠোট চুষতে থাকে, বেবুনের সমাজে যা ফ্রেন্ডশিপের উচ্চতর অবস্থা। থালিয়া হিমায়িত হয়ে যায়। তারপর এক মুহূর্তের জন্য, সে তার চোখে তাকায়, এই সম্প্রসারিত আই কন্ট্যাক্ট সংঘটিত হওয়ার পর, এলেক্স তার দিকে এগিয়ে আসে। যে বিন্দুতে, থালিয়া তাকে যৌন উত্তেজনা দিতে থাকে, সেকচুয়াল লাইয়েসন ও ফ্রেন্ডশিপ প্রায় ৬ বছর মজবুত থাকে।
 
 
 
 

হেলেন ফিশার তার “দি এনাটমি অব লাভ” গ্রন্থে লেখেন, হৃদপিণ্ড, যৌনি বা ব্রেন নয়- যা রোমান্সের প্রাথমিক অর্গান, স্থির দৃষ্টি, মাঝেমাঝে হিউম্যান স্মাইলকেও ট্রিগার করে! কিন্তু কেনো কোর্টশিপের জন্য হৃদপিন্ড, যৌনি বা মস্তিষ্ক কোনোটাই তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়?

 
 
 
 
কেনো চোখই গুরুত্বপূর্ণ? কী আছে এ চোখের মাঝে! আমি এ আর্টিকেলটি নারীর চোখের রহস্য উন্মোচন করার জন্য প্রসারিত করেছি ঠিকই কিন্তু নারীরাও পুরুষের চোখের গভীরতায় হারিয়ে যায়। কোর্টশিপে আইন কনট্যাক্ট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু কেনো এটা, যৌনতার সাথে চোখের সম্পর্ক কী, কেনো একজন পুরুষ নারীর চোখের মায়াচক্রে বন্দী হয়ে যায়? Vice Versus)। Psychology Today নামক একটি সায়েন্স ম্যাগাজিনে পিএইচডি রবার্ট পি. বুরিস একটি আর্টিকেল প্রকাশ করেন ” Why the eye is So central to Human Attraction? ” শিরোনামে। যেখানে ব্যাখ্যা করা হয়েছিলো কেনো চোখ হিউম্যান এট্র্যাকশনের কেন্দ্রীয় অঙ্গ? আমরা সাধারণত একজন নারীর শরীরের ভেতর এক্স-রে করে দেখিনা সে সুস্থ্য বা অসুস্থ্য, সে আকর্ষণীয় বা নয় বা আমরা তার ব্রেন অথবা যৌনি পর্যবেক্ষণ করিনা, আমরা পর্যবেক্ষণ করি তার চোখ। একজন ডাক্তার যেমন শরীরে অস্ত্র চালানো ব্যতীতই চোখ ও জিহবা ইত্যাদি দেখে পেশেন্টের আভ্যন্তরীণ শারীরিক পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা করেন ঠিক তেমনি আমরাও কী নারীর চোখের ভেতর কোনোকিছু পর্যবেক্ষণ করে বুঝতে চাই? বিবর্তন কী আমাদের মস্তিষ্কের মধ্যে নারীদের চোখ পর্যবেক্ষণ করে তাদের সামগ্রিক শরীরের একটি মানচিত্র তৈরি করার ইঞ্জিনিয়ারিং ক্ষমতা প্রদান করেছে?  প্রশ্ন আসতে পারে, আমরা জানি যে একজন পুরুষ নারীর নিতম্ভ, চেহারা অথবা ভয়েসের প্রেমে পড়তে পারে! এমনকি সুড়োল স্তনের প্রতি দূর্বল হতে পারে কিন্তু চোখের প্রতি এত আলাদা করে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে কেনো? Live Science নামক একটি সায়েন্স নিউজে  New theory on why men love breasts নামক একটি আর্টিকেল প্রকাশ হয়, সেখানে বলা হয় ব্রেস্ট বিবর্তিত হয়েছে এমন একটি উপায়ে যেনো এটি পুরুষদের মস্তিষ্ককে এমনভাবে সিগনাল প্রদান করতে পারে,  যার মাধ্যমে পুরুষটি বোঝে সে তরুণ ও নিউট্রিশনালি উপকারী। গবেষণায় দেখা গেছে পুরুষরা নারীর বড় স্তন ও উচ্চ কোমর থেকে নিতম্বের অনুপাত পছন্দ করেন কারণ এটি তাদের মস্তিষ্কে নারীদের উর্বরতার সিগনাল প্রদান করে।
 
 
 
 
 
 
2004 সালে Proceedings of the Royal Society B এমনকি আবিষ্কার করেন যে, যে সকল নারীর বড় স্তন তাদের রয়েছে উচ্চমাত্রিক হর্মোন ইসট্রাদিওল মিড সাইকেল যা উর্বরতা বৃদ্ধি করে! আমরা জানি যে সন্তান জন্মের সময় অতিরিক্ত চাপ সহ্য করার জন্য নারীর নিতম্বের আদর্শ আকার প্রয়োজন এবং সন্তানকে পর্যাপ্ত নিউট্রিশন দেয়ার জন্য প্রয়োজন উন্নত স্তন। আর এগুলো নিশ্চিত করার জন্য আমাদের আদিম পূর্বসূরীরা নারীর হিপ ও ব্রেস্টের উপর নির্ভর করতো। যেগুলোকে সেকচুয়াল হেলথ ইন্ডিকেটর হিসেবে ব্যবহার করে তারা নারীদের সন্তান জন্মদান ও তাকে লালন পালনের ক্ষমতা অনুধাবন করতো! আর তারই একটি অভিযোজন হিসেবে আমাদের মস্তিষ্কে নারীর ব্রেস্ট ও হিপের প্রতি এক প্রকার আকর্ষণ কাজ করে। কিন্তু প্রশ্ন হলো – চোখের ভেতর কী এমন রহস্য লুকিয়ে আছে? যে জন্য তাকে নিয়ে এত কবিতা, এত গান, এত এত শিল্প?
 
 
 
 
আমরা প্রায়শ শুনে থাকি, ডাইলেটেড চোখের পাপড়ির কথা, কলেজের এক অভদ্র বেওয়ারিশ ছাত্র কোনো এক উঠতি বয়সী মেয়ের দীর্ঘায়িত চোখের পাপড়ির প্রেমে পড়ে সভ্য হয়ে গেছে? সে এখন মহাপুরুষ! গান লেখে, গিটার বাজায় এবং তাকে এখন বেশিবেশি শিশুকিশোরদের সাথে অথবা বৃদ্ধাশ্রমে দেখা যায়! সে কোন এক অচেনা মেয়ের পাপড়ির দৈর্ঘে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছে! সে শেষ, সে আর নেই! সাইকোলজি টুডে’ তে বলা হয়, মূলত , যখন একজন মানুষ তার চোখ জাগ্রত করে , তখন চোখের কেন্দ্রের কালো বৃত্তটি প্রশস্ত হয়ে উঠে। এ ধরণের চোখের জাগরণ খুবই আকর্ষণীয়, বিশেষ করে পুরুষদের কাছে, এমনকি নারীদের ক্ষেত্রেও যদিও আমরা সচেতনভাবে এটি খেয়াল করিনা। চোখের সাদা অংশ স্কলেরা, এই সাদা অংশ দেখেও যে কেউ আকর্ষণ ও স্বাস্থ্যের অবস্থা বিচার করতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, যাদের চোখের স্কলেরা লাল না হয়ে, সাদা, তাদের ২৫ শতাংশ সুখী, ৪২ শতাংশ স্বাস্থ্যবান এবং ১৭ শতাংশ অনেক বেশি আকর্ষণীয়।
 
 
 
চোখের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ অংশের মধ্যে অন্যটি হলো আইরিশের রঙ। ২০১১ সালে, ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার ইরভিনের ড্যারেন পেশেক এবং তার সহকর্মীরা লিম্বাল রিং নিয়ে কাজ করেন; কিছুটা ডার্ক রিং যা অনেক লোকের আইরিশের চারপাশে চলাচল করে, যদি আপনি ডার্ক চোখ দেখেন, তবে এটি সনাক্ত করা কঠিন হয়ে যাবে কিন্ত আপনি যদি সবুজ বা নীল চোখ দেখেন আপনি একে আইরিশের প্রান্তে দেখতে পাবেন, যেখানে এটি স্কলেরার সাথে মিট করে,  এমনকিছু যা আপনার আইরিশ থেকেও কালো। পেশেক তার এক সমীক্ষায়, ৪৫ জন অংশগ্রহণকারীকে ৮০ জোড়া চেহারার সেট দেখালেন, প্রতি জোড়ার মুখ দেখতে সমান, শুধু একটি পার্থক্য ছাড়া যে, একজনের রয়েছে অন্ধকারাচ্ছন্ন লিম্বিক্যাল রিং এবং অন্যদের আছে ইউনিফর্ম কালারের আইরিশ।
 
 
 
 

তিনি আবিষ্কার করেন যে, পুরুষ এবং মহিলা দুজনেই, ডার্ক লিম্বাল  রিং এর চেহারা পছন্দ করে। সাম্প্রতিক ইউনিভার্সিটি অব সাউথার্ন মিসিসিপিতেও আরো একটি গবেষণা পরিচালিত হয়, ঈশ ব্রাউন ও ডোনাল্ড স্যাকো ঠিক সে ফলাফলই আবিষ্কার করেন যা পেশক আবিষ্কার করেছিলেন। রাউন এবং স্যাকো, ১৫০ জন নারী ও পুরুষের উপর গবেষণা পরিচালনা করেন, মূল ফটোগ্রাফ এবং উজ্জ্বল লিম্বাল রিং প্রদর্শনের মাধ্যমে। এই ফলাফল আমাদের প্রদর্শন করে যে, প্রশস্ত লিম্বাল রিং, মূলত, চেহারাকে স্বাস্থ্যকর করে তোলে।

 
 
 
 
কিন্তু এ আর্টিকেলটি নারীর চোখের গভীরতা বর্ণনা করার উদ্দেশ্য নিয়ে শুরু হলেও সাইকোলজি টুডেতে সম্পূর্ণ বিষ্ময়কর একটি বিষয় বেরিয়ে আসে। মূলত, লিম্বিক্যাল রিং একটি হেলথ ইন্ডিকেটর। নারীরা মনে করে যে সকল পুরুষের লিম্বিক্যাল রিং অনেক বেশি ডার্ক তারা, অন্যান্য পুরুষ থেকে স্বাস্থ্যবান। পুরুষরা নারীদের লিম্বিক্যাল রিং থাকুক বা না থাকুক সেটাকেই স্বাস্থ্যকর মনে করে না পুরুষের কাছে নারীদের লিম্বিক্যাল রিং খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। গবেষণায় দেখা যায় নারীদের লিম্বিক্যাল রিং থাকুক বা না থাকুক তাদের স্বাস্থ্য অভিন্ন থাকে কিন্তু যে সকল পুরুষের লিম্বিক্যাল রিং নেই তাদেরকে মেয়েরা স্বাস্থ্যকর মনে করেনা!
 
 
 
 
 
কিন্তু কেনো লিম্বাল রিং এতটা গুরুত্বপূর্ণ যখন আমরা স্বাস্থ্য ও আকর্ষণ নিয়ে কথা বলি?  Limbal Ring এর সাথে স্বাস্থ্যের সম্পর্ক কী? বেশ, যখন আমরা তরুণ থাকি তখন আমাদের লিম্বাল রিং হয় ডার্ক যখন বয়স হয় তখন এটি নীল হয়ে যায়। মূলত, লিম্বাল রিং পুরুষের হৃদপিন্ড ও সার্কুলেটরি সিষ্টেমের সুস্থ্যতার মেসেজ প্রদান করে, যাদের লিম্বাল  রিং ডার্ক, তাদের মধ্যে Phospholipid Accumation এর মাত্রা কম থাকে, যেটি কার্ডিওবাস্কুলার রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। ব্রাউন ও স্যাকো দেখান যে, নারীরা দীর্ঘকালীন সম্পর্কের ক্ষেত্রে পুরুষের লিম্বাল রিং এর ডার্কনেসকে গুরুত্ব প্রদান করে কারণ যদি তারা পুরুষের চোখের লিম্বাল রিং এর কালার পর্যবেক্ষণ না করেই কোন ছেলের সাথে দীর্ঘকালীন সম্পর্কে যেতো, তবে তার সঙ্গীনি হতো একজন কার্ডিওবাস্কুলার রোগাক্রান্ত। যে সঙ্গী সন্তানের ভরণপোষণে খুব একটা উপযোগী নয়, আর এমন পুরুষ নির্বাচন করা তার জিনের জন্য মোটেও সুবিধাজনক নয় আর তাই স্বার্থপর জিন নারীর মস্তিষ্কে অবশ্যই পুরুষের চোখের দিকে তাকানোর একটি মানসিক প্রবণতা তৈরি করবে, কোর্টশিপের পূর্বে পুরুষ নারীর ও নারী পুরুষের চোখের দিকে দীর্ঘক্ষণ তাকিয়ে থাকে। তাদের মধ্যে তখন একটি সম্মোহিত অবস্থা দেখা যায়, পুরুষটি নারীর চোখের ক্রাশ কারণ নারীর চোখ তাকে তার দিকে লুক করতে বাধ্য করে রেখেছে। পুরুষ যদিও লিম্বাল রিংকে গুরুত্ব দেয়না কিন্ত নারীর চোখের পাপড়ি ও ভেতরের কালো বৃত্তটি তার কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয়। পুরুষটি যখন সম্মোহিত হয় নারীর চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে তখন নারীর অবচেতন মন পুরুষের চোখ Check Up করে। কোর্টশিপের পূর্বের আই কন্টাক্টে নারী সাব-কনশাসলি একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞের দায়িত্ব পালন করে, যদিও সচেতনভাবে সে বুঝতে পারেনা যে,  সে ছেলেটির দিকে কেনো তাকিয়ে আছে, যখন নারীটি ঐ পুরুষের চোখে ডার্ক লিম্বাল রিং খুঁজে পায়, তখনই নিজের অজান্তে ঐ পুরুষের প্রতি তার দেহ দূর্বল হয়ে উঠে এবং তার মস্তিষ্ক ব্যাকুল হয়ে উঠে সে পুরুষটিকে যেকোনোভাবে তার কাছে পাওয়ার জন্য। আমরা যে সব যৌন আচরণকে সমাজে অসভ্যতা মনে করি, বিবর্তনের দৃষ্টিতে দেখলে সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মূলত পুরুষ নারীর দীর্ঘায়িত চোখের পাপড়ি ও চোখের সাদা অংশ দেখলে আকর্ষণবোধ করে কারণ এগুলো নারীটির স্বাস্থ্যের সংবাদ প্রেরণ করে! বিবর্তনের দৃষ্টিতে চিন্তা করলে, একজন ছেলে বা মেয়ে অন্য একজনের সাথে কোর্টশিপের পূর্বে মূলত আই কন্ট্যাক্ট করেনা, তারা একে অপরের চোখের ডাক্তারি করে।
 
 
 
 
 
তবে চক্ষু বিশেষজ্ঞের র্যাংকিং অনুসারে নারীকেই বরং নোবেল প্রাইজ দেয়া উচিত। ইকোনোমিস্টে ২০১৭ সালের ২০ এ অক্টোবর What Eyes and odour reveal about sexual attraction নামক একটি আর্টিকেল প্রকাশিত হয়। সুইজারল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব বার্নের জেনেক লোবমায়ার ও তার সহকর্মীরা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আবিষ্কার করেন। তারা দেখেন নারী পুরুষের সম্পর্কের ক্ষেত্রে শরীরের ঘ্রাণ এর কোন প্রভাব আছে কি না। তাদের গবেষণাটি রয়েল সোসাইটির প্রসিডিং এ হাজির হয়।ব্রিটেনের ইউনিভার্সিটি অব গ্ল্যাসকোর লিসা ডিবুরিন ও তার সহকর্মীরা BioRxiv এ প্রকাশিত একটি পেপার দেখেন, একটি অনলাইন ডেটাবেস, যেটি চোখের রঙের উপর, বিশেষ করে তারা দেখেন কারো ভালোবাসার মানুষের চোখ তার পার্টিন্যান্ট বাবা-মায়ের সাথে মেলে কিনা।
 
 
 
 

ড.লোবমেইয়ার দেখেন, যে সকল ব্যক্তিদের শরীরের মধ্যে MHC জিনের অজস্র বৈচিত্রতা রয়েছে, তাদের ইমিউন সিষ্টেম হয় অত্যন্ত ক্ষমতাশালী। যে সব সঙ্গীর বিভিন্ন রকম MHG জিন রয়েছে তাদের সন্তান হয় খুবই স্বাস্থ্যকর। MHG জিন শরীরের ঘ্রাণের উপর প্রভাব বিস্তার করে। ন্যাচারাল পারফিউম। আপনি শুনলে এখন আর হয়তো বিষ্মিত হবেন না কেনো অন্যান্য প্রাণীরা সঙ্গীর সাথে যৌন সঙ্গমে যাওয়ার পূর্বে তাদের দেহের ঘ্রাণ নেয়?  কেনো তাদের মেটিং ঘ্রাণ নির্ভর? মূলত, তারা ভিন্ন রকমের MHC জিনের সাথে নিজেদের মেটিং করে।

 
 
 
অন্যদিকে ড. ডিবুরিন ইতোমধ্যে তার এক্সপেরিমেন্ট সম্পাদন করেন। যেখানে ১৫০ জন নারী ও ১৫০ জন পুরুষ সম্পৃক্ত ছিলো। এ গবেষণার একটি আশ্চার্যজনক ফলাফল বেরিয়ে আসে। তিনি আবিষ্কার করেন যে, স্ট্রেইট ওমেন বা পুরুষকামী নারীরা শুধুমাত্র সে সকল পুরুষকেই ভালোবাসে, যাদের চোখ দেখতে তার বাবার মতো। একজন সমকামী পুরুষ তার বাবার চোখের মতো দেখতে সঙ্গীর প্রেমে পড়ে এবং সমকামী নারী তার মায়ের চোখের মতো চোখ সম্পর্ণ নারীর প্রেমে পড়ে।
 
 
 
 

এবং এটা প্রমাণিত। যখন তিনি সংখ্যাগুলো ক্রাঞ্চ করেছিলেন তিনি দেখেন, একজন স্ট্রেইট নারী ও গেম্যান তাদের বাবার চোখের মতো দেখতে চোখ সম্পন্ন পুরুষের প্রেমে পড়ে! আবার স্ট্রেইট ম্যান ও গেওম্যানও তাদের মায়ের চোখের রঙের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ চোখের প্রেমে পড়ে। অতএব,চোখের রঙ রোমান্টিক ভালোবাসার অজস্র ফিচারের মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি, বিশেষ ক্ষেত্রে, এই আকর্ষণগুলোকে মূদ্রিত মনে হয়।

 
ইকোনোমিস্টের এই আর্টিকেল পড়ে আমার মনে প্রশ্ন জাগে , আমি একজন স্ট্রেইট পুরুষ হিসেবে যখন কোন একজন নারীর প্রেমে পড়ি তখন আমি কী তার চোখে আমার মাকে আবিষ্কার করি? তার মানে মায়ের সাথে সন্তানের সেকচুয়াল একটা সম্পর্ক আছে? সে বিকল্পভাবে নিজের মা বা বাবাকেই অন্য পুরুষ বা নারীর মধ্যে পেতে চায়! তারমানে ফ্রয়েডের সুত্র সঠিক ছিলো, যে সন্তানের মনে মা-বাবার প্রতি অবদমিত একটি আকাঙ্ক্ষা রয়েছে?
 
 
 
যাক, সেদিকে যাবো না!
 
 
 
ইকোনকমিস্টের এ আর্টিকেলে যা গবেষণাপত্রের সুত্র অনুযায়ী এ হাইপোথেসিস প্রদান করা হয়েছে, তা যদি সত্য হয়, তবে আমরা মূলত প্রেমিকার চোখে মায়ের মতো বিশ্বস্ততা খুঁজতে চাই, কারো চোখ দেখতে যখন মা-বাবার মতো হয়, তখন অবচেতনেই আমাদের সে সকল নারী বা পুরুষের প্রতি একপ্রকার অধিকার ও অচেতন বিশ্বাস জন্ম হয়। আর তাই যখন কেউ কোন এক অচেনা নারীর চোখে চোখ রেখে ক্রাশ খায় তখন আসলে সে তার অজ্ঞাতেই মায়ের চোখে চোখ রাখে! ড. লোবমেইস্টারের এই হাইপোথেসিস যতটা না সমস্যার সমাধান করে তার চেয়ে বেশি সমস্যার জন্ম দেয় কারণ বিবর্তনীয় মনোবিদ্যার আলোকে আমাদের এবার এটা প্রমাণ করতে হয় যে, কেনো সেপিয়েন্সদের মধ্যে প্রথম সে সকল চোখের প্রতিই আকৃষ্ট হওয়ার প্রবণতা তৈরি হয় যে চোখ তার মায়ের?
 
 
 
 

তথ্যসুত্র-

  • Socially Communicative Eye Contact and Gender Affect Memory
  • Anderson N., Risko E. F., Kingstone A. (2011). Exploiting human sensitivity to gaze for tracking the eyes. Behav. Res. Methods 43, 843–852. 10.3758/s13428-011-0078-8, PMID: – DOI PubMed
  • Argyle M., Dean J. (1965). Eye-contact, distance and affiliation. Sociometry 28, 289–304. 10.2307/2786027, PMID: – DOI PubMed
  • Argyle M., Lefebvre L., Cook M. (1974). The meaning of five patterns of gaze. Eur. J. Soc. Psychol. 4, 125–136. 10.1002/ejsp.2420040202 – DOI
  • Bailenson J. N., Blascovich J., Beall A. C., Loomis J. M. (2001). Equilibrium revisited: mutual gaze and personal space in virtual environments. Presence Teleop. Virt. 10, 583–598. 10.1162/105474601753272844 – DOI
  • Baltazar M., Hazem N., Vilarem E., Beaucousin V., Picq J.-L., Conty L. (2014). Eye contact elicits bodily self-awareness in human adults. Cognition 133, 120–127. 10.1016/j.cognition.2014.06.009, PMID: – DOI PubMed
  • The Scientific Evidence Behind the Power of the Gaze, Brainfodder
  • New Theory on Why Men Love Breasts, Live science
  • The reaction when two people lock eyes in a crowded room is a staple of romantic cinema. But the complex, unconscious reactions that take place are anything but make believe. BBC
  • Why meeting another’s gaze is so powerful, BBC
  • What eyes and odours reveal about sexual attraction, Economist

প্রসঙ্গিক আর্টিকেল-