Can't find our books? Click here!
ইন্টারনেট আমাদের একা করে দিচ্ছে?

ইন্টারনেট আমাদের একা করে দিচ্ছে?

এই পৃথিবী কী সামাজিক গ্রহ? সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রসার দেখে আমাদের তাই মনে হতে পারে।  প্রায় সকল স্থান এবং সকল মানুষ অনলাইনের মাধ্যমে সংযুক্ত। শুধু মানুষই নয়। বরং মানুষ অনলাইন যুগে প্রবেশ করতে অনেক দেরী করে ফেলেছিল। আমাদের কাছে ইন্টারনেটকে মনে হয় আল্ট্র্যা-কুল ও বৈপ্লাবিক কিন্তু ইন্টারনেটের জেনারেল কনসেপ্ট আজকের নয়। অসংখ্য প্রাণী জটিল ও সম্প্রসারিত সামাজিক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে এই গ্রহকে শেয়ার করেছে। ব্যাক্টেরিয়া আমাদের গ্রহের সবচেয়ে সরল জীবন বলে পরিচিত কিন্তু তারা এতটা সরল নয় যে তারা “কোরাম সেন্সিং” ব্যবহার করতে পারে না। কোরাম সেন্সিং নামক সামাজিক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে তারা বুঝতে পারে তাদের কাছাকাছি ফ্রেন্ডের সংখ্যা কত__ এ প্রক্রিয়ায় তারা তাদের ফ্রেন্ডলিস্ট ডিটারমাইন করে। আমরা যেমন ইন্টারনেটের মাধ্যমে একজন অন্যজনের কাছে সিগন্যাল পাঠাই। পৃথিবীর এই ক্ষুদ্রতর সৃষ্টি অটো-ইনডিউসার নামক একটি মলিক্যুলের মাধ্যমে একে অন্যকে সিগন্যাল প্রেরণ করে। (1)

শুধুমাত্র ব্যাক্টেরিয়াই যে সামাজিক বন্ধন রক্ষা করে তাই নয়। গ্রুপের মধ্যে যখন কোনো দ্বন্ধ তৈরি হয় তারা তাদের সামাজিক বৃত্তের বাহিরেও ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট সেন্ড করতে পারে। ইউএস সানডিগোর গবেষক জ্যাকলিন হামফ্রিজ বলেছিলেন, আমাদের গবেষণা বলছে, যে সকল ব্যাক্টেরিয়া বায়োফিল্ম কমিউনিটিতে বসবাস করে, তারা বন্ধুর কাছে ইলেকট্রিক মেসেজ প্রেরণের মত একটি কাজ করতে পারে। তিনি বলেন, আমরা দেখেছি যে, এক প্রজাতির ব্যাক্টেরিয়া সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রজাতির ব্যাক্টেরিয়ার কাছে নতুন সদস্য নিয়োগের উদ্দেশ্যে দূর-পাল্লার সংকেত প্রেরণ করতে পারে। (2)

বৃক্ষরদেরও সামাজিক নেটওয়ার্ক আছে। তারাও একই কাজ করতে পারে। আপনার বাড়ির উঠোন, একটি শহরের পার্ক বা একটি বনের চারপাশে তাকান এবং আপনি ঘাস, ঝোপ এবং বিভিন্ন  গাছ দেখতে পাবেন। আপনি যেটা দেখতে পাবেন না তা হল প্রকৃতির ইন্টারনেট কিন্তু এটি আছে। অধিকাংশ বৃক্ষের জীবন একে অন্যের সাথে আন্ডারগ্রাউন্ডের ভেতর সংযুক্ত হয়ে আছে যে সামাজিক নেটওয়ার্ক তৈরি হয় ছত্রাকের মাধ্যমে। জৈবিক ও প্রাকৃতিক তথ্যের সুপারহাইওয়ে  পৃথিবীর ৯০% বৃক্ষকে সেবাপ্রদান করছে। এই ইন্টারনেট তারা মিলিয়ন মিলিয়ন বছর যাবত ব্যবহার করছে। এই ইন্টারনেট একপ্রকার দীর্ঘ ফাইবার দিয়ে তৈরি যাকে বলে মাইসেলিয়াম। (3) এছাড়াও বৃক্ষরা ইন্টারনেটের মাধ্যমে ইনফরমেশন এবং পুষ্টি প্রেরণ করতে পারে যার মধ্যে রয়েছে কার্বন।

মানুষের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের যেমন খারাপ দিক আছে। বৃক্ষদের নেটওয়ার্কেরও রয়েছে ক্ষতিকর দিক। কিছুকিছু বৃক্ষ অন্যান্য বৃক্ষদের পুষ্টি চুরি করার জন্য তাদের নেট সংযোগ ব্যবহার করে। ঠিক যেমনি আমরা ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবহার করে অন্যের কন্টেন্ট চুরি করি। আরও ভয়ানক ব্যাপার হল আমরা যেমন মেয়েদের ডিস্টার্ব করার জন্য মেসেঞ্জারে পর্নোগ্রাফিক ফিচার পাঠাই। হ্যাকিং এর উদ্দেশ্যে ম্যালওয়ার লিংক প্রেরণ করি ঠিক তেমনি বৃক্ষরাও মাইসেলিয়ামের মাধ্যমে তার প্রতিযোগির কাছে বিপজ্জনক টক্সিন প্রেরণ করে। উদাহরণস্বরূপ: কিছুকিছু প্যারাসাইটিক প্লান্ট যেগুলো অন্যান্য বৃক্ষের সাথে সংযুক্ত হয়ে আছে তারা সেসব বৃক্ষের পানি ও নিউট্রিয়েন্টস চুষে খেয়ে ফেলে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইউজারের তথ্য দিয়ে কোম্পানিগুলো যা করে ডডার নামক একটি প্যারাসাইটিক প্ল্যান্ট ঠিক তাই করতে পারে। ডডার আরএনএ অণু রূপে হোস্টের ইনফরমেশন গ্রহণ করে। মনে করুন, হোস্টের কোন একটি ফুল ফুটেছে তাহলে দেখা যাবে ডডার আরএনএ ডেটা সংগ্রহ করে নিজেও একই ফুল ফুটিয়েছে। এর কারণ হল কিছুকিছু বৃক্ষ ফুল ফোটানোর পরপরই মারা যায়, আর ডডার চায় না ফুলের চক্র সম্পাদনের আগে কোনো মৃত বৃক্ষের সাথে আটকে থাকতে। (4) আমরা যদি প্রাকৃতিক ইন্টারনেটের দিকে তাকাই তবে আমরা দেখতে পাই অনলাইন জগতে আমরা অন্য জীবদের চেয়ে পিছিয়ে গেছি তবে খুব দ্রুত আমরা এ সমস্যা কাটিয়ে উঠেছি।

বিশ্বের বিপুল সংখ্যক মানুষ আজ অনলাইনের প্রতি আসক্ত। মধ্যপ্রাচ্যের ৮৫%, ল্যাটিন আমেরিকায় ৮২%, আফ্রিকায় ৭৬%, আমেরিকায় ৭১%, ফ্রান্স-ইউনাইটেড কিংডম-জার্মানি-ইতালি-পোল্যান্ড-স্পেন এই ছয়টি ইউরোপিয়ান দেশে অনলাইন ইউজার ৬৫%। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে আমরা আজ এতটাই সামাজিক হয়েছি যে আমরা শারীরীকভাবে উপস্থিত বন্ধুর সাথেও কথা বলি না, এয়ারপোর্টে নিজের ভাইকে বহু বছরের জন্য ছেড়ে আসার মুহূর্তটিতে একবার ভালভাবে তার দিকে চেয়ে দেখি না, নিজের প্রেমিকা, পিতামাতা ও সন্তানের সাথে আলোচনা করার পরিবর্তে ঘন্টার পর ঘন্টা আমরা ফোন স্ক্রিনেই স্ক্রল করি।(5)

বর্তমানে পৃথিবীতে ফেসবুক ইউজারের সংখ্যা ২ বিলিয়ন(6), হোয়াটস অ্যাপ ইউজারের সংখ্যা ১.৩ বিলিয়ন, ইউটিউব ইউজার ১.৩ বিলিয়ন (7)। ফেসবুক মেসেঞ্জার ইউজ করে ১.২ বিলিয়ন, ইউচ্যাট ৯৩৮ মিলিয়ন, কিউকিউ ৮৬৯ মিলিয়ন, ইনস্টাগ্রাম ৭০০ মিলিয়ন, কিউজোন ৬৩৮ মিলিয়ন, থাম্বলার ৫৫০ মিলিয়ন, টুইটার ৩২৮ মিলিয়ন, সিনা উইবো ৩১৩ মিলিয়ন, বাইডু তায়েবা ৩০০ মিলিয়ন, স্কাইপি ৩০০ মিলিয়ন, স্ন্যাপশট ৩০০ মিলিয়ন, ভাইবার ২৫০ মিলিয়ন ও লাইন ২২০ মিলিয়ন।

আমরা যেখানেই যাই আজ একাকীত্ব ও অসামাজিক আচরণ দেখতে পাই কারণ আমাদের সমাজ এখন অনেক বিশাল। আমরা বিলিয়ন বিলিয়ন মানুষের সাথে সংযুক্ত হতে চাইছি, ব্যক্তি মানুষ আমাদের কাছে গুরুত্ব হারাচ্ছে। এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। স্ম্যার্টফোন, সোশ্যাল মিডিয়া সাইট ও অ্যাপস আমাদের গ্রহকে পুরণ করে রেখেছে। আমেরিকার চার ভাগের তিন ভাগ মানুষের কাছে স্পার্টফোন আছে। সাউথ কোরিয়াতে স্ম্যার্টফোন খুবই কমন, সেখানে প্রায় ৯০% মানুষ স্ম্যার্টফোন ব্যবহার করে। অস্ট্রেলিয়ার ৭৭%, ইসরায়েলের ৭৪%, স্পেইনের ৭১% স্ম্যার্টফোন ইউজ করে। (8)

  1. Facebook Messenger 1.2 billion
  2. WeChat 938 million
  3. QQ 869 million
  4. Instagram 700 million
  5. QZone 638 million
  6. Tumblr 550 million
  7. Twitter 328 million
  8. Sina Weibo 313 million
  9. Baidu Tieba 300 million
  10. Skype 300 million
  11. Snapchat 300 million
  12. Viber 250 million
  13. Line 220 million

এটা একদম স্পষ্ট যে এই ক্ষুদ্র ডিভাইসটি সমস্ত গ্রহে দ্রুত ছড়িয়ে যাচ্ছে। একজন আমেরিকান দিনের ৫০% সময় তাদের স্ম্যার্টফোন চেক করে। আঠার থেকে বিশ বছর বয়সীরা গড়পড়তা দিনে ৮২ বার তাদের ফোন চেক করে। ঘুম থেকে জেগে ওঠার পর ৪০% থেকেও বেশি মানুষ নিয়মিত মোবাইল ফোন চেক করে। ঘুমাতে যাওয়ার আগে ৩০% স্ম্যার্টফোন ইউজার অন্তত ৫ বার তাদের মোবাইল ফোন চেক করে। স্ম্যার্টফোন ব্যবহারকারীদের প্রায় অর্ধেক মধ্যরাতে অন্তত একবার তাদের স্ম্যার্টফোন চেক করে। সামগ্রিকভাবে আমেরিকানদের চোখ প্রতিদিন ৮ বিলিয়ন বার স্ম্যার্টফোনের দিকে তাকায়! (9) আইফোন আমাদের সময়ের সবচেয়ে সফল ডিভাইস। ইতিহাসে এ কোম্পানি সবচেয়ে বিশেষ। এ পর্যন্ত বিলিয়ন বিলিয়ন কপি আইফোন বিক্রি হয়েছে। আমরা আইফোন নিয়ে খাই, আইফোন নিয়ে ঘুমাই এবং গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষ সন্তানের চেয়েও আইফোনকে বেশি সময় দেয়। আজ স্ম্যার্টফোন শুধু একটি যন্ত্র নয়। প্রতিটি সেলফোন এক একটি পারসোনাল ওয়ার্মহোল। একটি মোবাইল ফোন আমাদেরকে মিলিয়ন মিলিয়ন জগতের সাথে সংযুক্ত করে দেয়। প্রফেসর,  শেরি টার্কেল একবার  টেড টকে বলেছিলেন, সেলফোন শুধু আমাদের পরিবর্তনই করে দেয়নি, এটি আমাদের বলছে আমরা কি হতে যাচ্ছি।

আরও পড়ুনঃ মানুষ কেন অদ্ভুত কিছুতে বিশ্বাস করে?

মিলিয়ন মিলিয়ন বছর আগেও আমাদের পূর্বসূরিরা আফ্রিকার জঙ্গলে সামাজিক লিংক ও ইনফরমেশন শেয়ার করত। অতএব অনলাইন আসলে নতুন কিছু নয়, এটি আমাদের প্রাচীন ব্রেন সিস্টেমেরই মডার্ন রূপ। ২১৬ প্রজাতির পিঁপড়ারও  ইন্টারনেট আছে, তারা ইন্টারনেট আবিষ্কার করেছিল আজ থেকে ৫০ মিলিয়ন বছর আগে। আর আমাদের আদিম পূর্বসূরি হোমো ইরেক্টাসদের মধ্যে ইন্টারনেট বিবর্তিত হয় আনুমানিক দুই মিলিয়ন বছর আগে। আজ থেকে এক মিলিয়ন বছর আগে আফ্রিকায় ব্যক্তি ইরেক্টাসের পক্ষে একা সার্ভাইভ করা সম্ভব ছিল না। তাদের সোশ্যাল কানেক্টিভিটি দরকার ছিল। নয়তো কোনো লিওপার্ড অথবা ওলভস লাইক ঈগল এসে তাদের খেয়ে ফেলত। আফ্রিকার জঙ্গলের হিংস্র জীবরাই হোমো ইরেক্টাসদের ব্রেনকে সামাজিক কানেকটিভিটি তৈরি জন্য বিট  করেছিল। তাদের ব্রেন নির্বাচনীয় চাপে সামাজিক হয়ে যায়। তাদের মধ্যে সংযুক্ত হওয়ার জন্য তীব্র যন্ত্রণাদায়ক ক্ষুধা তৈরি হয়। তারা যদিও হোয়াটসঅ্যাপ অথবা স্ন্যাপশটের মাধ্যমে সংযুক্ত ছিল না। কিন্তু তাকেও ইনফর্ম থাকতে হত, সংযুক্ত থাকতে হত। এজন্য তাদের সময়ে হয়তো ভাল দৌড়বিদ ছিল। একটা সময় নৌকা আসে, গোড়ার ব্যবহার শুরু হয়। ট্রেন, বাস, বিমান আমাদেরকে বিভিন্ন সময় ও বিভিন্ন স্থানে সংযুক্ত করতে শুরু করে। আমরা টেলিগ্রাম, ইমেইল, মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আমাদের সংযুক্ত হওয়ার আদি প্রবণতাকে সম্প্রসারিত করি। আজ ব্লগ হল আমাদের বই, সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম আমাদের কফি হাউজ, মিডিয়া শেয়ারিং সাইট হল আমাদের নতুন বই। মিডিয়া এক্সপার্ট জিউন কোহেন বলেন, সংবাদপত্র, রেডিও এবং টেলিভিশন বেশি প্রাচীন নয়। বই ও সংবাদপত্র জনপ্রিয় ছিল কেবল বিগত ২০০ বছর। রেডিও ও ফিল্ম জনপ্রিয় ছিল বিগত ১০০ বছর। টিভি জনপ্রিয় ছিল বিগত ৫০ বছর। যদি আমরা সমগ্র মানব ইতিহাসকে ২৪ ঘন্টায় প্রকাশ করি তবে মিডিয়া এসেছে মধ্যরাত শুরুর দিকে প্রথম দুই মিনিটে। তার আগে পৃথিবীর মানুষের কাছে সকল মিডিয়াই ছিল সামাজিক যোগাযোগ, মিডিয়া ছিল দুজনের মধ্যে যা ঘটত, মিডিয়া ছিল পার্টিশিপেটরি, মিডিয়া ছিল সামাজিক। কিন্তু প্রশ্ন হল, কত বিলিয়ন বন্ধু হলে আমাদের ব্রেনকে ভরিয়ে দেয়া সম্ভব?

তথ্যসূত্রঃ

1) . Hande Boyaci, Tayyab Shah, Amanda Hurley, et al., “Structure, Regulation, and Inhibition of the Quorum-Sensing Signal Integrator LuxO,” PLOS Biology 14, no. 5 (2016): e1002464, DOI: 10.1371/journal.pbio.1002464; PLOS, “Silencing Cholera’s ‘Social Media,’” Science Daily, May 24, 2016, www.sciencedaily.com/releases/2016/05/160524144701.htm (accessed April 29, 2017).

2. Jacqueline Humphries, Liyang Xiong, Jintao Liu, et al., “Species-Independent Attraction to Biofilms through Electrical Signaling,” Cell 168, nos. 1–2 (January 12, 2017), DOI: 10.1016/j.cell.2016.12.014; University of California–San Diego, “Bacteria Recruit Other Species with Long-Range Electrical Signals,” Science Daily, January 12, 2017, www.sciencedaily.com/releases/2017/01/170112141216.htm (accessed April 29, 2017).

3) University of California–Davis, “Plant Parasite ‘Wiretaps’ Host,” Science Daily, August 4, 2008, www.sciencedaily.com/releases/2008/07/080731140231.htm (accessed March 19, 2017)

4) Jacob Poushter, “Smartphone Ownership and Internet Usage Continues to Climb in Emerging Economies,” Pew Research Center, February 22, 2016, http://www.pewglobal.org/2016/02/22/smartphone-ownership-and-internet-usage-continues-to-climb-in-emerging-economies/ (accessed April 21, 2017).

5)10. David Ingram, “Facebook Hits 2 Billion-User Mark, Doubling in Size Since 2012,” Reuters, June 27, 2017, https://www.reuters.com/article/us-facebook-users-idUSKBN19I2GG (accessed July 16, 2017).

6)11. Statista, “Number of Monthly Active WhatsApp Users Worldwide from April 2013 to January 2017 (in Millions),” https://www.statista.com/statistics/260819/number-of-monthly-active-whatsapp-users/ (accessed July 16, 2017).

7) YouTube, “YouTube by the Numbers.”

8)Think Before You Like: Social Media’s Effect on the Brain and the Tools You Need to Navigate Your Newsfeed 

%d bloggers like this: