Can't find our books? Click here!

কেনো আমরা ভুলে যাই?

পনার কি মনে হয় অজস্র স্মৃতি মনে রাখাটা ভালো মস্তিষ্কের প্রমাণ? অনেকেই তাই মনে করেন! তারা ভাবেন, যদি আমরা আমাদের অতীতের স্মৃতিগুলো খুব ভালোভাবে মনে রাখতে পারতাম তবে হয়তো সুপারহিউম্যান হয়ে উঠতাম! অতীতের স্মৃতি ভুলে যাওয়ার জন্য আমি এখনো বিখ্যাত , যেনো কোনোকিছুই মস্তিষ্ক ধরে রাখতে পারেনা। যখন এক্সামের সময় উপস্থিত হতো আমার এই খারাপ মেমরি আমাকে ব্যাপক যন্ত্রণা দিতো! আমি কখনো অবিকল কোনো তথ্য পরীক্ষার খাতায় উপস্থাপন করতে পারিনি। এখনো মানুষের প্রতিভা দেখে আমি ভীতস্বন্ত্রস্ত হয়ে উঠি ! তারা কত কিছুই না মনে রাখে ! আর্জেন্টিনার লেখক, জর্জ লুইস বোর্হেস তার “Funes The Memorious” নামক বিখ্যাত একটি ছোট গল্পে ফিউনস নামক একজন ব্যক্তির জীবন কাহিনি উপস্থাপন করেন যার ছিলো অসাধারণ মাত্রার স্মৃতিশক্তি।

Funes The Memorious I | The Dots

আমরা যখন কোনো একটি টেবিলের দিকে তাকাই তখন আমরা সেখানে হয়তো দেখি এক গ্লাস পানি, একটি ল্যাপটপ এবং কিছু আঙুর। কিন্তু ফিউনস যখন টেবিলটির দিকে তাকাতেন তখন তিনি সেখানে আরো অনেক কিছুই দেখতে পেতেন, তিনি দেখতে পেতেন টেবিলের উপর একজন শিশু বসে আছে, সে এদিকওদিক ছোটাছুটি করছে, আকস্মিক সে চিৎকার  করে কেঁদে উঠেছে, সে দেখতো সেখানে আসলে কোন টেবিল নেই, এটা একটি খালি ফ্লোর, যেখানে এক গাদা বই পড়ে আছে, যেগুলোতে তেলাপোকা ঘুরে বেড়ায় । সে তার সমস্ত স্বপ্নকে পূনর্গঠন করতে পারে। কোনো স্বপ্নের স্মৃতিই তার মস্তিষ্ক ভুলতে সক্ষম ছিলো না, তার সমস্ত জীবনই ছিলো অর্ধেক স্বপ্ন। তিনি গতকাল কি ঘটেছিলো সম্পূর্ণ দিনটিকে পুনরায় পুনর্গঠন করতে পারতেন, তার মধ্যে কোনো হেজিটেশন কাজ করেনা কিন্তু সমস্যা হলো প্রতিটি পূনর্গঠনের জন্য তার সমস্ত দিনই চলে যেতো। আপনার কাছে গল্পটি শুনে হয়তো মনে হচ্ছে, আরেহ, এটা তো “সুপারপাওয়ার”, সে হয়তো ” সুপারহিরো”। কিন্তু তার এই মহাক্ষমতা রেডিও-একটিভ স্পাইডারের ডানার আঘাতে তৈরি হয়নি অথবা তার এ স্মৃতির পেছনে সায়েন্স ফিকশনের গামা রশ্মিরও কোনো ভূমিকা ছিলো না। তার এ অসাধারণ স্মৃতিশক্তি তৈরি হয়েছিল যখন তিনি ঘোড়ার পিঠ থেকে আকস্মিক পড়ে যান এবং মাথা আঘাত প্রাপ্ত হয়।

কিন্ত তখন এ গল্পটি কেউই বিশ্বাস করতে পারেনি, অনেকেই মনে করেছিলো এটা সম্পূর্ণ ফ্যান্টাসি। ২০০৬ সালে UC IRVINE এবং ইউনিভার্সিটি অব সাউথার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার এলিজাবেথ পার্কার, ল্যারি চাহিল এবং জেমস ম্যাকগুথ অসাধারণ একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন একজন পেশেন্টের উপর স্টাডি করে, সে পেশেন্টের নামকরণ করেছিলেন তারা AJ। এ ব্যক্তিটি ছিলো পুরোপুরিভাবে গল্পের ফিউনের মতোই। সে তার সকল অভিজ্ঞতাই মনে রাখতে পারতো এবং সকল ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিস্তারিত সহকারে, কখন সে খেয়েছে, কখন সমুদ্র দেখতে গিয়েছে, সমুদ্র দেখার সময় আটটা দশ মিনিটে কি হয়েছিলো, এর পরের সেকেন্ডে কি হয়েছিল, তার পরের সেকেন্ডে কি হয়েছিল, এভাবে সে প্রতিটি দিনের প্রতিটি ঘন্টা, প্রতিটি মিনিট ও সেকেন্ডের ভেতর প্রবেশ করে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র সকল মেমরি বের করে নিয়ে আসতে পারতো। তার শুধু একটাই অক্ষমতা ছিলো যে, সে তার ব্রেনের ভেতর মাল্টি থাউজেন্ড সেকেন্ড ও মিনিট নিয়ে ঘুরে বেড়াতো, ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ঘটনার একটি ক্যাম্পাস ছিলো তার সম্পূর্ণ মস্তিষ্ক কিন্তু সে কোনোকিছু ভুলতে পারতোনা, তার ব্রেন- এর ভুলে যাওয়ার সাথে সম্পৃক্ত ফরগেটিং সিস্টেম ডি- একটিভেট হয়ে গিয়েছিল আর এ জন্য তার সম্পূর্ণ ব্রেনটাই ছিলো অজস্র বিলিয়ন ঘটনা, যে ঘটনাগুলো থেকে সে নিজেকে কোনোভাবেই বের করতে পারতোনা যে জন্য সে বাস্তবজগতের কোনো স্পেসিফিক ঘটনা নিয়ে সঠিকভাবে কাজ করতে পারতোনা, স্পেসিফিকেশন করার সক্ষমতা তার মধ্যে সম্পূর্ণ বিকল হয়ে গিয়েছিল।

ফিউনস যদি আজ থেকে ৩.৫ মিলিয়ন বছর পূর্বের অস্ট্রোলোপিথ হতো তবে সে সিংহের সম্মুখে পড়ে নির্ঘাত মারা পড়তো, এত কোটি টন তথ্য মাথায় নিয়ে তো আর ইনস্ট্যান্ট কোন সিদ্ধান্ত নেয়া যায় না।

ব্যাপারটা এমন যে, সে তার সামনে একটি আপেল দেখছে কিন্তু একইসাথে একইস্থানে সে অতীতের আরো কয়েকশত ঘটনা স্মরণ করছে যার কারণে সে সঠিকভাবে বুঝতে পারতোনা যে এটা কি এখনকার আপেল নাকি এক বছর পূর্বের , সে মূলত ঘটনাগুলোকে একসাথে মিশিয়ে ফেলতো যা ছিল তার জন্য জঘন্য রকমের একটি উপলব্ধি। মস্তিষ্কের এই কন্ডিশনটিকে বলা হয় হাইপারথাইমেসিয়া অথবা Highly Superior Autobiographical Memory অথচ দেখেন, আমাদের মধ্যে অধিকাংশই আছেন যারা একটি চাবি হারিয়ে গেলেও খুঁজে পাইনা। এমন একটা পরিস্থিতি যেনো ফোর্থ ডায়মেনশন থেকে কোন সত্ত্বা এসে আমার চাবিটা চুরি করে নিয়ে গেছে! আমার সাথে ছেলেখেলা করছে! খুবই বিরক্তিকরভাবে আমি এখনো আমার চোখের সামনে রাখা সেলফোনটিকেও সারা ঘরে খুঁজে বেড়াই! আর অথচ AJ নামক লোকটির কি দুর্দান্ত স্মৃতিশক্তি! আমাদের মধ্যে অনেকে বলবেন, যদি কম্পিউটারের মধ্যে এত অজস্র মেমরি রাখা যায় তবে আমাদের মস্তিষ্কে কেনো রাখা যাবেনা! কিন্তু প্রশ্ন হলো যদি তাই হয়, তবে কেনো আমাদের সবার মস্তিষ্ক তার মতো করে বিবর্তিত হয়নি? কেনো আমরা অতীতকে ভুলে যাই? কেনো আমরা কোনো ঘটনার বিস্তারিত মনে রাখতে পারিনা?

এর উত্তর হলো, আমাদের মস্তিষ্কটা আসলে কোনো কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার ডিজাইন করেনি। আমাদের মস্তিষ্ক বিবর্তিত হয়েছে স্পেসিফিক প্রবলেম সমাধান করার জন্য। আমরা যদি মিলিয়ন মিলিয়ন টন তথ্য মাথার ভেতর নিয়ে বসে থাকি তবে আমরা সে কাজটি করতে পারতাম না। ফিউনসের নিজের ভাষ্যেঃ আমি এত বিপুল পরিমাণ তথ্য আমার মস্তিষ্কের ভেতর রেখেছি যা সম্পূর্ণ মানব সভ্যতার সামগ্রিক তথ্যের সমান, আমার স্বপ্নগুলো হলো সে ব্যক্তির মতো যে এ মুহূর্তে জাগ্রত। কিন্তু পরে সে খুবই নীরস কন্ঠে বলে, “My Memory, Sir, is like a Garbage Heap”! AJ- এর অভিজ্ঞতাও আমাদের বলে, তার এই সুপার পাওয়ার সত্যিকার অর্থে সুপার না। সে বলে, My entire life Through my head everyday and it drives me Crazy!

2013 সালে ন্যাশনাল পাবলিক রেডিও জানায়, তারা প্রায় ৫৫ জন হাইপারথাইমেসিক ব্যক্তি খুঁজে পেয়েছেন যারা প্রায়শই ডিপ্রেসনে থাকে। স্টিভেন স্লোম্যান বলেন, সবকিছু স্মরণ করতে পারার ক্ষমতা আসলে মহান কিছু নয়, এটা আমরা যদি বুঝতে চাই তবে আমাদের প্রথমে বুঝতে হবে কেনো আমরা চিন্তা করি! এ পর্যন্ত এসেই আমার থেমে যাওয়া উচিত ছিল। কারণ লেখার আকার অনেকটাই বড় হয়ে গেছে কিন্তু পরে যেহেতু সময় পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম, তাই জন্য আমি, এ বিষয়টি সংক্ষেপে পরিস্কার করার চেষ্টা করছি।

ভালো ব্রেন কোনটি?

সকল প্রাণীর মস্তিষ্ক আছে। নিউরন সেল প্রাণীদের অনেক প্রাচীন একটি অভিযোজন যা অন্যান্য অর্গানিজমেরও আছে। এমনকি যে সকল প্রাণীর সম্পূর্ণ ব্রেন স্ট্রাকচার নেই, তাদেরও নার্ভাস সিস্টেম আছে, তাদের মস্তিষ্কের নিউরাল নেটওয়ার্ক ইনফরমেশন প্রসেস করার জন্য একসাথে কাজ করে। বৃক্ষের ব্রেন নেই, তাদের এমন কোনো সেল নেই যার মাধ্যমে তারা ইনফরমেশন প্রসেস করতে পারে। বৃক্ষ ও প্রাণীর মধ্যে অনেক তারতম্য আছে। বৃক্ষরাও দুর্দান্তভাবে পরিবেশকে রেসপন্স করতে পারে! প্যারিস জ্যাপোনিকা নামক এক বৃক্ষ আছে যে বৃক্ষটির জিনোম মানুষের চেয়ে ৫০ গুণ বড় কিন্তু তারা জটিল কোনো কাজ করতে পারেনা। আর এ জন্য গাছ কাটা বা তার কোনো ফুল ছিড়ে ফেলা এত সহজ। কিছু বৃক্ষ সূর্যের দিকে উদীয়মান হয়, কিছু বৃক্ষ নিজেকে সমর্থন দেয়ার জন্য অন্যকিছুকে আকড়ে ধরে এবং এমন অনেক বৃক্ষ আছে স্পর্শ করলে পিছিয়ে আসে। প্রাণীদের মতো দেখতে একটি বৃক্ষ আছে যার নাম ভিনাস ফ্লাইট্র‍্যাপ। ভিনাস ফ্লাইট্র‍্যাপ এমন এক মাটিতে বিবর্তিত হয় যেখানে বিশেষ কিছু পুষ্টির ঘাটতি আছে যে জন্য তারা সেই পুষ্টি অর্জনের জন্য কীট পতঙ্গ শিকার করে। তাদের মধ্যে প্রাণীদের শিকার করার জন্য, ঝিনুকের মতো একটি মুখের বিবর্তন ঘটেছে, যে মুখটি যখন “হা” হয় তখন নেক্টার সংগ্রহ করার জন্য পতঙ্গরা উড়ে আসে, আর ঠিক তখনই ভিনাস ফ্লাই তার মুখটি বন্ধ করে দেয়! এ মুখটি তখনই বন্ধ হয় যখন ঝিনুকের মতো দেখতে দুটি ঠোঁটের পাতা ট্রিগার হয়। এর ফলে ম্যাকানিকাল ও কেমিক্যাল রি-একশনের একটি পরম্পরা সংঘটিত হয় যার ফলে লোবটি বন্ধ হয়ে যায় এবং বৃক্ষরা ডাইজেস্টিব এনজাইম নিঃস্বরণ করে।

 

মাংসাশী উদ্ভিদ ভেনাস - banglanews24.com

 

কিন্তু তাদের এ মেকানিক্যাল প্রসেসে কিছু ত্রুটি আছে। যেমন ধরুন, যদি কোন মাটির টুকরা অথবা বৃষ্টির ফোটাও তাদের মুখে পড়ে, পাতাগুলো স্টিমুলেট হয় এবং তারা মুখ বন্ধ করে ফেলে। এ পদ্ধতিতে তাদেরকে খুব সহযজেই বিভ্রান্ত করা যায়। আপনি ভেনাস ফ্লাই ট্র‍্যাপকেও ইনফরমেশন প্রসেসিং সিস্টেম হিসেবে চিন্তা করতে পারেন। পরিবেশ থেকে থেকে যে উদ্দীপনা আসে সেটি সিগনালে পরিণত হয়ে যায় যে সিগনালের মধ্য দিয়ে তারা বুঝতে পারে কে তার কাছে অথবা দূরে। যদিও এ সিগনাল মোটামুটি জটিল একটা মেকানিক্যাল প্রসেসে কাজ করে। লক্ষ্য করুন, ইনফরমেশন প্রসেসিং বৃক্ষের নিজের মেকানিক্সের ভেতরই সংঘটিত হয়। এ ম্যাকানিজম রি-এরেঞ্জ বা চেঞ্জ করে ইনফরমেশনকে ভিন্নভাবে প্রসেস করা অসম্ভব। ভেনাস ফ্লাই ট্র‍্যাপ বিবর্তিত হয়েছে এমনকিছু নিয়ম দিয়ে যা শুধু কাছের জিনিসকেই সনাক্ত করতে পারে। বিবর্তন এটাকে আর জটিল করতে পারেনি। আমরা আগেই বলেছি প্রায় সব প্রাণীরই মস্তিষ্ক আছে। এর মধ্যে ব্যতিক্রম হলো সী স্পঞ্জ। এটা কাকতালীয় নয় যে এ প্রাণীটি কোন কাজ করতে পারেনা। সে এক জায়গায় স্থির হয়ে বসে থাকে। তার মধ্যে একটি মেকানিজম আছে যার মাধ্যমে সে সমুদ্রের পানি থেকে পুষ্টি সংগ্রহ এবং আবর্জনা বহিস্কার করতে পারে। এটা আসলে খুব চমৎকার কোন জীবন নয়। সী স্পঞ্জ এমন একটি প্রাণী যার কোন মন নেই, যে শুধু খায় আর বর্জ্য ত্যাগ করে! যত দ্রুত প্রাণীদের নিউরন সেল ও নার্ভাস সিস্টেম উন্নত হয়, তাদের কর্মের জটিলতা ততই বৃদ্ধি পেতে থাকে। এটি ঘটার কারণ হলো নিউরন একটি ফ্লেক্সিবল সিস্টেমের বিল্ডিং ব্লক যা বিবর্তন ব্যবহার করে, অধিক থেকে অধিকতর ইনফরমেশন প্রসেসিং- এলগোরিদম হিসেবে। জেলিফিশের খুব সাধারণ একটি নার্ভাস সিস্টেম আছে কিন্তু এর কোনো রিয়েল ব্রেন নেই। জেলিফিশের মাত্র ৮০০ টি নিউরন কিন্তু ভেনাস ফ্লাইট্র‍্যাপ থেকে তার কর্ম কান্ড অনেক বেশি জটিল। ব্রেন সাইজ যত বড় হতে থাকে, আকস্মিকই যাদু সংঘটিত হয়।

 

Most Unusual Sea Sponge Facts - They're Heartless, Literally! - Science  Struck

 

যে সকল প্রাণীর হাজার হাজার নিউরন আমরা তাদের মধ্যে জটিল কর্মকান্ড দেখতে পাই, উড্ডয়ন ও চলনশক্তির মতো। মিলিয়ন মিলিয়ন নিউরন তৈরি হলে আমরা দেখতে পাই ইদুরের মতো প্রাণী যারা ধাধাঁ সমাধান করতে পারে এবং তাদের তরুণদের জন্য বাসা তৈরি করতে পারে। বিলিয়ন নিউরন তৈরি হলে আমরা মানুষের মতো প্রাণী দেখতে পাই যারা সিম্ফনি ও স্পেসশিপ তৈরি করতে জানে।

এবার আপনাদের আটলান্টিক হর্সশুদের গল্প বলবো। আমরা যদি এদের ব্রেন সম্পর্কে জানতে পারি তবে আমরা বুঝতে পারবো আমাদের মস্তিষ্কের অত্যন্ত গুরুতর একটি বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে। এদের বৈজ্ঞানিক নাম “Limulus Polyphemus“। এ কাঁকড়ারা সারা বছর সমুদ্রে বাস করে, আপনি নিউ ইংল্যান্ডের সৈকতে গেলে দেখতে পাবেন, যখন চাঁদ উঠে তখন এরা দলবদ্ধ হয়ে সৈকতে উঠে আসে হাজার হাজার এবং একে অন্যের সাথে মেটিং করে। স্বেচ্চাসেবকরা হিসেব করে দেখেছেন এক রাতে ১৫৭,০১৬” টি কাকড়া পরস্পর মিলিত হয়। হর্সশু ক্রেবসরা এ কাজটি আজ থেকে ৪৫০ মিলিয়ন বছর পূর্ব থেকেই করে আসছে, এমনকি তারা ডায়নোসরদের থেকেও আরো অনেক প্রাচীন। প্রশ্ন হল, এত দীর্ঘকাল ঠিক কোনো বৈশিষ্ট্যটি তাদের টিকে থাকতে সাহায্য করেছে? কেনো ডায়নোসর বিলুপ্ত হয়ে গেছে অথচ নিছক এই কাকড়াগুলো সফলতার সাথেই এখনো টিকে আছে? তাদের মস্তিষ্ক ঠিক কিভাবে তৈরি যা তাদের এত মিলিয়ন বছরেও একটা আঁছড় কাটতে পারেনি? এ রহস্য উন্মোচন করেছিলেন হালদান হার্টলাইন যার জন্য তিনি নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন ১৯৬৭ সালে। মাঝেমাঝে, অত্যন্ত তুচ্ছ একটি ব্যাপার উল্লেখযোগ্য বৈজ্ঞানিক বিপ্লব ঘটিয়ে দিতে পারে। হার্টলাইন ইউনিভার্সিটি অব পেনিসিলভানিয়ায় কাজ করতেন যা ইস্টার্ন সিবোর্ড থেকে খুব একটা দূরে ছিলোনা। আর এ জন্য মে ও জুনে পূর্ণচন্দ্রের সময় তার পক্ষে সৈকতে যাওয়া কঠিন কিছু ছিলোনা, তিনি সেখান থেকে কাকড়া সংগ্রহ করতেন এবং ল্যাবে নিয়ে আসতেন!

 

1Y38-001x.jpg | Kuhn Photo

 

যাক বিস্তারিত গল্পে না যেয়ে আমরা মূল প্রসঙ্গে ফিরে আসি। লিমুলাসের মস্তিষ্কের এই তুলনামূলক সাধারণ প্রকৃতি বিজ্ঞানীদেরকে সক্ষম করে তুলেছিল এটা সনাক্ত করতে যে কি চলছে তাদের মস্তিষ্কে। আসলে ব্রেন এতটাই কঠিন একটা বিষয় যে এটাকে বোঝা খুবই দুঃস্বাধ্য এক কাজ। মানব মস্তিষ্কের অধিকাংশ ফাংশনালিটি এখনো সম্পূর্ণ রহস্যজনক। লিমুলাসের মস্তিষ্কের এ সরলতা বিজ্ঞানীদেরকে ব্রেন সাইকোলজি সম্পর্কে বিরাট এক অন্তদৃষ্টি প্রদান করেছিল। মহাবিশ্বের সৃষ্টির শুরু থেকে এ পর্যন্ত এটাই একমাত্র ব্রেন সিস্টেম যেটা বিজ্ঞানীরা বেশ ভালোই বুঝতে পেরেছেন। লিমুলাসের মস্তিষ্কের কয়েকটি ফাংশন ছিলো কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি হলো ভিজুয়াল পারসেপশন, আর এটাই ছিল হার্টলাইনের মনোযোগের প্রধান কেন্দ্রবিন্দু। লিমুলাসের জটিল দুটি চোখ ছিলো তার খোলসের দু-পাশে। প্রতিটি চোখ ৮০০ লাইট সেন্সিং সেল দিয়ে গঠিত। যখন আলো দ্বারা স্টিমুলেট করা হয়, প্রতিটি ওমাটিডাম মস্তিষ্কে সিগনাল প্রেরণ করে যা আলোর তীব্রতার প্রতিফলন ঘটায়। তাই লিমুলাসের ভিজুয়াল সিস্টেম তার চোখ দিয়ে যে আলো প্রবেশ করে মৌলিকভাবে তার তীব্রতার একটি মানচিত্র তৈরি করে। হার্টলাইনের মূল আবিষ্কার ছিলো যে, লিমুলাসের ব্রেন আলোর যে ম্যাপ তৈরি করে তা এনভায়রনমেন্ট থেকে প্রাপ্ত আলোর সম্পূর্ণ ম্যাপ নয়। তার পরিবর্তে পদ্ধতিগতভাবে, আলোর তীব্রতা পরিবর্তন হয়ে যায়। যখন চোখের একটি এলাকা দিয়ে অত্যন্ত স্ট্রং একটি সিগনাল প্রবেশ করে, চোখের অন্যান্য এলাকা দিয়ে প্রবিষ্ট সিগনালগুলো দূর্বল হয়ে যায়। এটাকে বলা হয় ল্যাটারাল ইনহিবিশন। এর মানে হলো, স্ট্রং আলো, অপেক্ষাকৃত কম স্ট্রং আলোগুলোকে ডার্ক করে দেয় তাদের মস্তিষ্কের পদ্ধতিগত কারণে। আমরা মোবাইলে অনেক সময় ছবির “Contrast” বাড়াই।

এতে করে দেখা যায় যে ছবিটির এক অংশ উজ্জ্বল হয়ে উঠছে আর অন্য অংশ অন্ধকার। ল্যাটারাল ইনহিবিশনের মাধ্যমে ঠিক এ ব্যাপারটাই ঘটে, আলোকিত এলাকা অন্ধকার এলাকা থেকে বেড়ে যায়। আমরা যখন কোনো পুরোনো ইমেজ রিমাস্টার করি বা ভিডিও তখনও কিন্তু একই প্রসেস সংঘটিত হয়। ল্যাটারাল ইনহিবিশন-এর একটি ফলাফল হলো, এর লাইট ইনটেনসিটির ম্যাপ বৃদ্ধি পায় হাই ইনটেনসিটি এলাকায় যা নিকটবর্তী এরিয়ার সাথে রিলেটিভ। হার্টলাইন প্রসেস নতুন অনেক প্রশ্ন জাগ্রত করে। কিন্ত এ গবেষণার একটি মূল পয়েন্ট ছিল, কেনো এই ক্যাপাসিটি তৈরি হলো? ভিজুয়াল ইনপুটের “Contrast” বৃদ্ধি করার মাঝে কি এমন উপকারিতা? ১৯৮২ সালে হার্টলাইন এর ছাত্র রবার্ট বার্লো একটি এক্সপেরিমেন্ট পরিচালনা করেন, যা এ প্রশ্নের উত্তর দেয়। আমরা জানি, বিবর্তনের সবচেয়ে বড় সত্য হলো সঙ্গী নির্বাচন ও প্রজনন। এর চেয়ে বড় কোনো সত্য বিবর্তনে নেই। বার্লো আবিষ্কার করেন, লিমুলাসের ভিজুয়াল সিস্টেমের এই ল্যাটারাল ইনহিবিশন সঙ্গী অনুসন্ধানের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বার্লো চুনামাটির একটা খাপ তৈরি করে যা আকার ও রঙের দিক থেকে ভিন্ন এবং এই খাপটিকে তিনি মেটিং- সিজনে সমুদ্র সৈকতে স্থাপন করে।

PDF) Male horseshoe crabs Limulus polyphemus use multiple sensory cues to  locate mates

 

ভিনাস ফ্লাই ট্র‍্যাপের মতো, এ পরীক্ষায় প্রমাণিত হয় যে হর্সশু আসলে এতটা স্মার্ট নয়। তারা বারবার চুনামাটির তৈরি খাপটির সাথে মেটিং করতে আসে। কিন্তু রোমান্টিক সময়ে তারা খাপের সে অংশটুকুর দিকে বেশি গুরুত্ব দেয় যে অংশটি দেখতে অনেক বেশি নারীর আকার সদৃশ। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে তাদের দৃষ্টিশক্তি মূলত তাদেরকে সঙ্গী অনুসন্ধানের জন্য সাহায্য করে, এটা তাদেরকে সে সকল অবজেক্ট সুনির্দিষ্ট করতে সাহায্য করে যা দেখতে অনেক বেশি নারী সদৃশ। মানে, নারীর শরীরের রঙ ও আকারের একটি পাথর দেখলেও তারা তার সাথে সেক্স করতে চাইবে। মূলত, তারা সবকিছুর ভেতর নির্দিষ্ট করে একটা শারীরিক কাঠামোকে খুঁজে বের করতে চায় বা স্পেসিফিকেশন করে। যদিও স্পেসিফিকেশন করার এ সার্কিট তাদের এখনো অতোটা উন্নত হয়নি। কল্পনা করুন, যখন একজন পুরুষ সৈকতে আসে। তার প্রধান লক্ষ্য অত্যন্ত দ্রুত সঙ্গীকে খুঁজে বের করা। সে হয়তো সমুদ্র সৈকতের এ অংশে আগে কোনোদিন আসেইনি। সূর্য হয়তো ছিলোনা বা ছিল মেঘাচ্ছন্ন। আর অন্যদিকে আরো অজস্র পুরুষ নারীদের খুঁজে বেড়াচ্ছে যা এ ব্যাপারটিকে আরো খারাপ করে তোলে। অতএব যত তাড়াতাড়ি তারা একজন সঙ্গীকে আইডেন্টিফাই ও নেভিগেট করতে পারবে ততই তার জিন নেক্সট প্রজন্মে স্তানান্তরিত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে আর যদি সে দ্রুত আইডেন্টিফাই করতে না পারে তবে তার প্রজনন ব্যর্থ হবে। আর ঠিক এখানেই ল্যাটারাল ইনহিবিশন-এর সুবিধা সুস্পষ্ট হতে শুরু করে। কিন্তু কিভাবে! গুগল থেকে স্ত্রী হর্সশুর একটা ছবি দেখে আসেন। এদের খোলস ডার্ক , এজন্য পেছনের বিশৃঙ্খল ব্যাকগ্রাউন্ডের সাথে তারা মিশে যায়। আলোর “Contrast” বাড়িয়ে মূলত তারা পেছনের নয়েজি ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে অন্ধকার খোলসটাকে প্রশস্ত করে তোলে। যে পুরুষ এ কাজ করতে পারে সেই ভাগ্যবান কারণ সে প্রজননের সুযোগ পায়। হর্সশুর চোখ এনভায়রনমেন্ট থেকে যে ইনফরমেশন প্রসেস করে তা সঙ্গী খুঁজে পেতে ভালোই সমর্থন করে। এই ইনফরমেশন প্রসেসিং-এবিলিটির কারণেই পেছনের ব্যাকগ্রাউন্ড যেমন- খারাপ আবহাওয়া, কুয়াশা বা ধুলো বালি তাদের বিভ্রান্ত করতে পারেনা। এটি তাদেরকে তাদের নারী সঙ্গীকে খুঁজে পেতে সাহায্য করে যেকোনো ভিজুয়াল কন্ডিশনে।

কিন্তু তারপরও নকল রঙের তৈরি একটি খোলস দিয়েও তাদের বিভ্রান্ত করা যায় কারণ তাদের ব্রেন আসলে খুবই সিম্পল। যেকোনো কিছু তা দেখতে নারীর মতো হলেই তারা সেক্স করার চেষ্টা করবে , সেটা পাথর হলে পাথর! এটি একটি লিমিটেশন। কিন্তু ব্রেন যখন অনেক বড় ও জটিল হয়ে উঠে তখন মস্তিষ্ক এনভায়রমেন্টে যাই ঘটুক না কেনো রিমুভ করে দিতে পারে। আমি কি বলতে চাইছি তা বোঝার জন্য ছোট একটা উদাহরণ বোঝার চেষ্টা করুন। এই যে আমরা ফেস রিকগনাইজ করি, সেটা কিভাবে? মানুষ খুব দুর্দান্তভাবে চেহারা সনাক্তকরণে দক্ষ ।  কিন্তু এটা কিভাবে ঘটে? এটি আসলে কঠিন ইনফরমেশন প্রসেসিং প্রবলেম। আসলে মোটাদাগে প্রতিটি মানুষের চেহারা দেখতে একইরকম। আমরা সবাই প্রায় একই আকারের, দুটি চোখ, একটি নাক এবং একটি মুখ এবং মোটের উপর একই পজিশনে। কিন্তু তারপরও মানুষ একে অন্যের চেহারার সাথে পার্থক্য নিরূপণ করতে পারে। যে বিষয়টি এ ব্যাপারটিকে অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং করে তুলেছে তা হলো আমরা একই চেহারাকে ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতিতে দেখি। প্রতিবার আমরা কেউ একজনের চেহারাকে আমাদের ভিজুয়াল ফিল্ডের ভিন্ন ভিন্ন সজ্জায় দেখি, কখনো মেক আপ করা, কখনো চুল বড়, কখনো দাঁড়ি ছোট, আলো ভিন্ন ভিন্ন লোকেশন থেকে আসতে পারে, ভিন্ন ভিন্ন ছায়া তৈরি হতে পারে। যদি আমাদের মস্তিষ্ক প্রাথমিকভাবে চেহারা সনাক্ত করার চেষ্টা করে আমাদের চোখের সেন্সরি ইনপুটের উপর ভর করে তবে সে অবশ্যই ব্যর্থ হবে! কারণ প্রতিবার আমাদের চোখ ভিন্ন ভিন্ন অরিয়েন্টেশনের ইনফরমেশন গ্রহণ করছে, যদি আমাদের ব্রেন সম্পূর্ণ চোখের উপর ডিপেন্ড করতো তবে আমরা কখনো একটি চেহারা থেকে আর একটি চেহারা আলাদা করতে পারতাম না আবার অনেক সময় আমরা এক বছর আগের আপনাকে এক বছর পরের আপনার থেকে খুঁজে পেতাম না, আমাদের কাছে মনে হতো আপনি অন্য কেউ? যদি চোখের পক্ষে এ কাজটি করা সম্ভব নাই হয়ে থাকে তবে ব্রেন আসলে কিভাবে এ সাদৃশ্য ও বৈশাদৃশ্যতা নিরূপণ করে? এর উত্তর হলো আমাদের ফেস প্রসেসিং সিস্টেম প্রতিটি ফেসের মধ্যে উপস্থিত একটি গভীর ব্যাপার সনাক্ত করতে পারে। Danny Devito নামক একজন ব্যক্তি ছিলেন, যার স্কুল জীবনের একটি ছবির সাথে আর একটি ছবির কোনো মিল নেই, তার মুখে যদি বড় কোন দাগ না থাকে তবে স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে তাকে চেনার কোনো উপায়ই থাকতোনা। কিন্তু তার সে রকম কোনো কাটা দাগ নেই আর এ জন্য আমাদের ফেস রিকগনিশন সিস্টেম তার চেয়েও আরো এবস্ট্রাক্ট কোনো বিষয়ের উপর নির্ভর করে যা ডেনি ডিভাইটোকে ডেনি ডিভাইটোই রাখে, অন্যকিছু নয়।

 

Danny DeVito urges New Yorkers to 'stay home, watch tv' amid COVID-19

 

মানুষ নাক, চোখের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র দূরত্ব এবং নাক, মুখ ও চোখের তুলনামূলক ভার্টিক্যাল পজিশনিং নির্ণয় করতে জানে। সত্যিকার ফেস পারসেপশন সকল পারসেপশনের ক্ষেত্রে সত্য। স্মার্টনেস হলো এটাই যে, অজস্র তথ্যের বন্যা থেকে সবচেয়ে গভীর ও এবস্ট্রাক্ট বা বিমূর্ত ইনফরমেশন বের করে আনা। আশেপাশের লাইট, সাউন্ড ও স্মেলের প্রতি অযথা প্রতিক্রিয়া না করে প্রাণীদের রয়েছে অভিজাত একটি বড় ব্রেন যা বিশ্বের গভীর ও বিমূর্ত ব্যাপারগুলোতে রেসপন্স করে যা তারা অনুভব করছে। আর এই যে গভীর ও বিমূর্ত প্যাটার্নের প্রতি সংবেদনশীলতা এটাই তাদেরকে নতুন কোনো পরিস্থিতির মধ্যে অসাধারণ জটিল ও সুক্ষ্ম সমতা ও অসমতাগুলো ডিটেক্ট করতে সাহায্য করে, এমনকি এমন সব পরিস্থিতিতে যে পরিস্থিতি তারা পূর্বে কখনো ফেস করেনি। আমরা যে কারণে সবচেয়ে গভীর ও অধিক এবস্ট্রাক্ট ইনফরমেশন বুঝতে পারি তা হলো যেনো আমরা অবিশ্বাস্যভাবে জটিল সম্ভাবনার তীর থেকে আমাদের কাঙ্ক্ষিত ইনফরমেশন বের করে নিয়ে আসতে পারি। আর আমরা এই সকল বিমূর্ত ইনফরমেশনকে ব্যবহারও করতে পারি, যেমন- পরিচিত কোনো সুর সনাক্তকরণ, যদি সে সুরটি একটু এদিক ওদিক করেও দেয়া হয়, যদি সুরে ভুলও থাকে, যদি সুরের একটা নির্দিষ্ট অংশ খন্ডিতভাবেও বেজে উঠে আমরা সেটিকে সনাক্ত করতে পারি। একটি পরিচিত সুর সনাক্ত করতে আমাদের যা সাহায্য করে তা আসলে সেই সুরের মেমরি নয়, এটি তার চেয়েও আরো অনেক বেশি এবস্ট্রাক্ট।

আমরা কোনো উপাদানকে সনাক্ত করার জন্য সবসময় এবস্ট্রাক্ট ইনফরমেশনের উপর ডিপেন্ড করি যদিও আমরা এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ অসচেতন।

ফিউনসের অভিশাপঃ

যাক এবার আমরা মূল প্রসঙ্গে ফিরে আসি। মনে আছে আপনাদের আমরা লেখার শুরুতে ফিউনস নামক একজন ব্যক্তির কথা বলেছিলাম যিনি অতীতের সকল ঘটনা অবিকল মনে রাখতে পারতেন? বোর্হেস যেটা দৃঢ় ভাবে বুঝতে পেরেছিলেন, সবকিছু স্মরণ করতে পারার ক্ষমতা একটি দ্বান্দ্বিক বিষয় যেটা আমাদের মন “এবস্ট্রাকশনের” মাধ্যমে খুব ভালোভাবেই করতে পারে। আমরা জানি এবস্ট্রাক্ট মানে হলো খুবই সুক্ষ্ম, অদৃশ্য, একদম অস্পৃর্শ এমন কোনো ঘটনা বা তথ্য। নিখুঁতভাবে আপনি যদি সুক্ষ্ম বা বিমূর্ত তথ্যগুলো সংগ্রহ করতে চান বা এবস্ট্রাকশন করতে চান তবে আপনার মেমরি অবশ্যই খালি থাকতে হবে, বা অতীতের ইনফরমেশন গুলোকে অবশ্যই ভুলে যেতে হবে। যদি আপনি ফরগেট করতে না পারেন তবে আপনি এ সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম তথ্যগুলো গ্রহণ করতে পারবেননা। সাধারণত আমরা যখন কোন একটি বই পড়ি তখন যদি অতীতের কোনো দুঃখের স্মৃতি এসে আঘাত করে সাথেসাথে আমাদের মনের মনোযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, আর অন্যদিকে আপনি যদি মাথার ভেতর কয়েক ট্রিলিয়ন টন তথ্য একসাথে নিয়ে ঘোরেন তবে আপনার “কনসেন্ট্রেশন” কি একুরেট হবে? আপনার ব্রেন একদিক থেকে অনেক বেশি শক্তি খরচ করলে অন্যদিক থেকে তাকে কি কম্পেনসেশন দিতে হবেনা? আপনার ব্রেন যদি সারাদিন অতীতের মেমরি নিয়েই পড়ে থাকে, সে যদি অতীত থেকেই বের হতে না পারে তবে সে বর্তমান সময়ের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ইনফরমেশনগুলোর প্রতি কিভাবে মনোযোগী হবে? আসলে যদি আপনার মাথা জাঙ্ক দ্বারা পরিপূর্ণ হয়ে যায় তবে আপনার পক্ষে কোনোকিছু জেনারেলাইজ করা অথবা বোঝা একেবারেই অসম্ভব। একটা সিম্পল উদাহরণ দেয়া যাক। মনে করুন, কুকুর নামক প্রজাতিটির মধ্যে অসংখ্য কুকুর আছে, এক এক জনের আকার এক এক রকম। কিন্তু সে এটা বুঝতে পারবেনা যে কুকুর নামক এ প্রাণীটি একটি সাধারণত জাতকে নির্দেশ করছে এবং তারা বিভিন্ন রকম হতে পারে। যেমন-১৪ টি কুকুরের মধ্যে তিন নম্বর কুকুর ১৫ টি কুকুরের মধ্যে তিন নম্বর কুকুরের অন্তর্গতই হবে। এ ব্যাপারটি তাকে বিভ্রান্তির মধ্যে ফেলে দেবে। যে কারণে আমাদের মধ্যে অধিকাংশই হাইপারথাইমেসিক নয় কারণ এটি আমাদেরকে খুব একটা সফলতা দেয়না। আমাদের মন সবসময় তার জন্য সবচেয়ে উপযোগী তথ্যটি খুঁজে বের করতে ব্যস্ত থাকে এবং অতীতকে পেছনে ফেলে রেখে আসে। সবকিছু স্মরণ করার ক্ষমতা গভীরভাবে কোনোকিছু সনাক্ত করার পথে প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়ায়, কিভাবে নতুন একটি পরিস্থিতি অতীতকে প্রতিফলিত করে এবং কোন ধরণের একশন আমাদের জন্য ইফেক্টিভ হবে। মন কেনো বিবর্তিত হয়েছে তার সাপেক্ষে এ পর্যন্ত প্রস্তাবনার কোনো অভাব নেই। কেউ বলে মন ভাষাকে সাপোর্ট করার জন্য অভিযোজিত, কেউ বলে সোশ্যাল ইন্টারেকশনের জন্য, শিকার, সংগ্রহের জন্য অথবা পরিবেশের সাথে অভিযোজিত হওয়ার জন্য। আমরা এই ধারণাগুলোর সাথে দ্বিমত প্রকাশ করছিনা। হয়তো সবগুলোই সঠিক কারণ মন আসলে এই সবগুলোর মধ্যে উপস্থিত সবচেয়ে সাধারণ কাজটি করছে। মন এমন কিছু করছে যা খুবই জেনারেল এবং সবগুলো বিকল্পকেই অন্তর্ভুক্ত করে। যেমন- মন আমাদের সক্ষমতাকে কার্যকরভাবে সমর্থন করার জন্য বিবর্তিত হয়েছে। চিন্তাশীল একটি বস্তু তার প্রতিযোগীদের চেয়ে আরো ভালোভাবে সার্ভাইভ করতে পারে কারণ তারা চিন্তার মাধ্যমে এমন সব কর্ম করে যা তাদেরকে স্বল্পস্থায়ী ও দৈর্ঘস্থায়ী দৃষ্টিকোণ থেকে উপযোগীতা প্রদান করে। এর রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ একটি তাৎপর্য যেভাবে আমাদের চিন্তার শেপ অনুধাবন করা উচিত।। ব্রেন যত কমপ্লেক্স হয়, এটি তত গভীর প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করে। এনভায়রমেন্ট থেকে ততোই এবস্ট্রাক্ট সংকেত আসতে থাকে এবং এটি তাদেরকে নতুন পরিস্থিতিতে আরো এডাপ্টিভ করে তোলে। এটি আমাদের নলেজ অব ইলিউশন বোঝার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিপুল পরিমাণ তথ্য জমা করে রাখাটা কোনো একটি কাজ ইফেক্টিভলি করার পক্ষে খুবই ক্ষতিকর, আমাদের সবারই একটি সুবিস্তৃত পিকচার প্রয়োজন। কোনোকিছু বিস্তারিত স্টোর করা আমাদের জন্য কাউন্টার-প্রোডাক্টিভ, যেমনটা আমরা ফিউনসের মেমরির ক্ষেত্রে দেখতে পেয়েছি। আমরা যদি ভিন্ন কোনো পরিবেশে বিবর্তিত হতাম যখন ইফেক্টিভনেস থেকে ক্যাপাসিটি গুরুত্বপূর্ণ তবে আমাদের মন ভিন্ন কোনো লজিকে বিবর্তিত হতো। আমরা যদি এমন একটি জগতে বাস করতাম যেখানে সম্ভাবনার উপর খেলা জুয়াকে পুরস্কৃত করা হয় তবে আমরা নিখুঁতভাবে প্রবাবিলিটি ডিস্ট্রিবিউশন ও “ল” অব স্ট্যাটেটিক বুঝতে পারতাম। আমরা যদি এমন একটি বিশ্বে বাস করতাম যা ডিডাক্টিভ রিজনিং-কে পুরস্কার দেয় তবে আমরা মন্তব্যে উপনিত হওয়ার ক্ষেত্রে বিরাট পন্ডিত হতাম। কিন্ত আমরা এমন একটি জগতে বিবর্তিত হয়েছি যেটি লজিক অব একশনের উপর চলে এবং এ জন্য এই ধরণের চিন্তা এতটাই কেন্দ্রীয় যে এটা আমাদেরকে মানুষে পরিণত করে।

প্রাসঙ্গিক আর্টিকেলঃ

১) থিংকিং ফাস্ট এন্ড স্লো

২) ”থট” কেনো?