আমরা তো এতদিন যাবৎ শুনে এসেছি আমাদের পৃথিবীর বয়স 4.54 billion বছর। কিন্ত বিজ্ঞানীরা ঠিক কোন পদ্ধতিতে পৃথিবীর বয়স নির্ণয় করেছেন? কেননা,পৃথিবী নিজেই নিজের বয়স লুকিয়ে রাখে। আজ, ভূত্বকের অধিকাংশই পৃথিবীর চেয়ে কম বয়সী,যা প্লেট টেকটোনিক,ক্ষয় এবং নতুন স্তরের আচ্ছাদন দ্বারা পরিবর্তিত হয়েছে।
পুরো যাত্রাটা শুরু হয়েছিল স্কটিশ ভূতত্ত্ববিদ জেমস হাটন যিনি পৃথিবীর পৃথিবীর পৃষ্ঠে থাকা পাথরের উপর পরীক্ষার ধারণাটা উন্মোচন করেন। সে সময়ের বিজ্ঞানীরা পাললিক শিলা বা পাথরের পুঞ্জীভূত হওয়ার হারের সুনির্দিষ্ট মান বের করেন। পরে বিশ্বে নির্দিষ্ট সময়ের পাথরের সর্বাধিক পুরুত্ব হিসাব করতে।এভাবে সবচেয়ে পুরনো স্তরের পাথর দ্বারা পৃথিবীর বয়স হিসাব করতেন। তাদের বেশিরভাগের হিসাবেই এসেছে প্রায় 100 million যা ভুল ছিল। কেননা, পাথর ক্ষয়, বিকৃত হয়। সে হিসাব মাথায় নিয়ে তারা গণনা করেনি।
তারপর আইরিশ পদার্থবিদ জন জলি সমুদ্র হতে নদীতে লবণ প্রবেশের হার হিসাব করে পৃথিবীর বয়স গণনা করেন,যা ছিল 82 million। তার ধারণা অনুসারে সমুদ্রের লবণাক্ততা ক্রমাগত বেড়েই চলছে। এবারও ভুল হয়েছে ত্রুটিপূর্ণ অনুমানের জন্য।কেননা পৃথিবীতে সমুদ্রের লবণাক্ততা বেশ স্থিতিশীল।
উপরে উল্লিখিত পদ্ধতির সাথে পৃথিবীর বয়সের কি সম্পর্ক,তা নিয়ে অনেকেই দ্বিধা-দ্বন্দে আছেন।সেসব গাণিতিক হিসাব পোস্টের মূল উদ্দেশ্য নয়।বরং,বিজ্ঞানীরা যেসব পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন ও তাদের সীমাবদ্ধতা কি,তার সম্পর্কে একটা পরিষ্কার ধারণা পাবেন।
1862 সালে লর্ড কেলভিন তাপগতিবিদ্যার মাধ্যমে পৃথিবীর বয়স হিসাব করেন। তিনি ধরে নিয়েছিলেন পৃথিবী শুরু হয়েছিল গলিত বল হিসেবে,যার তাপমাত্রা ছিল সূর্যের সমান, যা তাপ হারিয়ে শীতল হয়েছে।পৃথিবীর অভ্যন্তর হতে আসা তাপ দ্বারা এ শীতল হতে কতটুকু সময় লেগেছে, তা হিসাব করে পৃথিবীর বয়স নির্ণয় করেছিলেন যা এসেছিল 20 million। তার এ হিসাব ডারউইন এর বিবর্তন তত্ত্বের সাথে সাংঘর্ষিক ছিল। কেননা,ডারউনের মতে বিবর্তন হতে হলে পৃথিবীর বয়স আরোও বেশি হতে হবে। অবশ্য অন্যান্যদের মতো, কেলভিনের অনুমানের মধ্যেই ছিল ভুল। তিনি ধরে নিয়েছিলেন, পৃথিবী নিজের তাপ হারানোর পর তাপ আসার একমাত্র উৎসই হচ্ছে সূর্য। কিন্তু পৃথিবীর নিজেরও অতিরিক্ত তাপ রয়েছে যা আসে তেজস্ক্রিয়তার মাধ্যমে।

সময়ের পরিক্রমায় বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে বিজ্ঞানীরা রেডিওমেট্রিক ডেটিং পদ্ধতি আবিষ্কার করলেন যা দ্বারা সুনিপুণভাবে কোনো পাথর বা খনিজ সেম্পলের বয়স নির্ণয় করা যেত। এ পদ্ধতিতে কোনো মৌলের তেজস্ক্রিয় আইসোটোপের অর্ধায়ু(ঠিক যে পরিমাণ সময় কোনো পদার্থ তার অর্ধেক সংখ্যক পরমাণু হারায়) নির্ণয় করে তার ক্ষয়সংক্রান্ত তথ্যাদি হিসাব করে বয়স নির্ণয় করা হতো। যদিও এর আরো অনেক পদ্ধতি আছে,তবে তা আজকের বিষয়ের মূল উদ্দেশ্য নয়। কিন্তু এ পদ্ধতিতে আরেকটি সমস্যা আবির্ভূত হলো যা হচ্ছে শিলা চক্র।শিলা ক্রমাগত তার গঠন পরিবর্তন করে।আগ্নেয় হতে রূপান্তরিত এবং পরে পাললিক শিলা।এছাড়া পৃথিবীর ম্যান্টল দ্বারা অতিবাহিত হওয়ার সময় ক্ষয়,অগ্নেয়গিরি হতে উত্থাপিত লাভার স্তর পরে তা কাঠিন্যে রূপ লাভ করতো যা মূল পাথরের উপর নতুন স্তর সৃষ্টি করে।ফলে পাথরের মূল বয়স নির্ণয় করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে।



শিলাচক্রের এ সমস্যা এড়াতে ও আরো পুরোনো পাথরের নিদর্শন পেতে বিজ্ঞানীরা গ্রহাণু ও চাঁদ হতে আনা পাথরের উপর পরীক্ষা চালান ঠিক একই রেডিওমেট্রিক ডেটিং পদ্ধতিতে। এগুলো আবার শিলাচক্রের সম্মুখীন হয়নি। পৃথিবী এবং তার বাইরের সমস্ত ডেটা আমাদের গ্রহের আনুমানিক বয়স 4.5 বিলিয়ন বছরের দিকে পরিচালিত করেছে।
তথ্যসূত্রঃ