আপনি কি জানেন, এভাটরের নীল মানুষ পৃথিবীতেও আছে? পূর্ব কেনটাকির ফুগেটস পরিবারের প্রতিটি সদস্যের গায়ের রঙ নীল। স্কিনের এ কন্ডিশনকে বলা হয় মেথিমোগ্লোবিনেমিয়া। এটি এমন এক ধরণের হিমোগ্লোবিনের কারণে হয়ে থাকে যেটি রক্তের মধ্যে সঠিকভাবে অক্সিজেন বহন করেনা ___ আর রক্ত যেহেতু অক্সিজেনেটেড হচ্ছেনা, এটি স্কিনকে নীল করে দেয়, ঠোঁট হয়ে যায় বেগুনী আর এদের রক্ত হয় চকলেট কালার! অধিকাংশ মানুষের ১ শতাংশ মেথিমোগ্লোবিনেমিয়া আছে।

যখন এ লেভেল ১০-২০ মাত্রায় উন্নিত হয়, স্কিন নীল হয়ে যায়৷ তবে এ ধরণের জেনেটিক কন্ডিশন কোন হেলথ প্রবলেম তৈরি করেনা কিন্তু ফুগেটস পরিবারের উপর এটি একপ্রকার সাইকোলজিক্যাল ইফেক্ট তৈরি করে যার ফলে তার পাবলিক লাইফ থেকে দূরে সরে যায়। এক কথায় মেথিমোগ্লোবিনেমিয়া হলো একপ্রকার ব্লাড ডিজ-অর্ডার যা ইফেক্টিভলি অক্সিজেন রিলিজ হতে দেয়না।
হিমোগ্লোবিনই আমাদের দেহে অক্সিজেন ভাগ করে এবং অক্সিজেন ছাড়া, হার্ট, ব্রেন ও মাসল মারা যায়। আর এ জন্য নীল রঙের মানুষদের নিশ্বাঃসে কষ্ট হয়। নীল মানুষদের শরীরে অটোসোম্যাল রিসেসিভ জিন থাকে বলেই তাদের মধ্যে মেথিমোগ্লোবিনেমিয়া সৃষ্টি হয়। ১৯৬০ সালে মার্টিন ফুগেটস নামক একজন ব্যক্তি এলিজাভেথ নামক একজন নারীকে বিয়ে করেছিলেন তারা বসতি স্থাপন করেছিলেন কেনটাকির ট্রাবলসম ক্রিক নামক একটি পাহাড়ে যেখানে কোনো রেল সংযোগ ছিলোনা ।

নীল রঙের মানুষ হওয়ার পেছনে CYB5R3 জিনকে দায়ী করা হয়। এটি এমন এক এনজাইম তৈরির নির্দেশ দেয় যাকে সাইটোক্রোম B5 এবং রেডিউক্টোস 3 বলে। এই এনজাইম এক অণু থেকে অন্য অণুতে নেগেটিভ চার্যযুক্ত ইলেক্ট্রন স্থানান্তর করে থাকে। এ জিনের মিউটেশনই মেথিমোগ্লোবিনেমিয়ার কারণ। বিচ্ছিন্ন পাহাড়ে বাস করার কারণেই ফুগেটস পরিবার নিজেদের সাথে নিজেরাই ইন্টারব্রিড করতে বাধ্য হয়৷ আর এতে করে সেই পরিবারের সবাই নীল হয়ে যায় এবং সমাজ তাদেরকে একটা সময় প্রত্যাখ্যান করে।
মেথিমোগ্লোবিনেমিয়া একধরনের জেনেটিক কন্ডিশনে যার ফলে গায়ের রং নীল হয়ে যায়। মেথিমোগ্লোবিনেমিয়া হলো একধরনের Autosomal (ক্রোমোজোম X এবং Y বাদে অন্য যে কোনও ক্রোমোজোম) Recessive (যেসব জিনের প্রভাব তাদের প্রতিলিপি ডমিন্যান্ট জিনের প্রভাবের ফলে প্রকাশিত হতে পারেনা) Congential (জন্মগত) জেনেটিক কন্ডিশন যার ফলে রক্তে মেথেমোগ্লোবিনের পরিমাণ ২% থেকে ১০ থেকে ৫০% পর্যন্ত হয়ে যায়। সাধারণ অবস্থায় রক্তের হিমোগ্লোবিন (Fe+2, ফেরাস স্টেটে) দেহের বিভিন্ন অংশে অক্সিজেন সরবরাহ করে থাকে। এই হিমোগ্লোবিনের খুব সামান্য অংশ (২%) ফেরিক অর্থাৎ Fe+3 স্টেটে থাকে যা হিমোগ্লোবিনের মতো সমপরিমাণে অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারেনা। এই ফেরিক ষ্টেটের হিমোগ্লোবিনকেই মেথেমোগ্লোবিন বলা হয়। CYB5R3 বলে এক জিন হিমোগ্লোবিনের ফেরাস স্টেটের সাম্যতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। কিন্তু এই Autosomal-Recessive-Congential মেথিমোগ্লোবিনেমিয়া কন্ডিশনে CYB5R3 জিনের মধ্যে কিছু মিউটেশন দেখা যায়, যা ফেরিক (Fe+3, মেথেমোগ্লোবিন) থেকে ফেরাস (Fe+2, হিমোগ্লোবিন) তৈরির পরিমাণও কমিয়ে দেয়। জন্মগত এই মিউটেশন থাকার ফলে শরীরে মেথেমোগ্লোবিনের পরিমাণ ১০ থেকে ৫০% অবধি বৃদ্ধি পেতে পারে ফলস্বরূপ শরীরে কম অক্সিজেন সরবরাহ হয় এবং তারা নীল হয়ে যায় ।( Ovijit)
তথ্যসূত্রঃ
- Finding The Famous Painting of the Blue People of Kentucky
- CYB5R3 cytochrome b5 reductase 3 [ H*o*m*o sapiens (human) ]