প্রথমেই, পূর্ববর্তী একটি প্রশ্ন ভেবে দেখতে চাইঃ আমাদের কি প্রকৃতপক্ষে বিস্মিত হওয়া উচিত যে কিছু ঘটনা সময়ের সুনির্দিষ্ট একটি ডিরেকশনে ঘটছে কিন্তু অন্য ডিরেকশনে নয়? এ পর্যন্ত কেউ কি বলতে পেরেছে যে এ মহাবিশ্বকে অতীতের দিকে উল্টে দেয়া যায়?
সময়কে চিন্তা করুন একটি ঘটনার লেবেল হিসেবে। আর এভাবে সময় আসলে স্পেসের মতোই। দুটোই আমাদের মহাবিশ্বে কোনো একটি বস্তুকে লোকেট করতে সাহায্য করে। কিন্তু এ দৃষ্টিকোণ থেকে স্পেস ও টাইমের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি পার্থক্য রয়েছে__ স্পেসের ডিরেকশনগুলোকে তৈরি করা হয়েছে পরস্পর সমান হিসেবে যেখানে সময়ের ডিরেকশন ( যেমন- “পাস্ট ” এবং “ফিউচার” ) পরস্পর আলাদা।
আমাদের পৃথিবীর মতো বিশাল একটি অবজেক্টে স্পেসের ডিরেকশনকে খুব সহজভাবে পৃথক করা যায়__ একটি কম্পাস আপনাকে বলে দেবে, আপনি উত্তর, দক্ষিণ,পূর্ব অথবা পশ্চিমে। কিন্তু এটা প্রকৃতির গভীর অন্তর্নিহিত ফিজিক্সের প্রতিফলন নয়__ এটি এ জন্য যে আমরা একটি বিশাল গ্রহে বাস করছি যার সাপেক্ষে আমরা বিভিন্ন ডিরেকশনকে ডিফাইন করতে পারি।
আপনি যদি এন্ড্রোমিডা গ্যালাক্সি থেকে পৃথিবীর দিকে খালি চোখেন তাকান, তবে এটি আপনার কাছে মহাকাশের মতোই একটি এম্পটিনেস মনে হবে, আর এ শূন্যস্থানের ভেতর আপনি নর্থ অথবা সাউথ ডিফাইন করতে পারবেন না। অথবা আপনি যদি আমাদের গ্রহ থেকে দূরে মহাশূন্যে ভাসতে থাকেন, স্পেসের সকল ডিরেকশন তারতম্যহীন হয়ে উঠবে, আপনি সেখানে উপর ও নিচের সুনির্দিষ্ট কোনো ধারণা খুঁজে পাবেন না।
আমরা যদি এ ব্যাপারটিকে প্রকৌশলগতভাবে বলি, ফিজিক্সের সূত্রের মধ্যে একপ্রকার সিমেট্রি কাজ করবে__ স্পেসের প্রতিটি ডিরেকশন অন্যান্য ডিরেকশনের সমান”___ একটি ফটোগ্রাফ নিন এবং ব্যাকওয়ার্ডে প্রিন্ট করুন অথবা আয়নায় ছবিটিকে যেমন দেখতে লাগে তেমন। আপনি যখন ছবিটিকে আয়নায় দেখবেন, দেখা যাবে এর অধিকাংশ দিকই তারতম্যহীন। একটি সুস্পষ্ট বিপরীত উদাহরণ হলো, হ্যান্ড রাইটিং, পৃথিবীর মতোই, লেখাগুলো একটি নির্দিষ্ট ডিরেকশন গ্রহণ করে( আপনি বইটিকে বাম থেকে ডানে পড়েন)। কিন্তু অধিকাংশ স্কিন যা সম্পূর্ণ মানুষের তৈরি নয়, সেগুলো আমাদের কাছে সমানভাবে প্রাকৃতিক মনে হয় আমরা সেগুলোকে সরাসরি দেখি অথবা আয়নায়!
সময়ের সাথে এর একটি তারতম্য আছে। তবে “আয়নায় কোনো একটি ছবির বিপরীত প্রতিবিম্ব’’ ( স্পেসের ডিরেকশন রিভার্স ) দেখার সাথে একটি মুভিকে পেছনের দিকে প্লে করার( টাইমের ডিরেকশন রিভার্স ) একটি সম্পর্ক আছে। এবং সেক্ষেত্রে এটি বলা সহজ যে কখন সময় উলটে যাবে__ ইরিভার্সিবল প্রসেস যা সময়ের তীরকে ডিফাইন করে আকস্মিকই এটি ভুল শৃঙ্খলা প্রাপ্ত হবে। তাহলে স্পেস ও টাইমের ভেতর যথাযথ এ তারতম্য ঠিক কিভাবে জন্মগ্রহণ করেছে?
যদিও এটি সত্য যে, আমাদের পায়ের তলায় পৃথিবীর উপস্থিতি স্পেসের একটি তীর উত্তোলন করে যা আপ এন্ড ডাউনের মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করে, এটি একটি সংকীর্ণ ব্যাপার, অন্তর্নিহিত ফিজিক্সের প্রতিফলন হওয়ার পরিবর্তে। আমরা নিজেদেরকে পৃথিবী ও অন্যকোনো গ্রহহীন মহাশূন্যে খুব সহজেই কল্পনা করতে পারি যেখানে কোনো সুনির্দিষ্ট ডিরেকশন নেই।। কিন্তু মহাবিশ্বে কার্যরত আভ্যন্তরীণ ফিজিক্সের আইনগুলো সময়ের সুনির্দিষ্ট ডিরেকশনকে পৃথক করে দেখেনা, ঠিক যেমনি স্পেসের সুনির্দিষ্ট কোনো ডিরেকশনকে।
আমরা যদি খুবই সিম্পল একটি সিস্টেমের উপর আমাদের মনোযোগ সীমাবদ্ধ করি যে সিস্টেমে শুধু অল্প কয়েকটি চলমান অংশ রয়েছে, যাদের মোশন ফান্ডামেন্টাল ফিজিক্সের সূত্রকে প্রতিফলিত করবে, বিরাট ভরযুক্ত লোকেশনের পরিবর্তে তবে আমরা দেখব যে সেখানে কোনো “Arrow of Time” নেই, আমরা এটাও বলতে পারবোনা যে মুভিটি কখন পেছনের দিকে প্রবাহিত হয়েছে! আপনি সম্পূর্ণ মহাবিশ্বকে ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন চলমান বস্তুর সমাহার মনে না করে তাকে মনে করুন অত্যন্ত ক্ষুদ্র কিছু সংখ্যক ঘটনার সমাহার হিসেবে যে ঘটনার প্রবাহ এক দৃষ্টিতেই দেখা যায়, এমন একটি পরিস্থিতিতে ঘটনা ভবিষ্যতের দিকে প্রবাহিত হচ্ছে অথবা না অতীতের দিকে__ তারতম্য করতে পারবেন না।
এক্ষেত্রে আপনি গ্যালেলিওর সানডায়ালারের কথা চিন্তা করতে পারেন। যেটি সামনে ও পেছনে শান্তভাবে রক করে। আপনাকে যদি কেউ সানডায়ালারের মুভি প্রদর্শন করে, আপনি এটা বুঝতে পারবেন না যে, এ সানডায়লার আপনার সামনের দিক প্রদর্শন করছে নাকি পেছনের দিক__ এর মোশন পরিপূর্ণভাবে এতটাই সিম্পল যে এটি উভয় ডিরেকশনে সমানভাবে কাজ করে।

অতএব সময়ের তীর, মহাবিশ্বের আভ্যন্তরীণ ফিজিক্সের কোনো বৈশিষ্ট্য নয়, অন্তত এ পর্যন্ত আমরা যতটা জানি। স্পেসের উপর ও নিচের সজ্জা যেমনিভাবে পৃথিবী নির্দিষ্ট করে দেয়, সময়ের সুনির্দিষ্ট ডিরেকশনও একইভাবে পরিবেশের প্রভাব থেকে সৃষ্ট একটি বৈশিষ্ট্য। সময়ের ক্ষেত্রে, ব্যাপারটা এমন নয় যে , আমরা কোনো প্রভাবশালী অবজেক্টের( Influential object) স্থানিক নৈকট্যে বাস করছি; এটি হলো যে আমরা একটি প্রভাবশালী ঘটনার ( Influential Event) সাময়িক নৈকট্যে অবস্থান করছি; আর সে ঘটনাটি হল আমাদের মহাবিশ্বের জন্ম। আমাদের পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্বের সূচনা, একটি উত্তপ্ত ঘণ অবস্থা যা বিগব্যাং হিসেবে পরিচিত, যার রয়েছে অত্যন্ত নিন্মমাত্রিক এন্ট্রপি। সে ঘটনার প্রভাবই আমাদেরকে সময়ের মধ্যে উদিত করেছে ঠিক যেমনি মহাশূন্যে পৃথিবীর উপস্থিতি আমাদের দাঁড় করিয়েছে স্থানে। ( শন ক্যারলের আরও লেখা-কার্য-কারণের ফিজিক্স ও বিবর্তনীয় ব্যাখ্যা)

while the Big Bang defines a preferred direction in time.
___মূল লেখকঃ শন ক্যারল , From Eternity to Here