বিচ্ছেদের এক পর্যায়ে মানুষের চরম পিপাসা কাজ করে। সে বারবার পান পান করে কিন্তু পিপাসা মেটে না। কিন্তু এটা কেন হয়? আসলে একজন মানুষের সাথে বিচ্ছেদের পর মস্তিষ্কের হর্মোনাল ফিল্ড বন্ধ হয়ে যায়। মস্তিষ্ক তখন আপনার শরীরকে সিগন্যাল দেয়, আমার টিকে থাকার জন্য হর্মোনাল ইনপুট প্রয়োজন কিন্তু আমি সেটা পাচ্ছি না। এ সময় মস্তিষ্ক আমাদের মধ্যে একপ্রকার নিউরোকেমিক্যাল ভ্যাকুয়াম তৈরি করে, এখান থেকে “তৃষ্ণা”, “অস্বস্তি” ও “অন্তসারশূন্যতার” অনুভূতি তৈরি হয়। আমরা যখন কারও সাথে রোম্যান্টিক ও সেক্সচুয়াল সম্পর্ক গড়ে তুলি তখন আমাদের শরীরে অক্সিটোসিন, ডোপামিন ও সেরেটোনিন লেভেল বুস্ট হয়। আর যখন আপনি তার শব্দ, দৃশ্য, স্পর্শ ও ইমোশনাল সিকিউরিটি থেকে বঞ্চিত হন, তখন আপনার স্নায়ুতন্ত্র ও আবেগ অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে। আপনি যখন পানি পান করেন, শরীরের কোষগুলোর চাহিদা পূরণ হয়, কিন্তু আপনার লিম্বিক সিস্টেম এবং রিওয়ার্ড সার্কিট শূন্য থেকে যায় — আপনার মস্তিষ্ক আপনার ভালোবাসার মানুষের সাথে হারানো সংযোগ অনুসন্ধান করে, পানি নয়, তার প্রয়োজন হর্মোন। এ অনুভূতিকে বলা হয় “Attachment Withdrawal”! আপনি যদি মহাবিশ্বের সকল পানিও পান করেন, আপনার হৃদয়ের ঘরটা শূন্যই থেকে যায়। এটি একটি নিউরোকেমিক্যাল শক।
ইমোশনাল ডিহাইড্রেশন বিচ্ছেদের পর সবচেয়ে ভয়ানক ও মর্মান্তিক স্টেজ। এ সময় আপনার হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়, ঘুমের পরিমাণ কমে যায়, হজমের গোলমাল হয়, দুঃস্বপ্ন ট্রিগার হয়, শরীরে কর্টিসল লেভেল বেড়ে যায় ও ইমিউন সিস্টেম ভেঙে পড়ে। দীর্ঘদিন আপনি যদি এ অবস্থায় থাকেন, তবে আপনার অটোইমিউন ডিজিজ ও কার্ডিয়াক এরেস্ট হতে পারে। এটাকে বলে সাইকোজেনিক ডেথ। সাইকোজেনিক ডেথ হলো এমন এক মানসিক মৃত্যুপ্রক্রিয়া, যেখানে মস্তিষ্ক নিজেই শরীরকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়, কারণ সে আর “বাঁচার ইচ্ছা” ধরে রাখতে পারে না। এ সময় ব্যক্তি সেলফ সুইসাইডিয়াল হয়ে যায়। অতিরিক্ত স্ট্রেস ও ট্রমা তার সিম্পেথেটিক নার্ভাস সিস্টেম বিকল করে দেয় যা তার শরীরের অঙ্গপ্রতঙ্গ বিকল করে দিতে পারে।
আপনি যখন কাউকে ভালোবাসেন, আপনি তার অস্তিত্বের মাঝে নিজেকে হারিয়ে ( Dissolve) ফেলেন। আপনি তখন তাকে ছাড়া নিজের স্বতন্ত্র অস্তিত্ব চিন্তা করতে পারেন না। এজন্য নিজে ভেঙ্গে চুরমার করে নতুন করে গড়ে তোলার যুদ্ধটা খুবই কঠিন হয়। দীর্ঘ সময় ইমোশনাল ডিহাইড্রেশনে থাকলে ব্যক্তির প্রি-ফ্রন্টাল কর্টেক্স দুর্বল হয়ে যায়। সে যুক্তিসংগত কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। তার মধ্যে ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেশন, সাইকোসিস ও ডিসেসিয়েশন দেখা দেয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এটাকে বলে “Broken Heart Syndrome”। এখন প্রশ্ন এখান থেকে বের হওয়ার জন্য আমাদের কি করণীয়?
ভালোবাসার মানুষ হারিয়ে গেলে, আপনার মস্তিষ্কের ডোপামিন লুপ ভেঙে যায়। আর তাই এ ডোপামিন লুপ ফিরিয়ে আনার জন্য আপনাকে সৃজনশীল কাজ করতে হয় যেমন লেখালেখি, ছবি অংকন ও সংগীত চর্চা। নিয়মিত ফিজিক্যাল এক্সারসাইজ করতে হয়, প্রকৃতির সংস্পর্শে যেতে হয়, সবুজ বৃক্ষ, সূর্যের আলো ও সমুদ্রের সংস্পর্শ আপনার ডোপামিন লুপ পুনরায় সেট হতে সাহায্য করে। অক্সিটোসিন লুপ ফিরিয়ে আনার জন্য আপনাকে সবসময় পশুপাখির সংস্পর্শে থাকতে হবে, সমাজের মানুষের সাথে আলিঙ্গন করতে হবে, তাদের চোখে চোখ রেখে কথা বলতে হবে। আপনি যার সাথেই আলোচনা করবেন, আপনার আলোচনা যেন গভীর ও সৎ হয়।
বিচ্ছেদ চলাকালীন মানুষের নার্ভাস সিস্টেম হাইপার একটিভ থেকে। এজন্য শরীর ও মনের সাথে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। আপনি যদি দেহ ও মনের সাথে সিনক্রোনাইজেশন তৈরি করতে চান, আপনার স্নায়ুতন্ত্র স্থির করতে হবে। স্নায়ুতন্ত্র স্থির করার জন্য ইয়োগা, মেডিটেশন ও শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম করতে হয়। সঠিক সময় স্নান করতে হয়, শরীর ম্যাসাজ করতে হয় ও ভোর বেলায় নরম আলোয় সময় কাটাতে হয়। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে মানুষ ইমোশনাল ডিহাইড্রেশন থেকে মুক্তির উপায় জানে না, যা তাকে ক্রমাগত মৃত্যুর দিকে টেনে নিয়ে যায়।
Reference:
🧠 Psychogenic Death (Give‑Up‑Itis / Voodoo Death)
- Stumpfe, K. D. (1979): “The psychogenic death of Mr. J. A. A case report.”
একটি ক্লাসিক কেস রিপোর্ট, যেখানে কোনো নির্দিষ্ট শারীরিক কারণ ছাড়া মানসিক ট্রমা থেকে দ্রুত মৃত্যু হয় Big Think+4PubMed+4Wikipedia+4 - Leach, J. (University of Portsmouth): ‘Give‑Up‑Itis’ রিভিউ
গভীর মানসিক ক্ষয় থেকে “psychogenic death” এর পাঁচ ধাপ ব্যাখ্যা করে; দেখায় কিভাবে চিন্তা-ভাবনা শরীরে মৃত্যুর কারণ হতে পারে PMC+3EurekAlert!+3Big Think+3 - ডেটা ও সামাজিক-মানসিক প্রেক্ষাপটে Voodoo Death
Walter Cannon-এর ধারণা ও cross-cultural পর্যালোচনা, যেখানে মানসিক চাপ “ভয়ের কারণে শরীরীয় মৃত্যু”তে প্ররোচিত করতে পারে Wikipedia+1EBSCO+1
❤️ Broken Heart Syndrome / Takotsubo Cardiomyopathy
- Harvard Health Review (2023): Broken‑Heart Syndrome Overview
Severe emotional stress দ্বারা হৃদপিণ্ড দুর্বল হয়ে ওঠে কীভাবে, এবং যারা “Broken Heart Syndrome”-এ মারা যেতে পারেন, তার ক্লিনিক্যাল বিশ্লেষণ PMC+15health.harvard.edu+15economictimes.indiatimes.com+15 - PMC Review: Takotsubo Syndrome – intl. registry data
Grief বা extreme negative stress-triggered heart failure-এর রিপোর্ট সহকারে prevalence এবং clinical features বিশ্লেষণে শীর্ষস্থানীয় গবেষণা protomag.com+15PMC+15ScienceDirect+15 - Frontiers in Psychology (2017): Emotional vs Physical trigger in TTC
Emotional stress-triggered Takotsubo cardiomyopathy-এর রোগীর ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি বিপদ বেশি—এটি সরাসরি ইমোশনাল ট্রমা ও স্ট্রেসের সাথে সম্পর্কিত health.harvard.edu+2Frontiers+2nypost.com+2 - Journal of the American Heart Association (2025) Study
Men-এর ক্ষেত্রে গুরুতর অবস্থার (cardiogenic shock, heart failure, stroke ইত্যাদি) প্রবণতা এবং mortality রেট জানায়; পুরুষদের জন্য বিপদ বেশি sfchronicle.com+2people.com+2nypost.com+2
📉 Mental Stress‑Induced Cardiovascular Impact
- Mental Stress‑Induced Myocardial Ischemia (MSIMI): Current Cardiology Reports, JAMA ইত্যাদি
Psychological stress-driven cardiac ischemia সম্পর্কিত গবেষণা, যা বিশ্লেষণ করে কিভাবে মানসিক চাপ হৃদয়কে অস্বাস্থ্যকরভাবে দুর্বল করতে পারে Wikipedia