নারীর চোখ এত অতল কেনো? কেনো তার চোখের রেটিয়ায় সমস্ত মহাবিশ্ব ডুবে যায়? কেনো, মুহূর্তেই চোখে চোখ পড়লে একটা কিছু ঘটে যায়! হেলেন ফিশার তার Anatomy of love ; A Natural History of Matings, Marriage and Why we stray নামক বইটি’তে চমকপ্রদভাবে ডারউইনের বিবর্তনের আলোকে নারীর চোখের গভীরতা অবিশ্বাস্য সব গবেষণা ও তথ্য উপাত্তের উপর ভর করে তুলে ধরেন। এ চোখ নিয়ে তৈরি হয়েছে অজস্র গান, কবিতা, উপন্যাস। নারীর চোখের গভীরতা মাথা নষ্ট করে দিয়েছিলো আজ থেকে ৪ মিলিয়ন বছর পূর্বে আমাদের আদিম প্রাইমেটদের।
BRAIN FODDER একটি ওয়েবসাইটে The Scientific Evidence Behind the Power of the Gaze নামক একটি আর্টিকেল প্রকাশিত হয়। আর্টিকেলটি অনেকটা এভাবে শুরু হয়েছিলো, মানুষের চোখকে বলা হয় আত্মার জানলা, এটি চিন্তাশীল ও সৃষ্টিশীলকে সম্মোহিত করেছে, এ চোখ ঈশ্বরের চোখ, এটি সত্য ও প্রজ্ঞার চোখ এবং এটি ক্ষমতা! কবিরা সব সময় প্রেমিকের চোখের গুণকীর্তন করেছে, আর সায়েন্স ফিকশন চোখের দৃষ্টি দিয়ে মানুষকে করতে চেয়েছে নিয়ন্ত্রণ! সেখানে বলা হয়, দুটি মানুষের ইন্টারেকশনে চোখ খুব গুরুত্বপূর্ণ, চোখ একে অপরের প্রতি বিশ্বাস বাড়ায়, দুজন একে অপরের প্রতি সন্তুষ্ট হয়। আই কন্ট্যাক্ট শুধু আমাদের মধ্যে নয়, অন্যান্য মামেলদের মধ্যেও প্রচলিত। স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে যারা সর্বপ্রথম অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীদের সাথে আই কন্ট্যাক্ট করতে পারে তারা হয় অন্যদের থেকে প্রভাবশালী ও ক্ষমতাবান, যে সকল প্রাণী পরিপূর্ণভাবে আই কন্ট্যাক্ট করতে পারেনা, তারা হয় সব সময় নিম্ম
সারির।
হেলেন ফিশার তার Anatomy of Love গ্রন্থের The Copulatory Gaze নামক একটি অংশে বলেন, স্থির দৃষ্টি আমাদের মস্তিষ্কের সবচেয়ে প্রিমেটিভ অংশকে ট্রিগার করে, দুটি ব্যাসিক ইমোশনের মধ্যে যেটিকে প্রধান মনে করা হয় সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া অথবা পশ্চাদপসরণ। আপনার চোখে যে চোখ দুটি স্থির হয়ে আছে সেগুলোকে আপনি উপেক্ষা করতে পারবেন না। আপনি হেসে ফেলবেন এবং তার সাথে আলাপচারিতায় মেতে উঠবেন। আপনি এদিক সেদিক তাকাবেন, দরজার কিনারায়। কিন্তু প্রথমে আপনি কানের লতি টান দেবেন, আপনার স্যুয়েটারটি টেনেটুনে অযথাই ঠিক করে নেবেন, হাই তুলবেন, আপনার চোখের চশমাটি নড়েচড়ে উঠবে এবং আরোকিছু অর্থহীন অস্থিতিশীলতা দেখা যাবে আপনার মধ্যে, এটি হলো স্থান পরিবর্তনের ঈশারা, আপনার উত্তেজনা প্রশমন করার জন্য যখন আপনি আপনার মনকে প্রস্তুত করবেন এই ডাকে সাড়া দেয়ার জন্য, হয়তো আপনি প্রস্থান করবেন অথবা কোর্টশিপের খেলা খেলতে আপনি সেখানে অবস্থান করবেন।
হেলেন ফিশার তার “দি এনাটমি অব লাভ” গ্রন্থে লেখেন, হৃদপিণ্ড, যৌনি বা ব্রেন নয়- যা রোমান্সের প্রাথমিক অর্গান, স্থির দৃষ্টি, মাঝেমাঝে হিউম্যান স্মাইলকেও ট্রিগার করে! কিন্তু কেনো কোর্টশিপের জন্য হৃদপিন্ড, যৌনি বা মস্তিষ্ক কোনোটাই তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়?
আমরা প্রায়শ শুনে থাকি, ডাইলেটেড চোখের পাপড়ির কথা, কলেজের এক অভদ্র বেওয়ারিশ ছাত্র কোনো এক উঠতি বয়সী মেয়ের দীর্ঘায়িত চোখের পাপড়ির প্রেমে পড়ে সভ্য হয়ে গেছে? সে এখন মহাপুরুষ! গান লেখে, গিটার বাজায় এবং তাকে এখন বেশিবেশি শিশুকিশোরদের সাথে অথবা বৃদ্ধাশ্রমে দেখা যায়! সে কোন এক অচেনা মেয়ের পাপড়ির দৈর্ঘে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছে! সে শেষ, সে আর নেই! সাইকোলজি টুডে’ তে বলা হয়, মূলত , যখন একজন মানুষ তার চোখ জাগ্রত করে , তখন চোখের কেন্দ্রের কালো বৃত্তটি প্রশস্ত হয়ে উঠে। এ ধরণের চোখের জাগরণ খুবই আকর্ষণীয়, বিশেষ করে পুরুষদের কাছে, এমনকি নারীদের ক্ষেত্রেও যদিও আমরা সচেতনভাবে এটি খেয়াল করিনা। চোখের সাদা অংশ স্কলেরা, এই সাদা অংশ দেখেও যে কেউ আকর্ষণ ও স্বাস্থ্যের অবস্থা বিচার করতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, যাদের চোখের স্কলেরা লাল না হয়ে, সাদা, তাদের ২৫ শতাংশ সুখী, ৪২ শতাংশ স্বাস্থ্যবান এবং ১৭ শতাংশ অনেক বেশি আকর্ষণীয়।
তিনি আবিষ্কার করেন যে, পুরুষ এবং মহিলা দুজনেই, ডার্ক লিম্বাল রিং এর চেহারা পছন্দ করে। সাম্প্রতিক ইউনিভার্সিটি অব সাউথার্ন মিসিসিপিতেও আরো একটি গবেষণা পরিচালিত হয়, ঈশ ব্রাউন ও ডোনাল্ড স্যাকো ঠিক সে ফলাফলই আবিষ্কার করেন যা পেশক আবিষ্কার করেছিলেন। রাউন এবং স্যাকো, ১৫০ জন নারী ও পুরুষের উপর গবেষণা পরিচালনা করেন, মূল ফটোগ্রাফ এবং উজ্জ্বল লিম্বাল রিং প্রদর্শনের মাধ্যমে। এই ফলাফল আমাদের প্রদর্শন করে যে, প্রশস্ত লিম্বাল রিং, মূলত, চেহারাকে স্বাস্থ্যকর করে তোলে।
ড.লোবমেইয়ার দেখেন, যে সকল ব্যক্তিদের শরীরের মধ্যে MHC জিনের অজস্র বৈচিত্রতা রয়েছে, তাদের ইমিউন সিষ্টেম হয় অত্যন্ত ক্ষমতাশালী। যে সব সঙ্গীর বিভিন্ন রকম MHG জিন রয়েছে তাদের সন্তান হয় খুবই স্বাস্থ্যকর। MHG জিন শরীরের ঘ্রাণের উপর প্রভাব বিস্তার করে। ন্যাচারাল পারফিউম। আপনি শুনলে এখন আর হয়তো বিষ্মিত হবেন না কেনো অন্যান্য প্রাণীরা সঙ্গীর সাথে যৌন সঙ্গমে যাওয়ার পূর্বে তাদের দেহের ঘ্রাণ নেয়? কেনো তাদের মেটিং ঘ্রাণ নির্ভর? মূলত, তারা ভিন্ন রকমের MHC জিনের সাথে নিজেদের মেটিং করে।
এবং এটা প্রমাণিত। যখন তিনি সংখ্যাগুলো ক্রাঞ্চ করেছিলেন তিনি দেখেন, একজন স্ট্রেইট নারী ও গেম্যান তাদের বাবার চোখের মতো দেখতে চোখ সম্পন্ন পুরুষের প্রেমে পড়ে! আবার স্ট্রেইট ম্যান ও গেওম্যানও তাদের মায়ের চোখের রঙের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ চোখের প্রেমে পড়ে। অতএব,চোখের রঙ রোমান্টিক ভালোবাসার অজস্র ফিচারের মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি, বিশেষ ক্ষেত্রে, এই আকর্ষণগুলোকে মূদ্রিত মনে হয়।
তথ্যসুত্র-
- Socially Communicative Eye Contact and Gender Affect Memory
- Anderson N., Risko E. F., Kingstone A. (2011). Exploiting human sensitivity to gaze for tracking the eyes. Behav. Res. Methods 43, 843–852. 10.3758/s13428-011-0078-8, PMID: – DOI – PubMed
- Argyle M., Dean J. (1965). Eye-contact, distance and affiliation. Sociometry 28, 289–304. 10.2307/2786027, PMID: – DOI – PubMed
- Argyle M., Lefebvre L., Cook M. (1974). The meaning of five patterns of gaze. Eur. J. Soc. Psychol. 4, 125–136. 10.1002/ejsp.2420040202 – DOI
- Bailenson J. N., Blascovich J., Beall A. C., Loomis J. M. (2001). Equilibrium revisited: mutual gaze and personal space in virtual environments. Presence Teleop. Virt. 10, 583–598. 10.1162/105474601753272844 – DOI
- Baltazar M., Hazem N., Vilarem E., Beaucousin V., Picq J.-L., Conty L. (2014). Eye contact elicits bodily self-awareness in human adults. Cognition 133, 120–127. 10.1016/j.cognition.2014.06.009, PMID: – DOI – PubMed
- The Scientific Evidence Behind the Power of the Gaze, Brainfodder
- New Theory on Why Men Love Breasts, Live science
- The reaction when two people lock eyes in a crowded room is a staple of romantic cinema. But the complex, unconscious reactions that take place are anything but make believe. BBC
- Why meeting another’s gaze is so powerful, BBC
- What eyes and odours reveal about sexual attraction, Economist
- Men’s preferences for women’s body odours are not associated with human leucocyte antigen. Probst F, Fischbacher U, Lobmaier JS, Wirthmüller U, Knoch D.
- Positive Sexual Imprinting For Human Eye Color. Lisa M. DeBruine, Benedict C. Jones, Anthony C. Little.