আমার এক সময় খুবই ইচ্ছে করতো ভিন্ন কোনো ইউনিভার্সে চলে যাই এবং কোন এক শক্তিশালী কোয়ান্টাম কম্পিউটার ইউজ করে তোমার সাথে ইন্টার- ভার্সিক দূরত্ব থেকে কথা বলি। দুটি ইউনিভার্স থেকে পরস্পর আলাদা আলাদা সময়ের বিটে দাঁড়িয়ে থাকতাম আমরা । একবার ভেবে দেখতে পারো, সে’ই উপলব্ধি কেমন হবে? যদি বিকল্প কোনো মহাবিশ্বে হাইপারস্পেসের ভেতর দিয়ে তোমায় নিয়ে পালিয়ে যাই? যেখানে আমি, তুমি আর একটি নতুন মহাবিশ্ব ও পদার্থবিদ্যার সুত্র ছাড়া আমাদের পাশে আর কেউ বা কিছু নেই , আমরা একা, একেবারে সিঙ্গুলারিটি পয়েন্টের মতোই একা! সেখানেও বিলিয়ন আলোকবর্ষ জুড়ে এক মহাশূন্য বিস্তারিত, সেখানেও থাকবে কোয়াড্রিলিয়ন নক্ষত্র! দুজন চোখে চোখ রেখে তাকিয়ে থাকতাম সে জনমানবহীন মহাবিশ্বের নাম না জানা কোনো গ্রহে, আর কেটে যেতো মিলিয়ন বছর তোমার চোখে আলোর ফোটন যেতে যেতেই। আচ্ছা, মহাজাগতিক কাব্য ও ফিকশনের বাহিরে আমরা কী আসলেই বিকল্প কোনো মহাবিশ্বে চলে যেতে পারি , সম্ভব ?
ঠিক এ প্রশ্নের উত্তরে মিচিও কাকু বলেছিলেন , আমরা এটা করতে পারি এবং আমরা এটি করতে পারি সম্ভবত ব্লাকহোলের ভেতর দিয়ে। কিন্তু ব্লাকহোলের স্পেস ও টাইমের বক্রতা অসীম, যেখানে এমনকি আলোর ফোটনও নিষ্কৃতি লাভ করতে পারেনা, অসীম গ্রেভেটির টানে রেডিয়েশনগুলো এত তীব্র ও ধারালোভাবে ছোটাছুটি করে যে এটি ব্লাকহোলকে অত্যন্ত অস্থিতিশীল করে তোলে। আর এ জন্য আমরা জানি ব্লাকহোল অত্যন্ত অস্থিতিশীল এবং মরণঘাতী রেডিয়েশনে পরিপূর্ণ। আপনি ব্লাকহোলে প্রবেশ করে যখন কের রিং এর কাছাকাছি যাবেন, আপনাকে রেডিয়েশন পাষণ্ড শক্তিতে ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলবে! আপনি নিশ্চয়, কের ব্লাকহোলের কথা শুনেছেন? এটি এক ধরণের বিশেষ ব্লাকহোল যার ভেতর একটি রিং থাকে, যেটি স্পিন করে এবং যেটির ভেতর দিয়ে অন্য কোন সম্ভাব্য জগতে প্রবেশ করা যায় কিন্তু রিং এর চারপাশে এই ভয়ানক ধারালো রেডিয়েশন দানবের মতো ছুটে বেড়ায় ও যা আপনাকে মুহূর্তে কেটে টুকরো টুকরো করে দেয়ার এক অমানবিক ক্ষমতা রাখে।
তাহলে এখন একটি বিকল্প মহাবিশ্ব পাওয়ার জন্য আমরা কী করতে পারি!
আমার মাঝেমাঝেই ইচ্ছে করে তোমাকে কিছু একটা উপহার দেই! কিন্তু একজন কোকেইন আসক্ত প্রেমিক হিসেবে মহাবিশ্বের কোনোকিছুই তোমার থেকে আমার নিকট গুরুত্বপূর্ণ নয়, আমার কাছে তুমি ছাড়া সবকিছুই তুচ্ছ, ছাই ! বরং তোমাকে নিয়ে আমার বিকল্প কোনো মহাবিশ্বে চলে যেতে ইচ্ছে করে, যে মহাবিশ্বে আমরাই হবো এডাম ও ইভ…আমরা নতুন একটি মানব সভ্যতার সাধারণ পূর্বসূরি হবো, হবো প্রথম ডিএনএ। কিন্তু কের ব্লাকহোলের ভয়ানক রেডিয়েশন আমাদের পথকে অবরোধ করে রেখেছে! তার চেয়ে বরং তোমাকে যদি একটি মহাবিশ্ব তৈরি করে দিতে পারতাম!! একবার কল্পনা করো, আমার নিয়ন্ত্রণে একটি শিশু মহাবিশ্বের জন্ম হতো আর তোমাকে আমি সে শিশু মহাবিশ্বের ভেতর দিয়ে ভিন্ন এক মহাজাগতিক বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড় করাতাম! অনেকে ইতিমধ্যে আমরা কথাবার্তা শুনে হয়তো ভাবছেন আমার মস্তিষ্ক ঠিক নেই! হ্যাঁ, আপনি যাই ভাবুন, আমরা আরো একটি উপায়ে বিকল্প মহাবিশ্বে ভ্রমণ করতে পারি আর একজন হয়তো এ কঠিন উপায়ে তার প্রেমিকার জন্য একটি বিকল্প মহাবিশ্ব তৈরি করার চেষ্টা করতেও পারে; একটি শিশু মহাবিশ্ব তৈরির মাধ্যমে। উন্নত সভ্যতার ভিন্ন মহাবিশ্বে নিষ্কৃতি লাভ করার কনসেপ্ট একদা তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী এলান গুথকেও আতঙ্কিত করেছিলো । কারণ ইনফ্লেশনারী থিওরি গুরুত্বপূর্ণভাবে নির্ভর করে ফলস ভ্যাকুয়াম নির্মানের উপর। গুথ বিষ্মিত হয় যদি কোন উন্নত সভ্যতা কৃত্রিমভাবে একটি ফলস ভ্যাকুয়াম তৈরি করতো এবং তৈরি হয়ে যেতো ল্যাবরেটরিতে একটি শিশু মহাবিশ্ব।
প্রথমত, শিশু মহাবিশ্ব তৈরির ধারণাটি ভ্রান্ত মনে হতে পারে। অবশেষে গুথ মন্তব্য করেন যে, একটি মহাবিশ্ব তৈরির জন্য আপনার 10∧89 ফোটন, 10∧89 ইলেক্ট্রন, 10∧89 পজিট্রন, 10∧89 নিউট্রন, 10∧89 এন্টিলেক্ট্রন,10∧89 প্রোটন এবং 10∧89 নিউট্রন লাগবে। যদিও এ কাজটি কঠিন মনে হয়।
গুথ আমাদের স্মরণ করিয়ে দেন যে, মহাবিশ্বের ম্যাটার/এনার্জি কন্টেন্ট অনেক বিশাল। কোয়াড্রিলিয়ন গ্রহ নক্ষত্র আর অনু-পরমাণু আমাদের এ মহাবিশ্ব গঠন করেছে, কিন্তু এ বিশাল ভরের বিপরীতে কাজ করছে গ্রেভেটি, আমরা জানি বস্তুর ভর যতো বেশি হবে এদের গ্রেভিটেশনও হবে ভরের সমানুপাতিক ,এভাবে মহাবিশ্বের এত বিপুল পরমাণ ভর নেগেটিভ এনার্জি দ্বারা ব্যালান্স হয়ে যায় যা গ্রেভিটেশন থেকে নির্গত হয়। মনে করুন, একটি ক্ষুদ্র বল গ্লাসের তলদেশে পড়ে আছে, আপনি একটু একটু করে পানি ঢালতে শুরু করলেন, আর অমনি বলটি কোনো শক্তি ব্যতিরেকেই উপরের দিকে ভেসে উঠে। ঠিক তেমনি মহাবিশ্বের বস্তুর সামগ্রিক ভরের সাথে বিপরীত দিকে একইসাথে কাজ করে সমপরিমাণ গ্রেভিটি। আর এতে করে পজেটিভ এনার্জি ও নেগেটিভ এনার্জি একে অপরকে ব্যালেন্স করে দেয় ও সম্পূর্ণ শূন্য থেকেই আমাদের মহাবিশ্বের জন্ম হয়। তাহলে আমরা দেখছে পাচ্ছি মহাবিশ্বের টোটাল নেট ম্যাটার ও এনার্জি সম্ভবত খুবই ক্ষুদ্র। মিচিও কাকু বলেন, এর পরিমাণ শুনতে যতোই বিস্ময়কর মনে হোক না কেনো, একটি আউন্সের মতো।তার মানে, অত্যন্ত অত্যন্ত এবং খুবই ক্ষুদ্র পরিমাণ নেট এনার্জি প্রয়োজন হয়েছে আটাশ বিলিয়ন গিগাপার্সেক এ মহাবিশ্ব সম্প্রসারিত হতে, যেখানে রয়েছে প্রায় দুই ট্রিলিয়ন গ্যালাক্সি, যা কোয়াড্রিলিয়ন গ্রহ, নক্ষত্র ও ব্লাকহোল, আর সেই অজস্র গ্যালাক্সির মধ্যে স্পারাইল মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির একটি বাহুতে হারিয়ে গেছে পৃথিবী, যেখানে আমরা! একবার ভেবে দেখুন, এক আউন্স= ২৮.৩৪ গ্রাম। এ মুহূর্তে আমার এন্ড্রোয়েড যে পরিমাণ এনার্জি খরচ করছে, সমগ্র মহাবিশ্ব তৈরি করতে শক্তি খরচ হয়েছে মাত্র এক আউন্সের কাছাকাছি। যদি মাত্র এক আউন্স শক্তি দিয়ে আমাদের মহাবিশ্ব তৈরি হয় তবে একই শক্তি দিয়ে কী আমরা বিকল্প একটি মহাবিশ্ব তৈরি করতে পারিনা?
ইনফ্লেশনারী থিয়োরির প্রবক্তা বিজ্ঞানী এলান গুথ সাবধান করেছিলেন, এর মানে কী এই যে পদার্থ বিজ্ঞানের সুত্র আমাদেরকে নতুন একটি মহাবিশ্ব তৈরির অনুমোদন দেবে? যে “ল” অব ফিজিক্স শূন্য থেকে আমাদের মহাবিশ্বকে অনুমোদন দিয়েছে ? আমরা যদি নতুন একটি মহাবিশ্ব তৈরি করি, একই পরিমাণ নেট শক্তি দিয়ে, তবে ফিজিক্স কী আমাদের নিষেধ করবে?
যাহোক, আমরা যদি এ রেসিপি বহন করার চেষ্টা করি, দূর্ভোগ্যক্রমে, আমরা বিরক্তিকর একটি বাধার সম্মুখ্যীন হই- যেহেতু ফলস ভ্যাকুয়ামের একটি গোলক 10¯26 সেন্টিমিটার বিস্তৃত যার আছে এক আউন্স ভর, আর যার ঘণত্ব বিস্ময়কর, প্রতি পার কিউবিক সেঃমি এ 10∧80 গ্রাম!…. যদি সম্পূর্ণ দৃশ্যমান মহাবিশ্বের ভর ফলস ভ্যাকুয়ামে কম্প্রেস করা যায় তবে এটি এটম থেকেও ক্ষুদ্র আয়তনের মধ্যে যথাযথভাবে এডজাস্ট হয়ে যাবে, মহাবিশ্ব একটি ক্ষুদ্র পরমাণু হয়ে যাবে।
মিচিও কাকু বলেন, ফলস ভ্যাকুয়াম সম্ভবত স্পেস-টাইমের অত্যন্ত ক্ষুদ্র একটি এলাকা, স্পেস- টাইমের অতি-ক্ষুদ্র একটি স্তর , এটা এতটাই এলাকা ক্ষুদ্রতর যে, এত ক্ষুদ্র একটি স্থান নিজের মাঝে স্থিতিশীল থাকতে পারেনা, এখান থেকে ব্যাপক অস্থিতিশীলতা জাগ্রত হয় এবং স্পেস-টাইমে ফাটল তৈরি হয়। এটি সম্ভবত ফলস ভ্যাকুয়ামের সাথে ম্যাটারের কয়েক আউন্স গ্রহণ করে, একটি শিশু মহাবিশ্ব তৈরির জন্য কিন্তু ম্যাটারের এ অতিক্ষুদ্র পরিমাণকে এস্ট্রোনোমিক্যাল দূরত্বে সংকোচিত করা যায়।
আরো একটি সম্ভাব্য উপায় রয়েছে শিশু মহাবিশ্ব তৈরির জন্য। কেউ হয়তো স্পেসের একটি ক্ষুদ্র এলাকাকে ১০∧২৯ ডিগ্রি কেলভিনে উত্তপ্ত করতে পারে, তারপর দ্রুত ঠান্ডা। এ টেম্পারেচারে, এটি অনুমান করা যায় যে, স্পেস-টাইম অস্থিতিশীল হয়ে যাবে; মহাবিশ্বের অতি-ক্ষুদ্র বাবল গঠিত হতে শুরু করবে এবং ফলস ভ্যাকুয়াম সম্ভবত তৈরি করবে। এটি ক্ষুদ্র শিশু মহাবিশ্ব, যা সবসময় গঠিত হয় কিন্তু সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য, সে টেম্পারেচারে এটি সম্ভবত বাস্তব মহাবিশ্বে পরিণত হয়।
এ বিষয়টি ইতিমধ্যে সাধারণ ইলেক্ট্রিক ফিল্ডে পরিচিত। উদাহরণস্বরূপ -আমরা যদি যথেষ্ট বিশাল ইলেক্ট্রিক্যাল ফিল্ড তৈরি করি, সম্পূর্ণ শূন্য থেকে ভার্চুয়াল ইলেক্ট্রন ও এন্টিইলেক্ট্রন ফটফট করে বেরিয়ে আসবে যা আকষ্মিক বাস্তবে পরিণত হবে, এসব কণাকে অস্তিত্বে উচ্ছ্বসিত করে। মহাশূন্যে কেন্দ্রীভূত এনার্জি ভার্চুয়াল কণাকে বাস্তব কণায় পরিণত করবে।
একইভাবে আমরা যদি একটি স্বতন্ত্র বিন্দুতে যথেষ্ট শক্তি প্রয়োগ করি, এটি থিওরাইজড করা হয়েছে যে, ভার্চুয়াল বেবি ইউনিভার্স বাস্তব অস্তিত্বে উচ্ছ্বসিত হবে, দৃশ্যমান হবে কোথাও না থেকেই। ইলেক্ট্রিক্যাল ফিল্ডে যেমন সম্পূর্ণ Nothing থেকে ভার্চুয়াল পার্টিকেল তৈরি হয় ঠিক তেমনি আমিও হয়তো তোমার জন্য একটি শিশু মহাবিশ্ব তৈরি করতে পারবো!
কল্পনা করুন যে, এমন অকল্পনীয় ডেনসিটি ও তাপমাত্রা অর্জিত হলো, তাহলে, বেবি ইউনিভার্সটি দেখতে কেমন হবে? বলছি, Wait…. আমাদের মহাবিশ্বে ক্ষমতাবান লেজার বিম ও পার্টিকেল বিম সম্ভবত অতিক্ষুদ্র পরিমাণের ম্যাটারকে দুর্দান্ত এনার্জি ও টেম্পারেচারে সংকোচিত করার জন্য ব্যবহার করা হয়। আর এতে করে বিকল্প মহাবিশ্ব তৈরি হয় কিন্তু আমরা কোন শিশু মহাবিশ্ব দেখিনা, যদিও এটি তখনই গঠিত হতে থাকে একের পর এক, নতুন নতুন সিঙ্গুলারিটি পয়েন্ট থেকে নতুন নতুন মহাবিশ্বের জন্ম, আমরা সেগুলোকে সম্প্রসারিত হতে দেখছিনা , কেনোনা তারা সিঙ্গুলারিটির “অপরপ্রান্তে ” সম্প্রসারিত হচ্ছে, আমাদের মহাবিশ্বের থ্রি-ডায়মেনশনাল স্পেসে সম্প্রসারিত হওয়ার পরিবর্তে।
এ বিকল্প বেবি মহাবিশ্ব পটেনশিয়ালি তার নিজের এন্টি গ্র্যাভিটি ফোর্স এর প্রভাবে হাইপারস্পেসে ইনফ্লেট হচ্ছে এবং আমাদের মহাবিশ্ব থেকে মুকুলিত হচ্ছে। এ জন্য আমরা সিঙ্গুলারিটির “অন্য পাশে” নতুন এ মহাবিশ্বের গঠন প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করিনা । তাহলে কী আমি কোনোদিন তোমাকে একটি মহাবিশ্ব উপহার দিতে পারবোনা? যদি সিঙ্গুলারিটির বিপরীত দিকেই মহাবিশ্ব গুলো সম্প্রসারিত হয়, যদি আমাদের মহাবিশ্ব থেকে সে জগতটি অদৃশ্যই থেকে যায়, তাহলে কিভাবে আমি সিঙ্গুলারিটির দেয়াল অতিক্রম করে তোমার জন্য একটি নতুন জগত খুঁজে পেতে পারি..?

একটি উপায় অবশ্য আছে…
আর সেটি হলো ওয়ার্মহোল। সন্তানের শরীর নাভীর মাধ্যমে যেমন মায়ের শরীরের সাথে Connect থাকে ঠিক তেমনি ওয়ার্মহোল সম্ভবত নাভির কান্ড যা আমাদেরকে শিশু মহাবিশ্বের সাথে Connect করে দিতে পারে। কিন্তু আতঙ্ক আছে, আছে সুনির্দিষ্ট কিছু সংশয় । যে নাভির কান্ড যা আমাদের মহাবিশ্বকে বেবি ভার্সের সাথে কানেক্টেড করেছে তা অবশেষে বাষ্পীভূত হতে থাকবে এবং হকিং রেডিয়েশন তৈরি করবে যা ৫০০- কিলটন নিউক্লিয়ার এক্সপ্লোশনের সমতূল্য, মোটের উপর হিরোশিমা বোমা থেকে ২৫ গুণ বেশি। আর তাই শিশু মহাবিশ্ব তৈরির জন্য আমাদেরকে হয়তো এর মূল্য পরিশোধ করতে হবে। হয়তো আমাদের মহাবিশ্বে বিপুল এক বিস্ফোরণ ঘটবে এবং বিলিয়ন মানুষের মৃত্যু হবে।

সর্বশেষ সমস্যা, যা অত্যন্ত মর্মন্তিক, এ দৃশ্যপটে , ফলস ভ্যাকুয়াম তৈরি হওয়ার কারণ যেহেতু স্পেস ও টাইম সম্পূর্ণ অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে, নতুন মহাবিশ্বের জন্য এটা খুবই সহয যে, এটি ব্লাকহোলের মধ্যে পতিত হবে যা হবে সে মহাবিশ্বের মৃত্যু, যেখান থেকে এটি আর বের হতে পারবেনা। স্পেসের অত্যন্ত ক্ষুদ্র একটি এলাকা ফলস ভ্যাকুয়াম, যেখানে স্বতস্ফূর্তভাবে অস্থিতিশীলতা তৈরি হয় ও অতি-ক্ষুদ্র ম্যাটার ও এনার্জি থেকে একটি শিশু মহাবিশ্ব তৈরি হয় এবং ফলস ভ্যাকুয়ামে এর বিপুল পজেটিভ এনার্জি এটিকে ব্লাকহোলে ফেলে দিতে ফোর্স করে কারণ বিপুল পরিমাণ পজেটিভ এনার্জি বা ভর স্থান ও কালের মধ্যে অসীম বক্রতা তৈরি করবে আর আইনস্টাইনের জেনারেল থিওরি অব রিলেটিভিটি অনুসারে, এ অসীম বক্রতার ফলে জন্ম হবে একটি ব্লাকহোলের, তার মানে, দেখা যাচ্ছে, শিশু মহাবিশ্ব ব্লাকহোল থেকে নিষ্কৃতি লাভ করতে পারছেনা। আর এটাকেই বলা হয় “পেনরোজ থিওরেম” ।
যা বলে যে, একটি বস্তু বৈচিত্র্যতার দৃশ্যপটে, পর্যাপ্তভাবে বিশাল ভরের বিরাট কেন্দ্রীভূতকরণ, যে পজেটিভ এনার্জি তৈরি করে সেখান থেকে জন্ম নেয় সমপরিমাণ গ্রেভেটি, আমরা জেনারেল থিওরি অব রিলেটিভিটি থেকে জানি, বস্তর ভর তার স্পেস-টাইম জিওমেট্রিতে বক্রতা সৃষ্টি করে, এটি অনেকটা রাবার শিটের উপর একটি ভারী বল রাখার মতো, বলটির ভর যত বেশি হবে, রাবার শিটের মধ্যে ততবেশি বক্রতা তৈরি হবে। এবার কল্পনা করুন, যে রাবার শিট স্পেস-টাইম জিওমেট্রি আর সেই বলটি হলো ফলস ভ্যাকুয়ামের এক আউন্স শক্তি থেকে প্রচন্ড বেগে সম্প্রসারিত শিশু মহাবিশ্ব । যেহেতু এ শিশু মহাবিশ্বটি শূন্য থেকেই বিপুল ভর অর্জন করছে, এই ভর ফলস ভ্যাকুয়ামের ঐ ক্ষুদ্র এলাকায় এক অসীম বক্রতা তৈরি করবে, স্থানকালকে কুচকে দেবে। আমরা জানি, ভর যদি অসীম হয়, সে ভরের বিপরীতে গ্রেভেটিও হবে অসীম, আর এতে করে শিশু মহাবিশ্ব অনিবার্যভাবে ব্লাকহোলে অভ্যন্তরে পড়ে যাবে।
আইনস্টাইনের সমীকরণে টাইম রিভার্সাল অভিন্ন, তার মানে, শিশু মহাবিশ্বটি সময়ের সামনে ও পেছনে ভ্রমণ করবে, এটি বোঝায় যে, যে কোন বস্তু যা বেবি ভার্সে পড়বে সেটি সময়ের অতীতের দিকে ভ্রমণ করতে পারে যা ব্লাকহোল উন্মেষ ঘটায়। তাহলে আমরা এই গোলকধাঁধা থেকে কিভাবে বের হতে পারি? কিভাবে আমরা পেনরোজ থিওরেমকে অতিক্রম করতে পারি? পেনরোজ থিওরেমকে অতিক্রম করার জন্য আপনাকে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে ব্লাকহোল তৈরি করতে হবে। পেনরোজ থিওরেম একটি অনুমানে স্থির হয়েছে যে , পতিত ম্যাটার এনার্জির দিক থেকে পজেটিভ। যাহোক, এ থিওরেম ভেঙে যাবে, যদি আমাদের নেগেটিভ এনার্জি ও ম্যাটার থাকে। এভাবে, এমনকি ইনফ্লেশনারী দৃশ্যপটেও, একটি বেবি ইউনিভার্স তৈরি করার জন্য আমাদের নেগেটিভ এনার্জি অর্জন করতে হবে ঠিক যেমন ট্রান্সভার্সিবল ওয়ার্মহোলের জন্য আমরা করে থাকি।
আমার কাছে যদি যথেষ্ট নেগেটিভ এনার্জি থাকে তবে আমি তোমাকে একটি মহাবিশ্ব উপহার দিতে পাতি।

প্রাসঙ্গিক আর্টিকেল-
তথ্যসুত্র-
White Holes and Wormholes - JILA Colorado
The Quest to Unlock the Secrets of the Baby Universe, Scientific American
The Infant Universe, in Detail - Scientific American
Planck snaps infant Universe, Nature journal
Hyperspace, Parallel World Michio Kaku
পেনরোজ থিওরেম ও শিশু মহাবিশ্বপেনরোজ থিওরেম ও শিশু মহাবিশ্ব পেনরোজ থিওরেম ও শিশু মহাবিশ্বপেনরোজ থিওরেম ও শিশু মহাবিশ্ব পেনরোজ থিওরেম ও শিশু মহাবিশ্ব পেনরোজ থিওরেম ও শিশু মহাবিশ্ব পেনরোজ থিওরেম ও শিশু মহাবিশ্ব পেনরোজ থিওরেম ও শিশু মহাবিশ্ব