অ্যালিয়েন নিয়ে সেরা বই কোনটি? এ প্রশ্নটির উত্তর দেওয়া একটু কঠিন কারণ আমরা এখনো নিশ্চিত জানি না অন্য কোনো গ্রহে আমাদের মত জীবনের অস্তিত্ব আছে কিনা! তবে আমরা একটা ব্যাপার খুব নিশ্চিতভাবে জানি যে তাদের গ্রহের ফিজিক্সের সূত্র আমাদের গ্রহ থেকে পৃথক নয়, আমরা যে বিবর্তনীয় প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে বর্তমান বুদ্ধিমত্তা প্রাপ্ত হয়েছি! তারা আমাদের চেয়ে বুদ্ধিমান হোক বা না হোক! তাদের অস্তিত্ব থাকুক বা না থাকুক! তারা যদি আজ থেকে এক বিলিয়ন বছর পরও উৎপত্তি লাভ করে আমরা আমাদের বিবর্তনীয় প্রসেস বিশ্লেষণ করে তাদের সম্পর্কে ধারণা করতে পারি! আর এটাই আমাদের নিকট একটি প্রশ্নের উত্তর দেয় Why Extraterrestrial Life May Not Seem Entirely Alien!

সহজ কথা অ্যালিয়েনরা বায়োলজক্যালি সম্পূর্ণরূপে অ্যালিয়েন হতে পারবে না কারণ আমাদের গ্রহের থার্মোডায়নামিক্সের সেকেন্ড “ল” তার গ্রহ থেকে একদম অ্যালিয়েন নয়! শারীরিক ও মানসিক বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে সে আমাদের থেকে এলিয়েন হতে পারে কিন্তু যেহেতু সে ভিন্ন কোনো ফিজিক্সের সূত্র মেনে চলছে না, তার মধ্যে ভিন্ন কোনো বিবর্তনীয় প্রক্রিয়া কাজ করে না, আমার ও তার সাথে প্রাকৃতিকভাবেই একটা লিমিটিং ফ্যাক্টর এসে দাঁড়াবে যা তার আর আমার মধ্যে এমন কিছু বৈশিষ্ট্য বজায় রাখতে পারে যা সম্পূর্ণ অ্যালিয়েন হতে পারবে না ! অ্যালিয়েন হওয়া অসম্ভব! আর এ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি যে ব্যক্তি তার বইতে তুলে ধরেছেন তার নাম Arik Kerdhenbaun, যিনি একজন প্রাণীবিদ। আর আমার মতে এ পর্যন্ত অ্যালিয়েন সম্পর্কে লেখা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বইগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি তারই লেখা বই “The Zoologist’s Guide to the Galaxy: What Animals on earth Reveal About Alien__and Ourselves!

তিনি বলেন, বিবর্তন গ্রেভেটির মত প্রকৃতির একটি বিশ্বজনীন আইন , আর এজন্য আমাদের পৃথিবীর বৃক্ষ ও প্রাণীদের ভেতর লেখা আছে পটেনশিয়াল ওয়ার্ল্ডের প্রাণীদের বৈশিষ্ট্য যারা আমাদের থেকে মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে৷ তিনি এ প্রসেসের সাপেক্ষে একটি প্রমাণ পেয়েছেন। যে প্রক্রিয়াটিকে তিনি নামকরণ করেছেন ” বিবর্তনীয় অভিসারণ (Evolutionary Convergence)”। এ প্রক্রিয়ায় দেখা যায় বংশগতভাবে যার সাথে আপনার জেনেটিক্যাল কোনো সম্পর্ক নেই তার মধ্যেও আপনার মতো একই বৈশিষ্ট্যের বিবর্তিত হতে পারে পরিবেশগত চ্যালেঞ্জকে মোকাবিলা করার অভিযোজন হিসেবে! আর আর্গুমেন্টটি তিনি তার বইতে উপস্থাপন করেন।
কোয়ান্টা ম্যাগাজিনে তার এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, বিবর্তন মহাবিশ্বের সর্বত্র প্রাণের বিবর্তনের একমাত্র এক্সপ্লানেটরি মেকানিজম( ব্যাখ্যামূলক পদ্ধতি) ! আর তাই যে সকল মূলনীতির উপর ভিত্তি করে আমরা পৃথিবীর রহস্য উন্মোচন করি একই মূলনীতিগুলো মহাবিশ্বের যে কোনো গ্রহের জন্যই প্রযোজ্য হবে। তার মতে, কুকুর যেমন ফিজিক্স বোঝে না, তার কাছে যেমন আমার চেতনা অ্যালিয়েন ঠিক তেমনি ভিন্ন গ্রহের প্রাণীদের ক্ষেত্রেও অনেকটা তেমনই হতে পারে! শুধুমাত্র আপনার ও আপনার বৈশিষ্ট্যের একটা ন্যাচারাল এক্সটেনশন কাজ করবে তাদের মধ্যে। আমরা যদি লাখ লাখ বছর পর আমাদের গ্রহে একটা হারানো দ্বীপ খুঁজে পাই, আমরা তাদের বিবর্তনকে ঠিক কী দিয়ে বুঝবো? আমরা সাধারণত বিবর্তন সম্পর্কে আমাদের জগতে যা জানি সেই সাধারণ মূলনীতিগুলো দিয়েই তো? ঠিক তেমনি আমরা একই পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করবো যদি মহাবিশ্বে কোনো হারানো গ্রহ খুঁজে পাই যেখানে প্রাণ আছে! নিচে তার সেই সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলোঃ
- আপনি কীভাবে এত আত্মবিশ্বাসের সাথে কথা বলছেন যে ন্যাচারাল সিলেকশন বিবর্তনের পেছনে মূল চাবিকাঠি? এবং সেটা বিশ্বজনীনভাবে প্রয়োগ করা যায়? অনিবার্য?
তিনি বলেন, এমন কোনো গ্রহ নেই যেখানে জটিল জীব নিজে থেকে হুট করে জন্ম হয়েছে। অ্যালিয়েন প্লানেটের জীবনও খুব সরল অবস্থা থেকে যাত্রা শুরু করেছে। আর এখনো এটা সরলই আছে। এমনকি অনেক গ্রহে। কিন্তু এ সরল অবস্থা তখনই জটিলতর রূপে পুঞ্জিভূত হবে যদি সে অনুকূল পরিবেশ পায়। কেবল উদ্ভাবনী রূপগুলোই টিকে থাকে এবং প্রতিকূল রূপগুলি হারিয়ে যায় __আর এটা অবশ্যই ন্যাচারাল সিলেকশন দ্বারাই বিবর্তন।
- কিন্তু আমরা জেনেছিলাম আপনার বইয়ে অভিসারী বিবর্তন ( Convergent Evolution) নামক একটা কথা বলেছেন কিন্তু অভিসারী বিবর্তন বিষয়টি আসলে কী?
এর উত্তরে তিনি বলেন, কল্পনা করুন, দুটি প্রাণীর মধ্যে একই ধরনের পালক আছে। এ থেকে আমরা কি অনুমান করবো? নিশ্চয় তাদের একজন সাধারণ পূর্বসূরি ছিল? তারা নিশ্চয় মিলিয়ন বছর পূর্বে কোনো কমন এনসেস্ট্রি শেয়ার করেছে? আপনি কল্পনা করতে পারেন! ইয়েস! তাদের সাধারণ পূর্বসূরি ছিল ডায়নোসর! কেননা পাখাযুক্ত ডায়নোসর আধুনিক সকল ডায়নোসরের পূর্বসূরি। এটাকে বলা হয় রেগুলার ইভোলিউশন যেখানে সন্তানের মধ্যে তার পিতামাতার বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান থাকে। কিন্তু মাঝে মাঝে আপনি এমন অনেক প্রাণী দেখবেন যারা পূর্বসূরিদের কাছ থেকে সে বৈশিষ্ট্য পায়নি। যেমনঃ পাখিদের পাখার কাজ আর বাদুরের পাখার কাজের মধ্যে খুব একটা তারতম্য নেই। কিন্তু পাখি ও বাদুরের পূর্বসূরি হলো ক্ষুদ্র টিকটিকি আকারের সৃষ্টি যারা ৩০০ মিলিয়ন বছর পূর্বে বাস করতো, এমনকি ডায়নোসরদেরও পূর্বে। তার কোনো পাখা ছিল না, এমনকি আজ তার যে সকল উত্তরসূরি দেখা যায় হাতি অথবা কুমির তাদেরও মধ্যেও সৌভাগ্যবশত কোনো পাখা নেই। আর তাই দেখা যাচ্ছে যে পাখা সম্পূর্ণ ভিন্ন লাইনের উত্তরসূরিদের মধ্যে বিবর্তিত হয়েছে।
পাখার মতো অভিসারী বিবর্তনগুলো মাঝে মাঝে উপকারী হতে পারে। কিন্তু মাঝে মাঝে এ ধরনের অভিসারী বিবর্তন থেকে অদ্ভুতভাবে সম্পূর্ণ একইরকম একটি প্রাণী তৈরি হয়ে যেতে পারে যারা একে অন্যের সঙ্গে অজস্র বৈশিষ্ট্য শেয়ার করে। তখন তাদেরকে দেখে আপনার মনে হবে না যে তাদের সাথে আপনি কোনো পূর্বসূরি শেয়ার করেন নি। এক্ষেত্রে আমরা খুব সাম্প্রতিক বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া থাইলাসিনের( অস্ট্রেলিয়ার মূল ভূখণ্ডের একটি মার্সুপিয়াল প্রাণী) কথা বলতে পারি। এটাকে দেখলে আপনার মনে হতে পারে, এটি অদ্ভুত প্রজাতির এক কুকুর তবে কুকুরের সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই, এর সম্পর্ক ক্যাঙ্গারুর সাথে!

আর এখনও তার মত দেখতে যে সকল কোয়েটাস ও শেয়াল জীবন যাপন করছে তারাও অভিসারীভাবেই বিবর্তিত হয়েছে! পদার্থবিদ্যা এবং বায়োকেমিক্সের আইনগুলি এই গ্রহে প্রাণীদের গতিশীলভাবে বিকশিত হওয়ার উপায়গুলোকে সীমাবদ্ধ( Constrain) করে দেয় এবং তাই আমরা আশা করতে পারি যে, এ সীমাবদ্ধতাগুলো মহাবিশ্বের সর্বত্র কাজ করবে।
- আপনি বলেছিলেন, যে যখন দুটি জীব একই ধরনের পরিবেশগত সমস্যার মুখোমুখি হয় তখন তারা একই এডাপ্টিভ সলিউশন ব্যবহার করে। আপনি কি এটা সমস্ত মহাবিশ্বের জন্যই প্রযোজ্য মনে করেন?
তিনি বলেন, এক্ষেত্রে ফ্লাইটের ব্যাপারটাই খেয়াল করুন! আপনি যদি বায়ুমণ্ডলযুক্ত একটি গ্রহে বাস করেন অথবা সমুদ্র বা তরলে আপনি এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে চাইবেন। আর এ কাজ করার জন্য আপনার কাছে কয়েকটি উপায় আছে। আপনি যদি মিডিয়াম থেকে হালকা হোন আপনি ভেসে থাকতে পারেন। আর এরোডায়নামিক্যালি একটি ডানা নিয়ে লিফট তৈরি করতে পারেন। আর এটাই হলো নমনীয় মাধ্যমগুলোর মধ্যে চলার একমাত্র উপায়।
পৃথিবীতে উড়ার কৌশল ভিন্ন ভিন্ন চারটি সময়ে চারটি ভিন্ন ভিন্ন গ্রুপের মধ্যে বিবর্তিত হয়েছে। আর তারা হলো পাখি, বাদুড়, টেরোসর এবং পোকামাকড়। তারা এজন্য পাখা ব্যবহার করে না যে তারা পৃথিবীতে বিবর্তিত হয়েছে তারা এটি ব্যবহার করে কারণ উড়ার ক্ষেত্রে এর একটি উপযোগিতা আছে। আর পাখা হলো উড়ার জন্য একমাত্র উপায়! আর তাই আমরা প্রত্যাশা করতে পারি যে, এই সীমাবদ্ধতা( Constrain) বিশ্বের সর্বত্র কাজ করে।
তাহলে দেখা যাচ্ছে উড়ার জন্য পাখা আবশ্যক। তিনি বলেছিলেন যে জায়গায় প্রাণীদের উড়া আবশ্যক সেখানে তার ডানা বিবর্তিত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। কিন্ত আমরা এটাও দেখেছি নীল পাখি আর বাদুরের ডানা এক নয়। তিনি এর উত্তরে বলেন৷ বাদুর আর মৌমাছির ডানা আলাদা কিন্তু এই পার্থক্য শুধু ডিটেইলসের দিক থেকে, মূলনীতিগত দিক থেকে নয়। দুটো ডানার মধ্যেই মেমব্রেন থাকে যা দৃঢ় কাঠামো দিয়ে সমর্থিত। দুটোই লিফট তৈরি করে মেমব্রেনের উপর বাতাসের প্রবাহ সৃষ্টির মাধ্যমে। মূলত বাদুর আর মৌমাছির পাখার মধ্যে গঠনগত কোনো তারতম্য নেই, তারতম্য হলো এগুলোর ব্যবহারে। ক্ষুদ্র পতঙ্গরা বাদুরের মত সিম্পলি তাদের ডানা ঝাপটে উড়ে যেতে পারে না। তাদের ডানায় গুঞ্জন তৈরি করতে হয় সামনে ও পেছনে লিফট জেনারেট করার জন্য যা বাদুড় বা পাখি কেউই পারে না ৷
তাই বরং পৃথিবীতে অনেক বিস্ময়কর বৈচিত্র্য আমাদের বিভ্রান্ত করে। আমরা মূলত আমাদের প্রেডিকশনের ব্যাপারে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী কারণ আমরা দেখতে পাচ্ছি যে এ সমাধানগুলো আসলে কতটা শক্তভাবে সীমাবদ্ধ। হ্যাঁ পাখি,বাদুর ও মৌমাছির ভিন্ন ভিন্ন পাখা থাকে কিন্তু এগুলোর সবই একই শেষ ফলাফল অর্জন করে, তাদের উপর কাজ করা বিশাল শারীরিক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও।
ইভোলিউশনারী কো-ইনসিডেন্ট এর ইতিহাস সবসময় আকার ও অবয়বকে প্রভাবিত করে। আমাদের চারটি হাত ও পা কারণ আজ থেকে ৪০০ মিলিয়ন বছর পূর্বে আমাদের পূর্বসূরি মাছদের চারটি পিন ছিল যা দ্বারা তারা সমুদ্রে হামাগুড়ি দিতো। আমাদের খুব সহজ ভাবে ছয়টি পা থাকতো যদি বিবর্তনীয় ইতিহাস ভিন্ন ভাবে প্রভাব বিস্তার করতো। আর তাই সম্ভবত আমার ও অন্যান্য এলিয়েন গ্রহের প্রাণীদের মধ্যে কাছাকাছি কোনো মিল নেই কিন্তু কিছু বিষয় এতটাই সীমাবদ্ধ যে তাদের পক্ষে বিকল্প উপায়ে সেটা করা সম্ভবই ছিল না।
- জীবাশ্মবিদ এবং বিবর্তনতাত্ত্বিক স্টিফেন জে গুল্ড বলেছিলেন, আপনি যদি জীবনের ট্যাপকে পুনরায় রিপ্লে করেন এবং প্রাণ বিকাশের সুযোগ দেন তবে ফলাফল ভিন্ন হবে। মানে, আমাদের পৃথবীকে যদি পুনরায় চার বিলিয়ন বছর অতীত থেকে আবারও বিবর্তিত হতে দেয়া হয়, তবে হয়তো আমরা হোমো সেপিয়েন্স হিসেবে জন্ম নেব না কিন্তু আপনি হয়তো তর্ক করছেন নির্দিষ্ট ফলাফলের সম্ভাবনা না থাকলেও, একই ধরনের উদ্ভাবন বারবার আসবে?
এটা একদম ঠিক। স্টিফেন জে গুল্ড ও সিমন কোনওয়ে মোরিসের বিরাট বিতর্ক আছে। আমরা যদি জীবনের ট্যাপকে পুনরায় রিপ্লে করি তাহলে প্রতিবার কি একই ফলাফল আসবে? সঠিক উত্তর হলো, এটা অবশ্যই আলাদা হবে তবে কিছু বিষয় হবে একদম সেইম। আর সে বিষয়গুলোই একই হবে যা ফিজিক্স ও বায়োলজির আইন দ্বারা সুকঠিনভাবে সীমাবদ্ধ। বিবর্তনকে অনেকগুলো গাণিতিক নিয়মও পরিচালনা করে। তার মধ্যে একটি হলো সামাজিকতা। সামাজিকতা বিবর্তনের সুনির্দিষ্ট কয়েকটি চরিত্রের জন্য দেখা দেয় ফিজিক্সের জন্য নয়। এগুলোও সীমাবদ্ধতার(Constrain) মধ্যেই পড়ে কোনো ব্যাপারই না আপনি জীবনের টেপকে যতবারই রিপিট করেন না কেন!
- কোন সীমাবদ্ধতাগুলো পৃথিবীতে সামাজিকতার জন্ম দিয়েছে? আর কীভাবে আমরা সেগুলোকে অন্যত্র প্রয়োগ করতে পারি?
সহযোগিতা ও যোগাযোগ পৃথিবীতে খুবই বিস্তৃত। প্রথম দৃষ্টিতে এটি হতবুদ্ধিকর। কেনো দুটি অর্গানিজম কো-অপারেট করে? কিন্ত তারা উভয়ে উপকৃত হলে কো-অপারেট করবে এটা বোঝার জন্য আপনাকে অনেক বেশি দূরে যেতে হবে না। আর একই নিয়ম আমরা মহাবিশ্বের যে কোনো গ্রহের উপরই প্রয়োগ করতে পারি। আমরা বলতে পারি অন্যান্য গ্রহের প্রাণীরা একে অন্যের সাথে মিচুয়ালিস্টিক রিজনে সহযোগিতা করে কারণ এটি তাদেরকে বেনিফিট দেয়। কিন্তু পৃথিবীর অধিকাংশ যোগাযোগ, সহযোগিতা আত্মীয়তা দ্বারা চালিত। আমরা কো-অপারেট করি কারণ আমরা রিলেটেড। আমরা আমাদের শিশুদের খাওয়াই, আমরা আমাদের পিতামাতাকে সাহায্য করি। এগুলোর সবটাই ইভোলিউশনারি থিয়োরিতে ভালোই পাওয়া যায়। আমাদের চরিত্র, আমাদের বৈশিষ্ট্য ও আচরণ এক প্রজন্ম থেকে আর এক প্রজন্মে যায় জিনের মাধ্যমে। আমাদের জিন যদি আমাদের ভাইবোনদের সাথে কো-অপারেট করার জন্য আমাদের প্রবণতা তৈরি করে আমরা অধিক সফল হবো। তারাও সফল হবে। আর আমরা সবাই আত্মীয়তার জিন পাস করতে পারবো। কিন্তু সমস্যা হলো আমরা জানিনা অ্যালিয়েনদের জিন কেমন। আর তাই এটি হলো এমন কিছু যেটাকে আমরা বলতে পারি না যে জীববিজ্ঞানের অন্যান্য সীমাবদ্ধতাগুলোর মতোই সার্বজনীন। হতে পারে অ্যালিয়েন লাইফ একে অন্যের সাথে সম্পূর্ণ ভিন্ন উপায়ে রিলেটেড। আর তাই হতে পারে তাদের সমাজ সম্পূর্ণ ভিন্ন।
- আপনি প্রাণীদের যোগাযোগ সম্পর্কে ব্যক্তিগতভাবে গবেষণা করেছেন যেমনঃ নেকড়ে, ডলফিন বা অন্য কোনো প্রাণী। কীভাবে সে এরিয়ায় আপনার কর্ম আপনার চিন্তাকে ইনফর্ম করে? আপনি কি মনে করেন আমাদের পৃথিবীর প্রাণীদের মধ্যে যোগাযোগে ব্যবহৃত ইউনিভার্সাল বৈশিষ্ট্য অন্য গ্রহের অ্যালিয়েন কমিউনিকেশন বোঝার জন্য প্রযোজ্য হবে?
কখনো কখনো বিভিন্ন প্রাণীর শারীরিক বৈশিষ্ট্যগুলো লাফিয়ে উঠে ও আপনার মুখে আঘাত করে। তারা পৃষ্ঠের নিচে লুকিয়ে থাকে কিন্তু যখন আপনি তাদের দেখেন তখন তারা স্পষ্ট। এটা আমার কাছে পরিচ্ছন্ন হয় যখন আমি নেকড়েদের নিয়ে কাজ শুরু করি, ডলফিনের হুইসেল অধ্যয়ন করার পরে। আপনি যখন এদেরকে ভিজুয়ালি রিপ্রেজেন্ট করবেন তাদের গাণিতিক ট্রান্সফর্মেশন ব্যবহার করে যেটাকে বলে স্পেক্ট্রোগ্রাম, তাদেরকে দেখতে প্রায় একই মনে হবে। স্কেল থেকে দূরেঃ ডলফিনের হুইসেল অনেক সংক্ষিপ্ত ও উচ্চ। তাই আমি ডলফিনের হুইসেল স্লো করতে শুরু করি তখন এটা নেকড়ের চিৎকারের মত শোনাচ্ছিল। এ দুটি সাউন্ড আলাদা কিন্তু তাদের একই অন্তর্নিহিত স্ট্রাকচার রয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো কেন? এর উত্তর কঠিন। ডলফিন ও নেকড়ে দুজনেই এমন পরিবেশে দূর পরিসরে যোগাযোগের জন্য শব্দ ব্যবহার করে যেখানে শব্দগুলো বিকৃত ও শোষিত হয়। এজন্য বিভিন্ন রকমের তরঙ্গ ব্যবহার করা ঐ ধরনের পরিস্থিতিতে ইনফরমেশন প্রিজার্ভ করার জন্য জরুরি। একই ব্যাপার কি কোনো এলিয়েন লাইফের জন্যও সত্য? আমি মনে করি এটি সম্পূর্ণ যুক্তিসঙ্গত প্রস্তাব।
- ভাষার ক্ষেত্রে কি বলবেন?
আপনার প্রজাতি যদি যথেষ্ট বুদ্ধিমান হয় একটি স্পেসশিপ ও রেডিয়ো টেলিস্কোপ তৈরি করার জন্য তবে তার মধ্যে জটিল একটা কিছু থাকতে হবে।যা দিয়ে আপনি অজস্র মানুষের মধ্যে প্রচুর তথ্য শেয়ার করতে পারবেন যারা আপনার সাথে কাজ করছে। আপনার কনসেপ্টকে প্রকাশ করার জন্য আপনার কমিউনিকেশন সিস্টেম যদি যথেষ্ট নমনীয় হয় আপনি বিপুল সংখ্যক কনসেপ্ট বিনিময় করতে পারবেন।এটি সম্ভবত অসীম নমনীয় হবে এবং তাই এটি ভাষার সংজ্ঞা পূরণ করে। মানুষের মত যোগাযোগ করার জন্য জটিল ভাষা থাকতে হবে। কিন্তু বেশি জটিল নয়। মানুষের ভাষায় সরলতা ও জটিলতার সেই ভারসাম্য আছে। আরো অজস্র প্রাণী যোগাযোগ করে। আমাদের SETI প্রোগ্রামের মূল উদ্দেশ্য হলো এ ধরনের পারিসংখ্যানিক ভাষার সিগনাল খুঁজে পাওয়া কারণ এটি খুব সম্ভাব্য যে বুদ্ধিমানদের এ ধরনের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে যা বিশ্বের সর্বত্র বুদ্ধিমান যোগাযোগ ব্যবস্থাকে অপারেট করে।
আপনার বইতে আপনি বলেছিলেন, কৌতূহল দর্শনের নেতৃত্ব দেয়, সামাজিক মিথস্ক্রিয়া নেতৃত্ব দেয় শিল্পের, জটিল যোগাযোগ নেতৃত্ব দেয় সাহিত্য। সম্ভবত এ বৈশিষ্ট এতটাই অনিবার্য যে অ্যালিয়েনদের মধ্যে এগুলো দেখা যাবে। এটা শুনতে আপনার এমন মনে হতে পারে যে এ হাইপোথেটিক্যাল অ্যালিয়েনরা প্রায় মানুষের মত। কিছু কিছু গ্রহে শুধুমাত্র সিম্পল লাইফ পাওয়া যায়। অজস্র হয়তোবা অধিকাংশ। এবার কল্পনা করুন যে আমরা এমন একটি গ্রহের অস্তিত্ব খুঁজে পেলাম যেখানে এমন কিছু আছে যাকে আমরা বলি বুদ্ধি। কেউই এজন্য বুদ্ধিমান নই যে এর খুবই কুল একটা ব্যাপার আছেঃ এর কারণ হলো তাদের পূর্বসূরিরা এ বুদ্ধিমত্তা দ্বারা উপকৃত হয়েছে। যদি তারা এমন একটি পর্যায়ে চলে যায় যে তারা রেডিয়ো টেলিস্কোপ তৈরি করতে পারে তবে সেই পর্যায়ে যাওয়ার জন্য তাদের কৌতূহলী ও যোগাযোগ করতে সক্ষম হওয়াটা বেশ সুবিধাজনক।
- কিন্তু দর্শন,শিল্প ও সাহিত্য আপনাকে টিকে থাকার ক্ষেত্রে কি ধরনের উপযোগ দেয় তা কিছুটা অস্পষ্ট। জ্ঞানীয় মনোবিজ্ঞানী স্টিভেন পিঙ্কার যুক্তি দেখিয়েছেন যে, সঙ্গীত একটি দুর্ঘটনা হিসেবে গড়ে উঠেছে, এটির নিজস্ব বেঁচে থাকার কোনো মূল্য নেই। এমন কি সম্ভব আমরা অ্যালিয়েনদের খুঁজে পাবো যাদের প্রযুক্তিগত জিনিস আছে __রকেট ও টেলিস্কোপ কিন্ত শিল্প বা সাহিত্য নয়?
নিশ্চিতভাবে এটা সম্ভব। কিন্তু সম্ভবত এটি সম্ভব নয়। কারণ এ সকল বৈশিষ্ট্য যা আমরা অনুমোদন দিয়েছি যেমন কিউরিওসিটি, কমিউনিকেশন ও ভাষা এগুলো রেডিয়ো টেলিস্কোপ তৈরির উদ্দেশ্যে বিবর্তিত হয়নি। এগুলো বিবর্তিত হয়েছে সোশ্যালিটিকে সাপোর্ট করার উদ্দেশ্যে। আমাদের পূর্বসূরিরা সায়েন্টিফিক রিসার্চ পেপার লেখার বহু লক্ষ বছর পূর্বেই গান গাইতো ও নৃত্য করত। পৃথিবী ছেড়ে দিয়ে অ্যালিয়েন খোঁজার জন্য এগুলো বিবর্তিত হয়নি। এগুলো বিবর্তিত হয়েছে কারণ এর আছে সামাজিক উপযোগিতা। এটা ভাবতে ভালো লাগে যে, উন্নত সভ্যতার হয়তো দর্শন ও সংস্কৃতি নেই। কিন্ত প্রি-টেকনোলোজিক্যাল প্রজাতিদের মধ্যে এগুলো বিবর্তিত হয়। প্রি-টেকনোলজিক্যাল সোসাইটি যদি আজ আমরা যা নির্মাণ করেছি তা নির্মাণ করতে চায়, সম্ভাবনা আছে যে তারা এমন একটি বিল্ডিং ব্লক তৈরি করতো যা সামাজিক উদ্দেশ্য পূরণ করে যেমনঃ গ্রুপ মেম্বারদের মধ্যে সম্পর্ক, গ্রুপের সদস্যদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ইনফরমেশন ও উপকারী তথ্য আদান প্রদান। আর এজন্য প্রি-টেকনোলজিক্যাল সোসাইটি অবশ্যই গান ও নৃত্য করেছে এবং একে অন্যকে গল্প বলেছে কারণ এটি সামাজিক উদ্দেশ্য পূরণ করে।
কিছু বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানী বিবর্তনীয় অভিসারী যুক্তির উপর সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। যেখানে বিশেষ করে বুদ্ধিমত্তার গুণ সম্পর্কযুক্ত। আমরা আশ্চর্য হয়েছি যে মানুষ, ডলফিন এবং অক্টোপাসের মধ্যে কিছু মাত্রায় বুদ্ধিমত্তা বিবর্তিত হয়েছে কিন্তু তাদের তিন জনেরই একটি সাধারণ পূর্বসূরি রয়েছে। প্রায় একশ মিলিয়ন বছর অতীতে তারা একে অন্যের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
এবার মানুষ ও অক্টোপাসের কথা চিন্তা করুন। তাদের সাধারণ পূর্বসূরি প্রায় ৮০০ মিলিয়ন বছর পূর্বে বাস করতো। এটি ছিল ক্ষুদ্র একটি আঠালো বল। এবং এই সমস্ত ছোট আঠাল বলগুলির উত্তরসূরিই আজকের পৃথিবীর প্রতিটি স্বতন্ত্র কোরাল এবং জেলিফিশ এবং সে ধরনের প্রাণীগুলো। মানুষ ও অক্টোপাসের সাধারণ পূর্বসূরি পৃথিবীর প্রায় সকল প্রাণীর সাথেই শেয়ার করা হয়েছে। কেন তাদের মধ্যে কয়েকজনই কেবল বুদ্ধিমান যদি তারা প্রত্যেকে সে সাধারণ পূর্বসূরি শেয়ার করে?
এর উত্তর হলো তারা উন্নত হয়েছে স্বাধীনভাবে। তাদের বুদ্ধিমত্তা সাধারণ পূর্বসূরি থেকে আসেনি। পাখি ও বাদুড়ও সাধারণ পূর্বসূরি শেয়ার করে, নিশ্চিত। কিন্তু তাদের সকল উত্তরসূরি উড়তে পারে না। তাদের কোনো পাখাও নেই। পাখা বিবর্তিত হয় স্বাধীনভাবে। আমাদের সকল বৈশিষ্ট্য সাধারণ পূর্বসূরিদের উপর নির্ভরশীল এ ধারণা ভুল। আরও পড়ুনঃ ২০২১ সালে এলিয়েনদের নিয়ে ৯ টি শিক্ষা
- আপনি হয়তো জানেন SETI কে বর্তমানের মূলধারার জ্যোতির্বিদ্যায় স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। এবং এখানে আমাদের নিজস্ব সোলার সিস্টেমে আমরা রোবটিক স্পেসক্রাফট ব্যবহার করি মঙ্গল গ্রহের অতীতের জীবন সম্পর্কে জানার জন্য। এবং আমরা খুব শীঘ্রই এনসেলিডাস আবিষ্কার করি এবং অন্য চন্দ্র। আপনার সে সকল মানুষ সম্পর্কে কি গবেষণা যারা সক্রিয়ভাবে বুদ্ধিমান জীবন অনুসন্ধান করছেন? পৃথিবীর বাহিরে তা সরল বা জটিল যাই হোক?
আমি এখনো মনে করি তাদের প্রচেষ্টা প্রাসঙ্গিক। যতই অবিশ্বাস্য হোক না কেন এটা খুবই প্রসঙ্গিক। এর কারণ হলো আমরা এখন সে পর্যায়ের কাছাকাছি চলে এসেছি যেখানে আমাদেরকে অ্যালিয়েন জীবনের জীববিজ্ঞান ও বাস্তুতন্ত্র সম্পর্কে ভাবতে হবে। এবং এ মুহূর্তে আমরা এটি করছি, আমাদের তাদের বিবর্তনীয় গতিপথ সম্পর্কে জানতে হবে। এ ব্যাপারে আমি আপনাকে একটা উদাহরণ দিতে পারি। আপনি সম্ভবত জানেন সাম্প্রতিক ফোসপাইন সিগনাল সম্পর্কে। মনে করুন, এটি বাস্তব এবং জীবনের জন্য ইন্ডিকেটিভ। পরবর্তী প্রশ্ন হলো, এ ধরনের জীবন কীভাবে বিবর্তিত হলো? মনে করুন নাতিশীতোষ্ণ বায়ুমন্ডলে এই ভাসমান মাইক্রোস্কোপিক জীবগুলো রয়েছে। তারা এখানে কোথা থেকে এলো? কীভাবে তাদের মধ্যে এ জটিলতা বিবর্তিত হলো? আমরা এমন একটি পর্যায়ে চলে এসেছি যে অন্যান্য গ্রহে জীবন শনাক্ত করার জন্য আমাদের যথেষ্ট সংবেদনশীল প্রযুক্তি রয়েছে। কিন্তু এটা আপনাকে বলবে না তারা কীভাবে এখানে এসেছে। এটা আপনাকে তাদের বাস্তুতন্ত্র এবং তারা সেই অ্যাবায়োটিক পরিবেশে অন্যান্য জীবের সাথে কীভাবে ইন্টারেক্ট করে এ ব্যাপারে কিছুই বলবে না। কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে ব্যাপারটি তা হলো এটি আপনাকে বলবে না তারা কীভাবে বিবর্তিত হয়েছে। আর এটা হলো এমন একটি প্রশ্ন যা এস্ট্রোবায়োলজিস্টদের ভাবতে হবে।


