Can't find our books? Click here!

ক্যাফেইনের ক্ষতি নিয়ে নাসার স্টাডি

১৯৮০ সালে নাসা মাকড়সার মস্তিষ্কে ভিন্ন ভিন্ন ড্র্যাগ প্রয়োগ করে দেখেছিলেন ড্র্যাগ তাদের ব্রেনকে কীভাবে অ্যাফেক্ট করে। এ সকল ড্র্যাগের মধ্যে ছিল এলএইচডি , স্পিড, মারিজুয়ানা এবং ক্যাফেইন। গবেষকরা দেখেছিলেন, এ সকল ড্র্যাগ প্রয়োগ করার পর মাকড়সা অস্বাভাবিক উপায়ে ওয়েব তৈরি করতে শুরু করেছিল, আসলে তারা লজিক্যালি তাদের জাল বিস্তার করতেই পারছিল না। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো তাদেরকে যখন ক্যাফেইন দেয়া হয়েছিল তারা মারাত্মক অযৌক্তিক ওয়েব স্পিন করেছিল।

কেন কফি এই কাজটি করে?

কফি হলো একটি পিউরন অ্যালকোলাইড। এটি তার আশেপাশের বৃক্ষদের খুন করার চেষ্টা করে, তাদের গ্রোথ রেট হ্রাস করার মাধ্যমে। কফি তার আশেপাশে অন্য কোনো বৃক্ষকে সহ্য করতে পারে না , সে তাদের সাথে মিনারেল অথবা পানির জন্য প্রতিযোগিতা করে। এছাড়াও ক্যাফেইন কীট পতঙ্গের জন্য ক্ষতিকর। কীটপতঙ্গ যেন গাছের ক্ষতি করতে না পারে সে জন্য বৃক্ষ ক্যাফেইন তৈরি করে। এটাকে বলা হয় ন্যাচারাল পেস্টিসাইড যেটি বিভিন্ন পেস্ট বা কীটপতঙ্গের মস্তিষ্ক প্যারালাইসড করে দিতে পারে। শুধু তাই নয়, ক্যাফেইন অ্যাডিনোসেন ও অ্যাডিনোসেন রিসেপ্টরের চির শত্রু। অ্যাডিনোসিন মানুষের মস্তিষ্কের ওয়েক প্রমোটিং অ্যারিয়াকে বন্ধ করে দেয় যেন আমরা সুন্দরভাবে ঘুমাতে পারি কিন্তু ক্যাফেইন এটাকে ব্লক করে আমাদের মস্তিষ্ককে জাগিয়ে রাখে। ক্যাফেইন বিবর্তিত হয়েছিল মূলত কীট-পতঙ্গ ও অন্যান্য বৃক্ষের বিপক্ষে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য। কিন্তু এটি স্পেসিফিক্যালি মানুষের মস্তিষ্কের ঘুম দূর করার জন্য বিবর্তিত হয়নি আর ক্যাফেইনের জিন জানত না যে তাকে নিয়ে একসময় একটি দুষ্ট অ্যানিমেল বিজনেস করবে। ঠিক তেমনি ধর্ম ও ঈশ্বর বিশ্বাস আমাদের পূর্বসূরিদের মস্তিষ্কে ঈশ্বরের উপাসনা অথবা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য বিবর্তিত হয়নি , এটি বিবর্তিত হয়েছিল স্মাইলডন অথবা ভাইরাস-ব্যাক্টেরিয়া থেকে নিষ্কৃতির একটি বাই-প্রোডাক্ট হিসেবে! কিন্তু আমরা এখন ধর্ম ও ঈশ্বর বিশ্বাস নিয়ে রাজনীতি করছি।

মানুষের ক্ষেত্রে ক্যাফেইন কতটা ক্ষতিকর?

ক্যাফেইনের ক্ষতির দিক এখন পরীক্ষামূলকভাবেই প্রমাণিত। আপনি হয়তো ভাবছেন, এক কাপ কফির মধ্যে যে পরিমাণ ক্যাফেইন থাকে তার প্রভাব আর কতটুকুই? আর এ জন্য ঘুমকে অবদমন করতে আমরা ঠিকই ক্যাফেইন ব্যবহার করি । ঘুমের সময় আমাদের ব্রেনে অ্যাডিনোসেন নামক একপ্রকার কেমিক্যাল তৈরি হয়। একজন ব্যক্তি যত বেশি জেগে থাকবেন তার মস্তিষ্কে ততবেশি অ্যাডিনোসেন পুঞ্জিভূত হতে থাকবে। অ্যাডিনোসেন হলো একটি কেমিক্যাল ব্যারোমিটার যা নির্ণয় করে আপনি সকালে জাগ্রত হওয়ার পর থেকে কতক্ষণ জেগে আছেন। অ্যাডিনোসেন বৃদ্ধির একটি প্রভাব হলো এটি আপনার ঘুমের আকাঙ্খা বাড়িয়ে দেবে। এটাকে স্লিপ প্রেসার বলা হয়। এটি হলো সেকেন্ড ফোর্স যা নির্ণয় করে কখন আপনি ঘুম ঘুম অনুভব করবেন এবং বলবে, আপনার এখন বিছানায় যাওয়া উচিত! যদি আপনি সারারাত জেগে থাকেন এবং এ মুহূর্তে আপনার এ লেখাটি পড়ার সময় ঘুম এসে যায় তবে বুঝবেন এটি আর কিছুই নয় অ্যাডিনোসেন। অ্যাডিনোসেন আপনার মস্তিষ্কের Wake-Promoting এরিয়াকে বন্ধ করে দেয় এবং ঘুমকে প্রমোট করে সে অ্যারিয়ায় উদ্দীপনা সৃষ্টি করে। এ কেমিক্যাল স্লিপ প্রেসারের কারণে, যখন অ্যাডিনোসেন সর্বোচ্চ পুঞ্জিভূত হয় তখন ঘুমের জন্য এক অপ্রতিরোধ্য তাগিদ সৃষ্টি হয়। এ ঘটনাটি অধিকাংশ ব্যক্তির সাথেই ঘটে যারা ১২ থেকে ১৬ ঘন্টা জেগে থাকে। আপনি আর্টিফিশিয়ালি অ্যাডিনোসেন ঘুমের সিগন্যাল মিউট করে দিতে পারেন। এমন একটি কেমিক্যাল ব্যবহার করে যা আপনাকে সতর্ক ও জাগ্রত করে দেবে। আর সেটি হলো এই ক্যাফেইন।

ক্যাফেইন সাইকো একটিভ ওয়ার্ল্ডে বহুল ব্যবহারিত একটি উদ্দীপক, এটি খাবারের সাপ্লিমেন্ট নয়। তেলের পর গ্রহে এ জিনিসটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়। এ ক্যাফেইন সফলতার সঙ্গে অ্যাডিনোসেনের সাথে যুদ্ধ করে। একবার যদি ক্যাফেইন এই রিসিপ্টর দখল করে, যাইহোক, এটি অ্যাডিনোসেনের মতো সেগুলোকে স্টিমুলেট করে না। ক্যাফেইন শুধুমাত্র অ্যাডিনোসেনকে ব্লক করে দেয় এবং খুব কার্যকরীভাবে এ রিসেপ্টরগুলো নিষ্ক্রিয় করে ফেলে, তার কাজ অনেকটা মাস্কের মতো। এটা অনেকটা এমন যে আপনি আপনার কানের ভেতর আঙুল ঢুকিয়ে শব্দের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন। এ রিসেপ্টরগুলো হাইজ্যাক ও দখল করার মাধ্যমে ক্যাফেইন ঘুমের সিগন্যাল ব্লক করে যা সাধারণত অ্যাডিনোসের মাধ্যমে মস্তিষ্কের সাথে যোগাযোগ করে।। আর এভাবে ক্যাফেইন আপনাকে সতর্ক ও জাগ্রত থাকার জন্য প্ররোচিত করে। আপনি যদি সকাল ৭ঃ ৩০ মিনিটে এক কাপ কফি সেবন করেন তবে ক্যাফেইন আপনার মস্তিষ্কের টিস্যুতে ১ঃ৩০ মিনিট পর্যন্ত আবর্তিত হবে। তার মানে ১ঃ৩০ মিনিটের ভেতরও আপনি আপনার ব্রেন থেকে ক্যাফেইন পরিস্কার করতে পারবেন না। সারারাত আপনি ঘুমাতে পারবেন না, ব্রেন নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে ক্যাফেইনের বিপক্ষে যুদ্ধ করে যাবে। অধিকাংশ মানুষই জানে না সামান্য পরিমাণ ক্যাফেইনকে অতিক্রম করতে কি পরিমাণ শক্তির প্রয়োজন! ক্যাফেইন পরিস্কার করার জন্য লিভারের এনজাইম প্রয়োজন (এ এনজাইমটির নাম সাইটোক্রোম P4501A2) । যে এনজাইম সময়ের সাথে আস্তে আস্তে হ্রাস পেতে থাকে।

এটা নির্ভর করে জেনেটিক্সের উপর। কিছুকিছু মানুষের খুবই কার্যকরী এনজাইম রয়েছে যা ক্যাফেইনকে দ্রুত মুছে ফেলতে পারে, যা লিভারকে অনুমোদন দেয় দ্রুত রক্তস্রোত থেকে এটি পরিস্কার করতে ( আমি সম্ভবত তাদের একজন) । এ ধরণের মানুষ ডিনারের সাথে এসপ্রেসো কফি পান করার পরও মধ্যরাতে অত্যন্ত দ্রুত ঘুমায়, তাদের কোনোপ্রকার সমস্যাই হয় না। কিন্তু কিছুকিছু মানুষের ক্যাফেইন ক্লিন করার এনজাইম খুবই ধীরগতি সম্পন্ন। একই পরিমাণ ক্যাফেইন পরিস্কার করতে তার অনেক বেশি সময় প্রয়োজন। সকাল বেলার এক কাপ কফি আপনার ব্রেনে প্রায় সারাদিন থাকে, আর ঐ ব্যক্তি যদি সন্ধ্যায় আবার ক্যাফেইন নেয় তবে তার পক্ষে আর ঘুমানো সম্ভব নাও হতে পারে৷ বয়সের কারণেও ক্যাফেইন ক্লিয়ারেন্স স্পিড কমে যেতে পারে। বৃদ্ধ মানুষদের শরীর থেকে ক্যাফেইন দূর করতে অনেক দীর্ঘ সময় লাগে আর এ জন্য বৃদ্ধ বয়সে ক্যাফেইন আপনার ঘুমে মারাত্মক বিপর্যয় তৈরি করে। এছাড়া “ক্যাফেইন ক্রাশ” বলতে খুবই নোংরা একটা বিপর্যয় আছে। (ভিন্ন ভিন্ন স্লিপ সাইকেলের বিবর্তন কেন হলো?)

আমরা জানি ক্যাফেইন আপনার মস্তিষ্কের অ্যাডিনোসেন ব্লক করে দেয় আর এটি তখনই তৈরি হয় যখন আপনার ব্রেন প্রচুর ক্লান্ত থাকে। আপনি যখন কফি পান করেন, আপনার ব্রেন অ্যাডিনোসেন উৎপাদন করা কিন্তু মোটেও বন্ধ করে দেয় না। আর এ জন্য যখন ক্যাফেইনকে আপনার লিভার এনজাইম একটা সময় মুছে দেয়, তখন অ্যাডিনোসেন বন্যা তৈরি হয়, যা আপনাকে বিশ্রিভাবে ক্লান্ত করে তোলে। আপনার ব্রেন জানেও না যে আপনি যখন ক্যাফেইন নিয়েছেন তখন ক্যাফেইন শুধু অ্যাডিনোসেনের মুখে মাস্ক পরিয়ে দিয়েছে কিন্তু এর প্রোডাকশন বন্ধ করতে পারেনি। এতে করে অ্যাডিনোসেন ফুলে উঠবে ঢেউয়ের মতো। যখন আপনার লিভার ক্যাফেইনের ব্যারিকেড ভেঙে ফেলবে আপনি অত্যন্ত জঘন্য একটি প্রতিক্রিয়া অনুভব করবেন। আপনি কয়েক ঘন্টা আগে ক্যাফেইন নেয়ার পূর্বেও ঘুমের ভাব অনুভব করেছেন। কফি পান করার পর, আপনার অ্যাডিনোসেনের সামনে ক্যাফেইন একটি দেয়াল তুলে দিয়েছিল, কিন্তু দেয়ালের ওপাশে এটি ক্রমবর্ধমানভাবে বেড়েই চলেছিল। যখন লিভার দেয়ালটি এনজাইম দিয়ে ফাটিয়ে দেয়, এবার কফি + এক্সট্রা অ্যাডিনোসেন এ কয়েকঘন্টায় জমে অপেক্ষা করতে থাকে এটি দ্রুত পুঞ্জিভূত হতে থাকে। যখনই রিসিপ্টর থেকে ক্যাফেইনগুলো পরিস্কার হয়ে যায় তখন অ্যাডিনোসেন রিসেপ্টরকে মসৃণ করে তোলার জন্য দ্রুত ছুটে আসে। আর এর ফলে আপনার ঘুমের তাড়না আরও বহুগুণ ট্রিগার হয়। আপনি যদি এবার আবারও ক্যাফেইন নেন, এটি আবার অ্যাডিনোসেনকে আগের স্থলে ফিরিয়ে নেবে, আর এ চক্র চলতেই থাকবে আর একটা সময় এতবেশি অ্যাডিনোসেন যোগ হবে যে আপনি কোনোভাবেই জেগে থাকতে পারবেন না! আর এটি আপনার মস্তিষ্কের উপর কী ধরণের প্রভাব ফেলতে পারে তা অনুমান করার জন্য মাকড়সার উপর নাসার করা এক্সপেরিমেন্টটির উপর আর একবার চোখ রাখুন।।

তথ্যসূত্রঃ

%d bloggers like this: