৩০, অক্টোবর ২০২০ এ থিংক বাংলা ডায়নোসর থেকে পাখির বিবর্তন সংক্রান্ত একটি Mind Bending ভিডিও প্রকাশ করেছেন। তারই উপর ভিত্তি করে আমার ক্রিটিক্যাল এনালায়সিস ও প্রতিক্রিয়া ;
ডায়নোসরদের থেকে কিভাবে পাখিদের বিবর্তন ঘটেছে? কিভাবে প্রাচীন সরিসৃপ পরিণত হয়েছে পাখিতে? যারা ক্ষুদ্র দুটি ডানা এবং উইশবোন ব্যাবহার করে মাধ্যাকর্ষণকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে মহাকাশের একটি সীমায় উড়ে বেড়ায়? মানুষের বিবর্তন থেকেও পাখিদের বিবর্তন প্রক্রিয়া বিজ্ঞানীদের মস্তিষ্কের নিউরনকে শত বছর গোলকধাঁধায় ঘুরিয়েছে। এর সমাধানে, আমাদের এ মুহূর্তে কি করা উচিত? থ্রোনের টাইম মেশিন তৈরি করে ২০০ মিলিয়ন বছর অতীতের পৃথিবীতে ভ্রমণ করা উচিত, অন্তঃবর্তী এক একটি টাইম স্ট্যাশনে থেমে ডায়নোসর থেকে পাখিদের বিবর্তনের মধ্যবর্তী ট্রান্সজিশনাল ফসিলগুলোর জীবন্ত রুপ পর্যবেক্ষণ করার জন্য এবং জানার জন্য, তারা ঠিক কিভাবে তাদের আজকের এই উন্মোক্ত শূন্যস্থানে উড়ে বেড়ানোর নাগরিক অধিকার লাভ করেছে? হ্যা.. থিংকের ডায়নোসর সংক্রান্ত সম্প্রচারটি না দেখলে সম্ভবত অন্তত আমাকে আরো কয়েক মিলিয়ন বছর টাইম মেশিনের জন্য অপেক্ষা করতে হতো!
প্রথমেই বন্যা আহমেদকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি এতটা গভীর পর্যবেক্ষণ, শ্রম, ও মেধা বিনিয়োগ করে ডায়নোসর থেকে পাখির উদ্ভব সংক্রান্ত এ দুর্দান্ত ডকুমেন্টারিটি তৈরি করার আন্তরিক প্রচেষ্ঠার জন্য। এবং ধন্যবাদ জানাচ্ছি প্রতিটি সিকোয়েন্সের এনিমেশন ও ডিজাইনের পেছনে লুকায়িত মস্তিষ্ককেগুলোকে এবং যারা এতটা জীবন্তভাবে সব গুলো প্রেক্ষাপটকে নিখুঁত পরম্পরা বজায় রেখে উপস্থাপন করেছেন। ধন্যবাদ থিংকের কর্যরত সকল বুদ্ধিমত্তাকে।
ইন্টিলিজেন্ট ডিজাইনে বিশ্বাসীরা প্রায়শ ডায়নোসর ও পাখিদের অন্তঃবর্তীকালীন ফসিলের নিরবতাকে কেন্দ্র করে বিবর্তনের বিপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করতেন। যদি ডায়নোসর থেকে পাখির বিবর্তন ঘটে তবে এ ডায়নোটিক বিগব্যাং এর প্রারম্ভে ডায়নোসরদের পাখার প্রাথমিক একটি রুপ থাকার কথা ছিলো , এবং সে অসম্পূর্ণ রুপ, তাদেরকে টিকে থাকার ক্ষেত্রে কোনপ্রকার সাহায্য না করে বরং প্রতিকূলতা সৃষ্টি করতো। কিন্তু আপনি যদি অন্তঃ বর্তীকালীন ফসিলগুলো খুব ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করেন আপনি দেখবেন যে, এ অজস্র প্রকরণের মধ্যে উড়তে পারার ক্ষমতাটির কোন কোন পর্যায়ে হয়তো এটি তাদের জন্য উপকারীই ছিলো। প্রাথমিকভাবে শুরু হয়েছিলো গ্লাইডিং করার ক্ষমতা বিবর্তিত হওয়ার মাধ্যমে আর গ্লাইডিং( স্পেসে ভেসে থাকা) করার এ ক্ষমতা স্বতন্ত্রভাবে বিবর্তিত হয়েছে অজস্রবার; স্তন্যপায়ীদের মধ্যে কেউ কেউ অথবা মারসুপিয়াল, এমনকি এক্ষেত্রে আমরা গিরগিটির কথাও বলতে পারি। এছাড়াও আমরা দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার উড়ন্ত লেমুর অথবা কালুগোর কথা বলতে পারি। কোন কোন কালুগোকে ৪৫০ ফুট দূরত্ব পর্যন্ত গ্লাইডিং করে অতিক্রম করতে দেখা গেছে যা ৬ টি টেনিস কোর্টের সমান দৈর্ঘ। প্রাণীদের অলিম্পিক গেমসে এটি পরজিত করে ৪০ ফুট উচ্চতাকে!!
বিবর্তনের ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ ধাপের মধ্যে অন্যতম একটি কমন এনসেস্ট্রি বা সাধারণ পূর্বসূরির ধারণা। যেখানে অজস্র প্রজাতির বিভিন্ন মধ্যবর্তী প্রকরণের মাঝে জিন ও বৈশিষ্ট্যগত দিক থেকে যে সম্পর্কযুক্ততা সে সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতার উপর ভর করে তাদেরকে একটি সাধারণ এনসেস্ট্রির আওতাভুক্ত বলে গণনা করা হয় আর তারা হলো, সময়ের এক একটি স্তরে সে সাধারণ জীবন বৃক্ষের শাখা ও প্রশাখা। এ দিক থেকে উনিশ শতকে সর্বপ্রথম, পাখি ও কিছু প্রজাতির ডায়নোসরদের কঙ্কালের সাথে একপ্রকার সাদৃশ্যতা পাওয়া যায়, আর এ সাদৃশ্যতার উপর ভর করে বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারেন, এসব ডায়নোসরদের সাথে আধুনিক পাখিদের অবশ্যই নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে যা তাদের সম্ভবত একই গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত করতে পারে৷ এরা ছিলো প্রচন্ড ক্ষীপ্র গতিসম্পন্ন থেরোপড, মাংসাশী ডায়নোসর দু- পায়ে ভর করে হাঁটতো! ২০০ মিলিয়ন বছর পূর্বেও জীবাশ্ম রেকর্ডে পাখিদের মতো দেখতে কোন ডায়নোসর খুঁজে পাওয়া যায়নি। ৭০ মিলিয়ন বছর পূর্বে আমরা যে সকল ডায়নোসরের ফসিল খুঁজে পাই, তারা ছিলো পাখি সদৃশ। তার মানে, আমাদের ডায়নোসরের ফসিল গুলো খুঁজে পাওয়া উচিত ৭০ থেকে ২০০ মিলিয়ন বছর আদিম সময়ের শিলাস্তরের কোথাও না কোথাও , ১৩০ মিলিয়ন বছরের নিরবতার মাঝে আমরা খুঁজে পেতে পারি আধুনিক পাখিদের বিবর্তনের ডারউনীয় পরম্পরা।।
এবং আশ্চার্যজনকভাবে ডারউইন এটা জানতেন, তিনি তার Origin of Species এর পরবর্তী সংস্করণে এটি অন্তর্ভুক্ত করেছেন। এবং আমরা তাদের মধ্যবর্তী ফসিলগুলো খুঁজে পেয়ছি ঠিক একই সময় শীলার সঠিক স্তরে। প্রাকৃতিক নির্বাচন ধাপে ধাপে ( গ্রেজুয়ালিজম) ঘটে, আর প্রতি ফেজে কয়েক কোটি বছর থেকে মিলিয়নের জন্যও নতুন কিছু বৈশিষ্ট্য অভিযোজিত হয় এবং সেগুলো জিনপুলে টিকে থাকে। আর তাই প্রতিটি স্তর আলাদা আলাদা সময় ও শিলারস্তরকে ইঙ্গিত করে। এটাই গ্রেজুয়ালিজম, বিবর্তনের অন্যতম শর্তগুলোর মধ্যে দ্বিতীয়! আর এখন যে ফসিলটির কথা বলছি সেটি ছিলো দূর্লভ ফসিলগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি ট্রান্সজিশনাল ফসিল, যেটি কাকের সম আকৃতির যার নাম আর্কিওপটেরিক্স( Archaeopteryx lithographica)। ১৮৬০ সালে জার্মানীর একটি চুনা পাথরের খনিতে এ অকল্পনীয় ফসিলটি পাওয়া গিয়েছিলো। (আর্কিওপটেরিক্স নামের অর্থ প্রাচীন ডানা এবং লিথোগ্রাফিকা নামটি এসেছে শনহোফেন লাইমস্টোন থেকে, যা এতো বেশী সূক্ষ্ম দানার যে, নরম পালকেরও ছাপও এটি সংরক্ষণ করেছে লিথোগ্রাফিক প্লেটে ছাপচিত্রের মত)
কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত আর্কিওপটেরিক্স ছিলো পাখির থেকেও অনেক বেশি সরিসৃপ, এটি একটি মিশ্ররুপ ছিলো কিন্ত এর মধ্যে সরিসৃপের বৈশিষ্ট্যই বিদ্যমান ছিলো। এর অবস্থান ছিলো ১৪৫ মিলিয়ন বছর পূর্বে। যারা আর্কিওপটেরিক্সের জীবাশ্মটি পরিমিত ভাবে পর্যবেক্ষণ করেনি, তারা এর পায়ে পালকের উপস্থিতি দেখতে পায়নি আর তারাই এটাকে থেরাপোডের অন্তর্ভুক্ত করেছিলো। এর সরীসৃপ বৈশিষ্ট্যের মধ্যে আছে দাঁতসহ চোয়াল, দীর্ঘ হাড় দিয়ে তৈরী একটি লেজ, ধারালো নখর বা ক্ল, ডানায় থাকা আঙ্গুলগুলো আলাদা আলাদা (আধুনিক পাখিদের ক্ষেত্রে যেগুলো একসাথে মিশে যুক্ত হয়ে যায়, যে কোনো মুরগীর পেচিয়ে থাকা ডানা বা উইং একটু ভালো লক্ষ করলে আপনি যা দেখতে পারবেন)। পাখিদের বৈশিষ্ট্য ছিলো মাত্র দুটি- পালক ও বিপরীত মুখোমুখি করা যায় এমন বৃদ্ধাঙ্গুল যার মাধ্যমে তারা হয়তো গাছের ডালে বসতে পারতো।
কিন্তু প্রশ্ন হলো পালকের উপস্থিতি দ্বারা আমরা কী বুঝতে পারি যে এটি উড়তে পারতো? আমরা সেটা নিশ্চিত নই! তবে অ্যারোডিনামিক্সে একটি উড়োজাহাজের স্পেসে উড়তে পারার জন্যে পাখার প্রশস্ততার মধ্যে অসাম্য থাকা প্রয়োজন! আর্কিওপটেরিক্সের পাখায় অ্যারোডিনামিক্স প্রযুক্তির সে প্রকৌশলটি দেখা গেছে যা থেকে বিজ্ঞানীরা অনুমান করতে সক্ষম হয় যে তারা উড়তে পারতো! এটি ছিলো এমন একটি প্রজাতি যাকে বিজ্ঞানীরা মোজাইক বলে, এটি সম্পূর্ণ পাখি ছিলোনা, সম্পূর্ণ সরিসৃপও ছিলোনা, তবে বেশিরভাগ অংশ সরিসৃপদের মতো। তবে আর্কিওপটেরিক্সের পাখির মত কিছু বৈশিষ্ট্য আছে (যেমন পালক এবং পায়ে বিপরীত মুখোমুখি করা যায় এমন বৃদ্ধাঙ্গুল। কিন্তু এর কংকাল প্রায় ডায়নোসরদের মত, দাঁত, সরীসৃপের মত কোমর এবং লম্বা হাড়ের লেজ। বড় ধরনের কাকের মত আকার ছিল আর্কিওপটেরিক্সদের, তবে Compsognathus ছিল আরো একটু বড়।
কিন্তু নিস্তব্দতার এক দীর্ঘ বিবর্তনীয় রাত্রি নেমে আসে, সেই নিরবতার আড়ালে স্তব্দ হয়ে যায় ডায়নোসর ও পাখিদের আরো অজস্র ট্রান্সজিশনাল ফসিলগুলো, বিজ্ঞানীদের সিদ্ধান্তহীন মস্তিষ্ক দোদুল্যমান, তারা আর জানেনা, এরপর কী ঘটেছে, আধুনিক পাখিরা তো আর এক লাফে আর্কিওপটেরিক্স থেকে মহাকাশে ঝাপ দেয় নি। মিলিয়ন মিলিয়ন বছরের সময়ের মাঝে আরো অজস্র মধ্যবর্তী প্রকরণ রয়ে গেছে যারা সময়ের পরম্পরায় আধুনিক পাখিদের অনেক নিকটবর্তী ! এমন এক হতাশার রাত্রির গহীন অন্ধকারে একদিন সুপার নোভা বিস্ফোরিত হয়, যখন ৯০ এর দশকে চীনে এক এক করে অজস্র স্বপ্নাতীত ফসিল দেখা দেয়, স্বপ্নের ইলেক্ট্রিক্যাল পালসে কম্পনরত ডায়নোসরদের ফসিল বেরিয়ে আসে চোখের সম্মুখে, যারা সেই আদিম শূন্যস্থান বা হারানো লিংকগুলো পূরণ করে (Missing link), এরা ছিলো থেরাপোড ডায়নোসর। প্রাচীন এক হ্রদের পাললিল শীলাস্তরে, ডায়নোসর গুলোকে সময় মমি করে রেখেছিলো, তাদের ছিলো দুর্দান্ত পালক, সমাধান হয় বেশ কিছু রহস্যের! এদের মধ্যে কারো শরীর ফিলামেন্টাস বা সুঁতার মতো কিছু দিয়ে আবৃত, সম্ভবত এগুলোই আদি পালক! এদের মধ্যে সবচেয়ে বিষ্ময়কর ছিলো Sinornithosaurus millenii (Sinornithosaurus)।
কিম্ভুতকিমাকার এক নাম পাখি গিরগিটি। এর পালকগুলো এতটাই ক্ষুদ্র ছিলো যে, মনে হয়না এটি আদৌ উড়তে পেরেছিলো। দাঁত, নোখ, লম্বা হাড়ের লেজই বলে দেয় আধুনিক পাখিদের সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই। অন্য ডায়নোসরদের আধুনিক পাখিদের মতো পালক ছিলো এবং সামনের লিম্বে কারো কারো আবার বড় বড় পালক ছিলো। এদের মধ্য থেকে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ছিলো মাইক্রো র্যাপ্টর গুই (Microraptor Gui)। কিন্তু বিষ্ময়করভাবে এদের পাখা ছিলো চারটি, এদের সম্পূর্ণ শরীর পালক দ্বারা আবৃত ছিলো। আর দুপাশের চারটি পাখা তাদেরকে গ্লাইডিং করে শূন্যে ভেসে থাকতে সাহায্য করতো। থেরোপড ডায়নোসররা শুধু আদিম পাখির মতোই ছিলোনা, তাদের পাখিদের মতো আচরণও ছিলো।
আমরা ডায়নোসরদেরকে তাদের বিরাটত্বের কারণে ভুল বুঝি, আমরা মনে করি হয়তো তারা অনেক নির্মম ও পাষাণ! কিন্তু বিরাট হলেই যে আসলে সবসময় কেউ নির্মম হবে তা ঠিক নয়। প্রতিটি প্রাণী সে যত ক্ষমতাবানই হোক প্রজনন ও টিকে থাকার জন্য তার মধ্যেও মমতা ও অনুগ্রহ সংরক্ষণ করা হয়। আর এ ক্ষেত্রে ডায়নোসররাও আসলে ব্যতিক্রম নয়। আমেরিকার জীবাশ্মবিদ মার্ক নোরেল ও তার দল এমন দুটি জীবাশ্মের বর্ণনা দিয়েছিলেন যারা ছিলো ডায়নোসরদের ফসিলের ইতিহাসে অত্যন্ত হৃদয়স্পর্শী ফসিল, ইতিহাসের এক দীর্ঘ বিয়োগান্তক নাটকের সবচেয়ে কোমল অংশ। একটি ডায়নোসর, যে ছিলো ছোট ডানা বিশিষ্ট, তার পাখার কুনুইয়ের ভাজে মাথা রেখে এখনো ঘুমোচ্ছে, আর ঘুমন্ত অবস্থাতেই তার মৃত্যু হয় এবং অবশেষে পরিণত হয় ফসিলে ,সে জানেনা যে সে এখনো মৃত, হয়তো কোটি কোটি থেকে মিলিয়ন বছর অতিবাহিত হবে কিন্তু তার এ মর্মস্পর্শী ঘুম ভাঙবেনা। আজ তার অতীত নেই, নেই অতীতের প্রিয়জন, যারা তার জন্য অপেক্ষার প্রহর গুণতে গুণতে সম্ভবত বিলুপ্ত হয়ে মহাবিশ্বের তুচ্ছ পার্টিকেল হয়ে গেছে কিন্তু এখনো পড়ে আছে তার ফসিল, হারানো পূর্বসূরীর মিসিং লিংক হয়ে ভিন্ন এক প্রজাতির গবেষণাগারে, যেনো সৃষ্টিতত্ত্ববাদীদের ব্যাঙ্গ করতে পারে! চীনা ভাষায় এ ঘুমন্ত ডায়নোসর পাখির নাম মেই লং( Mei Long) !
আর একটি ডায়নোসর তার ২২ টি’ ডিমে ব্রুডিং এর সময় ফসিলে পরিণত হয়েছিলো , ডায়নোসর আর তার ২২ টি ডিম, ট্রান্সজিশনাল ফসিল হয়ে পড়ে আছে। যারা সাক্ষী দিচ্ছে, আমাদের কাছে ডায়নোসর থেকে পাখির বিবর্তনের সবচেয়ে নিকটতর ও স্পর্শকাতর মুহূর্তের। আরো একটি ডায়নোসর রয়েছে যার নাম বিগ মামা (Citipati osmolskae)। এই ডায়নোসরটির মধ্যেও আধুনিক পাখিদের সে ব্রুডিং এর বৈশিষ্ট্যটি সুস্পষ্ট মাত্রায় রয়েছে।
সব উড্ডয়ন ক্ষমতাহীন পালকসহ ডায়নোসরদের জীবাশ্মগুলোর সময়কাল ১৩৫ থেকে ১১০ মিলিয়ন বছরের মধ্যে—১৪৫ মিলিয়ন বছর পুরোনো আর্কিওপটেরিক্সের পরে এদের অবস্থান; অতএব বলা যায় এরা কখনো আর্কিওপটেরিক্সের পূর্বসূরি হতে পারেনা। আর্কিওপটেরিক্সের সাথে এদের রয়েছে আত্মীয়তার সম্পর্ক ঠিক যেমনি মানুষের সাথে শিম্পাঞ্জির। তারা একটি সাধারণ পূর্বসূরীর বিকল্প ধারা। তার মানে আর্কিওপটেরিক্সের পূর্বেও ডায়নোসরদের খুঁজে পাওয়া উচিত। পালকসহ ডায়নোসরের অস্তিত্ব ছিলো হয়তোবা তাদেরই সম্পর্ক যুক্ত কোন ধারায়, এমনকি পাখিদের বিবর্তন হওয়ার পর। আমাদের তাহলে পালকযুক্ত ডায়নোসরদেরও খুঁজে পাওয়া উচিত আর্কিওপটেরিক্সেরও বহু আগে, যারা আর্কিওপটেরিক্সের পূর্বসূরি হতে পারে।
জীববিজ্ঞানীরা নিশ্চিত নয় যে, আর্কিওপটেরিক্স কোন একক প্রাণী কিনা, এর আগেও পালকযুক্ত আর্কিওপটেরিক্স থাকতে পারে। এটি আমাদের কাছে দীর্ঘ জীবাশ্ম প্রজাতির বিবর্তনীয় ক্রমধারায় আধুনিক পাখিদের বিবর্তনীয় উপস্থিতির প্রধান সাক্ষ্য উপস্থাপন করে। এই জীবাশ্মগুলো যতই সাম্প্রতিক হতে থাকে, আমরা দেখতে পাই এর সরীসৃপ লেজ ক্রমান্বয়ে ছোট হয়ে যাচ্ছে, অপসৃত হচ্ছে চোয়ালের দাঁত, পাখের নখর বা ক্লগুলো মিশে যাচ্ছে একে অপরের সাথে, এবং ধীরে ধীরে আগমন ঘটছে প্রশস্ত বুকের হাড়,যেখানে সংযুক্ত হয়ে নোঙ্গর করে থাকে উড়বার জন্য প্রয়োজনীয় মাংসপেশীগুলো। মিসনার স্পেস ; আপনার শয়নকক্ষে মহাবিশ্ব
আমরা যদি সবগুলো ফসিল একত্রিত করি তবে আমরা দেখতাম যে জীবাশ্মগুলো প্রদর্শন করে মূল কঙ্কাল কাঠামোর বিবর্তন এবং সে প্রয়োজনীয় উড়ার পালকগুলো যা পাখিদের বিবর্তনের বহু আগেই বিবর্তিত হয় ডায়নোসরদের মাঝে। এখন প্রশ্ন হলো, ডায়নোসরদের পালক কেনো সৃষ্টি হলো? ঠিক কোন নির্বাচনী চাপ কাজ করেছিলো ডায়নোসরদের উপর যা তাদের শরীরে পালকের বিবর্তন ঘটিয়েছিলো?
যদি মিলিয়ন মিলিয়ন বছর অতীতের কোন বিশেষ পরিবেশে সাথে অভিযোজনের জন্যে ডায়নোরদের উপর বিশেষ কোন সিলেকশন প্রেসার সক্রিয় না হয় তবে কী এ পালকগুলো কী শূন্য থেকে ওহিযোগে এসেছে? কিছু বিজ্ঞানী বলেন এর পেছনে কাজ করছে সেকচুয়াল সিলেকশন। মূলত থিংকের ডকুমেন্টারিতে বলা হয়, ডায়নোটিক মন যৌনসঙ্গী হিসেবে হয়তো তাদেরকেই পছন্দ করেছিলো যাদের পালক অপেক্ষাকৃত ঘণ! আর এতে করে এ পালকবিশিষ্ট ডায়নোসররা পরবর্তী প্রজন্মে উত্তীর্ণ হলো, যখন এটি মিলিয়ন বছরের সময়ের স্কেলে চলমান ছিলো, হয়তো এ প্রক্রিয়াটি আধুনিক পাখিদের জন্ম দিয়েছিল। জেরি কয়েন তার Why the Evolutionis truth বইয়ে লিখেছেন, এমনও হতে পারে পাখা ডায়নোসরদের শরীরের তাপমাত্রা সংরক্ষণকারী ইনসুলেটর হিসেবে ব্যবহারিত হতো।
থিংকের ডায়নোসর সংক্রান্ত ডকুমেন্টারিতে ২০২০ সাল পর্যন্ত প্রাপ্ত প্রায় সকল মিসিং লিংকগুলো ধারাবাহিকভাবে উপস্থাপন করা হলেও, উড়তে পারার ক্ষমতাটি বিবর্তিত হওয়ার পেছনে পরিবেশগত চাপের বিস্তারিত জানানো হয়নি। সেখানে ডায়নোসর থেকে পাখির বিবর্তনের ধারণাটি সঠিক ক্রম অনুসরণ করে উপস্থাপনের পাশাপাশি বিভিন্ন লিমিটেশন সহ গুরুত্ব দেয়া হয়েছিলো সম্পৃক্ত মিসিং লিংকগুলোর একে একে উপস্থাপন ও নিখুঁত বর্ণনার প্রতি। আমি এখানে জেরি কয়েনের Why the Evolution is Truth বইটি থেকে নতুন করে দুটো জিনিস সম্পৃক্ত করছি যা আজকের পাখিদের মহাকাশ যাত্রার পেছনের পটভূমি প্রস্তাব করে।
প্রথমটি হচ্ছে ট্রিস ডাউন দৃশ্যপট (Trees Down Scenario) । কিছু প্রমাণ বলছে থেরাপোডরা অন্তত কিছু সময় গাছে ভেসে থাকতে পারতো। পালকে ঢাকা সামনের পা হয়তো তাদের এক গাছ থেকে অন্য গাছে বা গাছ থেকে মাটিতে গ্লাইড বা বাতাসে ভর করে খানিকটা ভেসে ওড়ার মাধ্যমে যাতায়াত করতে সাহায্য করতো। যা হয়তোবা তাদের শিকারী প্রাণী থেকে আত্মরক্ষা করতে, দ্রুত খাদ্য সংগ্রহ এবং তাদের অবতরনকে সহজ করতে সাহায্য করতো।
একটি ভিন্ন এবং আরো বেশী সম্ভাব্য দৃশ্যপট যা হলো ‘গ্রাউন্ড আপ’ তত্ত্ব (Grounds up) বা নীচ থেকে উপরে, যে তত্ত্ব বলছে উড়বার ব্যাপারটা সম্ভবত এসছে দুই হাত দুই পাশে ছড়িয়ে দৌড়ানো এবং শিকার জাপটে ধরার জন্য পালকযুক্ত ডায়নোসরদের লাফ দেবার প্রক্রিয়াটির একটি সম্প্রসারণ হিসাবে। চুকার পেট্রিজ নামক একটি পাখি আছে যারা এ ধাপের এক জীবন্ত উদাহরণ। মান্টানা ইউনিভার্সিটির কোয়েথ ডোনার গবেষণা করে দেখেছেন, এরা কখনোই ওড়েনা কিন্তু যখন এরা কোনো উঁচু ঢাল বেয়ে উপরে উঠে তখন ডানা ঝাপটায়। এ ডানা ঝাপটানো শুধুমাত্র তাদের অতিরিক্ত গতিই প্রদান করেনা, একইসাথে এটি প্রদান করে মাটির উপর ভেসে থাকার বাড়তি ট্র্যাকশন বা ভারোত্তোলন শক্তির। অল্পবয়সী মুরগীরা ৪৫ ডিগ্রি ঢাল বেয়ে উড়তে পারে, পূর্ণবয়স্করা ১০৫ ডিগ্রি ঢাল বেয়ে উড়তে পারে। বিপদ থেকে পালানোর জন্য টার্কি ও কোয়েলরাও হপিং বা কিছুক্ষণ শূন্যে ভেসে থাকে।
আমরা যদি ট্রিস ডাউন ও ট্রিস আপ এ তত্ব দুটো বিশ্লেষণ করি তবে আমরা অনুমান করতে পারি যে, ডায়নোসরদের পাখা এমনি এমনি বিবর্তিত হয়নি, প্রাথমিক দিকে তাদের ডানা নির্বাচিত হয়েছিলো সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য স্পেসে ভাসমান থাকা অথবা হপিং এর জন্য। শিকারী প্রাণীদের নাগাল থেকে মুক্তির এসকেপ ভেলোসিটি তৈরির জন্যও যখন তারা ঢাল বেয়ে উঠতো, যেমন কোন পাহাড়ে, তখন ট্র্যাকশন তাদের শরীরের গতিশীলতা ও ভারসাম্য ঠিক রাখার প্রয়োজনীয় শক্তি ও প্রকৌশলগত সুবিধা দিতো। আর যে সব ডায়নোসর প্রাকৃতিক নির্বাচনের এ প্রকৌশলগত সুবিধা পেয়েছিলো, তাদের জিনই জিনপুলে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছিলো, আর এভাবে ক্রমাগত অবিরাম বিরাট ব্যান্ডউইথের সময়ের বিবর্তনীয় ধারায় আধুনিক পাখিদের উদ্ভব হয় যার প্রমাণ অজস্র ট্রান্সজিশনাল ফসিল। এসব ফসিলের মধ্যে বন্যা আহমেদ তার ডায়োনিটিক ডকুমেন্টারিতে যে সকল হারানো মিসিং লিংক এর প্রমাণ উপস্থাপন করেছেন তার মধ্যে ছিলো –
১. জার্মানে পাওয়া আর্কিওপটেরিক্স। ১৫ কোটি বছর এর পুরানো তিনভাগে বিভক্ত পাখির মতো পালক সহ পাখা। আবার অন্যদিকে ডায়নোসরের মতো লম্বা লেজ ও দাঁতওয়ালা চোয়াল।
২. ১৯৪৩ সালে জিবাশ্মবিদ জন হ্যারল্ড অস্ট্রম খুঁজে পান সাড়ে এগার কোটি বছর পূর্বের ছোট এক ধরণের শিকারী ডায়নোসর, ডায়নোকাস (Deinoychus)। তাদের হাড়ের গড়ন থেকে অনুমান করা যায় তারা ছিলো ক্ষিপ্রগতি সম্পর্ণ ও নির্মমভাবে ছিড়ে খেতো তাদের শিকার।
বিশ্লেষণ- অস্ট্রম তুলনা করে দেখিয়েছেন যে আর্কিওপটেরিক্সে ও ডায়নোকাস দুজনেরই হাত লম্বা। একই রকমের গাড় ও কোমরের হাড়। এবং আধুনিক পাখির মতো হাড়ের ভেতরটা আবার ফাঁফা। পাখিদের মতো ইংরেজি অক্ষর এস আকৃতির গলাও দেখা গিয়েছিলো।খুঁজে পাওয়া গিয়েছিলো উইশবোন। ডারউইনের বুলডগ নামে পরিচিত টমাস হাক্সলি যে পূর্ব অনুমান করেছিলেন তার সাথে মিলে গেলো সম্পূর্ণ ভাবে।
বন্যা আহমেদ বলেন, সব ডায়নোসররা থরপোডদের মতো বিশাল ছিলোনা। অথবা ধীর গতিতেও চলাফেরা করতোনা। পাখিরা এসেছে আর এক ধরণের ডায়নোসর থেরাপোড থেকে। এগুলোর অনেকেই ছিল আকারে ছোট, উষ্ণ রক্ত, সক্রিয় ও ক্ষিপ্রগতি সম্পন্ন। টিরেক্স থেকে পাখিদের বিবর্তন ঘটেনি। কিন্তু তারা একই দলের অন্তর্ভুক্ত। মুরগির পায়ের সাথে টিরেক্সের পায়ের এক অকল্পনীয় মিল রয়েছে যা তার “Think” এর ভিডিওটি দেখলে জানতে পারবেন।
৩. মঙ্গোলিয়ার গভীর মরুভূমিতে আট কোটি বছর পুরানো ডিমসহ ডায়নোসরদের বাসা পাওয়া যায়। এটি ছিলো ৫০ টি ডায়নোসরের ডিম সহ পনেরটি বাসা। তার মানে, আজকের পাখিরা যে দলবেঁধে বসবাস করে, ডিমে তা দেয় এবং বাচ্ছা লালন পালন করে তার সূচনা ঘটেছিলো কোটি কোটি বছর পূর্বে।
( কিন্তু বন্যা আহমেদ, এ ডায়নোসরগুলোর বাসাগুলো ঠিক কোন সময় পাওয়া গিয়েছিলো সে ধরণের সময়গত ইনফরমেশন পুরোপুরি নিশ্চিত করেননি ( যদিও সম্ভবত এগুলো নব্বই দশকের বলেছেন ) । পরবর্তিতে আমি ব্যাপারটা কিছুটা ক্লিয়ার হই ।। জেরি কয়েন তার Why the Evolution is Truth গ্রন্থে একটি থেরাপোড ডায়নোসরের ২২ টি ডিমের কথা উল্লেখ করেন। যেখানে একটি স্ত্রী থেরাপোড তার ২২ টি ডিমে ব্রুডিং করেছিলো। যাহোক এ ডায়নোসরদের নাম রাখা হয়েছিলো টেরিবল লিজার্ড, কিন্তু ভুলক্রমে তাদের নাম টেরিবল লিজার্ড দেয়া হলেও তারা মমতাময়ী মা বাবাই ছিলো । )
৪. আশির দশক থেকে বিজ্ঞানীরা ডায়নোসর থেকে পাখির বিবর্তনটিকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে শুরু করলেন। নব্বই এর দশকে বিজ্ঞানীরা খুঁজে পেতে শুরু করলেন, মেসোযোয়িক যুগ( ৬.৬-২৫ কোটি বছর পূর্ব পর্যন্ত) ও ক্রেটেসিয়াস( ৬.৬- ২০.৬ কোটি বছর পূর্ব) যুগের হাজার হাজার ক্ষুদ্র ডায়নোসরের ফসিল। অনেক ফসিল এতটা ভালোভাবে সংরক্ষিত ছিলো যে তাদের ভেতরের অঙ্গগুলোও সুস্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছিলো।
৫. এরপর ২০০৪ সালে পাওয়া গিয়েছিলো Tyrannosaur Dilong। যারা বার কোটি বছর পূর্বে পৃথিবীতে ঘুরে বেড়াতো।
৬. ২০১২ সালে পাওয়া গিয়েছিলো Yutyrannus। এ ডায়নোসরের ফসিলও চীনে পাওয়া গিয়েছিলো যারা ক্রেটেসিয়াস যুগে বাস করতো। এরা ছিলো পালকে আবৃত ছোট থেরাপোড ডায়নোসর।
৮. সাইনোসোরাপটার্ক্স, ১৩ কোটি বছর আগের এ ডায়নোসরদের ফসিল পাওয়া যায় ১৯৯৬ সালে, চীনে। এরা ছিলো ছোট দ্বিপদী।
৯. ময়ুরের মতো দেখতে একটি ডায়নোসর পাওয়া যায় ১৯৯৮ সালে ক্রেটেসিয়াস যুগের এ ডায়নোসরটির নাম Caudipteryx।
১০. কনফুসিয়াসর্নিসের(Confuciusornis) ফসিল পাওয়া যায় ১৯৯৩ সালে। যাদের লেজের হাড় তখনও লম্বা কিন্তু পাখির মতো ঠোট।
১১. ফুকিওপটেরিক্স প্রাইমা ( Fukipteryx) । ২০১৩ সালে, জাপানে উদ্ধার করা দেহাবশেষ থেকে দেখা যায় লেজের হাড় ছোট হয়ে এসেছে, আধুনিক পাখির মতো।
১২. চার ডানা বিশিষ্ট মাইক্রোর র্যাপ্টর( Microraptor) , বাহারি পালকের এ ডায়নোসরের ফসিল পাওয়া যায় ২০০৩ সালে, চীনে। যাদের গায়ের পালক অনেকটাই আধুনিক পাখির মতো। এভাবে অজস্র ফসিল পাওয়া যায়। দাঁতসহ অথবা পাখিদের মতো দাঁতহীন ডায়নোসর, বিভিন্ন ধরণের ঠোট, পালক ও পাখাসহ, উড়তে সক্ষম ও উড়তে অক্ষম। বাদুরের মতো পাখা সম্পর্ণ Ambopteryx। ঘুমন্ত অবস্থায় ফসিল হয়ে যাওয়া ৬ কোটি আশি লাখ বছর পুরানো কিন্তু আবার আধুনিক হাঁসের মতো ডায়নোসর! এখান থেকেই ক্রমশ সুস্পষ্ট হয়েছে যে থেরাপোড ডায়নোসরদের হাতই পরবর্তীতে পরিণত হয়েছে পাখির ডানায়। আর্কিওপটেরিক্স থেকে আজকের আধুনিক পাখিদের এ বিবর্তন ঘটেছে ষোল কোটি বছর পূর্বে। প্রাকৃতিক নির্বাচনের হাত ধরে Convergent বা সমান্তরাল বিবর্তনের একটি প্রক্রিয়ায়।
ডকুমেন্টারির শেষে বন্যা আহমেদ বলেন, “”আর এভাবে বিভিন্ন রকম আকার, আকৃতি ও বর্ণের ডানার বিবর্তন ঘটেছে ডায়নোসদের মধ্যে। অন্যান্য প্রাণীদের মতোই ডায়নোসরা সরলরৈখিকভাবে বিবর্তিত হয়নি। তাদের বিবর্তন ঘটেছে প্রাকৃতিক নির্বাচনের দীর্ঘ আঁকাবাকা পথে আর ঘটে চলছে জটিল কিন্তু অপূর্ব এ বিবর্তন। ধীরে ধীরে গত তিন দশকে আনবিক, জীববিদ্যা, জেনেটিক্স ও জিনোমিক্সের গবেষণা থেকে অজস্র ফসিল বেরিয়ে আসে আর সমাধান হয় দেড়শত কোটি বছরের সেই গভীর ধাঁধার, গড়ে উঠলো পাখির বিবর্তন এর দীর্ঘ ও পরিস্কার একটি ছবি। টেরাসরদের মতো সেই বিশাল ভয়ংকরী উড়ন্ত ডায়নোসরদের থেকে নয় বরং ছোট থেরপডদের থেকেই বিবর্তিত হয় আধুনিক পাখি। সাড়ে ছয় কোটি বছর পূর্বে প্রলংকারী গ্রহাণুর আঘাতে সেদিন বেশিরভাগ ডায়নোসর বিলুপ্ত হয়ে গেলেও শতকরা ২০ ভাগের মতো টিকে যায়।
একদল ক্ষিপ্রগতিসম্পন্ন, দ্বিপদী, পাখির মতো ডানা ও পালকে আবৃত থেরাপোড ডায়নোসররাই সেদিন টিকে যায়। ঘণ বিলুপ্তির ফলে প্রতিযোগিতা কমে যাওয়ার এ ছোট থেরাপোডদের দ্রুত বিকাশ ঘটতে শুরু করে। এই যে আমরা আজ গাছে, পানিতে, মাটিতে ও মরুভূমিতে প্রায় ১০,০০০ পাখি দেখি তারা ডায়নোসর ছাড়া আর কিছুই নয়।“’
উপস্থাপনার পদ্ধতি এবং প্রতিটি সিকোয়েন্স ছিলো পরিমিত। এত অল্প পরিসরে আর বিস্তারিত প্রয়োজন ছিলোনা বলেই আমি মনে করি। থ্রোনের টাইম মেশিন তৈরি করে মিলিয়ন মিলিয়ন বছর অতীত ভ্রমণ করলে, প্যারালাল ইউনিভার্সের যে গভীর প্যারাডক্সে আমাকে পড়তে হতো, শ্রদ্ধেয় বন্যা আহমেদ ও তার দল আমাকে সে ভয়াভহতা থেকে উদ্ধার করেছেন। সমালোচনা করলে আর্টিকেলটি অনর্থক প্রসারিত হবে কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হবেনা। এত সুন্দর Mind Bending Video তৈরি করার জন্য “Think” কে আবারও ধন্যবাদ।
তথ্যসুত্র-
১) Think Bangla, 2) Why the Evolution is Truth