Can't find our books? Click here!
বারবি মুভির ইনার মেসেজ কী ছিল?

বারবি মুভির ইনার মেসেজ কী ছিল?

পৃথিবীতে আট বিলিয়ন মানুষ। আর প্রতি আটজন মানুষের মধ্যে একজনের জন্য একটি বারবি ডল আছে। মেটাল কোম্পানির রুথ হ্যান্ডলার সর্বপথম তার মেয়ে বারবারার কাছ থেকে বারবি ডলের ধারণা পেয়েছিলেন। তিনি দেখেছিলেন, তার মেয়ে নিজ হাতে তৈরি একটি কাগজের পুতুলের সাথে কথা বলছে। এখান থেকে তার মাথায় ধারণা আসে, কেমন হয়, যদি আমরা নন-ফাংশনাল একটি পুতুল তৈরি করি? শিশুটির যা ইচ্ছা সে পুতুলটিকে তাই করবে কিন্তু তার নিজের কোনো মুভমেন্ট থাকবে না! যাইহোক, এর পরের ইতিহাস আপনারা সবাই জানেন, এই পুতুল এতটাই জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল যে, মেটাল বারবির গোটা একটি ইউনিভার্স তৈরি করে ফেলে। ১৯৫৯ সালে মেটাল কোম্পানি আনরিয়ালিস্টিক বিউটি স্ট্যান্ডার্ড প্রচারের জন্য সমালোচনার শিকার হয়েছিল! পরবর্তী সময়ে মেটাল নারীর বড় ব্রেস্ট, হিপ সাইজ, চিকন ও লম্বা পায়ের স্ট্যান্ডার্ড তৈরির জন্য সমালোচিত হয়েছিল কারণ এটি কোনো নারীর পক্ষেই অর্জন করা সম্ভব নয়।

বারবি মুভির ইনার মেসেজ কী ছিল?

যাইহোক, একটা সময় তারা বৈচিত্র্যময় কালার ও প্রফেশনের বারবি তৈরি করে। জ্যোতির্বিজ্ঞানী, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার এবং সাইবর্গ থেকে শুরু করে হাজার হাজার প্রকারের বারবি তৈরি করে মেটাল। যে যুগের ট্রেন্ড যেটা ছিল, তারা সেটাকেই ফলো করেছিল। বারবি পুতুলের একটি বিশেষ ব্যাপার ছিল এটি এমন একটি ইউনিভার্স শো করে, যেখানে একজন নারীর পক্ষে সম্ভাব্য যা কিছু আছে, সবকিছু হওয়া সম্ভব! আর বারবি মুভি এই ঐতিহাসিক মেটাল কোম্পানির তৈরি। তারা নিজেরাই তাদের ইউনিভার্সকে এখন জীবিত করে তোলার চেষ্টা করছে, তারা তাদের পুতুলগুলোকে ফিল্মের মাধ্যমে জীবন্তভাবে উপস্থাপন করতে চাইছে! আর এজন্যই এ মুভি নিয়ে এত হাইপ! কিন্তু আপনি কী জানেন, এ মুভির ইনার মেসেজ কতটা শক্তিশালী?

বারবি মুভিতে আমরা দুটি ইউনিভার্স দেখতে পাই। একটি ইউনিভার্স ছিল পারফেক্ট। এখানে নারী তার আনরিয়ালিস্টিক বিউটি স্ট্যান্ডার্ড অর্জন করেছে, এ জগত হলো নারীর সেলফ এক্সপ্রেসন ও ফ্রিডমের চূড়ান্ত স্তর। এটি ছিল অনেকটা স্বর্গের মতো। এ জগতে গোসল করতে হয় না, সুইমিং করতে হয় না এবং কোনোকিছু খেতেও হয় না। তারা মনে মনে যা কল্পনা করে তাই বাস্তব হয়ে যায়। এটি ছিল একটি মন নিয়ন্ত্রিত বিশ্ব, অনেকটা ফেসবুক মেটাভার্সের মতো, চিন্তা দিয়েই তারা এক্সটারনাল ইউনিভার্সের সাথে যোগাযোগ করতে পারে। আসলে এই গোটা ইউনিভার্স ছিল নারীর ইউনিভার্স এবং নারীর মস্তিষ্কের ফ্রিকোয়েন্সিতেই সে ইউনিভার্স চালিত হয়। সে চাইলে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার অথবা নভোচারী সব হতে পারে এবং আমরা দেখতে পাই মাধ্যাকর্ষের নিয়মও সে জগতে নারীর সাথে অন্যরকম আচরণ করে। বারবি বিল্ডিং-এর ছাদ থেকে স্বাচ্ছ্যন্দে ভাসতে ভাসতে গাড়িতে এসে বসে কিন্তু ফিজিক্সের আইন তাদের বিপক্ষে যায় না। এ ইউনিভার্স নারীর জন্য এতটাই পারফেক্ট ছিল, যে পদার্থবিদ্যার আইনও যেন নারীবাদী, সমস্ত ইউনিভার্সই নারীবাদী। এ ইউনিভার্স নিজেই ছিল এক্স-ক্রোমোজম!

এক্স –ক্রোমোজোম শাসিত জগতে পুরুষ নারীর ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণই করতে পারে না। এ মুভিতে বারবির প্রেমিক কেন (KEN) সারাদিন বারবির পেছনে পড়ে থাকে, তার নিজস্ব কোনো জগত নেই, সে প্যারাসাইটের মতো সম্পূর্ণরূপে বারবির ওপর নির্ভরশীল। বিষয়টা এমন যে নারীবাদী ইউনিভার্সে ওয়াই-ক্রোমোজোম হলো একটি প্যারাসাইটের মতো। তারা নারীর দেহের প্যারাসাইট হিসেবে টিকে থাকে, তাদের কোনো নিজস্ব চিন্তার ওয়ার্ল্ড থাকে না, নারীকে কেন্দ্র করেই তার সবকিছু আবর্তিত হয়। বারবি যখন অন্য পুরুষদের সাথে কথা বলে, তখন কেন (KEN) জেলাসি অনুভব করে এবং মানসিক ভাবে রিজেক্টেড হয়। এটা অনেকটা এমন যে এক্স-ক্রোমোজোমের বিশ্বে ওয়াই-ক্রোমোজোমের কোনো প্রাধান্যই নেই। যাইহোক, বারবির ইউনিভার্স সাইকোলজিক্যালি রিয়েল ওয়ার্ল্ডের সাথে কানেক্টেড ছিল। বারবি ছিল রিয়েল ওয়ার্ল্ডের একজন মেয়ের খেলার পুতুল। যে তাকে নিয়ে খেলত, বারবির মধ্যে টেলিপ্যাথিক্যালি তার ইমোশন দেখা দেয় এবং তার দেহ ক্রমশ রূপান্তরিত হয়ে যায়। এক্স-ক্রোমোজোমের এই পারফেক্ট বিশ্বের সাথে সে ধীরে ধীরে বেমানান হয়ে ওঠে, তার পায়ের তালু মানুষের মতো ফ্ল্যাট হয়ে যায়। সে যখন বারবিল্যান্ডের অন্যান্যদের কাছে তার পায়ের তালু প্রদর্শন করে, তখন তারা আতঙ্কিত হয়। যাইহোক, একসময় সে বুঝতে পারে, তার এ সমস্যা সমাধান করতে হলে, তাকে রিয়েল ওয়ার্ল্ডে যেতে হবে। একজন অদ্ভুত ওম্যানের পরামর্শে সে মানুষের জগতে ফিরে যায় এবং তার সাথে তার ওয়াই ক্রোমোজম বন্ধু কেন(ken) পিছু নেয়।

বারবি ও কেন(ken) সেখানে গিয়ে আবিষ্কার করে, এই ইউনিভার্স পুরুষতান্ত্রিক, এটি ওয়াই-ক্রোমোজম শাসিত। বারবি সেখানে গিয়ে দাঁড়ানোর কিছুক্ষণ পরই একজন পুরুষ এসে তার পেছনে একটা থাপ্পড় মারে। এখানে নারীদের অবজেক্টিফাই করা হয় এবং বারবির সাথে তুলনা করে এখানকার নারীদের অপমান ও তাচ্ছিল্য করা হয়। নারীরা আনরিয়ালিস্টিক বিউটি স্ট্যান্ডার্ডের সাথে সমন্বিত হতে না পেরে ডিপ্রেশনের মধ্যে থাকে। এটি এমন একটি ইউনিভার্স, যেখানে কোনো নারীই পারফেক্ট নয়, এখানে নারীদের আনরিয়ালিস্টিক বিউটি স্ট্যান্ডার্ড ফলো করার জন্য অযথাই প্রেসার করা হয়। আর তাই বারবি যখন রিয়েল ওয়ার্ল্ডের মেয়েটির কাছে ফিরে যায়, যে ছোটবেলায় তাকে নিয়ে খেলত, সে বারবিকে তিরস্কার করে বলেছিল, আমি এখন তোমার প্রতি আর আকৃষ্ট না, তোমরা অনেক বেশি পারফেক্ট, এজন্য আমাদের বিশ্বে আমাদের অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় এবং আমি এখন তোমাকে পছন্দ করছি না ইত্যাদি।

এদিকে বারবির নির্মাতা কোম্পানি তাকে কিডন্যাপ করে নিয়ে যায় কিন্তু তার প্রেমিক পুরুষ (ওয়াই ক্রোমোজম) তাকে রক্ষা করার জন্য এগিয়ে যায় না। কারণ কেন (KEN) অবাক হয়ে দেখেছিল, এই ইউনিভার্স ওয়াই ক্রোমোজম শাসিত। সে এখানকার সকল ম্যান পাওয়ার সংক্রান্ত গ্রন্থগুলো সংগ্রহ করে এবং তার নিজের জগতে ফিরে যায়। আর সে বারবিল্যান্ডকে পুরুষতান্ত্রিক সমাজে পরিণত করে। এখন নারীরা আর ওয়াই ক্রোমোজমকে শাসন করে না, ওয়াই ক্রোমোজম তাদের শাসন করে। বারবি তার কোম্পানির লোকদের থেকে পালিয়ে আসে। তাকে সহযোগিতার জন্য তার রিয়েল জগতের ফ্যামিলি এগিয়ে আসে এবং বারবি তাদের নিয়ে পারফেক্ট ইউনিভার্সে চলে যায় এটা দেখানোর জন্য যে, সেখানে এক্স ক্রোমোজম কত ক্ষমতাবান! কিন্তু বারবি বিস্মিত চোখে দেখে, এ জগত এখন পুরুষ শাসিত। এ মুভির হাস্যকর একটি দৃশ্য হলো বারবির প্রেমিক সার্জারি সম্পর্কে কোনো জ্ঞান না থাকার পরও, একজনকে সার্জারি করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, এজন্যই যে সে একজন পুরুষ। দুঃখ ও শোকে বারবি আচ্ছন্ন হয়ে যায়। কিন্তু এ সময় তার রিয়েল ওয়ার্ল্ডের পরিবার, বারবিওয়ার্ল্ডের নারীদের জাগানোর চেষ্টা করে, তাদের বোঝানোর চেষ্টা করে, ওয়াই ক্রোমোজম শাসিত ইউনিভার্সে তারা কতটা নির্যাতিত ও শোষিত!

তখন তারা সবাই মিলে একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। তারা প্ল্যান করে বের করে, কীভাবে কেনের কাছ থেকে বারবিল্যান্ডকে উদ্ধার করা যায়। তারা বুদ্ধি খাটিয়ে একটি উপায় খুঁজে পায় আর তা হলো, নারীর প্রতি পুরুষের জেলাসিকে ব্যবহার করেই, তারা পুরুষের মধ্যে যুদ্ধ সৃষ্টি করবে আর এতে করে পুরুষের একতা ভেঙে যাবে আর এই ফাঁকে তারা তাদের ইউনিভার্সের কন্ট্রোল নিয়ে নেবে। তারা পরিকল্পনা অনুযায়ী, নিজ নিজ বয়ফ্রেন্ডকে ছেড়ে, তাদেরই সামনে তাদের প্রতিযোগী পুরুষের সাথে রোম্যান্স করতে শুরু করল। পুরুষের মধ্যে সাধারণত ম্যাট গার্ডেনিং-এর জন্য একটি ডিফেন্স মেকানিজম থাকে, আর তখন এই ডিফেন্স মেকানিজম সক্রিয় হয়, তাদের জেলাসি জাগ্রত হয়, আর তারা তখন থেকে একে অন্যের সাথে যুদ্ধ করতে শুরু করে! বারবি আবিষ্কার করল, এ পদ্ধতি খুবই পাওয়ারফুল। তারপর তারা এটাকে নিয়মিত ব্যবহার করতে থাকে। নারীর বহুগামিতার প্রতি পুরুষের যে সাইকোলজিক্যাল বিদ্বেষ, সে বিদ্বেষের দুর্বলতাকে ব্যবহার করেই, তারা তাদের ইউনিভার্সে এক্স –ক্রোমোজমের শাসন প্রতিষ্ঠা করে!

পুরুষ তার জেলাসির কারণে ইউনিভার্সের ওপর তাদের কন্ট্রোল হারায়, যা পুরুষকে আবারও পরনির্ভরশীল একটি দুর্বল সেক্সচুয়াল প্যারাসাইট প্রমাণ করে। এটি প্রমাণ করে যে, একজন নারী পুরুষকে ছাড়াও স্বাধীনভাবে জীবন যাপন করতে পারে, সে যা খুশি তাই হতে পারে কিন্তু একজন পুরুষ নারীর ওপর নিয়ন্ত্রণ ও নির্ভরশীলতা ছাড়া একা একা সার্ভাইভ করতে পারে না, পুরুষ সাইকোলজিক্যালি খুবই দূর্বল ও নাজুক প্রকৃতির একটি জীব। আমি মনে করি, এটি এ মুভির একটি অত্যন্ত ভয়াবহ স্টেরিওটাইপ।

মুভির শেষে আমরা দেখতে পাই, বারবি তার কেনকে একটি প্রস্তাব দিয়েছে আর তা হলো, আমি রিয়েল ওয়ার্ল্ডে যাওয়ার পর থেকে আমার ভেতর একটি পরিবর্তন দেখেছি, আমার ইমোশন পরিবর্তন হয়ে গেছে, তোমার প্রতি আমার কোনো ভালোবাসা বা আবেগ নেই। সে বলে, তুমি বারবির ওপর নিয়ন্ত্রণ ও নির্ভরশীলতা অতিক্রম করে তোমাকে আবিষ্কার কর, আর আমি আমাকে আবিষ্কার করি। আমরা মুভির শেষে দেখতে পাই বারবির ক্রিয়েটর তার সামনে এসেছে, বারবি তার কাছে তার জটিলতার কথা উপস্থাপন করেছে। তার ক্রিয়েটর রুথ হ্যান্ডলার তাকে বলেছিল, তুমি যদি কল্পনা কর, তবে তুমি একজন পারফেক্ট বারবি হতে পার আর তুমি যদি কল্পনা কর, তবে তুমি মানুষ হতে পার। বারবি পারফেক্ট কোনো বারবি হতে চায়নি, সে একজন ত্রুটিপূর্ণ ও অসম্পূর্ণ মানুষ হতে চেয়েছে।

এখান থেকে প্রশ্ন জাগে, কেন একজন নারী তার ফেমিনিস্ট ওয়ার্ল্ড ছেড়ে পুরুষতান্ত্রিক জগতে যেতে চেয়েছিল? কেন সে সেই জগতেই ফিরে যেতে চেয়েছিল, যেখানে ওয়াই-ক্রোমোজম নারীদের শাসন করে? 🙂

Read More:

( এটি আমার পারসোনাল পর্যবেক্ষণ, এক একজন দর্শক এটাকে এক একভাবে নিতে পারে)

বারবি মুভির ইনার মেসেজ কী ছিল?/ বারবি মুভির ইনার মেসেজ কী ছিল?/ বারবি মুভির ইনার মেসেজ কী ছিল?

মন্তব্য করুন: