আপনারা অনেকেই হয়তো দেখেছেন, সাম্প্রতিক হ্যালিক্সে থ্রিসাম সংক্রান্ত একটি ঘটনা প্রকাশিত হয়েছিল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন টিনেজ জানান, তিনি পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে তার বাই-সেকচুয়াল গার্লফ্রেন্ডের সাথে নিজের বয়ফ্রেন্ডকে শেয়ার করে ফেলেছিলেন কিন্তু পরে তিনি বুঝতে পারেন তার পক্ষে এটা সহ্য করা অসম্ভব! তিনি এতটাই ব্যাথায় জর্জরিত ছিলেন যে, শেষ পর্যন্ত হ্যালিক্সে সাইকোলজিক্যাল সাপোর্ট চেয়ে আবেদন করতে বাধ্য হন। তার যে কয়েকটা কথা আমাকে খুবই আহত করেছিল ,
যে মেয়ের সাথে আমি আমার নিজের শরীর শেয়ার করেছি, সে একই জনের সাথে আমি আমার প্রেমিককে শেয়ার করতে পারছিনা! গতকাল বিকেল চারটায়, মেসেঞ্জার কলে তিনি আমাদের তার নাম ও পরিচয় প্রদান করে জানান, আমি আমার সম্পূর্ণ শরীর শেয়ার করতে প্রস্তুত আছি, প্রয়োজনে আমার বান্ধবী তার আরো বয়ফ্রেন্ডদের নিয়ে আমাকে ট্রাই করুক কিন্তু আমি তারপরও কোন ভাবেই আমার বয়ফ্রেন্ডকে কারো সাথে শেয়ার করতে পারবোনা! বুঝতেই পারছেন, এ ধরণের মনস্তত্ব ঠিক কতটা জটিল! আর এ সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম মনস্তাত্বিক জটিলতাগুলো নিয়েই লিহন-দা বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানের আলোকে একটি দুর্দান্ত বই লিখেছিলেন।
থ্রিসাম আমেরিকায় অত্যন্ত কমন একটি ফ্যান্টাসি। Kinsey Institute এর সেক্স রিসার্চার ড. জাস্টিন লেহমিলার ৪, ১৭৫ জন ব্যক্তির উপর স্টাডি করে Tell me What You want নামক একটি বই লেখেন।। ১৮ -৮৭ বছর বয়সের একটি ডায়ভার্স স্যাম্পল থেকে দেখা যায় ৮৭% নারী বলছে যে, তারা মাল্টিপল পার্টনারের সাথে সেকচুয়াল ফ্যান্টাসিতে আক্রান্ত। কিন্তু লেহমিলারের গবেষণা আমাদের জানায় যে, এই ফ্যান্টাসি যতটা ভালো হওয়ার সম্ভাবনা ছিলো এটা ঠিক ততটা ভালো নয় কারণ তিনজন ব্যক্তির প্রত্যাশা আলাদা আলাদা।
তিনি বলেন, অধিকাংশ মানুষের কাছে থ্রিসামের কোনো স্ক্রিপ্ট থাকেনা। প্রথম দেখায় মনে হয়, ওয়াও! ফ্যান্টাস্টিক !! কিন্ত পরে সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র দেখা যায়। আমাদেরকে মেঘা নামের সে মেয়েটি জানায়, তার বয় ফ্রেন্ড যতক্ষণ তার শরীর নিয়ে প্লে করে ততক্ষণ মনে হয় সে তাকেই বেশি ভালোবাসে, আর পরমুহূর্তে যখন তার বান্ধবীর ভেজাইনা সাক করে তখন তার দুঃখে বুক ছিড়ে যায়। সে অসমতা একদম সহ্য করতে পারেনা। থ্রিসাম চলাকালীন অনেক সুক্ষ্ম পর্যায়ের একটি তীব্র জেলাসি তাকে চারখার করে দেয়। আর এরপর তার সম্পূর্ণ মস্তিষ্কে এই শুধু একটাই স্মৃতি থেকে যায়, কিভাবে তার বয়ফ্রেন্ড তার বাই-সেকচুয়াল বন্ধবীকে উদ্দীপিত করেছিল।
২০১৭ সালে US STUDY ‘তে দেখা যায়, ২০০০ নারী ও পুরুষের মধ্যে ১৮% পুরুষ ও ১০% নারী তাদের জীবনে অন্তত একবার হলেও থ্রিসাম করেছেন। ইউ এস ও কানাডার প্রতি ৫ জনের মধ্যে ১ জন থ্রিসামে জড়িত। তাদের জীবনের কোনো না কোনো অংশে থ্রিসাম তাদের নিকট তাদের পোষা বেড়ালের মতো সহযাত হয়ে গেছে। যে সকল ব্যক্তি থ্রিসামে জড়ায়নি তারা সবাই সরাসরি মাল্টিফিকেশন ম্যাটারের কথা বলেছিলেন। দুজন মানুষের মধ্যে কানেকশন ও সেনশনের ব্যাপারটি ১৫০% দ্বারা মাল্টিপ্লায়েড। কিন্ত FFM অথবা MMF এর বাহিরে লিঙ্গ রচনা করা ব্যাপক জটিলতা তৈরি করে।

৩০ বছর গবেষণার পর ড. রায়ান স্কোট Understanding Threesome শিরোনামে একটি আর্টিকেল প্রকাশ করেন, সেখানে তিনি জানান, কোন নারী যদি কারো স্বামীকে থ্রিসামে জড়ায় তবে সেক্ষেত্রে ঐ নারীও তার স্বামীর সাথে থ্রিসামে জড়িয়ে তার প্রতিশোধ গ্রহণ করে। তিনি বলেন, এটা আল্টিমেট সেক্স রোম্প হতে পারে, এটা ক্ষমতা হতে পারে, এটা ফান ও এক্সাইটম্যান্ট হতে পারে অথবা এটা এলকোহলের প্রভাব থেকেও হতে পারে। স্কোটের গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে, কেউ কেউ এটাকে সেকচুয়াল আলট্রুইজম নামকরণ করেছেন। কেউ আছে এমন যে তাদের সঙ্গীর থ্রিসাম ফ্যান্টাসি আছে কিন্তু অপরিহার্যভাবে শেয়ার করছেনা। অথবা তারা মিক্সড সেক্সের মধ্যে সেম সেক্স এট্রাকশন চাচ্ছে। ( যা স্পেশালি নারীদের মধ্যে কমন)। গবেষণায় দেখা যায়, নারীরাই সমকামীতার প্রতি বেশি ফ্ল্যাক্সিবল আর আমি তার অন্যতম প্রমাণ। (Read More: The psychology of the threesome: everyone wants one, but who’s truly ready for it? )
গ্রুপ সেক্স এবং ওমেন পার্টিশিপেন্টদের ভেতর অনেক জোরজবরদস্তি আছে; ক্যাথারিন ফ্র্যাংক এ কথা বলেন, যিনি একজন কালচারাল এনথ্রোপোলোজিস্ট এবং Plays well in group: A journey through the world of Group sex বইয়ের লেখক। আপনি যদি দুটি গ্যাং মেম্বারদের মধ্যে থ্রিসামের কথা কল্পনা করেন এবং একজন নারী যে সেই গ্যাং-এর অংশ সে থ্রিসামে পুরুষের একটি পরম্পরা থাকে এবং ঐ নারীর সাথে যেকোনো কিছু ঘটতে পারে।
কিন্তু তারপরও থ্রিসামের মধ্যে জেলাসির ব্যাপারটা থেকে যায়। অনেকেই বলেন, সেকচুয়ালি আলট্রুইস্টিক হও , জেলাসি অতিক্রম করো। কিন্তু ব্লাইন্ডওয়াচমেকার কোর্সের পরিচালক সুপরিচিত মনোবিজ্ঞান ও অন্যান্য ক্ষেত্রের গবেষক ও লেখক অ্যান্ড্রোস লিহন আমাদের ব্যক্তিগত সেশনে জানান, জেলাসি সচেতন কিছু না… আমরা সাব-কনশাসলি জেলাস হয়ে যাই। তিনি বলেন, এর কারণ লুকিয়ে আছে আজ থেকে ৩.৫ মিলিয়ন বছর পূর্বে লুসির মনস্তত্বে। ঠিক সে সময় ন্যাচারাল সিলেকশন নারী ও পুরুষের মস্তিষ্কে একগামিতার নিউরাল সার্কিট তৈরি করে দেয় যদিও সে ব্রেন সার্কিট পরিপূর্ণ ছিলোনা যার কারণে আমাদের মনের মধ্যে ডুয়ালিটি বাসা বাঁধে। আমরা একইসাথে পেয়ার বন্ডিং তৈরি করতে চাই আবার কোনো সঙ্গীর প্রতিও আকর্ষণবোধ করি। বরাবরের মতো, তিনি ফিশারের রেফারেন্স দিয়ে বলেন, হিউম্যান ব্রেন সিস্টেম কমপ্লিট নয়, তাই মানুষ সম্পূর্ণ একগামী হতে পারেনা তবে সে তার সঙ্গীকেও অন্য কারো সাথে শেয়ার করার পক্ষে নয় কারণ এটা তার জিনের জন্য ক্ষতিকর। তিনি আরও বলেন, আর এই যে আমাদের মধ্যে জিনগত ডুয়ালিটি সে ডুয়ালিটির কারণেই থ্রিসামের সাইকোলজি তৈরি হয়। যখন দুজন নারী ও একজন পুরুষ থ্রিসাম করে, তখন সে পুরুষটি যদি প্রথম জনের সামনে ফর এক্সাম্পল দ্বিতীয়জনের চুলে বেশি আদর মেখে দেয়, সাথে সাথেই আমাদের সেই মিলিয়ন বছর পূর্বের আদিম জেলাসি জ্বলে উঠে আর আমরা পুড়ে যাই। দুজন পুরুষ ও একজন নারীর ক্ষেত্রেও সেম ব্যাপার দেখা যায়! আসলে আমাদের সাব-কনসাস মাইন্ড মিলিয়ন মিলিয়ন বছরের বিবর্তনে তৈরি, এটি তার আদিম ক্যামিস্ট্রি অনুযায়ী চলে। থ্রিসামের সাথে এ জন্যই আমরা পুরোপুরিভাবে অভিযোজিত হতে পারিনা।
মেঘার জন্য, আমি শুধু এটুকু বলতে পারি, আপনি একগামী নারী। এ সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসেন অথবা আপনি পড়াশুনা ও জ্ঞানবিজ্ঞানের মধ্যে ডুবে যান, নিজের মনকে ডায়ভার্ট করার চেষ্টা করেন। সেক্সকে আরো সহযভাবে নেবার মনোভাব এভাবে তৈরি হলেও হতে পারে। আপনি যদি মনে করেন, আপনার একটা অর্গাজম প্রয়োজন তবে আপনি একটা টয়ও ব্যবহার করতে পারেন, অথবা মাস্টারবেট করতে পারেন কিন্তু থ্রিসাম করতে গিয়ে যদি আপনি খুবই কষ্ট পান তবে আপনার সরে আসা উচিত। আর নয়তোবা আপনারা ইকুয়্যালিটি ও সেক্রিফাইজের মানসিকতা তৈরি করেন। আমি হলে এক্ষেত্রে, থ্রিসাম ও স্ট্রেইট দুটোই পছন্দ করতাম। থ্রিসাম করে যদি পেইন ক্রিয়েট হতো বন্ধুর সাথে সেক্স করে সেই ব্রেন কেমিস্ট্রিকে চেঞ্জ করে দিতাম। মূলত, আমাদেরকে আমাদের ব্রেন কেমিস্ট্রি বুঝে কাজ করতে হবে। মনের কোনো অস্তিত্ব নেই, মনের পরিবর্তে যদি ক্যামিস্ট্রিকে প্রতিস্থাপন করেন তবে আপনি বুঝতে পারবেন কেমেস্ট্রির পরিবর্তনে মন কিভাবে পরিবর্তন হয়। আমি নিজেও থ্রিসাম ফ্যান্টাসিতে আক্রান্ত । আর আমি একাধিক সঙ্গী রেখেছি। কারণ আমি জানি, সমস্যা মনের ভেতর নয়, ব্রেন নিউরনে।

থ্রিসাম সাইকোলজি থ্রিসাম সাইকোলজি থ্রিসাম সাইকোলজি থ্রিসাম সাইকোলজি থ্রিসাম সাইকোলজি থ্রিসাম সাইকোলজি