Can't find our books? Click here!
উন্নত বিশ্বের মানুষ কেনো বিজ্ঞান বিরোধীতা করে?

উন্নত বিশ্বের মানুষ কেনো বিজ্ঞান বিরোধীতা করে?

ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড সাধারণত ন্যাক্কারজনক। কিন্তু একজন তরুণের ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড তাকে লোকগাথার মহানায়কে পরিণত করেছিল। শিল্পবিপ্লবের শুরুর দিকে এ ব্যক্তি লেসেস্টারে বুননশিল্পের একজন শিক্ষানবিশ ছিলেন। যখন সুপারভাইজার তাকে কোনো খারাপ মাপের কাজের জন্য সমালোচনা করতো, যে প্রচন্ড আক্রোশে তেড়ে আসতো এবং তার বুননের মেশিনটি একটি বিশাল হ্যামার দিয়ে ভেঙে ফেলতো (অন্ততপক্ষে গল্প তাই বলে)। এই তরুণের নাম ছিল নেড লুড, তিনি পৃষ্ঠপোষকদের সন্ত হয়ে উঠেন, বিক্ষোভকারীরা যাদের ডাকে লুডাইটস! ইংল্যান্ডে দ্রুত প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের ফলে লুডাইটসরা বিভ্রান্ত হয়েছিল যেটাকে তারা মনে করতে শুরু করেছিল তাদের জীবিকা ও মূল্যবোধের জন্য ক্ষতিকর। তাদের প্রতিবাদের প্রিয় হাতিয়ার ছিল, গ্রেট এনোক যেটি ছিল একটি বিশাল হাতুড়ি, এনোক টেইলর নামক এক কামার এটা তৈরি করেছিল, তারা সমস্ত ইংল্যান্ড জুড়ে এই হাতুড়ি ব্যবহার করেছিল ইন্ডাস্ট্রিয়াল যন্ত্রপাতি ভেঙে ফেলার জন্য। পুলিশের সাথে তাদের সংঘর্ষ হয় এবং তাদের ভেতরকার ঝগড়া প্রায় মারাত্মক হয়ে উঠে। লুডাইটাসরা দাবি করতো যে তারা রহস্যজনক একটি চরিত্র কিং লুড, প্রিন্স লুড অথবা জেনারেল লুড দ্বারা পরিচালিত৷ কিন্তু বাস্তবে এ ধরণের কোনো মানুষের অস্তিত্ব ছিলোনা। এটি কেবল নেড লুডের অবাধ্যতার জন্য একটি চিৎকার ছিল।

রাজনীতি এবং অর্থনীতির উপর পরিচালিত আন্দোলনগুলো সাধারণত অদৃশ্য হয়ে যায় জনসাধারণের কল্পনা থেকে এবং নেড লুডের মেশিন ভাঙা সম্পর্কে আজ খুব কম মানুষই অবগত কিন্তু লুডাইটদের কাছে শতাব্দীজুড়ে এ সংস্কৃতি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। লুডাইটসরা এরকম চিহ্ন তৈরি করার কারণ হলো আমাদের সবচেয়ে আধুনিক প্রযুক্তিকে ধবংস করে ফেলার প্রবণতা চিন্তার গভীরতম চাপের প্রতিক। কিছু মানুষ সবসময় বিজ্ঞানের দিকে অবিশ্বাস ও সংশয় নিয়ে তাকিয়ে থাকে বিগত শতকে বিস্ময়কর সব বৈজ্ঞানিক উন্নতি সাধিত হওয়ার পরও। সবচেয়ে চুড়ান্তে যারা অবস্থান করছে তারা হলো স্বঘোষিত “নিও লুডাইটস”!  এর একটি উদাহরণ হলো ১৯৯৬ সালের কংগ্রেসের সেকেন্ড লুডাইটিসের অংশগ্রহণকারীদের ডাকা একটি সম্মেলন যেটি ” অদ্ভুত ও ভয়ানক কম্পিউটার যুগের বিপক্ষে” ডাকা হয়েছিল। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পর্কে আমাদের যৌক্তিক সংশয় সম্ভবত সামাজিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী কিন্তু এন্টি-সায়েন্টিফিক থট যখন ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ে তখন এটি আমাদের জন্য বিপর্যয় ডেকে নিয়ে আসে। আমাদের সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হলো ক্লাইম্যাট চেঞ্জ। একটি বিতর্ক যা প্রচুর পরিমাণ এন্টিসায়েন্টিফিক চিন্তায় পরিপূর্ণ। জেমস ইনহোফ, যিনি ২০১৫ সালে সিনেটে একটি স্নোবল হাতে প্রবেশ করার জন্য বিখ্যাত ক্লাইম্যাট চেঞ্জের বিপক্ষে যুক্তি প্রদর্শন করে তিনি বহু বছর এন্টিসায়েন্টিফিক চিন্তাকে অনুপ্রাণিত করেছেন। ২০০৩ সালে তিনি সতেরজন ক্লাইম্যাট সায়েন্টিস্টের বিপক্ষে সরাসরি পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। এটা নিশ্চিত যে ইনহোফের এ দাবিগুলোকে কেউ মর্জাদা দেয়নি কিন্তু তাদের এ বার্তাগুলো নিরবিচ্ছিন্নভাবে রিজোন্যাট হতে থাকে। ওকলাহোমানস দ্বারা তিনি চতুর্থবারের জন্য সিনেট নির্বাচিত হন, অতিসম্প্রতি ২০১৪ সালে ৬৮% ভোটে।

আমাদের সময়ের সবচেয়ে পরিবর্তনশীল প্রযুক্তিগুলোর মধ্যে একটি হলো জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং। এটিও তীব্র বিরোধীতার একটি লক্ষ্য ছিল। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং আমাদের আধুনিক বিজ্ঞানের একটি বিস্ময়কর জায়গা। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং হলো কোনো একটি অর্গানিজমের ডিএনএ-র মধ্যে একটি জিন এড করে নতুন কোনো ভেরিয়েশন তৈরি করা। টমেটো ও সয়াবিনের কিছু বৈচিত্র্যকে জেনেটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার করা হয় যার ফলে সেগুলো আরো অনেক বেশি রোগ প্রতিরোধী হয়ে উঠে। বিটা ক্যারোটিন হলো একটি কেমিক্যাল যা খাদ্যের মধ্যে প্রাকৃতিকভাবে সংঘটিত হয় বিশেষ করে গাজর ও মিষ্টি আলুর মধ্যে। বিটা কেরোটিন শরীর দ্বারা ভেঙে যায় এবং ভিটামিন A তে পরিণত হয়। এ ভিটামিন আমাদের বিভিন্ন শারীরিক ফাংশন ও দৃষ্টিশক্তির উন্নতির জন্য অত্যন্ত ভালো। উন্নয়নশীল বিশ্বের অনেক শিশু তাদের খাবার থেকে যথেষ্ট বিটা ক্যারোটিন পায়না যা মারাত্মক কিছু মেডিক্যাল সমস্যা জন্ম দেয়। ২০০০ সালে ইউরোপিয়ান বিজ্ঞানীরা জেনেটিক্যালি মোডিফায়েড একটি চালের প্রকরণ তৈরি করে যেখানে ভিটা ক্যারোটিন প্রদান করা হয়েছে। এ চালের নাম গোল্ডেন রাইচ। এটি ছিল শিশুদের প্রধান খাবার আর তাই গোল্ডের রাইচের ভেতর বিপুল সম্ভাবনা আছে। কিন্তু জেনেটিক্যালি মডিফায়েড অর্গানিজমের বিপক্ষের লোকেরা বিষয়টিকে এভাবে দেখেননি। ২০১৩ সালে একদল প্রতিবাদী গোল্ডেন রাইচ ফিল্ডে হানা দেয় এবং সমস্ত ফসলকে ধবংস করে দেয়। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস হলো , এটা ছিলো বিজ্ঞানীদের টেস্ট ফিল্ড যার মাধ্যমে তারা গোল্ডেন রাইচের নিরাপত্তা ও কার্যকারীতা সম্পর্কে গবেষণা করছিলেন। তাদের এই ধ্বংসযজ্ঞ শুধুমাত্র ফসলই নষ্ট করেনি বরং বৈজ্ঞানিক জ্ঞানও ধবংস করে দিয়েছিল যে জ্ঞান হয়তো প্রতিবাদীরা যে জন্য বিক্ষোভ করেছিল সেক্ষেত্রেই তাদের সাহায্য করতে পারতো।

ভ্যাক্সিনেশনের হলো আর একটি ইস্যু যেখানে বিরুদ্ধ পক্ষের মধ্যে একটি নেগেটিভ কনসিকোয়েন্স কাজ করে। ২০০০ শতকের গোড়ার দিকে আমেরিকাতে হাম নির্মূল হয়েছিল প্রতি বছর ১০০ টিরও কম। টিকা দেয়ার হার কমে যাওয়ার কারণে ২০১৪ সালে এটি বৃদ্ধি পায় ৬০০ তে। কোলারাডো, বল্ডারে, অত্যন্ত উচ্চশিক্ষিত বাবা মায়ের ১০ শতাংশ সন্তানকে ভ্যাক্সিন দিতে রাজি ছিলনা। যারা ভ্যাক্সিনের বিপক্ষে কথা বলে তারা মাঝে মধ্যে বিজ্ঞানের ভাষা ব্যবহার করে। তারা সায়েন্টিফিক স্টাডি ও স্ট্যাটিককে অস্বীকার করে। ভ্যাক্সিন বিরোধীরা মাঝেমাঝে তাদের এন্টি-সায়েন্টিফিক সেন্টিমেন্টকে লুকিয়ে রাখে, মেডিক্যাল প্রফেশনালদের প্রতি অবিশ্বাস প্রকাশ করে এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণাকে প্রত্যাখ্যান করে। এখানে একটি ভালো উদাহরণ রয়েছে, একটি জনপ্রিয় এন্টি-ভ্যাক্সিনেশন ওয়েবসাইট ছয়টি কারণ গণনা করেছে ভ্যাক্সিনেশনকে না বলার জন্য আর তা হলো তারা ডাক্তারকে বিশ্বাস করেনা ; আর এজন্য আপনার শিশু সে সকল বিশেষজ্ঞের কথাও গ্রহণ করবেনা যারা নিরাপদ। এটা সম্ভব যে ডাক্তার ভুল হতে পারে। সবকিছুর পরও তারা মানুষ। কিন্তু বাস্তবে আপনার ডাক্তার আমেরিকান মেডিক্যাল এসোসিয়েসনের দেখানো একটি স্ট্যান্ডার্ড লাইনেরই পুনরাবৃত্তি করেন। আপনি যদি মনে করেন আপনি তাদের সৎ মূল্যায়ন করেছেন, তবে আর একবার ভাবুন।

The Public Understanding of Science

ওয়াল্টার বোদমার, জার্মানে জন্ম নেয়া একজন জেনেটিসিস্ট, ইউকে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির একজন প্রফেসর। ১৯৮৫ সালে রয়েল সোসাইটি লন্ডন তাকে নিয়োগ করেছিলেন, বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন সায়েন্টিফিক সোসাইটি, একটি দলকে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য ব্রিটেনের বিজ্ঞানীদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পর্কিত সাম্প্রতিক মানসিক পরিস্থিতি মূল্যায়ন করার জন্য। রয়েল সোসাইটি ব্রিটেনের এন্টি সায়েন্টিফিক সেন্টিমেন্ট দ্বারা আতঙ্কগ্রস্ত ছিলেন, সামাজিক কল্যাণের জন্য যেটি ছিল অত্যন্ত ক্ষতিকর। এ দলের গবেষণার ফলাফল ও সুপারিশগুলো একটি সেমিনাল পেপারে প্রকাশ করা হয় যেটিকে বর্তমানে বলা হয় বোদমার রিপোর্ট। পূর্ববর্তী গবেষণা তাদের মানসিকতা সরাসরি পরিমাপ করতে চেয়েছিল কিন্তু বোদমার ও তার সহযোগীরা একটি সরল ও সজ্ঞামূলক ধারণা দাবি করলেন আর সেটি হলো; বিজ্ঞানের প্রতি বিরোধীতা জন্ম হয় জ্ঞানের অভাবে, মানুষের মাঝে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পর্কে উন্নতমাপের বোধ সৃষ্টির মাধ্যমে, সমাজের মধ্যে একটি অনুকূল মনোভাব সৃষ্টি করা সম্ভব এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সুফল গুলো তাদেরকে প্রদান করা সম্ভব। তাদের মডেল মতে, এন্টিসায়েন্টিফিক চিন্তা তৈরি হয় ত্রুটিযুক্ত জ্ঞানের কারণে এবং যখনই এ ত্রুটি সংশোধন হয়ে যায় এটি অদৃশ্য হয়ে যাবে। বোদমারের এ রিপোর্ট অনেক বিজ্ঞানীকে অনুপ্রাণিত করে বিজ্ঞান সম্পর্কে পাবলিক আন্ডারেস্টেন্ডিং সম্পর্কে বুঝতে। যুক্তরাষ্ট্রে, জাতীয় বিজ্ঞানবোর্ড এ দায়িত্বের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এটা তাদের জন্য অত্যন্ত কঠিন চ্যালেঞ্জ ছিল কিভাবে বিজ্ঞান সম্পর্কে পাবলিক আন্ডারেস্টেন্ডিং পরিমাপ করবে। বিজ্ঞান অনেক বিশাল ও জটিল এবং কোনো সিম্পল টেস্টই পারফেক্ট না। ন্যাশনাল সায়েন্স বোর্ড যে উপাদানগুলোর উপর গুরুত্ব দেয় তা ছিল কিছু মৌলিক বাস্তব প্রশ্নের সারি।৷ ১৯৭৯ সালে ন্যাশনাল সায়েন্স বোর্ড যখন পরিসংখ্যান শুরু করেছিল তারা বিশেষত যে প্রশ্নগুলো করেছিল তা হলো,

১. সত্য অথবা মিথ্যাঃ পৃথিবীর কেন্দ্র খুবই উত্তপ্ত।

# সঠিক উত্তর দিয়েছেন ৮৪%।

২. সত্য বা মিথ্যাঃ মহাদেশগুলো মিলিয়ন মিলিয়ন বছর ধরে তাদের লোকেশন পরিবর্তন করছে ও পরিবর্তন করতেই থাকবে।

# সঠিক উত্তর দিয়েছেন ৮০%।

৩. পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘোরে নাকি সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘোরে।

#সঠিক উত্তর দিয়েছেন ৭৩%

৪. সত্য বা মিথ্যা; সকল রেডিও একটিভিটি মানুষের তৈরি।

# সঠিক উত্তর ৬৭%

৫. সত্য অথবা মিথ্যাঃ ইলেক্ট্রন এটমের থেকে ক্ষুদ্র।

#সঠিক উত্তর দিয়েছেন ৫১ শতাংশ।

৬. সত্য অথবা মিথ্যাঃ লেজার সাউন্ড ওয়েভকে ফোকাস করে কাজ করে।

#সঠিক উত্তর দিয়েছেন ৪৭%

৭. সত্য অথবা মিথ্যাঃ মহাবিশ্ব বিপুল এক বিস্ফোরণে জন্ম নিয়েছে।

#সঠিক উত্তর দিয়েছিল ৩৮%

৮. সত্য অথবা মিথ্যাঃ কোনো জীবিত সত্তাকে ক্লোনিং করলে জেনেটিক্যালি আইডেন্টিক্যাল কপি তৈরি হয়।

# সঠিক উত্তর দিয়েছেন ৮০%

৯. সত্য অথবা মিথ্যাঃ বাবার জিনই নির্ধারণ করে সন্তান মেয়ে হবে নাকি ছেলে।

#সঠিক উত্তর দিয়েছেন ৬১%

১০. সত্য অথবা মিথ্যাঃ জেনেটিক্যালি মডিফায়েড টমেটো যে জিন ধারণ করে সাধারণ টমেটো সে জিন ধারণ করেনা।

# সঠিক উত্তর দিয়েছেন ৪৭%

১১. সত্য বা মিথ্যাঃ এন্টিবায়োটিক ভাইরাসের পাশাপাশি ব্যাক্টেরিয়াও হত্যা করে।

# সঠিক উত্তর দিয়েছেন ৫০%

১২. সত্য বা মিথ্যাঃ মানুষ, যেমনটি আজ আমরা জানি, প্রাচীন কোনো প্রাণী থেকে বিবর্তিত হয়েছে।

#সঠিক উত্তর দিয়েছেন ৪৭%

যদিও ৭ এবং ১২ এ দুটি প্রশ্ন অনেকের ধর্মীয় বিশ্বাসের সাথে সাংঘর্ষিক। কিন্ত যদি বলা হতো “বিবর্তন তত্ত্ব অনুসারে” অথবা “এস্ট্রোনোমারদের মতে ” তবে সঠিক উত্তর হত ৭০%। আজও এ প্রশ্নগুলোর সামগ্রিক পারফরম্যান্স আপনাকে হতাশ করবে। মানুষ যদি শুধু অনুমানও করতো তবে তারা ৫০ শতাংশ সঠিক উত্তর দিতে পারে। আমেরিকানদের অজ্ঞতা দেখে যদি আপনার হাসি পায় তবে আর একবার ভেবে দেখুন। চায়না, রাশিয়া, ই-ইউ, ইন্ডিয়া, জাপান এবং সাউথ কোরিয়া কেউই তেমন ভালো করেনি এবং অধিকাংশ সামান্য খারাপই করেছিল। এ সব প্রশ্ন জিজ্ঞেস করার পাশাপাশি মাঝেমাঝে বিজ্ঞান সম্পর্কে তাদের মানসিকতাও জিজ্ঞেস করা হয়, দেখা যায় যে, যারা সঠিক উত্তর দিতে সক্ষম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পর্কে তাদের মনোভাব অনুকূল। ২০১৩ সালের একটি স্টাডিতে, স্টিভেন স্লোম্যান একটি কুইজের আয়োজন করেছিলেন এবং মানুষকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, টেকনোলজি, জেনেটিক্যালি মোডিফায়েড ফুড, স্টেম সেল, ভ্যাক্সিনেশন, ন্যানো টেকনোলজি, নিউক্লিয়ার পাওয়ার এবং ফুড ইর‍্যাডিয়েশন সম্পর্কে। যে সকল ব্যক্তি একটু বেশি সঠিক উত্তর দিয়েছিল তাদের বিবৃতি ছিল এমন যে, টেকনোলজি গ্রহণযোগ্য কারণ এর ঝুঁকি কম এবং সমাজের জন্য এর রয়েছে বিশাল ভেনিফিট।

অতএব দেখা যাচ্ছে যে জ্ঞান ও মানসিকতার সাথে একপ্রকার সম্পর্ক আছে, যদিও এ সম্পর্ক ছিল খুবই দূর্বল। কিন্তু ডেফিসিট মডেলের ভেতর একটি প্রকৃত সমস্যা ছিল। প্রায় এক দশক মানুষকে বিজ্ঞান শিক্ষা দেয়া হয়েছিল বোদমারের রিপোর্টের লক্ষ্য বাস্তবায়ন করার জন্য কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বোদমার রিপোর্ট বলেছিল, সমাজে বৈজ্ঞানিক সাহিত্য প্রচারের মাধ্যমে পজেটিভ দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলা সম্ভব কিন্তু সেটা মিথ্যা প্রতীয়মান হলো। যদিও এ লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য অজস্র প্রচেষ্টা ও শক্তি অপচয় হলো, মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার খরচ হল কারিকুলাম ডিজাইন, প্রচার ও যোগাযোগের জন্য কিন্তু বাস্তবক্ষেত্রে সবই বৃথা গেলো। এন্টিসায়েন্টিফিক বিশ্বাস তারপরও সুবিস্তৃত ও শক্তিশালী এবং শিক্ষা মানুষকে কোনো সহযোগীতাই করতে পারেনি।

ভ্যাক্সিন বিরোধীতা একটি ভালো উদাহরণ যেখানে শিক্ষা মানুষের মানসিকতা পরিবর্তনের ক্ষেত্রে নিষ্ক্রিয়। ব্র‍্যান্ডান নাহেন, ডার্টমাউথের একজন পলিটিক্যাল সায়েন্টিস্ট এবং তার সহকর্মীরা একটি স্টাডি পরিচালনা করেছিলেন এটা দেখার জন্য যে ইনফরমেশন প্রদান করার মাধ্যমে MMR (Measles, Mumps, Rubella) ভ্যাক্সিনের প্রতি গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি করা যায় কিনা। পিতামাতাকে বিভিন্ন ফর্মেটের সুনির্দিষ্ট কিছু ইনফরমেশন দেয়া হলো এবং তারপর তাদের প্রশ্ন করা হলো ভ্যাক্সিনেশন ও অটিজমের সম্পর্ক নিয়ে তারা কি বিশ্বাস করে, মারাত্মক সাইড ইফেক্টের সম্ভাবনা এবং তাদের শিশুদের ভ্যাক্সিন নেয়া উচিত কি না। একটি কেসে, ভ্যাক্সিন নেয়ার অক্ষমতার ফলে সৃষ্ট সম্ভাব্য কিছু ফলাফল দেখানো হয়। আর একটি ক্ষেত্রে, পিতামাতাকে হাম্প, মাম্প ও রুবেলা আক্রান্ত শিশুদের ছবি দেখানো হয়। এবং তৃতীয়ত; পিতামাতাকে হাম্প আক্রান্ত শিশুদের ইমোশনাল গল্প শোনানো হয়। এবং অবশেষে কিছু পিতামাতাকে সেন্ট্রার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল ও প্রিভেন্টেশন থেকে ইনফরমেশন প্রদান করা হয় যেনো ভ্যাক্সিন ও অটিজমের সম্পর্ক ডিভাঙ্ক করা যায়। ফলাফল ছিল হতাশাজনক। কোনো ইনফরমেশনই পিতামাতাকে ভ্যাক্সিনের প্রতি আকৃষ্ট করতে পারেনি। প্রকৃতপক্ষে কিছু ইনফরমেশনকে ছুড়ে ফেলা হয়। অসুস্থ্য শিশুদের ছবি দেখার পর পিতামাতার মধ্যে ভ্যাক্সিন ও অটিজমের মধ্যকার সম্পর্কের বিশ্বাস আরো বেড়ে যায়, ইমোশনাল স্টোরি পড়ার পর পিতামাতার মধ্যে ভ্যাক্সিনের সিরিয়াস সাইড ইফেক্ট সম্পর্কে বিশ্বাসের পরিমাণ আরো তীব্র হয়ে উঠে।

তাহলে মূল সমস্যাটা কোথায়? এটি এমন একটি প্রশ্ন যা বছরের পর বছর বিভিন্ন জার্নালে ঘুরে বেড়িয়েছিল। বর্তমানে এ প্রশ্নের যে উত্তরটি প্রভাবশালী তা হলো কোনো সমস্যাই নেই। সায়েন্টিফিক এটিটিউড আসলে যৌক্তিক প্রমাণের উপর গড়ে উঠেনি আর এ জন্য তথ্য প্রদান করে এটাকে কখনো পরিবর্তন করা সম্ভব না। তাদের মানসিকতা প্রাসঙ্গিক ও সাংস্কৃতিক হোস্ট  দ্বারা নির্ধারিত পরিবর্তনশীলতার বিপক্ষে এ ফ্যাক্টরগুলোই তার ইমিউন সিস্টেম গড়ে তোলে।

Committing to the Community

এ নতুন দৃষ্টিকোণের পেছনে নেতৃত্বাশীল একটি কন্ঠস্বর ডান কাহান, ইয়েলের একজন আইন প্রফেসর। আমাদের মানসিকতা আসলে যুক্তির উপর গঠিত নয় যা প্রমাণের মূল্যায়ন দ্বারা পৃথকীকৃত। এর কারণ হলো আমাদের বিশ্বাস আইসোলেটেড কোনো ডেটা নয় যেটি আমরা গ্রহণ করতে পারি ও বিচ্যুত। তার পরিবর্তে, বিশ্বাস অন্যান্যদের বিশ্বাস, বিভাজিত সংস্কৃতি ও আমাদের আইডেন্টির সাথে গভীরভাবে বিজড়িত( Intertwined)। বিশ্বাসের বিচ্যুতির মানে অনেক সময় এমনটাই বোঝায় যে, অন্যান্যদের বিশ্বাস থেকে সম্পূর্ণ একটি হোস্টকে পৃথকীকরণ, আমাদের কমিউনিটিকে পরিত্যাগ, তাদের বিপক্ষে চলে যাওয়া যারা আমাদের উপর আস্থা রাখে ও আমাদের ভালোবাসে এবং সংক্ষেপে আমাদের আইডেন্টিটিকেই চ্যালেঞ্জ করা। এ দৃষ্টিকোণ থেকে চিন্তা করলে তবে, এখানে কী বিস্ময়ের কিছু আছে GMOs, ভ্যাক্সিন,বিবর্তন অথবা গ্লোবাল ওয়ার্মিং সম্পর্কে সামান্য পরিমাণ ইনফরমেশন অত্যন্ত ক্ষুদ্রতর প্রভাবই বিস্তার করবে তাদের বিশ্বাস ও মানসিকতার উপর? আমাদের জ্ঞানের উপর সংস্কৃতির যে প্রভাব সেটি এ সামান্যতম শিক্ষাকে ডুবিয়ে দেয়।

জ্ঞানের উপর সংস্কৃতির প্রভাব ব্যাখ্যা করার জন্য একটি অন্যতম উদাহরণ মাইক ম্যাকহার্গ। একজন পডকাস্টার ও ব্লগার। তিনি বেড়ে উঠেছিলেন ফ্লোরিডার, টালাহ্যাসিতে( Tallahassee), ফান্ডামেন্টালিস্ট খ্রিষ্টানের একজন সদস্য, তিনি অসংখ্য বিশ্বাস সমর্থন করতেন যা সায়েন্টিফিক কনসেনশাসের বিপক্ষে। চার্চ লিটারারি বাইবেলকে সমর্থন করতেন, ইয়ং আর্থ ক্রিয়েশনিজমে

বিশ্বাস করতেন, বিবর্তনকে অস্বীকার করতেন এবং মেডিসিনের পরিবর্তে তিনি উপাসনাকে বিকল্প মনে করতেন। এ ব্যক্তিটিকে পরবর্তীতে সাইন্স মাইক ডাকা হতো। যিনি মৌলিকভাবে এ বিষয়গুলোতে বিশ্বাস করতেন। যাইহোক, তার বয়স যখন ত্রিশ তখন তিনি সায়েন্টিফিক লিটারেচার পড়তে শুরু করেন এবং তার বিশ্বাসগুলো আস্তে আস্তে উবে যেতে শুরু করলো। তিনি র‍্যান্ডোমাইজ কন্ট্রোল ট্রায়াল সম্পর্কে পড়াশুনা করলেন যা প্রার্থনা সম্পর্কে তার বিশ্বাস ভেঙে দিলো, ফিজিক্স নিয়ে গবেষণা করে তিনি মহাবিশ্বের প্রকৃত বয়স জানতে পারলেন, তিনি বায়োলজি ও প্যালেনটোলোজি পড়লেন যা তাকে বিবর্তনকে সমর্থন করতে বাধ্য করলো। এরপর তিনি একটি পডকাস্ট আয়োজন করলেন, “Ask Science Mike”, সেটি ছিল ধর্ম ও বিজ্ঞানের একটি ইউনিক মিক্স। অধিকাংশ শোতে রিলেটিভিটি, বিগব্যাং কসমোলজি, মৃত্যুর পর কী হবে ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হতো এবং মাঝেমাঝে মেডিটেশন ও ঈশ্বরের প্রকৃতি সম্পর্কেও আলোচনা করা হতো। একটি এপিসোডে তিনি মাস্টারবেশন ও মারিজুয়ানার ট্যাবু সম্পর্কে আলোচনা করছিলেন। একজন কলার তাকে প্রশ্ন করলেন, কিভাবে সে ফান্ডামেন্টাল চার্চের অজস্র বিশ্বাস সম্পর্কে প্রশ্ন তুলবে এবং এগুলোকে মোকাবিলা করার উপদেশ খুঁজবে? সাইন্স মাইক যে উত্তরটি দিয়েছিলেন সেটি ছিলোঃ

আমি কী আপনাকে এমন একটি জীবনের উপদেশ প্রদান করবো যেখানে আপনি সমাজের চোখে উদ্ভট? সমাজের চোখে উদ্ভট হওয়ার প্রয়োজন নেই। আপনি এ মুহূর্তে টাইম বোম্ব। কারণ আপনি সবসময় সমাজের সাথে অভিনয় করতে পারবেন না, কখনো না কখনো আপনি সততার সাথে কথা বলবেন এবং চার্চে মারাত্মক বিপর্যয় ও বিশাল কোলেটারিয়াল ডেমেজ হবে। এটি সামনের দিকে পথ চলার সময়। এখনই সময় কমিউনিটিতে বিশ্বস্ত হওয়া যারা বিশ্বাস করে আপনি বিশ্বাস করেন। যখন এটি ঘটবে, আপনি সম্পর্ক হারিয়ে ফেলবেন। কিছু মানুষ দ্বিমত করতে একমত নয় এবং সে সম্পর্কগুলো আরো বেশি এবিউসিভ হয়। এখানে প্রচুর যন্ত্রণা কারণ কিছু মানুষ আমার এতটাই প্রিয় যে আমি আর বেশিকিছু বলতে পারবোনা…….. আমাদের পক্ষে সম্ভব নয় সে সম্পর্ক বজায় রাখা যে সম্পর্ক একদিন আমাদের ছিল এবং এটি কর্কশ, আমি মিথ্যা বলবো না এটি রুক্ষ। (এ প্রসঙ্গে পড়ুনঃ ব্রেন কি কমিউনাল চিন্তার জন্য অভিযোজিত?

আপনি যখন সায়েন্স মাইককে সায়েন্স সম্পর্কে কথা বলতে দেখবেন, আপনি বুঝতে পারবেন যে সে স্মার্ট, থটফুল ও ডেলিভারেটিভ এবং তার রয়েছে বুদ্ধিমান নম্রতা, সে যে বিষয়ে জানেনা সে বিষয়ে রয়েছে তার সচেতনতা এবং সে সচেতন জটিল বিষয় পরিচ্ছন্ন করার ক্ষেত্রে। কিন্তু তার সমস্ত জীবনজুড়েই সে একটি বিশ্বাস লালন করছে অধিকাংশ বিজ্ঞানী যেটাকে বলে ভয়ানক। যখন তাকে তার বিশ্বাস সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয় তখন তার জীবন ও সম্পর্কের সে দিকগুলোই উঠে আসে যেগুলো তার কাছে প্রিয়। আর এটাই সংস্কৃতির ক্ষমতা। আমাদের বিশ্বাস আমাদের নিজেদের নয়। এ বিশ্বাস একটি কমিউনিটির মধ্যে ভাগ করা। আর এজন্য এটাকে পরিবর্তন করা খুবই কঠিন। সায়েন্স মাইকের অভিজ্ঞতা আমাদের কাছে উন্মোচন করে জ্ঞানের ইলিউশন আসলে কোথা থেকে সৃষ্টি হয়। আমরা সাধারণত ব্যক্তিগতভাবে এতবেশি জানিনা যে আমরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পর্কে জ্ঞানময় ও সূক্ষ্ম দৃষ্টিকোণ গড়ে তুলতে পারবো। খুব সাধারণত আমাদের কাছে কোনো নির্বাচন নেই আমরা শুধু যাদের প্রতি আস্থা রাখি তাদের সাথে এডপ্ট হই। আমার ও আমার চারপাশের মানুষের মানসিকতা একে অন্যের পরিপূরক হয়ে উঠে। আর যখন আমাদের মধ্যে খুব শক্ত কোনো মতামত দেখা যায় এটি আমাদের চিন্তা করতে বাধ্য করে যে এর অত্যন্ত গভীর একটি শিকড় আছে, আমরা মনে করি আমরা প্রচুর পরিমাণ জানি, যতটা সত্য জানি তারচেয়ে।

এর একটি ভালো উদাহরণ এসেছিল স্টিভেন স্লোম্যানের পরিচালিত একটি কুইজ স্টাডি থেকে। তারা একদল লোককে প্রশ্ন করলেন, বিজ্ঞানের সাক্ষরতা ও প্রযুক্তি সম্পর্কে তাদের মানসিকতা সম্পর্কে। অংশগ্রহণকারীদের আরো বলা হয় তারা বিজ্ঞান সম্পর্কে কী জানে তা মূল্যায়ন করার জন্য৷ দেখা গেলো, যদিও বিজ্ঞানের সাক্ষরতার সাথে বিজ্ঞান সম্পর্কে তাদের নিজস্ব জ্ঞান মূল্যায়নের কোনো সম্পর্ক নেই কিন্তু যারা একটু বেশি প্রশ্নের উত্তর দিতে পেরেছিল তাদের মধ্যে ভুলভাবে এমন একটি মানসিকতা দেখা গিয়েছিল যে তারা অনেক বেশি বিজ্ঞান বোঝে। এ আত্মবিশ্বাস বেশ যুক্তিসঙ্গত মনে হতে পারে কারণ এটি কখনো পরীক্ষা করা হয়নি। আমাদের চারপাশে এমন অসংখ্য মানুষ বাস করে যারা খুব কম পরিমাণই জানে। আমরা কমিউনিটি অব নলেজে বাস করি এবং দূর্ভাগ্যবশত কমিউনিটি মাঝেমাঝে বিজ্ঞানকে ভুল মনে করে৷ বিজ্ঞান সম্পর্কে সাক্ষরতা সৃষ্টির সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবে, যদি কমিউনিটির সর্বসম্মতি তৈরি না হয় অথবা লার্নারদের ভিন্ন কোনো কমিউনিটির অন্তর্ভুক্ত করা না যায়।

এসবকিছু আপনার নিকট এখন সম্ভবত পরিচিত মনে হচ্ছে। জটিল ইস্যুতে মানুষের সীমিত বোধ কাজ করার প্রবণতা দেখা যায়। তারা কতটুকু জানে সেটা অনুধাবন করার প্রবণতাও তাদের মধ্যে কাজ করেনা, তাদের বিশ্বাসের বেসিস হিসেবে তারা পুরোপুরিভাবে কমিউনিটি নলেজের উপর ভর করে। এই আবেগময়, পোলারাইজড মনোভাব পরিবর্তন করা কঠিন। তারমানে কী এই যে ডেফিসিট মডেল আমাদের ত্যাগ করা উচিত? মানুষকে শিক্ষিত করে তোলার প্রচেষ্টা কি তবে অন্তঃসারশূন্য?

বিজ্ঞানের একটি বড় মাপের লিমিটেশন হলো বিজ্ঞানের সাক্ষরতার উপর গবেষণা সায়েন্টিফিক ফ্যাক্টের জ্ঞানের উপর নির্ভরশীল। ফ্যাক্ট নির্ভর বিজ্ঞানের প্রশ্ন খুব ভালো কিছু করতে পারেনা ইনফরমেশন ট্যাপ করার ক্ষেত্রে যে ইনফরমেশন কোনো ব্যক্তির মানসিকতা সম্পর্কে বলবে। ফ্যাক্ট মনে রাখা খুবই কঠিন বিশেষ করে তখন যখন এটি আমাদের গভীর বোধ দ্বারা আনসাফোর্টেড হয়। আমাদের মধ্যে খুব অল্প সংখ্যক মানুষই বৈজ্ঞানিক ফ্যাক্টের উপর ভালো ধারণা রাখে। আমাদের মস্তিষ্ক আসলে সকলকিছু বিস্তারিত মনে রাখার জন্য ডিজাইন করা হয়নি এবং বস্তু কিভাবে কাজ করে সে ব্যাপারে আমাদের জ্ঞান ঝাপসা।

আসুন একটি কুইজ কুয়েশ্চন নির্বাচন করিঃ সত্য বা মিথ্যা, এন্টিভায়োটিক ভাইরাস ও ব্যাক্টেরিয়াকে হত্যা করে। আমরা যখন এ ধরণের প্রশ্ন দ্বারা বিজ্ঞানের সাক্ষরতা মূল্যায়ন করি এটি খুবই প্রাকৃতিক যে ৫০ শতাংশ আমেরিকান এ প্রশ্নগুলোর উত্তর জানেনা এবং তারা আমাদের প্রশ্ন করতে পারে কীভাবে তারা অবশিষ্ট ৫০ শতাংশের মত হতে পারে। আমরা যদি একটু কম উদার হই তবে বলতে পারি, এ মানুষগুলোর সাথে কী হয়েছে! মিডিয়ার উদারতার প্রতি কোনো আকর্ষণ নেই। সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং এর উপর বার্ষিক রিপোর্টে আমরা প্রত্যাশা করি একটি বিশাল হেডলাইন “DUMB101: 1/4 আমেরিকান জানেনা যে পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘোরে। কিন্ত তারা একটি পয়েন্ট মিস করে। একটু ভিন্ন পদ্ধতিতে চিন্তা করার মাধ্যমে, যারা প্রশ্নের উত্তর দিতে সক্ষম হয়েছে তাদের প্রতি গুরুত্ব না দিয়ে বরং সেদিকে শুরুত্ব দেয়া তারা আসলেই ব্যতিক্রমী কি না। সত্যিকার অর্থে যে সব ব্যক্তিরা জানেন এন্টিবায়োটিক শুধুমাত্র ব্যাক্টেরিয়ার বিপক্ষে কাজ করে তারা এটিকে শুধু একটি আইসোলেটেড ফ্যাক্ট হিসেবে জানে, অধিকাংশ বিস্তারিত তার জানা নেই।। আমাদের মধ্যে কতজন ব্যক্তি আছেন সুনির্দিষ্টভাবে ভাইরাস ও ব্যাক্টেরিয়ার পার্থক্য  বলতে পারবেন, এন্টিবায়োটিক আসলে কী করে, কেনো এন্টিবায়োটিক একটির উপর ক্রিয়াশীল অন্যটির উপর ক্রিয়শীল নয়? এটি বাস্তবসম্মত নয় যে সাধারণ মানুষ ডজন ডজন সায়েন্টিফিক টপিক সম্পর্কে গভীর আন্ডারেস্টেন্ডিং রাখবে। আর এ জন্যই আমরা অত্যন্ত গভীরভাবে কমিউনিটি নলেজের উপর নির্ভর করি। আমরা পূর্বের অধ্যায়ে জেনেছিলাম মানুষের কগনিটিভ সিস্টেম কিভাবে কার্যকারণের ভিত্তিতে যুক্তিবিচার করে। মানুষ কজাল মডেল সম্পর্কে যুক্তি প্রয়োগ ও গঠন করে। এর পরের অধ্যায়ে দেখেছি, আমাদের ব্যক্তিগত মডেল অস্পষ্ট ও অসম্পূর্ণ, সরাসরি এটি আমাদের অভিজ্ঞতা দ্বারা পক্ষপাতদুষ্ট। এ মডেল আমাদের মানসিকতায় ভূমিকা রাখে।

এখানে একটি উদাহরণ রয়েছে কীভাবে অত্যন্ত সাধারণ কজাল মডেল আমাদের মিথ্যা বিশ্বাসকে অনুপ্রাণিত করে। গবেষক ভেরোনিকা, লরেন ব্লক এবং ডেভিড ফারো দেখিয়েছেন যে, মানুষ যখন শ্রমসাধ্য কর্মকান্ডে জড়ায় তখন ফার্মাসিউটিক্যাল প্রোডাক্টগুলো ক্ষয় হতে থাকে৷। উদাহরণস্বরূপঃ যে সব ব্যক্তিরা এনার্জি এনহেন্সিং ক্যান্ডি গ্রহণ করে তারা বিশ্বাস করে যে এর কার্যকারীতা খুব অল্প সময়ের জন্য স্থিতিশীল হবে যখন সে কঠোর পরিশ্রম করবে। কিন্তু বাস্তবে একটি ড্রাগ কতক্ষণ কাজ করবে তার সাথে পরিশ্রমের কোনো সম্পর্ক নেই। আমাদের এ বিশ্বাসের পেছনে বাস্তব জগতের অন্যকোনো কজাল মডেল কাজ করছে যেখানে পরিশ্রমের সাথে রিসোর্স শেষ হয়ে যায়। যেমন- একটি গাড়ি পাহাড়ে উঠার সময় অধিক গ্যাস খরচ করে ফ্ল্যাট গ্রাউন্ডে ট্রাভেল করার পরিবর্তে৷ আবার একজন বাইসাইকেল রাইডার উঁচু পাহাড়ে উঠার সময় বেশি ক্যালোরি খরচ করে। এখানে প্রকৃত ভুল একাডেমিক নয়। ভুল কজাল মডেল মানুষকে অধিক ফার্মাসিউটিক্যাল প্রোডাক্ট ভোগ করার জন্য অনুপ্রাণিত করতে পারে।

জেনেটিক্যালি মোডিফায়েড ফুড অত্যন্ত বিতর্কিত।৷ তবুও আমেরিকান এসোসিয়েশন ফর এডভ্যান্স সায়েন্স অনুযায়ী, বিজ্ঞান পরিস্কারঃ মডার্ন মলিকিউলার টেকনিক দ্বারা শস্যের উন্নয়ন সম্পূর্ণ নিরাপদ। EU তে GMO- এর বিরুদ্ধাচারণ খুবই শক্তিশালী। তবুও ইউরোপিয়ান কমিশন ঘোষণা করেছেন, মূল সিদ্ধান্ত প্রায় ১৩০ টি রিসার্চ প্রজেক্ট থেকে গৃহীত হয়েছে, ২৫ বছর পর্যন্ত প্রায় ৫০০ টি স্বতন্ত্র গবেষক দল এ নিয়ে কাজ করেছেন এবং অবশেষে সিদ্ধান্ত এসেছেন যে জেনেটিক্যালি মোডিফাইয়েড ফুড ঝুকিপূর্ণ নয় কিন্তু তারপরও কেনো বিরুদ্ধাচারণ?

মূল সত্য হলো যে GMO-এর বিরোধীতার পেছনে অজস্র কারণ কাজ করছে। কিন্তু এটি পরিস্কার যে কিভাবে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ার কাজ করে তার সম্পর্কে ভুল কজাল মডেল এক্ষেত্রে অনেকাংশেই দায়ী। আপনি এক মুহূর্ত গ্রহণ করুন ও চিন্তা করে দেখুন, জেনেটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার সম্পর্কে আপনি ঠিক কতটা জ্ঞান রাখেন? আপনি যদি অধিকাংশ লোকের মতো হয়ে থাকেন তবে আপনি অবশ্যই বেশিকিছু জানেন না। কিন্ত অধিকাংশ মানুষেরই GMO-এর প্রতি সুনির্দিষ্ট কিছু ভয় কাজ করে বিশেষ করে দূষণের সাথে সম্পৃক্ত। একটি গবেষণায় দেখা যায়, প্রতিক্রিয়াশীলদের একটি কোয়ার্টার একমত যে, খাদ্যের মধ্যে যে জিন ইনসার্ট করা হয় সেটি মানুষের দেহে মাইগ্রেট করে। আর একটি কোয়ার্টারের মতে, তারা নিশ্চিত নয় তবে তাদের বিশ্বাস এটি ঘটে। এটি সত্য নয় কিন্ত এটি অত্যন্ত ভয়ানক হবে যদি আপনি বিশ্বাস করেন। এমনকি যারা এটা বিশ্বাস করেনা GMO তাদের ডিএনএ চেঞ্জ করে দেবে তারাও দূষণের আতঙ্কে থাকে। আর একটি গবেষণায় স্লোম্যান লোকজনকে কয়েকটি সম্ভাব্য জিএম প্রোডাক্ট দেখান ও তাদের মানসিকতা বোঝার চেষ্টা করেন। তাদেরকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল তাদের নিকট এ প্রোডাক্টগুলো ঠিক কতটা গ্রহণযোগ্য এবং যদি প্রচলিত খাদ্য উপস্থিত থাকতো তবে এটি কেনার সম্ভাবনা তাদের আসলে কতটুকু ছিলো যেগুলোর মূল্য ২০% বেশি। কিছু প্রোডাক্ট গ্রহণ করা হয়েছিল যেমন- দই, সবজী; কিছু প্রোডাক্ট যা স্কিনের সাথে সম্পৃক্ত লোশন, পারফিউম আর তারপর তারা ব্যাটারি ও হোম ইনসুলেশন পছন্দ করে। মানুষ জেনেটিক্যালি মোডিফায়েড প্রোডাক্ট পছন্দ করেনা যদি সেগুলো ব্যবহারযোগ্য হয়। তারা কিছুটা বেশি স্কিন কন্টাক্ট গ্রহণ করে, এবং সবচেয়ে বেশি গ্রহণ করে সে সব প্রডাক্ট যেগুলো বাতাসে মিশে থাকে( পারফিউম) । সুস্পষ্টভাবে মানুষ জেনেটিক মডিফিকেশনকে জার্মের মতো করে চিন্তা করে।

GMO – সম্পর্কে আরো একটি ক্ষতিকর ধারণা হলো মডিফায়েড অর্গানিজম এবং যে অর্গানিজমে নতুন জিন যুক্ত হয়। ফ্লোরিডার কমলাতে সাইট্রাস গ্রিনিজ রোগের সমাধানের কথা চিন্তা করুন। সাইট্রাস হলো অত্যন্ত সংক্রামক ব্যাক্টেরিয়াল ইনফেকশন যা সাইট্রাস গাছকে ধবংস করে। এটি দ্রুতগতিশীল এবং নির্মূল করা অত্যন্ত কঠিন। ভবিষ্যতের ভয় থেকে উৎপাদনকারীরা জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারদের মাধ্যমে পরীক্ষানিরীক্ষা করায় যা রোগ প্রতিরোধের প্রতিশ্রুতি প্রদান করে। একটি পদক্ষেপ সফলতা অর্জন করে আর তা হলো শূকরের জিন যার মধ্যে সে প্রোটিন এনকোড করার ক্ষমতা আছে যেটি সাইট্রাস প্রতিরোধ করতে পারে। কিন্তু উতপাদনকারীরা এ সলিউশন ব্যবহার করতে প্রস্তুত ছিলোনা কারণ তারা বিশ্বাস করতো ভোক্তারা শূকরের জিন গ্রহণ করতে চাইবেনা। ভোক্তারা ভাববে কমলার মধ্যে শুকরের বৈশিষ্ট্য প্রবেশ করেছে, যেহেতু এটি শূকরের প্রোটিন বহন করছে। আর এভাবে তারা হয়তো ভাবতে পারে, কমলার স্বাদ কিছুটা শূকরের মতো।

কমলা চাষীরা সম্ভবত ঠিক বলেছেন। কারণ পরবর্তীতে স্টিভেন স্লোম্যান ও তার দল GMO ফুড সাইকোলজির উপর গবেষণা করে দেখেন যে, যদি কোনো একটি ফলের মধ্যে নিকটবর্তী কোনো ফলের জিন প্রবেশ করে তবে সেক্ষেত্রে ভোক্তাদের মধ্যে তেমন কোনো আপত্তি থাকেনা কিন্তু যদি কমলালেবুর মধ্যে পালঙ্কশাকের জিন প্রবেশ করানো হয় তবে ভোক্তারা মনে করে, কমলার স্বাদ কিছুটা পালঙ্ক শাকের মতো হয়ে গেছে।

এ ধারণাগুলোর সবটাই অন্তঃসারশূন্য হয়ে যেতো যদি আপনি সামান্য পরিমাণও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ার বুঝতেন। কিন্তু আপনি নিশ্চিতভাবে ইনটুইটিভ। মানুষ ভালোভাবে জানেনা যে কিভাবে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ার কাজ করে। আর এ জন্য তারা তাদের এই ডিটেলস গেইফ অন্যকোনো ডোমেইনের কজাল মডেল দিয়ে পূরণ করে। এর কারণ এই নয় যে মানুষ শুধু GMO এর বিপক্ষে চিন্তা করে। কিছু মানুষ পরিবেশগত উদ্বেগ প্রকাশ করে, আবার কেউ কেউ বলে বড় বড় কর্পোরেশন শক্তিশালী প্রযুক্তি ব্যবহার করছে আর কিছু মানুষের উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু এই ভুল কজাল মডেল গল্পের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ।

টেকনোলজি সম্পর্কে বিরুদ্ধাচারণের পেছনেও এ ভুল কজাল মডেলই কাজ করে। খাদ্যে বিকিরণ নিন, খাদ্যকে উন্মোচন করুন প্যাথেজেন হত্যা করার জন্য। কয়েক দশকের পরীক্ষায় এটা প্রমাণিত যে খাদ্যের বিকিরণ খাদ্যের সাথে সম্পৃক্ত রোগবালাই নির্মূল করে  এবং জীবনের মান উন্নত করে। পাবলিকের বিরোধীতার কারণ হলো রেডিয়েশন ও রেডিওএকটিভিটি সম্পর্কে কনফিউশান। রেডিয়েশন হলো শক্তির এমিশন, যার মধ্যে ভিজিবল লাইট ও মাইক্রোওয়েভও সম্পৃক্ত। রেডিও একটিভিটি হলো অস্থিতিশীল এটমের একটি ক্ষয় যা উচ্চশক্তির রেডিয়েশন প্রদান করে যেটি জীবনের জন্য ক্ষতিকর। লোকজনকে যখন প্রশ্ন করা হয় কেনো তারা ফুড ইরিডেশনের বিরোধীতা করে, অজস্র মানুষ বলেছেন, রেডিয়েশন খাদ্যের মধ্যে আটকে থাকে আর এটিকে দূষিত করে। যার কোনো সায়েন্টিফিক ভিত্তি নেই।

ভেক্সিনেশন হলো আর একটি ক্ষেত্র যেখানে এর ম্যাকানিজম সম্পর্কে মিথ্যা বিশ্বাস মানুষকে বিপক্ষে পরিচালিত করে। ভ্যাক্সিনের প্রতি বিরুদ্ধাচারণের সবচেয়ে সাধারণ কারণ হলো ভ্যাক্সিন ও অটিজমের মধ্যকার সংযোগ। এই দাবি যদিও ডিভাঙ্ক করা হয়েছে কিন্ত উদ্বেগ এখনো রয়ে গেছে। বিরোধীরা মাঝেমাঝে থিমেসোরাল নামক একটি যোগকে দায়ী করে যার মধ্যে পারদ রয়েছে যা কিছু ভ্যাকসিনের উপাদান। তবে একটি ক্ষুদ্র দানা আছে এর সাপেক্ষে সত্যতার। প্রত্যেকটি শিশুকে শেখানো হয় পারদ অত্যন্ত বিষাক্ত এবং সেবন করলে ভয়াভহ ক্ষতি হয়। কিন্তু ভ্যাক্সিনে পারদের পরিমাণ ক্ষতিকর প্রভাবের জন্য যথেষ্ট নয় কিন্তু এটির ব্যবহার এখনো ভীতিকর মনে হয়। ভ্যাক্সিন বিরোধীরা প্রায় আর একটি দাবি করে থাকেন যে, স্বাস্থ্যকর লাইফস্টাইল ভ্যাক্সিনের বিকল্প হতে পারে। কিন্তু এখানেও দানা পরিমাণ সত্যতা বিদ্যমান। কিছু প্রমাণ রয়েছে যে লাইফ স্টাইল আমাদের ইমিউন সিস্টেমকে বুস্ট করে যদিও এর প্রকৃতি ও মাত্রা সম্পর্কে এখনো ভালো জানা যায়নি। যাইহোক, লাইফস্টাইল ভ্যাক্সিনের বিকল্প হতে পারে এটি হলো আমাদের ইমিউন সিস্টেম সম্পর্কে একটি ওভার সিমপ্লিসাইজড চিন্তা। ইমিউন সিস্টেম নির্ভর করে জেনেরেলাইজড প্রোটেকশন মেকানিজম এবং এন্টিবডির একটি রেঞ্জের উপর যা সুনির্দিষ্ট ইনফেকশনকে টার্গেট করে। ভ্যাক্সিন সুনির্দিষ্ট কিছু ইনফেকশনের ইমিউনিটি প্রদান করে। এমন কোনো প্রমাণ নেই যে লাইফস্টাইল এ ধরণের উপযোগ প্রদান করতে পারে।

তথ্যসূত্রঃ

The knowledge illusion