GOD VIRUS
আপনি তৃণভূমিতে একটি পিঁপড়ার দিকে তাকিয়ে আছেন, যে অত্যন্ত শ্রমসাধ্যভাবে ঘাসের ঢগায় আরোহন করার চেষ্টা করছে, উঁচু থেকে আরো উঁচু স্তরে, শিখরে। এটি ততক্ষণ উপরের দিকে উঠতে থাকে যতক্ষণ না এটি নিচে পড়ে যায় ঠিক যেমনি সিসিপাস তার পাথরটি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে পাহাড়ের শীর্ষে চলে যায়, সে সবসময় শীর্ষে উঠার চেষ্টারত! পিঁপড়া এটি কেনো করে? তার কী এমন উপকারীতা আছে এমন কঠোর ও অসম্ভব কার্যক্রমের মাঝে? ভুল প্রশ্ন, যেমনটি দেখা যাচ্ছে এখানে পিঁপড়াটির কোনো জৈবিক উপকারিতা নেই! এটি তার টেরিটরিকে সুস্পষ্ট ভাবে দূরবীন দিয়ে পর্যবেক্ষণ অথবা খাবার অনুসন্ধানের জন্য ঘাসের ঢগায় আরোহন করেনা অথবা সে তার কোনো সম্ভাবনাময় যৌনসঙ্গীকেও অনুসন্ধান করেনা! আসলে তার মস্তিষ্কটিকে একটি ক্ষুদ্র প্যারাসাইট অধিকার করে, যে প্যারাসাইটটি ভেড়া বা গরুর পাকস্থলিতে ভ্রমণ করতে চায়। প্যারাসাইটরা পিঁপড়ার মস্তিষ্ককে তার নিজের বংশবিস্তারের জন্যে ব্যবহার করে, পিঁপড়ার শরীরের ভেতর থেকে তারা গরুর অন্ত্রে প্রবেশ করে! এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, প্যারাসাইট মাছ, ইঁদুর ও মুষিকদেরও সংক্রমিত করে এবং অন্যান্য প্রজাতির প্রাণীদের। এই হাইজ্যাকার তাদের হোস্টকে অনেক সময় সুইসাইডিয়াল করে তোলে, হোস্টের নিজের জন্যে নয়, সম্পূর্ণ অতিথির উপকারের স্বার্থে। এমনকিছু কী আমাদের সাথে ঘটে? আমরা মাঝেমাঝে দেখি মানুষ তার নিজের স্বাস্থ্য ও সন্তান উৎপাদনের সম্ভাবনাকে একপাশে রেখে, তাদের সমগ্র জীবন উৎসর্গ করে তাদের মস্তিষ্কের কোন একটি আইডিয়ার লক্ষ্য পূরণের স্বার্থে যা তাদের মস্তিষ্ক থেকে তৈরি হয়েছে। যেমন, আমরা এক্ষেত্রে মুসলিমদের কথা বলতে পারি, ইসলাম শব্দের অর্থ আত্মসমর্পণ, প্রতিটি মুসলিম এর সাক্ষ্যবহন করে, যেমন প্রতিটি ভালো মুসলিম, পাঁচওয়াক্ত নামাজ পড়ে, আযান দেয়, তারা রমজানের সময় ক্ষুদার্থ থাকে এবং মক্কায় তীর্থ যাত্রা করে অথবা হজ্জ্ব, আর এ সবকিছু করে আল্লাহ ও আল্লাহর মেসেঞ্জার বা হোয়াটসঅ্যাপস মোহাম্মদ নামক একটি আইডিয়ার জন্যে! এমনকি খ্রিষ্ঠান জুইসরা ঠিক একইভাবে তাদের সমস্ত জীবন গড শব্দটি প্রচারের জন্যে উৎসর্গ করে, বিপুল পরিমাণ আত্মত্যাগ করে, তারা সাহসের সাথে দূর্ভোগ পোহায় এবং নিজের জীবনের ঝুৃঁকিগ্রহণ করে, শুধুমাত্র একটি আইডিয়ার জন্যে! একইকাজ করে, শিখ, বুদ্ধ ও হিন্দুরা..! এমনকি এটা ভুলে গেলে চলবেনা যে অনেক সেকুলার ও হিউম্যানিস্টও তাদের মস্তিষ্কের আইডিয়ার জন্যে জীবন বিসর্জন দেয়, ডেমোক্রেসি, প্লেইন ট্রুথ ও জাস্টিসের জন্য। মানব সভ্যতার মৃত্যুর জন্যে এমন অনেক আইডিয়া আছে! আমরা আমাদের কল্যাণ ও সন্তান জন্মদানের ইচ্ছে ছাড়াও, এমনকিছু আইডিয়ার জন্যে নিজের জীবন উৎসর্গ করি, যাতে আমাদের জৈবিক কোনো উপকার নেই , আর ঠিক এ পার্থক্যটির কারণেই প্রাণীজগতে আমরা আলাদা। একটি মা ভাল্লুক অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে এক ফালি খাবারের জন্য প্রতিরোধ গড়ে তুলে , নৃশংসভাবে তার বাচ্ছাদের রক্ষা করে অথবা এমনকি একটি শূন্যগুহার জন্যে। কিন্তু সম্ভবত অধিক সংখ্যক মানুষ খাদ্য, বাসস্থান অথবা সন্তানের পরিবর্তে কোন পবিত্রস্থান অথবা পবিত্র গ্রন্থকে রক্ষা করার জন্যে মৃত্যুবরণ করে। অন্যান্য প্রাণীদের মতো, আমাদের মধ্যে প্রজননের ইচ্ছে রয়েছে যেনো আমরা বংশবিস্তার করতে পারি এবং এ লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য আমরা যে কোনোকিছু করতে পারি। কিন্তু আবার আমাদের পক্ষে জিনগত অপরিহার্যতাকেও অতিক্রম করা সম্ভব। আর ঠিক এ ব্যাপারটাই আমাদের আলাদা করে দিয়েছে যদিও এটি নিজেই একটি বায়োলজিক্যাল ফ্যাক্ট, দৃশ্যমান প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের কোনোকিছু যার প্রাকৃতিক বিজ্ঞানে ব্যাখ্যার প্রয়োজন আছে। কিভাবে শুধুমাত্র হোমো সেপিয়েন্স নামক এ প্রাণীটি তার জিনের নির্দেশনার বাহিরে এসে কাজ করতে পারে! একটি মাকড়সার কোনো মসজিদ বা মন্দির নেই, সে ঈশ্বরের জন্যে যুদ্ধ করেনা, সে কোনো ধর্মগ্রন্থের জন্যে নিজের জীবন উৎসর্গ করেনা, কোন মাকড়সা পোপদের মতো জেনেটিক্যাল সুইসাইড করে না! কারণ সুস্পষ্টভাবে এসবের মাঝে তার জিনগত কোনো উপকার নেই কারণ এগুলোর সাথে মাকড়সার জাল ও জালের মধ্যে আটকে থাকা পোকামাকড় অথবা তাদের সন্তানের কোনো সম্পর্ক নেই! কিন্তু একমাত্র হোমোসেপিয়েন্সরাই তাদের জিন ও শরীরের প্রয়োজনীয়তাকে ছাড়িয়ে যায়, তারা এমন কিছু মানসিক ধারণার জন্যে জীবন দিতে পারে যা আর কোনো প্রাণীর মাঝেই পাওয়া যায়না । একটি শিম্পাঞ্জিকে যদি আপনি বলেন, আমাকে একটি কলা দাও, আমি তোমাকে পরকালে দশটি কলা দেবো, শিম্পাঞ্জি ফিজিক্সের সুত্রর মতো নিষ্কাম ও নিরপেক্ষভাবে আপনার হাত থেকে কলাটি কেড়ে নেবে, খেতে শুরু করবে, দু- মিনিট পর কী ঘটবে তা নিয়ে তার কোনো ভাবনা নেই! আপনি তাকে পরকালের হুরপরীর লোভ দেখিয়ে কোন লাভ হবেনা কারণ এরা শুধু বর্তমানকে জানে, আগামীকালকে জানেনা! কিন্তু হোমো সেপিয়েন্স কেনো এদিক থেকে এক্সট্রা- অর্ডিনারী?
কোনো মানুষই বলবেনা তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী অপেক্ষা তাদের নিজেদের নাতি নাতনীর পরিমাণ বেশি থাকা ছিলো লাভজনক। কিন্তু প্রাণীদের জন্যে এটি ছিলো তাদের গোষ্ঠীর জন্যে চরম কল্যাণকর। কিন্তু তারা এটি ভালোভাবে জানতোনা। কুকুররা কিছুটা ব্যতিক্রম। একটি কুকুর মানুষকে তার ঈশ্বর মনে করে। সে ঈশ্বরের পূজা করে, তার সামনে সমস্ত শরীর অবনত করে শুয়ে পড়ে, লেজ নাড়িয়ে সে তার ঈশ্বরকে সংবর্ধনা জানায়, সবসময় সে সতর্ক থাকে, একটি ক্ষুদ্র গাছের পাতাও ইশ্বরের বাড়ির উঠোনে তার কুকুরের অডিটরি স্নায়ুর অজ্ঞাতে পতিত হয়না, সে লুকানো অস্র অনুসন্ধান করে, ভয়ানক বিস্ফোরক থেকে তার ঈশ্বরকে নিরাপদ রাখে এমনকি অনেক সময় সে ঈশ্বরের জন্যে জীবন দেয়, পুলিশের গুলি খেয়ে অথবা ডাকাত দলের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষে! কিন্তু কেনো?
সে কী আসলেই মানুষকে ভালোবাসে? সে কী আসলে জানে সে মানুষের জন্যে তার শত্রুরপক্ষের সাথে যুদ্ধ করছে? সাম্প্রতিক মলিকিউলার প্রমাণ অনুসারে, কুকুর এসেছে ১৩০,০০০০ বছর পূর্বে বাদামী নেকড়ে থেকে! নেকড়েরা ছিলো খুবই সংবদ্ধ প্রাণী, শিকার ও টিকে থাকার তাগিদে নেকড়েদেরকে সবসময় একে অপরের সাথে দলবদ্ধ ভাবে বাস করতে হতো। নেকড়েরা তাদের আলফা মেল বা দলের নেতাকে অন্ধভাবে অনুসরণ করতো, তারা আলফা পুরুষের সামনে শরীরকে নমনীয় করে উপাসনার ভঙ্গিতে বসে পড়তো, তার নির্দেশনা পেলেই নেকড়েরা শত্রুর মোকাবিলার জন্য ছুটে যেতো, তারা তাদের দলের আলফা পুরুষের প্রতি এতটাই অনুগত ছিলো যে, তাদের নিজেদের পৃথক কোনো বুদ্ধিমত্তাই ছিলো না । এরপর আকষ্মিক নেকড়েদেরকে হোমোসেপিয়েন্সরা পোষ মানাতে শুরু করে। সর্বপ্রথম, যে কুকুরদের মানুষের সাথে দেখা যায় তার নাম Bonn-Oberkassel, এদের সাথে ১৪২০০ বছর পূর্বে মানুষের সাথে দেখা গিয়েছিল। কুকুরকে মানুষ পোষ মানালো ঠিকই কিন্তু তাদের জিনের মধ্যে লাখ লাখ বছর পূর্বের সে জেনেটিক স্মৃতি তখনও রয়ে গেলো, কারণ ১৪২০০ বছরের মতো সংক্ষিপ্ত সময়ে কুকুরের জিনগত কোনো পরিবর্তনই ঘটেনি । তাদের ডিএনএ এখনো অবচেতনে মনে করে যে , তাদের দলনেতা তাদের সামনেই উপস্থিত রয়েছে, তারা মানুষকে তাদের দলের বড় কুকুর মনে করে, কুকুর মনে করে যে মানুষ তাদের দলের আলফা পুরুষ, সবচেয়ে বিশাল ও শক্তিশালী কুকুর! কিন্তু মানুষ ব্যাপারটি বুঝে উঠতে পারে না! মানুষের কাছে মনে হয় কুকুর তাকে ঈশ্বর মনে করছে, তার জন্যেই উপাসনা করছে! মূলত, কুকুর তার দলের শেরা কুকুরের জন্যে কাজ করছে, যার জন্যে কাজ করাটা তাদের টিকে থাকা ও বংশবিস্তারের জন্যে উপযোগী ছিলো! আমরাও কী কুকুরের মতো ভুল করে, আনকনসাসলি ঈশ্বরের উপাসনা করছি? সম্ভবত! কিন্তু আমরা ঈশ্বরের প্রতি ভালোবাসা আসলে ঠিক কিভাবে পেয়েছি? জানতে পড়ুন- আউটগ্রোয়িং গড
আমরা এ আর্টিকেলটি পড়ার শুরুতে কিছু ধারণা নিয়ে শুরু করেছিলাম। সেগুলো ছিলো, একটি ওয়ার্ম প্যারাসাইট নিয়ে। যেটি পিঁপড়ার মস্তিষ্ককে সংক্রমণ করে ঠিক যেমনিভাবে মানুষের মস্তিষ্ককে কিছু আইডিয়া সংক্রমিত করে। আপনি ভাবতে পারেন ওয়ার্ম জীবিত কিন্ত আইডিয়া জীবিত নয়, তারা আমাদের ব্রেনকে সংক্রমিত করেনা, বরং সেগুলি আমাদের মনের ভেতর থেকে তৈরি। উভয়ই গণনা অনুসারে সত্য, তবে এগুলো প্রথমে হাজির করা আপত্তিগুলোর অবজেকশন নয়। আইডিয়া জীবিত নয়, আইডিয়াদের কোনো চোখ নেই, আইডিয়া’ রা দূরবীন দিয়ে মহাকাশ দেখেনা, তারা দেখেনা যে তারা কোথায় যাচ্ছে, তাদের কোনো অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নেই যে, তারা হোস্টের ব্রেনকে পরিচালনা করবে, এমনকি তারা দেখবে। সত্য। কিন্ত ল্যাংসেট ফ্লুক (প্যারাসাইট) , কোনো রকেট সায়েন্টিস্ট নয়, গাজরের চেয়ে এর বেশি বুদ্ধি নেই, সত্যিকার অর্থে এ প্যারাসাইটের কোনো ব্রেনই নেই। কিন্তু সৌভাগ্যবশত এর এমনকিছু ফিচার আছে যা পিঁপড়ার ব্রেনকে প্রভাবিত করে যখন এটি পিঁপড়ার সংস্পর্শে আসে। এই ফিচার বা বৈশিষ্ট্যটি অনেকটা, প্রজাপতির ডানার আই স্পোটের মতো, যেটি মাঝেমাঝে পাখিদের প্রভাবিত করে, এমন কিছু ভাবতে, যে কোনো বড় পেঁচা তার দিকে তাকিয়ে আছে। পাখিটি প্রজাপতির ডানার মাঝে প্রাকৃতিকভাবে অংকিত ভয়ানক চোখগুলো দেখে সেখান থেকে উড়ে পালিয়ে যায়, আর এতে করে প্রজাপতিটি লাভবান হয় শিকারী প্রাণীকে প্রতারিত করে! কিন্তু প্রজাপতির এ ব্যাপারে কোন জ্ঞান নেই, প্রজাপতি জানেনা যে তার পাখায় চোখের মতো দেখতে রঙগুলির জন্যে পাখিটি উড়ে পালিয়ে গেছে, সে শুধু পাখির খাদ্য হওয়া থেকে বেঁচে যায়!

একটি জড় আইডিয়া, যদি এটিকে সঠিকভাবে ডিজাইন করা হয়, অবশ্যই তার মস্তিষ্কের উপর একটি প্রভাব থাকবে, এ জন্যে তার এটা জানা প্রয়োজন নেই যে, সে মস্তিষ্কটির ভেতর কী করছে! একটি আইডিয়া, ল্যাংসেটে র মতোই আমাদের মস্তিষ্কে উপস্থিত হতে পারে এবং এমন একটি অনুভূতি তৈরি করতে পারে যে ঈশ্বরের চোখ সবসময় আমাদের অনুসরণ করছে, আর আমরা এ দুটো চোখকে ভয় পাবো, ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে আমরা মসজিদ, মন্দিরে ছুটে যাবো, এমনকি যে দুটো চোখের সন্তুষ্টির জন্যে প্রয়োজনে নিজের জীবনকেও বিসর্জন দিয়ে দেবো…!ল্যাংসেট ফ্লুটের সাথে ঈশ্বর শব্দটির তুলনা অমিমাংসিত কিন্তু একটি আইডিয়াকে জীবিত আইডিয়া তুলনা করা এটি নতুন কিছু নয়। ঈশ্বর শব্দটি একটি বীজ, যেটি প্রথমে মস্তিষ্কে সংক্রমিত হয়, এরপর এ বীজটি মস্তিষ্কের উপর বেড়ে উঠে, সম্পূর্ণ মস্তিষ্ককে দখল করে, মনে হয়, মানুষকে সে নিজের বিস্তারের জন্যে ব্যবহার করে, এক মস্তিষ্ক থেকে অন্য মস্তিষ্কে!
কিন্তু কিভাবে আইডিয়া তৈরি হয়? এটি হতে পারে একটি রহস্যজনক অনুপ্রেরণা অথবা এটি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক। আইডিয়া মন থেকে মনে ছড়িয়ে যায়, এবং বিভিন্ন ভাষায় ট্রেন্সলেট হয়ে এটি টিকে থাকে, গান, আইকন, স্ট্যাটাস ও সামাজিক আচার অনুষ্ঠান এর ভেতর দিয়ে ছড়িয়ে পড়ে! যখন সেগুলো নতুন কোনো মানুষের সংস্পর্শে আসে তখন সেখানে তারা নতুন একটি আইডিয়ার জন্ম দেয়। এবং সম্ভবত কিছু জংলি আইডিয়া সর্বপ্রথম, শিশুকালে আমাদের মনে সংক্রমিত হয়, যে ধারণাগুলোকে আমরা গৃহপালিত পশুর মতো লালন পালন করেছি, প্রশিক্ষণ দিয়েছি এবং এরপর আমরা নিজেরাই সে ধারণাগুলোর
মাস্টার বা রাখালে পরিণত হয়েছি। আমাদের আজকের এ গৃহপালিত আইডিয়াগুলোর পূর্বসূরি কে? সেগুলো কিভাবে উৎপত্তি লাভ করেছে এবং কেনো? এবং যখন আমাদের পূর্বসূরীরা কোনো একটি ধারণা বিস্তারের উদ্দেশ্যে গ্রহণ করে, শুধুমাত্র আশ্রয় দেয়ার জন্য নয়, লালন পালনের জন্য, কিভাবে এ বিশ্বাসে বিশ্বাস ধারণাগুলো রুপান্তরিত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে? যে ধারণাগুলো এক মস্তিষ্ক থেকে অন্য মস্তিষ্কে ছড়িয়ে যায় সেগুলোকে মিম বলে। যেমন- একটি গানের সম্পূর্ণ লাইন আমাদের মনে থাকেনা, আমরা তার একটি নির্দিষ্ট লাইন মনে রাখতে পারি, অথবা সিম্পোনির নির্দিষ্ট একটি অংশ আমাদের মনে প্রভাব সৃষ্টি করে। একটি সিম্পোনি বা কোন একটি গানের যে অংশটুকু আমাদের ব্রেনে প্রভাব বিস্তার করে সেগুলোই মিম।। আর একটি মিম যখন আপনার মস্তিষ্কে প্রবেশ করে তখন সেটি আপনার মস্তিষ্কের ক্ষমতা হ্রাস করে সম্পূর্ণ গানটি মনে রাখার ক্ষেত্রে! আমাদের জিন যেমন প্রাকৃতিক নির্বাচনের ক্ষুদ্রতম একক ঠিক তেমনি মিমকেও সংস্কৃতির ক্ষুদ্রতম একক বলা হয়ে থাকে। মিম যে সবসময় কোনো একটি গানের লাইন, সিম্পোনির অংশ , কোন একটি আইকন অথবা ট্যাটু হবে তা নয়, একটি মিম কখনো কখনো বিজ্ঞানের মূলনীতিও হতে পারে, যেমন ডারউনের বিবর্তন। বিবর্তনের মূলনীতিগুলো সবার জন্যে একইরকম হলেও এক একজন বিজ্ঞানী এটিকে প্রকাশ করার সময় এক একরকম ভাষা প্রয়োগ করে! কিন্তু তাদের প্রকাশের ভাষা ও পদ্ধতি আলাদা হলেও, মূলনীতির ভেতর একটি সার্বজনীনতা কাজ করে, আর এটাই সেই একক বা মিম যেগুলো একে অপরের সাথে যোগাযোগ করে! মিমের যে অংশগুলো আমাদের ব্রেনকে অনেক বেশি প্রভাবিত করে সেগুলোকে আগ্রাসী বা স্বার্থপর মিম বলা যায়। যদিও আমরা জানি যে একটি গানের লাইন গানটির অন্য লাইনের তুলনায় অনেক বেশি স্বার্থপর বা নিঃস্বার্থপর কোনোটাই নয়, আমরা এটিকে আমাদের মস্তিষ্কে এর প্রভাবের উপর ভিত্তি করে স্বার্থপর বলি। ঠিক তেমনি জিনও স্বার্থপর নিঃস্বার্থপর নয় – এগুলো কথার কথা মাত্র! কিন্তু কিছু কিছু মিম আছে যেগুলো টিকে থাকার জন্যে সত্যিই অনেক বেশি স্বার্থপর আচরণ করে! আমাদের জিন যেমন জিনপুলে অন্য জিন বা এলিলদের সাথে প্রতিযোগিতা করে জিনের সেরকম কোনো এলিল বা জিনপুল এখানে নেই কিন্তু তবুও মিমগুলো একে অপরের সাথে একপ্রকার প্রতিযোগিতা করে! এক্ষেত্রে কম্পিউটার মেমরির উদাহরণ দেয়া যেতে পারে । আমরা জানি যে কম্পিউটার মেমরি অনেক মূল্যবান। কম্পিউটারে মেমরির জন্যে নির্দিষ্ট একটি জায়গা থাকে। আর এ জন্যে আপনার ডাটাগুলো সংরক্ষণ করার সময় সেখানে একপ্রকার প্রতিযোগিতা হয়, আপনি যদি অপ্রয়োজনীয় ডাটাগুলি সেখানে রাখেন তবে প্রয়োজনীয় ডাটাগুলো রাখার জন্যে সেখানে কোনো স্পেস পাবেন না, স্পেসের জন্যে ডাটাগুলো যুদ্ধ করে, তাদের শক্তির পরীক্ষা হয়, যেগুলো গুরুত্বপূর্ণ তারা টিকে থাকে। এক্ষেত্রে যে ইনফরমেশনগুলো আপনার কম্পিউটারের মেমরিতে জায়গা নিতে পেরেছে সে ইনফরমেশনগুলোকেই স্বার্থপর বলা যেতে পারে। মিম সত্যিকার অর্থেই স্বার্থপর, তাই এদেরকে আমরা ভাইরাসের সাথে তুলনা করতে পারি। অনেক সময় এ ভাইরাসগুলো শুধু স্থানের জন্যে নয় , সময়ের জন্যেও যুদ্ধ করে যেমন- রাত আটটার সংবাদের বিরতির সময় বিজ্ঞপ্তি হওয়ার জন্যে। তারা সংবাদপত্রের কলাম বা বইয়ের তাক দখল করার জন্যও যুদ্ধ করে, তারা যুদ্ধ করে অলিম্পিক অথবা ওয়ার্ল্ডকাপে অংশগ্রহণ করার জন্য, তারা যুদ্ধ করে, মেসি অথবা নেইমারের টি- শার্ট দখল করার জন্য। যেমন- কোকাকোলা, নামক মিমটি বিভিন্ন টিভি চ্যানেল, সংবাদপত্র, ওয়েবসাইট ও স্ট্যাডিয়াম দখল করার জন্যে, অন্যান্য মিমদের সাথে প্রতিযোগিতা করছে, বিলবোর্ডে জায়গা দখল করার জন্য প্রতিযোগিতা করছে।। ঈশ্বর নামক ভাইরাসটি এখন ফেসবুক, ইউটিউব, সংবাদমাধ্যম, ওয়েবসাইটে সময় ও জায়গার জন্যে যুদ্ধ করছে, সে বেশিবেশি করে স্থান দখল করতে চাইছে! মাঝেমাঝে এ গড ভাইরাস সাইভারস্পেসে নিজের স্থান নিশ্চিত করার জন্যে প্রতিযোগি ওয়েভসাইটগুলোকে হ্যাক করছে! অনেক সময় এ ভাইরাসগুলো ট্রাম্প অথবা মোদির মতো প্রাইমিনিস্টারদের ব্রেনের জায়গা দখল করার চেষ্টা করে, গড ভাইরাসদের মধ্যে প্রতিযোগিতা হয়।
যেমন- সাম্প্রতিক শেখ হাসিনার মস্তিষ্ককে ইসলামি গড ভাইরাস দখল করে নিয়েছে , ল্যাংসেক ফ্লুক যেমন পিঁপড়ার ব্রেনকে প্রভাবিত করে ঘাসের ঢগায় উঠায়, ঠিক তেমনি ইসলামী গড ভাইরাস আক্রান্ত হয়ে শেখ হাসিনা কোরান তেলাওয়াত করে, তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করে , মসজিদ-মাদরাসাগুলোকে বিশেষ সমর্থন প্রদান করে, এমনকি তার মস্তিষ্কে বিদ্যমান সে গড ভাইরাসের বিপক্ষে যেনো অন্য কেউ কথা বলতে না পারে, সেজন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন তৈরি করে, আমি যে আর্টিকেলটি লিখছি এটি সম্পূর্ণ তার মস্তিষ্কে সংক্রমিত গড ভাইরাসের বিপক্ষে, এ জন্যে শেখ হাসিনা, আমার বিপক্ষে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ব্যবহার করতে পারে, আমাকে জেলে পাঠাতে পারে অথবা আমার বিপক্ষে কোনো ধর্মীয় সংঘঠন কাজ করলে তাদেরকে নিরব সমর্থনও প্রদান করতে পারে! তার মস্তিষ্কে যে ভাইরাসটি সংক্রমিত হয়েছে, এবং জোর করে তার ব্রেনের মেমরি দখল করে রেখেছে, সে ভাইরাসটি এভাবেই তার ব্রেনকে ব্যবহার করে মুক্তচিন্তা ও মুক্তবুদ্ধিচর্চাকারী মানুষদের বিপক্ষে এন্টিবডি তৈরি করবে, যদিও এতে প্রাইমিনিস্টারের কোনো দোষ নেই!
তথ্যসুত্র ( REFERENCE) –
1) Breaking The Spell, Daniel Dennett
2)Selfish Gene , Richard Dawkins