আইনস্টাইন তখন, ইচ্ছাকৃতভাবে একটি এন্টিগ্রেভিটি নির্বাচন করেন, যা যথাযথভাবে গ্রেভিটির আকর্ষণকে বাতিল করে দিতে পারে, যা মহাবিশ্বকে করে তোলে স্থিতিশীল। অন্যকথায়, মহাবিশ্ব সমান্তরালভাবে স্থির, গ্রেভেটির প্রভাবে যে আভ্যন্তরীণ সংকোচন( Inner Contraction) পরিস্থিতি তৈরি হয় একইসময় সেটিকে ডার্ক এনার্জির বহিমূর্খী বল (Outward Force of Dark Energy) ক্যান্সেল করে দেয়! (১৭বছর পর্যন্ত এ এন্টিগ্রেভিটি ফোর্সকে এতিম মনে করা হতো কয়েক বছর পূর্বে আবিষ্কার হওয়ার সময় ব্যতীত)। ১৯১৭ সালে, ডাচ ফিজিসিস্ট, উইলিয়াম ডি সিটার আর একটি সলিউশন বের করেন, তার মতে মহাবিশ্ব অসীম কিন্তু সম্পূর্ণভাবে ম্যাটার শূন্য, প্রকৃতপক্ষে এটি সেই শক্তি নিয়ে গঠিত যেটি শূন্যস্থান ধারণ করে,যাকে বলা হয় কসমোলজিক্যাল কনস্ট্যান্ট। এই বিশুদ্ধ এন্টিগ্রেভেটি ফোর্স পর্যাপ্ত ছিলো, মহাবিশ্বকে দ্রুত ও জ্যামিতিকভাবে সম্প্রসারণ করার ক্ষেত্রে। কোনপ্রকার ম্যাটার ছাড়াই, এ ডার্ক এনার্জি মহাসম্প্রসারণশীল জগত তৈরি করতে পারে! পদার্থবিজ্ঞানীরা এবার একটি উভয় সংকটে পড়ে যান, আইনস্টাইনের মহাবিশ্বে ম্যাটার ছিলো কিন্তু কোনো গতি ছিলো না কিন্তু ডি -সিটারের মহাবিশ্বে ম্যাটার নেই কিন্তু গতি আছে! আইনস্টাইনের মহাবিশ্বে কসমোলজিক্যাল কনস্ট্যান্ট গ্রেভেটির আকর্ষণকে অপরিহার্যভাবে নিউট্রালাইজ করে এবং একটি সুস্থির মহাবিশ্ব তৈরি করে। কিন্তু ডি- সিটারের মহাবিশ্বে, কসমোলিক্যাল কনস্ট্যান্ট একা নিজেই মহাসম্প্রসারিত মহাবিশ্ব তৈরি করার জন্যে যথেষ্ট! অবশেষে ১৯১৯ সালে, যখন ইউরোপ চেষ্টা করছিলো ধ্বংসযজ্ঞ ও হত্যাকান্ডে ভেতর দিয়ে তার নিজস্ব পথ তৈরি করতে, এস্ট্রোনোমারদের একটি দলকে বিশ্বের চারপাশে পাঠানো হয় আইনস্টাইনের নতুন থিওরি পরীক্ষা করার জন্য। আইনস্টাইম এর পূর্বেই প্রস্তাব করেছিলেন যে, সূর্যের স্পেস-টাইম বক্রতা যথেষ্ট নক্ষত্রকে বক্র করে দিতে যা শূন্যস্থানকে অতিবাহিত করে। নক্ষত্রের আলোরও উচিত সূর্যের চারপাশে বক্র হয়ে যাওয়া। কিন্তু যেহেতু সূর্যের আলোর উজ্জ্বলতা নক্ষত্রদের মুখোশ পরিয়ে রাখে বিজ্ঞানীরা অপেক্ষা করতে লাগলেন সূর্যগ্রহণের জন্যে এই পরীক্ষাটি পরিচালনা করার জন্য। ব্রিটিশ এস্ট্রোফিজিক্সদের একটি দল, গুয়েনার গাল্ফে প্রিন্সিপিতে একটি আইল্যান্ডে যান, ওয়েস্ট আফ্রিকার একটি উপকূল, সূর্যের চারপাশে বক্র হয়ে যাওয়া নক্ষত্রের আলোকে রেকর্ড করার জন্য। আরো একটি দল, এন্ড্রু ক্রোমেলিয়ান দ্বারা পরিচালিত, একটি জাহাজ সজ্জিত করেন, উত্তর ব্রাজিলের সোবরালের উদ্দেশ্যে। তারা যে ডাটা সংগ্রহ করে তা নির্দেশ করে যে, নক্ষত্রের আলোর গড় চ্ছুতি 1.79 arc সেকেন্ড যা আইনস্টাইনের 1.74 arc সেকেন্ডের প্রেডিকশনকে নিশ্চিত করে। অন্যকথায়, আলো সূর্যের কাছাকাছি বেঁকে যায়। এডিংটন পরবর্তীতে দাবি করেন যে, আইনস্টাইনের থিওরির সত্যায়ন ছিলো তার জীবনের শ্রেষ্ঠতম মুহূর্ত! নভেম্বর ৬, ১৯১৯ সালে, রয়েল সোসাইটির একটি জয়েন্ট মিটিং এবং এস্ট্রোনোমিকাল সোসাইটি অব লন্ডন, নোবেল বিজয়ী ও রয়েল সোসাইটি প্রেসিডেন্ট J.J গম্ভীরভাবে বলেন, One of the greatest achievements in the history of Human Thought। এটি কোন প্রত্যন্ত এলাকা আবিষ্কার নয়, এটি হলো বৈজ্ঞানিক ধারণার একটি মহাদেশ জয়। এটি ছিলো একটি মহান আবিষ্কার যা গ্রেভিটেশনের সাথে সম্পৃক্ত যখন থেকে নিউটন এটি ঘোষণা করেছিলেন! ( কিংবদন্তি অনুসারে, এডিংটনকে পরে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো, এমন একটি গুজব শোনা যায় যে সমগ্র বিশ্বের মাত্র তিনজন ব্যক্তি আইনস্টাইনের থিওরি বুঝতে পেরেছে, আপনি হয়তো, তাদের একজন।” এডিংটন নিস্তব্দ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন, তাই রিপোর্টার বললেন, বিনয়ী হওয়ার প্রয়োজন নেই এডিংটন।” এডিংটন কাঁধ ঝাকালেন এবং বললেন, পুরোপুরি না,আমি ভাবছি তৃতীয় ব্যক্তিটি সম্ভবত কে.”)
পরেরদিন লন্ডন টাইমস একটি হেডলাইন ছড়িয়ে দিলেন, Revolution in Science – New Theory of the Universe – Newton’s Ideas overthrown.”। এ হেডলাইন চিহ্নিত করেছিলো সে সময়টিকে যখন আইনস্টাইন বিশ্ববিখ্যাত ব্যক্তিত্বে পরিণত হন, a messenger from Stars! এই এনাউন্সমেন্ট এতটাই ক্ষমতাবান ছিলো এবং নিউটন থেকে আইনস্টাইনে প্রস্থান এতটাই ভিত্তিগত যে, এটি পৃথক হিসেবে একটি প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে যে সকল পদার্থবিজ্ঞানী ও জ্যোতির্বিজ্ঞানী এর নিন্দা করেছিলেন! কলোম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে, চার্লস লেন পুওর, স্বর্গীয় ম্যাকানিক্সের প্রফেসর, আপেক্ষিকতার সমালোচনা করে বলেন, I feel as if i had been wandering Alice in Wonderland and had tea with the Mad Hatter! রিলেটিভিটি আমাদের কমনসেন্সকে ভায়োলেট করে তার মানে এই নয় যে রিলেটিভিটি ভুল। কিন্তু আমাদের কমনসেন্স রিয়েলিটিকে রিপ্রেজেন্ট করতে পারে না। আমরা মহাবিশ্বের অদ্ভুত কিছু বল। আমরা রিয়েল স্টেটের অস্বাভাবিক একটি অংশের বাসিন্দা যেখানে টেম্পারেচার, ঘণত্ব ও বেগ বেশ হালকা। যাই হোক, প্রকৃত মহাবিশ্বের (Real Universe) টেম্পারেচার হতে পারে নক্ষত্রের কেন্দ্রবিন্দুর মতো যন্ত্রণাদায়ক । অথবা আউটার স্পেসের মতো হিম শীতল। যেখানে সাব-এটমিক পার্টিকেলগুলো স্পেসের ভেতর দিয়ে Zipping করে। আলোর গতির কাছাকাছি ভ্রমণ করে! অন্যকথায়, আমাদের কমনসেন্স বিবর্তিত (Evolve) হয়েছে মহাবিশ্বের উচ্চমাত্রিকভাবে অস্বাভাবিক ও অপ্রচলিত একটি অংশে, পৃথিবীতে; এটি বিষ্ময়কর নয় যে আমাদের কমনসেন্স মহাবিশ্বকে বুঝতে ব্যর্থ হবে! সমস্যা রিলেটিভিটিতে নয়, এটা কল্পনা করা যে আমাদের কমন সেন্স বাস্তবতার প্রতিনিধিত্ব করে!
মহাবিশ্বের ভবিষ্যৎঃ
The Future of the Universe
যদিও আইনস্টাইনের থিওরি সফল ছিলো এস্ট্রোনোমিক্যাল পেনোমেনন যেমন- সূর্যের চারপাশে নক্ষত্রের আলো বক্র হয়ে যাওয়ার ঘটনা ব্যাখ্যা করতে পারে এবং বুধগ্রহের কক্ষপথের সামান্য বিচ্ছুতি কিন্তু এর মহাবিশ্বের ভবিষ্যত সংক্রান্ত প্রেডিকশনগুলো তখনও ছিলো বিভ্রান্তিকর! এ ব্যাপারটি রাশিয়ান ফিজিসিস্ট আলেক্সান্ডার ফ্রাইডম্যান গভীরভাবে পরিস্কার করেন। যিনি আইনস্টাইনের ইকুয়েশনের সবচেয়ে জেনারেল ও রিয়েলিস্টিক ইকুয়েশন পেয়েছিলেন। এমনকি বর্তমানেও, সেগুলো জেনারেল রিলেটিভিটির প্রতিটি গ্রেজুয়েট কোর্সে শেখানো হয়। সাধারণত, আইনস্টাইনের থিওরি, অসাধারণ কঠিন কিছু ইকুয়েশন ধারণ করে যেগুলো সমাধান করতে অনেক সময় কম্পিউটারও প্রয়োজন হয়। যাহোক, ফ্রাইডম্যান কল্পনা করেন যে, মহাবিশ্ব ডায়নামিক এবং তারপর দুটি সাধারণ অনুমানে উপনিত হন( যেটাকে কসমোলজিক্যাল প্রিন্সিপাল বলে); যে মহাবিশ্ব আইসোট্রোপিক ( এটিকে সমান মনে হবে কোনো ব্যাপারই না আপনি যে প্রদত্ত বিন্দু থেকে তাকান) এবং মহাবিশ্ব হোমোজিনিয়াস (এটি ইউনিফর্ম, কোন ব্যাপারই না, আপনি মহাবিশ্বের যেখানেই যান)। এই দুটি সরলীকৃত অনুমানের অধীনে আমরা দেখতে পাই যে মহাবিশ্ব কলাপ্স করে।( যদিও ফ্রাইডম্যানের অধিক সাধারণ দুটো কেসের মধ্যে আইনস্টাইন এবং ডি-সিটার সলিউশন বিশেষ)। উল্লেখযোগ্যভাবে তার সমাধান তিনটি প্যারামিটারের উপর ডিপেন্ড করেঃ
1. H, যেটি মহাবিশ্বের সম্প্রসারণকে নির্ধারণ করে ( বর্তমানে আমরা যেটাকে হাবলস কনস্ট্যান্ট বলি, যা জোতির্বিজ্ঞানী হাবলের নামানুসারে নামকরণ করা হয়, যেটি আসলে মহাবিশ্বের সম্প্রসারণকে পরিমাপ করে)
2. Omega, যেটি মহাবিশ্বের average Density পরিমাপ করে।
3. Lamda, যে এনার্জি এম্পটিস্পেসের সাথে জড়িত অথবা ডার্ক এনার্জি।
অনেক সায়েন্টিস্ট তাদের সমস্ত প্রফেশনাল কেরিয়ার অপচয় করেছেন সুস্পষ্টভাবে এ তিনটি সংখ্যার মূল্য নির্ধারণ করার জন্য। এ তিনটি প্যারামিটারের মধ্যে সুক্ষ্ম পারস্পরিক আন্তক্রিয়া মহাবিশ্বের ভবিষ্যত Evolution নির্ধারণ করে। উদাহরণস্বরুপ, যখন গ্রেভিটি আকর্ষণ করে, তখন মহাবিশ্বের ঘণত্ব বা ওমেগা একটি ব্রেকের মতো আচরণ করে, এটি মহাবিশ্বের সম্প্রসারণকে মন্থর করে দেয়। মহাবিস্ফোরণের ফলে যে সম্প্রসারণ তার কিছু প্রভাবকে এটি রিভার্স করে। মনে করুন, আপনি বাতাসে একটি পাথর ছুড়ে মেরেছেন। সাধারণt গ্রেভেটি যথেষ্ঠ শক্তিশালী পাথরের ডিরেকশনকে রিভার্স করার ক্ষেত্রে যা পরে পৃথিবীর দিকে গড়িয়ে পড়ে। যাই হোক, কেউ যদি পাথরটিকে যথেষ্ট জোরে ছুঁড়ে মারে, এটি আর্থ গ্রেভেটিকে এসকেপ করে এবং চিরকালের জন্যে আউটার স্পেসে হারিয়ে যায়। পাথরের মতো, মহাবিশ্ব মূলত সম্প্রসারিত হচ্ছে মহাবিস্ফোরণের কারণে কিন্তু ম্যাটার অথবা ওমেগা, মহাবিশ্বের সম্প্রসারণের উপর ব্রেকের মতো আচরণ করে ঠিক যেমনি পৃথিবীর গ্রেভিটি একটি পাথরের উপর ব্রেকের মতো আচরণ করে! এক মুহূর্তের জন্য, অনুমান করুন, ল্যামডা, সেই শক্তি যা এম্পটিস্পেসের সাথে জড়িত, সমান শূন্য। আর ওমেগা হবে মহাবিশ্বের এমন একটি ঘণত্বের যেটি ক্রিটিক্যাল ডেনসিটি দ্বারা বিভক্ত। ( মহাবিশ্বের ক্রিটিক্যাল ডেনসিটি প্রতি কিউবিক সেঃমি এ আনুমানিক ১০ হাইড্রোজেন এটম। মহাবিশ্ব ঠিক কতটা এম্পটি,তা বোঝার জন্যে, মহাবিশ্বের ক্রিটিক্যাল ডেনসিটি প্রতিনিধিত্ব করে তিনটি বাস্কেট বলের ভলিউমে গড়ে একটি হাইড্রোজেন এটমকে খুঁজে পাওয়া)।
যদি ওমেগা ১ এর চেয়ে কম হয়, বিজ্ঞানীরা মনে করেন, মহাবিশ্বে পর্যাপ্ত পরিমাণ ম্যাটার থাকবেনা যেটি মহাবিস্ফোরণে মূল সম্প্রসারণের গতিকে রিভার্স করতে পারে। ( এটা ঠিক এমন যে আপনি বাতাসে একটি পাথর ছুড়ে মেরেছেন, যদি পৃথিবীর ভর খুব বেশি না হয় তবে, পাথরটি পৃথিবীকে ছেড়ে মহাশূন্যে চলে যাবে)। এর ফলাফলে, মহাবিশ্ব অনন্তকালের জন্য সম্প্রসারিত হতে থাকবে। অবশেষে, মহাবিশ্বে বিগ ফ্রিজে নিমজ্জিত হবে, যতক্ষণ না টেম্পারেচার পরম শূন্যে অবতীর্ণ না হয়! ( এ প্রযুক্তিটি রেফ্রিজারেটর এবং এয়ারকন্ডিশন মেনে চলে। যখন গ্যাস সম্প্রসারিত হয় তখন এটি ঠান্ডা হয়ে যায়। আপনার এয়ার কন্ডিশনাল, উদাহরণস্বরূপ, গ্যাস একটি পাইপের ভেতর আবর্তিত হতে হতে সম্প্রসারিত হয়, যা পাইপ ও আপনার ঘরকে ঠান্ডা রাখে)!
যদি ওমেগা, ১ এর চেয়ে বেশি হয়, তাহলে যথাযথ ম্যাটার থাকবে এবং মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ থেমে যাবে এবং মহাবিশ্ব। যার ফলাফলে, মহাবিশ্ব সংকুচিত হয়ে যাবে। ( ঠিক যেমন, আপনি যদি একটি পাথরকে উপরের দিকে ছুঁড়ে মারেন, এবং পৃথিবীর ভর যদি যথেষ্ট হয় , পাথরটি সর্বোচ্চ শিখরে যাবে, তারপর পৃথিবীতে গড়িয়ে পড়বে)। টেম্পারেচার বৃদ্ধি পেতে থাকবে, নক্ষত্র ও ছায়াপথ একে অপরের উপরে আছড়ে পড়বে। ( ঠিক যেমনি আপনি যদি একটি টায়ারকে ফোলান তবে গ্যাসের কপ্রেসন তাপমাত্রা তৈরি হয়, ঠিক তেমনি পাম্পিং বাতাসের ম্যাকানিকাল ওয়ার্ক তাপ শক্তিতে পরিণত হয়।) মূহুর্তে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং সকল জীবন বিলুপ্ত হয়ে যায়। মহাবিশ্বের বিবর্তনের তিনটি সম্ভাব্য ইতিহাস আছে। যদি ওমেগা এক এর কম হয়, (এবং ল্যামডা ০), মহাবিশ্ব চিরকাল প্রসারিত হবে বিগ ফ্রিজ হওয়া পর্যন্ত। যদি ওমেগা ১ এর চেয়ে বেশি হয়, মহাবিশ্ব পূণরায় মহাসংকোচনে Recollaps করবে। যদি ওমেগা একের সমান হয় মহাবিশ্ব ফ্ল্যাট হবে এবং চিরকাল সম্প্রসারিত হবে। ( The WMAP Satellite data shows that omega plus lambda in equal to 1, meaning that the universe is flat. This is Consistent with the inflationary theory)।