Can't find our books? Click here!
কেন মহাবিশ্ব সৃষ্টিতে প্রথম কারণের দরকার নেই?

কেন মহাবিশ্ব সৃষ্টিতে প্রথম কারণের দরকার নেই?

প্রথম কারণের ধারণা আমাদের বলছে মহাবিশ্ব সময়ের কোনো না কোনো বিন্দুতে শুরু হয়েছিল: প্রথম কারণে বিশ্বাসীরা মনে করেন, মহাবিশ্বের একটি শুরু আছে আর মহাবিশ্বকে শুরু করেছেন একজন ঈশ্বর। যাইহোক, বৈজ্ঞানিক প্রমাণ আমাদের বলছে, মহাবিশ্ব সবসময় কোনো না কোনো আকারে ছিল, এটি কখনো শুরু হয়নি, আর তাই এমন কোনো সুনির্দিষ্ট বিন্দু নেই, যেখান থেকে মহাবিশ্ব শুরু হয়েছিল। এর একটি উল্লেখযোগ্য প্রমাণ হলো, কসমিক মাইক্রোওয়েভ  ব্যাকগ্রাউন্ড রেডিয়েশন। এ অনুজ্জ্বল আলো মহাবিস্ফোরণের অবশিষ্ট্যাংশ হিসেবে সমগ্র মহাবিশ্বে ছড়িয়ে আছে। মহাবিশ্বের সর্বত্র এই বিকিরণ সমানভাবে ছড়িয়ে থাকার অর্থ হলো, মহাবিশ্ব সাদৃশ্যপূর্ণ (homogeneous)ও সকল ডিরেকশনেই তার ভ্যালু সমান (isotropic), যেটা ব্যাখ্যা করা কঠিন হয়ে যেত, যদি মহাবিশ্ব কোনো সুনির্দিষ্ট পয়েন্ট থেকে শুরু হতো। মহাবিশ্ব কোনো সুনির্দিষ্ট  পয়েন্ট থেকে শুরু হয়নি। কসমিক ব্যাকগ্রাউন্ড রেডিয়েশন, যার অন্যতম সাক্ষী। মহাবিশ্বের সর্বত্র সমান হারে রেডিয়েশন ছড়িয়ে থাকার অর্থ হলো, মহাবিশ্ব সৃষ্টির শুরু থেকেই হোমোজেনিয়াস ও আইসোট্রোপিক। যদি মহাবিশ্ব কোনো সুনির্দিষ্ট পয়েন্ট থেকে লঞ্চ করত, তবে আমরা কসমিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ড রেডিয়েশনের সর্বজনীনতা ব্যাখ্যা করতে পারতাম না। এছাড়া দূরবর্তী গ্যালাক্সি ও তাদের লাল বর্ণালী আমাদের বলছে যে, মহাবিশ্ব সম্প্রসারিত হচ্ছে এবং অতীতে মহাবিশ্ব অনেক ক্ষুদ্র ও উত্তপ্ত ছিল, যা অসীম ঘনত্ব ও তাপমাত্রার নেতৃত্ব দিয়েছিল, যার নাম ছিল সিঙ্গুলারিটি। যাইহোক, এটি আমাদের বলে না যে, মহাবিশ্বের স্পেসিফিক কোনো শুরু ছিল কারণ সিঙ্গুলারিটির পূর্বে কী ছিল সেটা আমাদের কাছে অস্পষ্ট।

কোয়ান্টাম ফ্ল্যাকচুয়েশন ও প্রথম কারণের অনুপস্থিতি: কোয়ান্টাম মেকানিক্স আমাদের বাস্তবতার প্রকৃতি সম্পর্কে সম্পূর্ণ নতুন একটি দৃষ্টিকোণ উপহার দেয়। এ থিওরির একটি মাইন্ড-ব্লোয়িং দৃষ্টিকোণ হলো, পারমাণবিক কণিকা আক্ষরিকার্থে কোথাও না থেকে অস্তিত্বশীল হয় এবং তারপর অদৃশ্য হয়ে যায়। এ ঘটনাটিকে বলে “কোয়ান্টাম ফ্ল্যাকচুয়েশন”। এটি কার্য-কারণ সম্পর্কে আমাদের ঐতিহ্যবাহী ধারণাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। এখন প্রশ্ন হলো, যদি ক্ষুদ্রতর কণিকা কোনোপ্রকার সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়া দৃশ্যমান ও অদৃশ্য হতে পারে, তবে কেন সমগ্র মহাবিশ্বের পক্ষে কোনো কারণ ছাড়া সৃষ্টি হওয়া সম্ভব নয়? এমন একটি মহাবিশ্বের কথা চিন্তা করুন, যেটি কোনো গ্র্যান্ড ডিজাইনারের তৈরি নয়, কিন্তু এটি কোয়ান্টাম রিয়েল্মের একটি স্বতস্ফূর্ত প্রকাশ। এর অর্থ হলো এই যে, মহাবিশ্বের কোনো শুরু, শেষ অথবা প্রথম কারণ নেই। আমাদের মহাবিশ্ব অসীম সংখ্যক সম্ভাব্য মহাবিশ্বের মধ্যে একটি, যাদের প্রতিটি উৎপত্তি লাভ করছে কোয়ান্টাম শূন্যতা থেকে। এ ধারণাটি আপনার কাছে অলৌকিক মনে হতে পারে, কিন্তু  এটি আমাদের সাম্প্রতিক বৈজ্ঞানিক প্রমাণ দ্বারা সমর্থিত। কোয়ান্টাম মেকানিক্স আমাদের বলছে যে, উপ-পারমাণবিক কণা সুপারপজিশন নামক একটি দশায় থাকতে পারে, যেখানে তারা অসংখ্য দশায় একইসাথে অবস্থান করে। এর অর্থ হলো, মহাবিশ্ব নিজেও সুপারপজিশনে থাকতে পারে, যেখানে এটি একইসাথে আছে ও নেই!

দ্য বিগব্যাং থিওরি:  মহাবিশ্বের উদ্ভব সম্পর্কে মহাবিস্ফোরণ তত্ত্ব বিস্তৃতভাবে গ্রহণযোগ্য একটি তত্ত্ব। এ থিওরি অনুসারে, মহাবিশ্ব শুরু হয়েছিল ১৩.৭ বিলিয়ন বছর পূর্বে একটি সিঙ্গুলারিটি পয়েন্ট থেকে__ এটি ছিল এমন একটি বিন্দু যা অসীম ঘনত্ব ও তাপমাত্রাসম্পন্ন। সিঙ্গুলারিটি তারপর দ্রুত সম্প্রসারিত ও শীতল হয়েছিল এবং অবশেষে এটি এমন একটি মহাবিশ্ব তৈরি করে, যেখানে আজ আমরা বাস করছি। যদিও মহাবিস্ফোরণ তত্ত্ব সিঙ্গুলারিটির পর কী ঘটেছিল সে ব্যাপারে আমাদের কাছে বিস্তারিত বর্ণনা উপস্থাপন করতে পারে, এটি আমাদের কাছে ব্যাখ্যা করতে পারে না সিঙ্গুলারিটির পূর্বে কী ছিল। অন্যকথায়, কী ট্রিগার হয়েছিল যা সিঙ্গুলারিটি সেট করে? একটি থিওরি বলছে, সিঙ্গুলারিটি ঘটেছে কোয়ান্টাম শূন্যতা থেকে ফ্ল্যাকচুয়েশনের মাধ্যমে। এ তত্ত্বে শূন্যস্থান আসলে সত্যিকারে শূন্য নয়, কিন্তু এটি কাল্পনিক পার্টিকেল দ্বারা পরিপূর্ণ, যেগুলো প্রতিনিয়ত সৃষ্টি ও বিলুপ্ত হচ্ছে। এই কাল্পনিক কণা যখন মিথস্ক্রিয়া করে, এটি একটি ক্ষণস্থায়ী ভারসাম্যহীনতা তৈরি করে, যা ইনফ্লেশনের একটি সংক্ষিপ্ত মুহূর্ত তৈরি করে ও সিঙ্গুলারিটি গঠিত হয়। আর একটি থিওরি বলছে যে, সিঙ্গুলারিটি হলো দুটি উচ্চমাত্রিক বস্তুর সংঘর্ষের ফলাফল যেমন স্ট্রিং থিওরির মেমব্রেন। এ সংঘর্ষ থেকে এনার্জি নিঃস্বরণ হয় যা সিঙ্গুলারিটি গঠন করে এবং মহাবিস্ফোরণ ট্রিগার করে। এটাও সম্ভব হতে পারে যে সিঙ্গুলারিটি খুব সরলভাবে পদার্থবিদ্যার আইনের একটি প্রাকৃতিক প্রভাব। এ তত্ত্ব অনুসারে, সিঙ্গুলারিটির পেছনে কোনো এক্সটারনাল কারণ নেই, মহাবিশ্ব তার ইন্টারনাল রুলস অনুসারে বিবর্তিত হচ্ছে আর সিঙ্গুলারিটি হলো তার ফলাফল

স্পেস ও টাইম একে অন্যের ওপর নির্ভরশীল, তাই প্রথম কারণ অস্তিত্বশীল হতে পারে না: সময় ও স্থান একে অন্যের ওপর নির্ভরশীল। স্থান ও কালকে একে অন্যের থেকে পৃথক করা যায় না। আপনি হয়তো টাইম ডায়ালেশন কনসেপ্টের সাথে পরিচিত। সহজ কথায় বললে টাইম ডায়ালেশন হলো, একজন স্থির পর্যবেক্ষকের তুলনায় একজন গতিশীল পর্যবেক্ষকের সময় ধীর গতিতে চলা। এ ফলাফল ঘটে কারণ যত দ্রুত একটি অবজেক্ট গতিশীল হবে, তার চারপাশের স্পেস-টাইম ফ্র্যাব্রিক ততই বক্র হয়ে যাবে,  আর এতে করে শক্তিশালী গ্রেভিটেশনাল ফিল্ডের উপস্থিতিতে অথবা উচ্চ গতিতে টাইম স্লো হয়ে যায়। এখান থেকে প্রমাণিত হয় যে টাইম ও স্পেস আসলে একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। উদাহরণস্বরূপ, মনে করুন, আপনি দুটি সিনক্রোনাইজড ঘড়ির একটি পৃথিবীতে আর অন্যটি রকেটশিপে রাখলেন। রকেটশিপ পৃথিবীতে ফিরে আসার পূর্বে কিছুক্ষণ সময়ের জন্য উচ্চগতিতে ভ্রমণ করল। পৃথিবীতে ফিরে আসার পর আপনি দেখবেন রকেটশিপের ঘড়ি পৃথিবীর ঘড়ি থেকে ধীর হয়ে গেছে। এর কারণ হল উচ্চমাত্রিক গতিতে রকেটশিপ টাইম ডায়ালেশন এক্সপেরিয়েন্স করেছে। এ ঘটনাটি অসংখ্য পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছিল, তার মধ্যে একটি পরীক্ষা ছিল ১৯৭১ সালের “Hafele-Keating experiment”। কিন্তু  কেন স্থান ও কালের এ সম্পর্ক প্রথম কারণ হিসেবে ঈশ্বরের অস্তিত্বকে ডিভাংক করে? এর উত্তর হলো, প্রতিটি ঘটনার পেছনে একটি কারণ থাকে, আর সে ঘটনার পেছনে আর একটি কারণ থাকে। এভাবে আপনি যদি চলতে থাকেন, তবে আপনি অসীম অতীতে চলে যেতে পারবেন। এখান থেকে প্রমাণিত হয় যে “কারণ” সময়ের পেছনে থাকে আর “ফলাফল” থাকে সময়ের সামনে! সহজ কথায় কার্য-কারণের পক্ষে সময়ের বাহিরে অবস্থান করা সম্ভব নয়। এছাড়া কার্য-কারণ ঘনিষ্ঠভাবে কালের তীর ও থার্মোডায়নামিক্সের সেকেন্ড আইনের সাথে সম্পর্কযুক্ত। থার্মোডায়নামিক্সের সেকেন্ড আইন অনুসারে সময়ের সাথে এনট্রপি অথবা বিশৃঙ্খলা বৃদ্ধি পায়। এর অর্থ হলো, আমরা যদি সময়ের ডিরেকশন রিভার্স করি অথবা সময়ের পেছনে যাই এনট্রপি কমে যাবে। আর এজন্যই আমরা দেখতে পাই কারণ পেছনে আর ফলাফল সামনে থাকে।  আমরা যখন বলি যে প্রথম কারণ স্পেস-টাইমের বাহিরে অবস্থান করে, এর আসলে কোনো অর্থ হয় না, কারণ আমরা তখন এমনকিছুর কথা বলি যা পদার্থবিদ্যার সূত্র সমর্থন করে না। আমরা কজ ও ইফেক্টকে ডিফাইন করি সময় দিয়ে, তাহলে কীভাবে ইকুয়েশন থেকে সময়কে উঠিয়ে দেয়ার পর কোনো আদি কারণ অবস্থান করতে পারে? আসুন, আমরা ধারণাটি আরও মূর্তিমান উপায়ে ব্যাখ্যা করি। একটি বিল্ডিং ছোট ছোট ব্রিক দিয়ে তৈরি। এ ব্রিকগুলো একটি অন্যটির ওপর রাখা। ব্রিক ছাড়া বিল্ডিং অস্তিত্বশীল নয় আর বিল্ডিং ছাড়া ব্রিক অস্তিত্বশীল নয়। একই উপায়ে স্পেস-টাইম আন্তঃনির্ভরশীল, তারা একে অন্যের চেয়ে আলাদা ভাবে অস্তিত্বশীল হতে পারে না। এখন কল্পনা করুন, আমরা ভবনটির অস্তিত্বের কারণ জানতে চাই। আমরা ব্রিকের দিকে তাকাতে পারি এবং তাদের অস্তিত্বের পেছনের উৎসের দিকে অনুসন্ধান করতে পারি। যাইহোক, একসময় আমরা বুঝতে পারব যে আমাদের পদক্ষেপ সীমাবদ্ধ। আমরা যদি প্রতিটি ব্রিকের উৎপত্তিকে ট্র্যাক করি, তারপরও প্রশ্ন থেকে যাবে, প্রথম ব্রিক কোথা থেকে এলো? কারণ আমাদের এই রূপক বিশ্লেষণে, ব্রিক আলাদাভাবে অস্তিত্বশীল নয়। আর তাই আমরা ব্রিক ও ভবনের বাহিরে পৃথক কোনো কারণ বুঝতে পারি না। একটি ত্রিমাত্রিক বস্তুকে যেমন তার ডেপথ ছাড়া আমরা ইমাজিন করতে পারি না, ঠিক তেমনি স্পেস-টাইমকেও আমরা পৃথক করতে পারি না। আর তাই সময়ের পূর্বে প্রথম কারণের অস্তিত্ব ফিজিক্সের আইন দ্বারা অনুমোদিত নয়।

ভ্যাকুয়ামে সময় নেই, তাই মহাবিশ্বে ঈশ্বরও নেই: আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার নিয়ম অনুসারে, সময় আপেক্ষিক। এটি নির্ভর করে পর্যবেক্ষকের গতি ও মাধ্যাকর্ষের ওপর। এর মানে হলো, আপনি মহাবিশ্বে কোথায় অবস্থান করছেন এবং আপনি কত দ্রুতগতিতে চলাচল করছেন সময় নির্ভর করছে তার ওপর, আপনার অবস্থান ও গতির বাহিরে সময়ের অ্যাবসলিউট কোনো অস্তিত্ব নেই। এটি আমাদের দৃঢ়ভাবে বলছে, মহাবিশ্বের বাহিরে সময় অবস্থান করতে পারে না এবং মাধ্যাকর্ষ ও গতিহীন এম্পটিস্পেসে সময় অস্তিত্বহীন। এছাড়া আপেক্ষিকতার তত্ত্ব আমাদের বলছে, স্থান ও কাল আন্তঃসম্পর্কযুক্ত এবং এটি একটি চতুর্মাত্রিক কন্টিনিউয়াম। এর অর্থ হলো, সময় কোনো পৃথক সত্তা নয়, এটি মহাবিশ্বের একটি ওভেন। স্থান-কালের বক্রতা বস্তু ও শক্তির বন্টন দ্বারা প্রভাবিত হয়,  যা স্পেস-টাইমের সে এলাকায় সময়ের প্রবাহকে প্রভাবিত করে। এজন্য সময়ের বাহিরে একটি প্রথম কারণের অস্তিত্ব, যেটি এ মহাবিশ্ব তৈরি করেছে, এটি চ্যালেঞ্জের শিকার হয় কারণ মহাবিশ্বে স্বাধীন ও পরম কোনো সময়ের অস্তিত্বই নেই। সময় মহাবিশ্বের ভৌত বৈশিষ্ট্যের সাথেই আন্তঃসম্পর্কযুক্ত এবং মহাবিশ্ব নিজেই শাশ্বত ও কারণহীন। এ ধারণা মহাবিশ্বের উৎপত্তি ও প্রথম কারণের প্রকৃতি সম্পর্কে আমাদের ঐতিহ্যবাহী দার্শনিক ও ধর্মীয় ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করে।

ডার্ক ম্যাটার ও ডার্ক এনার্জি: ডার্ক ম্যাটার ও ডার্ক এনার্জি মহাবিশ্বের বেশিরভাগ ম্যাস ও এনার্জি তৈরি করেছে, তারপরও আমরা তাদের দেখতে, স্পর্শ করতে ও সরাসরি মিথস্ক্রিয়া করতে পারি না। তারা কোনো আলো নিঃস্বরণ অথবা শোষণ করে না। তাদের অস্তিত্ব সম্পর্কে জানা যায় দৃশ্যমান বস্তুর ওপর তাদের গ্র্যাভিটেশনাল ইফেক্টের ওপর ভিত্তি করে। এ আবিষ্কার আমাদের নির্দেশ করছে যে, মহাবিশ্ব সম্পর্কে আমাদের বোধ অসম্পূর্ণ এবং মহাবিশ্বের প্রকৃতি সম্পর্কে আমাদের আরও গভীরভাবে জানা প্রয়োজন।

মাল্টিভার্স থিওরি ও প্রথম কারণের অস্তিত্বহীনতা: মাল্টিভার্স থিওরি আধুনিক বিশ্বতত্ত্বের একটি চমকপ্রদ কনসেপ্ট যা আমাদের নির্দেশ করছে যে, এখানে সম্ভবত অসীমসংখ্যক প্যারালাল ইউনিভার্স আছে, যাদের প্রত্যেকের আছে অনন্য ভৌত নিয়ম, বৈশিষ্ট্য ও ভিন্ন ভিন্ন ভার্সনের আমরা। এটি আমাদের অস্তিত্বের ঐতিহ্যবাহী প্রকৃতিকে চ্যালেঞ্জ করে, যার মধ্যে একটি স্বতন্ত্র ও সর্বব্যাপী প্রথম কারণের ধারণা অন্তর্ভূক্ত। মহাবিশ্ব সম্পর্কে আমাদের আদিম ধারণা অনুসারে, মহাবিশ্ব একটি সর্বব্যাপী স্বতন্ত্র কারণের ফলাফল যেমন বিগব্যাং। এ দৃষ্টিকোণ অনুসারে, মহাবিশ্ব একটি ইউনিফায়েড ক্রিয়েশন, যেটি স্পেস ও টাইমের একটি সিঙ্গেল পয়েন্ট থেকে শুরু হয়েছিল। যাইহোক, মাল্টিভার্স থিওরি আমাদের নির্দেশ করছে যে, এখানে সম্ভবত অসীমসংখ্যক প্যারালাল ইউনিভার্স আছে, যাদের প্রতিটির আছে নিজস্ব  ভৌত আইন ও বৈশিষ্ট্য।  যার অর্থ হলো অসীম  মাল্টিভার্সের  প্যারালাল ইউনিভার্সগুলোর  ওপর একটি স্বতন্ত্র সর্বব্যাপী কারণ প্রযোজ্য নয়। এ বিষয়টি বোঝার জন্য তাসের ঘরের কথা চিন্তা করুন। কল্পনা করুন,  মহাবিশ্ব হলো একটি তাসের ঘর। যেখানে প্রতিটি কার্ড এক একটি মহাবিশ্বের প্রতিনিধিত্ব করে, যাদের প্রত্যেকের ইউনিক ভৌত আইন ও বৈশিষ্ট্য আছে। মহাবিশ্বের আদিম দৃষ্টিকোণ থেকে তাসের ঘরে কেবল একটি কার্ড আছে যা আমরা যে মহাবিশ্বে আছি সে মহাবিশ্বের প্রতিনিধিত্ব করে। এই কার্ডকে একটি স্বতন্ত্র ও সর্বব্যাপী কারণের ফলাফল হিসেবে দেখা যায়, যা বিশ্বজনীন নিয়মের সেট দ্বারা মহাবিশ্বের সবকিছু তৈরি করেছে। যাইহোক, মাল্টিভার্স থিওরিতে, তাসের ঘরে অসীমসংখ্যক কার্ড আছে, যাদের প্রতিটি ভিন্ন ভিন্ন মহাবিশ্বের প্রতিনিধিত্ব করে। প্রতিটি কার্ডের নিজস্ব ভৌত আইন ও বৈশিষ্ট্য আছে এবং এমন কোনো কার্ড নেই যা স্বতন্ত্র ও সর্বব্যাপী প্রথম কারণকে রিপ্রেজেন্ট করে। এর অর্থ হলো স্বতন্ত্র ও সর্বব্যাপী প্রথম কারণ মাল্টিভার্সের ক্ষেত্রে অ্যাপ্লাই করা যায় না, কারণ তাসের ঘরের প্রতিটি মহাবিশ্বের জন্য অসীম সংখ্যক কারণ ও ব্যাখ্যা আছে। অন্যকথায় মাল্টিভার্স থিওরি আমাদের বলছে যে, মহাবিশ্ব তার সকল প্রকরণ সহকারে একটি জটিল, গতিশীল ও চির পরিবর্তনশীল প্রক্রিয়ার ফলাফল যা স্বতন্ত্র কোনো কারণ ও ব্যাখ্যা দ্বারা সীমাবদ্ধ নয়।

ফিগার: বিস্তারিত জানতে পড়ুন “ডিল্যুশন অব গ্র্যান্ড ডিজাইন”

সিমুল্যাশন রিয়ালিটি প্রথম কারণকে প্রশ্নবিদ্ধ করে: সিমুল্যাশন রিয়ালিটির ধারণা আমাদের বলছে, আমাদের বাস্তবতা আল্টিমেট বাস্তবতা নয়, কিন্তু এটি উচ্চমাত্রিক বুদ্ধিমত্তা ও প্রযুক্তি নির্মিত। এটি প্রথম কারণের অস্তিত্ব সম্পর্কে প্রশ্ন তোলে, যেটি দার্শনিক ও ধর্মীয় ফ্রেমওয়ার্ক থেকে একটি মৌলিক ধারণা। আমরা যদি মনে করি যে মহাবিশ্ব সিমুল্যাশন, তবে প্রথম কারণ সিমুল্যাশন থেকে নিরপেক্ষভাবে অবস্থান করতে পারে না। সিমুল্যাশনের অস্তিত্ব কোনো উন্নত সভ্যতা ও প্রযুক্তি__ যার পক্ষ থেকেই তৈরি হোক না কেন, এটি আমাদের বাস্তবতার প্রথম কারণ। এটি ঈশ্বরের অস্তিত্বের ঐতিহ্যবাহী ধারণাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে, যেখানে মনে করা হয় ঈশ্বর রিয়ালিটির বাহিরে অবস্থান করে যা সৃষ্টির জন্য দায়ী। এছাড়া, মহাবিশ্ব যদি সিমুল্যাশন হয়, এটি আমাদের বলে, ফিজিক্সের আইন ও বাস্তবতার অন্যান্য দৃষ্টিকোণ অপরিহার্যভাবে মহাবিশ্বের সহজাত প্রকৃতি নয়, কিন্তু এটি সিমুলেশনের একটি প্রোগ্রাম। এটি বাস্তবতার প্রকৃতি, মাল্টিপল সিমুল্যাশন অথবা বাস্তবতার বিভিন্ন  স্তরের সম্ভাবনা সম্পর্কেও প্রশ্ন তোলে।

পূর্বের পর্ব- কেন ঈশ্বরের প্রয়োজন নেই?

আরও পড়ুন-

God: The Failed Hypothesis, Book by Victor J. Stenger

Reference Book:

  • Physics and God
  • “A Brief History of Time” by Stephen Hawking
  • “The Grand Design” by Stephen Hawking and Leonard Mlodinow
  • “The Fabric of the Cosmos” by Brian Greene
  • “The Elegant Universe” by Brian Greene
  • “The Hidden Reality” by Brian Greene
  • “Cosmos” by Carl Sagan
  • “Pale Blue Dot” by Carl Sagan
  • “The First Three Minutes” by Steven Weinberg
  • “Big Bang” by Simon Singh
  • “The Black Hole War” by Leonard Susskind
  • “The Inflationary Universe” by Alan Guth
  • “The Edge of Physics” by Anil Ananthaswamy
  • “The Particle at the End of the Universe” by Sean Carroll
  • “The Trouble with Physics” by Lee Smolin
  • “The Quantum Universe” by Brian Cox and Jeff Forshaw
  • “The Trouble with God” by Chris Matheson
  • “God and the New Physics” by Paul Davies
  • “The Language of God” by Francis S. Collins
  • “The Case for a Creator” by Lee Strobel
  • “The Believing Brain” by Michael Shermer
  • “The God Delusion” by Richard Dawkins
  • “The Blind Watchmaker” by Richard Dawkins
  • “God: The Failed Hypothesis” by Victor J. Stenger
  • “Why There Is No God” by Armin Navabi
  • “The End of Faith” by Sam Harris
  • “The Moral Landscape” by Sam Harris
  • “Breaking the Spell” by Daniel C. Dennett
  • “The Magic of Reality” by Richard Dawkins
  • “The Quantum and the Lotus” by Matthieu Ricard and Trinh Xuan Thuan
  • “The Tao of Physics” by Fritjof Capra
  • “Quantum Physics and Theology” by John Polkinghorne
  • “The Language of Science and Faith” by Karl W. Giberson and Francis S. Collins
  • “The Big Questions in Science and Religion” by Keith Ward
  • “The Science of God” by Gerald L. Schroeder
  • “The Hidden Face of God” by Gerald L. Schroeder
  • “The Physics of Christianity” by Frank J. Tipler
  • “The Universe in a Nutshell” by Stephen Hawking
  • “Climbing Mount Improbable” by Richard Dawkins
  • “Faith vs. Fact” by Jerry A. Coyne
  • “The Cosmic Landscape” by Leonard Susskind
  • “The God Particle” by Leon M. Lederman and Dick Teresi
  • “The Endless Universe” by Paul J. Steinhardt and Neil Turok
  • “The Selfish Gene” by Richard Dawkins
  • “The Varieties of Scientific Experience” by Carl Sagan
  • “The Accidental Universe” by Alan Lightman
  • “The Science of Interstellar” by Kip Thorne
  • “The Quantum World” by Kenneth W. Ford
  • “A Universe from Nothing” by Lawrence M. Krauss
  • “The Big Picture” by Sean Carroll
  • “The Order of Time” by Carlo Rovelli
  • “The Hidden Reality” by Bernard Carr
  • “The God Problem” by Howard Bloom
  • “Why Science Does Not Disprove God” by Amir D. Aczel
  • “The God Argument” by A.C. Grayling
  • “The Belief Instinct” by Jesse Bering
  • “The Soul of Science” by Nancy Pearcey and Charles B. Thaxton
  • “Einstein’s God” by Krista Tippett
  • “The Universe Story” by Brian Swimme and Thomas Berry
  • “The Sacred Depths of Nature” by Ursula Goodenough
  • “The Physics of God” by Joseph Selbie and Paramahansa Yogananda
  • “The Emperor’s New Mind” by Roger Penrose
  • “Shadows of the Mind” by Roger Penrose
  • “The Conscious Mind” by David Chalmers
  • “The Feeling of What Happens” by Antonio Damasio
  • “Self Comes to Mind” by Antonio Damasio
  • “Consciousness Explained” by Daniel C. Dennett
  • “The Astonishing Hypothesis” by Francis Crick
  • “The Ego Tunnel” by Thomas Metzinger
  • “The Quantum Brain” by Jeffrey Satinover
  • “The Physics of Angels” by Rupert Sheldrake and Matthew Fox
  • “Biophysics of Consciousness” by Fritz-Albert Popp and Ulrich Warnke
  • “Consciousness: Confessions of a Romantic Reductionist” by Christof Koch
  • “The Hidden Spring” by Mark Solms
  • “Consciousness and the Brain” by Stanislas Dehaene
  • “The Quantum Enigma” by Bruce Rosenblum and Fred Kuttner
  • “How to Create a Mind” by Ray Kurzweil
  • “Mind and Cosmos” by Thomas Nagel
  • “The Quantum Handshake” by John G. Cramer
  • “Consciousness and the Universe” by Roger S. Jones
  • “The Neural Basis of Free Will” by Peter Tse
  • “The Mind’s I” edited by Douglas R. Hofstadter and Daniel C. Dennett
  • “The Quest for Consciousness” by Christof Koch
  • “The Conscious Universe” by Menas Kafatos and Robert Nadeau
  • “The Quantum Self” by Danah Zohar
  • “The End of Materialism” by Charles T. Tart
  • “Biocentrism” by Robert Lanza and Bob Berman
  • “Mind and the Double Brain” by William R. Klemm
  • “The Conscious Brain” by Jesse J. Prinz
  • “Consciousness and the Existence of God” by J.P. Moreland
  • “The Quantum Mind and Healing” by Arnold Mindell
  • “The Neurology of Consciousness” by Steven Laureys and Olivia Gosseries
  • “Consciousness: Confessions of a Romantic Reductionist” by Christof Koch
  • “The Feeling of What Happens” by Antonio Damasio
  • “Self Comes to Mind” by Antonio Damasio
  • “The Tell-Tale Brain” by V.S. Ramachandran
  • “The Conscious Brain” by Jesse J. Prinz
  • “The Quest for Consciousness” by Christof Koch
  • “The Tell-Tale Brain” by V.S. Ramachandran
  • “The Neurology of Consciousness” edited by Calvin D. Fuller and Almut Engelhard

Consciousness and Evolution:

  • “The Ego Tunnel” by Thomas Metzinger
  • “The Ravenous Brain” by Daniel Bor
  • “The Noisy Brain” by Edmund T. Rolls
  • “The Neural Basis of Free Will” by Peter Tse
  • “Out of Our Heads” by Alva Noë
  • “Neuroscience of Consciousness” edited by Anil Seth
  • “The Origin of Consciousness in the Breakdown of the Bicameral Mind” by Julian Jaynes
  • “The Feeling Brain” by Gioia P. Panzarella
  • “Zen and the Brain” by James H. Austin
  • “How Emotions Are Made” by Lisa Feldman Barrett
  • “Being You: A New Science of Consciousness.”
  • “On the Origin of Species” by Charles Darwin
  • “The Selfish Gene” by Richard Dawkins
  • “The Blind Watchmaker” by Richard Dawkins
  • “The Greatest Show on Earth” by Richard Dawkins
  • “Why Evolution Is True” by Jerry A. Coyne
  • “The Extended Phenotype” by Richard Dawkins
  • “The Ancestor’s Tale” by Richard Dawkins
  • “Darwin’s Dangerous Idea” by Daniel C. Dennett
  • “Your Inner Fish” by Neil Shubin
  • “The Third Chimpanzee” by Jared Diamond
  • “The Making of the Fittest” by Sean B. Carroll
  • “The Beak of the Finch” by Jonathan Weiner
  • “Endless Forms Most Beautiful” by Sean B. Carroll
  • “The Red Queen” by Matt Ridley
  • “Wonderful Life” by Stephen Jay Gould
  • “The Tangled Bank” by Carl Zimmer
  • “The Structure of Evolutionary Theory” by Stephen Jay Gould
  • “The Language of God” by Francis S. Collins
  • “The Evolution of Everything” by Matt Ridley
  • “The Song of the Dodo” by David Quammen
  • “The Origin and Evolution of Birds” by Alan Feduccia
  • “Improbable Destinies” by Jonathan B. Losos
  • “The Beak of the Finch” by Jonathan Weiner
  • “Evolution: What the Fossils Say and Why It Matters” by Donald R. Prothero
  • “Evolutionary Psychology: The New Science of the Mind” by David M. Buss
  • “Evolutionary Biology” by Douglas J. Futuyma
  • “Evolution: The Triumph of an Idea” by Carl Zimmer
  • “Evolution: A View from the 21st Century” by James A. Shapiro
  • “The Theory That Changed Everything” by Philip Lieberman
  • “Evolution and Belief” by Robert J. Asher