Can't find our books? Click here!
এলিয়েন অস্তিত্ব থাকার সম্ভাবনা ১০০%

এলিয়েনদের অস্তিত্ব থাকার সম্ভাবনা ১০০%

অভি কনটেস্ট ২০২২, রাতুল তালুকদার রুদ্র

এলিয়েন নিয়ে যেন আমাদের বিস্ময়ের শেষ নেই। সমগ্র মহাবিশ্বে এলিয়েন আছে কি নেই তার  নির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ না পেলেও বিজ্ঞানীরা গবেষণা করছেন এলিয়েনের অস্তিত্ব নিয়ে। এমনকি এলিয়েন নিয়ে তৈরি করা হয়েছে অনেক চলচ্চিত্র যা সমগ্র পৃথিবীতে জনপ্রিয়তা লাভ করে। মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা জেমস টেলিস্কোপ এর সাহায্যেও মহাকাশে খুঁজে বেরাচ্ছে এলিয়েন। 

আমাদের এই মহাবিশ্ব প্রতিনিয়ত প্রসারিত হচ্ছে। বিশাল এই মহাবিশ্বে হাজার হাজার গ্রহে বা নক্ষত্রেই থাকতে পারে এলিয়েন বা ভীনগ্রহী প্রাণী। এমনকি আমাদের সৌরজগতের বাকি গ্রহগুলোতে ও প্রাণী থাকা অসম্ভব নয়। আর তাকেই হয়তো বলা যেতে পারে ভিনগ্রহের প্রাণী বা এলিয়েন। উদাহরণ স্বরুপ আমরা বলতে পারি যে মঙ্গলে মাটির নিচে পানির সন্ধান পাওয়া গেছে যা অনুজীবদের বাসযোগ্য ছিলো। সুতরাং এখনো মঙ্গলে প্রাণের অস্তিত্ব থাকতেই পারে। অর্থাৎ পৃথিবীর বাইরে যেকোনো গ্রহে, নক্ষত্রে,মহাবিশ্বের যেকোনো প্রান্তেই প্রাণীর অস্তিত্ব বা ভিনগ্রহের প্রাণীর সন্ধান পাওয়া যেতেই পারে।

সূর্যের কাছের গ্রহ মঙ্গলেও পাওয়া গেছে প্রাণের সন্ধান। মঙ্গল গ্রহ সূর্যের কাছাকাছি অবস্থানেই রয়েছে যাকে সৌরজগতের (habitable zone) বসবাসের উপযোগী অঞ্চল বলা হয়, যাতে করে বিজ্ঞানীরা মনে করেন প্রাণের বিকাশের জন্য এখানে উপযুক্ত পরিবেশ রয়েছে। মঙ্গলে মাটির নিচে পানি আছে বলে ধারণা করা হয়। ২০০৮ সালে মঙ্গলের মাটিতে পানির অস্তিত্ব প্রমাণ করেন মার্স ল্যান্ডার। মঙ্গলের মাটির নমুনাকে তাপ দিয়ে জলীয় বাষ্প আবিষ্কার করা হয়। যার ফলে বিজ্ঞানীরা মনে করেন যে মঙ্গলেও প্রাণী থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। যেহেতু পৃথিবীর বাইরে উদ্ভাবিত প্রাণীকেই আমরা ভিনগ্রহী প্রাণী বলি সুতরাং মঙ্গলেও যদি প্রাণীর অস্তিত্ব থেকে তাহলে আমরা তাকে উপেক্ষা করতে পারিনা।

শুক্র গ্রহে প্রাণীর অস্তিত্ব নিয়েও রয়েছে অনেক প্রতিবেদন, অনেক বিতর্ক। ২০২০ সালে শুক্র গ্রহের মেঘমালায় শনাক্ত করা হয় ফসফিন গ্যাস যার ফলে বিজ্ঞানীরা শুক্র গ্রহেও প্রাণের অস্তিত্ব সম্পর্কে ভাবছে। যেই গ্যাস শনাক্ত করে অধ্যাপক গ্রেভসের দল। একটি ফসফরাস আর তিনটি হাইড্রোজেন গ্যাস নিয়ে গঠিত এই ফসফিন গ্যাসের প্রতিটি এখন প্রশ্ন হলো কিভাবে শুক্র গ্রহে এই গ্যাসের অস্তিত্ব পাওয়া গেলো। নেচার এস্ট্রোনমি একটি পর্যবেক্ষণে বলে, হয়তো শুক্র গ্রহে ফসফিন গ্যাস উৎপাদনের একটি প্রাকৃতিক উৎস। যা প্রাণ তৈরি বা জীবনের জন্য একটি অজৈব উৎস। তবে আমাদের বেঁচে থাকার জন্য অক্সিজেন হলো সবচেয়ে প্রয়োজনীয় উপকরণ। তাহলে শুক্র গ্রহে যদি প্রাণের অস্তিত্ব থাকে তাহলে তারা কিভাবে শ্বাস গ্রহণ করে? শ্বাস গ্রহণ করা তো অনেক দূরের কথা,শুক্র গ্রহ জলও  একটি জ্বলন্ত চুলার মতো এবং পৃথিবীর সাথে তুলনা করলে ৯৬% হলো বসবাসের অযোগ্য। তাহলে প্রাণের অস্তিত্ব কোথায়? সেক্ষেত্রে বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন যে, শুক্র পৃষ্ঠের ৬০ কিলোমিটার উচ্চতায় রয়েছে প্রাণের সন্ধান৷ তবে যে এখানেই শেষ তাই নয়, শুক্র পৃষ্ঠের ৬০ কিলোমিটার উচ্চতায় যে মেঘমালা রয়েছে সেখানে রয়েছে ৭৬-৮০ ভাগ সালফিউরিক এসিড যা প্রাণী কোষ উৎপাদনে ক্ষতিকর। এক্ষেত্রেও বিজ্ঞানীদের ধারণা সেই প্রাণীরা হয়তো এসিড থেকে বাঁচার জন্য কোনো জৈব রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করে থাকেন। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কলিন উইলসন, যিনি ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির শুক্র গ্রহের মহাকাশযান পাঠানোর প্রকল্পে কাজ করেছেন, তিনি বলছেন, অধ্যাপক গ্রেভেসের পাওয়া এসব তথ্য গ্রহটি নিয়ে গবেষণায় নতুন মাত্রা যোগ করবে। এখন শুক্রগ্রহে আরেকটি মহাকাশযান পাঠিয়ে এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হবে।২০৩০ সালের ভেতর শুক্র গ্রহে আরেকটি মহাকাশযান পাঠানোর পরিকল্পনা করছে নাসা। অর্থাৎ শুক্র গ্রহে ও যে প্রাণীর অস্তিত্ব ছিলোনা বা নেই তাও সম্পূর্ণ ভাবে বলা যাচ্ছেনা। বিজ্ঞানীরা ও বিষয়টা উপেক্ষা করছেন না।

ভীনগ্রহের প্রাণী নিয়ে বিজ্ঞানী ফার্মি বলেন,

যদি মহাবিশ্বে এলিয়েন এর অস্তিত্ব থাকতো তাহলে তারা নিয়মিত পৃথিবীতে যাতায়াত করতো। এবং পৃথিবীর মানুষজন তাদের দেখতে পেতো। আর যদি তারা পৃথিবীতে না আসে তার মানে মহাকাশযান তৈরি করার মতো শক্তি সামর্থ্য আর প্রযুক্তি কোনোটিই তাদের নেই অর্থাৎ তারা অতি উন্নত প্রাণী নয়। 

এছাড়াও আর্জেন্টিনার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সাগরপৃষ্ঠ থেকে ৪ হাজার ৭০০ মিটার (১৫ হাজার ৪০০ ফুট) উপরে লেক ডায়মান্ট নামক হ্রদে ব্যাকটেরিয়া পাওয়া গেছে। এ আবিষ্কার থেকে ভিনগ্রহে প্রাণের ব্যাপারে সূত্র পাওয়া যেতে পারে। কেননা হ্রদটির কাছেই রয়েছে মাইপো আগ্নেয়গিরি। এখানে কোটি কোটি ব্যাকটেরিয়া অক্সিজেনের প্রকট অভাবেও বেঁচে আছে। এর আগে বিরুপ পরিবেশে টিকে থাকা ‘এক্সট্রিমোফিলস’ নামক ব্যাকটেরিয়া আবিষ্কৃত হয়। কিন্তু ’পলিএক্সট্রিমোফিলস’ নামক ব্যাকটেরিয়া চরম বৈরি পরিবেশে টিকে থাকতে সক্ষম। ওই হ্রদে আর্সেনিকের নিরাপদ মাত্রার চেয়ে ২০ হাজার গুণ বেশি মাত্রা রয়েছে। তাপমাত্রা প্রায়ই শূন্যের নিচে নামে। কিন্তু অতিরিক্ত লবণক্ততার কারণে বরফ জমাট বাঁধেনা। এ আবিষ্কার ভিনগ্রহের বৈরি পরিবেশেও প্রাণের অস্তিত্বের পক্ষে রায় দেয়। আরও পড়ুনঃ মেট্রিওস্কা ব্রেন; এলিয়েনরা কী পোস্ট বায়োলজিক্যাল ?

আমাদের মহাবিশ্বে লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি গ্রহ,নক্ষত্র রয়েছে। আমাদের পৃথিবীতে যেভাবে মানুষের জীবনের সঞ্চার হয়েছে ঠিক তেমনভাবেই মহাবিশ্বে ও প্রাণের সঞ্চার পাওয়া যেতে পারে বলে মনে করেন অনেক দার্শনিক।  এতো বড় আমাদের মহাবিশ্ব। মহাবিশ্বের আয়তন বা ব্যাস প্রায় ২৮ বিলিয়ন আলোকবর্ষ।  এতো বড় মহাবিশ্বে আমরা যদি মনে করি পৃথিবী ব্যতিত কোথাও কোনো প্রাণীর অস্তিত্ব নেই তাহলে সেটি হবে শুধুমাত্র আমাদের নির্বুদ্ধিতার পরিচয় মাত্র। বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং ও বলেন,মহাবিশ্বে শুধু আমরা একা না। আমাদের থেকেও উন্নত প্রাণী এই মহাবিশ্বে থাকতে পারে যারা আমাদের চেয়ে অধিকতর উন্নত। এমনকি তিনি মানবসভ্যতাকে সাবধান ও করেছেন এলিয়েনদের থেকে। 

বিজ্ঞানী ড্রেক, এলিয়েন বা ভিনগ্রহের প্রাণী নিয়ে তার সমীকরণ টি হলো নিম্নরুপ- N = R × P × E × L × I × T

এখানে,

  • N = এই মুহূর্তে যে কয়টি বুদ্ধিমান প্রাণীর জগৎ থেকে মানুষের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হচ্ছে তার সংখ্যা
  • R = নক্ষত্রমণ্ডলে (galaxy) নক্ষত্রের (stars) সংখ্যা।
  • P = একটা নক্ষত্রকে ঘিরে গ্রহ পাবার সম্ভাবনা।
  • E = এরকম গ্রহ থাকলে প্রাণের বিকাশ উপযোগী গ্রহের সংখ্যা। 
  • L = প্রাণ বিকাশ উপযোগী গ্রহ থাকলে সত্যি সত্যি প্রাণের বিকাশ হবার সম্ভাবনা। 
  • I = সত্যি সত্যি প্রাণের বিকাশ হলে সেগুলো বিবর্তনের ধারায় অন্য জগতের প্রাণীর সাথে যোগাযোগের মতো বুদ্ধিমত্তা অর্জনের সম্ভাবনা। 
  • T = যে সময় পর্যন্ত সেই বুদ্ধিমান প্রাণী টিকে থাকতে পারে। 

এলিয়েন এর অস্তিত্ব নিয়ে এখনো ড্রেকের সমীকরণটা প্রচলিত।

 কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ আরিক কেরশেনবাউম বলেন,বিজ্ঞানীরা অধ্যয়নের জন্য এখনো কোনো এলিয়েনের সন্ধান পায়নি তবে কিছু কিছু জিনিস আছে যা আমরা নিশ্চিত ভাবেই বলতে পারি। তিনি বলেন,প্রাণীরা যা করে সবই বিবর্তনের জন্য। বিবর্তন একটি প্রাকৃতিক সার্বজনীন প্রক্রিয়া। যেহেতু বিবর্তন একটি সার্বজনীন প্রক্রিয়া অর্থাৎ সমগ্র মহাবিশ্বের জন্য এটা ব্যাখ্যামূলক প্রক্রিয়া। আমরা পৃথিবীতে যে নীতিগুলো করি উন্মোচন পৃথিবীর বাইরেও সমগ্র মহাবিশ্বের বাকি অংশেও তা প্রযোজ্য হওয়া উচিত। তাই আমরা যদি ভিনগ্রহের জীবন আবিষ্কার করি তাহলে একই পদ্ধতিতে আমরা তাদের(এলিয়েনদের) বিবর্তিত ইতিহাস জানতেই পারি। এটা কোনোভাবেই অসম্ভব নয়। 

বিবর্তন কিভাবে সার্বজনীন প্রক্রিয়া?  তার উত্তরে তিনি বলেন,মহাবিশ্বে জটিল বলতে কিছুই নেই অর্থাৎ মহাবিশ্বে যদি অন্য প্রাণীর অস্তিত্ব থাকে সেটা অবশ্যই একা সৃষ্টি হয়নি। অবশ্যই অন্য কোনো প্রাণী থেকেই তার উৎপত্তি। আমরা মানুষ ও যেভাবে বিবর্তিত হয়েছি তেমনিভাবেই ভিন্নগ্রহের প্রাণী থাকলেও তা বিবর্তিত হয়েই এসেছে। যার প্রমাণ তিনি অভিসারী বিবর্তন থেকে পেয়েছেন। এখন অভিসারী বিবর্তন কি? তার উত্তরও তিনি দিয়েছেন। যেমনঃ পালকযুক্ত ডাইনোসর সকল আধুনিক পাখিদের পূর্বপুরুষ। কারণ বর্তমান আধুনিক পাখিদের সাথে পালকযুক্ত  ডাইনোসরের মিল রয়েছে। যেমন একজন বাচ্চা তার বাবা-মায়ের উত্তরাধিকার হয়ে এই পৃথিবীতে আসে। ঠিক এভাবেই ভিনগ্রহের প্রাণী নিয়ে তিনি বলেন তাদের অস্তিত্ব যদি থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই তার বিবর্তনের কোনো রহস্য আছে বা সেই এলিয়েনের পূর্বপুরুষের অস্তিত্ব আছে। Read More:২০২১ সালে এলিয়েনদের নিয়ে ৯ টি শিক্ষা

এছাড়াও আরিক কেরশেনবাউম বলেন,আমরা কল্পনা করি,আমরা একটা গ্রহ খুঁজে পেয়েছি যাকে আমরা বুদ্ধিমান জীবন বলতে পারি। তবে বুদ্ধি খুবই চমৎকার জিনিস,আমরা একাকী আবিষ্কার করতে পারবোনা বা আমরা বুদ্ধিটাকে ধর‍তে পারবোনা যদি আমরা সেই বুদ্ধি থেকে উপকৃত না হই। সুতরাং আমাদের সেই বুদ্ধি থেকে উপকৃত হতে হবে বা আমাদের পূর্বপুরুষদের উপকৃত হতে হবে। আমরা যদি কোনো বুদ্ধিমান জীবন পাই অবশ্যই সেখানে এমন বুদ্ধিমান প্রাণী রয়েছে যারা তাদের বুদ্ধি থেকে উপকৃত হয়েছে। তার কথা অনুযায়ী মহাবিশ্বে এলিয়েন থাকলেও তারা বিবর্তিত হয়েছে মানুষের মতোই। আর তারা মানুষের মতোই বুদ্ধিমান হতে পারে যা একেবারেই অসম্ভব নয়। 

আমাদের এই এতো বড় মহাবিশ্বে এলিয়েন থাকতেই পারে। একেবারে যে নেই তা স্পষ্ট করে বলা যায়না। আবার এলিয়েন যে আছে তার ও নির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে তার মানে এই নয় যে বিজ্ঞানীরা গবেষণা করছেন না। অধিকাংশ বিজ্ঞানীরাই মনে করেন এলিয়েন রয়েছে, এই মহাবিশ্বে আমরা একা নই। মহাকাশ গবেষণা সংস্থাও কাজ করছেন এলিয়েনদের অস্তিত্ব থাকা নিয়ে। তবে দেখা না মিললেও প্রমাণ সাপেক্ষে এলিয়েন এর অস্তিত্ব আছে বা ছিলো ভাবাটাই বুদ্ধিমত্তার কাজ।

তথ্যসূত্রঃ

এলিয়েনরা কি পৃথিবীতে এসেছিলো? | Do Aliens Exist? | Think Bangla

Why Extraterrestrial Life May Not Seem Entirely Alien, Quanta Magazine

How many alien civilizations are out there? A new galactic survey holds a clue, National Geography

Writer
রাতুল তালুকদার রুদ্র
POSition
Contributor of Hyperspace
Profession
Student