অপটোজেনেটিক্স ও কৃত্রিম মেমরি
Tʜᴇ sᴇᴄʀᴇᴛ ᴏғ ᴛʜᴇ ʙʀᴀɪɴ
ᵖᵃʳᵗ2
প্রিজম আয়নায় নিজের চেহারা দেখলেই আতঙ্কিত হয়ে উঠে।এ জন্যে তার কক্ষে কোনো আয়না রাখা হয়না।আয়নায় সে এমনকিছু দেখে যেটা আর কেউ দেখেনা।সবার কাছে সবকিছু স্বাভাবিক ছিলো কিন্তু প্রিজমের কাছে তার জীবনটা অস্বাভাবিক।ডাঃ গভীরভাবে তার মস্তিষ্ক মনিটরিং করে দেখেন তার হিপ্পোক্যাম্পাসের একটি অংশ নষ্ট হয়ে গেছে।পরিবারের সাথে কথা বলে জানা যায় তার বয়স যখন ৭ তখন একটি দূর্ঘটনা ঘটে তার সাথে।মস্তিষ্কে জখম হয় আর সেই থেকে প্রিজম কাউকে চেনেনা, তাকে প্রতিদিন সবকিছুর সাথে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দিতে হয়।প্রিজমের বয়স এখন ৩০ কিন্ত সে মনে করে তার বয়স এখনো ৭।আমাদের মহাবিশ্বে এতগুলি বছর ফুরিয়ে গেলো আর প্রিজম এখনো ৭ বছর পূর্বের ৩১ তারিখেই মানসিকভাবে আটকে আছে। সে জানেইনা সে ক্রমাগত তরুণ হয়েছে, তারুণ্য থেকে বার্ধ্যকে পা দিচ্ছে, তার মেমরি নতুন কোনো ইনফরমেশন গ্রহণ করতে পারেনি। কারণ মস্তিষ্কের হিপোক্যাম্পাস ডেমেজ হয়ে গেলে লং টার্ম মেমরি সংরক্ষণ করা যায়না।আর এ জন্যেই যখন আয়না থেকে আলোক তরঙ্গ বিলিয়ন ওয়েভ ফাংশন নিয়ে তার বর্তমান চেহারা তার মস্তিষ্কের ভিজুয়াল কর্টেক্সে ফুটিয়ে তোলে। সে নিজের পরিবর্তিত সত্তাকে নিজেই চিনতে পারেনা।এটি ছিলো আমার রচিত সায়েন্স ফিকশনের একটি অংশ যা বস্তবে ঘটেছিলো HM নামক একজন ব্যাক্তির সাথে যার কথা আমরা পূর্বে আলোচনা করেছি।
কিন্তু বর্তমান বিজ্ঞান কৃত্রিম হিপ্পোক্যাম্পাস তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে।HM 2008 সালে ৮২ বছর বয়সে মারা যায়।সে যদি থাকতো তবে হয়তো তাকে বর্তমানের কারাগার থেকে বের করে ভবিষ্যত এবং অতীতের পার্থক্য বুঝিয়ে দেয়া সম্ভব হতো।কৃত্রিম হিপ্পোক্যাম্পাস তৈরি এবং মস্তিষ্কে মেমরি ইনপুট করা এটি এতদিন ছিলো সায়েন্স ফিকশন কিন্তু ফোরেস্ট ইউনিভার্সিটি এবং ইউনিভার্সিটি অব সাউথার্ন ক্যালিফোর্নিয়া ২০১১ সালে যুগান্তরকারী একটি আবিষ্কার সম্পন্ন করেন।তারা ইঁদুরের মস্তিষ্কের মেমরি রেকর্ড করেন এবং সেটিকে ডিজিটালি কম্পিউটারের ভেতর সংরক্ষণ করতে সক্ষম হন।
মস্তিষ্কে ব্রেন ডাউনলোড করা অসম্ভব স্বপ্নের মতোই অকল্পনীয় মনে হলেও বর্তমানে এটি সম্ভব।মেমরি সৃষ্টি হয় আমাদের মস্তিষ্কের বিভিন্ন নিউরাল সেন্সরি এক্সপেরিয়েন্স প্রসেসিং এর মাধ্যমে তারপর সেটা আমাদের নিউরো কর্টেক্স এবং লিম্বিক সিষ্টেমের মাল্টিপল প্লেসে সংরক্ষিত হয়।কিন্তু এমন একটি প্লেস আছে যেখানে মেমরি গুলি প্রবাহিত হয় এবং দীর্ঘকালীন স্মৃতিতে সংরক্ষিত হয়; আর সে স্থানটির নাম হিপ্পোক্যাম্পাস।ড.থিওডোর বার্গার বলেন,
“If you can’t do it with the
hippocampus, you can’t do it anywhere.”
বিজ্ঞানীরা ইঁদুরের মস্তিষ্কের হিপোক্যাম্পাস স্ক্যান করে দেখলো যখন তারা নতুন কোনোকিছু শেখে তখন মস্তিষ্কের CA1 এবং CA3 নামক দুই সেট নিউরনের সাথে কমিউনিকেশন হয়।বিজ্ঞানীরা এ দুই সেট নিউরনের মধ্যে কোনো ইলেক্ট্রিক্যাল ইনপুটের কারণে কোন আউটপুট তৈরি হয় সেটা মিলিয়ন প্রদক্ষেপের পর একটা সময় বুঝতে পারে।তারা মাউসদেরকে পানির জন্যে একটি বারে প্রেস করতে বলে।যখন তারা এ কাজটি শিখার চেষ্টা করে তখন বিজ্ঞানীরা CA1 এবং CA2 এর মধ্যকার সিগনাল রিড করতে সক্ষম হয়।এবার বিজ্ঞানীরা তাদের মস্তিষ্কে কেমিক্যাল ইউজ করে মেমরিগুলি ভুলিয়ে দেয় এবং তারপর আবার একই মাউসদের মধ্যে মেমরিকে আবার জাগিয়ে তোলে।তারপর তারা একটি আর্টিফিশিয়াল হিপোক্যাম্পাস তৈরি করে যেটি ডিজিটাল মেমরিকে ডুপ্লিকেট করতে পারে।সুইচ অন করলে প্রাণীদের মস্তিষ্কে মেমরি তৈরি হবে এবং সুইচ অফ করলে মেমরি হারিয়ে যাবে।২০২৩ সালে MIT বিজ্ঞানীরা যুগান্তরকারী একটি ঘটনা ঘটিয়ে দেয়, তারা ইঁদুরের মস্তিষ্কে শুধুমাত্র সাধারণ মেমরি নয়, ফলস মেমরি ঢুকিয়ে দেয়।তার মানে একদিন মানুষের মস্তিষ্কে এমন সব মেমরি ঢুকানো যাবে যে সব ঘটনা তার জীবনে ঘটেইনি।
কিন্তু প্রশ্ন হলো কিভাবে MIT সায়েন্টিস্টরা ইঁদুরের মস্তিষ্কে ফলস মেমরি ইনপুট করেছিলো?শুনুন বলি, এ ট্যাকনোলোজির নাম অপটোজেনেটিক্স, অপটোজেনেটিক্স নিয়ে আমরা আগেও আলোচনা করেছিলাম।
অপটোজেনেটিক্সের মাধ্যমে মস্তিষ্কের স্পেসিফিক কিছু নিউরনকে ধারালো আলো দিয়ে একটিভেট করে তোলা যায়।এ অত্যন্ত শক্তিশালী পদ্ধতি ব্যাবহার করে বিজ্ঞানীরা মস্তিষ্কের এমন কিছু নিউরন সেলকে সনাক্ত করেছেন যেগুলি আমাদের কিছু নির্দিষ্ট স্মৃতির জন্যে দায়ী।
মনে করুন, একটি ইঁদুর একটি কক্ষে প্রবেশ করার পর তাকে শক দেয়া হলো, সেই ব্যাথার স্মৃতি যেটি মস্তিষ্কের হিপোক্যাম্পাসে এনালাইজ করেছিলো সেটি রেকর্ড করা হলো, এবার ইঁদুরকে ভিন্ন একটি কক্ষে নিয়ে আসা হলো যেটি সম্পূর্ণ নিরাপদ কিন্তু অপটিক্যাল ফাইবারের লাইট অন করে, অপটোজেনেটিক্স প্রযুক্তি ব্যাবহারের মাধ্যমে মস্তিষ্কের পূর্বের আঘাতের স্মৃতিটি জাগ্রত করা হলো,ইঁদুরটি ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে উঠলো যদিও সেকেন্ড কক্ষটি ছিলো নিরাপদ এবং তাকে ফিজিক্যালি কোন শকই দেয়া হয়নি।
MIT এর বিজ্ঞানীরা বর্তমানে শুধু অর্ডিনারী মেমরি স্থাপন করতেই পারে তা নয়, তারা ফলস মেমরিও তৈরি করতে পারে যেটি আপনার সাথে সংঘঠিতই হয়নি!!এ প্রযুক্তি উন্নত হলে আমরা খুব সহযেই ফিজিক্স এবং ম্যাথমেটিক্সের জটিল সমীকরণগুলি শিখে ফেলতে পারবো।বছরের পর বছর সময় ও শক্তি অপচয় করে আমাদেরকে গ্রেজুয়েশন কমপ্লিট করতে হবেনা।জীবন অনেক ছোট আর এ ক্ষুদ্র জীবন দিয়ে অপেক্ষাকৃত কম সময় এবং শক্তি অপচয় করে সর্বোচ্চ মাত্রা থেকেই মহাবিশ্বকে জানতে হবে!
অপটোজেনেটিক্স ও কৃত্রিম মেমরি ; তথ্যসুত্র –
আমাদের প্রাসঙ্গিক আর্টিকেলগুলি;