
নভেম্বর ২৯, ২০২১এ একটা খুব গুরুত্বপূর্ন পেপার পাবলিশ হয়েছে, এবং অনেক নিউজ পোর্টাল রিপোর্ট করেছে যে বিজ্ঞানীরা প্রথমবারের মত প্রজননক্ষমতাসম্পন্ন জীবন্ত রোবট বানিয়েছেন। প্রথমেই বলে নেই, এই “রোবট” সিলিকন, ধাতু বা মানুষের তৈরি কোন পদার্থ দিয়ে তৈরি না, এরা জীবন্ত, প্রোগ্রাম করা যায় এমন এক ধরনের মেশিন যেটা আমাদের পরিচিত কোন প্রজাতিও না।
- এই জীবন্ত বায়োবট (রোবটের চাইতে এই শব্দটা আমার বেশি পছন্দ) প্রথম তৈরি হয়েছিল ২০২০ সালে। একে জীবন্ত বলার কারন ছিল, এটা নিজে থেকে নড়াচড়া করতে পারতো এবং নিজের শরীরে জমা করা খাবার থেকে শক্তি আহরণ করতে পারতো।
- জেনোপাস লেভিস Xenopus laevis নামে এক ধরনের ব্যাঙের ভ্রূণ থেকে স্টেম সেল নেয়া হয়। এই কোষগুলি ব্যাঙটা বড় হতে হতে চামড়া আর হার্টের কোষ হতো।
- এই কোষগুলি কোন কোন কাজ করতে পারে, সেই তথ্য, সেগুলি দিয়ে কী করা যেতে পারে, সেই সমস্যা দেয়া হয়েছিল ইউনিভার্সিটি অফ ভারমন্টের একটা সুপারকম্পিউটারকে। সেই সাথে সুপারকম্পিউটারটাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, এই কোষগুলি যদি (ক), (খ) ও (গ) করতে পারে, তাহলে সেগুলিকে এমনভাবে একসাথে বসিয়ে একটা “প্রাণী” তৈরি কর, যা নড়তে পারবে এবং খাবার থেকে শক্তি আহরণ করতে পারবে। (যারা বায়োলজি পড়েছি, তারা নিশ্চয় মনে করতে পারছেন, এই দুইটাও জীবনের সংজ্ঞাতে পড়ে।
- সুপারকম্পিউটারটা উপরে দেয়া প্যারামিটারগুলি নিয়ে বিভিন্ন পারমিউটেশন/কম্বিনেশন করেছে মাসের পর মাস। এরপর সিমুলেট করে দেখেছে ফলাফল কী হচ্ছে। যে ডিজাইনগুলি একটু হলেও কাজ করেছে, সেগুলি রাখা হয়েছে। কিছু ডিজাইন একদমই কাজ করে নাই, সেগুলি বাদ দেয়া হয়েছে। এরপর যেগুলি টিকেছে, সেগুলিকে আরো উন্নত করা হয়েছে। (বিবর্তন সাথে মিল আছে, তাই না?) এভাবে আগাতে আগাতে ২০২০এ এমন ডিজাইন পাওয়া গিয়েছে, যেগুলি নড়াচড়া ও শক্তি আহরণ করতে পেরেছে।
- গবেষকরা এরপর সেই ডিজাইন অনুযায়ী কোষগুলিকে জোড়া দিয়েছেন, এবং সেটাকে তারা বলছেন একধরনের নতুন প্রাণী, কারন সেটায় প্রাণের বৈশিষ্ট আছে। এটার নাম দেয়া হয়েছে জেনোবট, ব্যাঙের প্রজাতি আর রোবট শব্দটা মিলিয়ে।
- গবেষকদের উদ্দেশ্য, এটাকে মানুষের শরীরে প্রবেশ করিয়ে দিয়ে নির্দিষ্ট স্থানে (যেমন ক্যান্সার টিউমারে) ওষুধ পাঠানো।
- প্রথম ছবিতে বামে কম্পিউটারের ডিজাইন, ডানে ২০২০এর সেই “প্রাণী”। সবুজ অংশটা এসেছে ব্যাঙের ভ্রূণ কোষ থেকে যা একদিন চামড়া হতো, লাল অংশটা এসেছে সেই কোষ থেকে যা একদিন হার্ট হতো। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই প্রাণীটার ডিএনএ পরীক্ষা করলে এটাকে ১০০% জেনোপাস লেভিস বলে মনে হবে।
এই গবেষণা নিয়ে পেপার –A scalable pipeline for designing reconfigurable organisms, PNAS, সহজবোধ্য লেখা- Team Builds the First Living Robots
৮) ২০২১এ গবেষকরা এই জেনোবটকে আরো উন্নত করেছেন। তখন দেখা গেল, এদেরকে যদি একটা দ্রবণে অনেক আলাদা আলাদা স্টেম সেলের মধ্যে ছেড়ে দেয়া যায়, সেগুলি তখন সেই কোষগুলিকে জড করে জোড়া দিতে পারে, এবং সেই জোড়া দেয়া কোষগুলি তখন নতুন জেনোবটে পরিণত হয়। বলা যেতে পারে, নতুন জেনোবটের জন্ম হলো। তারপর ঘটে আরো আজব ঘটনা। এই নতুন জন্ম দেয়া জেনোবটগুলিও একই কাজ করে—কোষ জড় করে, সেগুলিকে জোড়া দেয়, ফলে জন্ম নেয় পরের প্রজন্মের জেনোবট।


এই গবেষণা নিয়ে পেপার Kinematic self-replication in reconfigurable organisms ও সহজবোধ্য লেখা Team builds first living robots—that can reproduce
প্রশ্ন হচ্ছে, কীভাবে এটা হচ্ছে? এদেরকে কী কোনভাবে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল ? তাজ্জব করা উত্তর হচ্ছে, “না”। উপরের গবেষণাপত্রের ডিসকাশন অংশ থেকে কিছুটা তুলে দিচ্ছি।
“the fact that this unique replicative strategy arises spontaneously rather than evolving by specific selection, further exemplifies the developmental plasticity available in biological design. Although kinematic self-replication has not been observed in extant cellular life forms, it may have been essential in the origin of life. The amyloid world hypothesis, for instance, posits that self-assembling peptides were the first molecular entity capable of self-replication, and would thus represent the earliest stage in the evolution of life”
একটু সরলীকৃত অনুবাদ
এই অনুলিপি / কপি করার পদ্ধতি নিজে থেকে এসেছে, কোন বিশেষ বাছাইয়ের (উপরের ৪ নাম্বার পয়েন্ট) মাধ্যমে না। যদিও এই রকম জন্ম নেয়া আর কোন প্রাণীতে দেখা যায় নাই, এমন হতে পারে যে পৃথিবীতে প্রাণের শুরুতে এই রকম কিছু একটা হয়েছিল। অ্যামিলয়েড অনুকল্প তে ধারনা করা হয়, পেপটাইড নিজে থেকেই এভাবে নিজের অনুলিপি তৈরি করতে পারতো, এবং তাই সেটা প্রাণের বিবর্তনের প্রথম ধাপ ছিল।
বিগ ফ্রিজের সময় বুদ্ধিমান কী সার্ভাইব করতে পারবে?



