আমি মিউজিক শুনি। আমার মিউজিক শোনার পেছনে শাব্দিক অর্থ, ভাষা এবং মিনিং কোনোটাই জড়িত নয়। আমি মিউজিক শুনি কারণ আজ থেকে ৪০, ০০০ বছর পূর্বে আমার পূর্বসূরি ক্রোম্যাগনরাও মিউজিক শুনতো। আর্কিওজিস্টরা এর সাপেক্ষে প্রমাণ উপস্থাপন করেছিলেন। আয়ান ক্রস, সিলভিয়া, ডেভিড হুরন দেখিয়েছেন, মিউজিক আমাদের ভাষার অপ্রোয়জনীয় কোনো বাই-প্রোডাক্ট নয় বরং এটি আমাদের মস্তিষ্কের গুরুত্বপূর্ণ ও কেন্দ্রীয় ফাংশন। আধুনিক মানুষের মস্তিষ্ক এসেছে ৫০, ০০০ থেকে ১০০,০০০ বছর পূর্বে। গুহা চিত্র, শৈল্পিক অস্ত্র, ভাস্কর্যের যে আর্কিওলজিক্যাল প্রমাণ আমরা সংগ্রহ করেছি তা আমাদের কাছে এর সাপেক্ষে প্রমাণ উপস্থাপন করে। পৃথিবীর সর্বপ্রথম হাড়ের তৈরি মিউজিক্যাল ইনস্ট্রুমেন্ট বাঁশির বয়স ডেটিং করে জানা যায় ৪০,০০০ বছর। হেলেন ফিশার বলেন, ক্রোম্যাগনরা এ গ্রহে প্রথম মিউজিক প্লে করেছিলো। Read More: ক্রোম্যাগন ইনসেস্ট ও মরালিটি
আমি মিউজিক শুনি কারণ মিউজিক হলো বিভিন্ন ব্যান্ডউইথ ও ওয়েবল্যাংথের ফ্রিকোয়েন্সীর সুসামঞ্জস্যপূর্ণ গাণিতিক উপস্থাপন। এর পেছনে ফিজিক্স আছে। আমি মিউজিক শুনি কারণ আইনস্টাইন মিউজিক শুনতেন। আর মিউজিক বদলে দিয়েছিলো তার মস্তিষ্কের নিউরাল স্ট্রাকচার যা আমরা তার মস্তিষ্কের হিপ্পোক্যাম্পাসে ওমেগা সাইন দেখে জানতে পারি। আইনস্টাইনের ব্রেনে ওমেগা সাইন!
আমার মিউজিক শোনার পেছনে ভাষা জড়িত নয়, আমার মিউজিক শোনার পেছনে জড়িয়ে আছে আজ থেকে ৫৩০,০০০ বছর পূর্বের একটি ফসিল, যেটি ছিলো আমার আদিম পূর্বসূরীর, যার গলায় ছিলো গোড়ার নালের আকৃতির হায়ওয়েড হাড় যেটি আধুনিক মানুষদের সমরূপ। যা দেখে জানা যায় তারা ফিজিক্যালি গান গাইতে সক্ষম ছিলেন। আমার ভাষার উদ্ভব ঘটেছে আনুমানিক ৭০,০০০ বছর পূর্বে কিন্তু মিউজিকের ফিজিক্যাল এবিলিটি তৈরি হয়েছে প্রায় ৫ লাখ বছর পূর্বে। আমার পূর্বসূরীদের ভাষা থেকেও মিউজিকের নিউরোলজিক্যাল প্রবণতা ও ফিজিক্যাল এবিলিটি ৫ লক্ষ ৩০ হাজার বছর বৃদ্ধ! আর এজন্যই সম্ভবত মিউজিকের প্রতি আমাদের ভেতর এত আবেগ, এত অনুভূতি ও ভালোবাসা!

আমরা বিশৃঙ্খল শব্দে বিরক্ত হই কিন্তু মিউজিক শুনলে আমাদের মধ্যে Good Vibes কাজ করে! শিশুরা কথা বলা শেখার পূর্বেই হাসে ও মিউজিকে রেসপন্স করে কারণ হাসির বিবর্তন ঘটেছে আজ থেকে ৩০ মিলিয়ন বছর পূর্বে আর ভাষা এসেছে এই তো মাত্র সেদিন। এজন্য শিশুদের কথা শিখতে হলেও হাসি শিখতে হয়না! ভাষার বিবর্তনের বহু লক্ষ বছর পূর্বেই মিউজিকের নিউরাল সার্কিট বিবর্তিত হয়েছে বলেই শিশুদেরকে মিউজিকের প্রতি প্রতিক্রিয়া শেখাতে হয়না! আপনি বাংলা, উর্দু, আরবি বা ফার্সি যে ভাষায়ই গান, ভাষার সাথে সুরের সম্পর্ক নেই, সুরের সম্পর্ক ভৌত অস্তিত্বের চারটি মৌলিক স্বরে, সুরের সম্পর্ক ফ্রিকোয়েন্সী ও ভাইব্রেশনে, সুরের সম্পর্ক আমাদের নিউরাল স্ট্রাকচারে । আমাদের পূর্বসূরিদের যখন ভাষা ছিলোনা তখন তাদের প্রথম মৌলিক শব্দ ছিলো সম্ভবত “Ugg”! আর নিয়ান্ডারথালরা এটা তৈরি করতে পারতো।
ডারউইন তার The Descent of Man বইতে ভেবেছিলেন , আমাদের ভাষার দক্ষতা গান গাওয়ার মাধ্যমে শুরু হয়েছিল কিনা যে জন্য সঙ্গীত আমাদের আনন্দের কারণ? আমাদের সাম্প্রতিক ডেটা আমাদের বলছে, হ্যাঁ, ভাষা গানের মাধ্যমেই শুরু হয়েছে, সুরের সাথে আমাদের মস্তিষ্কের নিউরাল সার্কিট ভাষার জন্মেরও বহু বছর অতীত থেকে জড়িত। যে জন্য আমরা কারো শব্দে বিগলিত না হলেও সঙ্গীতে বিগলিত হয়ে যাই! আমাদের মধ্যে কিছু কিছু সুর অস্তিত্বের আদিমতম উপলব্ধি জাগিয়ে তোলে।
ডারউইন ১৮৫৯/১৯৫৮ সালে বলেছিলেন, মিউজিক আমাদের সোশ্যাল প্রবণতার সাথে বেঁধে রাখে। ডারউইন লিখেছিলেন (1859/1958 ), গান সহ আমাদের সকল সহজাত প্রবৃত্তি আমাদের সামাজিক বিবর্তনকে নিয়ন্ত্রণ করে। ২০০৬ সালে মিটেন বলেন, সেপিয়েন্স থেকে নিয়ান্ডারথালরা সম্ভবত অনেক বেশি গান গেয়েছে। আয়ান ক্রস ২০০৮ সালে দেখিয়েছেন মিউজিকের প্রতি আমাদের ফ্লুয়িড এক্সপ্রেসন সরাসরি আমাদের আবেগ ও যোগাযোগের সাথে জড়িত। মিউজিক শুনলে আমরা তরল পদার্থের মত সোসাইটির সাথে মিশে যেতে চাই। সমাজের আবেগ আর আমাদের আবেগ, সমাজ ও আমার ইনটেনশন একাকার হয়ে যায় যা আমাদের মুভমেন্ট ও একশন কানেক্ট করার মাধ্যমে হয়তো আমাদের দলবদ্ধ হতে সাহায্য করে। ডারউইন বলেছিলেন (১৮৭২-১৯৯৮) মিউজিক একটি বিভাজিত সম্পদ যা বৈচিত্র্যময় একশনকে একীভূত করে যার মধ্যে সেক্সচুয়াল তাড়নাও জড়িত। মিউজিক আমাদেরকে একে অন্যের সাথে রিদমিক প্যাটার্নে কো-অর্ডিনেট হতে সাহায্য করে বলে ২০০১ সালে একটি গবেষণাপত্র বর্ণনা করে (Sloboda, 1985/2000; Temperley, 2001; Huron, 2006; Cross, 2010) ।
১৯৯৮ সালের একটি গবেষণায় বলা হয়, মিউজিক্যাল অবজেক্ট আমাদের আত্মসম্প্রসারণ, আমরা যা আবিষ্কার করি এটি আমাদের তার থেকেও সম্প্রসারিত করে দেয়, এটি আমাদের প্রকাশভঙ্গিতে প্লাস্টিসিটি ও দীর্ঘকালীন সোশাল বন্ডিং তৈরি করে। এরকম অজস্র সহস্র পেপার আছে যা আমাদের বলছে মিউজিকের সামাজিক উপযোগীতার কথা! How The mind work গ্রন্থে স্টিভেন পিঙ্কার বলেন, মিউজিক আমাদের সমাজকে কাছাকাছি এনে দেয়। এটাই মিউজিকের বিবর্তনীয় ব্যাখ্যা।মিউজিকের সাথে আমাদের মস্তিষ্কের অডিটরি কর্টেক্স জড়িত। এটি মস্তিষ্কের এমন একটি অংশ যা হার্মোনি ও মেলোডিস এনালাইসিস করে। কিছু গবেষণা দেখিয়েছে সেরিব্রেলাম ও প্রি-ফ্রন্টাল কর্টেক্সও মিউজিকে অবদান রাখে! আমাদের প্রি-ফ্রন্টাল কর্টেক্স বিবর্তিত হয়েছে আজ থেকে ২ মিলিয়ন বছর পূর্বে হোমোহেবিয়েলসদের সময়ে! মিউজিক আমাদের মস্তিষ্কে ডোপামিন রিলিজ করে এটি সম্পর্কযুক্ত আমাদের পরিকল্পনা, মনোযোগ, মুভমেন্ট এবং মেমরির সাথে! যারা মিউজিকের বিরুদ্ধে কথা বলে আমি মনে করি, তারা হয়তো অসুস্থ্য অথবা ছিটগ্রস্ত ও উন্মাদ!
তথ্যসূত্রঃ
- The evolution of music and human social capability[ Frontier]
- Our ancestors speak out after 3 million years[ New Scientist]
- When did humans first make music?[ Science Focus]
- Which Came First: Music or Language?[ Psychology Today]
কোনটি আগেঃসুর নাকি ভাষা?/কোনটি আগেঃসুর নাকি ভাষা?