একুশ শতাব্দীতে এসে সেপিয়োসেক্সচুয়ালিটি নিয়ে হাজার হাজার আর্টিকেল লেখা হয়েছে। ডিজিটালস্পেসে বাস করেন এমন অনেক তরুণ আজ সেপিয়োসেক্সচুয়াল। যে সকল নেটিজেন এক সময় জানতোই না সেপিয়োসেক্সচুয়ালিটি কী তারাও আজকাল নিজেদের সেপিয়োসেক্সচুয়াল দাবি করছেন গণতান্ত্রিক হারে। সেন্ট্রাল আলোচনায় যাওয়ার পূর্বে প্রথমে আমরা সেপিয়োসেক্সচুয়ালিটির সরল একটি সংজ্ঞা জেনে নেই। সেপিয়োসেক্সচুয়ালিটি হলো সুপারিয়র বুদ্ধিমত্তার প্রতি শারীরিক ও আবেগীয় আকর্ষণ অনুভব করা। তবে সেপিয়োপিল এবং সেপিয়োসেক্সচুয়ালিটির ভেতরকার তারতম্য আপনাকে বুঝতে হবে। অন্যথায় আমরা সেপিয়োসেক্সচুয়ালিটি ব্যাপারটাকে সমস্ত ইতিহাসজুড়েই ভুল বুঝবো। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি দশজন তরুণের মধ্যে অন্তত একজন পারসোনালিটির চেয়ে ইন্টিলিজেন্সকে অধিক আকর্ষণীয় মনে করে। ডাঃ গিলস গিগনাক ইউডাব্লু যিনি এ গবেষণার একজন অথর তিনি বলেন, সেপিয়োসেক্সচুয়ালিটি হলো জেনুইন সেক্সচুয়াল অরিয়েন্টেশন যা জনসংখ্যার ক্ষুদ্র একটি অংশের মধ্যেই কেবল কাজ করে। জনপ্রিয় সংস্কৃতির সংজ্ঞা অনুযায়ী, সেপিয়োসেক্সচুয়াল হলো এমন একজন ব্যক্তি যিনি উচ্চমাত্রিক আইকিউকে সেক্সচুয়ালি অ্যাট্রাক্টিভ মনে করেন, অন্তত কিছু ব্যক্তি।
সেপিয়োসেক্সচুয়ালঃ সেপিয়োসেক্সচুয়াল বলতে আমরা সে সকল মানুষকে বুঝবো যারা অন্যের প্রতি শারীরিক ও আবেগীয় অ্যাট্রাকশন অনুভব করে বুদ্ধিবৃত্তিক পর্যায় থেকে। সংজ্ঞা অনুযায়ী, সেপিয়োসেক্সচুয়াল হলো এমন একদল মানুষ যাদের ভিত্তি বুদ্ধিমত্তা, যদিও সব ক্ষেত্রে এটা সত্য নয়। সেপিয়োসেক্সচুয়াল বলতে, আমরা বুঝবো এমন কাউকে যারা উচ্চমাত্রিক বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন কারো প্রতি সেক্সচুয়াল ও সেন্টিমেন্টাল প্রবণতা লালন করে।
সেপিয়োসেক্সচুয়ালের চরিত্রঃ এসব কথা শোনার পর আপনার নিজেকেও সেপিয়োসেক্সচুয়াল মনে হতে পারে। তাই ব্যাপারটা পরিস্কার করার জন্য আপনার কাছে এ প্রবণতাগুলোর সাথে জড়িত প্রধান চরিত্রগুলো বর্ণনা করতে হবে। আপনার মধ্যে যদি এ ধরণের চরিত্র কাজ করে তবে আপনিও সেপিয়োসেক্সচুয়াল। যদিও আপনি জানেন না। সেপিয়োসেক্সচুয়ালিটির প্রধান চরিত্র হলো নতুন কিছু অনুসন্ধান করা। তারা জানাশোনা ও ওল্ড ভার্সন রিয়েলিটির মধ্যে পড়ে থাকতে পছন্দ করেনা। একজন সেপিয়ো তার সীমাবদ্ধ জ্ঞান সম্পর্কে সচেতন এবং সে তার জ্ঞানকে অধিক থেকে অধিকতর সম্প্রসারণ করতে চায়। সেপিয়োসেক্সচুয়ালরা ইন্টেলেকচুয়াল অ্যাসিভমেন্টকে চূড়ান্ত মনে করে এবং বিশ্বাস করে একমাত্র বুদ্ধিমানদের পক্ষে এ জগতের উন্নয়ন সম্প্রসারণ করা সম্ভব। সাধারণত সেপিয়োসেক্সচুয়ালরা অগভীর হয়না। যে সকল ব্যক্তি মনের দিক অনেক সমৃদ্ধ তাদের শরীর সেপিয়োর কাছে গুরুত্ববহন করেনা। একটি গভীর কথোকপথন থেকে তাদের কাছে আর কোনোকিছুই গুরুত্বপূর্ণ নয়, যা কিছুক্ষণের মধ্যেই আপনাকে আপনার চারপাশের বিশ্বের সাথে সম্পৃক্ত করে দেয় এবং যার প্রতিটি শব্দ বাস্তবতার নতুন নতুন জানলা খুলে দেয়।
অপেন মাইন্ডেডঃ যে সকল মানুষের সেপিয়োসেক্সচুয়ালিটির প্রতি প্রবণতা কাজ করে তারা খোলা মনের হয়। তারা নতুন এক্সপেরিয়েন্স ও নলেজ দ্বারা প্রভাবিত। শুধুমাত্র সম্পর্কের ক্ষেত্রেই নয় যৌনতার ক্ষেত্রেও। যেহেতু সেপিয়োসেক্সচুয়ালদের প্রেম আপনার ব্রেন কানেক্টমের সাথে, তাই তারা এটা বিচার করেনা যে আপনি নারী অথবা পুরুষ।
পড়াশুনা ও বুদ্ধিবৃত্তিক কার্যক্রম দ্বারা আনন্দিত হওয়াঃ আপনার যদি কবিতা শুনতে বিরক্ত লাগে অথবা আপনি যদি কারো PHD দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে থাকেন তবে আপনি অবশ্যই সেপিয়োসেক্সচুয়াল না। একজন সেপিয়োসেক্সচুয়াল একটি সুপরিচিত উক্তি শুনলে পরমানন্দে চলে যেতে পারে অথবা একটি কবিতা শুনে ক্লাইম্যাক্সে চলে যেতে পারে যা তার শরীরের ফাইবারকে নাড়িয়ে দেয়। সেপিয়োসেক্সচুয়ালদের কাছে নিরাপত্তা ও সম্পত্তি নিয়ে কথা বলে এমন একজন ব্যক্তির চেয়ে একজন বিশেষজ্ঞ অনেক বেশি লোভনীয়।
লিভ আউটসাইড দ্য বক্সঃ সেপিয়োসেক্সচুয়াল বলতে সাধারণত তাদেরকে বোঝায় যাদেরকে ইন্টেলেকচুয়াল প্রবণতা দিয়ে চিহ্নিত করা হয়। তারা শুধু বাক্সের বাহিরে এসেই চিন্তা করেনা। তারা এর বাহিরে এসে বাস করে। সামাজিক স্ট্যান্ডার্ড ও প্রেসার থেকে অনেক অনেক দূরে শূন্যে মহাশূন্যতায়।
সেপিয়োপিল ও সেপিয়াওসেক্সচুয়ালদের মধ্যকার তারতম্যঃ সেপিয়োপিল হলো তারা যারা উচ্চ সূচকের বুদ্ধিমত্তার প্রতি সেক্সচুয়াল প্রবণতা অনুভব করে। সেপিয়োপিলদের কাছে একজন বুদ্ধিমান সেক্সচুয়াল অবজেক্ট হিসেবে বিবেচিত হয়। সেপিয়োসেক্সচুয়ালরা ইন্টেলেকচুয়াল ব্যক্তির প্রতি শুধু শারীরিক ও আবেগীয় তাড়নাই অনুভব করেনা, তার সাথে দীর্ঘস্থায়ী বন্ধনও তৈরি করে কিন্ত সেপিয়োপিলরা শুধু তাদের সেক্সচুয়াল স্যাটিসফেকশনকেই গুরুত্ব দেয়, আবেগীয় কোনো বন্ধনে যেতে চায়না।
ইতিহাসঃ আমরা পূর্বে মনে করতাম সেপিয়োসেক্সচুয়ালিটি প্রথম একুশ শতাব্দীতে প্রতীয়মান হয়েছে কিন্তু ইতিহাসে এর বিভিন্ন ভার্সন রয়েছে। আর এজন্য অবশ্যই আমাদেরকে আদিম জনগোষ্ঠীদের মধ্যে সেপিয়োসেক্সচুয়ালিটি অনুসন্ধান করতে হবে।
বিবর্তনঃ বিবর্তনের দৃষ্টিকোণ থেকে মানুষ শুধু আজকেই নয়, তারা সবসময় সেপিয়োসেক্সচুয়াল। এই স্বীকৃতি আমাদের প্রজাতির বিবর্তনের উপর নির্ভর করছে।। ন্যাচারাল সিলেকশনে যে সকল ব্যক্তি অধিক ইন্টেলেকচুয়াল ছিল তারাই প্রজননের ক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করেছে। আর তাছাড়া অস্ত্রের ব্যবহার বুদ্ধিমত্তার অনেক বড় একটি টুলস। আজ আমাদের মধ্যে যারা ল্যাপটপকে প্রোগ্রামিং এর জন্য ব্যবহার করতে পারে তারা অন্যান্যদের তুলনায় সফল। এমনকি গুহা মানবদের মধ্যেও যারা উচ্চতর দক্ষতার সাথে যন্ত্র ব্যবহার করতে পারতো তারা যৌন আবেদনময় হিসেবে বিবেচিত হতো। আমাদের মহাবিশ্ব যদি বিগ ফ্রিজের শিকার হয় তবে একমাত্র বুদ্ধিমানরাই থিয়োরি অব এভরিথিং-এর ইকুয়েশনকে কাজে লাগিয়ে আমাদের বিকল্প মহাবিশ্বে পৌঁছে দিতে পারবে। তার মানে দেখা যাচ্ছে, ইন্টেলেকচুয়ালিটির উপরই হিউম্যান সিভিলাইজেশনের টিকে থাকা নির্ভরশীল। আর তাই সেপিয়োসেক্সচুয়ালির প্রতি মানুষের প্রবণতা আদিম।
সামাজিকঃ এবার আমরা যদি আমাদের প্রশ্ন করি সেপিয়োসেক্সচুয়াল কে এবং সভ্যতার পরিবর্তনে তাদের ভূমিকা কী তবে আমাদের বলতে হবে তারা হলো একটি জাতির পরিবর্তনের মেরুদণ্ড। কারণ বুদ্ধিবৃত্তিক আধিপত্যের কারণে এরা রাজতন্ত্র, প্রজাতন্ত্র অথবা অভিজাত সব ক্ষেত্রেই উচ্চতর আসন দখল করতে পারে। আর এজন্য যে সকল ব্যক্তি বুদ্ধিমান ও স্মার্ট মানুষ পছন্দ করবে তারা সামাজিক সুবিধা পাবে। এক্ষেত্রেও আমরা নারী ও পুরুষের মধ্যে উচ্চতর বুদ্ধিসম্পন্ন পুরুষ/নারী পাওয়ার জন্য জেলাসি দেখতে পাবো। আরও দেখুনঃ সেপিওসেক্সচুয়াল এলিয়েন
পূর্বসূরিঃ আমাদের কাছে এমন অনেক সিভিলাইজ্যাশন সম্পর্কে যথেষ্ট প্রমাণ আছে যারা সৌন্দর্যের ক্ষেত্রে বুদ্ধিবৃত্তিক উন্নতিকে সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছিল। কিছু দাবির অস্পষ্টতা বাদ দিলেও, প্রাচীন গ্রীস ছিল সেপিয়োসেক্সচুয়ালিটির এক নিখুঁত দৃষ্টান্ত। গ্রীকদের জন্য এমন কোনো ব্যক্তির প্রেমে পড়া অসম্ভব ও হাস্যকর ছিল যার মন বিকশিত নয়। একজন অজ্ঞ মানুষকে গ্রীকরা জন্তু মনে করতো এবং তার প্রতি যৌন আকাঙখা অনুভব করা ছিল তাদের কাছে দুঃস্বপ্ন। আর এজন্য গ্রীসে যে সকল মানুষ তার জ্ঞান ও মনের চর্চা করতো তারাই ছিল সুন্দর। এজন্য এটার নিশ্চিত করে বলা বৈধ যে, গ্রীকরা সেপিয়োসেক্সচুয়ালিটির একটি ঐতিহাসিক চিহ্ন।
উপসংহারঃ সেপিয়োসেক্সচুয়ালিটি হলো একটি আকাঙখা যা মানুষ অনুভব করে। এটি বিপরীত লিঙ্গ হোক বা না হোক সেটা মূখ্য নয়, মূখ্য বুদ্ধিমত্তা ও জ্ঞান। সংস্কৃতি ও সেক্সচুয়ালিটি নির্বিশেষে এটি এখন আলোচিত হচ্ছে। আপনি তখনই নিজেকে সেপিয়োসেক্সচুয়াল বলবেন যখন আপনি আইনস্টাইনের শরীর অপেক্ষা তার জ্ঞান ও বুদ্ধির প্রতি শারীরিক ও আবেগীয় উদ্দীপনা অনুভব করবেন। আইনস্টাইনের সমীকরণ সম্পর্কে কথা বলার সময় অবশ্যই আপনার ক্লাইম্যাক্স তৈরি হবে, দেহের ফাইবারে শিহরন জেগে উঠবে । কিন্তু এটা বলা অবশ্যই বৈধ নয় যে,সেপিয়োসেক্সচুয়ালরা শুধু বুদ্ধিমত্তা পছন্দ করে। আমাদের কাছে এমন অনেক বিস্তারিত আছে যা আমাদেরকে এ ধরণের সাধারণীকরণ থেকে দূরে থাকতে বলে।
তথ্যসূত্রঃ