বহুগামিতা আর এথিক্সের দ্বন্ধ মানব মনের সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি। মনে করুন, আপনি একটা মেয়েকে খুব ভালোবাসেন, আপনি চাননা আপনার প্রেমিকাকে কেউ স্পর্শ করুক। এ মুহূর্তে আপনি যদি অন্য কোনো নারীর সাথে সম্পর্ক করতে চান, আপনার মস্তিষ্কের ইন্টারনাল ক্রিটিক আপনাকে প্রশ্ন করবে, যদি তোমার ভালোবাসার মানুষটাও অন্য কারও সাথে তোমার অজান্তে সম্পর্ক করে আর তোমার কাছে ব্যাপারটি গোপন করে? আপনার মস্তিষ্ক ডিস্টার্ব ফিল করবে, এটাকে বলে কগনিটিভ ডিজোন্যান্স।
আপনার মস্তিষ্কের প্রি-ফ্রন্টাল কর্টেক্স আপনাকে ক্রমাগত ডিস্টার্ব করতেই থাকবে। মস্তিষ্কের এই অংশের কাজ হলো, আপনাকে ফিউচার কনসিকোয়েন্স দেখানো যেমন তুমি এই কাজ করলে, আগামীকাল তোমার সাথে বিপজ্জনক কিছু ঘটতে পারে। প্রি-ফ্রন্টাল কর্টেক্সের কাজ আপনার মধ্যে টেনশন ও প্রেসার তৈরি করা। এ সময় মস্তিষ্কের প্রচুর ক্যালোরি খরচ হয়, মস্তিষ্ক কষ্ট পায়, অনুশোচনা ও অনুতাপ বোধ করে, তার মধ্যে জেলাসি ট্রিগার হয়, সে নিজেই নিজেকে উত্তর দেয়, না না, আমি এটা কিছুতেই মেনে নিতে পারব না।
আমাদের মস্তিষ্কের এমিগডালা ও হাইপোথালামাস চায় আমরা বহুগামিতা, স্পার্ম প্রতিযোগিতা আর শর্টকাট যৌনসম্পর্ক তৈরি করি আর আমাদের মস্তিষ্কের প্রি-ফ্রন্টাল কর্টেক্স বলে, তুমি যদি এই কাজ কর, তবে তোমার সাথেও ফিউচারে এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে, এটি আমাদের এথিক্যাল রাখতে চায়। আপনার প্রেমিকা যদি আপনাকে বলে, আমি তোমাকে হাজার হাজার নারীর সাথে শেয়ার করতে পারি, আপনার মস্তিষ্ক ভয় পাবে কারণ যে মেয়েটি আপনাকে এভাবে অনুপ্রাণিত করছে, তার প্রতি আপনার কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন জাগবে- ১) এই মানুষটি কি আমার আর তার সম্পর্কের সীমানা অস্বীকার করে, সে কি আমার সাথে কমিটেড নয়? ২) আমি যদি তার কথা শুনে সম্পর্ক করি, ফিউচারে তার জন্য অন্য কারও সাথে এটা করা সহজ হবে কারণ আমি তখন নৈতিকভাবে তাকে কোনোপ্রকার বাঁধা দিতে পারব না। ৩) সে যদি অন্য কারও সাথে এ ধরনের কাজ করে ও আমার কাছে তথ্য গোপন করে, আমি তাকে সন্দেহ করার নৈতিক গ্রাউন্ড পাব না কারণ সে নিজেও আমাকে সন্দেহ করেনি। আপনি নিজেকে যতই বোঝানোর চেষ্টা করেন না, কেন আপনার ব্রেন, নিরবিচ্ছিন্নভাবে এই প্রশ্নগুলো আপনাকে করতেই থাকবে।
এ সময় আপনার শরীরে স্ট্রেসের পরিমাণ বেড়ে যাবে, আপনি সবসময় আতঙ্কিত ও দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকবেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, আপনার ব্রেন তাকে আর বিশ্বাস করবে না, সে বিশ্বস্ত হলেও, আপনার ব্রেন আপনার মধ্যে একটি অনন্ত ব্যথা জাগিয়ে রাখবে। আপনার সৃষ্টিশীলতা নষ্ট হবে ও কাজে মনোযোগ দিতে পারবেন না। আপনি যখনই কোনো একটি কাজে মনোযোগ দেবেন, আপনার প্রি-ফ্রন্টাল কর্টেক্স আপনার সামনে একটি কাল্পনিক দৃশ্য নিয়ে আসবে, দেখ! দেখ! তোমার প্রেমিকাকে তার কলিগ এভাবে পেনিট্রেশন করছে, সে খুবই হ্যাপি। আপনি শুনবেন, আপনার প্রেমিকা তাকে বলছে, তুমিই সেরা পুরুষ। আপনার মস্তিষ্কের মধ্যে আতঙ্ক, ভয় ও অনিশ্চয়তা আরও বেড়ে যাবে।
আপনি সবসময় একটাই ভয় পাবেন, এই বুঝি আমার প্রেমিকার সাথে অন্য কেউ সেক্স করে ফেলল! আপনি আপনার প্রেমিকাকে অযথা সন্দেহ করবেন, আপনি তার ব্যাপারে সবসময় সতর্ক থাকবেন। আপনার ব্রেন আপনাকে বোঝাবে, তোমার প্রেমিকা ডেঞ্জারাস, তার ব্যাপারে সাবধান। যখনই সে আপনার ফোন রিসিভ করবে না, আপনার শ্বাসপ্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যাবে, আপনি নিজেকে কিছুতেই স্থির রাখতে পারবেন না। আর যদি কোনো কারণে তার ফোন বন্ধ থাকে, আপনার ব্রেন আপনাকে বলবে, সম্ভবত এ কয়েক ঘন্টায় সে অন্য কারও সাথে এক রাউন্ড শেষ করেছে। আপনি প্রবল যন্ত্রণায় আপনার নিজের চুল নিজে ছিড়ে ফেলবেন। দিনের পর দিন এ ধরনের যৌক্তিক ও অযৌক্তিক সন্দেহ থেকে আপনাদের সম্পর্কে দূরত্ব তৈরি হবে, একটা সময় দুজনের একজন একে অন্যকে ছেড়ে সত্যি সত্যি চলে যাবে। এখন মনে করুন, আপনার পরকিয়া প্রেমিকা আপনার সাথে এক রাত সেক্স করেছে, তার মধ্যে আপনাকে নিয়ে “Future-building hope” তৈরি হবে। আপনি যখন দূরে থাকবেন, আপনার জন্যেও তার মস্তিষ্কে আতঙ্ক, ব্যাথা ও জেলাসি কাজ করবে।
আপনি একটি লুপে আটকে যাবেন, একদিকে আপনার মস্তিষ্ক চায় আপনি বহুগামিতা করুন, অন্যদিকে সে আপনাকে বলে, সাবধান! বহুগামিতা করার পূর্বে চিন্তা কর। এটাই হলো ন্যাচারাল জাস্টিস। এখন মনে করুন, আপনি দুজন মেয়েকে পারস্পরিক আলোচনার ভিত্তিতে একই ছাদের নিচে নিয়ে আসলেন। এখন? আপনি যদি একজনকে সময় দেন, অন্যজন থ্রেট ফিল করবে। তারা দুজন দুজনের প্রতি সবসময় ট্রিগার থাকবে, একে অন্যের ভুল বের করার চেষ্টা করবে, তারা জেলাসি ও টক্সিসিটি ফিল করবে। কিন্তু তারা আপনাকে পাওয়ার জন্য একে অন্যের সাথে প্রতিযোগিতা করছে না, তারা একে অন্যকে থ্রেট মনে করছে।
তাদের মস্তিষ্কের এমিগডালা ও হাইপোথালামাস তাদের মধ্যে “ ownership feeling” তৈরি করছে। আপনি যখনই তাদের সাথে সেক্স করবেন, তাদের ব্রেন আপনাকে নিজস্ব সম্পত্তি ভাবতে শুরু করবে, তুমি আমার আর তোমার উপর আমার সবচেয়ে বেশি অধিকার। এ সময় প্রতিপক্ষ আরও টক্সিক হয়ে যাবে, আপনি যদি একজনকে উপেক্ষা করে তাকে সময় দিতে যান, অন্যজন ডাউন ফিল করবে, তার আত্মসম্মানে আঘাত লাগবে। আর সে মনে করবে, আপনার সব ভালোবাসা শুধু একজনের জন্য। এবার মনে করুন, আপনি দুজনের সাথে থ্রিসাম করতে চান। তারা বলবে, আমাদের প্রাইভেসি আছে। আমরা কেন একে অন্যের কাছে নিজেকে পাবলিক করব? আবার আপনি যদি তাদের রাজি করান, সেক্স করার সময় একজনের প্রতি বেশি ফোকাস করলে, অন্যজন থ্রেট ফিল করবে ও তার সেক্স কল্যাপ্স করবে।
এ ধরনের পলিম্যারি সম্পর্কে আপনাকে প্রতিটি সেকেন্ড আপনার মস্তিষ্কের দুটি প্রতিদ্বন্ধী নেটওয়ার্কের সাথে আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে। একটা সময় আপনি বিশ্বের দিকে ফোকাস করতে পারবেন না। আপনার দুজন প্রেমিকাই আপনার উপর অসন্তুষ্ট। আপনিও তাদের নিয়ে সবসময় আতঙ্কিত। তারা ক্রমাগত আপনার প্রতি আকর্ষণ হারাতে থাকবে। তাদের ব্রেন এ সম্পর্কের ইমোশনাল ম্যানেজমেন্ট করতে পারবে না। কারণ এ ধরনের উচ্চমাত্রিক সম্পর্ক ম্যানটেইন করতে গেলে মস্তিষ্ককে সবসময় টাস্ক পজেটিভ নেটওয়ার্ক চালু রাখতে হয়, যেটা শক্তির দিক থেকে খুবই ব্যায়বহুল। মানুষ সবসময় উচ্চমাত্রিক যুক্তি দিয়ে চিন্তা করে না, মানুষের ক্লান্তি, জড়তা, দুঃখ ও শোক আছে। মাঝে মাঝে তারা মস্তিষ্ককে ডিফল্ট মুডে রাখতে চায়, যেখানে তাদের শক্তির পরিমাণ কম খরচ হয়। তারা ডিফল্ট মুডে রিলিফ ফিল করে। আর একইসাথে ডিফল্ট মুড তাদের মধ্যে হিংসা, বিদ্বেষ, ক্রোধ, ইর্ষা, প্রতিহিংসাপরায়ণার মতো জটিল ও কঠিন অনুভূতি তৈরি করে। তারা তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। আর একসময় এ ধরনের সম্পর্ক ভেঙে যায়।
এখন মনে করুন, আপনি দুজনকেই ভালোবেসেছেন, আপনি কারও সাথেই বিশ্বাসঘাতকতা করেননি, আপনি অনেস্ট। কিন্তু তারপরও আপনাকে একদিন তারা একা করে চলে যাবে। আপনি তাদের দূরে সরিয়ে দেননি, তারাই তাদের দূরে সরিয়ে দিয়েছে। নিজের অহম ও আত্মসম্মানকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে, তারা আপনার সমস্ত আস্থা ও বিশ্বাসকে ভেঙে চুরমার করে দেবে, আপনার ভালোবাসাকে আন্ডারেস্টিমেট করবে। আর আল্টিমেটলি, আপনাকে নতুন করে মুভ করতে হবে। নতুন কোনো সম্পর্ক গঠন করার উদ্দেশ্যে। মানব জীবনে এর থেকে ভয়ানক ট্র্যাজেডি আর কোনোকিছুই হতে পারে না। এ সময় আপনি হবেন জীর্ণশীর্ণ ও শক্তিহীন, আপনার নতুন করে কাউকে ইম্প্রেস করতে ইচ্ছে করবে না, আপনার ব্রেন বলবে, তুমি আগে দুজনের সাথে করেছ, এই মেয়ে যদি ৪ জনের সাথে করে? আপনি নিজেকে বুঝাবেন, আমি একগামী, আমি একগামিতার সম্পর্কই গঠন করব। এবার আপনি তার প্রতি এত বেশি ফোকাস করা শুরু করলেন, সে ভেবে নিলো, আপনি দুর্বল, অসহায়, তাকে ছাড়া আপনার জীবন মিনিংলেস। আপনি যখন তাকে খুশি করার জন্য নিজের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করবেন, সে মনে করবে, আপনার নিজের উপর কনফিডেন্ট নেই। তার মস্তিষ্ক তাকে বলবে, এই ছেলে সারাদিন তোমার পেছনে পড়ে থাকে, নিশ্চয়ই তুমি কোথাও দুর্বল, নয়তো সে অন্য মেয়েদের কাছে জায়গা পায় না, তুমি কেন জায়গা দিচ্ছ? আবার কখনো ব্রেন বলবে, ছেলেটির কোথাও সমস্যা আছে, তার নিজের উপর কনফিডেন্ট কম, সে আনফিট, এজন্য সে অন্য কোনো মেয়েদের ইম্প্রেস করতে পারে না। তখন মেয়েটি এমন কোনো ছেলের প্রতি আকর্ষণ প্রকাশ করতে পারে, যে ছেলেটির প্রতি সংখ্য নারী ইম্প্রেসড। আপনি আপনার নারীকে খুশি করতে গিয়ে, তাকে নিজের অজান্তেই অন্য পুরুষের কাছে পৌঁছে দেবেন।
🧠 ব্যবহৃত গবেষণার রেফারেন্স ):
- Festinger (1957) – cognitive dissonance এর মূল তত্ত্ব, যেখানে মন ফ্রিকশনীয় বিশ্বাস ও কাজের মধ্যে দ্বন্দ্ব সামলাতে চায় Wikipedia+2Wikipedia+2Wikipedia+2।
- Harmon‑Jones (2004, 2000) – ডিজোন্যান্সের নিউরোলজিক্যাল ভিত্তি: ডোরসাল অ্যাথterior cingulate cortex, left frontal cortex, ক্রোধ/অ্যাকশন সম্পর্কে Wikipedia+1Wikipedia+1।
- Neuromorality – প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্সের মাধ্যমে নৈতিক সিদ্ধান্ত ও এথিক্যাল টেনশন নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে গবেষণা Wikipedia।
- Dual‑process moral psychology (Greene et al.) – এসিট অ্যামিগডালা বনাম প্রিফ্রন্টাল তীরে: ইমোশন বনাম কনসিকোয়েন্স ফোকাস করা Wikipedia+1arXiv+1।
- Monogamy, Polyamory and Beyond (Deri et al.) – পলিমারিতেই জেলাসি ও কমপার্শনের বৈচিত্র্য ও প্রক্রিয়া আলোচনা Summit+2scholars.csus.edu+2digitalcommons.ciis.edu+2।
- Flicker & Sancier‑Barbosa (2025) – COMPERSe প্রশ্নাবলীর গবেষণা: কমপার্শনের predictors, জমে ওঠা আনন্দ vs. জেলাসি PsyPost – Psychology News।
- Attridge et al. (Behavior‑analytic approach) – jealousy কে কগনিটিভ‑বিহেভিয়রাল কাল্কুলাস ভেবে বুঝতে চাওয়া, natural response to contingencies researchgate.net।
- Cognitive rigidity and jealousy in titi monkeys – jealousy-provoking context এ OFC এবং ACC activity পরিবর্তন: emotional করে cognitive control শেখে pmc.ncbi.nlm.nih.gov।
- Vicarious cognitive dissonance (Cooper & Hogg, 2007) – অন্যের কোনো inconsistent আচরণ দেখলে ঘটতে পারে observers-এ ডিজোন্যান্স, সামাজিক distrust বা এথিক্যাল প্রশ্ন দেখা দিতে পারে Wikipedia।
- Social network deception studies (Iñiguez, Dunbar et al.) – অসততা (dishonesty) কিভাবে সম্পর্ক ও সামাজিক cohesion ভেঙে দেয়; trust erosion ও psychological fragmentation arXiv।
এ সম্পূর্ণ লুপটা কতটা প্যাথেটিক আর কতটা ব্যাথাদায়ক একবার কল্পনা করতে পারেন? আনুমানিক ২ মিলিয়ন বছর ধরে মানব সভ্যতা এই ট্র্যাজেডির শিকার। এখানে যেন আমরা এক একটি দাবার চাল, আমাদের কিছুই করার নেই। আপনার চোখের সামনে থেকে আপনার প্রেমিকা আপনার জীবন থেকে উধাও হয়ে যাবে! নির্বাক হয়ে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আপনার সামনে আর কোনো অপশন থাকবে না।


