Can't find our books? Click here!
নারীর বহুগামিতার বিস্ময়কর বিজ্ঞান!

নারীর বহুগামিতার বিস্ময়কর বিজ্ঞান!

আমাদের সমাজ মনে করা হয়, নারী বায়োলজিক্যালি একগামী। তাকে এক পুরুষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে হবে। হাহাহ। ব্যাপারটা এমন যেন, পুরুষ নিজেই নারীর জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ার। পুরুষই নারীর মস্তিস্ক ডিজাইন করেছে। কিন্তু বাস্তবে মানুষের বহুগামিতার ইতিহাস আজকের নয়। ৫ মিলিয়ন বছর পূর্ব থেকে মানুষের দেহে বহুগামিতার রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে। মিলিয়ন মিলিয়ন বছর পূর্বে আমাদের পূর্বসূরি আর্ডিওপিথিকাস ও অস্ট্রোলোপিথিকাসরাও বহুগামী ছিল। আপনি শুনলে অবাক হবেন, নারীর বহুগামিতার সংকেত তার সমস্ত শরীরেই লেখা আছে। যেমন অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীর তুলনায় মানব নারীর স্তন বড়। অন্যান্য প্রাণীদের ক্ষেত্রে স্ত্রী প্রজাতির স্তন সাধারণত গর্ভধারণ বা দুগ্ধদানকালীন সময়ে বিকশিত হয়, কিন্তু মানব নারীর স্তন সারাজীবনই উন্নত থাকে কারণ অধিক সংখ্যক সম্পর্ক ও সন্তান তৈরির জন্য তার শরীর অতিরিক্ত পরিমাণ ফ্যাট রিজার্ভ করে রাখে। এখান থেকে প্রমাণ হয় নারী বেশিরভাগ সময়ই যৌনতার জন্য প্রস্তুত যা বহুগামিতার সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে।  বহুগামী সমাজে নারীদের হিপ টু ওয়েস্ট রেশিও তুলনামূলক প্রশস্ত হয়। মানব নারীর 0.7 হিপ এন্ড ওয়েস্ট রেশিও প্রমাণ করে সে একাধিক পুরুষ আকর্ষণের ক্ষমতা রাখে। কারণ এটি উচ্চমাত্রিক ইস্ট্রোজেনের একটি সিগন্যাল। যে সব নারীর ইস্ট্রোজেনের পরিমাণ বেশি, তাদের জেনেটিক ভ্যারিয়েশন তৈরির ক্ষমতাও সর্বাধিক। আবার যে সব নারীর পা আকারে ছোট ও সূক্ষ্ম, তাদের পায়ের তালুতে অধিক সংখ্যক সেন্সরি রিসেপ্টর থাকে, যা সরাসরি সেক্সচুয়াল অর্গ্যানের সাথে কানেক্টেড। যে সব নারীর শরীরে ইস্ট্রোজেন বেশি হয়, তাদের পা আকারে ছোট এবং  সূক্ষ্ম হয়। আর এতে করে তাদের পক্ষে অধিক সংখ্যক পুরুষের সাথে সম্পর্ক করা সহজ হয়ে যায়।  আপনি শুনলে অবাক হবেন, নারীর চুলও বহুগামিতার  সংকেত।

বহুগামী প্রজাতির চুল দীর্ঘ এবং ঘন হয়। মানব নারীর গোলাপি ঠোঁট, উচ্চমাত্রিক ইস্ট্রোজেনের একটি সিগন্যাল, যা বহুগামিতার সাথে সম্পর্কযুক্ত। যে সব নারীর ঠোঁট অনেক বেশি গোলাপি হয়, তাদের সন্তান জন্মদান ও জেনেটিক ভ্যারিয়েশন তৈরির ক্ষমতাও বেশি। নারীর চোখ হাজার হাজার বছর পৃথিবীতে কোটি কোটি কবি, সাহিত্যিক ও বিজ্ঞানী জন্ম দিচ্ছে। কিন্তু আপনি শুনলে ভয় পাবেন,  নারীর চোখেও লেখা আছে মিলিয়ন মিলিয়ন বছর অতীতের বহুগামিতার ইতিহাস। যে সব নারীর চোখের সাদা অংশ বেশি দৃশ্যমান, তারা অধিক সংখ্যক সঙ্গী আকর্ষণ করার ক্ষমতা রাখে। বিবর্তনীয় দৃষ্টিকোণ থেকে, একজন নারী অন্য পুরুষের সাথে গোপনে চোখাচোখি করতে পারলে সে নতুন সঙ্গী আকর্ষণের সুযোগ পায়, এটি উর্বরতার একটি প্রতিক। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার হলো প্রাগৈতিহাসিক সময় থেকেই আলফা পুরুষ নারীর বহুগামিতা কন্ট্রোল করছে। তারা তাকে এক পুরুষের সীমাবদ্ধ রাখতে চায়। তারা নারীকে একগামী করার জন্য ধর্ম ও সামাজিক নিয়ম তৈরি করে। তারা ভার্জিনিটি নামক একটি মিথ তৈরি করে। এতে করে মানব সমাজে একটি মিসকনসেপশন ছড়িয়ে পড়ে, আর তা হলো, একাধিক পুরুষের সাথে সম্পর্ক করলে নারীর ভার্জিনিটি নষ্ট হয়ে যাবে।

২০১২ সালে বিজ্ঞানীরা একদল মৃত নারীর মস্তিষ্ক পরীক্ষা করে এমন কিছু খুঁজে পেলেন যা তাদের স্তব্ধ করে দিয়েছিল! তারা ৬৩% নারীর মস্তিষ্কে পুরুষের ডিএনএ অথবা Y ক্রোমোজম খুঁজে পায়। এটা ছিল তাদের কাছে অপ্রত্যাশিত ও রহস্যময়। গবেষণার ফলাফল তাদের চমকে দেয়! তাদের মনে প্রশ্ন জাগে, নারীর মস্তিষ্কে Y ক্রোমোজম কীভাবে এলো? অবশেষে তারা জানতে পারেন, এ সকল ডিএনএ এসেছিল তাদের পূর্ববর্তী সেক্স পার্টনারের স্পার্ম থেকে। এখান থেকে প্রমাণ হয় পুরুষের মতো নারীরাও বহুগামিতা করে! আপনি এখন বলতে পারেন, হুম! বুঝলাম! কিন্ত নারীর মস্তিষ্ক কেন পুরুষের ডিএনএ জমিয়ে রাখে? এর পেছনের কারণ MHC নামক একটি জিন। এ জিন মূলত মানুষের ইমিউন সিস্টেমে থাকে। যে সব পুরুষের MHC জিন নারীর থেকে ভিন্ন, নারীরা সে সব পুরুষের প্রতিই আকৃষ্ট হয়। সঠিক কম্বিনিশনের পুরুষ খুঁজে পাওয়ার জন্য নারীর ব্রেন পূর্ববর্তী পুরুষের ডিএনএ সেভ করে রাখে। নারী যদি বহুগামী না হতো, তবে সে পুরুষ চেনার জন্য পূর্ববর্তী পুরুষের ডিএনএ মস্তিষ্কে জমিয়ে রাখত না! পূর্ববর্তী পুরুষ থেকে আসা ওয়াই ক্রোমোজম যদি তার মস্তিষ্কের অক্সিটোসিন ও ডোপামিন রিসেপ্টর প্রভাবিত করে, তবে ভবিষ্যতে তারা অবচেতনস্তরে একই ধরনের পুরুষের সংস্পর্শ চায়। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যে সব নারীর ক্লাইটোরিস থেকে  ভ্যাজাইনাল ওপেনিং- দেড় ইঞ্চি দূরে অবস্থান করে, তারা রেগুলার পেনিট্রেশনের মাধ্যমে অর্গ্যাজমে রিচ করতে পারে না। এজন্য তাদের মধ্যে নতুন নতুন সঙ্গীর প্রতি আগ্রহ দেখা যায়।

স্ম্যার্ট ভ্যাজাইনা থিওরি অনুসারে, নারীর ভ্যাজাইনা শুধু সেক্স করার জন্য নয়, এটি স্পার্ম ফিল্টারিং সিস্টেম হিসেবে বিবর্তিত হয়েছিল। নারীর প্রজনন অঙ্গ শক্তিশালী ডিএনএ-সম্পন্ন পুরুষের জিনকে গ্রহণ করে আর দুর্বল পুরুষের জিন হত্যা করে। নারীর সার্ভিক্স (গর্ভমুখ) বিভিন্ন ধরনের মিউকাস (শ্লেষ্মা) উৎপন্ন করে, যা নির্দিষ্ট স্পার্মকে ভিতরে প্রবেশ করতে সাহায্য করে এবং অবাঞ্ছিত স্পার্মকে আটকে দেয়। এছাড়া ২০২০ সালের একটি গবেষণায় দেখানো হয়, ইন্টারকোর্সের পর নারীর গর্ভাশয় থেকে শুক্রাণুর কাছে কেমোটেকটিক সিগন্যাল নামক একটি নির্দিষ্ট কেমিক্যাল সিগন্যাল পাঠানো হয়। শক্তিশালী শুক্রাণু এই সিগন্যাল বুঝতে পারে আর দুর্বল শুক্রাণু  সিগন্যাল ডিটেক্ট ব্যর্থ হয়। এখান থেকে প্রমাণ হয়, নারীর গর্ভাশয় বন্ধু অথবা শত্রু বোঝে না, সে বোঝে উন্নত ডিএনএ। অন্য কথায় নারী ন্যাচারালি বহুগামী। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, নারীদের ইমিউন সিস্টেম কিছু কিছু পুরুষের শুক্রাণু একসেপ্ট করে আর কিছু পুরুষের শুক্রাণু রিজেক্ট করে দেয়। এটি তখনই সংঘটিত হয়, যখন কোনো পুরুষের MHC জিন তার ইমিউন সিস্টেমের সাথে মিলে যায়।

অনেকেই প্রশ্ন করেন, কেন পুরুষের সেক্স ডিউরেশন নারীর তুলনায় কম। একটি গবেষণা বলছে, বেশিরভাগ পুরুষ ২ থেকে ১০ মিনিটের মধ্যে ইজ্যাকুলেশন করে। এদিকে নারীদের অর্গাজম হতে গড়ে ১৩-২০ মিনিট সময় লেগে যায়। কেন নারী ও পুরুষের সেক্স ডিউরেশনে এই পার্থক্য তৈরি হয়েছে? এছাড়া একজন নারী সেক্সের সময় একাধিক অর্গ্যাজম তৈরি করতে পারে। মাঝেমাঝে নারীরা ফলস অর্গ্যাজমও তৈরি করে। কিন্তু কেন? কেন নারীর মাল্টিপল ও ফলস অর্গ্যাজম বিবর্তিত হয়েছিল?  বিবর্তন তত্ত্ব বলছে, আদিম সমাজে মানুষ আফ্রিকার জঙ্গলে বাস করত। এ সময় তাদের চারপাশে বাঘ ও সিংহের মতো ভয়ানক জন্তু জানোয়ার ঘুরে বেড়াত। এজন্য পুরুষের মধ্যে সেক্সের সময় আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তা দেখা দেয়, তাদের সেক্স ডিউরেশন তুলনামূলক কমে যায়, যাতে করে তারা দ্রুত ইজ্যাকুলেট করে, শিকারী প্রাণীর বিপক্ষে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে। এছাড়া নারীর মাল্টিপল অর্গ্যাজম প্রমাণ করে, একজন নারী সে সময় একাধিক পুরুষের সাথে জড়িত হতো। কখনো কখনো অযোগ্য পুরুষদের সে ফলস অর্গ্যাজমের মধ্য দিয়ে শান্ত রাখার চেষ্টা করত। বারি ইন্ডিয়ান সম্প্রদায়ে এখনো একই নিয়ম দেখা যায়, নারী যদি একসাথে একাধিক পুরুষের সাথে সম্পর্ক করে, তবে সে বাড়তি সুবিধা পায় কারণ প্রতিটি পুরুষ এটা ভেবে বিভ্রান্ত হয়, নারীর গর্ভাশয়ে তারই সন্তান। কিছু বিজ্ঞানী মনে করেন, নারীর শীৎকার কমিউনাল সেক্সের একটি ইনভাইটেশন, প্রাইমেট নারীরাও ইন্টারকোর্সের সময় শীৎকার করে অন্যান্য পুরুষদের ইনভাইট করে। তবে এ থিওরিটি এখনো বিতর্কিত।

গবেষণায় দেখা গেছে, পৃথিবীর আনুমানিক ৭০% পুরুষ তার জেনিটাল সাইজ নিয়ে আতঙ্কিত। এছাড়া পুরুষ তার সেক্স ডিউরেশন নিয়ে খুবই হতাশ। মূলত পুরুষ অবচেতন স্তর থেকে মনে করে নারীর প্রজনন অঙ্গে অন্য কোনো পুরুষের স্পার্ম রয়ে গেছে। এজন্য সে পেনিট্রেশনের মাধ্যমে প্রতিযোগী পুরুষের স্পার্ম রিমুভ করতে চায়। এটাকে বলে স্পার্ম কম্পিটিশন থিওরি। আজকের বিশ্বে আমরা পুরুষে পুরুষে যত যুদ্ধবিগ্রহ দেখছি, প্রতিটি যুদ্ধই বায়োলজিক্যালি স্পার্মের যুদ্ধ। আর এখান থেকেই পুরুষের মস্তিষ্কে নারীর প্রতি জেলাসি তৈরি হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, নারীর সেক্স অর্গ্যানের  প্রথম দু-ইঞ্চির মধ্যেই সেক্স রিসেপ্টরের ঘনত্ব বেশি থাকে, এরপর আর কোনো রিসেপ্টর নেই। কিন্ত পুরুষ এই সত্য মানতে চায় না, তারা ভেবে নেয় নারী বিগ অর্গ্যানের প্রতি অবসেসড। কিন্তু গবেষণা আমাদের দেখিয়েছে, অনেক নারীর ক্ষেত্রে ভ্যাজাইনাল ইন্টারেকশন যথেষ্ট নয়, তাদের কাছে ক্লিটোরাল স্টিমুলেশন বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অনেক নারী সরাসরি পেনিট্রেটিভ সেক্সের মাধ্যমে অর্গাজম পান না, তাদের জন্য ফোরপ্লে প্রয়োজন।

যুক্তরাষ্ট্রের একজন নারীর উপর গবেষণা করে দেখা যায়, তার গর্ভাশয়ে যমজ সন্তান, তবে দুজনের ডিএনএ আলাদা আলাদা সোর্স থেকে এসেছে।। এটাকে বলে সুপারফেকন্ডেশন। এ ঘটনাটি আবারও প্রমাণ করে যে নারী ন্যাচারালি বহুগামী। একটি থিওরি অনুসারে, এ ধরনের নারীর গর্ভাশয় বিবর্তিত হয়েছিল যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে শত্রুর সন্তান উৎপাদন করার উদ্দেশ্যে। যুদ্ধে যদি তার প্রাক্তন স্বামী মারা যায়, তবে শত্রুপক্ষের কাছ থেকে সে এই সন্তানের মাধ্যমে বাড়তি সুবিধা আদায় করতে পারে। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, আমেরিকার প্রায় ৩০% নারী এমন কোনো পুরুষের সন্তান জন্ম দেয়, যাদের সাথে তাদের বৈবাহিক সম্পর্ক নেই। অনেক সময় ডিএনএ টেস্ট করার পূর্বে তারা এ সত্য প্রকাশ করে না।

নারীরা মাঝেমাঝে অবিশ্বস্ত ও প্রতারক পুরুষকে রোম্যান্টিক পার্টনার হিসেবে গ্রহণ করে কিন্তু তারা বিয়ে করে একজন দায়িত্বশীল পুরুষকে। অন্য কথায় নারীরা গুড জিন পাওয়ার জন্য হ্যান্ডসাম পুরুষ চায় কিন্তু দীর্ঘকালীন সেফটির জন্য দায়িত্বশীল পুরুষ অনুসন্ধান করে। কিছু আদিবাসী সমাজে দেখা গেছে, নারীরা প্রথমে যোদ্ধাদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে এবং পরে কৃষকদের সঙ্গে সংসার করে। এটাকে বলে, সেক্সুয়াল কনফ্লিক্ট থিয়োরি। তবে একজন নারী উন্নত জিনসম্পন্ন পুরুষ পছন্দ করে, এটা প্রমাণ করার জন্য আপনাকে বেশিদূর যেতে হবে না। আপনি আপনার কয়েকজন বন্ধুর টি-শার্ট সংগ্রহ করুন, তারপর আপনার গার্লফ্রেন্ডকে ঘ্রাণ নিতে দিন। তাকে প্রশ্ন করুন, কোন শার্টটির ঘ্রাণ তাকে বেশি ট্রিগার করছে৷ আপনি দেখতে পাবেন, আপনার প্রেমিকা এমন পুরুষের ঘামের প্রতি আকর্ষণ প্রকাশ করছে যার জিন অপেক্ষাকৃত উন্নত। তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে সে পুরুষটি হয়তো আপনি নন! আমার এ কথা শুনে আপনি হয়তো কষ্ট পেতে পারেন কিন্তু ফ্রিডরিখ নীটশে বলেছিলেন, সত্যের সবচেয়ে বড় শত্রু হলো সেই মানুষ, যে আরামদায়ক মিথ্যার মধ্যে বেঁচে থাকতে চায়।

গবেষণা দেখিয়েছে, মাসের ১৪- ২১তম দিনের মধ্যে নারীদের পরকিয়া করার প্রবণতা স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যায়। কারণ এ সময় তার ডিম নিঃস্বরণ শুরু হয়। অভুলেশনের সময় ইস্ট্রোজেন (estrogen) এবং টেস্টোস্টেরন (testosterone) হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, যা যৌন আকাঙ্ক্ষা (libido) বৃদ্ধি করতে পারে।  জীববিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে, অভুলেশন হলো প্রজননের জন্য সবচেয়ে উর্বর সময়, তাই নারীরা এই সময়টিতে শারীরিকভাবে আরও আকর্ষণীয় পুরুষের প্রতি আকৃষ্ট হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, অনেক নারী সাধারণত অভুলেশনের সময় বেশি “পুরুষালী” বৈশিষ্ট্যের পুরুষদের প্রতি আকৃষ্ট হন: যেমন গভীর কণ্ঠস্বর, চওড়া কাঁধ ও শক্তিশালী চোয়াল। এ সময় তারা অপেক্ষাকৃত আলফা পুরুষ চায়। এটাকে বলে “Dual Mating Strategy”। বুদ্ধ বলেছিলেন, নারীদের চোখের পানিতে গলে যাওয়া ঠিক না কারণ নারীদের সত্য-মিথ্যা সমান। সম্ভবত এটা ছিল নারীর প্রতি বুদ্ধের পুরুষতান্ত্রিক একটি আক্ষেপ।

মানব নারী যে বহুগামী তার একটি জীবন্ত ফসিল ক্রিপ্টিক ওভুলেশন। শিম্পাঞ্জি নারী যখন উর্বরতার সময়ে প্রবেশ করে, তখন তার প্রজননাঙ্গের কালার লালছে হয়ে যায়। কিন্তু মানব নারীর উর্বরতা বোঝার কোনো উপায় নেই। তারা এটি লুকিয়ে রাখতে পারে। এজন্য পুরুষ তার সাথে বেশি বেশি সময় কাটায় কারণ সে জানে না কখন নারী গর্ভধারণ করবে। আবার সে একইসাথে এটাও জানে না মেয়েটির অন্য কারও সাথে সম্পর্ক আছে কি নেই। এ পদ্ধতিতে মানব নারী একাধিক সঙ্গীর স্পার্মের মধ্যে প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি করে, যেন অপেক্ষাকৃত উন্নত জিনসম্পন্ন পুরুষের সন্তান জন্ম দেয়া যায়।

আমি বলছি না, আমরা এখানে যে সব থিওরি ও হাইপোথিসিস উপস্থাপন করেছি সবই চূড়ান্ত। তবে একটা ব্যাপারে বিজ্ঞানীরা একমত আর তা হলো, নারীর বহুগামিতা সম্পূর্ণ বায়োলজিক্যাল ও ন্যাচারাল। কিন্তু এখানে যে ব্যাপারটি মনে রাখা উচিত, নারী পুরুষের মতো বাছবিচারহীন নয়। মানুষ হলো জিনের হোস্ট, জিনের উদ্দেশ্য মানুষের দেহকে ব্যবহার করে তার অধিক সংখ্যক অনুলিপি তৈরি করা, সেটা নারী বা পুরুষ যেই হোক। জীববিজ্ঞানী রিচার্ড ডকিন্স বলেছিলেন, Males are expected to be more promiscuous because they can spread their genes widely with little investment, while females tend to be choosier because they invest more in offspring। আর্থার শোপেনহাওয়ার বলেন, সত্য প্রথমে উপহাসের শিকার হয়, তারপর তীব্র বিরোধিতার সম্মুখীন হয়, এবং শেষ পর্যন্ত একে স্বীকৃতি দেওয়া হয় যেন এটি বরাবরই সুস্পষ্ট ছিল। এখন প্রশ্ন, বহুগামিতা প্রাকৃতিক বলেই কী এটি যৌক্তিক? না, আমি তা বলছি না। কোনোকিছু প্রাকৃতিক বলেই সেটা যৌক্তিক নয়। এটাকে বলে ন্যাচারিলিস্টিক ফ্যালাসি। আমি কেবল এটাই বলছি, শরীর আমার, আমার ক্যান্সারের কষ্ট আমি ছাড়া বিশ্বের আর কেউ ভোগ করে না। একইভাবে আমার বায়োলজি, এনাটমি ও জেনেটিক্সও আমার। আমার জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ার পুরুষ নয়, ফিজিক্স, বায়োলজি ও রসায়নের নিয়ম। আমি আমার বায়োলজিক্যাল বৈশিষ্ট্যের জন্য কারও কাছে দায়বদ্ধ নই।