মানুষ একটি অদ্ভুত প্রজাতি। আমাদের দেহ তুলনামূলকভাবে চুলহীন। আমরা আমাদের পেছনের পা দিয়ে আজ হাঁটি। আমরা এমনভাবে গান গাই ও নাচি যেন আমাদের আর কোন কাজই নেই। আমরা হাসি, লজ্জা পাই এবং কাঁদি। আর প্রাণিজগতে আমাদের শিশুরা খুবই অসহায়। কিন্তু অন্যদের চেয়ে আমাদের সবচেয়ে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য হলো বুদ্ধিমত্তা। আমাদের অস্বাভাবিকভাবে বড় একটি মস্তিষ্ক আছে। আংশিকভাবে এজন্য আমরা গ্রহের সবচেয়ে নমনীয় প্রাণী। কিন্তু কেনো আমরা এত স্মার্ট ও ফ্লেক্সিবল? আর কেনো আমাদের ব্রেন এতটা বড় হয়েছে? এত দ্রুততার সাথে?
মাতালের মত আমরা রাস্তায় চাবি হারিয়ে স্ট্রেট ল্যাম্পের নিচে সেটি খুঁজতে থাকি কারণ ল্যাম্পের নিচে প্রচুর আলো। ল্যাম্পের আলোর বাহিরেও যে চাবিটি হারাতে পারে সেদিকে আমাদের খেয়াল নেই। যে সকল মানুষ মানব বিবর্তন নিয়ে কাজ করছে তারা সবাই এর ব্যাখ্যা আলোতেই অনুসন্ধান করে। যেখানে বেশি পরিমাণ আলো পাওয়া যায়। আমাদের নৃতাত্বিক রেকর্ড পক্ষপাতদুষ্ট। কারণ আমরা সে সকল বস্তুর প্রতি পক্ষপাত করি যেগুলো মিলিয়ন মিলিয়ন বছর টিকে আছে, যেমনঃ আমাদের পূর্বসূরীদের কঙ্কাল, হাড়ের তৈরি অস্ত্র, তাদের দেহের কিছু পেইন্টিং (রেড অচার)।

কিন্তু আজ থেকে মিলিয়ন বছর পূর্বে আমাদের পূর্বসূরীদের ব্রেন টিস্যু কেমন ছিল, কেমন ছিল তাদের কন্ঠস্বর অথবা শারীরিক অঙ্গভঙ্গি তা পর্যবেক্ষণ করার কোনো সুযোগ আমাদের নেই!

অতএব আমাদের হাতে যে সকল প্রমাণ আছে সেগুলো পক্ষপাতদুষ্ট। শুধু তাই নয়, আমাদের পদক্ষেপও পক্ষপাত মুক্ত নয়। এ দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা আমরা যতটা না মাতাল তার থেকে বেশি অসার। আমরা আমাদের প্রজাতিকে উজ্জ্বল আলোতে দেখতে চাই। আমাদের বিবর্তনীয় অতীতের দিকে এমনকিছু দিক আছে যেখানে আমরা বেশি সময় নষ্ট করিনা কারণ আমরা জানিনা তারা কীভাবে আমরা আজ যেমন ঠিক তেমনিভাবে তৈরি করেছে! এ সেন্স থেকে আমাদের মূল সমস্যা এই নয় যে এখানে আলো খুবই ম্লান, সমস্যা হলো এখানে আলো খুবই তীক্ষ্ম। এবার দুটি বিস্তৃত আলোর কথা চিন্তা করুন যেখানে আমাদের বড় মস্তিষ্কের মূল চাবি পাওয়া যাবে। আরও পড়ুনঃ ব্রেন: তোমার কানেক্টমের গল্প

- বাস্তুসংস্থানের চ্যালেঞ্জ; যেমন শিকারী থেকে পালানো, একটি বড় শিকার ধরা, আগুনকে বশবর্তী করা, নতুন ফুড সোর্স খুঁজে পাওয়া, নতুন পরিবেশের সাথে অভিযোজন। এ সকল কর্মকাণ্ড মানুষকে তার পরিবেশের বিপক্ষে সংঘাতে লিপ্ত করে আর এতে করে সৃষ্টি হয় মানুষে মানুষে সংঘবদ্ধতার সুযোগ।
- সামাজিক চ্যালেঞ্জ যেমন, সঙ্গীদের সাথে প্রতিযোগিতা, সামাজিক মর্যাদার জন্য মজা করা, জোটের রাজনীতি ( জোট, বিশ্বাসঘাতকতা), আন্তঃগ্রুপ সহিংসতা, প্রতারণা এবং প্রবঞ্চনা। এ সব কর্মকাণ্ড মানুষে মানুষে সংঘাত তৈরি করে আর এজন্য তৈরি হয় প্রতিযোগিতা ও সম্ভাব্য ধবংস।
অনেকে মনে করেন আমাদের বুদ্ধিমত্তার মূল চাবি হলো বাস্তুসংস্থানের সংকট। তারা এই আলোতে বুদ্ধিমত্তাকে দেখে। যা জোর দেয় যে বাস্তুসংস্থানের সংকট মোকাবিলা করার জন্য আমাদের মস্তিষ্কে এক্সট্রা গ্রে ম্যাটার তৈরি হয় যাতে করে আমরা সহযোগিতার বন্ধন গড়ে তুলতে পারি। “আমরা স্মার্ট হয়ে উঠি”, আমাদের গল্প চলতে থাকে, আমরা পরস্পর পরস্পরের কাছ থেকে শিখতে থাকি, বাহিরের বিশ্বকে মোকাবিলা করার জন্য আরও দৃঢ়ভাবে আমরা সংহত হতে পারি এবং সবার জন্য ফলাফল উন্নত করতে পারিঃ জয়-জয়-জয়।
কিন্তু অসংখ্য প্রমাণ আমাদের বলছে যে,আমাদের বুদ্ধিমত্তার মূল চাবিকাঠি নিহিত রয়েছে সামাজিক চ্যালেঞ্জের কঠোর ও অপ্রত্যাশিত আলোতে। যেটাকে গেম থিয়োরিতে জিরো-সাম গেম বলে। যেখানে একজন ব্যক্তির জয় মানেই অন্য আর একজনের পরাজয়। তার মানে এই নয় যে, এ ধরণের প্রতিযোগিতামূলক পরিস্থিতি সম্পর্কে আমরা অসচেতন। আমাদের প্রত্যেকের মধ্যেই জিরো-সাম প্রবণতা রয়েছে। কিন্তু আমাদের আচরণ ব্যাখ্যা করার সময় এটাকে অপেক্ষাকৃত কম বিশিষ্টতা প্রদান করি।

এটা বোঝা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে আমরা এখানে মূলত কোন ব্যাপারে ভীতসন্তস্ত্র। অসংখ্যা প্রতিযোগিতা আছে যেগুলোতে আমরা সম্মত হই এবং উদযাপন করি। আমরা আনন্দদায়ক প্রতিযোগিতা পছন্দ করি, উদাহরণস্বরূপঃ গেম ও স্পোর্টস। রেসলিং খেলায় পরাজিত বলে কেউ নেই। এটাকে মাঝেমাঝে বলা হয়, উইনার এবং লার্নার। এছাড়া আমরা সববায়মূলক কাজগুলোতেও প্রতিযোগিতা পছন্দ করি যেখানে আমরা সবাই লাভের জন্য কাজ করি। সংস্থাগুলো পরস্পর মার্কেটপ্লেসে প্রতিযোগিতা করে , খরচ হ্রাস ও উদ্ভাবনকে অনুপ্রাণিত করার জন্য। তারমানে এই নয় যে, আমরা গ্রুপের বিপরীতে গ্রুপের প্রতিযোগিতায় আনন্দভোগ করি। কিন্ত এ ব্যাপারে কথা বলা অস্বস্তিকর নয় কারণ তাদের বিপক্ষে প্রতিযোগিতা আমাদের বিভাজিত স্বার্থকে হাইলাইট করে। যাইহোক, ধবংসাত্মক যুদ্ধের প্রবণতা থাকে একটি জাতিকে এক সাথে নিয়ে আসার৷
কিন্ত আমরা সে সকল প্রতিযোগিতাকে স্বীকার করতে কষ্ট পাই যেগুলো সহযোগিতামূলক সম্পর্কে করাত চালিয়ে দেয়ঃ যৌন ঈর্ষা, বন্ধুদের মধ্যে মর্যাদার প্রতিদ্বন্দ্বিতা, বিয়ের সংকট, প্রতারণার মনোভাব, কর্মক্ষেত্রে পলিটিক্স। অবশ্যই আমরা স্বীকার করবো যে অফিস রাজনীতি বিমূর্ত কিন্তু কীভাবে মাঝেমাঝে আমরা কোম্পানি ব্লগে এটা নিয়ে লিখি? সাধারণত আমরা সে ব্যাখ্যা গ্রহণ করি যা আমাদের দেখতে সুন্দর করে। সেটা ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ অথবা জাতি যাইহোক। যখনই এটা আমাদের প্রতিযোগিদের বেলায় আসে তখন আমরা তাদের আচরণের সেই ব্যাখ্যা গ্রহণ করতেও সম্মত হই যা তারা গ্রহণ করতে অপ্রস্তুত যতক্ষণ না কাদা আমাদের গায়ের দিকে ছুটে আসে। এ পক্ষপাত অথবা মনস্তাত্বিক কালশিটে দাগের অর্থ এই নয় যে আমাদের পক্ষে পরিস্কারভাবে প্রতিযোগিতা বোঝা অসম্ভব। বাকি সব সমান। আমরা মানব বুদ্ধির মূল চাবিকাঠি খুঁজে বের করবো সহযোগিতার আলোর আধীনে, এমন একটি আলো যা আমাদের দেখতে সুন্দর করে। কিন্তু যদি এমন কোনো যুক্তি থাকে যে মূল চাবি অন্য কোথাও, তবে আমরা একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলতে পারি , আর এটাকে প্রতিযোগিতার কঠোর আলোর অধিকারে অনুসন্ধান শুরু করতে পারি।
রেডউডস এর দৃষ্টান্ত
কেভিনের নেটিভ ক্যালিফোর্নিয়া হলো বিশ্বের সবচেয়ে উচ্চতাসম্পন্ন বৃক্ষের একটি প্রজাতির আবাস্থল। সবচেয়ে লম্বা বৃক্ষটি ভূমি থেকে প্রায় ৩৭৯ ফুট উঁচু। এমন বৃক্ষের ইতিহাসও আছে যারা ৪০০ ফুট ছাড়িয়ে যায়। এটি হলো সর্বোচ্চ উচ্চতা যার উর্ধ্বে যাওয়া রেডউডদের পক্ষে সম্ভব না কারণ এতে করে গাছের কৈশিক ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায় আর অধিক উচ্চতাসম্পন্ন পাতাগুলো মূল থেকে পানি সংগ্রহ করতে পারেনা।

কোনো বৃক্ষের জন্যই উচ্চতা বৃদ্ধি এত স্বস্তা ব্যাপার না। সেটি রেডউডস হোক অথবা অন্য কোনো বৃক্ষ। এজন্য প্রচুর শক্তি ও ম্যাটারিয়ালস প্রয়োজন যেনো বৃক্ষটি বিপুল শক্তিশালী ঝড় হাওয়া এবং গ্রেভেটির বিপক্ষে দাঁড়াতে পারে। যে শক্তি দিয়ে এটি উচ্চতা বৃদ্ধি করছে একই শক্তি সে নিয়োগ করতে পারতো শক্তিশালী মূল উন্নত করার জন্য, সে পারতো সূর্যের আলো সংগ্রহ করার জন্য আনুভূমিকভাবে নিজেকে বৃদ্ধি করতে, অধিক বীজ তৈরি করতে ও সেগুলোকে বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে দিতে যেন সে অধিক সন্তান রেখে যেতে পারে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য। (১)
তাহলে কেন এত বিরক্তি? কেন এ বৃক্ষটি উলম্বভাবে নিজেকে বৃদ্ধির জন্য বিপুল পরিমাণ সময় ও শক্তি অপচয় করছে? এটা নির্ভর করে প্রজাতির উপর। কেউ লম্বা হয় তাদের বীজকে আরও অধিক কার্যকরী উপায়ে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য। কোনো কোনো প্রজাতি এটা করে টেরিস্টিয়াল খাদক থেকে তাদের পাতাকে রক্ষা করার জন্য। অ্যাচাচিয়া বৃক্ষ জিরাফের নাগালের বাহিরে থাকার জন্য নিজের উচ্চতা বৃদ্ধি করে।
কিন্তু অধিকাংশ বৃক্ষের উচ্চতা বৃদ্ধি পায় সূর্যের অধিকতর আলো পেতে। জঙ্গল হলো এক সুতীব্র প্রতিযোগিতামূলক পরিস্থিতি, যেখানে সূর্যের আলো খুবই দুর্লভ ও গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। এমনকি যদি আপনি নিজেই রেডউড হতেন যে জঙ্গলের সবচেয়ে উঁচু বৃক্ষ, তারপরও আপনাকে সূর্যের পর্যাপ্ত আলো পাওয়ার জন্য প্রতিযোগিতা করতে হতো কারণ মনে রাখতে হবে আপনি রেডউডের জঙ্গলে আছেন যেখানে আরও হাজার হাজার রেডউড সূর্যের আলো পেতে চায়।
আর এভাবে একটি রেডউড বিবর্তনীয় যুদ্ধক্ষেত্রে অবরুদ্ধ হয়ে যায়। আমরা দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নেই প্রাইজ জেতার জন্য কিন্তু রেডউডদের ক্ষেত্রে উচ্চতা নিজেই একটি প্রতিযোগীতায় রূপলাভ করে। জঙ্গলে সব রেডউডেরই আলো প্রয়োজন আর সবাই প্রায় সমান লম্বা। এতে করে ব্যক্তি রেডউড মৃত্যুর খাদে আটকে যায়। কখনো কখনো একটি প্রজাতি নিজেই নিজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিযোগি’তে পরিণত হয়। যদি সে ক্রমাগত উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য চেষ্টা না করে তবে অন্য বৃক্ষের ছায়ায় সে মরে যাবে। তার হাতে বিকল্প কোনো দরজাই খোলা নেই। শুধু সূর্যই তার একমাত্র জীবনের জানলা।

এবার কল্পনা করুন, আমরা নির্জন ও একা একটি রেডউডের কাছে এসেছি যেটি বিচ্ছিন্ন এক তৃণভূমিতে সূর্যমূখী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমরা দেখলাম এ বিচ্ছিন্ন তৃণভূমির জনসমাবেশে তার চারপাশে অন্যান্য প্রাণী ও উদ্ভিদগুলো খুবই ক্ষুদ্র। শুধু একটি দৈত্য দাঁড়িয়ে আছে একা, আগ্রাসী হয়ে ছুটছে সূর্যকে স্পর্শ করার জন্য। এটা দেখতে খুবই অদ্ভুত লাগবে, এমনকি মারাত্মক ভুল কারণ তার এ আচরণ প্রাকৃতিক নয়। কেন একটি বৃক্ষ অযথা খোলা মাঠে এত সময় ও শক্তি নষ্ট করছে নিজের উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য? এমন তো নয় তার সাথে এ ছোট ছোট পোকামাকড় ও প্রাণীরা প্রতিযোগিতা করছে টিকে থাকার! যে শক্তি সে অযথা নিজের উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য খরচ করছে একই শক্তি সে নিজের প্রজনন ও বংশবৃদ্ধির গতি বৃদ্ধির জন্য খরচ করতে পারতো , তাই না?

হ্যাঁ! আপনি খোলা মাঠে রেডউডের এই অদ্ভুত আচরণ দেখে এরই মধ্যে একদম সঠিকভাবে অনুমান করতে পেরেছেন যে, এ বৃক্ষটি স্থানীয় না! কোন স্থানীয় বৃক্ষ এত অস্বাভাবিক আচরণ করতে পারেনা। এ বৃক্ষটি অ্যালিয়েন। কারণ সে এ তৃণভূমিতে বিবর্তিত হয়নি সে বিবর্তিত হয়ছে একটি জঙ্গলে। আর যখনই আমরা এভাবে চিন্তা করবো তখনই এ বৃক্ষটির উচ্চতা পারফেক্ট সেন্স তৈরি করবে।
এবার কল্পনা করুন আমাদের পৃথিবী একটি তৃণভূমি। আপনি দেখলেন, একটি প্রাণী প্রচণ্ড ট্যালেন্ট ও অস্বাভাবিক। তার চারপাশে আর কোন প্রাণী এত বুদ্ধিমান ও অস্বাভাবিক নয়। তখন আপনি কী ভাবতেন? ইয়েস! আপনি একই সিদ্ধান্তে স্থির হতেন। না না! এ প্রাণী আমাদের গ্রহের হতে পারে না।

কিন্তু ভয়ানক হলেও সত্য যে মানব সভ্যতা নিজেই রেডউডের মত অদ্ভুত একটি প্রাণী। কারণ অস্বাভাবিক ভাবে তার ব্রেন তার চারপাশের অন্যান্য প্রাণীদের চেয়ে বড়। এ হিউজ ব্রেনের কী দরকার ছিল? আপনি দেখুন, মানুষের তৃণভূমিতে আর কোনো প্রাণী নেই যারা মানুষের চেয়ে বুদ্ধিমান। একটা তেলাপোকা অথবা বৃক্ষ যদি কোনো বুদ্ধি ছাড়াই মিলিয়ন মিলিয়ন বছর টিকে থাকতে পারে তবে কেন একজন স্বতন্ত্র মানুষের মধ্যে স্পেসশিপ অথবা টাইম মেশিন তৈরির মত বুদ্ধিমত্তা দেখা যাচ্ছে? তৃণভূমির রেডউডের মত, এ ব্রেন ডেড বা মাথামোটা খোলামেলা একটি মাঠে মানুষের এই অতিমানবিক বুদ্ধিমত্তা আমাদেরকেও বিস্মিত ও বিভ্রান্ত করে ! যার জন্য আমরা মানুষকে সাধারণ কোনো প্রাণী মনে করিনা, আমরা তাদের সৃষ্টির সেরা জীব মনে করি, আমরা মনে করি যে মানুষ এসেছে ঈশ্বরের শহর থেকে, আমরা খুবই বিশেষ। এ ধরণের বুদ্ধিমত্তা দেখলে আমাদের নিকট মনে হয় মানুষের বুদ্ধিমত্তা একেবারেই আউট অব প্লেস, অবান্তর, অদ্ভুত ও অপ্রোয়জনীয়।

তার মানে কী আমাদের ব্রেন আদার ডায়মেনশন থেকে এসেছে? আমাদের মস্তিষ্কের ভেতর অনন্ত আত্মা আছে? আমাদের হায়ার ইন্টেলেকচুয়ালিটি ঈশ্বরের সৃষ্টি? অথবা মানুষ ভিন্ন কোনো গ্রহে উৎপত্তি লাভ করেছিল ? যেখান থেকে সুদূর অতীতে স্পেসশিপে করে তারা নেমে এসেছিল এ পৃথিবীতে? না!! এটি ভুল চিন্তা প্রক্রিয়া! ঠিক এ জায়গায় এসে আমাদের ব্রেন কনফিউজড হয়। আমরা গড ডিলিউশনে আক্রান্ত হই।
আমরা মূলত বিচ্ছিন্ন কোনো তৃণভূমিতে উৎপত্তি লাভ করিনি! আমরা উৎপত্তি লাভ করেছি একটি ঘণ জঙ্গলে। আর রেডউডের মতোই আমরা প্রাথমিকভাবে শুধু অন্যান্য প্রজাতির সাথে প্রতিযোগিতা করিনি, প্রতিযোগিতা করেছি আমাদের নিজেদের সাথে। আমাদের মস্তিষ্ক বিবর্তিত হয়েছে একটি বিরাট ব্রেন ফরেস্টে।

প্রাইমোটোলোজিস্ট দারিও মায়েস্ট্রিপিয়েরি বলেন, মানুষের জীবনে সবচেয়ে ভয়ানক সমস্যাগুলো নেমে এসেছিল অন্য আর একজন মানুষের মস্তিষ্ক থেকে। (২)
হোমো সেপিয়েন্স ২০-৩০ জনের অত্যন্ত ক্ষুদ্র টাইট-নিট ( সাধারণ স্বার্থগুলো পরস্পরের যে স্ট্রং সম্পর্ক গড়ে তোলে) ব্যান্ডে বাস করতো। এ ব্যান্ড ছিল আমাদের জঙ্গল। এখানে আমরা মূলত সূর্যের আলোর জন্য প্রতিযোগিতা করতাম না, আমরা প্রতিযোগিতা করতাম সম্পদের জন্যঃ যৌনতা, খাদ্য, ভূসম্পত্তি ও সামাজিক মর্যাদা। আমরা এ বস্তুগুলো উপার্জন করেছিলাম আমাদের প্রতিযোগিদের ছাপিয়ে ছড়িয়ে যাওয়ার জন্য। সাহিত্যে এটাকে বলা হয় সোশ্যাল ব্রেন হাইপোথিসিস। কখনো কখনো এই হাইপোথিসিসকে বলা হয়ে থাকে ম্যাকিয়াভেলিয়ান ইন্টিলিজেন্স হাইপোথেসিস (৩) ।

এটি এমন একটি ধারণা যেখানে ভাবা হয়, আমাদের পূর্বসূরিরা স্মার্ট হয়ে উঠেছে বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবেশে একে অন্যের বিপক্ষে যুদ্ধ করার মধ্য দিয়ে। মানুষের মস্তিষ্ক যে পদ্ধতিতে বড় হয়েছে ম্যাট রিডলি এটাকে বলেন, দ্য রেড কুইন (৪)। স্টিভেন পিঙ্কার এবং পল ব্লোমও, ইন্ট্রা-স্পিসিজ বা আন্তঃপ্রজাতি দ্বন্দ্বকে বুদ্ধিমত্তার বিবর্তনীয় কারণ বলে গুরুত্বারোপ করেন। প্রায় সব মানুষের মানসিক ক্ষমতা সমান। আবার তাদের প্রত্যেকের মধ্যেই ক্ষতিকর মনোভাব ও হিংস্রতা কাজ করে। আর এই ক্ষতিকর মনোভাব যদি তারা বুঝতে ব্যর্থ হয় তবে রেডউডের মতোই তারা অন্য মানুষের মনের ডার্ক সাইডে বিলুপ্ত হয়ে যাবে। এজন্য হিউজ ইন্টিলিজেন্সের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। (৫)
রবার্ট টিভার্স আরও এক ধাপ এগিয়ে যায়। তিনি দাবি করেন যে, মিথ্যা ও মিথ্যা শনাক্তকরণের এ প্রতিযোগিতাই মানুষের মধ্যে ইন্টিলিজেন্স জন্ম দেয়। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস এই যে, মানুষের অসততাই মানুষকে বিপদে ফেলে, তার উপর টিকে থাকার অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে, সেই চাপ থেকে ইন্টেলেকচুয়াল টুলস বিবর্তিত হয় যেনো তাদের ব্রেন বিশুদ্ধ সত্যকে বোঝার ধারালো ব্রেন হার্ডওয়্যার অর্জন করে। শুনতে অবাক লাগে, মানুষের অসততাই তার বুদ্ধিমত্ত্বার জননী! বাঘ, সিংহ অথবা ভয়ানক কোনো জন্তুর সাথে যুদ্ধ করার জন্য নয়, মানুষের এ অভাবনীয় বুদ্ধিমত্তা উৎপত্তি লাভ করেছে অন্য মানুষের পক্ষ থেকে ছুটে আসা ভয়ানক আঘাতগুলো ঠেকানোর জন্য। কারণ বাঘ, সিংহ অথবা ভাইরাস-ব্যাক্টেরিয়া দ্বারাই যে কেবল মানুষ গুলিবিদ্ধ হয়েছে তা নয়! মানুষ গুলিবিদ্ধ হয়েছে অন্য মানুষের ব্রেন থেকে ছুটে আসা বিষাক্ত চিন্তার বুলেট দ্বারা! এ চিন্তার বুলেট থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার জন্যই মানুষের মধ্যে এত বিপুল বুদ্ধিমত্তা যা এ বিশাল বাস্তুসংস্থানে মানুষের ব্রেনকে করে তুলেছে অন্য যে কোনো প্রাণী থেকে অস্বাভাবিক! আমরা বিভ্রান্ত হই এই ভেবে, কী এমন প্রয়োজন ছিল এত বিরাট বুদ্ধির। হয়তো আমরা এ মহাবিশ্বের শ্রেষ্ঠতর জীব!!!

মানুষের প্রতারণাই মানুষের বুদ্ধিমত্তা আকাশচুম্বী করে তুলেছে, কারণ কোনো বোকার পক্ষে প্রতারণা ধরা সম্ভব না। কিন্ত মজার ব্যাপার হলো, পীপিলিকা, তেলাপোকা, ভাইরাস, ব্যাক্টেরিয়া অথবা বনের রাজা সিংহও এত বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন নয়। টিকে থাকার জন্য তেলাপোকার বুদ্ধিই যথেষ্ট ছিল। স্পেসশিপ বানানোর মত বুদ্ধিমত্তা মিনিংলেস! হাস্যকর হলেও সত্য যে একে অন্যকে প্রতারিত করতে গিয়ে তারা যে বুদ্ধি পেয়েছে সে বুদ্ধিকেই তারা ঈশ্বর প্রদত্ত মনে করে! যাইহোক। যত কথাই বলিনা কেনো, সোশ্যাল ব্রেন হাইপোথিসিস কিন্তু এখনো সম্পূর্ণ নয় কারণ এটি আমাদের বলেনা কীভাবে ও কেন মানুষের মস্তিষ্ক প্রথম বড় হয়ে উঠে। কিন্তু অধিকাংশ স্কলার আজ একমত যে, আন্তঃ প্রজাতি যুদ্ধ আমাদের প্রজাতির মত বুদ্ধিমত্তার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ। যেভাবে আমরা এদিকে জোর দিচ্ছি মানুষ যদি এখন পক্ষপাতদুষ্ট হয় সহযোগিতা ও প্রতিযোগিতা দুটোর প্রতি তবে আমরা পক্ষপাত রিভার্স করতে পারবো। তো চলুন, আমরা আমাদের পূর্বসূরীদের প্রতিযোগিতামূলক খেলা দেখে আসি। বিশেষ করে তিনটি গেমঃ সেক্স, সামাজিক স্ট্যাটাস এবং পলিটিক্স।
সেক্সঃ
প্রাকৃতিক নির্বাচনের অত্যন্ত সাধারণ একটি ট্যাগলাইন হলো সার্ভাইভাল অব দি ফিটেস্ট কিন্ত টিকে থাকার স্থান প্রজননের পেছনের আসনে। হ্যাঁ, বাঘের খাদ্যে পরিণত হওয়া কাজের কথা নয়। কিন্তু স্মরণ করুন আজ পর্যন্ত যতগুলো সৃষ্টি এ পৃথিবীতে টিকে আছে তারা তাদের পূর্বসূরীদের নিরবিচ্ছিন্ন প্রজননের ফলাফল। যদিও আমাদের অনেক পূর্বসূরি শিকারির চোয়ালের তলায় পড়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। এ দৃষ্টিকোণ থেকে মেটিং মূলত, টিকে থাকা নয়, একটি খেলার নাম।

এখন যখন আমরা আমাদের নিজস্ব প্রজাতির সেক্স নিয়ে কথা বলবো। সেক্সের পার্থক্য দ্বারা বিভ্রান্ত করা সহজঃ কীভাবে নারী ও পুরুষ ভিন্ন ভিন্ন সেক্সচুয়াল অ্যাকটিভিটিজ প্রাপ্ত হলো? এটা ঠিক যে নারী ও পুরুষের মধ্যকার সেক্সের জৈবিক পার্থক্য তাদের আচরণ বোঝার জন্য জরুরি। কিন্ত এ বইয়ে বেশিরভাগ আমরা এ পার্থক্যগুলো উজ্জ্বল করব(৮)। আমাদের পছন্দকে অনুপ্রাণিত করার জন্য, নারী ও পুরুষকে একত্রিত করার জন্য বিবেচনা করুন যে, যখন একটি প্রজাতি একগামী হয়ে উঠে তখন তাদের পুরস্কারও এক সূত্রে গেথে দেয়া হয়। মানুষ অবশ্যই পুরোপুরি একগামী নয়। তবে এটি একটি ন্যায্য অনুমান। ম্যাট রিডলি বলেন, এটা জোর দিয়ে বলা কঠিন মানুষ এ ক্ষেত্রে কতটা অস্বাভাবিক।(১০) এইভাবে যৌনতার ক্ষেত্রে আমাদের উচিত নারী ও পুরুষকে একই সাধারণ প্রবৃত্তি থেকে চিন্তা করা, যেখানে তাদেরকে কিছুটা ভিন্নভাবে জোর দিতে হয়। আবার এটা মনে রাখতে হবে আমরা সেক্সের প্রতিযোগিতামূলক দৃষ্টিকোণ বিচার করছি। সহযোগিতামূলক শিশু লালনপালন খুবই প্রয়োজনীয়।
কিন্তু এটি এখানে আমাদের অ্যাটেনশনের বিষয়বস্তু নয়। সেক্সচুয়াল প্রতিযোগিতার প্রধান রূপ হলো সঙ্গীর জন্য প্রতিযোগিতা। স্থানীয়ভাবে, এটি বিশালভাবে জিরো-সাম প্রতিযোগিতা কারণ একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক কমিউনিটিতে শুধু নির্দিষ্ট সংখ্যক সদস্যই থাকে মেটিং এর জন্য। প্রতিটি সদস্য অন্য সদস্যের সাথে সেক্স করার জন্য প্রতিযোগিতা করে। প্রতিটি নারী যারা আরও উচ্চমাত্রিক পুরুষ পেতে চায় তারা অন্য নারীর সাথে প্রতিযোগিতা করে। যেখানে পুরুষরা অন্য পুরুষদের পেছনে ফেলে তার পছন্দের নারীর সাথে মেট করতে চায়।

অন্যান্য প্রতিযোগিতায় যেমন রেডউডদের মধ্যে আলোর প্রতিযোগিতার মতো, সেক্সচুয়াল প্রতিযোগিতাও একটি বিবর্তনীয় আর্ম রেস জন্ম দেয়। এটি ময়ুরের উজ্জ্বল লেজের মাধ্যমে দারুণ ভাবে বর্ণনা করা যায়।(১১) যেটি মালিকের শারীরিক ও জেনেটিক ফিটনেসের অ্যাডভারটাইজমেন্ট হিসেবে কাজ করে। কোর্টশিপের ( বিয়ের পূর্বে প্রেম) ক্ষেত্রেও মানব নারী পুরুষ প্রতিযোগিতার জন্য বিজ্ঞাপন দেয়। আমরা সম্ভাব্য সঙ্গী অনুসন্ধান করি এটা ভেবে যে আমাদের গুড জিন আছে এবং আমরা গুড জিন তৈরি করতে পারি। এ যুক্তি বিশেষভাবে বোঝা কঠিন নয়। কিন্তু এর তাৎপর্য বেশ গভীর। জেফরি মিলার বলেন, মন সার্ভাইভাল মেশিন হিসেবে বিবর্তিত হয়নি, মন বিবর্তিত হয়েছে কোর্টশিপ মেশিন হিসেবে। অধিকাংশ স্বতন্ত্র আচরণ প্রজননের সফলতা প্রদান করে, টিকে থাকার ব্যর্থতা নয়। এটা বিশ্বাস করার যৌক্তিক কারণ আছে যে মিউজিক, গল্পবলা, কৌতুক, ভিজুয়াল আর্ট এগুলো ময়ুরের লেজ থেকে আলাদা কিছু নয় যেগুলো সঙ্গীকে আকৃষ্ট করার জন্যই বিবর্তন ঘটে।
সামাজিক স্ট্যাটাস:
সামাজিক মর্যাদা হলো গ্রুপে আপনার নির্দিষ্ট পদ যেখানে আপনি সমাজের টোটেম মেরুতে অবস্থান করেন। এটি সম্মান ও প্রভাবের একটি পরিমাপ। আপনার স্ট্যাটাস যত উঁচু হবে, অন্য লোকেরা আপনার থেকে ততই পিছিয়ে যাবে আর তারা আপনার সাথে ভালো আচরণ করবে। সোশ্যাল স্ট্যাটাস মূলত মানুষের মাঝে দুটো কারণে এসেছেঃ ডোমিন্যান্স ও প্রেস্টিজ। (১২)
আধিপত্য হলো এমন একটি সামাজিক মর্যাদা যা আমরা অন্যদেরকে ভয় দেখানোর উদ্দেশ্য ব্যবহার করি ( এক্ষেত্রে স্টালিনের কথা চিন্তা করুন) এবং সামাজিকভাবে নিন্ম মর্যাদার মানুষ তাদের ভয় পায় ও অন্যান্য উপেক্ষামূলক সহজাত প্রবণতা মেনে চলে। প্রেস্টিজ হলো এমন একটি স্ট্যাটাস যা আমরা চমৎকার কোনো মানুষ হিসেবে অন্যদের থেকে পেয়ে থাকি। এটি প্রশংসা ও অন্যান্য প্রবণতা দ্বারা চালিত হয়। অবশ্যই, এ দুটো ফর্মের স্ট্যাটাস পরস্পর স্বতন্ত্র নয়; স্টিভ জবস উদাহরণস্বরূপঃ আধিপত্য ও মর্যাদা দুটোই প্রদর্শন করে। কিন্তু এ দুটি ফর্ম অ্যানালিক্টিক্যালি স্বতন্ত্র কৌশল ভিন্ন ভিন্ন জৈবিক এক্সপ্রেসেন সহকারে। কিছু গবেষক এটাকে শীর্ষে উঠার উপায় হিসেবে দেখেছেন।(১৩)

ডোমিন্যান্স বা আধিপত্য পরিস্কারভাবে প্রতিযোগিতার ফলাফল যা মাঝেমাঝে অত্যন্ত নিষ্ঠুর ভয়ানক হয়। এসবকিছু ক্ষমতাকে দৃঢ় করে। কিন্তু আধিপত্যের পরম্পরায় কেবল একজন ব্যক্তিই উপরে উঠে আসে। সে অন্যদেরকে ঠোকরায় নিচে নামানোর জন্য যেনো সে তার আধিপত্যের হিমালয়ের শীর্ষে আরোহন করতে পারে। একবার চূড়ান্ত শিখরে পৌঁছে যাওয়ার পর সে প্রতিযোগীদের বিপক্ষে লাগাতার লড়াই চালিয়ে যায়। উদাহরণস্বরূপ, আমরা স্তালিনের কথা বলতে পারি। সে অত্যন্ত কুখ্যাতভাবে প্যারানয়েড ও অনিরাপদ ছিল তার ক্ষমতা হারানোর ভয়ে এবং গ্রেট পার্জের সময় সে প্রায় ৬ লক্ষ মানুষকে হত্যা করে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে।(১৪)
অন্যদিকে প্রেস্টিজ বা প্রতিপত্তি অপেক্ষাকৃত কম প্রতিযোগিতামূলক, অন্ততপক্ষে উপরিভাগ থেকে।(১৫) এর সম্পূর্ণটাই শ্রদ্ধার যা আসলে জোর প্রয়োগ করে অর্জন করা যায়না, এটা অর্জিত হয় স্বাধীনভাবে অন্য কারো কাছ থেকে প্রাপ্ত প্রশংসা দ্বারা। এক্ষেত্রে দেখা যায়, প্রেস্টিজ হলো জনপ্রিয়তার প্রতিযোগিতা। সারা বিশ্বের উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালগুলো যার প্রমাণ। আমরা প্রেস্টিজ অর্জন করি বিভিন্নভাবে। আপনি যদি ধনী, সুন্দর, খেলাধুলায় ভালো, মজার, শৈল্পিক, বুদ্ধিমান, ভালো বক্তা, সম্মোহনকারী এবং দয়াশীল হয়ে থাকেন তবে আপনি প্রেস্টিজ উপার্জন করতে পারবেন। এগুলো হলো রিলেটিভ কোয়ালিটি।
অন্যান্য প্রজাতির তুলনায় প্রতিটি মানুষই জিনিয়াস কিন্তু মানুষকে এটা খুব একটা হেল্প করতে পারনা কারণ তার নিজের প্রজাতির আরও অনেকেই জিনিয়াস। তাই প্রতিযোগিতাও হয় তীব্র। এমনকি আজকের বিশ্বের সবচেয়ে গরীব মানুষটিও আদিম যুগের শ্রেষ্ঠতম রাজা রানীদের তুলনায় অনেক ধনী কিন্তু প্রেস্টিজের দিক থেকে তারা রয়ে গেছে আজকের পৃথিবীর নিচের তলায়।
প্রেস্টিজকে অন্যভাবে আমরা এভাবে বলতে পারি যে ফ্রেন্ডশিপ ও অ্যাসোসিয়েশনে প্রেস্টিজ হলো আপনার প্রাইজ। অন্য সকল মার্কেটের মতোই প্রাইজ সবসময় সরবরাহ ও চাহিদার উপর নির্ভর করে। ফ্রেন্ডশিপকে দেয়ার জন্য আমাদের প্রত্যেকের কাছে একইরকম অফার আছে কিন্তু আমাদের বন্ধুত্বের চাহিদা ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে বৈচিত্র্যতা প্রকাশ করে। উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন ব্যক্তিদের কাছে তাদের সময় ও মনোযোগ সম্পর্কে অনেক দাবি আছে, তাদের বন্ধু হওয়ার জন্য অনেকেই সারিবদ্ধ হয়। আর নিন্ম মর্যাদার মানুষদের তাদের সময় ও মনোযোগের ব্যাপারে দাবির পরিমাণ অনেক কম। আর এজন্য তারা অন্যদের সাথে বন্ধুত্ব করার জন্য ডিসকাউন্ট দেয়। এবং সবাই বন্ধু ও এসোসিয়েশনে নিজেদের আরও আকর্ষণীয় করার জন্য দাম বাড়াতেই থাকে____নতুন দক্ষতা শেখার মাধ্যমে, আরও ভালো টুলস অর্জনের মাধ্যমে এবং তাদের সম্মোহনকে আরও মসৃণ করে তোলার মাধ্যমে।
এখন আমাদের প্রতিযোগিরা প্রেস্টিজের জন্য বিভিন্ন পজেটিভ সাইড ইফেক্ট তৈরি করে যেমন শিল্প, বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন। (১৬) প্রেস্টিজ অনুসন্ধান করাটাও একটি ওয়ান সাম গেইম যা আমাদের নিকট ব্যাখ্যা করে কেনো আমরা মাঝেমাঝে একদম কাছের কোনো বন্ধুর সাফল্যেও হিংসা ও যন্ত্রণা অনুভব করি।
পলিটিক্স
অ্যারিস্টটল সবসময় মানুষকে পলিটিক্যাল অ্যানিমেল বলতেন। কিন্তু তার বক্তব্যের যুগ শেষ হয়েছে আমরাই একমাত্র প্রাণী নই যারা পলিটিক্যাল। (১৭) ১৯৮২ সালে প্রাইমাটোলোজিস্ট ফ্রান্স ডি ওয়াল একটি প্রভাবশালী বই প্রকাশ করেন “শিম্পাঞ্জি পলিটিক্স” নামে। যেটি নন-হিউম্যান প্রাণিদের রাজনীতি সম্পর্কে আমাদের আলোকিত করে। (১৮) প্রাইমাটোলজিতে এটি নতুন একটি শব্দ জন্ম দিয়েছিল “ম্যাকাভেলিয়ান”! ডি ওয়াল দেখান যে , মানুষের মধ্যে যে ক্ষমতার যুদ্ধ কাজ করে তা স্ট্রাকচারগতভাবে শিম্পাঞ্জির সমরূপ। যেটাকে আমরা যথাযথ ভাবে বললে দাঁড়ায় শিম্পাঞ্জির পলিটিক্যাল ইন্টেলিজেন্স আমাদের মতই।আমরা তাদের মধ্যে ঠিক একই লক্ষ্য ও মোটিভ দেখতে পাই যা আমরা আমাদের সহ মানুষদের সাথে রাজনীতি করার সময় প্রদর্শন করি।

কিন্তু শিম্পাঞ্জির মধ্যে কী এমন আচরণ কাজ করে যা আমাদের নিকট এটাকে পলিটিক্যাল বলে আলোচনা করতে আনত করে? অন্যান্য প্রাণীদের মতোই শিম্পাঞ্জির আধিপত্যের পরম্পরা রয়েছে। তাদের এ আধিপত্যের পরম্পরা মোটামুটি সরলরৈখিক। শক্তিশালী থেকে দূর্বলের দিকে। যেখানে শক্তিশালীদের স্বভাব হলো নিচের সারির শিম্পাঞ্জির সাথে খাদ্য, যৌন সঙ্গী ও সুযোগ নিয়ে গুন্ডামী করা। আধিপত্যের পরম্পরা খুবই সিম্পল ও সোজাসাপ্টা রাজনীতির লেবেল নিশ্চিত করার জন্য। একটি মুরগিরও আধিপত্যের পরম্পরা আছে __ঠোকরের নির্দেশনা __ম্যাকিয়াভেলি চক্রান্তের জন্য তাকে খুব কম মানুষই অভিযুক্ত করবে।
তাহলে কোন বিষয়টি অন্যথায় রিজিড হয়ে যায়, প্রায় রোবটিক আধিপত্যের অনুক্রম যা রাজনীতির সাথে মিশে যায়। একটি শব্দ হলো ” জোট”! মিত্র যারা একত্রে একটি শক্তিতে পরিণত হয়। ডি ওয়াল তার Our Inner Ape গ্রন্থে লিখেন, দুজন যখন একই রনকৌশলে যুদ্ধ করে এটি তাদের সমৃদ্ধি বৃদ্ধি ও বিপদের সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়। জোটই মূখ্য। কোনো পুরুষই একা যুদ্ধ করতে পারে না, অন্ততপক্ষে দীর্ঘদিন নয়। অন্য কথায়, আপনি যদি শিম্পাঞ্জির কমিউনিটির একজন শিম্পাঞ্জি হয়ে থাকেন, তাহলে আপনাকে শুধু দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর হলেই চলবেনা, আপনাকে দলের অন্যান্যদের সাথে গ্যাং তৈরি করতে হবে। ভালো একজন মিত্রকে শনাক্তকরণ, আকর্ষণ ও ধারণ করার ক্ষমতাও আপনার থাকতে হবে। আপনাকে জোটের গন্ডগোল মিমাংসা, বিগলিতকরণ ও চারপাশের সংঘর্ষ মোকাবিলা করার জন্য যথেষ্ট কান্ডজ্ঞানসম্পন্ন হতে হবে। জোট হলো এমনকিছু যা পলিটিক্সকে অধিক পলিটিক্যাল করে তোলে ।

দল গঠন, একসাথে কাজ করার ক্ষমতা এবং পরস্পর লক্ষ ও উদ্দেশ্য শেয়ার করার প্রবণতা না থাকলে জীবন ব্যক্তিগত প্রতিযোগিতায় পরিণত হয়__ ঠিক যেমনি একটি মুরগি আর একটি মুরগির সাথে ঠোকাঠুকি করে।
কিন্তু সহযোগিতার ড্যাশটি পূরণ করুন, দেখবেন একটি প্রজাতি সহসা রাজনৈতিকভাবে বিকশিত হয়ে উঠেছে। বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে জোটের রাজনীতি নথিভুক্ত করেছিলেন। প্রাইমেটরা স্পষ্টতই একটি রাজনৈতিক দল ঠিক যেমনি তিমি, ডলফিন, নেকড়ে, সিংহ, হাতি ও মেরকাত। (২০) কিন্তু আমরা জানি যে কোনো প্রজাতিই আমাদের চেয়ে বেশি পলিটিক্যাল নয়।
মানুষের ব্রেন তার আকার ও জটিলতায় সে সকল ব্রেনকে খর্ব করে, আমাদের জোটগুলিও তাই করে। এগুলোর অনেক রুপ ও নাম রয়েছে। সরকারের ক্ষেত্রে জোটগুলি গ্রুপের স্বার্থ ও রাজনৈতিক দল হিসেবে প্রকাশিত হয়। ব্যবসার ক্ষেত্রে দল, কোম্পানি, সমবায় ও ট্রেড অ্যাসোসিয়েশন। উচ্চবিদ্যালয়ে জোটকে বলা হয় চক্র অথবা বন্ধু। রাস্তায় ও কারাগারে বলা হয় গ্যাং। কখনো কখনো সহজভাবে বলা হয় ফ্যাকশন বা দলাদলি। তারা দুজন লোকের এক তৃতীয়াংশ ভোট দেয়ার মত ক্ষুদ্র হতে পারে, তারা একটি দ্বীপ অথবা ধর্ম হতে পারে। তাদের মেম্বারশিপ মানদণ্ড থাকতে পারে, তাদের নতুন মেম্বার নিয়োগ করার ক্ষমতা থাকতে পারে এবং কোনো মেম্বারকে ছুড়ে ফেলে দেয়ার ক্ষমতাও।
জোটের রাজনীতি এমন এক রাজনীতি যে জন্য আমরা প্রচুর সময় অপচয় করি। যখন আমরা দলের অতিথি তালিকা নিয়ে ক্ষুদ্ধ তখনও আমরা রাজনীতি করি। আমরা যখন চার্চে প্রবেশ করি কারণ সেখানে আমি নিজেকে স্বাগত বোধ করি অথবা কোনো চাকরি ছেড়ে দেই, তখনও আমরা পলিটিক্যাল প্রবণতা অনুসরণ করি। খোঁজা ও দলে যোগদান করা, পরিচর্চাকারীর মাথা ব্যাথা মোকাবিলা করা এবং প্রয়োজনীয়তার সময় ত্যাগ করা এগুলো আমাদের নিকট সহজেই আসে ঠিক যেমনি একটি শাবক দল নেকড়ে দ্বারা শিকার হয়। এখন আপনি যদি হেনরি কিসিঞ্জার, রোবার্ট মোসেস অথবা সার্ভাইভর অথবা গেম অব থ্রোন দেখেন আপনি দেখবেন জোট রাজনীতি কতটা নোংরা।
বিজয়ী কৌশলের মধ্যে প্রায়শই হুমকি, পালটা হুমকি, বিশ্বাসঘাতকতা, প্রতারণা, এমনকি সহিংসতা বিদ্যমান থাকে; আর এজন্য রাজনীতি প্রায়শ নোংরা। কিন্তু এটা ভাবাও বড় ভুল হবে যে রাজনীতির সবটাই হাত-পাখা ও ছুরিকাঘাত। এর সম্পূর্ণটাই হ্যান্ডশেক, পিঠ চুলকানো এবং কোলাকুলিও হতে পারে। এ দাবি প্রস্তাব করেছিলেন স্বল্প পরিচিত ম্যাকিয়াভেলি আর অন্য একটি দাবি সাম্প্রতিক, যেটি করেছেন বালদাসারে ক্লাস্টিগ্লিওন। দুজনই ১৬ শতকের ইতালিতে রাজনৈতিক জলের প্রবাহ নিয়েই লিখেছিলেন। ম্যাকিয়াভেলির বিখ্যাত নোটবুক ছিল দ্য প্রিন্স, যেটি লিখা হয় সর্বোচ্চ বিচারকের জন্য।
আর কাস্টিগ্লিয়ন লিখেছিলেন বুক অব কোর্টিয়ার। এ বই তাদের জন্য লেখা যারা কম অভিজাত ও আদালতের অনুগ্রহপ্রার্থী। যদিও তাদের সাবজেক্ট ম্যাটার একই কিন্তু বিভিন্ন উপায়ে এ দুটি বই পরস্পর সম্পূর্ণ বিরোধী। ম্যাকিয়াভেলি মানব রাজনীতির নির্মম ও অনৈতিক দিকটির উপর জোর দিয়েছিলেন আর ক্লাস্টিগ্লিওন মৃদু ও আরও মানবিক উপায়ের উপর জোর আরোপ করেছিলেন।। একজন আদর্শ সভাসদ হবে ভালো আচরণ ও সামাজিক অনুগ্রহের অধিকারী। সে হবে ঘোড়সওয়ার, কবিতায় এবং নৃত্তে দক্ষ। (২২) ভয় ও ধূর্ততার সাথে কারসাজি না করে, বিচারকদের উচিত তাদের স্নেহের অবাধ জয়লাভ, মুগ্ধতা, তোষামোদ ও গুরুত্বপূর্ণ সাহচর্যের মাধ্যমে বিচার। (২৩)
ম্যাকিয়াভেলি ও কাস্টিগ্লিওন দুজনেই তাদের নিজস্ব উপায়ে ঠিক ছিল। রাজনীতিতে সফল হওয়ার জন্য দুটো স্ট্র্যাটেজিই গুরুত্বপূর্ণ। এটা লক্ষ্যনীয় যে, কাস্টিগ্লিওনের পদ্ধতিগুলো যদিও স্পষ্টতই কম প্রতিযোগিতামূলক তবুও একই ধরণের প্রণোদনা থেকেই উদ্ভব। না, প্রতিটি রাজসভাসদ রাজার প্রিয় হতে পারেনাঃ একজনের ভাগ্য অন্যজনের বিপত্তি। অতএব চূড়ান্তে এখানেও একই তাড়না__বিভিন্ন প্রতিযোগির সাথে জয়লাভ করতে চাওয়া এটি একইসাথে সোসিওপ্যাথকে চক্রান্ত ও রাজসভাসদদের মুগ্ধ করতে শেখায়।
স্ট্রাকচারাল সিমিলারিটিঃ
এই তিনটি খেলা __সেক্স, পলিটিক্স ও সোশ্যাল স্ট্যাটাস পরিপূর্ণভাবে স্বতন্ত্র নয়। তারা পরস্পর ইন্টারমিডিয়েট গোল শেয়ার করে। মাঝেমধ্যে একটি খেলার প্রাইজ অন্যটির ইনস্ট্রুমেন্ট হয়। যেমন ভালো যৌন সঙ্গী অর্জনের জন্য আপনার উচ্চ পদমর্যাদা ও রাজনৈতিক ক্ষমতা থাকতে হবে। যেখানে একজন আকর্ষণীয় সঙ্গী আপনার সামাজিক স্ট্যাটাস বাড়িয়ে দেবে। এ তিনটি খেলা কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাঠামোগত প্রতিসাম্যতা শেয়ার করে। যেমনটি পূর্বে আমরা উল্লেখ করেছি, এগুলো শুধুই প্রতিযোগিতামূলক খেলা যেখানে সবাই জয়লাভ করেনা। যেখানে অবাধ প্রতিযোগিতা মাঝেমাঝে নেস্টি রুপ ধারণ করে। এটি বিশেষ করে সামাজিক স্ট্যাটাস ও সেক্সের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য যেখানে অসংখ্য যৌন সঙ্গী ও বন্ধু চারপাশে ঘোরে। কিন্তু এটি আবার রাজনীতির ক্ষেত্রেও সত্য। আমরা পরম্পর পরম্পরের সাথে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারি যা আমাদের সবার জন্য ‘পাইকে’ সম্প্রসারণ করে তা সত্ত্বেও এটি একটি ব্যতিক্রম, রুলস হওয়ার পরিবর্তে __বিশেষ করে আমাদের আদিম পূর্বসূরিদের জন্য। অধিকাংশ প্রসঙ্গে, একটি জোট সফল হলে অন্যটি ব্যর্থ হতো। গুরুত্বপূর্ণভাবে, জোটের সদস্যরা সহযোগিতার মাধ্যমে পাইয়ের সবচেয়ে বড় টুকরো পেত আর এটাই পলিটিক্সকে আরও অধিক জ্বালাময়ী করে তোলে।
প্রতিটি খেলার মধ্যে আরও যে সকল সামঞ্জস্যতা আছে তা হলো প্রতিটি খেলায় দুটি পরিপূরক দক্ষতা লাগে। সম্ভাব্য পার্টনারকে মূল্যায়ন করার ক্ষমতা এবং কোন একজন সঙ্গীকে আকর্ষণ করার ক্ষমতা। সেক্সের ক্ষেত্রে আমরা পার্টনার খুঁজি মেটিং করার জন্য। আর সামাজিক ক্ষেত্রে আমরা ফ্রেন্ডস ও এসোসিয়েটস খুঁজি স্ট্যাটাসের জন্য। আর রাজনীতির ক্ষেত্রে আমরা মিত্র খুঁজি দলগঠন করার জন্য। আমরা যখন অন্য কাউকে মূল্যায়ন করি, আমরা পার্টনার হিসেবে তাদের ভ্যালু অনুমান করি এবং আমরা তাদের মধ্যে সুনির্দিষ্ট কিছু বৈশিষ্ট্য ও গুণ অনুসন্ধান করি। আমাদের সঙ্গীদের মাঝে আমরা তাদেরকে চাই যাদের গুড জিন আছে যারা ভালো প্যারেন্টস তৈরি করতে পারবে। আর আমাদের বন্ধু ও এসোসিয়েশনে আমরা তাদেরকে খুঁজি যাদের দক্ষতা, সম্পদ আছে এবং আছে তুলনামূলক ব্যক্তিত্ব ___আমাদের থেকে যারা আরও অধিক বিশ্বস্ত। আমরা একই গুণ পলিটিক্যাল মিত্রদের মধ্যেও দেখতে চাই যেহেতু তারা মৌলিকভাবে নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে নির্বাচিত।
একইভাবে আমাদের নিজ সঙ্গীদের আকৃষ্ট করার জন্য আমাদের উচিত নিজেদের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বিজ্ঞাপন দেয়া যে বৈশিষ্ট্যগুলো আমরা অন্য কারো মাঝেও দেখতে চাই। এ ধরণের লক্ষ্যনীয় এবং এ ধরণের প্রত্যাশিত অতিশয়োক্তির মাধ্যমে আমরা আমাদের নিজেদের ভ্যালু তুলে ধরি এটা নিশ্চিত করার জন্য যে আমাদেরকে অনেক উচ্চমাত্রিক সঙ্গীরা পছন্দ করে, অনেক হায়ার স্ট্যাটাসের ফ্রেন্ড এবং উন্নত জোট। আর তাই এ সকল প্রতিযোগিতা একপ্রকার আর্ম রেস। ঠিক যেমনি রেডউড সূর্যের আলোর জন্য প্রতিযোগিতা করে , আমরাও সম্ভাব্য সঙ্গী, ফ্রেন্ডস ও মেটসের কাছ থেকে মনোযোগ, সহানুভূতি পাওয়ার জন্য প্রতিযোগিতা করি এবং প্রতিটি খেলায় আমরা একজন প্রতিযোগির উপর জয়লাভ করতে চাই।
এ প্রসঙ্গে, “ম্যাথিউর ৭:১ এর বক্তব্য; বিচার কোরোনা না যতক্ষণ পর্যন্ত তোমাকে বিচার করা হচ্ছে”__এ উক্তিটি মেনে চলা খুবই কঠিন। এটি আমাদের মধ্যে বিবর্তিত সকল সহজাত প্রবণতার বিপক্ষে যায়, যেখানে আমরা সবসময় অন্যদের বিচার করার জন্য প্রস্তুত এবং যেখানে প্রতিনিয়ত আমরাও বিজ্ঞাপন দিচ্ছি যেনো অন্যরাও আমাদের জাজ করে। আমরা যদি মানব প্রকৃতির প্রতিযোগিতামূলক দিক বুঝতে চাই আমাদের উচিত ম্যাথিউর ৭:১ কে ঘুরিয়ে দিয়ে এভাবে বলা যে, স্বাধীনভাবে বিচার করো এবং উন্মুক্তভাবে শুনো অন্যরা তোমার সম্পর্কে কী বিচার করছে।
সিগনাল ও সিগনালিং
জাজ করা আর অন্যের দ্বারা জাজ হওয়া এ দুটো বিষয়ের জন্য মধ্যবর্তী একটি বিষয় প্রয়োজন আর তা হলো সিগনাল। ইভোলুশনারি বায়োলজিতে সিগনাল বলতে বোঝায় এমনকিছুকে যা যোগাযোগের জন্য ইনফরমেশন বহন করে। দাগহীন ত্বক অথবা পশম স্বাস্থ্যবান জীবের সিগনাল বহন করে। একটি গর্জন হলো আগ্রাসনের সিগনাল এবং গর্জনের গভীরতা হলো একটি প্রাণীর আকারের সংকেত। এ সিগনালগুলোকে সৎ বলা হয় যখন যখন সেগুলো প্রেরকের সম্পর্কে অন্তর্নিহিত বৈশিষ্ট্য অথবা সত্য ধারণ করে। অন্যথায় এগুলো অসৎ এবং বিভ্রান্তিকর। প্রতারণা করার প্রবণতা সবসময় অস্পষ্ট। প্রতারণা একজন ব্যক্তিকে ফসল কাটার অনুমোদন দেয় খরচ ছাড়াই। আর এজন্য সবচেয়ে ভালো ও অনেস্ট সিগনাল খুবই দামী।( ২৬) আরও সুনির্দিষ্টভাবে এগুলো ভিন্নভাবে ব্যায়বহুল, উৎপাদন করা ব্যায়বহুল এবং মিথ্যা হওয়াটাও অনেক ব্যয়বহুল। (২৭) যেমন একটি সিংহের গভীর গর্জন হলো একটি বিশাল দেহগহব্বরের বিশ্বাসযোগ্য সংকেত কারণ ইঁদুরের মত ক্ষুদ্র প্রাণীদের পক্ষে এ ধরণের সাউন্ড তৈরি করা সম্ভব না।
কখনো কখনো আপনার মধ্যে আকর্ষণীয় কোনো বৈশিষ্ট্য আছে এটা অন্যদের জানানোর জন্য আপনি ঝুঁকিপূর্ণ কিছুও করতে পারেন । এটাকে হ্যান্ডিকাপ প্রিন্সিপাল বলে। (২৮) যেমনঃ স্কুনক্সের( Skunks) এর দেহ খুবই আকর্ষণীয় কিন্তু আপনি যখনই একে স্পর্শ করবেন সে তার শরীর থেকে প্রচণ্ড দুর্গন্ধ ছড়িয়ে দেবে যেটা আপনার নিঃশ্বাস বন্ধ করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। আপনি যদি এর বেশি কাছে যান তবে এ গন্ধগুলো সে আপনার মুখে ছড়িয়ে দেবে, আপনার চোখে জ্বালা, চুলকানি ও পুড়ে যাওয়ার অনুভূতি তৈরি হবে।

আবার পয়জন ডার্ট ফ্রগও দেখতে অনেক চমৎকার কিন্তু এই দুর্দান্ত সুন্দর ব্যাঙটিকে যদি আপনি স্পর্শ করতে যান তবে এর বিষাক্ত শ্লেষাগুলি ত্বকের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করবে। এজন্য এই মারাত্মক প্রাণীগুলোকে গ্লোভস দিয়ে পরিচালনা করতে হয়। তার মানে দেখতেই পাচ্ছেন, সুন্দরকে জানান দেয়ার জন্য একটি সিগনাল কতটা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।

একটি অজৈবিক উদাহরণ হিসেবে জিনস ও ড্রেসের কথা চিন্তা করুন। জিনস ডিউরেবল এবং এটি প্রতিদিন ধোয়ার প্রয়োজন হয়না যেখানে ড্রেসের চাহিদা অফিশিয়ালি একটু বেশি আর সেটা প্রতিদিন পরিস্কার করতে হয় আর এজন্য এটাকে ফর্মাল ড্রেস বলে। মানুষের ক্ষেত্রে অনেস্ট সিগনালিং ও হ্যান্ডিকাপ প্রিন্সিপাল যে নীতিবাক্যের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি প্রতিফলিত হয় তা হলো, Action Speak louder than Word.(29)।
শব্দের সমস্যা হলো সেগুলোতে প্রায় কোনো খরচই নেই, শব্দ সাধারণত খুবই স্বস্তা। কিন্তু কোন সিগনালটি আপনার কোম্পানির নিকট মূল্যায়নের জন্য সবচেয়ে ভালো সিগনাল? যা দেখলেই তারা বলবে, গ্রেট জব! অথবা তারা জাগ্রত হবে?
আমরা খুব ভারীভাবে সৎ সিগনালের উপর নির্ভর করি, কারণ যৌন সঙ্গী, বন্ধু ও মিত্রের জন্য এখানে প্রতিযোগিতা হয়। বিশ্বস্ত বন্ধুদের যেখানে দুধের মাছিদের কাছ থেকে আলাদা করা যায়ঃ উদাহরণস্বরূপঃ অসুস্থ্যতার সময় যে আপনাকে দেখার জন্য হসপিটালে ভিজিট করে। স্বাস্থ্যকর সঙ্গী অস্বাস্থ্যকর সঙ্গী থেকে নিজেকে আলাদা করে নিয়মিত জিমে গিয়ে অথবা ম্যারাথনের মাধ্যমে। এছাড়া আমরা অনেস্ট সিগনাল দেই যখন বন্ধু, সঙ্গী ও টিমমেট হিসেবে নিজেদের বিজ্ঞাপন দেয়ার চেষ্টা করি।
স্মরণ রাখুন, সিগনাল আদান প্রদানের ক্ষেত্রে আমরা সবসময় সচেতন থাকিনা। আমরা শিল্পের প্রবণতা নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছি, আমাদের আর্টিস্টিক দক্ষতার বিজ্ঞাপন দেয়ার জন্য ( বেঁচে থাকার উদ্বৃত্ত)___ কিন্তু এর মানে এই নয় যে, একটি পরিত্যাক্ত গাছের খণ্ডে খোদাই করা একটি ভাস্কর্য নিয়ে আমরা কী ভাবছি। আমরা হয়তো খুব সরলভাবে ভাস্কর্যের সৌন্দর্য নিয়ে ভাবছি। তা সত্ত্বেও, অনেক অদ্ভুত ও অনন্য সব আচরণের পেছনে গভীর যুক্তি হলো সে সকল সংকেতের মান। (৩০)
একটি জিনিস যা সিগন্যালিং-কে বিশ্লেষণ করা কঠিন করে তোলে তা হলো কাউন্টারসিগন্যালিং। উদাহরণস্বরুপ, চিন্তা করুন একজন ব্যক্তি কীভাবে আপনার শত্রু, ক্যাজুয়াল ফ্রেন্ড অথবা ক্লোজ ফ্রেন্ড হয়। ক্যাজুয়াল ফ্রেন্ড নিজেদেরকে শত্রু থেকে আলাদাভাবে উপস্থাপন করে,তারা উষ্ণ সিগনাল ও বন্ধুত্বের ভাব দেখায় __হাসি, কোলাকুলি, স্মরণ ও পরস্পর ক্ষুদ্র জিজ্ঞাসাবাদেরর মত বিষয়গুলোর মাধ্যমে। আর অন্যদিকে ক্লোজ ফ্রেন্ড নিজেদেরকে ক্যাজুয়াল ফ্রেন্ড থেকে আলাদা করতে চায়, বাহির থেকে তারা আনফ্রেন্ডলি আচরণ করে। একজন ক্লোজ ফ্রেন্ড যখন লাঞ্চের টাকা পরিশোধ করার জন্য ওয়ালেট আনতে ভুলে যায় আপনি তাকে ইডিয়ট বলতে পারেন। এটা তখনই সম্ভব যখন আপনি আপনার বন্ধুত্বের ব্যাপারে এতটাই বিশ্বস্ত যে আপনি জানেন ইনসাল্ট করলেও এটি ভেঙে যাবেনা, আপনি চিন্তাই করতে পারেন না আপনার বন্ধুত্ব বিপন্ন হবে। এ কাজটি আপনি ক্যাজুয়াল ফ্রেন্ডের সাথে সহজে করতে পারবেন না আর অন্যদিকে একই আচরণ ক্লোজ ফ্রেন্ডকে আরও ক্লোজ করে তোলে।
সিগনালের মধ্যেও আবার পরম্পরা আছে। নন-সিগনাল থেকে সিগনাল আর তারপর কাউন্টার সিগনাল। একটি ইন্টারেকশনের বাহিরের কেউ একজন সবসময় নন-সিগনাল ও কাউন্টার সিগনালের তারতম্য করতে পারবেনা। কিন্তু ইনসাইডার অবশ্যই জানবে কীভাবে এটাকে ব্যাখ্যা করতে হয়, যদিও সজ্ঞার লেভেল থেকে।
যখন প্রতিযোগিতামূলক খেলায় যেমনঃ সেক্স, স্ট্যাটাস ও পলিটিক্সের ক্ষেত্রে সিগনাল ব্যবহার করা হয় এটি মাঝেমাঝে যুদ্ধক্ষেত্র রচনা করে। অন্যান্য প্রতিযোগিকে অতিক্রম করার জন্য একজন অংশগ্রহণকারী আরও শক্তিশালী সিগনাল প্রদান করে। আর এর ফলে কিছু বিস্ময়কর জিনিস অর্জিত হয়ঃ বাচের কনসার্ট, গগুইনের আঁকা ছবি, শেক্সপিয়ারের সনেট ও নাটক। রকফেলারের জনকল্যাণমুখী ফাউন্ডেশন এবং আইনস্টাইনের থিয়োরি অব রিলেটিভিটি। মাঝেমাঝে রেডউডের মতোই, মানুষও মহাকাশকে স্পর্শ করার জন্য প্রতিযোগিতা করে, মাউন্ট অ্যাভারেস্টে আরোহন করে, পিরামিড নির্মান করে এবং স্কাইক্রেপার অথবা চন্দ্রে রকেট লঞ্চিং করার মাধ্যমে।
সামনের দিকে তাকানোঃ
আমরা যখন আমাদের পূর্বসূরীদের নিয়ে চিন্তা করি যাদের থেকে আমরা আমাদের আজকের আকার পেয়েছি আমাদের মনে সর্বপ্রথম রেডউডের কথাই আসে। তীব্র আন্তঃপ্রজাতি প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হয়ে, তারা আক্ষরিক অর্থেই একটি অনুষ্ঠানে পৌঁছে গিয়েছিল যখন তারা গহীন অন্ধকার থেকে বেরিয়ে এসেছে আলোতে। আমাদের আরও অনেক অতিরঞ্জিত বৈশিষ্ট্যের সাথেও তাই ঘটেছে।
এ ধরণের প্রতিযোগিতামূলক যুদ্ধের একটি সমস্যা হলো এগুলো বিশাল অপচয়। একটি রেডউড যতটা লম্বা হওয়া উচিত তার থেকেও বেশি লম্বা। যদি তারা একে অন্যের সাথে কো-অর্ডিনেট হতে পারতো অতিরিক্ত উচ্চতা না বাড়ানোর জন্য, যদি তারা ১০০ ফিটের একটি হাইট ক্যাপ ইনস্টিটিউট করতে পারতো তবে তাদের সমস্ত কমিউনিটিই ভালো করতো। এখন যে পরিমাণ শক্তি তারা ঊর্ধ্বমূখী ভাবে দৌড়ানোর জন্য খরচ করে সে শক্তি তারা অন্য কোনো কাজে ব্যয় করতে পারতো যেমনঃ দূরে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য অধিক পাইনকন সৃষ্টি, নতুন টেরিটরি বিস্তার।
প্রতিযোগিতা এক্ষেত্রে সমস্ত প্রজাতিকে পেছনে রাখতো। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত রেডউড বৃক্ষ হাইট ক্যাপ কার্যকর করার জন্য কো-অর্ডিনেট হতে পারেনা। এখানে কোনো ভারসাম্য নেই কোথায় থেকে সকল গাছ তাদের প্রজাতির ভালোর জন্য নিজের বৃদ্ধি হ্রাস করবে। যদি রেডউডের জনসংখ্যা কোনোভাবে নিজেকে সংযত করে, তবে সকল বৃক্ষের র্যাঙ্ক ব্রেক করার জন্য একটি স্বতন্ত্র বৃক্ষের শুধু কয়েকটি মিউটেশন লাগবে এবং সূর্যের আলো সেই গুন্ডা রেডউড একাই শোষণ করবে। এই দুর্বৃত্ত বৃক্ষ তারপর থেকে সূর্য থেকে আরও শক্তি শোষণ করতে থাকবে। আর এভাবে সে তার প্রতিযোগীদের পেছনে ফেলে আরও অধিক থেকে অধিকতর বংশধর রেখে যাবে। সে নিশ্চিত করবে যেনো নতুন প্রজন্মের রেডউডরা অনেক বেশি প্রতিদ্বন্দ্বী ও প্রতিযোগিতামূলক হয়। যেহেতু তার জিন এগ্রেসিভ , তার সন্তানরাও হবে এগ্রেসিভ। তারা তুমুল প্রতিযোগিতা করবে সূর্যের আলোর অতিরিক্ত ভাগ পেতে। এভাবে দেখা যাবে পরবর্তী প্রজন্মের রেডউডরা একে অন্যের সাথে তুমুল প্রতিযোগীতা করে আবার পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসবে। এখন তারা সবাই লম্বা। আর অন্যের ছায়া যেনো তাদের মৃত্যুর কারণ না হয় সেজন্য তারা অন্ধভাবে তাদের উচ্চতা বৃদ্ধি করতেই থাকবে, যেনো আকাশ ছোঁয়ার অদম্য বাসনা।
কিন্তু আমাদের প্রজাতি আলাদা। আমরা সামনের দিকে তাকাতে পারি। অন্যান্য ন্যাচারাল প্রসেস থেকে ভিন্নভাবে, আমরা ভবিষ্যৎ দেখতে পারি। আমরা অপচয়মূলক প্রতিযোগিতা এড়িয়ে যেতে পারি , আমাদের কর্মকে নিয়ম ও আদর্শ প্রয়োগের মাধ্যমে সমন্বয় করতে পারি। যা আমরা পরে আলোচনা করবো।
তথ্যসূত্রঃ
CHAPTER 2
1 Wikipedia, s.v. “Sequoia sempervirens,” last modified February 18, 2017,
https://en.wikipedia.org/wiki/Sequoia_sempervirens. Actually, redwoods have adaptations that
allow them to absorb moisture directly from fog, through their needles, so they don’t have to
transport all of it from the ground. But still, they get most of their water from their roots.
2 Angier 2008.
3 Dunbar 2002, 2003.
4 Ridley 1993.
5 Pinker and Bloom 1990.
6 Trivers 2011.
7 Social competition may be a necessary factor, but it’s far from sufficient, especially given that
other species exhibit plenty of social competition and yet haven’t evolved the same intelligence
we have. For more on some of the unique conditions our ancestors faced, see Box 3 in Chapter
3.
8 For good popular overviews, see Geoffrey Miller’s The Mating Mind (2000) or Matt Ridley’s
The Red Queen (1993).
9 There may still be differences, however, like a male preference for female youth. See Ridley
1993, 272–95.
10 Ibid., 341.
11 Technically, a peacock’s tail is called a “train.”
12 Henrich and Gil-White 2001.
13 Cheng et al. 2013.
14 Wikipedia, s.v. “Great Purge,” last modified February 22, 2017,
https://en.wikipedia.org/wiki/Great_Purge.
15 Truth be told, what we call “prestige” is often dominance in disguise. We like to appear to have
and associate with prestige, but to actually have and associate with dominance.
16 Economists call these side effects “externalities.”
17 Actually, in ancient Greek, “political” refers to the polis or city. Thus humans, for Aristotle,
were more precisely “animals of the city.” Nevertheless, the word “political” has evolved over
the years, such that we now use it to describe behavioral patterns that don’t necessarily take
place in the polis.
18 De Waal 1982. Fun fact—in 1994, the (human) politician Newt Gingrich, then the U.S. Speaker
of the House, made Chimpanzee Politics required reading for first-year members of Congress.
19 De Waal 2005, 45.
20 Connor, Heithaus, and Barre (1999) on dolphins; Wittemyer, Douglas-Hamilton, and Getz
(2005) on elephants.
21 Dessalles 2007, 356.
22 Bucholz 2006.
23 For readers more familiar with modern guides to getting ahead, a similar contrast exists between
Robert Greene’s 48 Laws of Power (1998) and Dale Carnegie’s How to Win Friends and
Influence People (1936).
24 Cf. Ayn Rand’s statement, “Judge, and be prepared to be judged” (Rand and Branden 1964, 71).
25 Some biologists use a more precise definition of a signal, namely, any trait or behavior that
evolved in order to modify the behavior of the receiver in ways that benefit the sender. For more
on this, see Box 8 in Chapter 7.
26 “Expense,” here, is a broad notion, which may include material resources, energy, time,
attention, physical risk, or social risk—or anything else correlated to an organism’s reproductive
success. See Miller 2009, 115.
27 Számadó 1999; Lachmann, Szamado, and Bergstrom 2001; Pentland and Heibeck 2010, 17.
28 Zahavi 1975.
29 Or as the 18th-century American preacher Jonathan Edwards put it: “Godliness is more easily
feigned in words than in actions” (1821, 374).
30 As the philosopher Arthur Schopenhauer wrote about sexual love: “It is the ultimate goal of
almost all human effort… . It knows how to slip its love-notes and ringlets even into ministerial
portfolios and philosophical manuscripts” (1966, 533)


