প্রকৃতিতে অনেক টুইস্ট আছে। আর সেলফিশ জিন এক্ষেত্রে সেরা একটি উদাহরণ! যেমন- আমরা জানি যে জিনের উদ্দেশ্য জিনের সংখ্যাবৃদ্ধি করা। জিন আমাদের শরীর ও মন কোনোটাকেই গুরুত্ব দেয়না। সে শুধু অন্ধভাবে নিজের কপি তৈরি করে! এই মনে করুন, ক্যানিভাল মাকড়সার কথাই বলি। ক্যানিভাল মাকড়সা স্ত্রী মাকড়সার সাথে যখন সেক্স করে স্ত্রী তার মাথাটি এক কামড়ে খেয়ে ফেলে আর এরপর তার সেকচুয়াল পাওয়ার নাকি আরো অনেক বেড়ে যায়, মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও সে সেক্স করে কারণ সেক্সের মাধ্যমে তার সেলফিশ জিন ফিউচারে যাবে, আর জিন তার দেহটিকে সেই উদ্দেশ্যেই ডিজাইন করে, যেনো সে ডিএনএ এক্সচেঞ্জ করতে গিয়ে নিজের প্রাণ দিতেও সেক্স ফিল করে! আজব! একবার ভেবে দেখুন তো, আইনস্টাইন যদি ক্যানিভাল মাকড়সা হতো তবে তার ভাগ্যে কী জুটতো? তার E=MC2 সহকারে তার বউ তার এত দুর্দান্ত ব্রেনটা এক কামড়ে খেয়ে ফেলতো! G- Ha !! বিস্ময়ের কোন কারণ নেই এটাই সত্য। জিন হলো অনেকটা করোনা ভাইরাসের মতো ডারউইনের দেহকে সে তার উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য ব্যবহার করেছে কিন্তু করোনা ভাইরাসের সাথে জিন নামক এই ভাইরাসটির তারতম্য হলো এটি এক দেহ থেকে অন্য দেহে লাফিয়ে বেড়ায় না, স্থিতিশীল একটি দেহ গড়ে তোলে আর প্রজননের মাধ্যমে নিজের অনুলিপি অন্য প্রজন্মে ছড়িয়ে দেয়। সে এতটাই জঘন্য যে সে আপনাকে বৃদ্ধকালে মেরে ফেলার নির্দেশ দেয়, যেনো আপনার সন্তানের ভালো জিনগুলো নিজের অনুলিপি ক্রিয়েট করতে পারে! (সেলফিশ জিন ও মৃত্যু ) বলতে পারেন, জিন যদি এতটাই শয়তান হয় তবে সে কেনো লাগাতার সবার সাথে ইন্টারকোর্স করার জন্য আমাদের প্রোগ্রাম করেনি! কেনো আমাদের নিজস্ব সৌন্দর্যবোধ আছে? কেনো আমাদের পছন্দ সুনির্দিষ্ট?এর উত্তর হলো, আসলে জিন অপেক্ষাকৃত ভালো জিন সম্পন্ন শরীরের সাথেই সেক্স করতে চায়, যদি দূর্বল জিন সম্পন্ন কারো সাথে সে আমাদের সেক্স করতে প্রোগ্রাম করতো তবে সে বিলুপ্ত হয়ে যেতো! আর এ জন্যই সে সুন্দর খোঁজে কারণ যার শরীরে ভালো জিন থাকে সে দেখতেও সুন্দর হয়! আর সে সৌন্দর্য নারীর বড় ব্রেস্ট, সুগঠিত নিতম্ব, স্কিনের উজ্জ্বল কালার আর গলার ত্যাজের মাধ্যমে প্রকাশ পায়! পুরুষের ক্ষেত্রে সেটা প্রকাশ পায় তার উচ্চতা, মোটা পেনিস, প্রশস্ত কাঁধ, গম্ভীর গলা ও চেহারার মধ্য দিয়ে। দাঁড়িওয়ালা পুরুষ দেখলে ৩.৬ মিলিয়ন বছর পূর্বে লুসি ক্রাশ খেতো কারণ এটা ছিল তার হিংস্রতা ও আগ্রাসনের প্রতিক।
দেখেন! জিনের মূল উদ্দেশ্য বংশবৃদ্ধি করা হলেও সে যার তার সাথে সেক্স করতে পারছেনা! প্যারাডক্সিকাল পরিস্থিতিতে পড়ে যাচ্ছে। এ প্যারাডক্স ভাঙ্গার জন্য তার মধ্যে আরো শত শত ডায়মেনশনের মিউটেশন সংঘটিত হচ্ছে। একটা পাখি নির্দিষ্ট সংখ্যক কিছু ডিম পাড়ে কিন্তু জিনের উদ্দেশ্য জিনের সংখ্যা বৃদ্ধি করা! এটা একটা প্যারাডক্স! বলতে পারেন, আসলে, জিনের মূলনীতি মেনে সে ১০, ২০, ৩০, ৪০ বা একশটি ডিমও তো পাড়তে পারে কিন্তু ভেবে দেখুন , একই নীতিতে কিন্তু সে অসীম সংখ্যক ডিমও পাড়তে পারে, অসীম নিশ্চয় তার জন্য সর্বোচ্চ সম্ভাবনা! কিন্তু এখানে একটি টুইস্ট আছে। সে যদি অসীম সংখ্যক ডিম তৈরি করতে যায় তবে তার অসীম পরিমাণ সম্পদ প্রয়োজন, আর অসীম সম্পদ এ সীমিত পৃথিবীতে নেই! গ্যানেট আর গিলমেটরা একটি করে ডিম পাড়ে , কারণ তাদের সন্তানদেরকে কন্টিনিউয়াসলি খাবার পরিবেশন করতে হয়, একের অধিক ডিম পাড়লে তারা দুটো সন্তানের জন্য পর্যাপ্ত খাবার পরিবেশন করতে হিমশিম খাবে, সন্তান দূর্বল হয়ে যাবে, মারা যাবে। এ দূর্বল সন্তানরা যদি টিকে যায় তাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম দূর্বল জিন পাবে আর এতে করে এ জনগোষ্ঠী দীর্ঘকাল প্রকৃতিতে টিকে থাকতে পারবেনা।
তার মানে, বুঝতেই পারছেন, শুধু সেক্স করলেই, কোটি কোটি সন্তান জন্ম দেয়া সম্ভব হয়না, মূলনীতি অনুযায়ীই জন্ম দেয়া যায়না, যদি যেতো তবে একজন মানুষের কয়েক লাখ সন্তান থাকতো, এত কোটি স্পার্ম খরচ করতোনা ! জিনকে বিশাল একটা পরিবেশ ম্যানটেইন করতে হয়, অনেক ঘাত-প্রতিঘাত ও প্রতিকূলতা আর এ জন্য তার মূলনীতি যাইহোক না কেন তাকে কখনো ধীরে আবার কখনো দ্রুত গতিতে ছুটতে হয়, তার গতি সবসময় একইরকম হবে, তা একদম কাজের কথা নয়! একটি মহাকাশচারী রোবট যে অ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সিতে ভ্রমণ করার জন্য প্রোগ্রামড, তার একমাত্র উদ্দেশ্য যদিও অ্যান্ড্রোমিডা কিন্তু তাকে মাঝপথের অনেক প্রতিকূলতা অতিক্রম করতে হয়, বিশাল এক পথ পাড়ি দিতে হয়, আর তাই সে চাইলেই হুট করে এন্ড্রোমিডায় চলে যেতে পারেনা কিন্তু মাঝপথে যদি একটি ওয়ারর্মহোল পেয়ে যায় তবে মিলিয়ন বছরের পথ সেকেন্ডেই পাড়ি দেয়, ওয়েটিং টাইম প্রবলেম বলতে বিবর্তনের বিপক্ষে একটি ধারণা আছে। এ ধারণায় বিশ্বাসীরা মনে করে, জিনের মধ্যে অল্প কিছু মিটেশনের জন্য মহাবিশ্বের বয়স থেকেও বেশি সময় অপেক্ষা করা লাগে!আর এজন্য আসলে কমপ্লেক্স স্ট্রাকচার ক্রিয়েট হওয়া সম্ভব না। তারা ধরেই নেয় যে, একটি জিন লাইন ধরে বসে থাকে কখন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কোনো মিউটেশন ঘটবে, Cumulative Mutation সম্পর্কে তাদের কোন ধারণা নেই, তারা সম্ভবত এটাও জানেনা যৌন প্রজনন জিনের মধ্যে কত দ্রুত মিউটেশন ঘটাতে পারে! যাইহোক, যেহেতু আবহাওয়া ও জলবায়ু সব সময় পরিবর্তনশীল এ জন্য জিনের নির্দিষ্ট কোনো মিউটেশন বা কৌশল প্রতি ক্ষেত্রে একই ফলাফল দেয়না। এখানেও রয়েছে আরো অজস্র প্যারাডক্স! যেমন- জিনের কাজ হলো প্রতিযোগিতামূলক একটি পরিস্থিতিতে অন্যান্য জিন বা গ্রুপ অব জিনের তুলনায় নিজের সার্বাধিক অনুলিপি তৈরি করা। আর এজন্য তার উচিত আমাদের মাঝে এমন একটি আক্রমণাত্মক মস্তিষ্ক তৈরি করা যেনো আমরা একে অপরের সাথে সবসময় এগ্রেসিভ আচরণ করি, প্রতিযোগিদের সুযোগ পেলেই মুহূর্তেই এ ইকোসিস্টেম থেকে সরিয়ে দেই! কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে কী তাই হয়? জিনের দৃষ্টিতে চিন্তা করলে পৃথিবীর সব মানুষই আমাদের প্রতিযোগী ! আর প্রতিযোগীদের অবশ্যই একে অপরের সাথে সবসময় যুদ্ধে লেগে থাকা উচিত, সুযোগ পেলেই খুন করা উচিত? কিন্তু এ পর্যন্ত আপনি কয়টা মানুষ খুন করেছেন? এ পর্যন্ত আপনি কয়জন নারীকে ধর্ষণ করেছেন? এ পর্যন্ত কতজন মানুষ আপনার দ্বারা আহত হয়েছে? এ পর্যন্ত আপনি কতজন মানুষের ঘরে ডাকাতি করেছেন! না! করেননি! কিন্তু জিন তো সেলফিশ! জিন সেলফিশ হওয়া সত্ত্বেও আপনার মধ্যে কেনো সেন্স অব মরালিটি এসেছে? কেন আপনি বিবেক অনুভব করেন? কেনো আপনি যৌক্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন? আপনার কি উচিত নয়, একজন পেশাদার সিরিয়াল কিলার হওয়া? এখন আপনি ভাবতে পারেন, প্রকৃতিতে স্বার্থপরতা নয় বরং নিঃস্বার্থপরতা কাজ করছে! আসলে আমরা গ্রুপের মঙ্গলের জন্য, সমগ্রের মঙ্গলের জন্য ব্যক্তি স্বার্থকে বিসর্জন দিচ্ছি, আমরা আমাদের নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করছি, আমরা যাদৃচ্ছিক আচরণ করছিনা, আমাদের মস্তিষ্কের মধ্যে এ জন্যই সেন্স অব মরালিটির বিকাশ ঘটেছে যেনো আমাদের প্রজাতি আমাদের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, যেনো সমগ্র মানব সভ্যতা একইসাথে ও একইসময় তাদের প্রজাতির সামগ্রিক সার্ভাইভালের জন্য কাজ করে! আপনি বলতে পারেন, আপনার সেন্স অব মরালিটি আসলে গ্রুপ সিলেকশনের চাপেই বিবর্তিত হয়! এটা হলো ইতিহাসে করা সবচেয়ে বড় ভুল গুলোর মধ্যে একটি! মূলত, জিন এতটাই প্যারাডক্সিক্যাল পদ্ধতিতে কাজ করে যে তার গতিবিধি বোঝার জন্য তার মূলনীতিগুলোর টুইস্ট বোঝাটা খুবই জরুরি!
মনে করুন, আপনার জমিতে একটি ক্ষতিকর পেস্ট দেখা দিয়েছে, আপনি তার বিপক্ষে একটি প্রতিষেধক ব্যবহার করেছেন এবং সে নির্মূল হয়ে গেছে, এটা কি আপনার জন্য আসলে সুবিধাজনক কোনো কাজ হয়েছে? এটা কী আপনার ফসলকে এখন টিকে থাকার ক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা দেবে? নিশ্চয়ই নয়, কারণ আপনার জমিতে আরো অজস্র কীটপতঙ্গ আছে। এতদিন হয়তো তারা ঐ প্রভাবশালী পেস্টের প্রতাপে বিশেষ কোনো সুবিধা করতে পারেনি কিন্তু আপনি তাদের রাস্তা সম্পূর্ণ পরিস্কার করে দিয়েছেন। এবার তারা মুক্ত ও স্বাধীন, আপনি তাদের জীবন থেকে প্রতিযোগীতার পরিমাণ কমিয়ে তাদেরকে জনগোষ্ঠীতে ছড়ানোর জন্য অবারিত এক সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছেন। আর এতে করে পরবর্তী বছর আপনার জমিতে অন্য আর এক প্রজাতির মারাত্মক ও ভয়াভহ রকমের পেস্ট দেখা দেবে, যার ক্রিয়েটর আপনি নিজেই! তার মানে দেখা যাচ্ছে, জিন যদি যাদৃচ্ছিকভাবে আমাদের মস্তিষ্ককে এমনভাবে প্রোগ্রাম করে যে প্রতিযোগীদের দেখলেই আক্রমণ করো, তবে এটা আমাদের টিকে থাকার জন্য মোটেও সুবিধাজনক হতোনা বরং আমরা একদলকে খুন করে অন্য কোনো গ্রুপকে শক্তিশালী করে তুলতাম।
মনে করুন, মি-এক্স ও ওয়াই দুজনেই আমার শত্রু ও প্রতিযোগী। মিঃ এক্স তুলনামূলকভাবে মিঃ ওয়াই- এ থেকে শক্তিশালী, আর আমি পারমাণবিক বোমা মেরে মিঃ এক্সকে উড়িয়ে দিলাম! এতদিন মিঃ এক্স-এর প্রভাবে ওয়াই আমার তেমন কোনো ক্ষতি করতে পারেনি কারণ তার একজন প্রতিযোগী বেশি ছিল কিন্তু এখন একজন প্রতিযোগী হ্রাস করে আমি আমার নিজের উপর বাড়তি ঝুঁকি টেনে এনেছি! এটা মোটেও আমার জন্য সুবিধাজনক নয়! আর এ জন্য আপনার কাছে পারমাণবিক বোমা থাকলেই যে আপনি যে সেটা ছুঁড়ে আপনার প্রতিযোগীদের ধূলিস্যাৎ করে দেবেন এটা একদম কাজের কথা নয় বরং আপনার নিজের টিকে থাকার প্রয়োজনেই আপনাকে আপনার শক্তি, ক্ষমতা ও আগ্রাসী মনোভাবকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, আপনার মধ্যে মরালিটি জাগ্রত করতে হবে, আর ঠিক এ জন্যই জিন প্রাণীদের মস্তিষ্কে সেন্স অব মরালিটি তৈরি করে দেয়, যেনো তারা প্রতিযোগীতামূলক একটি ব্যবস্থাপনার ভেতর কোনোপ্রকার ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে নিজের অস্তিত্বকে বিলুপ্ত করে না দেয়, ব্যক্তি যদি বিলুপ্ত হয় , তবে জিন নিজে বিলুপ্ত হয়ে যাবে আর জিনই যদি বিলুপ্ত হয়ে যায় তবে তার স্বার্থপর উদ্দেশ্য ব্যহত হবে আর রোবটিক সেন্স থেকে জিন এ ইভোল্যুশনারী গেম থিয়োরি সম্পর্কে ঠিকই সতর্ক, সে মিলিয়ন মিলিয়ন বছরের বিবর্তনীয় পথ পরিক্রমায় ঠিকই এ প্যারাডক্সিক্যাল সিচুয়েশনটির সাথে নিজেকে সমন্বয় বা অভিযোজন করে নিয়েছে যার কারণে জিনের উদ্দেশ্য যদিও স্বার্থপরভাবে নিজের অনুলিপি তৈরি করা কিন্তু সে তা না করে নৈতিক ও মানবিক আচরণ করতে আমাদের আবেগ ও অনুভূতির বিবর্তন ঘটায়, মস্তিষ্কের নিউরাল ম্যাকানিজম তৈরির পেছনে এ প্যারাডক্সই দায়ী আর এ জন্যই আমাদের মনের মধ্যে অবিরাম দ্বান্দ্বিকতা দেখা যায়, আমরা নিজের সাথে নিজেই দ্বান্দ্বিক পদ্ধতিতে সেলফ কনভারসেশনে নিয়োজিত হই, আমাদের মস্তিষ্কের ভেতর লজিক কাজ করে, আমরা অনুভব করতে পারি আমাদের বিবেক ও প্রজ্ঞাকে। আমাদের মস্তিষ্কের লেফট হেমিস্ফিয়ার ও রাইট হেমিস্ফিয়ারের ভেতর যে দ্বন্দ্ব দেখা যায় সেই দ্বন্ধের পেছনে মিলিয়ন মিলিয়ন বছরের এই আদিম জেনেটিক্যাল টুইস্টই সম্ভবত কাজ করছে!
তার মানে দেখতেই পাচ্ছেন, জিন তার মূলনীতির স্ববিরোধীতা করেই নিজের নীতিতে অটুট থাকছে, এটা করতে গিয়ে সে শুধু একটা মস্তিষ্ককে জটিল থেকে জটিলতর করে তোলে, মস্তিষ্ককে এত এত বেশি কমপ্লেক্স করে তোলে যে মস্তিষ্ক নিজেই ভুলে যায় সে সত্যিকার অর্থে কোনো সেলফিশ নীতি দ্বারা চালিত, সে নিজের মধ্যে এত বেশি মহানুভবতা ও উদারতা অনুভব করে যে যখন তার কাছে- সেলফিশ জিন তত্ত্ব উপস্থাপন করা হয় তখন সে বিচলিত ও ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে উঠে, তার নৈতিকবোধ সচেতন হয়ে উঠে, সে এটাকে মেনে নিতে পারেনা! ডকিন্স তার The Extended Phenotype গ্রন্থটিতে বলেন, জেনেটিক্যাল ডিটারমিনজমকে আমরা যতটা সিরিয়াসলি দেখি, আসলে এটাকে ততটা সিরিয়াসলি দেখা উচিত নয়, আপনি যদি বিশ্বাস করেন, আপনার জীবনের সকল পরিণতি আপনার অতীতের কার্য-কারণ দ্বারা নির্ধারিত তবে আপনি খুব বেশি বিস্মিত হননা, কিন্তু যখনই আপনাকে বলা হবে, পরকীয়ার পেছনে এক বা একাধিক জিন জড়িত তখন আপনার মেনে নিতে কষ্ট হয়, কারণ অন্যান্য এনভায়রণমেন্টাল কারণগুলোর মধ্যে জিনও অত্যন্ত তুচ্ছ একটা কার্য-কারণ পদ্ধতি হওয়ার পরও আপনি এটাকে বিশেষ মর্জাদা প্রদান করছেন, আপনি ভাবছেন, এটাকে রিভার্স করা যায়না! এটা ঠিক যে আমরা আমাদের জীবনের অনেক ঘটনাকেই রিভার্স করতে পারিনা, আমরা আমাদের জীবনের অনেক পরিণতির পেছনের কারণগুলোকে তুলে নিতে পারিনা কিন্তু তাই জন্য তো আমরা এতটা আতঙ্কিত হইনা যতটা না আতঙ্কিত হচ্ছি যখন শুনছি একটি নির্দিষ্ট জিন এডাল্ট্রির কারণ! আসলে ঘটনা-A ঠিক যেমনিভাবে ঘটনা-B এর কারণ হতে পারে, ঠিক তেমনি জিনও আমাদের বৈশিষ্ট্য ও আচরণকে পূর্বনির্ধারিত করে দিতে পারে। কিন্তু এটা ভাবার কারণ নেই যে আপনি এটাকে রিভার্স করতে পারবেন না ঠিক যেমনি জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রের কার্যকারণগুলোকে রিভার্স করতে না পারলেও আপনার মধ্যে তেমন কোনো অস্বাভাবিকতা দেখা যায় না। আপনাকে এটা বুঝতে হবে যে, জিন হলো একটি বিশাল পরিবেশের অজস্র কার্যকারণের মধ্যে আপনার আচরণ নির্ধারণকারী একটি নির্দিষ্ট কারণ, অন্যান্য কারণগুলো থেকে একে আলাদাভাবে গুরুত্ব দেয়ার মধ্যে হয়তো বিশেষ কিছু নেই! আপনি এটাকে রিভার্স করতে পারেন আবার নাও করতে পারেন! এটা স্বাভাবিক।
মূলত, আমরা এতক্ষণের আলোচনা থেকে একটা বিষয় পরিস্কার হয়ে উঠেছি যে জিন তার মূলনীতির সাথে সাংঘর্ষিক আচরণ করে ঠিকই কিন্তু এটি তাকে তার নীতি থেকে বিচ্যুত করেনা, আপনার কাছে মনে হতে পারে সে তার মূলনীতি থেকে বিচ্যুত হয়েছে কিন্ত এটা আপনার মস্তিষ্কের একটি বিভ্রম!
আপনার নিকট মনে হতে পারে ফিফথ ডায়মেনশন ফোরথ স্পেসিয়াল ডায়মেনশন থেকে আলাদা , কিন্তু এটা আপনার ফিফথ ডায়মেনশন দেখার অক্ষমতা! মূলত , জিনও ফিফথ ডায়মেনশাল স্পেসের মতো, ফোরথ ডায়মেনশন থেকে দেখলে মনে হয় এটি সেলফিশ আবার উচ্চতর মাত্রা থেকে দেখলে মনে হয় সে আনসেলফিশ কিন্তু দুটো মাত্রা একসাথেই বাস করে!
আমরা প্রায়শ বলে থাকি, যদি পৃথিবীর সকল মানুষ মুসলিম হতো তবে নিশ্চয়ই আর কোনো ধর্মের অস্তিত্ব থাকতোনা আর এ পদ্ধতির ভেতর দিয়ে পৃথিবীর মধ্যে শান্তি ও সমতা প্রতিষ্ঠিত হতো? এটা আসলেই কি ঠিক? আমি এ মুহূর্তে এ ব্যাপারটাই আপনাদের কাছে পরিস্কার করার চেষ্টা করবো। আসলে এ ব্যাপারটি বুঝতে হলে আপনাকে বুঝতে হবে মোনার্ড স্মিথের ইভোলুশনারি স্ট্যাটেটিক স্ট্রেটেজি সম্পর্কে। যাক, আমি জটিলতা পরিহার করে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো বিষয়টি আপনাদের কাছে পরিচ্ছন্ন করে তোলার জন্য। মনে করুন, একটা জনগোষ্ঠীর ভেতর দুটি কৌশল কাজ করছে। হক এবং ডোভ। এ কৌশল দুটি একটি প্রজাতির কাল্পনিক দুটি ভেরিয়েশনের মধ্যে মধ্যে কাজ করে ( কবুতর) । হকরা সবসময় আগ্রাসী আর অন্যদিকে ডোভরা কিছুটা ভীতস্বন্ত্রস্ত। হকরা যতবারই ডোভদের সম্মুখে পড়ে প্রবল আক্রমণ করে আর ডোভরা কোনোপ্রকার প্রতি-আক্রমণ ছাড়াই পিছু হটে। আর এভাবে ডোভরা প্রতিবার কোনো ক্ষতি ছাড়াই পরাজিত হয় আর হকরা জয় লাভ করে। এখানে জটিল গাণিতিক কিছু ব্যাপার আছে। সে প্রসঙ্গে না হয় অন্য আর কোনোদিন যাবো। তো, এ দুটি কৌশল সে পপুলেশনে মোটামুটিভাবে স্থিতিশীল। কিন্তু হকরা আক্রমণাত্মক আর তাই তারা প্রতিনিয়ত জয়লাভ করে। এভাবে তারা জনগোষ্ঠীর মধ্যে খুব দ্রুত ছড়িয়ে যায় এবং জনগোষ্ঠীতে তারা সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। এবার দেখুন, সম্পূর্ণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে অধিকাংশ সদস্যই এখন আক্রমণাত্মক। হকরা যতবারই সেই জনগোষ্ঠীর কারো মুখোমুখি হয়, কোশলটি যদি ডোভ হয় তবে সে দ্রুত পালিয়ে যায়, আর যদি হক হয়ে থাকে তবে তাদের মধ্যে মারাত্মকভাবে যুদ্ধ হয়। একজন জেতে এবং অন্যজন পরাজিত হয় কিন্তু যে ব্যক্তি জয়লাভ করে সে মারাত্মক রকমের শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর অন্যদিকে ডোভরা যেহেতু প্রথম দিক থেকেই ভদ্র কৌশল অবলম্বন করে, তারা মুহূর্তেই পালিয়ে যায়। এ পরাজয়ের জন্য যদিও তাদের নাম্বার কাটা হয় কিন্তু এর ফলে তাদের গায়ে একটি আছড়ও লাগেনা! আর এভাবে শুধু পালিয়ে যাওয়ার কৌশল ব্যবহার করেই তারা জনগোষ্ঠীতে আবার সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে শুরু করে আর অন্যদিকে হকরা বিভিন্ন যুদ্ধে আহত ও নিহত হতে হতে নিজেদের সংখ্যাগরিষ্টতা হারায়। তাদের বাচবিচারহীন আগ্রাসন তাদের অজান্তেই তাদের নিশ্চিহ্ন করে দিতে শুরু করে!
আপনি হকদের চিন্তা করুন, আল-কা-য়-দা বা জঙ্গি হিসেবে। যদি আল-কা-য়-দা সমস্ত পৃথিবীকে দখল করে নেয়, শুধুমাত্র তাদের অন্ধ আক্রমণাত্মক কৌশল ব্যবহার করে তবে কি তারা টিকে থাকতে পারবে? হকদের জনগোষ্ঠীর মতো তাদের আক্রমণাত্মক মানসিকতাই কি এক সময় তাদের পতনের কারণ হবেনা? আসলে বিবর্তনীয়ভাবে কোনো নির্দিষ্ট কৌশল সবসময়, সব পরিস্থিতিতে স্থিতিশীল হয়না, এটা শুধুমাত্র একটা নির্দিষ্ট রেঞ্জ পর্যন্ত স্থিতিশীল থাকে আর এরপর কোনো একটি কৌশল রিসেসিভ হয়ে যায় আর অন্য আর একটি কৌশল জনগোষ্ঠীর মধ্যে পসেসিভ হয়ে উঠে। এবার মনে করুন, আলকায়দা, শুধু আক্রমণাত্মক আচরণ দিয়ে নয়, তারা নৈতিকতা ও বিবেকের শক্তিকে ব্যবহার করে সমস্ত পৃথিবীতে নিজেকে ছড়িয়ে দিলো, এ কৌশলটি কি বিবর্তনীয়ভাবে কখনো স্থিতিশীল হতে পারে বা ESS এর মর্জাদা অর্জন করতে পারে? ব্যাপারটা বোঝানোর জন্য আমি আপনাদের কাছে দুটো ব্যাখ্যা উপস্থাপন করবো।
বেবি সিটিং চক্র সম্পর্কে আপনারা এর আগে কোনোকিছু শুনেছেন? গীলমেটদের কথাই ভাবুন। তারা সমতল পাথরে ডিম পাড়ে, আর ডিমগুলো এদিকওদিক গড়াগড়ি করে। এক বাসার ডিম আর এক বাসায় চলে যায়। গিলমেটদের কেউই জানেনা এ ডিমগুলোর কোনটি কার ডিম কারণ ডিম সনাক্ত করার সে কৌশলটি তাদের মস্তিষ্কে বিবর্তিত হয়নি বা তাদের ব্রেন এ বিষয়টির সাথে এখনো অভিযোজিত নয়। জিন- এর উদ্দেশ্য জিনের সংখ্যাবৃদ্ধি, আপনি যদি আপনার ডিমে তা না দিয়ে অন্য কারো ডিমে তা দেন তবে সেটা আপনার জিনের জন্য ক্ষতিকর, আর এ জন্য আপনার জন্য অবশ্যই এটা উচিত হবেনা, না জেনে, না বুঝে অন্যের ডিমে তা দেয়া! কিন্তু এভাবে প্রতিটি গিলমেটই যদি এমন একটা অনিশ্চয়তার কবলে পড়ে কেউই কারো ডিমে তা না দেয় তবে একটা ডিমও ফোটানো সম্ভব না। এ পরিস্থিতিতে জিনের আসলে কী করা উচিত? সে কি তা দেবে নাকি দেবেনা? যদি সে তা দেয় তবে অন্যের ডিম ফোটার সম্ভাবনা আছে আর যদি তা না দেয় তবে একটা ডিমও ফোটার সম্ভাবনা নেই! একেবারে কোন ডিমই না ফোটানো আর অনুমানের উপর ভর করে তা দেয়ার ফলে কারো না কারো ডিম ফোটানো, এ দুটোর মধ্যে ঠিক কোনটি সেলফিশ জিনের জন্য সবচেয়ে বেশি সুবিধাজনক? আপনি যদি আসলেই সেলফিশ হয়ে থাকেন এবং পাশাপাশি যথেষ্ট বুদ্ধিমান তবে আপনি এক্ষেত্রে পরার্থপরতারই পরিচয় দেবেন! গিলমেটদের ডিমগুলো এদিকওদিক ছোটাছুটি করে বিশৃঙ্খল হয়ে যায়, আর তাই কেউ কারো ডিম চেনেনা, সবাই সবার ডিমে তা দেয় আর এভাবেই তাদের মধ্যে হিউম্যানিটির মতো একটা কিছু জন্ম হয় বা মরাল সেন্স দেখা দেয়!
ভীষণ অদ্ভুত না ব্যাপারটা! যাইহোক! এবার সেই জনগোষ্ঠীর ভেতর কিছু গিলমেটের বিবর্তন ঘটে যারা এই মানবতাবাদী কৌশলটিকে নিজের স্বার্থপর উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে। তারা শুধু ডিমই পাড়ে কিন্তু সেটাতে তা দেয়না, আর নিস্বাঃর্থপর মস্তিষ্কের গিলমেটরা তাদের ব্রেনের সীমাবদ্ধতাজনিত কারণে এ ব্যাপারটি বুঝে উঠতে পারেনা। একদল একের পর এক ডিম পাড়ে আর অন্যদল নিরবিচ্ছিন্নভাবে সেই ডিমের মধ্যে তা দিয়ে যায়। এবার মনে, করুন, সেই নিস্বাঃর্থপর গিলমেটরা মূলত আল- কায়দা। এরা নিঃস্বার্থপর হতে হতে এতটাই নিস্বাঃর্থপর হয়ে গেছে যে, এরা এখন জানেইনা তাদের মধ্যেই আর একটি দল সেলফিশ জিন দ্বারা তাড়িত হয়ে তাদের মস্তিষ্ককে প্রতারিত করছে আর এভাবে গ্রুপ-২ বিবর্তিত হয়েছে! একটা জিনিস, খেয়াল করুন, সমস্ত পৃথিবীতে শুধুমাত্র নিঃস্বার্থপর আল-কায়দায়ই ছিল কিন্তু তাদের সে কৌশলটি বিবর্তনীয়ভাবে স্থিতিশীল হয়নি, তাদের সেই নিঃস্বার্থপর কৌশলই অন্য আর এক স্বার্থপর কৌশলের বিবর্তনে সহযোগীতা করেছিল আর এ পদ্ধতিতে আলকায়দার মধ্যে গ্রুপ-২ বিবর্তিত হলো। একদল শুধু ডিম পাড়ে আর অন্যদল শুধু ডিমে তা দেয়! কিন্তু তারা কেউই এখনো এ ব্যাপারটি বুঝতে পারেনি, তারা এখনো মনে করছে, সমস্ত পৃথিবীতে শুধু একটাই দল, শুধুই মুসলিম, আর কেউ নেই, কেউ না, তারা একা।
এরপর শুরু হলো, বেবি সিটিং চক্রের তৃতীয় ধাপ, স্বার্থপর গিলমেটরা যেহেতু শুধু ডিমই পাড়ে, তা দেয়ার দায়িত্ব তাদের কাউকেই নিতে হয়না, তারা এ প্রক্রিয়ায় বিপুল পরিমাণ ডিম পাড়তে শুরু করলো। আর অন্যদিকে মানবতাবাদী( গিলমেটবাদী) গিলমেটরা অন্ধের মতো শুধু ডিমে তা দিতেই থাকলো, সারাজীবন ধরে তাদের শুধু একটাই কাজ ডিমে তা দেয়া! আহা! কি বোকাই না ছিলো তারা! এমন বোকার পক্ষে কী এমন বিপদসংকুল পরিবেশে টিকে থাকা আদৌ সম্ভব?
আপনি যদি বুদ্ধিমান হয়ে থাকেন, তবে আপনি বুঝতে পারবেন, এ বোকা গিলমেটরা তাদের লাখ লাখ বছরের বোকামির কারণে যদিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়, গণহারে তাদের বিলুপ্তি ঘটে কিন্তু আল্টিমেটলি তাদের বোকামিই তাদের জন্য সম্ভাবনার একটি দুয়ার খুলে দেয় যা তারা জানতো না! কিন্তু কিভাবে? আসলে জনগোষ্ঠীতে একটা সময় স্বার্থপর গিলমেটে পরিপূর্ণ হয়ে যায়! বোকা গিলমেটবাদে( হিউম্যানিটি) বিশ্বাসীরা আদর,যত্ন,মমতা ও ভালোবাসা দিয়ে যে ডিমটিই ফোটায় সে ডিমটিই কোনো না কোনো স্বার্থপরের ডিম, আর স্বার্থপরের ডিমকে গভীর ভালোবাসা দিয়ে ফোটানোর পরও সে স্বার্থপর জিনই বহন করে। এ পদ্ধতিতে সম্পূর্ণ জনগোষ্ঠীই এখন সেলফিশে পরিণত হয়। এভাবে গ্রুপ-৩ বিবর্তিত হয়। কিন্ত এখানে আর একটি টুইস্ট দেখা যায়। কেউই এখন আর কারো ডিমে তা দেয়না। আর এ জন্য সেলফিশ গিমমেটরা আকস্মিক গণহারে বিলুপ্ত হতে শুরু করে। আর নিঃস্বার্থপর গিলমেটদের যে অল্পকিছু টিকে ছিল তারা দুর্দান্ত গতিতে বংশবৃদ্ধি করতে শুরু করে। তবে এখন তারা আর আগের মতো অন্ধ নয়, তারা এখন নিজের ডিম ও অন্যের ডিমের মধ্যে পার্থক্যসৃষ্টি করতে পারে এমন নিউরাল সার্কিট অর্জন করেছে, তাদের মস্তিষ্কের কনশাসনেস পূর্বের চেয়ে উন্নত হয়ে উঠেছে আর এ জন্য তারা এখন বুঝতে পারে কোনটা তাদের নিজেদের ডিম, যে জন্য তারা নির্বাচন করে করে নিজেদের ডিমে তা দেয় আর এ পদ্ধতিতে বেবি সিটিং চক্র ভেঙে যায়! আর গ্রুপ- ৪- এর বিবর্তন ঘটে! সম্পূর্ণ অজান্তে ও অজ্ঞাতে সমস্ত পৃথিবী জুড়ে বিস্তৃত এই আল কায়দা মুসলিম গোষ্ঠী চারটি দলে বিভক্ত হয়ে যায় এবং নিজেদের মধ্যে সংঘাত করতে শুরু করে, প্রতিটি গ্রুপই বলতে শুরু করে, আমরাই শ্রেষ্ঠ, আমরাই উন্নত আর প্রত্যেকে নিজেদের জিনকে ভবিষ্যত প্রজন্মে সম্প্রসারিত করতে শুরু করে! তার মানে দেখতেই পাচ্ছেন, প্রকৃতিতে কোনো নির্দিষ্ট কৌশলই আসলে স্থিতিশীল হতে পারেনা,
কোনো ধর্মই সার্বজনীন ধর্ম হতে পারেনা, প্রকৃতিতে গেম থিওরি কাজ করছে। সেলফিশ জিন তত্ত্বের আলোকে, আমরা এমন অজস্র উদাহরণ প্রদান করতে পারি, শত শত প্রাণীর দৃষ্টান্ত প্রদান করতে পারি, এটা প্রমাণ করার জন্য যে প্রকৃতিতে কোনো নির্দিষ্ট ধর্ম কখনোই টিকতে পারেনা, সেখানে অনিবার্যভাবেই বিভিন্ন দল ও উপদল তৈরি হবে! আর সেই দল উপদলগুলো কৌশলগতভাবে একে অন্যের চেয়ে একটা সময় এতটাই দূরে সরে যাবে যে তাদের মধ্যে আর রিলিজিয়াস সিমেট্রি কাজ করবেনা বা তারা আলাদা আলাদা ধর্ম ও গোষ্ঠীতে প্রকাশিত হবে। আপনি আজও ধর্মগুলোর মধ্যে বিভিন্ন দল ও উপদল খুঁজে পাবেন, কিন্তু ভিন্নতা সত্ত্বেও ধর্মের মূল বিষয়বস্তুতে একপ্রকার সার্বজনীনতা পাওয়া যায় যেখান থেকে প্রমাণ হয় যে আমরা প্রত্যেকে আসলে একটি সাধারণ পূর্বসূরি থেকেই এসেছি, আর বিবর্তনের বিভিন্ন পর্যায়ে আমরা ধাপে ধাপে সাংস্কৃতিকভাবে একে অপরের চেয়ে পৃথক হয়ে পড়েছি, কিন্তু মানব সংস্কৃতির অভ্যন্তরে এখনো আপনি একটি সাধারণত্ব খুঁজে পাবেন ঠিক যেমনি সম্পূর্ণ মানব প্রজাতির প্রত্যেকটি সদস্যের জিনের মধ্যে ভেরিয়েশন থাকলেও তারা আসলে একই সাধারণ পূর্বসূরীর জিনই একে অন্যের সাথে শেয়ার করে, বা তারা জিনগতভাবেই মানব প্রজাতি , মানবতাবাদী, তাদের জিন মানবতার বাহিরে নয়, এ জন্য আপনি যদি আজ কাউকে বলেন, আমি তিমি মাছের স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তিত, অনেকেই অবাক হবে কারণ জিনগতভাবে আপনি মানুষ তিমি বা ডলফিন না, আর তাই আপনার মানবতা মানব প্রজাতির এনসেস্ট্রাল জিনের সাধারণত্বকেই ডিফাইন করে সমস্ত প্রাণি জগতকে নয় , যদি মানবতা আর গরুবতা এক জিনিস হতো তবে মানুষ লক্ষ কোটি গরুকে মানবতার কল্যাণে জবাই করতোনা। তিমির বাচ্ছার মৃত্যু হলে মানবতার চোখে পানি আসেনা কিন্তু মানব চোরের ডেথ সেন্টেন্স ঘোষিত হলেও সে , আহা হা, উহু হু করে । এর কারণ কী মানবতা নিজেই সেপিয়েন্স নামক প্রজাতিটির এনসেস্ট্রাল জিনকে রিপ্রেজেন্ট করচছেনা ? রিচার্ড ডকিন্স এজন্য এলট্রুইজম শব্দটি ব্যবহারে সাবধান ছিলেন। মূলত প্রতিটি স্পিসিজের সহানুভূতি তার নিজের পপুলেশনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ , তাই তিনি এটাকে বরং স্পিসিজম বলতে চেয়েছেন। আমরা মানব সভ্যতা মানবিক নই, আমরা মূলত স্পিসিজমে আক্রান্ত আর এটা জিনগত, অসীম পরোপকারীতার জন্য যে পরিমাণ সময়, শক্তি ও ত্যাগ প্রয়োজন তা সেলফিশ জিনের পক্ষে যোগান দেয়া সম্ভব নয়, আর তার মূলনীতির সাথে সকল প্রাণির প্রতি প্রেম এ ব্যাপারটি কন্ট্রাডিক্টরি।
আমাদের নীতি, নৈতিকতা, ভাষা, জ্ঞান, অভিজ্ঞতা অথবা ধর্ম সবকিছুর মধ্যেই আমরা একপ্রকার এন্ট্যাংগেলমেন্ট দেখতে পাই! এর পেছনে অতি-মানবিক কোনো বিষয় জড়িত নয়! একমাত্র বিবর্তনের মাধ্যমেই আমরা সার্বজনীন প্রজ্ঞা ও বিবেকের রহস্য সমাধান করতে পারি!
মনে করুন, প্রকৃতিতে কোনো একটি পাখি বিবর্তিত হয়েছে যে শিশ দিয়া তার সঙ্গীকে শিকারী প্রাণী থেকে সতর্ক করে দেয় আর সিগনাল পাওয়ার সাথেসাথে দলের অন্যান্য সঙ্গীরা সেখান থেকে পালিয়ে যায়। এতে করে সতর্ককারী সে প্রাণীটির নিজের জীবনই সংকটের মধ্যে পতিত হয়। কিন্তু তবুও এ ঝুঁকি সে গ্রহণ করে কারণ দলে এমন অনেকেই আছে যাদের শরীরে তার জিন উপস্থিত আর অবশ্যই একজনের শরীরের জিনের চেয়ে কয়েক জনের শরীরের জিন সংখ্যায় অনেক বেশি। এ পদ্ধতিতে যদিও তার নিজের প্রাণ সংশয় ঘটে জিন কিন্তু ঠিকই ভবিষ্যত প্রজন্মে চলে যায়। আবার কিছু পাখি বিবর্তিত হয় যারা বিপরীত সুযোগটাই গ্রহণ করে। শত্রু উপস্থিত না থাকা সত্ত্বেও তারা শিশ দেয় বা মিথ্যা বলে। এতে করে দলের অন্যান্যরা খাবার রেখে দূরে পালিয়ে যায়। আর সেই খাবার সিম্পল একটা মিথ্যার মাধ্যমে প্রতারক পাখিটি নিজের ভাগে নিয়ে আসে! তারমানে এখানে দুটি গ্রুপ তৈরি হয়ে গেলো। গ্রুপ-১ যারা আপাত পরার্থপর যদিও মূল উদ্দেশ্যে জিনের সংখ্যাবৃদ্ধি, গ্রুপ-২ সেলফিশ যদিও মূল উদ্দেশ্য জিনের সংখ্যাবৃদ্ধি! এবার এদের মধ্যে ৩- নং গ্রুপ বা আর একটি প্রকরণ বিবর্তিত হবে যারা সবাই মিথ্যাবাদী! দেখা যাবে, সবাই সবাইকে মিথ্যা শিশ দিয়ে ভয় দেখায় আর নিজের ভাগে অধিক পরিমাণ খাবার আদায় কর নেয় আর এ পদ্ধতিতে তারা অসুবিধার মধ্যে পতিত হয়! কেউই আসলে এক্ষেত্রে ভালো সুবিধা করতে পারেনা! আর এ জন্য ৪ -নং গ্রুপ বিবর্তিত হবে যারা গ্রুপের মিথ্যাবাদী সদস্যসের মিথ্যা শনাক্ত করতে পারে বা যাদের ব্রেন ক্যাপাসিটি অনেক উন্নত! গ্রুপ-৪ যখন মিথ্যা সনাক্ত করতে শুরু করবে তখন তারা আর প্রতারিত হবেনা, তারা অন্যদের থেকে টিকে থাকার ক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা প্রাপ্ত হবে আর এ পদ্ধতিতে সম্পূর্ণ জনগোষ্ঠীতে মিথ্যা শনাক্ত করতে সক্ষম এমন পাখিরা বিবর্তিত হবে যার ফলে কেউই কারো সাথে আর মিথ্যা বলে সুবিধা করতে পারবেনা! আর ঠিক এ সময় হয়তো নতুন এমন একটি কৌশল বিবর্তিত হবে যা মিথ্যা শনাক্তকারী পাখিদের বিভ্রান্ত করতে পারে আপাত সত্য বলার মাধ্যমে। এর মানে দেখা যাচ্ছে, প্রকৃতিতে সত্য বা মিথ্যা কোনোটাই আসলে স্থিতিশীল কৌশল নয় যেটা আমাদের মস্তিষ্কের নিউরাল নেটওয়ার্ক- এর ভেতর অনেক বেশি জটিলতা তৈরি করে আর সম্ভবত এভাবেই আমাদের মস্তিষ্কের মধ্যে “বিচারবোধ বা জাজমেন্ট” বিবর্তিত হয়! এখন যদি প্রশ্ন করা হয়, বিবর্তনীয় দৃষ্টিতে কোনো সার্বজনীন আদর্শ কি স্থিতিশীল! আসলে এ ধরণের প্রশ্ন শুরুতেই অবৈধ কারণ প্রকৃতিতে আমরা এ যাবত এমন কোনো স্থিতিশীল কৌশল পর্যবেক্ষণ করিনি যা কোনো প্রজাতিকে নিরবিচ্ছিন্নভাবে টিকে থাকার উপযোগিতা প্রদান করে!
তথ্যসুত্রঃ
১) সেলফিশ জিন , রিচার্ড ডকিন্স