Can't find our books? Click here!
বাংলাদেশের মানুষের হিংস্রতার বৈজ্ঞানিক কারণ !

বাংলাদেশের মানুষের হিংস্রতার বৈজ্ঞানিক কারণ !

বাংলাদেশের মানুষ প্রচণ্ড হিংস্র। দিন দিন এই হিংস্রতার পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। শিক্ষিত বলেন অথবা অশিক্ষিত, এখানে হিংস্রতা আর নৃশংসতার মাত্রা চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে গেছে। মানুষ সম্পূর্ণ জিরো টলারেন্স। এখানে কেউ কাউকে ক্ষমা বা ছাড় দিতে রাজি নয়। এরা পশুর মতো নৃশংসভাবে একে অন্যকে হত্যা করছে। কিন্তু কেন এমন হচ্ছে? কেন আকস্মিক বাংলাদেশে সাইলেন্ট গৃহযুদ্ধ শুরু হলো? এর পেছনে কারণ কী শেখ হাসিনা? ইউনূস? তারেক জিয়া? কে মূলত? বাংলাদেশের সমস্যা সুনির্দিষ্ট কোনো রাজনৈতিক গোষ্ঠী বা ব্যক্তি নয়। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো লিমিটেড স্পেস ও রিসোর্চ। আমাদের সমস্যা ম্যাথম্যাটিক্যাল, পলিটিক্যাল নয়। একটি ক্ষুদ্র মানচিত্রের ভেতর প্রায় ২০-৩০ কোটি মানুষ আটকে আছে। এদেশকে যদি এ মুহূর্তে স্বয়ং ঈশ্বরের মেসেঞ্জার এসেও পরিচালনা করে, তার পক্ষেও হিংস্রতা ও আগ্রাসন ঠেকানো অসম্ভব। বাংলাদেশের মানুষের এই হিংস্রতার পেছনে মূল কারণ উচ্চ জনসংখ্যা, সীমিত সম্পদ, অপ্রতুল চাকরি, স্বাস্থ্যসেবা, ন্যায়বিচারের অভাব—এসবকিছু সাধারণত মানুষের মধ্যে সবসময় ফাইট অর ফ্লাইট রেসপন্স জাগিয়ে রাখে।


উচ্চ জনসংখ্যা ও সীমিত সম্পদ মানুষের জেনেটিক স্বার্থপরতাকে ট্রিগার করেছে, তাদের শরীরে কর্টিসল ও অ্যাড্রিনালিন হরমোনের মাত্রা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে, যা স্নায়ুতন্ত্রকে হাইপার-অ্যাকটিভ করে তুলেছে। অতিরিক্ত স্ট্রেস হর্মোনের প্রভাবে তাদের প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স দুর্বল হয়ে গেছে, তারা যৌক্তিক চিন্তা করতে অক্ষম। এমিগডালা ডেমেজ হওয়ায়, তাদের ব্রেন ইমোশন প্রসেস করে না। তাদের আইকিউ ও ইকিউ দুটোই ক্ষতিগ্রস্ত । এখানে প্রতিটি মানুষ চরম প্রতিক্রিয়াশীল। বাংলাদেশের মানুষের পক্ষে একে অন্যকে সহযোগিতা ও ভালোবাসার ক্ষমতা ফুরিয়ে গেছে। তবে এটা তাদের অন্যায় নয়, যেখানে টিকে থাকার জন্য স্পেস ও রিসোর্চ নেই, সেখানে ভালোবাসার মৃত্যু হয়। বাংলাদেশের মানুষের কাছে এখন ভালোবাসা হলো একটি মুখোশ। এরা সবাই এক একটি ক্ষুধার্ত হায়েনা। কেউ কাউকে এক বিন্দু পরিমাণ ছাড় দিতে রাজি নয়। প্রতিযোগিতা যেখানে চূড়ান্ত সেখানে হিংস্রতা, নৃশংসতা ও স্বার্থপরতাই একমাত্র অপশন। প্রতিটি মানুষ এক একটি বিষাক্ত নরক হয়ে আছে।


আমরা এমন একটি দেশে বাস করি, যেখানে অন্যায়ের বিচার হয় না। নির্দোষ মানুষের বিপক্ষে হাজার হাজার মিথ্যা মামলা দেয়া যায়। দেশের সকল আইনজীবী ও বিচারককে প্রশিক্ষণ দেয়া হয় কীভাবে মিথ্যা মামলা লিখতে হয় ও কিভাবে ক্ষমতার দাসত্ব করে কোটি কোটি টাকার সম্পদ তৈরি করতে হয়। এখানে আইন সত্য ও ন্যায়বিচারের পক্ষে নয়, টাকা ও ক্ষমতার পক্ষে। আমি আমার জীবদ্দশায় কোনো উকিলকে সত্য মামলা লিখতে দেখিনি। মামলা করার সময় কমপক্ষে ৮০% মিথ্যা কথা লিখতে হয়, নয়তো মামলা শক্ত হয় না। যখন মানুষ দেখে অন্যায় করেও কেউ পার পেয়ে যাচ্ছে, বা ন্যায়বিচার পেতে গেলে বছরের পর বছর কেটে যায়—তখন একটা বিপজ্জনক মনোভাব তৈরি হয়: “নিজেই বিচার করো।” এটা vigilante mindset তৈরি করে, যেখানে মানুষ বিশ্বাস করে, হিংস্রতা ছাড়া কোনো সুরাহা নেই। এতে সমাজে নৃশংসতা বৈধতা পেয়ে যায়। বাংলাদেশের মব জাস্টিস NচP অথবা জামাতের তৈরি নয়, জনসংখ্যার ঘনত্ব, আইন, শাসন ও বিচারব্যবস্থার মিসম্যাচ থেকে তৈরি।


এছাড়া বাংলাদেশি সমাজে “মান সম্মান”, “পুরুষত্ব”, “পরিবারের ইজ্জত”—এসব শব্দের ভার এতটাই বেশি যে, কোনো কথায় অপমান মনে হলেই মানুষ ক্ষিপ্ত হয়ে পড়ে। এটি “honor culture”-এর একটি রূপ, যেখানে কেউ যদি ‘অসম্মানিত’ বোধ করে, তাহলে সে প্রতিশোধ নিতে বাধ্য—তা যত ছোট ঘটনাই হোক। সম্পদ, চাকরি, শিক্ষা, চিকিৎসা—সবকিছুতেই সীমিত সুযোগ। এতে মানুষ একে অপরকে প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবে, প্রতিবেশী নয়।


Evolutionary Psychology বলে, যখন মানুষের মধ্যে সারভাইভাল কমপিটিশন প্রবল হয়, তখন সহানুভূতির জায়গায় আসে আত্মরক্ষামূলক আগ্রাসন। অনেকেই শৈশব থেকে পরিবার, স্কুল ও সমাজে “নিজের আবেগ প্রকাশ করো না” ধরনের শিক্ষা পায়। কিন্তু এই দমন একসময় আনকনট্রোলড অ্যাগ্রেশন হয়ে ফেটে পড়ে। কারণ, আবেগ প্রকাশের স্বাস্থ্যকর উপায় না থাকলে তা হিংস্রতায় রূপ নেয়। বাংলাদেশে মানসিক স্বাস্থ্য শিক্ষার অভাব এ সমস্যাকে বাড়িয়ে দিয়েছে। চলচ্চিত্র, রাজনৈতিক বক্তৃতা, ধর্মীয় উস্কানি—সব জায়গাতেই এক ধরনের ‘হিংস্রতা-মূল্যবোধ’ প্রচারিত হয়। যেমন: “কঠিন হলে সিজদা নয়, প্রতিবাদ করো”, “জবাই করে দাও”, “এরা জাতশত্রু”—এই ভাষাগুলো হিংস্রতাকে স্বাভাবিক করে তোলে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষ সেই ভাষাই বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করতে শুরু করে।

নিওলিবারাল পুঁজিবাদ ও ক্রমাগত অপমানবোধ মানুষকে এখানে দিন দিন হিংস্র করে তুলছে। সমাজ এখন “তুমি কতটা সফল, তা-ই তোমার মূল্য” এই মানসিকতায় চলছে। এতে যে ব্যক্তি আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়ে, সে নিজেকে “অযোগ্য”, “অদরকারী”, বা “অপমানিত” ভাবতে শুরু করে। এর ফলে একধরনের resentful rage তৈরি হয়, যা খুব দ্রুত হিংস্র আচরণে রূপ নেয়।

Reference:

🔬 বৈজ্ঞানিক জার্নাল ও একাডেমিক রিসার্চ:

  1. Woman’s chronic stress & cortisol in Bangladesh
    Ziaei et al. (2016)–এর গবেষণায় দেখা যায়, গর্ভবতী নারীদের ওপর সামাজিক ও পারিবারিক হিংসার চাপ ঘন ঘন ঘটে এবং তা মানসিক চাপের সূচকে (distress) প্রভাব ফেললেও সকালের সালাইবারি কর্টিসল মাত্রা বাড়ায় না arXiv+9PLOS+9J-STAGE+9
    → শিক্ষণীয় দিক: দীর্ঘমেয়াদি সামাজিক হিংস্রচাপ—বিশেষ করে নারী নির্যাতন—মানসিক স্বাস্থ্যে গভীর ক্ষতি করে।
  2. Cortisol in garment workers (stress biomarker)
    Dreher et al. (2023)–এর কাগজে পোশাকশ্রমীদের রেশমের চুল বাকল থেকে কর্টিসল পরিমাপ করেছে। দেখা যায়, “পরিবারে অবলম্বনের দায়” কর্টিসলের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে দেয় ScienceDirect+5Oxford Academic+5J-STAGE+5
    → মানসিক চাপের দৈহিক প্রমাণ, এবং লিমিটেড রিসোর্চের প্রেক্ষাপটে তীব্র পুরুষত্ব/পরিবারগত চাপ সমাজে হিংস্রতা জাগায়।
  3. Stressors & mental health in Bangladesh
    Cambridge/BJPsych International (2021)–এর রিপোর্টে বলা হয়েছে, জনসংখ্যা ঘনত্ব, অপ্রতুল চিকিৎসা, দুর্বল মানসিক স্বাস্থ্যের কাঠামো—এসব মিলিয়ে দেশে মানসিক সমস্যা প্রচলিত ও বাড়ছে The Diplomat+10Cambridge University Press & Assessment+10arXiv+10
    → সরকারের সীমিত মানবসম্পদ, স্বাস্থ্য ও ইন্সটিটিউশন অ্যাপচার—এসব হিংস্রতার জন্মে ভূমিকা রাখে।
  4. Youth Exposure to Violence & Mental Health
    WHO Global School Survey–এর ভিত্তিতে 11–17 বছর বয়সী তরুণদের মধ্যে সহিংস ইতিবাচক প্রভাব ও মানসিক অসুস্থতার সংযোগ দেখা গেছে Cureus+15ScienceDirect+15ScienceDirect+15
    → শিশু-কিশোরদের মধ্যে হিংসার নফরতের বীজ বোনা শুরু—ভবিষ্যতের সমাজে ঝুঁকিপূর্ণ প্রজন্ম তৈরি করছে।

📰 সংবাদ-ভিত্তিক খবর ও বিশ্লেষণ:

  • “Why is Mob Violence So Common in Bangladesh?” (The Diplomat, June 2025):
    HRSS রিপোর্ট তুলে ধরে, ২০২৪–২৫ সালের মধ্যে ১১৯ জনের মৃত্যুসহ ৭৪ জন আহত হয়েছে ১১৪টি মব হামলায়। এর মূলে বিচারবাহিনীর প্রতি মদনাবাদ, রাজনৈতিক নির্যাতন ও গুণ্ডামি প্রবণতা Naya Shatabdi+8The Diplomat+8The Diplomat+8
  • “Mob violence: Causes, consequences, and pathways to justice” (The Daily Star, Opinion):
    এখানে বলা হয়—“Bangladesh’s mob violence epidemic is not a law‑and‑order issue but a crisis of governance, trust, and economic justice” The Daily Star+1The Daily Star+1
  • “Bangladesh witnesses increase in mob beatings & rapes” (Economic Times via ET Bureau, Jul 6, 2025):
    জুনে দুই-তিন দিনের মধ্যে মব হামলা ও ধর্ষণের ঘটনাও বেড়েছে; MSF–এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে “government inaction” ও বিচারহীনতা এই ঘটনার অন্যতম কারণ Wikipedia+9Dhaka Tribune+9The Economic Times+9The Economic Times
  • Survey: Rising mob violence a major concern for youth (Dhaka Tribune, Jul 7, 2025):
    SANEM–এর জরিপে বলা হয়েছে, ৭১.৫% যুবসমাজ মনে করে মব জাস্টিসের প্রকোপ বাড়ছে arXiv+2Dhaka Tribune+2Wikipedia+2

Internal Article: