Can't find our books? Click here!
Human embryo. Concept. 3D Render

ভ্রুণ বিবর্তনের টাইম মেশিন

আমার বয়স তখন এই তো বারো-তেরো। বিজ্ঞান জাদুঘরে কাচের জারে পাশাপাশি সাজানো দেখেছিলাম কিছু ভার্টিব্রাটার ফরমালিনে রক্ষিত ভ্রূণ।নিচের লেবেলিং না দেখে আলাদা করতে পারিনি সেদিন কোন ভ্রূণটা মানুষের । তাই এতো বছর বাদে আজ জেরি কয়েনের বিবর্তন কেন সত্য বইটিতে ভন বায়েরকে আমার মতোই বোকা হতে দেখে বিস্মিত হয়েছি খুব । ভন বায়ের ডারউইনকে লিখেছিলেন-
“আমার কাছে স্পিরিটে ডোবানো দুটি ভ্রূণ আছে কাঁচের বোতলে যাদের নাম লাগিয়ে রাখতে ভুলে গিয়েছি এবং বর্তমানে আমি সম্পূর্ণ অপারগ তারা কোন শ্রেণিতে পড়বে সেই বিষয়টি শনাক্ত করার জন্য ।তারা লিজার্ড বা ছোট পাখি হতে পারে বা খুবই তরুণ কোন  স্তন্যপায়ী হতে পারে।তাদের মাথা ও শরীর তৈরি হওয়ার প্রক্রিয়া সাদৃশ্যতা প্রদর্শন করে ।”

বিবর্তনের কিছু মৌলিক সূত্রের মাঝে অন্যতম একটি সূত্র হলো সে সময় ও শক্তি খরচের ব্যাপারে অত্যন্ত কৃপণ। তাই তো সব ভার্টিব্রাটা ভ্রূণের মাঝে এমন নিকট সামঞ্জস্য! ভ্রূণের বিকাশের প্রতিটি স্তরে লিখিত আছে বিবর্তনের পাঁচালী । শাখার যতই বিস্তার ঘটেছে তার সাথে তাল মিলিয়ে পুরনোদের সাথে নতুন কিছু কারুকার্য করে আরেকটু উন্নত হয়েছে প্রজাতির ধারা। তবুও আমরা চোখ বুঁজে অস্বীকার করি এই সত্যকে।যার কারণে স্বর্গের বাগান থেকে ,হঠাৎ শূণ্য থেকে আসার মতোই ,আমরা নিজেদেরকে দৈবের ভুল বলে চিন্তা করে বসি। কিন্তু আসলেই কি তাই?আসলেই কি হুট করে আমরা মানুষ প্রজাতির রূপ পেলাম?


কিন্তু বিস্ময়কর হলেও সত্য যে এর উত্তর খুঁজতে আমরা কেউ যাই না। মানুষ যে তার সবচেয়ে বড় সত্য কে অগ্রাহ্য করে বসে আছে এ  হুঁশ তার কখনোই হতো না যদি না ডারউইনের হাতে লিখিত হতো orgin of the species! যদিও ভ্রূণবিদ্যার বয়স অনেক প্রাচীন,এরিস্টোটলের সময় থেকেই এটি একটি বিতর্কিত বিষয়! Hickman তাঁর Integrated principles of zoology তে ৯টি মোটা দাগে ভাগ করেন এই প্রাণিকূলকে। এর মাঝে ৮ টি নন-কর্ডেট ও একটি কর্ডেট। কর্ডেট তারাই যাদের নটোকর্ড কিংবা রূপান্তরিত নটোকর্ড বা মেরুদন্ড রয়েছে। আমরা সবাই এই বিষয়ে নিশ্চিত যে আমরা মেরুদণ্ডী ।আর এটুকুও জানি মাছ,সাপ,গিরগিটি,ব্যাঙ ,মুরগি এদের সকলেরই শিরদাঁড়া আছে। কিন্তু বাহ্যিক কোন ব্যপারে তেমন কোন মিল আমাদের আর এদের মাঝে নেই। তবে এখানে একটা বিষয় আমরা একটু খেয়াল করার চেষ্টা করি ,আমাদের সাথে আমাদের মায়ের ,ভাইয়ের অনেক মিল। আরেকটু দূরে যান ,দাদা চাচা ,মিল আছে । আরো দূরে ,হ্যাঁ এখনো কিছুটা আছে। কিন্তু সামগ্রিক একটা গোষ্ঠীতে এই মিলটা এতো সূক্ষ্মভাবে না থাকলেও মানুষ হিসেবে আমাদের শারীরিক গঠন বিন্যাস কিন্তু এক! মেরুদন্ড আছে বলে একজন মানুষ ও একজন সাপ একই উপপর্বের অধীনে । কিন্তু যদি মানুষ একেবারে দৈবক্রমে তৈরি একটি জীব হয়ে থাকে তার সাদৃশ্য কেন একটি সাপের সাথে হবে?


এর কারণ, সাধারণ পূর্বপুরুষ! সকল কর্ডেট উৎপত্তি লাভ করেছে সাধারণ পূর্বপুরুষ  থেকে । আরো নির্দিষ্ট করে সকল ভার্টিব্রাটা(কর্ডাটার উপপর্ব)ও এর ব্যতিক্রম নয়। আর এই কঠিন সত্য খোদাই করা আছে মানব ভ্রূণেই!মেরুদণ্ডী প্রাণিদের ভ্রূণের চেহারাতেই যে শুধু মিল তাই নয়,তাদের পরিবর্তন ও বৃদ্ধিও হয় একই  ধারায়।সাধারণ পূর্বপুরুষের ধারণা অত্যন্ত বৃহত্তর থেকে ক্ষুদ্রতর পর্যায় পর্যন্ত বিস্তৃত । এর একটা অন্যতম কারণ হিসেবে ধরতে পারি সেই আদিম সুপকে,যেখান থেকে প্রাণের প্রথম রসায়ন শুরু। যেখান থেকে এককোষী প্রোক্যারিওটিক হয়ে  বহু শাখায় বিস্তৃত হয়ে গেছে প্রাণ। কিন্তু মূল তো সেই গোঁড়ায় রোপিত।তাই সাধারণ পূর্বপুরুষের ধারণা আমরা ফেলে দিতে পারি না।  আর এই বিষয়টি আরো জোরালো  হয়ে ফুটে ওঠে ভ্রূণের বিকাশের প্রতিটি ধাপে।


তাই সাধারণ পূর্বপুরুষের ধারণা আমাদের সর্বাগ্রে দরকার। উদ্ভিদের সাথে প্রাণির একটা সাধারণ সংযোগ রয়েছে যদিও বহু আগেই উদ্ভিদ ও প্রাণীর পথ  বেঁকে গেছে ভিন্ন পথে।তারপর প্রানীদের মধ্যে মেরুদণ্ডী ও অমেরুদন্ডীরও একটা সূত্র রয়েই গেছে,আবার মেরুদণ্ডীদের ভার্টিব্রাটা ,ইউরোকর্ডাটা ও সেফালোকর্ডাটার মধ্যেও রয়ে গেছে নিকট সম্পর্ক। দেখে মনে হবে এরা যেনো একই শিকলের অগ্রগণ্য রূপ।আমরা আমাদের  ও শিম্পাঞ্জীদের দিকে তাকিয়েই একটা কিছু বুঝতে পারি।  আমাদের বেশ মিল।আর মিল হবে নাই বা কেন । আমরা তো একই প্রাইমেট গোত্রের । আজ থেকে পাঁচ মিলিয়ন বছর আগে  ক্ষুদ্র জেনেটিক পরিবর্তনে আমরা আলাদা হয়ে গেছি একে অপরের থেকে। বিজ্ঞানীরা বলছেন আজ থেকে পাঁচ বা সাত মিলিয়ন বছর আগে আমরা common ancestry ভাগ করেছিলাম। তাই আজো মানুষ ও শিম্পাঞ্জীর জিন আত্মীয়তার পতাকা উড়িয়ে চলেছে। আমাদের ওঠা বসা, মুখের গড়ন , হাত দিয়ে আঁকড়ে ধরার ক্ষমতা এই সবের মাঝে আশ্চর্যরকম একাত্মতা । মানব শিশুদের মধ্যে গ্রাম্পিং  রিফ্লেক্স দেখতে পাই  আমরা। গ্রাম্পিং রিফ্লেক্স, এটি অনেক পরিচিত একটা বিষয়। আমরা প্রতিনিয়ত কিছু সাধারণ বিষয়ের মুখোমুখি হই। আর সাদামাটা ভেবে তাকে অবজ্ঞা করে চলে যাই। কিন্তু এই সাধারণ বিষয় আমাদেরকে অসাধারণ কিছু তথ্য দেয়। শিশুদের মাঝে আঁকড়ে ধরার সহজাত প্রবণতা দেখতে পাই আমরা, মানব শিশুর হাতে আপনি সামান্য টোকা  দিলে সে কিন্ত প্রতিক্রিয়া দেখাবে।এই বৈশিষ্ট্য জন্মের এক দুই মাস পর চলে যায়। আমাদের পূর্বপুরুষেরা যে  গাছে চড়ত এই বৈশিষ্ট্য তারই প্রমাণ দেয়। এটি একটি  অ্যাটাভিস্টিক বৈশিষ্ট্য, এবং এটি এখনো মানবসত্ত্বায় রয়ে গেছে বিবর্তনীয় সত্য হিসেবে।


তবে শিম্পাঞ্জীকে আপনি আপনার নিকট আত্মীয় মেনে নিলেও ,আমি যদি  বলি আপনি একজন মাছ! মানতে পারবেন? না ,কারণ আপনার common sense বিষয়টাকে কখনোই গ্রহণ করতে চাইবে না। তবে সকল ভার্টিব্রেইট ভ্রূণের সূচনালগ্নের চেহারার মধ্যে তারতম্য খুবই কম।ফাইলোটাইপিক স্টেইজে মাছ,ব্যাঙ,টিকটিকি ,মুরগি এবং সর্বোপরি মানুষের ভ্রূণের মধ্যে দারুণ মিল দেখা যায়। যার কারণে ভন বায়ের স্বয়ং স্বীকৃতি দিয়ে দেন ভ্রূণ তত্ত্ব ও সাধারণ পূর্বপুরুষের ধারণাকে। ভার্টিব্রাটা উপপর্বের প্রাণিরা সুগঠিত মেরুদণ্ডী।তাই এই ভার্টিব্রাটা উপপর্বের প্রাণিদের প্রতিটিকে পরিণত অবস্থায় পাশাপাশি রাখলে কখনোই আপনি আমার কথাগুলো স্বীকার করবেন না। কারণ কোথায় ব্যাঙ আর কোথায় মানুষ! কিন্তু বিস্ময়কর হলেও সত্যি আপনিও একদিন ব্যাঙের শরীরের অংশ ধারণ করেছেন মাতৃগর্ভে,তারপর কি মনে করে আপনার জিনোম সিকোয়েন্স ও জেনেটিক  সিগনাল আপনার ভ্রূণকে ব্যাঙের খোলস ছেড়ে মানুষের খোলস পরে নিতে বলল। 


মানব ভ্রূণ খানিকটা এমন ভাবে বিবর্তন কে প্রকাশ করে- প্রথম অবস্থায় অন্য সকল ভার্টিব্রাটার  মতই এরা মাছের ভ্রূণ এর আদল ধারন করে। যেখান থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট হয় যে ,এক প্রাচীন কালে মানুষ ও মাছ একই গোষ্ঠীর ছিল কিংবা তাদের ছিল common ancestry!  মাছের ক্ষেত্রে যেটা branchial arch নামে পরিচিত এমন কিছুই মানব ভ্রুণ ও তার জীবনচক্রে প্রকাশ করে। ৪ সপ্তাহের মাথায় এই বিকাশ লক্ষিত হয়।মাছের ক্ষেত্রে এই একি কাঠামো অর্থাৎ এই branchial arch ফুলকায় রুপ নেয় আর মানুষ ও  অন্যান্য vertibrata র ক্ষেত্রে এটি pharyngeal arch এ রুপান্তরিত হয়ে যায়।মাছের মত সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশ হল মাছের মত মানুষসহ অন্যান্য ভার্টিব্রাটার মাথার কাছে ধারাবাহিকভাবে সাজানো পাঁচ থেকে সাতটি স্ফীতকায় থলি থাকে যাকে এখানে branchial arch বলা হল।অর্থাৎ সহজ করে বললে,মাছ ও অন্যান্য ভার্টিব্রাটার ভ্রূণে ফাইলোটাইপিক স্টেইজে এই স্ফীতকায় থলির মতো কিছু অংশের দেখা পাওয়া যায় । যেটা সময় বাড়তে বাড়তে মাছের ক্ষেত্রে branchial arch হয়ে মাথা ও ফুলকা তৈরি করে আর অন্যান্য ভার্টিব্রাটার ক্ষেত্রে, অবশ্যই মানুষ ও আছে ,এটি pharyngeal arch এ রূপ নেয়। যা কিনা পরবর্তীতে অস্থি ও তরুণাস্থিতে রূপান্তরিত হয়।আর মাছ বা হাঙরের ক্ষেত্রে এই আর্চগুলি থেকে প্রথম আর্চটি তাদের চোয়াল তৈরি করে এবং বাকিগুলো তৈরি করে ফুলকা তন্ত্র । এখানে একটি বিষয় বলে রাখি, মাছ কিংবা এই পানিতে অবস্থানকারী জীবদের ক্ষেত্রে branchial arch অনেক গুরুত্বপূর্ণ কারণ এখান থেকেই কিন্তু সৃষ্টি হচ্ছে ফুলকা তন্ত্র, যা কিনা সরাসরি respiratory system এর সাথে জড়িত। কিন্তু মানুষ বা অন্যান্য ভার্টিব্রাটার ক্ষেত্রে এমনটা নয়! এক্ষেত্রে মানুষসহ উভচর ,সরীসৃপ, পাখি এদের ক্ষেত্রে এই একই ব্যবস্থা রূপ বদলে স্তন্যপায়ীদের জন্য তৈরি করেছে মাথা,চতুষ্পদীদের ক্ষেত্রে তৈরি করেছে কান ,টনসিল,থাইমাস আর যারা উভচর তাদের ক্ষেত্রে? এখানেই আসলে লুকিয়ে আছে আসল মজা । উভচরদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এরা লার্ভাদশায় পানিতে ও পরিণত অবস্থায় থাকে স্থলে! আর পানিতে থাকার ক্ষেত্রে ফুলকা  না হলে চলে!?কারণ একমাত্র ফুলকার সাহায্যেই সম্ভব পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন গ্রহণ করা। যার কারণে লার্ভাদশায় এরাও gill slits বহন করে ,যেটা পরিণত অবস্থায় লুপ্ত হয়ে যায়।তবে  কিছু কিছু উভচর পরিণত অবস্থায়ও এটি বহন করে । কিন্তু মাছের ক্ষেত্রে তুমুল প্রয়োজনীয় এই অঙ্গটি চতুষ্পদী ভার্টিব্রাটার ক্ষেত্রে ভ্রূণাবস্থায়ই লুপ্ত হয়ে যায়!Branchial arch থেকে মোড় নিয়ে চতুষ্পদী স্তন্যপায়ীর মধ্যে এই pharyngeal arch তৈরি করে তিনটি ছোট ছোট মধ্য কানের হাড়,ক্যারোটিড ধমনী,ইউস্ট্যাশিয়ান টিউব,টনসিল ,স্বরযন্ত্র,ক্রেনিয়াল স্নায়ু!  আবার  কখনো এই  ফুলকা ছিদ্র বন্ধ হয়ে সিস্টসহ মানবশিশু জন্ম নেয় ,তবে এটা অ্যাটাভিস্টিক,আর এই অ্যাটাভিজিম প্রকারান্তরে এটাই প্রকাশ করে যে, হ্যাঁ ,মানুষ  স্বর্গচ্যুত কেউ নয়! বরং সমুদ্রে কিংবা পুকুরে লেজ নাড়িয়ে ঘুরে বেড়ানো মাছ তারই পূর্বসূরি! 


আমরা আগেই বলে নিয়েছি ,মানব ভ্রূণ তার সাধারণ পূর্বপুরুষের ঋণ প্রতি ধাপে স্বীকার করে চলেছে। আচ্ছা বলুন তো মাছের পরে আমরা কার ছায়া দেখতে পারি মানব ভ্রূণে?মাছ তো ছিল জলে,মানুষ এলো স্থলে। বিষয়টি কি গোলমেলে না? কিন্তু একটু ভাবুন তো  ,এমন কোন ভার্টিব্রাটা কি নেই যে জল স্থল উভয়ে রাজত্বকারী?নিঃসন্দেহে অ্যাম্ফিবিয়ান বা উভচর! মানব ভ্রূণ মাতৃগর্ভে বড় হয় ,তাহলে ৫.৫ থেকে ৬ সপ্তাহের মাথায় কেন yolk sac কেন দেখা দেয়?অমরার গঠন সুবিন্যস্ত হওয়ার আগে এখান থেকেই সে পুষ্টি পায় এবং একই সাথে এটাও প্রমাণ করে আমাদের উভচর,সরীসৃপ ও পাখি পূর্বসূরিদের ক্ষেত্রে এই কুসুম থলি পুষ্টি  সরবরাহের কাজে নিয়োজিত ছিল। উভচরেরা সমুদ্রে কিংবা পানিতে ডিম পাড়ে, যার কারণে তাদের প্রয়োজনীয় পুষ্টির জন্য তারা  সরাসরি এই কুসুম থলির ওপর নির্ভর করে ।এছাড়া অন্যান্য সরীসৃপ, পাখি ও যেসব স্তন্যপায়ী ডিম পাড়ে, তাদের ক্ষেত্রেও কুসুম থলির কাজ একই। মানব ভ্রূণে অমরা সুগঠিত হলে এটি আবার সেই অবলুপ্তির পথ ধরে। 


এরপর আসি রক্তনালীর কথায়।কতো জটিল শিরাবিন্যাসের অধিকারী আমরা!  কিন্তু অনুন্নত শ্রেণির জীবদের ক্ষেত্রে কিন্তু এমনটা নয়।তাদের কারো কারো রক্ত সংবহনতন্ত্র পর্যন্ত নেই। মানব ভ্রূণের ফিটাস হওয়ার এই যাত্রায় তার ভ্রূণে তার পূর্বজদের পর্যায়ক্রমিক এক ছায়া দেখতে পাই আমরা। Branchial arch এর ক্ষেত্রে যেমন দেখেছিলাম,রক্তনালীর বিন্যাসেও এর ব্যতিক্রম ঘটে না।অথচ মানবদেহের রক্তনালী কতোটা প্যাঁচানো ,কিন্তু ভ্রূণীয় অবস্থায় শুরুতেই একটা সরল বিন্যাস দেখতে পাওয়া যায়।ভ্রূণীয় ও পূর্ণাঙ্গ মাছের মধ্যে ছয়জোড়া branchial  arch দেখা যায়। আর এটাই মূল কাঠামো ,wikipedia তে এই সময়কে  বলা হচ্ছে ‘primitive stage’ ।তো যাই হোক,মানব ভ্রূণে অবশ্য ছয় জোড়া branchial arch থাকে না।প্রথম,দ্বিতীয় ও পঞ্চম আর্চ সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য দেখা দেয়। পরে এদের অবলুপ্তি হয়। আর অন্য দিকে বাকি আর্চগুলি সাত সপ্তাহের মাথায় নিজেদের সাজিয়ে নিলে এরা দেখতে কতোকটা সরীসৃপের ভ্রূণের রক্তনালীর মতো রূপ নেয়। এরপর অনেক সংযোজন ,রূপান্তরের ধাপ অতিক্রম করতে করতে জটিল হয়ে ওঠে রক্তনালী।এই বিচারে ভার্টিব্রাটার প্রাণিকূল একেবারে উন্নতদের শীর্ষে বসে আছে। বিশেষ করে মানুষ! 


জেরি কয়েন তাঁর “বিবর্তন কেন সত্য” বইটিতে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন ।তিনি বলেছেন-“আমাদের ভ্রূণগত ক্রমবিকাশ যখন অগ্রসর হয় ,সকল পরিবর্তন ও বিবর্তনীয় ক্রমবিকাশের ধাপগুলো অনুসরণ করে!” সত্যিই কিন্তু তাই হতে দেখলাম আমরা।ব্রাঙ্কিয়াল আর্চ থেকে রক্তনালীর যাত্রাপথে।আমাদের ভ্রূণীয় দশা,মাছের ভ্রূণীয় দশা,সরীসৃপ ,উভচর এদের সকলের ভ্রূণীয় দশার মধ্যে আত্মীয়তার সম্পর্ক অনস্বীকার্য। মানব ভ্রূণের ওপর আলোকপাত করি। কারণ যেহেতু এরা উন্নত প্রাণির শীর্ষস্থানীয় একজন,দেখি এদের ভেতরে কিভাবে বিবর্তন কাজ করছে। মাছের সরল রক্তনালীর সজ্জা প্রথমে বাঁক নেয় এমন একটি রক্ত সঞ্চালন তন্ত্রের দিকে যা থাকে উভচরীদের। উভচরীদের ক্ষেত্রে এই ব্যবস্থা স্থায়িত্ব পায়,কিন্তু মানুষের ক্ষেত্রে এটা সামনের দিকে অগ্রসর হয়। আমি যখন এই বিষয়টা পড়ছিলাম,আমার মনে হচ্ছিল এটি একটি ট্রেন,যে একেকটা  স্টেশনে একটি নির্দিষ্ট জীবকে ছেড়ে দিচ্ছে, তবে তার বৈশিষ্ট্যগুলো নিজের কাছে রেখে,পরবর্তীতে আরেকটা স্টেশনে আরেকটা প্রাণি নামছে ঠিকই কিন্তু বৈশিষ্ট্যগুলো ঠিকই তার ভেতর রয়ে যাচ্ছে । রক্তনালীর কথা বলছিলাম। তো তারপর সেই উভচরী রক্তনালী পরিবর্তিত হয়ে সরীসৃপের রক্তনালীর বেশ ধরে। মূলত মাছ ,মাছ থেকে উভচর ,উভচর থেকে সরীসৃপ এরপর আরো বেশকিছু রদবদলের পর মানুষের এই জটিল কাঠামো গড়ে ওঠে। কত শিরা ধমনীর জটিল  বিন্যাস , কৈশিক জালিকার মারপ্যাঁচ ! মানুষের এই বদ্ধ ,দ্বিমুখী সংবহনতন্ত্র নিঃসন্দেহে অনেক সংযোজন,পরিবর্তনের ফলাফল ।আরো বিস্ময়কর হলো ,আমরা সবাই কমবেশি এটা জানি যে আমাদের হৃৎপিণ্ড চার প্রকোষ্ঠ বিশিষ্ট।কিন্তু মাতৃগর্ভে যখন আমরা মৎসদশা পার করছিলাম তখন কিন্তুু মাত্র দ্বিপ্রকোষ্ঠ ছিল!তারপর ওই যে একই মৎস-উভচর-সরীসৃপ ক্রমবিন্য্যাসের মতো সরীসৃপ দশায় এসে এটি তিন প্রকোষ্ঠের অধিকারী হয়।এটা শুধু যে আমার আপনার ক্ষেত্রে সত্য তা নয়,আদম হাওয়ার ক্ষেত্রেও কিন্তু সত্য। সত্য আদিমাতা লুসি ও তার বিশেষ বন্ধুর ক্ষেত্রেও।


আচ্ছা আমাদের শরীরে আমরা এখন শুধু এক ধরনের কিডনীর অস্তিত্ব অনুভব করি, তাই তো !  কিন্তু ভ্রূণাবস্থায় তিন ধরনের কিডনীর আবির্ভাব ঘটে। একটার পর একটা ক্রমান্বয়ে । প্রথম দুটি কিডনি মূলত আমাদের পূর্বপুরুষদের কথা স্মরণ করিয়ে দিতে দেখা দেয়। যারা কিনা ছিল চোয়ালবিহীন মাছ এবং সরীসৃপ ।চোয়ালবিহীন মাছের কিডনি প্রথমে দেখা দেয়,সে এসে সরীসৃপের কিডনিকে আহ্বান জানায় ,কিন্তু নিজে  তার জন্য অপেক্ষা করে না। তার আগেই পালিয়ে যায়। এরপর সরীসৃপের কিডনির ধরন এসে মানুষের কিডনির ধরনকে promote করে। আর এটিই স্থায়িত্ব লাভ করে।

আশা করি এতক্ষণে আপনাদের মনে একটি বড়সড়  কেন র উদ্রেক ঘটাতে পেরেছি।সত্যিই আমারও মনে হয়েছিল, তিন ধরনের কিডনির কি দরকার ছিল ?একবারেই  কাঙ্ক্ষিত অঙ্গটি  গঠিত হলে কার কি হতো?কিন্তু ওই যে ,বিবর্তন কিন্তু সময় ও শক্তি খরচের ব্যাপারে কৃপণ। সে মূলত অনুসরণ করে  “পুরনো কিছুর সাথে নতুন কিছু সংযোজন করে দাও” নীতিটি। অর্থাৎ মাছের ভ্রূণের কাঠামোকে আমরা প্রাথমিক কাঠামো ধরে নিলে বিষয়টি বুঝতে সুবিধা হবে। একটি ইমারত নির্মাণের জন্য ফাউন্ডেশন যেমন  সব ইমারতের প্রাথমিক অংশ অনেকটা তেমন। আমার এই  ছোট খাটো উদাহরণের জন্য বোদ্ধারা ক্ষমা করে দেবেন।তো যা বলছিলাম, মাছের ভ্রূণের কাঠামো দিয়ে যাত্রা শুরু করলে লাভটা কি হতে পারে? লাভ হলো এমন যে ,এই একই ভ্রূণের রিক্যাপিচুলেশনের মাধ্যমে মাছ,সরীসৃপ, উভচর,চতুষ্পদী, স্তন্যপায়ী সবদিক বরাবরই যাত্রা করা সম্ভব । মাছের পর উভচরীয় কাঠামো দেখা যায় ,উভচরের ক্ষেত্রে এই কাঠামো  স্থায়িত্ব পায় আর যদি ভ্রূণটি উভচরের না  হয় তবে সে সামনের দিকে অগ্রসর হয়।কিন্তু আগের মাছ পূর্বসূরির অস্তিত্ব তার মাঝে ঠিকই রয়ে যায়।

যদিও ভ্রূণ বিবর্তনীয় পর্যায়ের অবতারণা ঘটায়,তবুও তার পক্ষে সম্পূর্ণ রূপে সকল পর্যায়ের পর্যায়ক্রমিক অবতারণা ঘটানো সম্ভব হয়ে ওঠে না। কিংবা আমরা মানুষেরা দৃশ্যমান কয়েকটা ধাপকেই  দেখতে পাই,বাকি ধাপগুলো একদম অদৃশ্যমান  স্তরের হয়ে থাকে! এ সম্পূর্ণ আমার ধারণা।মাছ থেকে আমরা সরাসরি উভচরীয় ভ্রূণ কাঠামো দেখতে পাই,বিবর্তন এতো বৃহত্তর সাদৃশ্যতা যদিও প্রদর্শন করে না,কিন্তু ভ্রূণের ক্ষেত্রে অনেকটা missing link এর মতো করেই মাঝের আরও অনেক অংশ হারিয়ে যায়।


তবে এখন  আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ তুলে ধরতে চাই। আমরা আমাদের সাধারণ পূর্বপুরুষদের পরম্পরা কিভাবে আমাদের ভ্রূণে বহন করে চলেছি তার কয়েকটার কথাই বলা গেল শুধু । কিন্ত এই common ancestry থেকে আরো একটু গভীরে আলোকপাত করতে চাই। মূলত আমাদের এই শরীর বিবর্তনের একটি এক্সপেরিমেন্ট। এক্সপেরিমেন্ট বলছি এই কারণে,জেনেটিক অনুলিপনের সামান্য কিছু ভুলে নতুন এক প্রাণির উদ্ভব ঘটে। সেই অর্থে অনেক জীববিজ্ঞানীর মতে এই শরীর একটি জৈব রসায়ানাগার।আমরা  হলাম  স্বার্থপর জিনের সারভাইভাল মেশিন । বিবর্তনের ক্ষেত্রে কোনটা  সুবিধাজনক বলে আপনার মনে হয়?একেবারে নতুন করে  একটা পরিকল্পনা করে একেবারে অন্ধকারে হাতড়ে একটা  প্রাণিকে এই পৃথিবীতে ছেড়ে দেওয়া নাকি যেই প্রাণিরা এই পৃথিবীতে ইতোমধ্যে survive করে গেছে বা এখনো survive করছে তাদেরকেই মূল কাঠামো হিসেবে ব্যবহার করে আরো কিছু নতুন সংযোজনের মাধ্যমে প্রাণের ধারাকে আরেকটু সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া । এক্ষেত্রে দ্বিতীয় উপায়টি আমার কাছে  বেশি গ্রহণযোগ্য বলে  মনে হয়েছে । “রিক্যাপিচুলেশন” -এই শব্দটি এখানে খুব গুরুত্বপূর্ণ।  শব্দটির অর্থ হলো,পুনরাবৃত্তি। সকল ভার্টিব্রাটার ক্ষেত্রে তাদের ভ্রূণীয় দশা একই মৎস বিন্যাসের পুনরাবৃত্তি ঘটায়।এরপর তারা কেউ কেউ উপনীত হয় উভচরে ,কেউ সরীসৃপে ,আর কেউ বা মানুষে!


যখন একটি প্রজাতি অন্য একটি প্রজাতিতে বিবর্তিত হয় ,তখন তারা তাদের পূর্বসূরিদের ক্রমবিকাশের নীলনকশা উত্তরাধিকারসূত্রে পায়।এর বিস্তারিত অর্থ হলো-প্রাচীন কাঠামোতে তৈরি সব জিন তারা পাচ্ছে।ভ্রূণীয় বিকাশ অত্যন্ত রক্ষণশীল একটি প্রক্রিয়া  এবং যখন আমরা এটা  ভাবছি যে তিন ধরনের বৃক্ক আবির্ভাবের দরকার কি ছিল-তখনই মূলত আমাদের এটা জানাটা প্রয়োজনীয় হয়ে উঠছে যে এখানে লুকায়িত প্রাণ রাসায়নিক সংকেত কি বলছে!

প্রাণরাসায়নিক সংকেত:


“পুরনো কিছুর সাথে নতুন কিছুর সংযোজন ” এই মূলনীতি বিশদ ভাবে জেরি কয়েন বলেছেন তাঁর বইয়ে। মূলত যেই ধারা অবলম্বন করে প্রজাতির বিবর্তন হয়েছে ,সেই একই ধারা আমরা ভ্রূণীয় বিকাশে খুঁজে পাই। আর এই বিকাশটা কিন্তু একমুখী। এর অর্থ আমরা দুইটি প্রাণির মধ্যে অপেক্ষাকৃত উন্নত প্রাণির ভেতরে অনুন্নতের ছায়া দেখতে পারি কিন্তু কখনোই এর উল্টোটি হবে না। অর্থাৎ মানব ভ্রূণ তিমির ভ্রূণের আদল পেলেও তিমি কখনোই একটি পূর্ণবয়স্ক মানব ভ্রূণের আদল পেতে পারে না! বিবর্তনীয় যে ধাপগুলি অতিক্রম করে এক  গ্রুপ অন্য গ্রুপ থেকে পৃথক হয়ে যায় ,তা পর্যায়ক্রমিকভাবে ভ্রূণাবস্থায় গঠিত হয়। কিন্তু পূর্ববর্তী গ্রুপে ইনপুট করা প্রোগ্রাম সে বর্জন করে না। বরং সেই প্রোগামে কিছু সংযোজন এনে নিজেকে অদ্বিতীয় হিসেবে উপস্থাপন করতে চায়। পুরনো প্রোগ্রাম ইতোমধ্যে পৃথিবীতে কাজ করেছে,টিকে থাকার সংগ্রামে সে বিলুপ্ত যখন হয়নি ,তখন সেই প্রোগ্রাম বাদ না দিয়ে কিছু মড্যুলেশন আনলেই,ব্যস্!খেল খতম!


এই মূলনীতিকেই তুলে ধরেছেন আর্নষ্ট হেকেল।ডারউইনের সমসাময়িক এই জার্মান বিবর্তন বিশেষজ্ঞ, ১৮৬৬ সালে একটি বায়োজেনেটিক কিংবা জৈবজিনতাত্ত্বিক সূত্র প্রণয়ণ করেন।যা পরিচিত-‘অনটোজেনি রিক্যাপিচুলেট ফাইলোজেনী’ এই নামে।এর অর্থ তিনি যেটা বলতে চেয়েছেন তা হলো,ভ্রূণ তার বিবর্তনীয় ইতিহাসকে পুনপ্রদর্শন করে। যদিও এর মাঝে কিছু missing link থাকে,তবুও হেকেলের এই দাবী  সঠিক,তা এতক্ষণের আলোচনায় সংক্ষিপ্তভাবে বোঝা গেল। তবে অবশ্যই মাছ,সাপ,ব্যাঙ, মানুষ এদের ভ্রূণ কখনোই পূর্ণাবস্থার কোনো গ্রুপের প্রাণির বিকাশ প্রদর্শন করে না। কিন্তু এই যে রিক্যাপিচুলেশন তা কিন্তু  আবশ্যিক নয়,অর্থাৎ পূর্বসূরিদের ভ্রূণের সকল বৈশিষ্ট্য পুঙ্খানুপুঙ্ক্ষ এখানে  অনুসৃত হয় না। এছাড়া আমাদের দূরবর্তী আত্মীয় উদ্ভিদের মাঝে ভ্রূণীয় এই বৈশিষ্ট্য একেবারেই দেখা যায় না। এছাড়াও হেকেল কিছু দোষে দোষীও ছিলেন।সেদিকে না যাই, কিন্তু ‘পুরনো কিছুর সাথে নতুন কিছু সংযোজনের’ মূলনীতি একেবারে ফেলে দেওয়া যায় না।ভ্রূণ রিক্যাপিচুলেশন প্রদর্শন করে, আর একই সাথে এটাও জানান দেয় তারও রয়েছে একটা বিবর্তনীয় ইতিহাস । বিবর্তন তত্ত্ব ভুলই যদি হয়ে থাকে,তবে কেন মাছের ভ্রূণ ও মানুষের ভ্রূণ সাদৃশ্য প্রদর্শন করে? 
মূলত এই প্রশ্নের অনুসন্ধানেই আমাদেরকে প্রাণরাসায়নিক সংকেত বুঝতে হবে।


The University of Western Australia, Spanish National Research Council এবং Radboud University এর সাথে যৌথভাবে গবেষণা করে যে কেন সকল ভার্টিব্রাটার ভ্রূণ ফাইলোটাইপিক স্টেইজে সামঞ্জস্য প্রদর্শন করে এবং তাদের এই গবেষণা পত্র প্রকাশিত হয় Nature Genetics নামক জার্নালে । এর ওপরেই আলোকপাত করে Why do all animal embryos look the same একটি আর্টিকেল প্রকাশিত হয় ,যেখানে এই গবেষণার সারবস্তু উপস্থাপিত হয়।এই দলটি Madrid থেকে ইঁদুর,Saville এর মাছ ও Nijmegan এর ব্যাঙের ওপর গবেষণা চালিয়ে বুঝতে পারেন ভার্টিব্রাটার অন্তর্গত এই প্রাণিগুলোর মধ্যে কিছু নির্দিষ্ট এপিজেনেটিক সুইচ রয়েছে যা অন অফের উপর নির্ভর করে এই উপপর্বের প্রাণিরা একে অপরের সাথে সাদৃশ্যতা প্রদর্শন করে । এপিজিনোম হলো কোষের মধ্যে উপস্থিত একটি বাড়তি তথ্যের স্তর যা কি না DNA এর সাথে যুক্ত মিলিয়ন  সংখ্যক রাসায়নিক ট্যাগ  দ্বারা নির্মিত । এবং এই এপিজিনোমই মূলত প্রাথমিক ভ্রূণ কাঠামোর সঠিক বিকাশের জন্য সঠিক জিনটি চালু বা বন্ধ করতে নির্দেশ দেয়।দলের একজন গবেষক ,Dr.Bogdanovic বলেন তারা  এই early stage  এর বিভিন্ন প্রজাতির ভ্রূণের মধ্যে বহুসংখ্যক এপিজেনেটিক সুইচ খুঁজে পেয়েছে। এবং সেই সুইচগুলো অঙ্গ গঠন ও মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।তিনি আরো যুক্ত করেন,প্রজাতি ভিন্ন ভিন্ন হলেও তাদের মধ্যে সুইচগুলি একইভাবে পরিবর্তিত হয় যদিও সেগুলি লক্ষ লক্ষ বছরের বিবর্তনে বিচ্ছিন্ন ।গবেষকরা বিশ্বাস করেন ফাইলোটাইপিক স্টেইজে মেরুদণ্ডী প্রাণিদের মধ্যে একই ধরনের এপিজেনেটিক নিয়ন্ত্রণ রয়েছে কারণ এই সময়টি  হলো শরীরের মৌলিক কাঠামো স্থাপনের জন্য মূল সময়।Professor Ryan Lister  বলেন ,সেই প্রাথমিক পর্যায়টিতে শরীরের পরিকল্পনা এবং অঙ্গ গঠনের সঠিক প্রতিষ্ঠা জীবনের জন্য এতোটাই গুরুত্ব বহন করে যে ,লক্ষ লক্ষ বছরের বিচ্যুতিতেও এই অন্তর্নিহিত আণবিক প্রক্রিয়াগুলো এক রয়ে গেছে ।


এখান থেকে আমরা জোড়ালো কিছু প্রমাণ পাই এবং বলতে পারি যে যেই মৌলিক কাঠামো আমরা মেরুদণ্ডীদের মাঝে দেখতে পাই তা মূলত কিছু জেনেটিক সুইচের ফলাফল। এবং কিছু জেনেটিক সিগন্যালের অন বা অফ প্রতিটি প্রজাতিতে তার জন্য কাঙ্ক্ষিত কাঠামোকে নির্দিষ্ট করে দেয়। অর্থাৎ সেই যে কিডনির কথা জেনেছিলাম ,সেখানেও প্রথমে আবির্ভূত দুইটি কিডনি মূলত সেই মৌলিক কাঠামোতে আবির্ভূত হয় এবং তারাই সংকেত প্রেরণ করে সর্বশেষকে। জেনেটিক কোডের নতুন নতুন বিন্যাস পরিবর্তন করে দেয় প্রজাতির বাহ্যিক রূপ। এটা অন্য যে কোন বৈশিষ্ট্য ক্রমান্বয়ে আসার ক্ষেত্রেও সমানভাবে প্রযোজ্য । 

মানুষ যে কোন দৈবের ফল না,বরং প্রাইমেট গ্রুপের সদস্য, তার জলজ্যান্ত প্রমাণ হলো লানুগো,যা কিনা মানব ভ্রূণে ছয় সপ্তাহে প্রকাশিত হওয়া ,নরম ,চুলের আস্তরণ। বাদরদের ক্ষেত্রে এই লানুগো স্থায়ী হয়ে যায়।কিন্তু মাতৃগর্ভে তাপমাত্রা  মানব ভ্রূণের জন্য যথেষ্ট, তাই আর এই লানুগোর দরকার হয় না। তা জন্মের আগেই ঝরে যায়। আর যদিও বা কেউ এ নিয়ে জন্ম নেয় তা অ্যাটাভিজম হিসেবে প্রকাশিত হয়। এমন লক্ষাধিক বৈশিষ্ট্যের কথা আমরা বলতে পারি। তাই তো ভ্রূণকে জেরি কয়েন পলিম্পসেস্ট হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেছেন ।পলিম্পসেস্ট ভেড়া,বাছুর বা ছাগলের চামড়া দিয়ে তৈরি হতো ,এবং এই পলিম্পসেস্ট কে পুনরায় ব্যবহার করা হতো এর উপর লিখিত লেখা ধুয়ে ফেলে বা মুছে ফেলে। কিন্তু ধুয়ে ফেললেও কি হবে,আগের লেখা অক্ষরের ছাপ রয়ে যেতো  ঠিকই । জেরি কয়েন  ভ্রূণেও এই বিষয়টি দেখতে পেয়েছেন ,তিনি দেখেছেন বিবর্তনের যাত্রায় এক প্রজাতি থেকে  আরেক প্রজাতিতে বৈশিষ্ট্যগুলো মুছে গেলেও কিছু বৈশিষ্ট্য আগের লিখিত অক্ষরের মতোই রয়ে গেছে। আবার আর্কিটেকচার,আর্কিওলজি এবং জিওমর্ফোলজিতে এই কথাটি ব্যবহৃত হয় এমন অর্থে যে  ,এমন কোন বস্তু যা পূর্বে যেই কাজে   ব্যবহারে করা হতো তা এখন অন্য কাজে ব্যবহার করা হয়।  এই ব্যাপারটাও কিন্তু branchial arch ক্ষেত্রে দেখতে পাই,যা  কিনা পানিবাসী মাছের জন্য শ্বসনতন্ত্র গড়েছিল অথচ স্থলবাসী কারো ক্ষেত্রে সে এমন কোন কাজ কিন্তু করছে না!

তো যাই হোক,ভ্রূণের এই যাত্রাপথের বিস্ময় আমাকে দারুণ বিস্মিত করেছে।  তবে আরো দারুণ একটা বিষয় হলো,এই যে মাছ,উভচর ,সরীসৃপ এদের কাঠামো দেখা দিয়ে দিয়ে চলে যাচ্ছে, এরা কিন্তু ঠিকই আমাদের আচরণে প্রভাব রেখে চলেছে আজও। হয়তো জানতে ,হয়তো বা অজান্তে।  বিবর্তনের পক্ষে সুবিধাজনক ছিল একবার নির্মাণ হয়ে যাওয়া কাঠামোতেই কারুকার্য করা। হয়তো এমন কারুকার্য হয়ে চলেছে এখনও আণবিক পর্যায়ে । প্রাকৃতিক নির্বাচনে নির্বাচিত হয়েই সকল ভার্টিব্রাটার ভ্রূণ রপ্ত করেছে প্রায় একই রকম কাঠামো । সংযোজিত হয়েছে নেহাতই কিছু জেনেটিক কোডিং । পরিবর্তন ও পরিবর্ধনের ঘটনাচক্রে মাত্র এক শতাংশের হেরফেরে  আজ আমি একজন প্রাইমেটের উত্তরসূরী হয়েও আমার চিন্তাশক্তির বহিঃপ্রকাশ দেখাতে পারছি।অথচ সেই এক শতাংশের হেরফেরে  শিম্পাঞ্জী অথবা বাদরমহাশয়েরা হয়তো বসে বসে বাদাম ছুলে চলেছে এখনো । সত্যিই কতো বৈচিত্র্য এই জীবজগতে! ( তিমির বিবর্তন )

তথ্যসূত্রঃ

  1. How Does Embryology Provide Evidence for Evolution?
  2. Do Human Embryos Have Gills?
  3. Reptiles, birds, and mammals
  4. Pharyngeal arch