Can't find our books? Click here!

১৩ বিলিয়ন বছর অতীতের ব্ল্যাকহোল প্রমাণ করে দিলো স্ট্রিং থিওরি সত্য!

জনসাধারণের মতো বিজ্ঞানীদের কাছেও, ব্ল্যাকহোল একটি চমকপ্রদ ধারণা কারণ একটি ব্ল্যাকহোলের খুবই শক্তিশালী মাধ্যাকর্ষের টান এবং স্থান-কালকে বক্র করে দেয়ার ক্ষমতা আছে। এই মহাজাগতিক সত্তাকে একসময়, বিশুদ্ধ সিঙ্গুলারিটি হিসেবে কল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু  স্ট্রিং থিওরির অগ্রগামী গবেষণা এক ভয়ানক সম্ভাবনা উপস্থাপন করেছে, যা আমাদের প্রথাগত মহাবিশ্ববোধ চ্যালেঞ্জ করে।

ঐতিহ্যবাহী পদার্থবিজ্ঞানে, ব্ল্যাকহোলকে সিঙ্গুলারিটি হিসেবে আলোচনা করা হয়েছিল__ নক্ষত্রের কেন্দ্রের একটি অসীম ঘনত্বসম্পন্ন বিন্দু। যাইহোক, স্ট্রিং তত্ত্ব আমাদের বিকল্প একটি দৃষ্টিকোণ উপস্থাপন করছে। এ থিওরি অনুসারে, ব্ল্যাকহোল কোনো সিঙ্গুলারিটি নয়, কিন্তু  এটি বিপুল পরিমাণ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্ট্রিং দিয়ে তৈরি। এ সকল স্ট্রিং ভিন্ন ভিন্ন  ফ্রিকোয়েন্সিতে কম্পন করে, যা ব্ল্যাকহোলের মধ্যে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য সৃষ্টি করে। স্ট্রিং থিওরির ধারণা নির্দেশনা দিচ্ছে যে, ব্ল্যাকহোলের “Fuzzball” এর মতো একটি স্ট্র্যাকচার আছে। এটি কোনো মসৃণ ও অনন্য বস্তু নয়, এটি স্ট্রিং-এর একটি ঘনত্বসম্পন্ন সংগ্রহ, যারা নিরবচ্ছিন্নভাবে ভাইব্রেট করছে।  

১৩ বিলিয়ন বছর অতীতের ব্ল্যাকহোল প্রমাণ করে দিলো স্ট্রিং থিওরি সত্য!

ফিগার: ব্ল্যাকহোলের “Fuzzball” স্ট্র্যাকচার

এই ভাইব্রেশন ব্ল্যাকহোলের প্রপার্টি নির্ধারণ করে যেমন ভর, আধান এবং কোণিক ভরবেগ। প্রতিটি ভাইব্রেশন এক একটি কনফিগারেশনের স্ট্রিং-এর প্রতিনিধিত্ব করছে, যেটি ব্ল্যাকহোলের ভেতর জটিল এবং সমৃদ্ধ একটি কাঠামো তৈরি করছে। স্ট্রিং থিওরির একটি ভয়ানক তাৎপর্য হলো, এটি কোয়ান্টাম মেকানিক্স ও রিল্যাটিভিটির মাঝে বিদ্যমান দীর্ঘকালীন একটি সমস্যা সমাধান করার জন্য খুবই সম্ভাবনাময়। ক্লাসিক্যাল পদার্থবিজ্ঞান ম্যাক্রোস্কোপিক স্তর থেকে একটি ব্ল্যাকহোলের আচরণ ব্যাখ্যা করে, যেখানে কোয়ান্টাম ফিজিক্স আলোচনা করে একটি ব্ল্যাকহোলের মাইক্রোস্কোপিক দিক।

স্ট্রিং থিওরির মাধ্যমে গবেষকরা এ দুটি মৌলিক থিওরির মাঝে একটি ব্রিজ তৈরি করতে পারে এবং আরও বোধগম্য মহাজাগতিক বোধ অর্জন করতে পারে। স্ট্রিং থিওরি ব্ল্যাকহোল থার্মোডায়নামিক্স সম্পর্কেও, আমাদের ইনসাইট প্রদান করে। এটি ব্ল্যাকহোল এন্ট্রপির মাইক্রোস্কোপিক ব্যাখ্যা প্রদান করে___ ব্ল্যাকহোলের মাইক্রোস্কোপিক দশার পরিমাণই একটি ম্যাক্রোস্কোপিক ব্ল্যাকহোল জন্ম দেয়।

ব্ল্যাকহোলের পদার্থবিজ্ঞান এবং থার্মোডায়নামিক্সের এই সম্পর্ক এ রহস্যজনক বস্তুর স্ট্যাটিক্যাল মেকানিক্সের ওপর আলো নিক্ষেপ করে। তাছাড়া, স্ট্রিং থিওরি এক্সট্রা-ডায়মেনশনাল ক্ষয় চ্যানেল নামক একটি সম্ভাবনা সূচনা করে। এই ধারণা অনুসারে, ব্ল্যাকহোল অন্য কোনো অবজেক্ট অথবা দশায় ক্ষয় হতে পারে, যা স্ট্রিং থিওরি প্রস্তাবিত এক্সট্রা ডায়মেনশন প্রসেসের সাথে সম্পর্কযুক্ত। এই ডিকে চ্যানেল (ক্ষয় চ্যানেল) এক্সট্রা ডায়মেনশনের মধ্য দিয়ে কণিকা ও বিকিরণ নির্গমন করে, আর এতে করে ব্ল্যাকহোল ধীরে ধীরে সংকুচিত ও অদৃশ্য হয়ে যায়।

স্ট্রিং থিওরি ও ব্ল্যাকহোলের এই মিথস্ক্রিয়া মহাবিশ্বের প্রকৃতি সম্পর্কে চমকপ্রদ কিছু প্রশ্ন উপস্থাপন করে। একমাত্রিক স্ট্রিং এর কম্পন থেকে কী ব্ল্যাকহোল তৈরি হতে পারে? ব্ল্যাকহোল কে কী মহাবিশ্বের মৌলিক বৈশিষ্ট্য বলা যায়, যেটি তৈরি হওয়ার জন্য অপরিহার্যভাবে, কোনো বিশাল নক্ষত্রের পতন প্রয়োজন নেই?  

যদি ব্ল্যাকহোল স্ট্রিং-এর কম্পন ও ইন্টারেকশন হয়, তবে এটি কী এগারমাত্রিক স্পেস-টাইমের হোমটাউন? একটি ব্ল্যাকহোলের ভেতর কী তবে প্রাকৃতিকভাবে চার ও ছয়মাত্রিক জগতের টানেল তৈরি হয়? এটি কী প্রাকৃতিকভাবেই ইন্টারডায়মেনশনাল ট্রাভেলকে অনুমোদন দেয়? যদি ব্ল্যাকহোলের বিপুল তাপমাত্রায় চার ও ছয়মাত্রিক স্পেস কানেক্ট হয়ে যায়, তবে এটি কী একটি দশমাত্রিক বাবল তৈরি করবে, যেখানে জেনারেল রিল্যাটিভিটি ও কোয়ান্টাম ফিজিক্স কানেক্ট হয়ে যাবে এবং যে দশমাত্রিক স্থান-কালে বাস করে গড ইকুয়েশন?

মজার ব্যাপার হলো “A small and vigorous black hole in the early Universe” শিরোনামে কর্নেল ইউনিভার্সিটি সাম্প্রতিক একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছে। তারা দাবি করেছে, জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ মহাবিস্ফোরণের ৪৪০ মিলিয়ন বছর পর সৃষ্ট শিশু মহাবিশ্বে একটি ব্ল্যাকহোল ডিটেক্ট করতে সক্ষম হয়েছে। এই ব্ল্যাকহোলটি প্রায় ১৩ বিলিয়ন বছর অতীতের। ব্ল্যাকহোলটির ভর ১০৬ মিলিয়ন সূর্যের ভরের সমান, ব্ল্যাকহোলটির নাম রাখা হয়েছে “infant galaxy GN-z11″। কিন্তু বিজ্ঞানীরা এখনো নিশ্চিত না, মহাবিশ্ব সৃষ্টির পর পরই কীভাবে এত শক্তিশালী ব্ল্যাকহোল তৈরি হওয়া সম্ভব!

১৩ বিলিয়ন বছর অতীতের ব্ল্যাকহোল প্রমাণ করে দিলো স্ট্রিং থিওরি সত্য!
ফিগার:জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ একাধিক ছবিকে ঐক্যবদ্ধ করে এই ব্ল্যাকহোলটির উপস্থিতি ট্র্যাক করেছে।

তাদের কাছে এটা এখনো সম্পূর্ণ রহস্যজনক। আমরা জানি, ব্ল্যাকহোল গঠিত হয় কোনো এক নক্ষত্রের পতন থেকে, একটি নক্ষত্র যখন নিজের মাধ্যাকর্ষ ক্ষেত্রের প্রভাবে নিজেকে কেন্দ্র করে কুচকে যায়, তখনই ব্ল্যাকহোল তৈরি হয়। কিন্তু ১৩ বিলিয়ন বছর অতীতে মহাবিশ্বে নক্ষত্রগুলো পুরোপুরিভাবে গঠিত হয়নি। প্রশ্ন হলো, ১০৬ মিলিয়ন সূর্য ভরের এই ব্ল্যাকহোলটি তবে কোথা থেকে এলো? এই প্রশ্নটি মিমাংসা করার জন্য আমার কাছে দুটি সম্ভাব্য সল্যুশন আছে। প্রথম সল্যুশন হলো, মহাবিশ্বের বয়স ১৩ বিলিয়ন বছর নয়, মহাবিশ্বের বয়স তার থেকেও বিলিয়ন বিলিয়ন বছর বেশি। দ্বিতীয় সল্যুশন হলো, এই ব্ল্যাকহোলটি কোনো নক্ষত্রের পতন থেকে সৃষ্টি হয়নি, এটি সৃষ্টি হয়েছে শিশু মহাবিশ্বে একমাত্রিক স্ট্রিং এর ভাইব্রেশন বা কম্পন থেকে। শিশু মহাবিশ্বের চূড়ান্ত তাপমাত্রায় একমাত্রিক স্ট্রিং-এর কম্পন প্রকট হয়ে ওঠে, এই সময় মহাবিশ্বের ঘনত্ব ছিল বিপুল।

১৩ বিলিয়ন বছর অতীতের ব্ল্যাকহোল প্রমাণ করে দিলো স্ট্রিং থিওরি সত্য!
ফিগার: শিশু মহাবিশ্বের চূড়ান্ত তাপ ও ঘনত্ব থেকে কীভাবে একটি ব্ল্যাকহোল তৈরি হতে পারে তার একটি কাল্পনিক ছবি।

স্ট্রিং যখন ভিন্ন ভিন্ন ফ্রিকোয়েন্সিতে কম্পন করে, তখন আদিম মহাবিশ্বে কোটি কোটি ব্ল্যাকহোলের ভর, আধান এবং কোণিক ভরবেগ প্রস্তুত হয়। শিশু মহাবিশ্বে এই ধরনের ব্ল্যাকহোলের উপস্থিতি আমাদের কাছে প্রমাণ করে যে, ব্ল্যাকহোল কেবল কোনো পতনশীল নক্ষত্র থেকে নয়, একমাত্রিক স্ট্রিং থেকেও তৈরি হতে পারে। সম্ভবত, এই সকল আদিম ব্ল্যাকহোল দুটি মহাবিশ্বের টানেল হিসেবে অস্তিত্বশীল থাকতে পারে!

রেফারেন্স:

আরও পড়ুন- মাল্টিভার্স ও ইনফ্ল্যাশন ফিল্ড

১৩ বিলিয়ন বছর অতীতের ব্ল্যাকহোল প্রমাণ করে দিল স্ট্রিং থিওরি সত্য! /১৩ বিলিয়ন বছর অতীতের ব্ল্যাকহোল প্রমাণ করে দিল স্ট্রিং থিওরি সত্য!