“চিন্তা” কিভাবে সম্ভব? খুলির ভেতর কি ঘটে যা বিজ্ঞানীদের জটিল সব গণিত সমাধান করার অনুমোদন দেয়, নশ্বরতা বোঝার সুযোগ দেয়, আমাদেরকে নৈতিক ও নিঃস্বার্থপর করে তোলে, এমনকি আমরা সরল সব কাজ করতে পারি, কাটাচামচ ও ব্যাঙ দিয়ে? কোনো মেশিন, এবং সম্ভবত অন্যকোনো প্রাণী এ কাজ করতে সক্ষম নয়! এ প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে ১৯৫০ সালে কগনিটিভ সায়েন্স আত্মপ্রকাশ করে। একটি মহান প্রচেষ্টা যা আমাদেরকে এটা বুঝতে সাহায্য করে কিভাবে কাজ করছে এ বিস্ময়কর মন! স্টিভেন পিঙ্কার, কগনিটিভ সায়েন্সের একজন প্রফেসর, এ ব্যাপারটি নিয়ে আজ প্রায় ২৫ বছর পর্যন্ত কাজ করে যাচ্ছেন। মানুষের মন কোনো ডেস্কটপ কম্পিউটার নয় যেটি রিম অব ইনফরমেশন ধারণ করার জন্য নকশা করা হয়েছে। মন হলো অত্যন্ত ফ্লেক্সিবল একটি প্রবলেম সলভার যা আমাদেরকে নতুন নতুন পরিস্থিতিতে শুধু প্রয়োজনীয় ইনফরমেশন খুঁজে বের করতে সাহায্য করে। আর এর ফলে একজন ব্যক্তি বিশ্ব সম্পর্কে তার খুলির ভেতর অতি-অল্প পরিমাণ তথ্যই ধারণ করে । এ সেন্স থেকে আমরা একজন ব্যক্তিকে বলতে পারি একটি মৌমাছি যার সমাজ হলো মৌচাক; স্টিভেন স্লোম্যান বলেন,
মানুষের ইন্টিলিজেন্ট একজন ব্যক্তির খুলির ভেতর অবস্থান করে না, ইন্টিলিজেন্ট অবস্থান করে কালেক্টিভ মনের ভেতর। কোনো একটি ফাংশনের জন্য একজন ব্যক্তি শুধুমাত্র তার খুলির উপর নির্ভর করেনা, বিশ্বের সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ইনফরমেশনের উপর নির্ভর করে, সে ইনফরমেশন থাকতে পারে আমাদের শরীরে, থাকতে পারে আমাদের এনভায়রনমেন্টে এবং বিশেষ করে অন্য কোনো মানুষের মাথার ভেতর! যখন আপনি এ সব তথ্য একত্রিত করবেন ঠিক তখনই আপনার চিন্তা দুর্দান্তভাবে কাজ করবে। আপনার “চিন্তা” কমিউনিটির প্রোডাক্ট, ব্যক্তির একার নয়! একজন মানুষের মস্তিষ্ক আসলে ইন্টারন্যাশনাল প্রোপার্টি। সে ইন্টারনেশনাল তথ্য প্রসেস করে, আমরা ইন্টারন্যাশনাল কন্টেন্টের অনুবাদক, আর তাই আমাদের বুদ্ধিমত্ত্বার লোকেশন আসলে সম্পূর্ণ জগত।

এখন যে কেউ প্রশ্ন করতে পারেন, আমার মাথার খুলির ভেতর আমার ইন্টিলিজেন্ট অবস্থান করেনা, এটা আবার কেমন কথা! আসলে এটাই সত্য, আপনি প্রায় কিছুই জানেননা, আপনার অনেককিছুই মনে থাকেনা, আপনার ব্রেন প্রায় এম্পটি কিন্তু তবুও আপনি এমন একটা ভাব করছেন, যেনো আপনি সবকিছু সম্পর্কেই জানেন! এ বিশ্বে এমন অনেক ঘটনা আছে যা খুবই জটিল আবার এমন অনেক ঘটনা আছে অত্যন্ত সরল। আপনি এটা শুনলে নিশ্চয়ই আহত হবেন না যে আধুনিক কম্পিউটার এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্ট অথবা এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল সিস্টেম খুবই কমপ্লিকেটেড! কিন্ত যখন আপনাকে আপনার টয়লেট সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়?
টয়লেট অনেক বিলাসবহুল একটা ব্যাপার এবং খুবই প্রয়োজনীয়, এটি এমন একটি জিনিস যেটি মারাত্মক ভাবে অপরিহার্য, টয়লেট ছাড়া আপনি আপনাকে চিন্তাই করতে পারেননা। ফ্ল্যাশ টয়লেট অবশ্যই পরবর্তী শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত। যখন আপনার টয়লেটের দরকার হয় আপনার আসলেই এর দরকার হয়। উন্নত বিশ্বের প্রায় প্রতিটি বাড়ীতে একটি করে টয়লেট আছে, আইন অনুযায়ী প্রতিটি রেস্টুরেন্টে অবশ্যই টয়লেট থাকতে হবে, Thank Goodness! গ্যাস স্টেশন ও স্টারবাকেও টয়লেট পাওয়া যায়। কার্যক্ষমতার দিক থেকে এগুলো চমতকার এবং সরলতার দিক থেকে খুবই বিস্ময়কর। বিশ্বের সব মানুষের টয়লেটের সাথে ভালো আন্ডারেস্টেন্ডিং আছে, তারা জানে টয়লেট কিভাবে কাজ করে। নিশ্চিতভাবে অধিকাংশ মানুষই মনে করে তারা অবশ্যই টয়লেটকে বোঝে। আপনিও কি তাই মনে করছেন না? knowledge Illusion; Why we never think alone নামক দুর্দান্ত গ্রন্থটিতে স্টিভেন স্লোম্যান ঠিক এভাবেই প্রশ্ন করেছিলেন, আপনি কী মনে করেন না, যে আপনি টয়লেট সম্পর্কে জানেন?
ওকে ফাইন! কয়েক মিনিট সময় নিন এবং টয়লেটকে এক্সপ্লেইন করার চেষ্টা করুন, কী ঘটে যখন আপনি টয়লেটে ফ্ল্যাশ করেন? আপনি কি জানেন এর পেছনের জেনারেল প্রিন্সিপাল কি? এবার দেখা যাবে অধিকাংশ মানুষই এটা জানেনা! টয়লেট আসলেই সিম্পল একটা জিনিস যার ব্যাসিক ডিজাইন আজ থেকে ৫০০ বছরের মধ্যেই উদ্ভাবিত হয়েছে। যদিও এমন একটি গল্প প্রচার করা হয়েছে যে, ফ্ল্যাশ টয়লেটের উদ্ভাবক থমাস ক্রিপার কিন্তু এ ধারণা সত্য নয়, টয়লেট তিনি উদ্ভাবন করেননি তিনি শুধু টয়লেটের উন্নয়ন করেছেন।
সবচেয়ে জনপ্রিয় ফ্ল্যাশ টয়লেট হলো উত্তর আমেরিকার সিপনিং টয়লেট। এর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য উপাদান হলো, একটি ট্যাঙ্ক, চৌবাচ্চা এবং ট্র্যাপওয়ে। ট্র্যাপওয়ে সাধারণত S অথবা U শেপের। ট্যাঙ্ক সাধারণত পানি দ্বারা পরিপূর্ণ থাকে।যখন টয়লেটকে ফ্ল্যাশ করা হয়, ট্যাঙ্কের থেকে চৌবাচ্চার মধ্যে পানি প্রবাহিত হতে থাকে, পানির উচ্চতা ট্র্যাপওয়ের উচ্চতর কার্ভ পর্যন্ত আরোহন করতে পারে। এটি বাতাসের ফাঁদ পরিস্কার করে, জল দিয়ে ভরাট করে দেয়। যত শীঘ্রই ট্র্যাপওয়ে পরিপূর্ণ হয়, যাদু সংঘটিত হয়। সিপন ইফেক্ট তৈরি হয় যা চৌবাচ্চা থেকে পানিকে চুষে নেয় এবং এটাকে ট্র্যাপওয়ের ভেতর দিয়ে ড্রেনে নিয়ে যায়। একই Shipon Effect আপনি গাড়ি থেকে গ্যাসোলিন চুরি করার জন্য ব্যবহার করতে পারেন। সিপন ইফেক্ট তখনই থেমে যায় যখন চৌবাচ্চার পানি ক্রমশ নিচে নেমে আসে। তারপর ট্র্যাপওয়ের প্রথম বেন্ড বাতাসকে অনুমোদন দেয় এ প্রসেসটিতে হস্তক্ষেপ করতে। যখন চৌবাচ্চার পানি একবার সিপন্ড হয়, পানি আবার ট্যাঙ্কে Pumped Back করে এবং অপেক্ষা করে পরবর্তী সময়ের জন্য।
এটি এতটাই এলিগেন্ট ম্যাকানিকাল প্রসেস যে ব্যবহারকারীর কোনো পরিশ্রমই করতে হয়না। কিন্তু এটি কি সিম্পল? বেশ, একটি প্যারাগ্রাফে এটি ব্যাখ্যা করাটা খুবই সিম্পল কিন্তু এটা এতবেশি সিম্পল নয় যে প্রত্যেকটি মানুষ এটি বুঝবে! সম্ভবত, আপনি এখন সে অল্প কয়েকজন ব্যক্তির মধ্যে একজন? আপনি যদি টয়লেটকে বুঝতে চান তবে সংক্ষিপ্ত বর্ণনা থেকেও আপনাকে আরো বেশিকিছু জানতে হবে। এজন্য আপনাকে জানতে হবে সিরামিক্স, মেটাল এবং প্লাস্টিক সম্পর্কে, জানতে হবে কিভাবে একটি টয়লেট তৈরি করতে হয়, আপনাকে ক্যামিস্ট্রি সম্পর্কে জানতে হবে কিভাবে সিল কাজ করে যে জন্য টয়লেট লিক হয়ে বার্থরুপ ফ্লোরে ছিটকে পড়েনা। যে কেউ দাবি করতে পারে, টয়লেট সম্পর্কে সম্পূর্ণ বুঝতে হলে, অর্থনীতি সম্পর্কে ধারণা থাকা জরুরি, এর মূল্য কত রাখা হবে, কোন ধরণের উপাদান ব্যবহার করা হবে। উপাদানের কোয়ালিটি নির্ভর করবে ভোক্তা কেমন মূল্য পরিশোধ করতে আগ্রহী তার উপর। আর এ জন্য আপনাকে কাস্টমারের সাইকোলজি সম্পর্কেও গবেষণা করতে হবে তারা কোন রঙের টয়লেট পছন্দ করে আর কোন রঙের টয়লেট পছন্দ করেনা!
কোনো মানুষই আসলে অত্যন্ত ক্ষুদ্র একটা বস্তু সম্পর্কেও সম্পূর্ণ ধারণা রাখেনা। এমনকি একদম সরল বস্তুকে তৈরি করার জন্যও Complex Web of Knowledge প্রয়োজন আর নয়তো আপনি এটাকে ব্যবহার করতে পারবেন না! আমরা তো এখনো ভাইরাস, ব্যাক্টেরিয়া, ভালোবাসা ও প্রজননের মতো জটিল বিষয়গুলোর কথা আপনাদের কাছে বললামই না! কিভাবে এগুলো কাজ করে? অধিকাংশ মানুষই আপনাকে বলবেনা, কিভাবে কফিমেকার কাজ করে, কিভাবে আঠার মাধ্যমে কাগজকে জোড়া লাগানো যায়, ক্যামেরার ফোকাস কিভাবে কাজ করে, ভালোবাসার মতো জটিল বিষয় তো অনেক দূরের কথা। স্লোম্যান বলেন, “আমি বলতে চাচ্ছিনা যে মানুষ অজ্ঞ। আমি শুধু এটা বলতে চাইছি, মানুষ তার চেয়েও বেশি অজ্ঞ যতটা না অজ্ঞ সে নিজেকে মনে করে।” আমরা সবাই কম অথবা বেশি Illusion of Understanding এ ভুগছি, আমরা এমন একটি প্রবঞ্চনায় ভুগছি যে আমরা জানি বস্তু কিভাবে কাজ করে যদিও আমরা আসলে সেটা সম্পর্কে খুব কমই জ্ঞান রাখি। অনেকে বলতে পারেন, ওকে, বেশ! আমি এসব স্টাফ সম্পর্কে খুব একটা জ্ঞান রাখিনা কিন্তু আমি আসলে ইলুশনে বাস করছিনা! আমি সায়েন্টিস্ট বা ইঞ্জিনিয়ার নই যে আমাকে এসব জানতে হবে।” এখন বলুন, আপনি ঠিক কোন ক্ষেত্রে অনেক বেশি জানেন? ইতিহাস? রাজনীতি? অর্থনীতি? আপনি কি আপনার জানার সীমারেখার ভেতর, আপনার নিজস্ব ফিল্ডে সবকিছুর বিস্তারিত বিবরন সহকারে কোনো জ্ঞান রাখেন? টয়লেট সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান ইতিহাস সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানের চেয়ে খুব একটা বেশি না। আপনি টয়লেটের ফ্ল্যাশ কোন পদ্ধতিতে কাজ করে সে সম্পর্কে যতটা জ্ঞান রাখেন ৭ ডিসেম্বর ১৯৪১ সালে জাপান কেনো পিয়ার্ল হার্বরকে আক্রমণ করেছিল সে নিয়ে খুব একটা ধারণা রাখেননা। আপনি এক কাপ কফির মধ্যে কোন কোন উপাদান আছে তা হয়তো জানেন কিন্তু কফির পরমাণুগুলো যে সকল পদার্থবিজ্ঞানের সূত্র মেনে চলে সে সম্পর্কে কোনো ধারণা আপনার হয়তো নেই। ইতিহাস এমন সব ঘটনা দ্বারা পরিপূর্ণ যা প্রাথমিকভাবে মনে হয় আমরা জানি কিন্তু সত্যিকার হিস্ট্রিক্যাল কন্টেক্স আমরা যা কল্পনা করি তার থেকে অনেক আলাদা। জটিল সকল বিস্তারিত সময়ের অতল গহবরে হারিয়ে গেছে, এখান থেকেই বিভিন্ন মিথ জন্ম হয় আর ঐতিহাসিক গল্পগুলোকে ডাইজেস্টিবল করে তোলে।
আমরা আসলে সবকিছু বুঝিনা এবং আমাদের মধ্যে অনেকেই বোঝার কোনো চেষ্টাও করেনা। আমরা এবস্ট্রাক্ট নলেজের উপর নির্ভর করি যা অস্পষ্ট আর অবিশ্লেষিত। আমরা মাঝেমধ্যে এমনকিছু ব্যতিক্রম মানুষ দেখে বিস্মিত হই যারা সবকিছু বিস্তারিতসহ কথা বলে। আসলে আমরা সবাই আমাদের নিজস্ব ক্ষেত্রেই বিশেষজ্ঞ, আর সে সকল ক্ষেত্রে আমরা চমৎকার বিস্তারিত সহকারে কথা বলি। কিন্তু এমন অনেক বিষয় আছে এগুলোর সাথে আমরা শুধু অত্যন্ত ক্ষুদ্র পরিমাণ এবস্ট্রাক্ট তথ্যের মাধ্যমেই সম্পৃক্ত হই, আসলে আমরা যা জানি তা হলো আমরা যা জানিনা তার থেকে সামান্য বেশিকিছু। অধিকাংশ জ্ঞান সামান্য এক গুচ্ছ সমিতির চেয়ে অনেক বেশিকিছু, বস্তু ও মানুষের মধ্যে উচ্চতর লিংক যা আসলে বিস্তারিত গল্পে বিভক্ত নয়।
কিন্তু কেনো আমরা আমাদের অজ্ঞতার গভীরতা বুঝতে পারিনা? কেনো আমরা মনে করি যে, আমরা কোনোকিছু অত্যন্ত গভীরভাবে বুঝি, আমাদের রয়েছে সিস্টেমেটিক ওয়েভ অব নলেজ যা আমাদের মাঝে সব কিছুর সেন্স তৈরি করে, যেখানে বাস্তবতা সম্পূর্ণ আলাদা?

কেনো আমরা Illusion of understanding- দ্বারা আক্রান্ত?
What Thinking For? শিরোনামে স্টিভেন স্লোম্যান এ ব্যাপারটি ব্যাখ্যা করেছিলেন। যা আমি এখন এডিশনাল তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করবো। আমাদের চিন্তার পদ্ধতিতে কেনো এই ইলুশন কাজ করে তা যদি আমরা জানতে পারি তবে আমরা এটাও জানতে পারবো যে আমরা মূলত কেনো চিন্তা করি। চিন্তা কেনো বিবর্তিত হলো? আসলে চিন্তার বিবর্তনের পেছনে বিভিন্ন ম্যাকানিজম কাজ করছে। চিন্তার মূল কাজ হলো বিশ্বকে রিপ্রেজেন্ট করা__ আমাদের খুলির ভেতর এমন একটি জগত তৈরি করা যা অত্যন্ত ক্রিটিক্যাল পদ্ধতিতে বিশ্ব কি তার প্রতিনিধিত্ব করে। অথবা চিন্তা এ জন্যই অস্তিত্বশীল যেনো আমাদের ভাষা সম্ভবপর হয়ে উঠে যার মাধ্যমে আমরা একে অপরের সাথে কমিউনিকেট করতে পারি। অথবা চিন্তা সম্ভবত সমস্যা সমাধান ও ডিসিশন মেইক করে। অথবা হয়তো এটি সুনির্দিষ্ট কোন উদ্দেশ্যে বিবর্তিত হয়েছে যেমন- যন্ত্র তৈরি অথবা সম্ভাব্য সঙ্গীর অনুসন্ধান। এ সবগুলো আইডিয়াই হয়তো চিন্তার সাথে সম্পৃক্ত, কিন্তু চিন্তা অবশ্যই অনেক বিশাল উদ্দেশ্যে বিবর্তিত হয়েছে, এমন একটি উদ্দেশ্যে যা সব উদ্দেশ্যের মধ্যেই সাধারণঃ আর সেটি হলো “থট ইজ একশন”! চিন্তা বিবর্তিত হয়েছে আমরা যেনো কার্যকরী ভাবে আমাদের সক্ষমতার প্রকাশ ঘটাতে পারি- এটি বিবর্তিত হয়েছে যেনো আমরা আমাদের লক্ষ্য বাস্তবায়ন করার জন্য সর্বোত্তম হয়ে উঠতে পারি। চিন্তা আমাদেরকে “সেট অব পসিবল একশন” থেকে নির্বাচন করার সুযোগ প্রদান করে, প্রতিটি কর্মের ফলাফল প্রেডিক্ট করার মাধ্যমে এবং এটা কল্পনা করার জন্য যে বিশ্ব কেমন হতো যদি আমরা অতীতে ভিন্ন কোন কর্ম সম্পাদন করতাম! এটা বিশ্বাস করার একটি কারণ হলো একশনই আমাদের চিন্তার পূর্বে এসেছে। এমনকি আদিম অর্গানিজিমও কর্ম করতে সক্ষম ছিলো। সিঙ্গেল সেল যা ইভোলুশনারি সাইকেলের পূর্বে জাগ্রত হয়েছে তারাও খেতো এবং মুভ করতো এবং প্রজননে নিয়োজিত ছিল। তারা কাজ করতো, তারা বিশ্বের সাথে কাজ সম্পাদন করতো এবং এটাকে পরিবর্তন করে দিয়েছিল।
বিবর্তন সে সকল অর্গানিজমকে সমর্থন করেছিল যাদের কাজ তাদের সার্ভাইভালের জন্য উপযোগী ছিল। এবং যে সব অর্গানিজমের কর্ম অনেক বেশি ইফেক্টিভ ছিল, তারা পরিবর্তনশীল বিশ্বের সাথে অনেকবেশি সমন্বিত হতে পারতো। আপনি যদি কোন একটা প্রাণীর রক্ত চোষেন সেটা আপনার জন্য খুবই উপযোগী কিন্তু আপনাকে বুঝতে হবে সেটা রক্তহীন পাতা নাকি রক্তমাংসের প্রাণী। একটি নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে এপ্রোপিয়েট একশন আইডেন্টিফাই করার জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ টুলস হলো মেন্টাল ফ্যাকাল্টি যা ইনফরমেশন প্রসেস করতে পারে। ভিজুয়াল সিস্টেম খুব সুন্দর কিছু নমনীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে একটি ইদুর থেকে একটি শুকনো পাতাকে পৃথক করার জন্য। এপ্রোপিয়েট একশনকে সিলেক্ট করার জন্য আমাদের মেন্টাল প্রসেসও অত্যন্ত জটিল। আপনার মেমরি আপনাকে এটা বলে যে, কোন কাজটি আপনার অতীতের একটি পরিস্থিতির উপস্থিতিতে আপনার জন্য অধিক কার্যকরী। মেমরি ও রিজনকে ব্যবহার করে কোন ম্যান্টাল ফ্যাকাল্টি মানুষকে তার লক্ষ্য পূরণের জন্য তাড়িত করে? আমরা জানি যে ,মানুষ কার্যকারণ সম্পর্কে রিজনকে স্পেশালাইজ করে তারা বুঝতে পারে কিভাবে বিশ্ব কাজ করে। একটি কর্মের ফলাফল প্রেডিক্ট করার জন্য রিজনিং প্রয়োজন যে কারণ ফলাফলকে প্রডিউস করে৷ আর এটা করার জন্যই মনের ডিজাইন প্রস্তুত হয়েছে। আমরা ভৌত বস্তু, সামাজিক সিস্টেম, অন্যকোনো ব্যক্তি বা আমাদের পোষা কুকুর সম্পর্কেই কি চিন্তা করি, আমরা যা নিয়েই চিন্তা করি, আমাদের দক্ষতা হলো, কিভাবে কর্ম ও অন্যান্য কারণ ইফেক্ট তৈরি করে তা ডিটারমাইন করার ক্ষমতা।
আমরা জানি যে ফুটবলে লাথি দিলে সেটি ফ্লাই করবে কিন্তু কুকুরের শরীরে কিক করলে এটি পেইন সৃষ্টির কারণ হবে। আমাদের থট প্রসেস, আমাদের ভাষা, আমাদের ইমোশন সবকিছু ডিজাইন হয়েছে ক্যাজুয়াল রিজনিং- এ এনগেজ হওয়ার জন্য যা আমাদেরকে যৌক্তিকভাবে কাজ করতে সহযোগিতা করে। আর ঠিক এ প্রক্রিয়াটিই বিস্ময়করভাবে মানুষকে প্রচন্ড রকমের অজ্ঞতার মধ্যে ছুড়ে ফেলে দেয়! আপনি ভাবছেন, কেনো? যদি কজালিটি আমাদের শেরা একশন নির্বাচনে অত্যন্ত সুক্ষ্ম একটি ব্যাপার হয় তবে বিশ্ব কিভাবে কাজ করে সে ব্যাপারে মানুষ কেনো বিস্তারিত বা ডিটেইলস নলেজ রাখেনা?
কারণ আমাদের চিন্তা শুধুমাত্র সে ইনফরমেশন গুলো খুঁজে বের করতে পন্ডিত যেগুলো তার জন্য প্রয়োজনীয় আর এ জন্য সে অন্যান্য ইনফরমেশনগুলো থেকে ফিল্টার করে শুধুমাত্র তার জন্য উপযোগী তথ্যটাই বের করবে। যখন আপনি তীক্ষ্ণ কোনো শব্দ শোনেন, আপনার স্পিচ রিকগনিশন সিস্টেম শুধুমাত্র সে শব্দের সারাংশ বুঝতে চায়, স্পেসিফিক শব্দটিকে সম্পূর্ণ ভুলে গিয়ে। আপনি যখন কমপ্লিকেটেট কোনো লজিক্যাল সিস্টেমের ভেতর দিয়ে যান, আপনি শুধু সারাংশটাই অনুভব করেন বিস্তারিত ভুলে গিয়ে। কারো যদি যন্ত্রগুলো খুলে খুলে তার কার্যকারীতা বোঝার শখ থেকে থাকে, সে শুধু যে কোনো একটি মুহূর্তে যন্ত্রটি খুলবে, সম্ভবত একটি কফি মেশিন। আপনি নিজে যদি এ কাজটি করে থাকেন আপনি আলাদা আলাদা অংশের শেইপ, কালার বা লোকেশন মনে রাখবেন না। আপনি বিশাল আকারের উপাদানগুলোর দিকেই তাকাবেন ও বোঝার চেষ্টা করবেন যে সেগুলো কিভাবে একে অন্যের সাথে কানেক্ট হয়েছে আর এভাবেই আপনি Big Question- এর উত্তর দিতে সক্ষম হবেন যেমন- কিভাবে পানি উত্তপ্ত হয়!
যদি আপনি অধিকাংশ মানুষের মতো হয়ে থাকেন, আপনি যদি কফি মেশিনের ভেতরে কী হচ্ছে তা জানতে আগ্রহী না হয়ে থাকেন তবে এটি কিভাবে কাজ করে সে ব্যাপারে আপনি আরো কম বিস্তারিত জানতে সক্ষম হবেন। আপনার কার্যকারণগতবোধ শুধুমাত্র আপনার কি জানা প্রয়োজন তার মধ্যেই সীমাবদ্ধঃ আমরা শুধু ভাবি কিভাবে কোনো একটি কাজ সম্পাদন করা যায়। আমাদের মন প্রতি স্বতন্ত্র বস্তু ও পরিস্থিতির বিস্তারিত জানার জন্য নির্মিত নয়। আমরা আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে জানি , যে জন্য আমরা নতুন অবজেক্ট ও পরিস্থিতি সনাক্ত করতে পারি। আমরা যদি নতুন কোনো প্রসঙ্গ নিয়ে কাজ করতে চাই তবে আমাদেরকে শুধুমাত্র এর গভীর নিয়মতান্ত্রিকতা জানা প্রয়োজন যে পদ্ধতিতে বিশ্ব কাজ করে, কোনোপ্রকার সুপারফিশিয়াল ডিটেইলস নয়। আমাদের ফিফথ সেন্স প্রতি মুহূর্তেই মিলিয়ন মিলিয়ন ইনফরমেশন আমাদের মস্তিষ্কে প্রেরণ করছে কিন্তু আমাদের প্রি-ফ্রন্টাল কর্টেক্স একটি নির্দিষ্ট সেকেন্ডে ৪৬ বিট ইনফরমেশনই অনুধাবন করতে দেয় আমাদের। তার বাহিরে আমাদের কনশাসনেস কাজ করেনা আর এর কারণ আজ থেকে ৩.৬ মিলিয়ন বছর পূর্বে লুসি যখন পায়ে হেঁটে পথ চলতে শিখেছিল সে যদি কোন একটি সিংহের সামনে বিপুল পরিমাণ ইনফরমেশনে ওভার ফ্লাডেড হয়ে ক্র্যাক হয়ে যেতো, তবে নিজের প্রাণ রক্ষা করে কখনোই পরিবারের কাছে ফিরে যেতে পারতোনা, অসম্ভব হয়ে উঠতো প্রজনন ও বংশবিস্তার। আর এ জন্য লুসির জন্য একটি নির্দিষ্ট মুহূর্তে শুধুমাত্র নির্দিষ্ট পরিমাণ কার্যকারণ সম্পর্ক বোঝাটাই হয়তো টিকে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় ছিল, যার জন্য আমরা সবকিছুর ইমিডিয়েট কারণ খুঁজতেই অভ্যস্ত, কোন একটি বস্তুর বিস্তারিত বিবরণ জানার পরিবর্তে টিকে থাকার জন্য যতটুকু ইনফরমেশন প্রয়োজন সে পরিমাণ তথ্যের প্রতি সংবেদনশীল হওয়ার জন্যই আমাদের মস্তিষ্ক বিবর্তিত! আর এ জন্যই হয়তো সরল অথবা জটিল কোনো অবজেক্টেরই বিস্তারিত বিবরণ জানার ইচ্ছা ও প্রবণতা আমাদের মধ্যে কাজ করেনা, আমরা টয়লেট সম্পর্কে বিস্তারিত জানিনা কারণ বিস্তারিত তথ্য মনে রাখাটা আমাদের টিকে থাকার জন্য একদম উপযোগী নয়। আর এ জন্যই আমাদের বুদ্ধিমত্ত্বা আমাদের মাথার খুলির অভ্যন্তরে সীমাবদ্ধ নয় কারণ আমাদের মস্তিষ্ক সীমিত পরিমাণ তথ্য নিয়ে কাজ করে, আমাদের চিন্তা তখনই সত্যিকার অর্থে কাজ করে যখন আমরা এক্সট্রারনাল জগতের সে ইনফরমেশনগুলোর সাথে কানেক্ট হতে পারি। আর এ জন্যই আমাদের মস্তিষ্কের মাঝে একপ্রকার বিভ্রম কাজ করে , যে আমরা যা জানি, তার থেকেও আমরা আরো অনেক বেশি কিছু জানি।