৫ বিলিয়ন বছর পূর্বে যখন সূর্য শুরু হয়েছিল তখন সোলার সিস্টেম গাঢ় অন্ধকার ছেদ করে আলোয় প্লাবিত হতে থাকে। সোলার সিস্টেমের ভেতরে আদিম প্লানেটগুলো ছিল পাথর ও অন্যান্য পদার্থের ধ্বংসাবশেষের অনিয়মিত সংগ্রহ, প্রাথমিক মেঘের ক্ষুদ্র উপাদান, যে সকল উপাদান সূর্যের আদিম আলোয় আলোকিত হয়ে উঠার পূর্বে তখনও প্রস্ফুটিত হয়নি। এ সকল গ্রহ গঠিত হওয়ার পর উত্তপ্ত হতে থাকে। গ্যাস তাদের অভ্যন্তরে আটকা পড়ে যায় নির্গত হতে থাকে আবহাওয়া আকারে।
এ প্রাচীন আবহাওয়া হাইড্রোজেনের প্রাচুর্যতায় পরিপূর্ণ এটমের দখলে ছিল। সূর্য থেকে আলো এসে পতিত হতো প্রাচীন আবহাওয়ার অণুর গায়ে, অণুদের এই আলো উত্তেজিত করতো , আণবিক সংঘর্ষকে প্রভাবিত করতো এবং জন্ম হয়েছিল আরো বিশাল অণু । ফিজিক্স ও কেমিস্ট্রির অনিবার্য সূত্রের কবলে পড়ে এ অণুগুলো পরস্পর আন্তক্রিয়া করতো, পতিত হতো সমুদ্রে। এভাবে আরো পরে বড় অণু তৈরি হতে থাকে যা ছিল প্রাচীন অণু থেকে আরো বিশাল___এ অণুগুলো ছিল খুব জটিল কিন্তু তখনও যেকোনো হিউম্যান স্টান্ডার্ড থেকে তারা ছিলো অনেক বেশি মাইক্রোস্কোপিক ।
এ অণুগুলো ছিলো তারা যারা আমাদের তৈরি করার জন্য যথেষ্ট। এরা ছিলো নিউক্লিক এসিডের বিল্ডিং ব্লক, আধুনিক বস্তুর পূর্বপুরুষ, এরা ছিলো প্রোটিনেরও বিল্ডিং ব্লক। এটি হলো এমন এক আণবিক নভচারী যা সেলের ভেতর কাজ করতো। যারা জন্ম নিয়েছিলো আদি আবহাওয়া ও সমুদ্র থেকে। আমরা তাদের জানি কারণ আমরা আজও তাদের সেই আদিম পরিস্থিতি পুনরাবৃত্তি করার মধ্য দিয়ে তৈরি করতে পারি।
আজ থেকে বহু বিলিয়ন বছর পূর্বে একটি অণু গঠিত হয় যার ছিল বিস্ময়কর ক্ষমতা। এটি তার চারপাশের পানির মলিকিউলার বিল্ডিং ব্লক থেকে উৎপাদিত হয় যেটি খুব মসৃণভাবে তার কপি তৈরি করতে পারে, এ ধরণের মলিকিউলার সিস্টেমে একপ্রকার নির্দেশনা কাজ করতো, যেটি ছিল একটি আ্ণবিক কোড যে কোডের মধ্যে আরো বড় মলিকিউল গঠনের জন্য নির্দেশনা লেখা থাকতো। যখন দুর্ঘটনাবশত, সিকোয়েন্সে কোনো পরিবর্তন ঘটতো, এ কপিটি সামান্য পরিবর্তন হতো। এ ধরণের মলিকিউলার সিস্টেম যা রেপ্লিকেশন ও মিউটেশন করতে সক্ষম ছিল আর এভাবে প্রথম দেখা দেয় “জীবন”।
জীবন ছিলো ” Collection of Molecules”! এই অণুর সংগ্রহ ন্যাচারাল সিলেকশন দ্বারা বিবর্তিত হয়েছিল। এই মলিকিউল দ্রুত গতিতে নিজেকে পুনরাবৃত্তি করতে সক্ষম ছিল অথবা তারা তাদের চারপাশের সাহায্য নিয়ে আরো উপকারী কোনো বৈচিত্রে এই বিল্ডিং-ব্লক পুনরাবৃত্তি করতে পারতো, তারা তাদের প্রতিযোগীদের চেয়ে অধিক দক্ষতার সাথে নিজেদের পুনরাবৃত্তি করতে সক্ষম ছিল এবং অবশেষে তারা প্রভাবশালী হয়ে উঠত।
কিন্তু ধীরে ধীরে পরিস্থিতি পরিবর্তিত হতে থাকে। স্পেসে হাইড্রোজেন নিবৃত্তি লাভ করে। মলিকিউলার বিল্ডিং ব্লকের উৎপাদন হ্রাস পেতে শুরু করে। পূর্বের তুলনায় খাদ্যের পরিমাণ কমে যায়। মলিকিউলার গার্ডেন অব ইডেন থেকে জীবন বহিস্কৃত হয়। শুধু সে সকল সরল জীবন তার পরিবেশে ট্রান্সফর্ম হতে পেরেছিল যারা কার্যকরী মেশিন তৈরি করার ক্ষমতা রাখতো সরল থেকে জটিল মলিকিউল তৈরি করার জন্য এবং তারা টিকে থাকত। তাদের চারপাশ থেকে তাদেরকে পৃথক করার মধ্য দিয়ে, প্রাচীন আদর্শিক পরিস্থিতি বজায় রাখার মাধ্যমে, যে সকল মলিকিউল পরিবেশ ও তাদের মাঝে মেমব্রেন তৈরি করতে সক্ষম ছিল তারা সুবিধাপ্রাপ্ত হত আর এভাবে প্রথম কোষের জন্ম হয়।
এখন আর মলিকিউলার বিল্ডিং ব্লক তৈরি করাটা আগের মতো সহজ নয়। অর্গানিজম এ ধরণের বিল্ডিং ব্লক তৈরি করার জন্য রিতীমত যুদ্ধ করতে শুরু করলো। আর এভাবে জন্ম হলো বৃক্ষের। বৃক্ষের শুরু হয় বাতাস ও পানি, মিনারেল ও সানলাইট দিয়ে আর তারা আরো উচ্চমাত্রিক জটিলতার আনবিক বিল্ডিং ব্লক তৈরি করতে পারতো। আর আমরা, মানুষের মতো প্রাণীরা সে সকল আদিম বৃক্ষের পাতায় বিলিয়ন বছর পূর্বে হেঁটে বেড়ানো প্যারাসাইট।
জলবায়ু পরিবর্তন হতে থাকে, তাদের মধ্যকার প্রতিযোগিতা ব্যাপকভাবে প্রশস্ত হয়, আরো সুনির্দিষ্ট থেকে সুনির্দিষ্টভাবে অর্গানিজম বিশেষায়িত হতে থাকে, তাদের ফাংশনের জটিলতা, আকারের সম্প্রসারণ। বিশাল বৃক্ষ ও প্রাণীদের সারি এ গ্রহকে দখল করতে থাকে। একটি প্রাচীন সমুদ্র থেকে জীবন জন্ম হয়, নতুন পরিবেশে, এভাবে ভুমি ও বাতাস কলোনাইজড হয়। অর্গানিজম বর্তমানে মাউন্ট এভারেস্টের চূড়া থেকে শুরু করে সমুদ্রের অতল গহীনে বাস করে। অর্গানিজম বাস করে ঘণ উত্তপ্ত সালফিউরিক এসিডের সলিউশন এবং এন্টার্কটিকের শুকনো উপত্যকায়। অর্গানিজম বাস করে পানি শোষক একক লবণের ক্রিস্টালের ভেতর।
জীবন উন্নত হতে শুরু করে যারা তাদের পরিবেশের সাথে সুন্দরভাবে এটিউন, যারা চমৎকারভাবে তাদের পরিস্থিতির সাথে সমন্বিত। কিন্তু পরিস্থিতি পরিবর্তিত হতে থাকে। অর্গানিজম অনেক বেশি স্পেশালাইজড হতে শুরু করে। তারা মারা যায়। অন্যান্য অর্গানিজম ছিল অনেক কম সমন্বিত কিন্তু তারা ছিলো অনেক বেশি জেনেরালাইজড। পরিস্থিতি পরিবর্তিত হয়, জলবায়ুতে দেখা দেয় বৈচিত্রতা কিন্তু অর্গানিজম নিরবিচ্ছিন্নভাবে চলতে থাকে। পৃথিবীর আদিম ইতিহাসে অজস্র অর্গানিজম মারা যায় এখনকার তুলনায়। বিবর্তনের মূল সিক্রেট হলো “সময়” ও “মৃত্যু”!
এ সকল এডাপসনের মধ্যে যেগুলো উপকারী মনে হয়েছিল তা ছিলো একটি যাকে আমরা বলি বুদ্ধিমত্তা। বুদ্ধিমত্তা হলো বিবর্তনীয় প্রবণতার একটি বিস্তৃতি যা সরল অর্গানিজমের মধ্যে দেখা যায় যার মাধ্যমে তারা পরিবেশকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। পরিবেশকে নিয়ন্ত্রণ করার এ শারীরিক পদ্ধতি ছিলো উত্তরাধিকারের একটি ব্যাপার । নিউক্লিক এসিডের মাধ্যমে এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে, বিলিয়ন বছর ধরে ইনফরমেশন স্তানান্তরিত হতে থাকে___ পাখির বাসা তৈরি করার ইনফরমেশন পাহাড় থেকে পড়ে যাওয়া অথবা সাপ অথবা অন্ধকারের ভয়ের ইফরমেশন; সেই ইনফরমেশন কীভাবে শীতকালে দক্ষিণে উড়াল দিতে হবে। কিন্তু বুদ্ধিমত্তার জন্য এডাপটিভ কোয়ালিটির ইনফরমেশন প্রয়োজন হয় যা একজন স্বতন্ত্র ব্যক্তির জীবদ্দশায় উন্নত হয়। এ পৃথিবীর বৈচিত্রময় প্রাণের মধ্যে এ ধরণের কোয়ালিটি রয়েছে যেটাকে আমরা বুদ্ধিমত্তা বলি। ডলফিনের এটি রয়েছে, এটি রয়েছে মহান বানরের। কিন্তু এ বুদ্ধিমত্তা সম্ভবত মানুষের একটি প্রমাণ।
মানুষের ক্ষেত্রে এডাপ্টিভ ইনফরমেশন সম্পূর্ণ জীবদ্দশায় উন্নত হয় তা নয় বরং সেটা ভাষা ও শিক্ষার মাধ্যমে এক্সট্রা-জেনেটিক্যালি বইয়ের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়, শিক্ষার মধ্য দিয়ে। আর এটাই হলো তা যা তাকে এই গ্রহে বিখ্যাত করে তুলেছে। আমরা ৪.৫ বিলিয়ন বছরের আকস্মিক, ধীর গতির, বায়োলজিক্যাল ইভোলিউশনের একটি পন্য। এমন কোনো চিন্তা করার কারণ নেই যে বিবর্তন প্রক্রিয়া থেমে গেছে। মানুষ একটি ট্রান্সজিশনাল প্রাণী। সে সৃষ্টির ক্লাইম্যাক্স( Climax) নয়।
পৃথিবী এবং সূর্যের অজস্র বিলিয়ন বছরের প্রত্যাশিত জীবন আছে। মানুষের ভবিষ্যতের উন্নয়ন সম্ভবত বায়োলজিক্যাল বিবর্তনের সহযোগীতামূলক নিয়ন্ত্রণ, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এবং দুটি অর্গানিজমের গভীর সম্পর্ক এবং ইন্টিলিজেন্ট মেশিন। কিন্তু এখনো কেউই ভবিষ্যত বিবর্তনের যথাযথ প্রেডিকশন করতে পারছেনা। সামগ্রিকভাবে এটা পরিস্কার যে আমরা কেউই একরকম থাকবো না। একটা সময় ছিলো মানুষ ক্ষুদ্র গ্রুপে বাস করতো যা দশ থেকে বিশ জনের বেশি মানুষ ধারণ করতো না যেটাকে বলা হয় ট্রাইব । তাদের প্রত্যেকে কনস্যাঙ্গুয়িটি দ্বারা জড়িত ছিল। সময়ের সাথে সাথে তাদের বড় কোনো প্রাণী শিকার করার জন্য বড় দল বা হার্ড গঠন করার প্রয়োজনীতা দেখা দেয়। কৃষি ও নগরের বিবর্তন মানুষকে আরো বিশাল থেকে বিশালতর গ্রুপ গঠনের জন্য নেতৃত্ব দান করে। যে গ্রুপটি ট্রাইবাল ইউনিট হিসেবে সনাক্ত করা হত তা বিবর্তনের প্রতিটি ধাপে বড় হতে থাকে। ৪.৫ বিলিয়ন বছরের পৃথিবীর ইতিহাসে আজকের এই মুহূর্তটি এবং মানব সভ্যতার ইতিহাসের কয়েক মিলিয়ন বছর মানব সভ্য তা তাদের ন্যাশনাল স্টেটের প্রতি মৌলিকভাবে অনুগত। যদিও মাঝেমাঝে কিছু ট্রাইবাল কনফ্লিক্ট তৈরি হয়।
মিলিয়ন বছর ধরে গ্রুপের প্রতি মানুষের যে আনুগত্য তা শুধুমাত্র ব্যক্তি মানুষ তার ন্যাশনাল স্টেট, ধর্ম, জাতি অথবা অর্থনৈতিক গ্রুপের উপরই সীমাবদ্ধ রাখেনি বরং সম্পূর্ণ মানব সভ্যতাকেই তারা তাদের গোষ্ঠী বা দল মনে করতে শুরু করেছে; যেখানে ১০ হাজার মাইল দূরের অন্যকোনো সেক্স, জাতি, ধর্ম অথবা রাজনৈতিক সংঘঠনের উপকারীতা আমাদের কাছে মূল্যবান হয়ে উঠে আমাদের আত্মীয় ও ভাইবোন হিসেবে। আজ সবার প্রবণতা কোনো ক্ষুদ্র দল নয়, বিশ্বমানবতার পথে চালিত কিন্তু বিস্ময়করভাবে খুবই ধীর গতিতে। এখানে রয়েছে খুবই মারাত্মক একটি প্রশ্ন, মানব সভ্যতা কী এই ধরণের গ্লোবাল সেল্ফ আইডেন্টিফিকেশন অর্জন করতে পারবে আমাদের বুদ্ধিমত্তা দ্বারা উদ্ভাবিত আধুনিক প্রযুক্তি দ্বারা একে অপরকে ধবংস করে দেয়ার আরো অনেক পূর্বে!
একদম রিয়েল সেন্স থেকে, মানুষ হলো মেশিন যারা নিউক্লিক এসিড দিয়ে তৈরি, যারা কার্যকরীভাবে আরো অধিক নিউক্লিক এসিড পুনরাবৃত্তি করতে পারে। একটি সেন্স থেকে আমাদের অত্যন্ত দৃঢ় প্রেরণা, মহান এন্টারপ্রাইজ, আমাদের গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনীয়তা, আমাদের সুস্পষ্ট স্বাধীন ইচ্ছশক্তি সবকিছু হলো সে সব ইনফরমেশনের এক্সপ্রেসন যা আমাদের জেনেটিক্যাল মেটেরিয়ালসে কোডিং করা হয়েছে; আমরা আর কিছুই না, নিউক্লিক এসিডের ক্ষণস্থায়ী পরিবর্তনশীল কোষ বা আধার ছাড়া, কিন্তু এটা আমাদেরকে ভালো, সত্য ও সুন্দরের অনুসন্ধান থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারে না। এটি হতে পারে সবচেয়ে বড় ভুল আমরা কোথা থেকে এসেছি এবং কোথায় যাচ্ছি সে সম্পর্কিত প্রশ্নগুলোকে উপেক্ষা করা। এটা সত্যি যে আমাদের শিকারি সংগ্রাহক জীবনের জেনেটিক্যাল সহজাত প্রবণতাগুলো ১০০,০০০ বছরে কিছুই পরিবর্তন হয়নি। সে সময়ের তুলনায় আমাদের সমাজ অনেক বিশাল আকারে পরিবর্তন হয়েছে, আর আমাদের আজকের সমাজের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠতম সমস্যাকে বুঝতে হবে এই দ্বান্দ্বিকতার দ্বারা__ আমরা যা অনুভব করি আমরা তাই করি কারণ আমাদের শিকারি সংগ্রাহক ব্রেন সার্কিট এবং আমরা যা জানি তা আমরা জানি আমাদের এক্সট্রা-জেনেটিক্যাল শিক্ষার মধ্য দিয়ে।
আমরা যদি এ বিপজ্জনক সময়ে বাস করি তবে এটি পরিস্কার যে সমস্ত মানব সভ্যতাকে ইউনিট হিসেনে চিহ্নিত করা আমাদের আল্টিমেট প্রত্যাশা নয়। আমরা যদি ৪.৫ বিলিয়ন বছরের এ মূল্যমান উত্তরাধিকারসূত্রে অন্য কোনো একজন মানুষকে সম্মানের উপযুক্ত মনে করি, তবে কেনো আমরা একই আইডিন্টিফিকেশন সম্পূর্ণ প্রাণীজগতের উপর আরোপ করছিনা যারা একইভাবে ৪.৫ বিলিয়ন বছরের বিবর্তনের ফলাফল? আমরা শুধু গ্রহের সামগ্রিক অর্গানিজমের অত্যন্ত ক্ষুদ্র একটি ফ্র্যাকশনের প্রতি যত্মশীল__কুকুর, বেড়াল এবং গরু, উদাহরণস্বরূপ__কারণ তারা উপকারী অথবা তারা আমাদের তোষামোদ করছে। কিন্তু স্পাইডার, স্যালমন, সানফ্লাওয়ার সমানভাবেই আমাদের ভাই অথবা বোন।
আমি বিশ্বাস করি যে, আমাদের সেল্ফ আইডেন্টিফিকেশনের হরাইজন সম্প্রসারণ করার পেছনে আমরা যে জটিলতা অনুভব করি সেটি হলো স্বয়ং জেনেটিক্স। এক গোত্রের পিঁপড়া অন্য গোত্রের অনুপ্রবেশকারী কোনো পিঁপড়ার সাথে অস্তিত্বের জন্য যুদ্ধ করে। আমাদের সম্পূর্ণ মানব সভ্যতার ইতিহাস এমন অত্যন্ত ক্ষুদ্র অনেক পার্থক্য দ্বারা অধ্যুষিত যেমন- চামড়ার রঙ, দুর্বোধ্য ধর্মীয় বিশেষায়ন, ড্রেস ম্যানার এবং হেয়ার স্টাইল __ যা অপমান, দাসত্ব ও হত্যার কারণ!
একটি সত্তা যেটি দেখতে অনেকটা আমাদেরই মতো, যার সাথে আমাদের অতি-ক্ষুদ্র সাইকোলজিক্যাল পার্থক্য__ একটি তৃতীয় চোখ, যেমন , নীল চুল আবৃত নাক এবং কপাল __ কোনো একভাবে আমাদের মধ্যে বিদ্রোহের মনোভাব তৈরি করে।
এ ধরণের অনুভূতি যদিও আমাদেরকে একসময় টিকে থাকার ক্ষেত্রে সুবিধা প্রদান করতো কোনো হিংস্র প্রাণী অথবা প্রতিবেশী থেকে। কিন্তু আমাদের সময়ে, এ ধরণের অনুভূতি অবৈধ ও মারাত্মক। এমন একটি সময় আসবে যখন শুধু মানুষ ও অন্য কোনো পশুর জন্য শ্রদ্ধা ও ভক্তি কাজ করবে না, শ্রদ্ধা ও ভক্তি কাজ করবে সকল লাইফ ফর্মের প্রতি__ ঠিক যেমনি আমরা মহান কোনো শিল্পকর্ম অথবা নিদারুণ কোনো মেশিনের প্রতি অনুভব করি। তার মানে এই নয় যে আমরা আমাদের অস্তিত্বের সাথে সম্পৃক্ত অপরিহার্য প্রয়োজনীয়তাকে উপেক্ষা করবো।
টেটানাস ব্যাসিলুস ব্যাক্টেরিয়ার প্রতি আমাদের শ্রদ্ধার অর্থ এই নয় যে আমাদের শরীর তার কালচার মিডিয়াম হয়ে যাবে। কিন্তু একইসময় আমরা স্মরণ করতে পারি এ অর্গানিজমের বায়োকেমেস্ট্রি যা আমাদেরকে আমাদের গ্রহের অতীতে নিয়ে যায়। এই টেটানাস বেসিলুস মলিকিউলার অক্সিজেন দ্বারা দুষিত হয়, যেখানে আমরা স্বাধীনভাবে শ্বাস নিতে পারি। এই টেটানাস বেসিলুস আমাদের গ্রহের আদিম অক্সিজেন মুক্ত, হাইড্রোজেন সমৃদ্ধ পৃথিবীতে বিবর্তিত হয়েছিল। সকল জীবনের প্রতি শ্রদ্ধার বিষয়টি কয়েকটি ধর্মে যুক্ত হয়েছিল আমাদের এই প্লানেট আর্থে৷ উদাহরণস্বরূপঃ ইন্ডিয়ার জেইন। আর ঠিক এ জন্য অন্তত তাদের মধ্যে নিরামিষের প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়। কিন্তু প্রশ্ন হলো, কেনো উদ্ভিদ হত্যা করাটা প্রাণী হত্যা করার চেয়ে অধিক ভালো?
মানুষ অন্য প্রাণীকে হত্যা করা ছাড়া টিকে থাকতে পারে না, কিন্তু আমরা অন্যান্য অর্গানিজম জন্ম দেয়ার মাধ্যমে এখানে একটি ইকোলজিক্যাল কম্পেনসেশন দিতে পারি; আমরা ফরেস্ট তৈরি করার জন্য অনুপ্রাণিত করতে পারি, সীল ও তিমি হত্যা প্রতিরোধ করতে পারি। আমরা শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে প্রাণীদের উপর নির্যাতন কমিয়ে আনতে পারি, আমরা এখানে বসবাসরত সবার জন্য প্লানেট আর্থকে আরো বাসযোগ্য করে তুলতে পারি।