কেউ যদি আমাকে প্রশ্ন করে সাম্প্রতিক সময়ে আমার প্রিয় ৫ জন বিজ্ঞানী কে তবে তার মধ্যে আমি প্রথমেই বলব প্রয়াত তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং এর কথা। বর্তমান সময়ে আমি লরেন্স ক্রস, শন ক্যারল, ভিক্টর স্ট্যাংগার ও মিচিও কাকুকে অনুসরণ করলেও আমার দার্শনিক চিন্তায় সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তি হলেন স্টিফেন হকিং। হকিংকে দেখলেই সর্বপ্রথম আমার মিসনার স্প্যাস অথবা ইউনিভার্স্যাল ওয়েভ ফাংশনের কথা মনে পড়ে। হকিং যখন বলেছিলেন, সমস্ত মহাবিশ্ব একটি পরমাণু আর তার ওয়েভ ফাংশন আছে। শ্রডিঙ্গারের বেড়ালের মতো আমাদের ইউনিভার্সের মিলিয়ন মিলিয়ন সম্ভাব্য কপি আছে। আমরা আমাদেরকে এই ইউনিভার্সে খুঁজে পাই কারণ আমাদের মহাবিশ্বের কাছাকাছি ওয়েভ ফাংশন বড়। আমি খুবই অবাক হই! কারণ তার এই তত্ত্ব , ঈশ্বর ও কসমিক কনসাসনেসকে বাতিল করে দেয়। এই তত্ত্ব অনুসারে, বস্তু ও চেতনা একই ওয়েভফাংশনের সদস্য। তাই এদের কোনোটার জন্য আলাদা করে কোনো রুম নেই, চেতনার স্বতন্ত্র অস্তিত্ব নেই। অবেক্ষক ও অবেক্ষিত একই সত্তা। ওয়েভ ফাংশনে, চেতনাই বস্তু, বস্তুই চেতনা, এর বাহিরে কোনো সত্তা বিরাজ করতে পারে না । এজন্য হকিং স্পষ্টভাবে ঈশ্বরকে বাতিল করে দিয়েছিলেন, তার মহাবিশ্বে ঈশ্বরের দরকারই নেই। তিনি বলেছিলেন, মহাবিস্ফোরণ এত ক্ষুদ্রতর সময়ে সংঘটিত হয়েছিল যে ঈশ্বর সময়ই পায়নি এটাকে শুরু করার!
আমি প্রথম তার প্রেমে পড়েছিলাম ‘ব্রিফ হিস্ট্রি অভ টাইম’ পড়ার সময়। সেখানে তিনি খুব জটিল একটি প্যারাডক্সের উত্তর দিয়েছিলেন অত্যন্ত সহজ ভাষায়। তিনি প্রশ্ন করেছিলেন, আমরা যদি থিওরি অভ এভরিথিং পাই তবে এটি কি আমাদেরকে মহাবিশ্ব সম্পর্কে সঠিক সিদ্ধান্তের দিকে নিয়ে যাবে? এমনকি হতে পারে, আমরা মহাবিশ্ব সম্পর্কে ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব অথবা এই ইকুয়েশন আমাদেরকে মহাবিশ্ব সম্পর্কে কোনো সিদ্ধান্তেই উপনীত হতে দেবে না?
আমার অবাক লেগেছিল তিনি এই প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য অগত্যা ডারউইনের বিবর্তনকে টেনে নিয়ে এসেছিলেন। ফিজিক্সের গ্র্যান্ড ইউনিফায়েড থিওরির আল্টিম্যাট সল্যুশনের সাথে ডারউইনের কী সম্পর্ক থাকতে পারে আমি ভেবে স্তব্ধ হয়ে যাই। যাইহোক, হকিং-এর উত্তরটা ছিল সহজ কিন্তু তার সহজ এই উত্তরের প্রভাব ছিল আমার কাছে ভুমিকম্পের মতোই প্রলয়ঙ্করী। হকিং যে উত্তর দিয়েছিলেন তা আমি আমার মতো করে প্রেজেন্ট করার চেষ্টা করছি।
আজ থেকে ৩০-৭০ হাজার বছর আগে মানুষের আরও অনেক প্রজাতি ছিল যেমন: নিয়ান্ডারথাল, হোমো ইরগেস্টার, ফ্লোরস ও ডেনিসোভান ইত্যাদি। বাঘ ও সিংহ যেমন প্যান্থেরা নামক একটি সাধারণ পূর্বসূরি শেয়ার করেছে। আমরাও তাদের সাথে আনুমানিক ৬-১৩ মিলিয়ন বছর আগে একটি সাধারণ পূর্বসূরি শেয়ার করেছি। কিন্তু আশ্চার্যজনক ব্যাপার হল এরা সবাই বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে আর আমাদের মতো দূর্বল একটা প্রাণীর কিছুই হয়নি!
একটা নিয়ান্ডারথাল এতটাই শক্তিশালী ছিল যে তার শক্তি আমাদের ১০ জন ম্যারাথন দৌড় প্রতিযোগির সমান! চাইলে তারা আমাদেরকে টেনে ছিঁড়ে ফেলতে পারত। তারপরও জঙ্গলের ক্ষুদ্র কিছু কীটপতঙ্গের পরিবেশের উপর যে পরিমাণ প্রভাব ছিল, তাদের প্রভাবও আসলে কীটপতঙ্গের থেকে বেশি ছিল না। তারাও অন্যদের মতো একই কাজই করেছিল: প্রজনন ও বংশবৃদ্ধি।
এখানে এসে হকিং বলেলন, আমাদের আদিম ভাই-বোনরা বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে কারণ তাদের বুদ্ধিমত্তা পরিবর্তনশীল পরিবেশের সাথে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিতে পারেনি। আমাদের অন্য সকল প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার পরও আমরা সার্ভাইভ করছি তার কারণ হল, আমাদের লজিক বৈধ, আমরা বাস্তবতা সম্পর্কে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারি, প্রকৃতি যে ভাষায় কথা বলে আমরা বিশুদ্ধ চিন্তার মাধ্যমে সে ভাষার সাথে সংযুক্ত হয়ে যেতে পারি যার প্রমাণ রকেট, বিমান, কম্পিউটার! এগুলো স্যাপিয়েন্স ফিজিক্সের সমীমকরণ বুঝেই নির্মাণ করেছে। আইনস্টাইনও একই কথা বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন , বিশুদ্ধ চিন্তাই মহাবিশ্বের বাস্তবতা। আপনি যত বিশুদ্ধ চিন্তা করবেন ততই আপনার চিন্তা আর মহাবিশ্বের বাস্তবতা একীভূত হয়ে যাবে। ইউনিভার্সের চিন্তাই হবে তখন আপনার চিন্তা।
এজন্য আইনস্টাইন বলেছিলেন, ঈশ্বর কে বা কি তা নিয়ে আমার বিন্দু পরিমাণও আগ্রহ নেই, আমি তার চিন্তার পদ্ধতি পড়তে চাই, আমি বুঝতে চাই তার মন, সম্পূর্ণ ও বিস্তারিত। তিনি বারবার অবাক হয়েছিলেন, তার চিন্তা কেন জগতের ফিজিক্সের সাথে মিলে যাচ্ছে! শিম্পাঞ্জি বা বনবোর চিন্তা তো থার্মোডায়নামিক্স ও রিল্যাটিভিটি বুঝে না। তিনি কেন বুঝবেন? এটা তার কাছে দুর্বোধ্য ছিল। তিনি বলেছিলেন, আমি মহাবিশ্বকে কেন বুঝি সেটাই আমি বুঝতে পারি না! যাক এবার আমরা হকিং-এর সেই পূর্ববর্তী কথায় ফিরে আসি।
হকিং বলেন, নিয়ান্ডারথাল অথবা ডেনিসোভানদের বাস্তবতাবোধ ইনভ্যালিড ছিল তাই তারা বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। আমাদের লজিক বৈধ। তার সাপেক্ষে সবচেয়ে বড় প্রমাণ আমরা এ মুহূর্তে আছি। আমরা আমাদের বৈধ চিন্তার কারণে পরিবর্তনশীল পরিবেশের সাথে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিতে পারি। যদি আবোলতাবোল চিন্তা নিয়ান্ডারথাল অথবা ডেনিসোভানদের বিলুপ্তির কারণ হয় তবে আমাদের উত্তরসূরীদেরকে থিওরি অভ এভরিথিং কখনোই ভুল সিদ্ধান্তের দিকে নিয়ে যাবে না কারণ তারা এই সিরিয়াস বিষয় নিয়ে আবোলতাবোল চিন্তা করবেই না। তারা যদি ভুল সিদ্ধান্ত নেয় প্রাকৃতিক নির্বাচন তাদেরকে মুছে ফেলবে আর তারা যদি সঠিক সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে প্রাকৃতিক নির্বাচন তাদের টিকে থাকার সুযোগ করে দেবে। আর তাই আমাদের উত্তরসূরিদের মধ্যে তারাই টিকে থাকবে যারা উন্নত জিন ধারণ করে, যাদের চিন্তা ভয়ানকভাবে লজিক্যাল। যারা জাকারবার্গের ফেসবুকে অ্যাডিক্ট হয়ে পাগল হয়ে যায়নি!
যেহেতু থিওরি অভ এভরিথিং এর সাথে তাদের জীবন-মরণের প্রশ্ন জড়িত , সিলেকশন প্রেসার নিজেই তাদেরকে ফোর্স করবে গড ইকুয়েশনের মাধ্যমে সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে! স্বয়ং ন্যাচারাল ফোর্স তাদের উপর বলপ্রয়োগ করবে, তাদের অস্তিত্বকে সংকটের মধ্যে ফেলে দিয়ে তাদের কাছ থেকে গড ইকুয়েশনের সঠিক সল্যুশন আদায় করে নেয়ার জন্যে! আপনি এখন প্রশ্ন করতে পারেন, কীসব আজগুবি কথাবার্তা! ন্যাচারাল ফোর্স কেন আমাদের উপর খালি খালি বলপ্রয়োগ করবে? আমরা থাকলে ন্যাচারের কি আর না থাকলেই কি!
উত্তর: মিচিও কাকু তার হাইপারস্পেস বইতে বলেন, আর মাত্র ১০ মিলিয়ন বছর পর পৃথিবীতে নেমেসিস আঘাত হানবে। গ্রহের সকল প্রাণ বিলুপ্ত হয়ে যাবে। প্রতি ২৬ মিলিয়ন বছর পর পর একদম ঘড়ির কাঁটার মতো মেপে মেপে পৃথিবীতে এই মহান বিলুপ্তি সংঘটিত হয়। ৬৫ মিলিয়ন বছর পূর্বে এই নেমেসিস ডায়নোসরদের খেয়ে দিয়েছিল । ২৬ মিলিয়ন বছর বিরতি দিয়ে বিগত ৩৫ মিলিয়ন বছর আগে আবারও পৃথিবীর অজস্র প্রজাতির স্তলচর স্তন্যপায়ীদের এটি শেষ করে দিয়েছিল। শুরুর দিকে বিবর্তিত পৃথিবীর জীব জগতের প্রায় ৯০% জীবই শেষ হয়ে গিয়েছিল এই পদ্ধতিতে। বিজ্ঞানীরা বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছিলেন, কেন প্রতি ২৬ মিলিয়ন বছর পরপরই এই চক্র পুনরাবৃত্তি হয়? এমন নিয়মিত স্বর্গীয় ঘড়ি কে পরিচালনা করছে…?
রিচার্ড মুলার এ প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য হাইপোথিসাইজ করেছিলেন, আমাদের সূর্য একটি বাইনারী স্ট্যার সিস্টেমের সদস্য। আমাদের সূর্যকে কেন্দ্র করে আর একটি সূর্য আবর্তিত হয়। ঐ অজানা দ্বিতীয় স্ট্যার প্রতি ২৬ মিলিয়ন বছরে একবার পৃথিবীর পাশ দিয়ে প্রদক্ষিণ করে। ওই শয়তানটার নাম নেমেসিস। মিচিও কাকু তার হাইপারস্পেস বইতে লিখেছেন, আর মাত্র ১০ মিলিয়ন বছর পরে নেমেসিস আবার পৃথিবীর পাশ দিয়ে যাবে। এই সময় সে প্লুটোর কক্ষপথের বাহিরে ওর্ট ক্লাউড থেকে প্রচণ্ড গতিতে ধুমকেতুর মেঘকে পৃথিবীর দিকে ধাক্কা দেবে। এই মেঘ পৃথিবীতে এসে সূর্যের আলোকে ঘিরে ধরবে। পৃথিবীতে সূর্যের আলো প্রবেশ করতে পারবে না। পৃথিবী শীতল হয়ে যাবে আর মানব প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যাবে!
বিজ্ঞানীরা ভূ-তাত্ত্বিক স্তরগুলোতে তাদের এই অদ্ভুত তত্ত্বের প্রমাণ পেয়েছিলেন, একটি স্তর এক একটি সমাপ্তি ইঙ্গিত করে, প্রতিটি স্তরে ইরিডিয়াম নামক একপ্রকার বহির্জাগতিক পদার্থ পাওয়া যায় যা প্লুটোর ওর্ট ক্লাউডেই কেবল বিদ্যমান, এই বস্তু পৃথিবীর কোথাও আপনি খুঁজে পাবেন না। প্রশ্ন হল, আপনি ১০ মিলিয়ন বছর পর কী করবেন? কোথায় পালাবেন? আপনি যদি পৃথিবী থেকে মাইগ্র্যাট করতে না পারেন তবে আপনি বিলুপ্ত হয়ে যাবেন, আর মাইগ্র্যাট করতে পারলে আপনি সার্ভাইভ করতে পারবেন। কিন্তু মাইগ্রেট করে কোথায় যাবেন?
আপনি যদি লজিক্যাল জীব হয়ে থাকেন তবে আপনি এমন কোনো স্ট্যার সিস্টেম খুঁজে নেবেন সে স্ট্যার সিস্টেমে বাসযোগ্য গ্রহ আছে। কিন্তু আপনাকে সেই গ্রহে প্রায় আলোর গতিতে প্রবেশ করতে হবে। স্পেশাল রিল্যাটিভিটি অনুসারে, আলোর গতিতে ভ্রমণ সম্ভব না, একমাত্র রাস্তা জেনারেল রিলেটিভিটির ওয়ার্মহোল। কিন্তু ওয়ার্মহোলের মুখ খোলার জন্য 10 to the power 19 কেলভিন তাপমাত্রার ঈশ্বর হতে হবে, যা ল্যার্জ হ্যাড্রন কোলাইডরে উৎপন্ন শক্তি থেকে এক কোয়াড্রিলিয়ন গুণ বেশি!! কিন্তু দাঁড়ান ! ওয়ার্মহোলের মুখ খোলার জন্য প্রথমে কোয়ান্টাম গ্র্যাভেটির রহস্য আপনাকে সমাধান করতে হবে আর এখানেই আসে থিওরি অভ এভরিথিং। থিওরি অভ এভরিথিং যদি আপনাকে কোয়ান্টাম গ্র্যাভেটির সল্যুশন না দেয় আপনিও নিয়ান্ডারথাল ও ডেনিসোভানদের মত পরিবর্তনশীল পরিবেশের সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে পারার অক্ষমতার কারণে বিলুপ্ত হয়ে যাবেন! পদার্থবিদ্যার সূত্র স্বয়ং আপনাকে নিজ হাতে হত্যা করবে কারণ আপনি তার নিষ্কাম ও নিরপেক্ষ হাত থেকে পালাতে পারেননি। আপনার জন্য শুধু একটাই পথ খোলা, আর সেই রাস্তাটিই হল থিওরি অভ এভরিথিং বা গড ইকুয়েশন! এটাকে ফিজিক্সে যিশুর হলি গ্রেইল বলে। যে পানপাত্রে যিশু লাস্ট সাফার নাইটে পানি পান করেছিলেন! হাইপারস্পেস বইটির দেহ ব্যাবচ্ছেদ
আপনি এই ইকুয়েশন সমাধান করতে পেরেছেন তো আপনি বাঁচবেন, নইলে আপনার জন্য খোলা আছে ক্রেটিশিয়াস যুগে ডায়নোসরদের মতো বিলুপ্তির মহান রাস্তা। বুঝলেন কিছু? এটাই স্টিফেন হকিং মিন করেছিলেন! খুব সিম্পল একটা থট কিন্তু প্রভাব অনেক ডেঞ্জারাস!!!
যাইহোক, নেমেসিস আসার আগ পর্যন্ত আপনি ১০ মিলিয়ন বছর পর্যন্ত এই গ্রহে সার্ভাইভ করতে পারবেন কিনা তা যথেষ্ট প্রশ্নবিদ্ধ। মিচিও কাকু বলেছেন, পরিবেশগত পতনে মানুষ ব্যাক্টেরিয়ার মত শেষ হয়ে যাবে। কিভাবে? আসুন। ডিসকাস করি। ব্যাক্টেরিয়া জ্যামিতিক হারে বংশবৃদ্ধি করে। যদি স্বাধীনভাবে বংশবৃদ্ধির সুযোগ দেয়া হয় তবে এক সপ্তাহের ভেতর ব্যাক্টেরিয়া কলোনি পৃথিবী আকার হয়ে যাবে। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হল , ব্যাক্টেরিয়া কলোনি একটি কয়েন থেকেও বড় হয় না। প্রশ্ন হল কেন?
এই প্রশ্নের উত্তর পেতে বিজ্ঞানীরা ল্যাবে ব্যাক্টেরিয়াকে স্বাধীনভাবে বংশবৃদ্ধির সুযোগ দিয়েছিল। দুর্ভাগ্যের ব্যাপার হল, তারা নির্দিষ্ট একটি পর্যায়ে গিয়ে বিলুপ্ত হয়ে যায়। কারণ তারা এত বেশি খায় ও বর্জ্য ত্যাগ করে যে নিজেদের বর্জ্যে তারা নিজেরাই ডুবে মরে যায়। মানুষের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য, আমরা জলবায়ুকে বিপর্যয়ের মধ্যে ফেলে দিয়েছি, আমাদের পরিত্যাক্ত বর্জ্যে সমুদ্র দূষিত, দুষিত আবহাওয়া। বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন, আমরাও না জানি আমাদের নিজেদের বর্জ্যে নিজেরা ডুবে আগামী ২০০- ৫০০ বছরের মধ্যেই শেষ হয়ে যাই। যাইহোক ব্যাক্টেরিয়ার মত প্রযুক্তিগত উন্নয়নও হয় জ্যামিতিক হারে। একশ বছর আগেও আমাদের পৃথিবী এমন ছিল না। গ্রিকরা স্যাটেলাইটের কথা ভাবতেই পারেনি! একশ বছর পর এই পৃথিবীকে চিনতে আমাদেরও কষ্ট হবে। স্টিফেন হকিং এজন্যই বলেছেন, থিওরি অভ এভরিথিং আমাদের সঠিক পথেই নিয়ে যাবে যদি আমরা কেবল কোনো মতেসতে কীটপতঙ্গের মতো হলেও টিকে যেতে পারি ,মাথাটাকে যেন একটু খাটাই! হ্যাঁ, আমাদের টিকে থাকাটাই মূল স্বার্থকতা। তবে জাতীয়তা, ধর্ম ও পারমাণবিক বোমার কথা ভুলে যাবেন না যেন!
হোমো ইরেক্টাসরা বিশ লাখ বছর এ গ্রহে টিকেছিল। আর স্যাপিয়েন্স এসেছে এইতো এক লাখ বছর হল। সভ্যতার স্কেলে আমরা টাইপ ০ স্তরে অবস্থান করছি যারা সবেমাত্র মাধ্যাকর্ষ বলকে ত্যাগ করতে শিখেছে। ধর্ম ও জাতীয়তার স্বতন্ত্র গল্প থেকে আমরা একে অন্যের বিপক্ষে পারমাণবিক বোমা তৈরি করেছি। একটি গল্প অন্য আর একটি গল্পকে পারমাণবিক বোমা মেরে শেষ করে দিতে চাইছে। গ্রহ নিজেই নিজের বিপক্ষে পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করতে চায়। এটি একটি ইল্যুশন কারণ আমরা বুঝতে পারছি না, আমরা প্ল্যানেটারি সুইসাইড করলে এ গ্রহে ঈশ্বর, ধর্ম ও জাতীয়তা সার্ভাইভ করতে পারবে না। ড্র্যাক সমীকরণ থেকে বিজ্ঞানীরা ধারণা করেছেন, মানুষ আফ্রিকার জঙ্গল থেকে মাইগ্রেট করার মিলিয়ন বছর আগেও এ মহাবিশ্বে বুদ্ধিমান সভ্যতা ছিল। আমরা উন্নত সভ্যতার রেডিও সিগন্যাল পাই না কারণ তারাও ধর্ম ও জাতীয়তা প্রিজার্ভ করার জন্য বহু মিলিয়ন বছর আগেই পারমাণবিক যুদ্ধে শেষ হয়ে গিয়েছে।
(স্টিফেন হকিং ও গড ইকুয়েশন,স্টিফেন হকিং ও গড ইকুয়েশন,স্টিফেন হকিং ও গড ইকুয়েশন, স্টিফেন হকিং ও গড ইকুয়েশন )