আপনি এ বইটি কেনো পড়বেন? ২০০৯ সালে গবেষকরা ৭২ জন শিশুর উপর এক্সপেরিমেন্ট পরিচালনা করেন , তারা দেখেন, যে সকল শিশুরা বই পড়ে তাদের মস্তিষ্কে নতুন হোয়াইট ম্যাটার তৈরি হয়, যা আমাদের সুবিস্তৃত কমিউনিকেশন সিস্টেমকে উন্নত করে। এই হোয়াইট ম্যাটার গ্রে ম্যাটারের এলাকায় ইনফরমেশন নিয়ে যায়, যেখানে ইনফরমেশন প্রসেস হয়। অতএব দেখা যাচ্ছে বই পড়লে শুধু আপনার মস্তিষ্কের হোয়াইট ম্যাটারের পরিমাণই বৃদ্ধি পায়না, এটি সঠিক প্রক্রিয়ায় ইনফরমেশন প্রসেস করতেও সহযোগিতা করে। আপনি যদি বাংলা ভাষায় একটি বই পড়েন আপনি ব্যাপকভাবে উপকৃত হবেন। আর যদি বিদেশী ভাষায় একটি বই পড়েন তবে এটা শুধু আপনার কমিউনিকেশন স্কিলই বৃদ্ধি করবেনা, আপনি একটি বিদেশী বইয়ের মাধ্যমে বিরাট একটা সার্কেলের চিন্তার সাথে সংযুক্ত হয়ে যাবেন। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো , আপনার মস্তিষ্কের স্থানিক নেভিগেশন এবং নিউ ইনফরমেশন মনে রাখার সাথে জড়িত ব্রেন এরিয়া বই পড়ার মাধ্যমে ক্রমশ বড় হয়ে যায়৷ যাইহোক। গড ইকুয়েশন, প্যারালাল ওয়ার্ল্ড, ভালোবাসার ফসিল ও নিউ এম্পেরর অব হোমো ডিউসের পর ব্রেনঃ তোমার কানেক্টমের গল্প আমার জীবনের অন্যতম প্রভাবশালী ও তথ্যবহুল একটি বই। এ বইটি লেখার জন্য আমি ডেভিড ইগলম্যানের রিসার্চ পেপার ও বেস্ট সেলিং তিনটি বইয়ের সাহায্য নিয়েছি। নিউ এম্পেরর অব হোমো ডিউস ও ব্রেন বইটির জন্য আমি ডোনেট করেছি আমার লাইফ থেকে তিনটি বছর। আমার এ বইটি লেখার পেছনে একমাত্র উদ্দেশ্য হলো তিন পাউন্ড ওজনের এ চিন্তাতীত জটিল মস্তিষ্কটির সাথে আপনাকে পরিচয় করিয়ে দেয়া! এ বইটি পড়ার ভেতর দিয়ে আপনার মস্তিষ্ক কেবল নিউরোলজিক্যালি পরিবর্তনই হবেনা, একইসাথে আপনি স্ক্যান করবেন বিশ্বের সেরা একজন নিউরাসায়েন্টিস্টের মনস্তত্ব। তো চলুন আমরা সহজ ভাষায় জেনে নেই কী কী গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার আছে এ বইটিতে যেজন্য এ বইটি মিলিয়ন মিলিয়ন পাঠকের কাছে এত বেশি জনপ্রিয়। আর কেন এ বইটি ব্রেন সংক্রান্ত বিশ্বসেরা বইগুলোর মধ্যে একটি।

১) জিরাফ এক ঘন্টার মধ্যেই দাঁড়িয়ে যায়, একটি শিশু জেবরা জন্মের ৪৫ মিনিটের মধ্যেই দৌড়াতে শুরু করে। প্রাণীদের সম্রাজ্যে আমাদের প্রতিবেশি অন্যান্য প্রাণীরা তাদের জন্মের পরপরই দৈহিক ও মানসিক স্বাধীনতা অর্জন করে। অধিকাংশ প্রাণীর ব্রেন জন্ম থেকেই সাবলম্বী। তাহলে আমাদেরকে কেনো এত ক্রায়সিস করতে হয়? কেনো টিকে থাকার জন্য একটা কুকুরের ইউনিভার্সিটি প্রয়োজন হয়না? আমাদের ব্রেনকে টিচ দেয়ার জন্য কেনো এত স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়?
২) এ বইটিতে শিশুদের ব্রেন সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। একজন শিশুর মস্তিষ্কে প্রতি সেকেন্ডে দুই মিলিয়ন কানেকশন তৈরি হয়। দুই বছরে একজন শিশুর ব্রেন প্রায় ১০০ ট্রিলিয়ন কানেকশন তৈরি করে। আর এজন্য বৃদ্ধদের তুলনায় শিশুরা তার এনভায়রনমেন্টকে অনেক দ্রুত কপি করতে পারে, তারা খুবই দ্রুতগতিতে তাদের চারপাশ সম্পর্কে ধারণা তৈরি করতে পারে। আর এজন্য প্রতিটি শিশুর ব্রেন অনেক গুরুত্বপূর্ণ। শিশুদের মস্তিষ্ক অত্যন্ত সংবেদনশীল স্ক্যানার। আপনি তাকে যা বলবেন সে তাই স্ক্যান করবে। এজন্যই মানুষ তার ছেলেবেলার শিক্ষা থেকে বের হতে পারেনা। অনেক বড় বড় বিজ্ঞানীরাও তাদের জন্মগত ঈশ্বর ও ধর্ম বিশ্বাস থেকে বের হতে পারেনি। একজন শিশুর ব্রেন এতটাই সংবেদনশীল যে চাইল্ড ব্রেন তাকে বড় হওয়ার পরও ডোমিনেট করে।
২) আমরা প্রায়শ টিনএজদের ভুল বুঝি। বয়ঃসন্ধীর সময়টি একজন কিশোরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ সময়টিকে নিউরোসায়েন্সের ভাষায় বলা হয় ওভার প্রোডাকশন পিরিয়ড। কারণ এ সময়ের আগে প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স যেটি যুক্তি, আবেগ নিয়ন্ত্রণ ও নৈতিকতার সাথে জড়িত সেটি অনুন্নত থাকে। শিশু ও কিশোরদের ব্রেন যতই সংবেদনশীল হোক তারা সঠিকভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারেনা। তাদের আবেগ অনুভূতির উপর তাদের নিয়ন্ত্রণ কম। খুবই বিশ্রী একটি পরিস্থিতি। ওভার প্রোডাকশন পিরিয়ডে তাদের মস্তিষ্কের প্রি-ফ্রন্টাল কর্টেক্সে নতুন সেল জন্ম হয়, এ কর্টেক্স ধীরে ধীরে ডেভেলপ হতে থাকে। এ বইটিতে বলা হয়, আমরা কেউই ইচ্ছাকৃত টিনএজ নই বরং মস্তিষ্কের গঠনই আমাদের টিনএজ করে।
৩) এ বইটিতে দেখানো হয়, অভিজ্ঞতা আমাদের মস্তিষ্কের নিউরাল কানেকশন পরিবর্তন করে। একজন মিউজিশিয়ানের ব্রেন কানেকশন সাধারণ মানুষের মত নয়। আইনস্টাইনের ব্রেন ও একজন সাধারণ মানুষের ব্রেন আলাদা। বিজ্ঞানীরা আইনস্টাইনের ব্রেন স্ক্যান করে ওমেগা সাইন বের করে। আর এর কারণ হলো যার যার অভিজ্ঞতাই তার মস্তিষ্ককে গঠন করে। জিনোম চেঞ্জ হতে মিলিয়ন মিলিয়ন বছর সময় প্রয়োজন কিন্তু কানেক্টম প্রতি সেকেন্ডেই পরিবর্তন হয়। আর এজন্য বিজ্ঞানীরা খুবই চিন্তাগ্রস্ত। অদূর ভবিষ্যতে আমরা ভিন্ন গ্রহে বসতি গড়বো। ভিন্ন গ্রহের গ্রেভেটি ও তাপমাত্রার তারতম্য ঠিক কীভাবে আমাদের ব্রেন কানেকশন বদলে দিতে পারে এ ব্যাপারে এখন থেকেই গবেষণা শুরু হয়েছে । ডেভিড ইগলম্যান বলেন, সাসপেন্ডেড অ্যানিমেশনের মাধ্যমে আজ থেকে ৫০ হাজার বছর পূর্বের একজন ক্রোম্যাগনকে যদি ঘুম পাড়িয়ে রাখা যেত তবে ৫০ হাজার বছর পর ঘুম থেকে উঠে সে আধুনিক প্রযুক্তি দ্বারা মোটেও বিভ্রান্ত হতো না। কারণ ক্রোম্যাগন ব্রেন অভিজ্ঞতার জগতের সাথে অভিযোজনের জন্য রিওয়্যার হতে পারে যদিও তার জিনোম ৫০ হাজার বছর পূর্বেই থেকে যায়। কিন্তু একই সময়ের অন্য একটি প্রাণীর ব্রেনে এ ধরণের প্লাস্টিসিটি নেই। তার জিনোম ও কানেক্টম সবসময় একই। কিন্তু কেনো? এর উত্তর লুকিয়ে আছে ‘’শিশুর অপরিণত মস্তিষ্কে’’ । আপনি এ বইতে দেখবেন কিভাবে নারীর সরু জন্মনালী মানব মস্তিষ্ককে এই অসাধারণ ক্ষমতা দিয়েছে।

৪) এ বইটিতে দেখানো হয়েছে আমরা বাস্তবতা বলতে যা বুঝি তা হলো আমাদের মাথার খুলির ভেতর ডার্ক থিয়েটারের ইলেক্ট্রোকেমিক্যাল উপস্থাপনা। বাহিরের জগতে ম্যাটার ও এনার্জি ছাড়া কিছুই নেই। কিন্তু আমাদের ব্রেন এ মহাবিশ্বকে শব্দ, গন্ধ, দৃশ্য আর রঙ দিয়ে ঐশ্বর্যময় করে তোলে।
৫) কীভাবে আদিম সময়ে আমাদের অবচেতন মন বিবর্তিত হয়েছে? আমরা কেনো আমাদের মস্তিষ্কের আনকনসাস মেশিনারি বুঝতে পারিনা? প্রতি সেকেন্ডে মস্তিষ্কের ভেতর প্রায় ১৬ মিলিয়ন বিট তথ্য প্রবেশ করে। আমরা যার মাত্র ৪৬ বিট সম্পর্কে সচেতন। প্রশ্ন হলো ৪৬ বিট তথ্য আমাদের জানানোর কী আদৌ দরকার ছিল? আমাদের দেহের রক্ত চলাচল প্রক্রিয়াকে আমরা জানিনা, দেহের জটিল রায়ায়নিক বিক্রিয়াগুলো সম্পর্কেও আমরা সচেতন নই। তাহলে অবশিষ্ট ৪৬বিট তথ্য সম্পর্কে কেনো আমাদেরকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে? এ অতি ক্ষুদ্রতর সচেতনতা প্রদান না করলে কী এমন ক্ষতি ছিল?
৬) বিজ্ঞানীরা এক্সপেরিমেন্টের মাধ্যমে দেখেন, শারীরীক ব্যাথায় আমাদের ব্রেনের যে এলাকাগুলো অ্যাকটিভ হয় সামাজিক ব্যাথা দেখলেও আমাদের মস্তিষ্কের একই পেইন ম্যাট্রিক্স অ্যাকটিভ হয়। আমাদের ব্রেন আলাদা করে কোনো ব্যাথা প্রসেস করেনা। এজন্য টিভির পর্দার দ্বিমাত্রিক স্ক্রিনে আমরা কার্টুনের কান্না ও রোবটের পেইন দেখলেও ব্যাথা পাই। বিজ্ঞানীরা আরও দেখেন , আমাদের অজান্তেই আমাদের ব্রেনের কিছু নিউরন অন্যের ব্যাথা দেখলে জবাব দেয়। যেখান থেকে আমরা বুদ্ধের একটা উক্তি ব্যাখ্যা করতে পারি যে, সবার মধ্যে আসলে একই ঈশ্বর অবস্থান করে। প্রশ্ন হলো, সহানুভূতির এই মেকানিজম কেনো বিবর্তিত হলো?
৭) ভিজুয়াল এক্সপেক্টেশন নিয়ে দারুণ আলোচনা আছে এ বইতে। এখানে দেখানো হয়, চোখে ফোটন প্রবেশ করার আগেই ব্রেন রিয়েলিটির একটি আনুমানিক মডেল স্বয়ংক্রিয়ভাবে তৈরি করে নেয়। আর এর প্রমাণ স্বরুপ বিজ্ঞানীরা মস্তিষ্কের এক ঝাঁক নিউরাল কানেকশনের ফটোগ্রাফ নির্মান করেন।
৮) আমাদের মস্তিষ্ক প্রতি সেকেন্ডেই পরিবর্তন হয়ে যায়, ৭ বছর পর পর দেহের পূর্বের সকল অ্যাটম প্রতিস্থাপিত হয়ে যায়৷ আমার ১৬ বছর পূর্বের মস্তিষ্কের নিকট আজকের মস্তিষ্কের ইনফরমেশন নেই। প্রশ্ন হলো, যদি জীবনের প্রতিটি স্টেজে আমার প্রতিটি ভার্সনের ব্রেন মেমরি আলাদা আলাদাই হয়, তবে সত্যিকার আমি কে?
৮) কখনো কি শুনেছেন সিদ্ধান্তেরও শব্দ আছে? একটি নিউরন আর একটি নিউরনের সাথে ইলেক্ট্রিক্যাল স্পাইকের মাধ্যমে কথা বলে যাকে বলা হয় ‘অ্যাকশন পটেনশিয়াল’। বিজ্ঞানীরা অ্যাকশন পটেনশিয়ালের কথাকে স্পিকারের মাধ্যমে শব্দে পরিণত করেন। শুনতে অনেকটা POP! POP!POP! অস্ট্রোলোপিথ থেকে শুরু করে সেপিয়েন্স পর্যন্ত সবার ব্রেনে অ্যাকশন পটেনশিয়ান POP! POP!POP! করে শব্দ করেছে। কেনো আপনার অবচেতন মন আপনার সাথে বিতর্ক করে? কেনো একটি নিউরাল নেটওয়ার্ক আইসক্রিম খেতে চাইলে অন্যটি চিন্তা করে স্বাস্থ্য ঝুঁকি সম্পর্কে? ব্রেনের ভেতর যদি সিদ্ধান্তরা যুদ্ধই করে একে অন্যের উপর জয়লাভ করার জন্য তবে আপনার ভূমিকা কী? সিদ্ধান্ত মূলত, কে গ্রহণ করে? আপনি না আপনার নিউরাল নেটওয়ার্ক ? প্রতিনিয়ত মনে মনে আপনার সাথে কে কথা বলে? ব্রেনের একটি নেটওয়ার্ক অন্য নেটওয়ার্কের সাথে যে ডিভেট করে সেটাই কি আপনার অবচেতন মনের কথা ? Who are You??
৯) স্প্লিট ব্রেন পেশেন্টদের মস্তিষ্কের দুটি হেমিস্ফিয়ারের কানেকশন দূর্বল হয়ে গেলে তাদের মনও দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়। একটি হেমিস্ফিয়ার যদি বলে আমি আস্তিক অন্য হেমিস্ফিয়ার বলে আমি নাস্তিক। প্রশ্ন হলো, এ ব্যক্তির স্বর্গে যাওয়া উচিত? নাকি নরকে? আমরা তার ব্রেনের কোন হেমিস্ফিয়ারের বক্তব্যকে গ্রহণ করবো? আমাদের মনের ভেতর প্রতিনিয়ত যে কন্ট্রাডিকশন স্প্লিট ব্রেনের রোগীদের ক্ষেত্রে সেই কন্ট্রাডিকশন একদম পরিস্কার হয়ে উঠে। প্রশ্ন হলো, তাহলে অখণ্ড আত্মার অস্তিত্ব কোথায়? আপনার কোন হেমিস্ফিয়ারের ‘আমি’ রিয়েল ‘’আমি’?
৯) কীভাবে আপনার মনের ক্ষমতা বাড়াবেন? কীভাবে শরীরের মধ্যে এক্সোকেলিটন যুক্ত করবেন? চোখের পরিবর্তে জিহবার ভেতর দিয়ে কী দৃশ্যের অনুভূতি প্রেরণ করা যায়? আমাদের ফিফথ সেন্স কী মৌলিক? নাকি এগুলো পরিবর্তন করা সম্ভব? মস্তিষ্কের ভেতর নতুন কোনো ডিভাইস প্রবেশ করলে মস্তিষ্ক কীভাবে সে যন্ত্রের ভাষা বোঝে?
৯) শুধু একটি ব্রেনের সিগনাল ইউজ করে মিলিয়ন মিলিয়ন শরীর নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব? মনে করুন, আপনার পা মঙ্গলে, চোখ বৃহস্পতি গ্রহে আর কান অ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সিতে। যেগুলো পৃথিবীর একটি সুপার কম্পিউটারে রাখা আপনার ব্রেন কানেক্টমের সাথে যুক্ত। এমন অদ্ভুত প্রযুক্তি কি আদৌ বাস্তবায়ন হবে? ভাবতে কেমন লাগে, আপনার একটি চোখ থাকবে জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের ভেতর আর ব্রেন থাকবে পৃথিবীতে? রুমের ভেতর বসে থেকেই আপনি মহাবিশ্বের তের বিলিয়ন বছর অতীত দেখতে পারবেন ?
১০) মনে করুন , একদল বিজ্ঞানী মহাকাশ থেকে অপরিচিত সিগনাল শনাক্ত করলো। কিন্তু এই সিগনালগুলো বিক্ষিপ্ত। অনেকটা ঘুমন্ত মানুষের অবচেতন মনের স্বপ্নের সিগনালের মত। তারা ধারণা করলো, কোনো অ্যালিয়েনের সম্ভবত ঘুমিয়ে আছে। তার ব্রেন থেকেই আসছে এই অদ্ভুত সিগনাল। কিন্তু বিস্তারিত রিসার্চ করে দেখা যায়, সেখানে ফিজিক্যালি কোনো অ্যালিয়েন নেই, এই সিগনাল একটি সুপারকম্পিউটারের। সেই সুপারকম্পিউটারের ভেতর একটি সিমুলেটিং ব্রেন বাস করে। কিন্তু এ ধরণের সিমুলেটিং ব্রেন সম্ভব? যদি মহাকাশে উন্নত কোনো সভ্যতা থাকে আর তারা যদি তাদের মনকে কম্পিউটারে আপলোড করে। তবে সেই সিগনাল তো মহাকাশে ভেসে বেড়ানোর কথা, তাইনা? যাইহোক, এটা শুনতে মনে হয় সায়েন্স ফিকশন। কিন্তু বাস্তবতা কতদূর?
১০) এ প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে পাল্টা একটি প্রশ্ন করে, চেতনা কী বায়োলজিক্যাল? শুধুমাত্র নিউরনের ভেতরেই কি চেতনা তৈরি হয়? যদি নিউরনে ভেতরেই চেতনা থাকে, তবে স্বপ্নহীন ঘুম অথবা কোমায় কেনো আমাদের মাঝে চেতনা কাজ করে না? ঘুমের ভেতর কি ব্রেন থেকে নিউরন হারিয়ে যায়? এখান থেকে প্রমাণ হয় চেতনার জন্য নিউরন দরকার নেই। ভাবলে অবাক হবেন। এ সিম্পল ধারণা থেকে কীভাবে বিজ্ঞানীরা হিউম্যান কানেক্টম প্রজেক্ট নিয়ে কাজ শুরু করেছে। অ্যালকোর নামক একটি ফাউন্ডেশন মৃত মানুষের লাশকে ডিপ ফ্রীজে রেখে দেয় যেনো হাজার বছর পর অ্যাডভান্স প্রযুক্তি তাদের ব্রেনকে পুনরায় জাগিয়ে তোলে।
এ বইতে এত এত এত বেশি টপিক আছে যে তা ক্ষুদ্র একটি রচনায় শেষ করা সম্ভব নয়। আধুনিক স্নায়ুবিজ্ঞানের আলোকে অত্যন্ত সহজ ভাষায় এ বইটি আপনাদের নিকট ইনার ইউনিভার্সের অনুপরমাণু তুলে ধরবে । এ বইটি একটি মেন্টাল স্পেসশিপ। যেটি আপনাকে নিয়ে যাবে মস্তিষ্কের দশ বিলিয়ন নিউরনের কাছে। আপনার কথা হবে আপনার নিউরনের সাথে। ২৪৬ পেজের রঙিন ছবির গ্যালারি সম্বলিত এ বইটির এক একটি লাইন এক একটি রিসার্চ পেপার যেনো। এ বইয়ের টপিকগুলো দিয়ে বিরাট সব বই লেখা সম্ভব। কিন্তু এত সরল ও সহজ ভাষায় নিউরোসায়েন্সের বই বলতে গেলে খুবই কম।
লিখেছেনঃ এ এইচ লিহন






