How Can We Still See The Disappearing Universe?
১৯২০ সালে বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছিলেন মহাবিশ্ব সম্প্রসারিত হচ্ছে। তারা এটা জানতে পেরেছিলেন দূরবর্তী নক্ষত্রগুলোর পরিমাপের ভিত্তিতে এবং সেগুলো কিভাবে রেডশিপ্ট প্রদর্শন করছে। ১৯৯০ সালে আমরা জানতে পেরেছি, আমাদের এ মহাবিশ্ব শুধু সম্প্রসারিতই হচ্ছেনা বরং দূরবর্তী গ্যালাক্সিগুলো আরো বিপুল গতি নিয়ে আমাদের দৃশ্যমান মহাবিশ্বের সীমারেখা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে( Accelerating Universe) । আর এর কারণ ছিল ডার্ক এনার্জি। ডার্ক এনার্জির কারণেই আমাদের মহাবিশ্ব আমাদের ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে, মিলিয়ে যাচ্ছে আমাদের চোখে শূন্যস্থান এঁকে দিয়ে। মূলত এ ডার্ক এনার্জি হলো স্পেসেরই একটি প্রোপার্টি, একে স্পেস থেকে পৃথক করা যায়না। তাই যখন স্পেস সম্প্রসারিত হয়, মুহূর্তেই ডার্ক এনার্জিও এক লাফে সে স্পেসটিকে লুফে নেয়, যার ফলশ্রুতিতে, এ মহাবিশ্ব দুর্দান্ত গতিতে দ্রুত সম্প্রসারিত হতে থাকে, আর এভাবেই গ্যালাক্সিগুলিও অদৃশ্য হয়ে যায় আমাদের পর্যবেক্ষনের সীমানা থেকে।
এটা সত্য যে আমাদের পর্যবেক্ষণলব্ধ মহাবিশ্বে ২ ট্রিলিয়ন গ্যালাক্সি রয়েছে কিন্তু ভয়ানক হলেও সত্য যে এ গ্যালাক্সিগুলোর মধ্যে ৯৭ শতাংশই আমাদের জানা শোনার অতীতে চলে গেছে, আমরা যদি আলোর গতিতেও তাদেরকে পেছনে তাড়া করি তবুও আমরা আজ তাদের কোন নাগাল পাবোনা, কিন্তু তারপরও দিব্যি আমরা তাদের এখনো দেখি! সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার হল, যতই আমরা সময় অতিবাহিত করছি, একেবারে নতুন, যে গ্যালাক্সিগুলোকে আমরা অতীতে কখনো দেখিইনি সেই গ্যালাক্সিগুলিও নিরবিচ্ছিন্নভাবে তাদের নিজেদের প্রকাশ করে যাচ্ছে। ভাবতে অবাক লাগে, যে মহাবিশ্ব ক্রমাগত দূরে যেতে যেতে হারিয়ে গেছে, শূন্য হয়ে গেছে, যে মহাবিশ্বে আমরা কখনো পৌঁছাতেই পারবো না সে মহাবিশ্বকেও আমরা এখনো দেখতে পাই! কিন্তু কিভাবে?
রিলেটিভিটির সূত্রের আওতায়, আমাদের থিওরি অব গ্রেভিটেশন, মহাবিশ্বকে কখনোই স্থিতিশীল থাকতে দেয় না। আমরা যদি আমাদের সবচেয়ে শক্তিশালী দুটো তত্ত্বকে দূরে ফেলে দেই তবে সেক্ষেত্রে ভিন্ন কথা, এটি অভেদ্য যে, আমাদের মহাবিশ্ব হয়তো সম্প্রসারিত হবে অথবা মহাসংকোচিত।
কারণটা আসলে খুবই সরল। যদি আপনার মহাবিশ্বের সকল দিকে ও সর্বত্র সমান পরিমাণ ম্যাটার ও এনার্জি দ্বারা পরিপূর্ণ থাকে__যেমনটি আজ আমরা পর্যবেক্ষণ করি __তাহলে আমরা গণনা করতে পারি যে স্পেস ও টাইম আসলে কেনো Evolve হলো। আর এটি নির্ভর করে তিনটি ফ্যাক্টরের উপর।
১. প্রাথমিক সম্প্রসারণ ও সংকোচনের হার ( এটা জিরো পসেবিলিটিকেও অন্তর্ভুক্ত করবে)
২. আমাদের মহাবিশ্বের সাম্প্রতিক ম্যাস এবং এনার্জি কত।
৩. এবং বিভিন্ন প্রকারের এনার্জির রেশিও ( ম্যাটার, ডার্ক ম্যাটার, নিউট্রিনোস, রেডিয়েশন, ডার্ক এনার্জি ইত্যাদি)
বিগত কয়েক শতাব্দীতে, জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা নির্ধারন করতে পেরেছিল, আজকের এক্সট্রা-গ্যালাক্টিক স্কেলে মহাবিশ্ব দেখতে কেমন। তারা জানতে পেরেছিল কিভাবে বিশাল গ্যালাক্সি একে অপরের সাথে বিজড়িত হয়ে গ্রুপ গঠন করে এবং সেই ফিলামেন্ট আমাদের সক্ষম করে তুলেছে মহাবিশ্বের বিশাল স্ট্রাকচার বুঝতে। যখন আপনি আপনি কসমিক ব্যাকগ্রাউন্ড রেড়িয়েশনকে গণনায় ধরবেন যা আমাদেরকে সে সময়ের গ্যালাক্টিক বীজের স্ট্রাকচার সম্পর্কে অবহিত করে , যেখান থেকে গ্যালাক্সি জন্ম নেয়, আপনি পুরোপুরিভাবে একদম নিখুঁত ভাবে জানতে পারবেন কিভাবে আজ আমরা এ মহাবিশ্বে যা কিছু দেখছি সবকিছু আমাদের পর্যবেক্ষণের সীমানায় এসেছে। মূলত, বিগব্যাং এর ৩,৮০,০০০ বছর পর সৃষ্ট রেডিয়েশনগুলোর পরিমাপ করার মাধ্যমেই আমরা মহাবিশ্বের বয়স নির্ণয় করেছি প্রায় ১৩.৮ বিলিয়ন বছর, আর তাই আমরা যখন মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ড রেডিয়েশনকে দেখি তখন আমরা দেখি মহাবিস্ফোরণের ৩, ৮০,০০০ বছর পরের অতীত। সূর্য থেকে আলো আসতে যেমন ৮ মিনিট ২০ সেকেন্ড সময় প্রয়োজন, মঙ্গলের পার্সিভারেন্স থেকে নাসার নিকট সংবাদ আসতে যেমন ৪ মিনিট সময় প্রয়োজন, ১৫০ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরের কোয়েসার থেকে আলো আসতে যেমন ১৫০ মিলিয়ন বছর সময় প্রয়োজন ঠিক তেমনি মহাবিস্ফোরণের পরের মুহূর্তে সৃষ্ট গ্যালাক্সির প্রাথমিক উপাদান থেকে নিসৃত তরঙ্গও ১৩ বিলিয়ন বছর অতিক্রম করেছে। আমি যদি ১৩ বিলিয়ন বছর পূর্বে টাইম ট্রাভেল করে চলে যেতে পারতাম এবং এরপর হাইপোথেটিক্যালি পূর্বের সময়ে ফিরে আসতাম তবে সেই রেডিয়েশন তাত্বিকভাবে আমার ছবি নিয়ে ১৩ বিলিয়ন বছর পর আমার চোখেই ফিরে আসতে পারতো গ্যালাক্সির প্রাথমিক স্ট্রাকচারকে সঙ্গে করে।
আমরা যদি প্রথম থেকে এভাবে শুরু করি, আমরা একটি স্বতন্ত্র ও সঙ্গতিপূর্ণ সিদ্ধান্তই খুঁজে পাই। আমাদের মহাবিশ্ব ১৩.৮ বিলিয়ন বছর পুর্বে তৈরি হয়েছে, এর ৬৮ শতাংশ ডার্ক এনার্জির তৈরি, ২৭ শতাংশ ডার্ক ম্যাটার, ৪.৮ শতাংশ সাধারণ ম্যাটার, ০.১% নিউট্রিনোস, ফোটন এবং সবকিছু যা কিছুর সাথে আমরা সম্পর্কযুক্ত এবং এগুলো কখনো রি-কলাপ্স করবেনা।
আপনাকে যদি স্পেসশিপ থেকে ইন্টারগ্যালাক্টিক স্পেসে ছেড়ে দেই এবং বলি একটি গ্যালাক্সি নির্বাচন করতে এবং প্রশ্ন করতে এটি সময়ের ভেতর দিয়ে কিভাবে বিবর্তিত হবে, আপনার দৃষ্টিকোণ থেকে, এখানে যা আপনি দেখছেন। সময়ের সাথে এটি সহযাতভাবেই বিবর্তিত হবে, এটি ক্ষুদ্রতর স্যাটেলাইট গ্যালাক্সিকে আকর্ষণ করবে, শোষণ করবে, ক্যানিবাল মাকড়সার মতো গ্যালাক্সি গ্যালাক্সিকে খাবে তারপর এটি তরঙ্গের মাঝে নতুন নক্ষত্রের জন্ম দেবে। এটি অনেক সময় একই আকৃতির গ্যালাক্সির সাথেও সংঘর্ষ করবে এবং নক্ষত্র বিস্ফোরণ ঘটাবে এবং তারকার তৈরি গ্যাস দিয়ে উপবৃত্তাকার গ্যালাক্সি তৈরির নেতৃত্ব প্রদান করবে।
কিন্তু এ গ্যালাক্সি যদিও আমাদের থেকে দূর দুরান্তে বিবর্তিত হবে, এর রেডশিপ্ট বা লাল বর্ণালী ক্রমবর্ধমান ভাবে সময়ের সাথে তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে উঠবে। যখন এ গ্যালাক্সি আমাদের থেকে ক্রিটিক্যাল ডিস্টেন্সে চলে যাবে যা প্রায় ১৫ বিলিয়ন লাইট ইয়ার্স দূর,এর রেডশিপ্ট হবে ১ এর চেয়েও বেশি, যা নির্দেশ করছে যে এটি তার ক্রুসিয়াল লোকেশনে চলে গেছে, এটি এমন একটি লোকেশন যা আমরা কোথায় পৌঁছাতে পারবো আর কোথায় পৌঁছাতে পারবোনা তার মধ্যকার সীমারেখা টেনে দেয়। মূলনীতি অনুসারে, কোনোকিছু আমাদের থেকে আলোর গতিতে দূরে সরে যাচ্ছে।
আপনি যদি আল্ট্রা ডিস্টেন্সের একটি গ্যালাক্সির দিকে তাকান, আপনি সম্পূর্ণ ভিন্নকিছু দেখবেন। আপনার কাছে মনে হবে এ গ্যালাক্সিটি এখনো দৃশ্যমান যেমনটি আপনি তাকে দূরবর্তী অতীতেও দেখেছেন, যখন প্রথম এটি থেকে আলো নির্গত হয়েছিল এবং তারপর যখন এটি মহাসম্প্রসারিত মহাবিশ্বে মাল্টি মিলিয়ন লাইট ইয়ার্স ভ্রমণ করে আপনাকে ছেড়ে চলে গেছে। আপনার কাছে এ দুটি আলাদা সময়েও গ্যালাক্সিটিকে একই মনে হবে। যে সময় গ্যালাক্সিটি ছিলো আর যখন গ্যালাক্সিটি নেই দুটি সময়ই আপনার পর্যবেক্ষণে গ্যালাক্সিটি একই ভাবে প্রতীয়মান হবে। আপনার কাছে মনে হবে এটি এখনো এর আগের জায়গাতেই আছে। কারণ আলোর রেড শিপ্ট বা লাল বর্ণালী দূরত্ব বৃদ্ধির সাথে আরো সম্প্রসারিত হয়, মূল আলো থেকেও দ্বিগুণ উজ্জ্বল আর এটি একটি ওয়েভল্যাংথ নির্গত করে, যেটি আমাদের হাবল টেলিস্কোপে প্রবেশ করে, গ্যালাক্সি অদৃশ্য হয়ে গেলেও তার ওয়েভল্যাংথ তার অতীতের ইনফরমেশন নিয়ে এখন হাবল টেলিস্কোপের ভেতর অস্তিত্বশীল আর এ জন্যই, আমরা নক্ষত্রটিকে তরুণ মনে করি, মনে করি এটি এখনো সেখানেই আছে যেখানে মিলিয়ন বছর ছিল এবং এটি আমাদের জানাশোনা গ্যালাক্সি থেকে খুব কমই বিবর্তিত হয়েছে, আমরা আজ ১৩.৮ বিলিয়ন বছর পর যে গ্যালাক্সিগুলো দেখছি তার তুলনায় সেগুলো এখনো তরুণ। মূলত, রেডশিপ্টের কারণেই পনের বিলিয়ন বছর অতীতের গ্যালাক্সিগুলো বেশি উজ্জ্বল দেখা যায় যেগুলো আমাদের মহাবিশ্বের পর্যবেক্ষণ রেঞ্জের ১৩.৮ বিলিয়ন বছর সীমানার মধ্যেই নেই অথচ সেগুলোর উজ্জ্বলতার কারণে আমরা ১৩.৮ বিলিয়ন বছর পরের নক্ষত্র থেকেও তাদের বেশি তরুণ মনে করি।
মূলত, আমাদের মহাবিশ্বের বয়স ১৩.৮ বিলিয়ন বছর আর তাই দূরবর্তী গ্যালাক্সিগুলো থেকে নিসৃত আলো যদি ১৩.৮ বিলিয়ন বছর দূরত্ব পাড়ি দেয় তবেই আমরা দেখব। কিন্তু ১৩.৮ বিলিয়ন বছর একটি মহাবিশ্বে ১৫ বিলিয়ন আলোক বছর দূরের কোন আলো কখনোই আমাদের চোখে প্রবেশ করার সময় পাবেনা। কিন্তু তারপরও আমরা তাদের দেখছি, কারণ দূরত্ব বৃদ্ধির সাথে তাদের ওয়েভল্যাংথ প্রসারিত হয়েছে, তাদের রেড শিপ্ট বেড়ে গেছে, তারা আরো বেশি উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। এজন্য আমরা শুধু পনের বিলিয়েন বছর অতীতের নক্ষত্রকে ১৩ বিলিয়ন বছর বয়সের একটি মহাবিশ্বের ভেতর দেখছিইনা, তাদের বয়স ১৩ বিলিয়ন বছর থেকেও আমাদের কাছে আরো কম মনে হচ্ছে।
যতই সময় অতিবাহিত হবে, আপনি যদি ঘড়ির কাঁটা ধরে বিলিয়ন বিলিয়ন বছর পাড়ি দেন, আপনি এ সকল হারিয়ে যাওয়া গ্যালাক্সির থেকে নিসৃত আলো দেখবেন-
- ক্রমাগত লাল হতে থাকবে,
- দূর্বল হতে থাকবে,
- নির্দেশ করবে যে এটি আমাদের থেকে অনেক অনেক বিরাট দূরত্বে আছে।
- এটি সে গ্যালাক্টিক বয়সেরও উর্ধ্বে চলে গেছে যে বয়স এটি প্রদর্শন করছে!
আপনি যদি এ গ্যালাক্সিটিকে দশ থেকে একশত বিলিয়ন বছরও দেখেন এটি একই পয়েন্টে বিবর্তিত হয়নি যে পয়েন্ট থেকে আমরা এটিকে দেখছি। তাকে আপনি ১০ বিলিয়ন বছর দেখুন বা ২০ বিলিয়ন এর বয়স আমাদের কাছে ১৩.৮ বিলিয়ন বছর থেকে বেশি মনে হবেনা। আমরা এমন গ্যালাক্সির কথাও চিন্তা করতে পারি সে গ্যালাক্সিটির দিকে আপনি তাকিয়ে আছেন কিন্তু তার আলো এখনো আমাদের কাছে এসে পৌঁছেনি। আমরা সবচেয়ে দূরবর্তী যে অবজেক্ট দেখবো তা হবে মহাবিস্ফোরণের পর ১৩. ৮ বিলিয়ন বছরের মধ্যে, যদিও তারা মূলত, আমাদের থেকে ৪৬ বিলিয়ন লাইট ইয়ার্স দূরে। কিন্তু ১৩ বিলিয়ন বছর পূর্বে যে আলো তারা ত্যাগ করেছিলো সে আলো আমাদের নিকট আসতে আসতে ১৩ বিলিয়ন বছর লাগে আর সেই সময়ের মধ্যে গ্যালাক্সিটি আরো 33 বিলিয়ন আলোক বছর দূরে সরে গেছে। আমাদের মহাবিশ্বের বয়সই যেহেতু ১৩ বিলিয়ন বছর, অতএব এ সময়ের মধ্যে ৪৬ বিলিয়ন বছর অতীতের আলোকতরঙ্গ আমাদের কাছে আসা সম্ভব । কিন্তু যে সকল গ্যালাক্সি আমাদের থেকে ৬১ বিলিয়ন আলোক বছর দূরে সেখান থেকে আলোকে আমাদের গ্রহে প্রবেশ করতে আরো দীর্ঘ সময় ভ্রমণ করতে করতে হবে। হয়তো ১৩ বিলিয়ন বছরে ৬২ বিলিয়ন বছর দূরের কোন গ্যালাক্সি থেকে আমাদের কাছে আলো আসা সম্ভবই নয়, আর তাই মহাবিশ্বের বয়স যত বাড়বে সে গ্যালাক্সিগুলোর আলো আমাদের তত নিকটবর্তী হবে এবং অবশেষে সেগুলো আমাদের চোখে এসে প্রবেশ করবে।
যে আলো সেখান থেকে যাত্রা শুরু করেছে তা এখনো পথেই পড়ে আছে। হয়তো সে আলো পনের বিলিয়ন বছর সীমার নিকটবর্তী। আলোর গতিতে ভ্রমণ করলে যে সীমা পর্যন্ত আমরা যেতে পারবো। যদিও, মহাবিশ্ব সম্প্রসারিত হচ্ছে, যদিও এ সম্প্রসারণ ত্বরাণ্বিত হচ্ছে, এ আলো ভ্রমণ শেষে একদিন আমাদের চোখে আসবেই, আর আমাদের কাছে ভবিষ্যতের সংবাদ নিয়ে আসবে । আমরা আজ যে পরিমাণ গ্যালাক্সি দেখছি তার থেকেও বেশি পরিমাণ গ্যালাক্সি দেখার সক্ষমতা তৈরি হবে।
আমরা এই মাত্রই বলেছি যে, মহাবিশ্ব অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে আবার আমরাই বলছি সময়ের সাথে আমরা এটিকে আরো অধিক থেকে অধিকতর সুস্পষ্টভাবে দেখতে পাব এটা কিভাবে সম্ভব?
এটা খুব গভীরভাবে চিন্তা করতে হবে যখন আমরা বলছি যে দূরবর্তী গ্যালাক্সিগুলো অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে যখন এটি ডার্ক এনার্জির সংস্পর্শে আসে।
এখন চিন্তা করুন, এমন একটি জগতের কথা যে জগতের ১০০% ম্যাটার দিয়ে তৈরি, এমন একটি মহাবিশ্ব যেখানে কোন ডার্ক এনার্জি নেই। যদি এটিই মূল ব্যাপার হয়, দূরবর্তী গ্যালাক্সি আমাদের থেকে সময়ের সাথে দূরে সরে যাবেনা বরং সুস্পষ্টভাবে এর স্পিড কমতে থাকবে, সময়ের সাথে স্পিড মন্দ থেকে মন্দতর হবে। এর মানে হল, মহাবিশ্বের বয়স যত বাড়বে আমাদের দৃশ্যমান মহাবিশ্বের রেডশিপ্ট ততই দ্রুততার সাথে হ্রাস পেতে শুরু করবে। ঘড়ির কাঁটা যতই সামনের দিকে স্পন্দিত হবে, নতুন নির্গত আলোগুলো মহাবিশ্বের ভেতর ভ্রমণ করবে এবং তারপর আমাদের চোখে প্রবেশ করছে, দৃষ্টির কোন সীমা ছাড়াই। প্রকৃতপক্ষে যে মহাবিশ্বে ডার্ক এনার্জি নেই, এটি একটি ত্বরণহীন মহাবিশ্ব, এখানে আমরা কত সংখ্যক গ্যালাক্সি দেখবো তার কোন লিমিট নেই আর এ জন্য গ্যালাক্সির বয়সও সুস্পষ্ট। যতদিন আমাদের মহাবিশ্ব বিদ্যমান থাকবে, এখানে থাকবে অন্বেষণের জন্য নতুন দিগন্ত, আবিষ্কারের জন্য নতুন যুগ। একটি ত্বরণহীন মহাবিশ্বে মহাজাগতিক দিগন্তের কোন অস্তিত্ব নেই, অনেক দূরবর্তী এমন কোন গ্যালাক্সি নেই যে গ্যালাক্সির আলোর জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে যাদৃচ্ছিক সময়ের স্থায়িত্ব পর্যন্ত। একবার যখন প্রথমবারের জন্য আলো আমাদের কাছে আসবে এরপর নির্গত সকল আলো আমাদের চোখে এসে পৌঁছে যাবে।
কিন্তু আমাদের মহাবিশ্ব এক্সিলারেট হচ্ছে এবং এটি ডার্ক এনার্জি থেকে মুক্ত নয়। এ অন্ধশক্তির কারণেই আমাদের রয়েছে দূরত্বের স্কেল এবং রয়েছে ত্বরণের জন্য সময়সূচি এবং আমাদের ইনফর্ম করে কোথায় আমাদের মহাজাগতিক ঘটনা দিগন্ত অবস্থান করছে, এর উপস্থিতি ও এর অস্তিত্বকে পর্যবেক্ষণ করে আমরা গ্যালাক্সি সম্পর্কে নিন্মের বিষয়গুলো জানতে পেরেছি।
- ১৫ বিলিয়ন আলোকবর্ষ সময়ের কাছাকাছি সময়ে আমরা মহাবিশ্বকে দেখতে পাবো যেমনটি এখন দেখছি ; মহাবিস্ফোরণের ১৩.৮ বিলিয়ন বছর পর। আমরা এর কাছে পৌঁছাতে পারবো যদি আমরা আলোর গতি সেট করি।
- ১৫ থেকে ৪৬ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরত্বের মধ্যে আমরা এটাকে আজ দেখিনা। কিন্তু কোনো একদিন অদূর ভবিষ্যতে দেখবো এবং তারপর চিরকাল এবং এটাকে অতীতের তরুণ সাম্প্রতিক দৃশ্যমান মহাবিশ্ব থেকে একটুও বৃদ্ধ মনে হবেনা। এবং আমরা এর কাছে যেতেও পারবোনা।
- আমাদের থেকে ৬১ আলোকবর্ষ দূরত্বের বাহিরে আমরা কোনোকিছুই দেখবোনা অথবা পৌঁছাতেও পারবোনা। এবং সেখান থেকে কেউই আমাদের দেখবেনা এবং কোনোদিন স্পর্শও করতে পারবেনা। Read more: প্যারালাল ওয়ার্ল্ড- মিচিও কাকু
আমরা আল্ট্রা ডিস্টেন্ট গ্যালাক্সিগুলোকে এখনো এ জন্যই দেখি, কারণ অতীতে কোনো একসময় তারা আমাদের অনেক নিকটেই ছিল এবং সেই প্রাচীন সময়ে তারা আলো নিস্বঃরণ করেছিল, আর সে আলো আমাদের কাছে নিয়ে আসে সে মহাবিশ্ব যেটি অনেক তরুণ ও ক্ষুদ্র। যদিও মহাবিশ্ব সম্প্রসারিত হচ্ছে, যদিও এ সম্প্রসারণ ত্বরান্বিত হচ্ছে প্রচন্ড দ্রুতবেগে, যে সকল ফোটন বিলিয়ন বছর পূর্বে নিঃসৃত হয়েছিল, সেগুলো অবশেষে আমাদের চোখে এসে পৌঁছে। এছাড়া সে সময় যে আলো নির্গত হয়েছিলো, সেগুলো ক্রমাগতই আমার চোখের ভেতর প্রবেশ করে, যদিও তারা বর্তমানে যে আলো নিঃস্বরণ করছে সেগুলো আমাদের থেকে এত দূরে যে এখনো সেগুলো আমাদের কাছে এসে পৌঁছেনি।
তথ্যসুত্রঃ
- Main Article , How Can We Still See The Disappearing Universe?forbes
- This Is Why We Aren’t Expanding, Even If The Universe Is
- causing the Universe to disappear
- 97% of them are already beyond our reach
- continuously revealing themselves to us
- presently within 61 billion light-years of us
- we just said that the Universe is disappearing