আমাদের ব্রেন কী সেলিব্রেটিদের জন্য বিবর্তিত? ডারউইনের কাছে কী কোন উত্তর আছে?
মার্ক টোয়াইন একবার বলেছিলেন, আমি দুঃখিত যে আমি এ চিঠিটি এর থেকে ছোট আকারে লিখতে পারি নি কারণ এর থেকে সংক্ষিপ্ত চিঠি লিখার সময় আমার ছিলো না!
এ উক্তিটি অনেকগুলো উক্তির মধ্যে একটি যা আমি আমার জীবনে অনেকবার ব্যবহার করেছি। কিন্তু একদিন আমি বন্ধুদের কাছ থেকে জানতে পারলাম যে এটি আসলে মার্ক টোয়াইনের উক্তি নয় এটি তার চেয়ে কম পরিচিত ফ্র্যান্সের একজন চিন্তাশীল ব্যক্তির উক্তি, যার নাম ব্লেইজ প্যাস্কেল। যিনি ১৬৫৭ সালের একটি চিঠিতে এ উক্তিটি করেছিলেন। পরে আমি আবিষ্কার করি যে আসলে তারা সত্য ছিল। এটি একমাত্র উক্তি নয় যার জন্য আমি অপমাণিত হয়েছি। এমন আরো অজস্র উক্তি আছে যা আমরা সেলিব্রেটিদের উপর আরোপ করি। আইনস্টাইনের E= mc2 এর বাহিরে তার একটি বিখ্যাত উক্তি প্রচলিত যে, ” উন্মাদনার ডেফিনিশন হলো ভিন্ন ভিন্ন ফলাফল পাওয়ার জন্য একই কাজ বারবার করা। ” এ উক্তিটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৮১ সালে, এ মহান ব্যক্তির মৃত্যুর ২৫ বছর পর। আমরা এটা নিশ্চিত নই যে আইনস্টাইন নিজে এ শব্দগুলোর প্রতিটি উচ্চারণ করেছেন, এমন কোনো রেকর্ড নেই। এরকম অজস্র অজস্র অজস্র উদাহরণের অস্তিত্ব আছে। বেঞ্জামিন ফ্রাংকলিন, মার্টিন লুথার কিং সম্ভবত জীবনে এতকথা বলেননি এ পর্যন্ত পৃথিবীতে তাদের যতগুলো উক্তি আছে। কারণ আমরা তাদের উক্তি ব্যবহার করতেই ভালোবাসি যারা বিখ্যাত ও জ্ঞানী। আমরা এ উক্তিগুলোকে ভুলভাবে বিতরণ করি আর এর কারণ আমরা সেলিব্রেটিদের অনেক বেশি ক্রেডিট দিতে চাই! জিশু অথবা মোহাম্মদ সম্পর্কে যত উক্তি প্রচলিত আছে, আমার তো মনে হয়না এত সংক্ষিপ্ত জীবনে তারা এতগুলো কথা বলে গেছেন! যদি একজন ব্যক্তি প্রতি সেকেন্ডে একটি করে শব্দ উচ্চারণ করেন এবং এভাবে ৬৪ বছর অতিবাহিত হয়, তাহলেও তার পক্ষে এত বেশি উক্তির জন্ম দেয়া সম্ভব না , তার সম্পর্কে যতগুলো উক্তি সমাজে প্রচলিত আছে! আমরা অন্ধভাবে সেলিব্রেটিকে কেনো ক্রেডিট দিচ্ছি? গুগলে সার্চ করে মাঝেমধ্যে বিভ্রান্ত হয়ে যাই কোনটা কার্ল স্যাগানের কথা আর কোনটা টেসলার কথা! আইনস্টাইন ও প্লাঙ্কের উক্তি বলেও অজস্র মনগড়া কথা চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে! এই যে আমাদের সাম্প্রতিক সময় এ সময়ে এটি অত্যন্ত প্রবল একটি ট্রেন্ড!
ফেম ( সুনাম) হলো একটি অত্যন্ত ক্ষমতাবান সাংস্কৃতিক চুম্বক। একটি হাইপার-সোশ্যাল প্রজাতি হিসেবে, আমরা আমাদের জ্ঞান,ধারণা ও দক্ষতা অর্জন করি অন্যদের কপি করে। আমরা ট্রায়াল এন্ড এরর প্রসেসে ব্যক্তিগত ভাবে কোনোকিছু শিখিনা। যদি সেরকম হতো তবে মিলিয়ন মিলিয়ন বছর চলে যেতো শুধু ভাষা শিখতে। আমরা সবসময় সমাজের সবচেয়ে প্রভাবশালী ও বিখ্যাত ব্যক্তিদের দিকে মনোযোগ দেই, সমাজের সাধারণ মানুষদের তুলনায়। যদি আপনি কপি করতে না পারতেন তবে কম্পিউটার গেমস আবিষ্কার করতেই আপনার প্রায় পনের বিলিয়ন বছর অপেক্ষা করতে হতো। অ্যাচে সম্প্রদায় এখনো আদিম শিকারী সংগ্রাহক জীবনে বাস করে, তাদের কোন প্রযুক্তি নেই। তারা এখনো প্রযুক্তির সাথে পরিচিতও না! তাদের কাছে আমরা অনেকটা ভিন্নগ্রহের প্রাণী, এলিয়েন! আমাদের জ্ঞান আমাদের পূর্বপুরুষদের মিলিয়ন বছরের বিবর্তনীয় অর্জন যেটা আমরা শুধু কপি করি। তথ্যকেন্দ্রের সাহায্য ছাড়া একটা শিশুকে বলুন তো, আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স তৈরি করে দিতে! অথেনটিক তথ্যের জন্য আমরা সবসময় সেলিব্রেটিদের অনুসরণ করি কারণ তারা জ্ঞান ও বুদ্ধিমত্তার কারণেই উন্নততর পর্যায়ে এসেছে, আর আমরা সবসময় নতুন ও ক্রিয়েটিভ কিছু শিখতে চাই, সেলিব্রেটিরা আমাদের মস্তিষ্কের সে ম্যাকানিজম যা নতুন ও সৃষ্টিশীল কাজের প্রতি আগ্রহী সেটিকে নিয়ন্ত্রণ করে! আমাদের কিউরিটিসিটির সাথে ডোপামিন, সেরেটোনিন ও অপিওয়িড জড়িত। আপনার ব্রেন যখন অজানা কোনো উদ্দীপনা পায়, সৃষ্টিশীল কোনকিছু দেখে যার সাথে অজানা কোন পুরস্কার জড়িত তখন প্রচুর ডোপামিন তৈরি হয়। অপিওয়েড সংযুক্ত নিউক্লিয়াস একুম্বেন্সের সাথে। এটি অপরিচিত পরিস্থিতি বা পরিবেশ মূল্যায়ন এবং মহান কোনোকিছুর মূল্য নির্দিষ্ট করতে সাহায্য করে। চাওয়া ও পছন্দের এ প্রক্রিয়াটি মস্তিষ্কের পুরস্কার প্রাপ্তির সিস্টেমটিকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং কৌতুহলী তথ্য অনুসন্ধানের উদ্দীপনা বজায় রাখে! আবার কেউডিক নিউক্লিয়াস ডোপামিনের প্রতি খুবই সংবেদনশীল, এটিও আপনাকে নতুন নতুন সম্ভাবনার প্রত্যাশা ও অনুসন্ধানমূলক আচরণগুলোকে পুরস্কার প্রাপ্তির প্রত্যাশায় সক্রিয় রাখে। এছাড়া রয়েছে এন্টারিয়র কর্টেক্স, কর্টিসোল, স্ট্রিয়েটাম, প্রাকিউনিয়াস, হিপ্পোক্যাম্পাস ও প্যারাহিপোক্যাম্পাল জির্স যেগুলো সেলিব্রেটি বা সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সৃজনশীল চিন্তা ও আচরণগুলো প্রতি আমাদের সংবেদনশীল রাখে। ( সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, হিপ্পোক্যাম্পাস বিভিন্ন উদ্দিপকের নোভেল্টি নির্দিষ্ট করে আর প্যারাহিপ্পোক্যাম্পাস আমাদের কিউরিটি প্রসেসের সাথে জড়িত, আর এমিগডালা ইমোশন প্রসেস করে)
কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত দেখা যাচ্ছে, আমরা সেলিব্রেটিদের এমনভাবে অনুসরণ করছি যে এমনকি যদি তারা কোন ভুলও করে, তবুও আমরা সেগুলোকে মেনে নেই। যেমন- আমরা আইনস্টাইন ও মার্কটোয়াইনের উক্তির ক্ষেত্রে দেখেছি। আমাদের মস্তিষ্কের কাছে এখন এটা জরুরি নয় যে কি বলা হয়েছে, আমরা গুরুত্বপূর্ণ মনে করি কথাটি, কে বলেছে! আমাদের মস্তিষ্ক সৃজনশীল চিন্তা ও প্রতিভার চেয়েও সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব প্রদান করছে প্রতিভার সোর্সকে, কোনো বিখ্যাত ব্যক্তি এ কথাগুলো বলেছে কি না, যদিও তাদের চিন্তা ভুল হয়, তাতে কিছুই আসে যায়না! কিন্তু বিখ্যাত নয় এমন কোনো মানুষ সত্য বললেও আমরা তাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছিনা এবং আমরা তার কথার রেফারেন্স চাচ্ছি। আমাদের যৌক্তিক মস্তিষ্কের তুলনার ইনরফরমেশনের বিখ্যাত কোনো সোর্স ‘ই আজ আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ!
সেলিব্রেটিরা যে সামাজিক চুম্বক তার আরো একটি উদাহরণ হলো , আমরা সেলিব্রেটিদের এমন কিছু বৈশিষ্ট্য অনুসরণ করি যা তাদেরকে প্রথমে জনপ্রিয় করে তুলেছিলো , তাদের শার্ট, প্যান্ট, হেয়ার স্টাইল সবকিছু আমরা কপি করি! সেলিব্রেটিদের প্রতি আমাদের এই দূর্বলতাকে ব্যবহার করে, টিভি ও মিডিয়া। সেলিব্রেটিদের মাধ্যমে তাদের দ্রব্যের বিজ্ঞাপন দেয় এবং আমরা সে সকল জামাকাপড় ক্রয় করি বিজ্ঞাপন দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ! যদিও এমা ওয়াটসন অথবা টম ক্রুজের প্রভাবশালী হওয়ার পেছনে তাদের টুথপেস্টের কোন ভূমিকা ছিলোনা, কিন্তু একবার যখন কেউ সেলিব্রেটি হয়ে যায় তখন তার টুথপেস্ট ও হেয়ার স্টাইলকেও আমরা অনুসরণ করি, তাদের পায়ের বুটও তখন সেলিব্রেটি । যদিও আমরা এটা খুব ভালো করে জানি টুথপেস্ট সৃজনশীল চিন্তা করতে পারে না, বুটের পক্ষে চার্লি চ্যাপলিনের মতো কৌতুক করা সম্ভব না!
সেলিব্রেটিদের প্রতি আমাদের এ অযৌক্তিক আকর্ষণের মনস্তত্ব বুঝতে হলে ডারউইনের বিবর্তনের দ্বারস্ত হতে হয়। সেলিব্রেটি সিন্ড্রোমকে আমরা কুকুরের সাইকোলজি বিশ্লেষণের মাধ্যমে বোঝাতে পারি। আপনারা নিশ্চয় দেখেছেন, কুকুর মানুষের পূজা করে, তাদের কাছে মাথা অবনত করে, ঠিক যেনো ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা। ছেলে বেলায় আমার একটা কুকুর ছিল যে নদী পার হয়ে আমার সাথে আমার নানুর বাড়িতে চলে যায় এবং এমন কি আমার জন্য সে অনেক ক্ষতির সম্মুখীনও হয়। বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞান অনুসারে, কুকুরটি আমাকে বুঝে শুনে উপাসনা করছেনা। সে আমাকে তাদের দলের বড় কুকুর জানে, বা প্রভাবশালী কুকুর, সেলিব্রেটি। আর এ জন্যই সে আমার জন্য যে কোনোকিছুই করতে প্রস্তুত।
কুকুর এসেছে ২০-৪০ হাজার বছরের মধ্যে তাদের পূর্বসূরি নেকড়ে থেকে। জঙ্গলে টিকে থাকার জন্য এসব নেকড়েকে সবসময় দলের লিডারের নির্দেশনা কঠিন ভাবে পালন করতে হতো, আর ১০,০০০ বছর পূর্বে যখন সেপিয়েন্সরা কৃষিকাজ শুরু করে তখন তারা এসব নেকড়েদের পোষ মানায়। কিন্তু নেকড়েদের ভেতর তাদের লিডারকে অনুসরণ করার সে অন্ধ মনস্তত্ব তখনও রয়ে যায়, যদিও তারা জানে না যে, মানুষ মোটেও নেকড়ে নয়, কিন্তু সেলিব্রেটিদের অনুসরণের সে অন্ধ প্রবণতা থেকে তারা সম্পূর্ণ ভুল একটি পথে চালিত হয়।
আমি মনে করি সেলিব্রেটির সাংস্কৃতিক রুপটি আধুনিক বিশ্বের দ্বারা রুপান্তরিত হয়েছে। কিন্তু বিজ্ঞানীরা মনে করেন, সেলিব্রেটিদের প্রতি আমাদের অন্ধ প্রবণতা সম্পূর্ণভাবে মিডিয়ার সৃষ্টি নয়, বরং এটি আমাদের সহজাত প্রবণতা। যা আমাদের সাংস্কৃতিতে মূল ভূমিকা পালন করে, আমাদের বিবর্তনীয় সাফল্যের জন্য এর আছে গুরুত্বপূর্ণ অবদান! আমরা নৃবিজ্ঞানের প্রেস্টিজ বিষয়টির প্রতি গুরুত্ব প্রদান করতে পারি। প্রেস্টিজ হলো একটি গোষ্ঠীর মেম্বারদের কোন একজনের জন্য সম্মান ও প্রশংসা। অ্যানথ্রোপোলোজিস্টদের কাছে এটা খুবই দারুণ একটা ব্যাপার কারণ আমাদের প্রজাতির মধ্যে এটি বিশেষ এবং সম্পূর্ণ মানব সম্প্রদায়ের কাছে প্রেস্টিজ ব্যাপারটি বিশ্বজনীন! প্রাইমেটদের অন্যান্য প্রজাতির মধ্যে সামাজির মর্জাদার স্তর বিন্যাস নির্ভর করে প্রভাব ও দাপটের উপর, এটি প্রেস্টিজ থেকে আলাদা একটা ব্যাপার কারণ এখানে রয়েছে আতঙ্ক, থ্রেট ও সংঘর্ষ।
প্রভাবশালী প্রাণীদের কাছে সাধারণরা পিছিয়ে পড়ে। ক্ষমতাধররা যা চায় তারা যদি ক্ষমতাধরদের তা দিতে ব্যর্থ হয় জোর করে আদায় করে নেবে। মানব সমাজেও আমরা সামাজিক আধিপত্যের এমন অজস্র শ্রেণীবিন্যাস দেখতে পাই! আমাদের আদিম প্রাইমেট থেকে প্রেস্টিজের ডেফিনিশন আমাদের সমাজে আলাদা। কোনোপ্রকার প্রভাব বা শাসন নয়, আমাদের সমাজে প্রেস্টিজ ঐচ্ছিক, আমরা কোন একটি নির্দিষ্ট ফিল্ডে কারো অর্জনকে মূল্যায়ন করি, এর পেছনে কোন ফোর্স নেই। কিন্তু এটি কীভাবে জন্ম হলো? একটি তত্ত্ব বলছে, প্রেস্টিজ বিবর্তিত হয়েছে সামাজিক শিক্ষার একটি সাইকোলজিক্যাল অ্যাডাপশন হিসেবে। এটি আমাদেরকে পূর্বসূরীদের উচ্চতর দক্ষতা এবং জ্ঞান সম্পন্ন ব্যক্তিদের শনাক্ত করার মনস্তাত্বিক ক্ষমতা প্রদান করে, যেনো আমাদের এনসেস্টররা তাদের সমাজের সবচেয়ে জ্ঞানী মানুষটিকে খুব সহজে চিনতে পারে, তাকে পুরস্কার প্রদান করতে পারে ও তার কাছ থেকে শিখতে পারে! আমাদের মস্তিষ্কের স্নায়ুতন্ত্র এমন ভাবে গঠিত হয়েছে, যেনো আমরা সেলিব্রেটিদের গুরুত্ব দেই ও তাদেরকে কপি করি। আমরা যদি তাদের কপি করি তবে আমরা তাদের মতোই সমাজে টিকে থাকতে পারবো, আমাদের টিকে থাকার ক্ষমতা বেড়ে যাবে এবং যেহেতু সেলিব্রেটিদের কেন্দ্র করে একটি সমাজ গঠিত হয়ে যায়, সে সমাজে সকলের মধ্যে নির্দিষ্ট সেলিব্রেটির প্রতি আকর্ষণ আমার গ্রহণযোগ্যতাই বাড়িয়ে তুলবে। কারণ একজন সেলিব্রেটিকে কেন্দ্র করে যেই সমাজ তৈরি হয় সেখানে তাদের প্রত্যেকের মধ্যে একটি কমন মনস্তত্ব কাজ করে, আমি সে সেই সাধারণ মনস্তত্ব কপি করে খুব সহজে তাদের একজন হয়ে উঠতে পারি, পেতে পারি সহযোগিতা, যা আমার সার্ভাইভাল প্রবাবিলিটি বাড়িয়ে দেবে! আর ঠিক এ কারণেই আমাদের পূর্বসূরীদের মস্তিষ্কের মধ্যে সেলিব্রেটিদের প্রতি একপ্রকার সাইকোলজিক্যাল পক্ষপাত তৈরি হয়। অন্যভাবে, আমাদের ব্রেনের হার্ডওয়্যারের ভেতরেই সেলিব্রেটিদের প্রতি অন্ধ আনুগত্যের প্রবণতা আছে, কারণ এর সাথে আমাদের যৌন প্রজনন ও বংশবৃদ্ধি বা আমাদের জিনের টিকে থাকার সম্ভাবনা সার্বাধিক, আর অন্ধ অনুকরণের এই প্রবণতা থেকেই ঈশ্বরের দূত, নবী, রাসুল ইত্যাদি তৈরি হয়েছে। একজন ধর্মীয় নেতার অনুসারী যত বেশি তাদের ধর্মকে মানুষের কাছে অধিক সত্য মনে হতে শুরু করে। সেলিব্রেটি উপাসকরা, যুক্তি দেখায়, নয়তো সে লিডারকে এত মিলিয়ন মানুষ অনুসরণ করতো না। যদিও তারা এ অযৌক্তিক আচরণ করছে সেলিব্রেটিকে ইউজ করে নিজের যৌনতা ও বংশবৃদ্ধির সার্টিফিকেট নিশ্চিত করতে!
সমাজের এত বিলিয়ন মানুষের মধ্যে আপনি নির্দিষ্ট করে কাকে অনুসরণ করবেন, কাকে রোল মডেল বানাবেন? আপনার মডেলকে খোঁজার জন্যই আপনাকে বিপুল সময় ও শক্তি অপচয় করতে হবে যা বিবর্তনের দৃষ্টিকোণ থেকে ক্ষতিকর। তার চেয়ে বরং ভালো হয়, সবাই যাকে নিয়ে হৈ-হুল্লোড় করছে তাকে নিয়ে স্টাডি করা, তাকে অনুসরণ করা ও আপনি তাই করতেন। এটাই সবচেয়ে শক্তিশালী ও নমনীয় হাতিয়ার। অতএব একজন ব্যক্তি যদি কোনো একটি নির্দিষ্ট সময়ে কোন একটি বিশেষ স্থানে বিখ্যাত হয় তবে আপনার জন্য বুদ্ধিমানের কাজ হল ঐ সময় ঐ স্থানের ঐ বিশেষ ব্যক্তিকে অনুকরণ করা, সে যত অযৌক্তিক আচরণই করুক, সেখানে ওগুলোই টিকে থাকার সবচেয়ে চূড়ান্ত কৌশল। আর এখান থেকেই সেপিয়েন্সরা তাদের মডেলের এমন অনেক বৈশিষ্ট্য কপি করতে শুরু করে যে বৈশিষ্ট্যটির কোনো উপকারীতাই নেই তার টিকে থাকা ও বংশবৃদ্ধির জন্যে। যেমন- আমাদের আদিম পূর্বসূরি দেখলো যে তার মডেল তীরের অগ্রভাগ স্পর্শ করার পর যাদুমন্ত্র জপ করছে আর সেও নিজেকে ঐ টেকনিকের সাথে সমন্বয় করে নেয়, যদিও যাদুমন্ত্রের সাথে ভালো শিকারি হওয়ার কোনো সম্পর্কই নেই! আর এ প্রবণতা দেখেই আমরা সবসময় খেয়াল করি আমাদের স্টাররা কি জামা পড়ে, তাদের চুলের রঙ কী, তারা কোথায় শপিং করতে যায়।
আমাদের আধুনিক বিশ্ব সে সময় থেকে আলাদা যখন আমরা বিবর্তিত হয়েছি। আমাদের পূর্বসূরিরা মিষ্টি ও চর্বি জাতীয় খাবারের প্রতি অনেক আগ্রহী ছিল।খাদ্যশৃঙ্খলের মধ্যপর্যায়ের প্রাণী হওয়ার কারণে তারা বড় মাপের কোন পশু শিকার করতে পারতোনা, যার জন্য তাদের ডিএনএ তে এখনো সে স্মৃতি রয়ে গেছে। আমাদের সাম্প্রতিক বিশ্বে এখন উৎপাদনের পরিমাণ অনেক বেশি। কিন্তু লাখ লাখ বছরের চর্বি ও স্নেহ জাতীয় খাবারের প্রতি যে আদিম আসক্তি সেটি এখনো আমাদের মস্তিষ্কে মাথাচাড়া দিয়ে উঠে, যা আমাদের আজকের সময়ের স্থুলতার একটি অন্যতম কারণ। আমি মনে করি, আমাদের মস্তিষ্কের হার্ডওয়ারে জিনগত ভাবে সফল ব্যক্তিদের প্রতি যে মনস্তাত্বিক পক্ষপাত, সেটি আমাদের আজকের দিনের সেলিব্রেটি অবসেশনকে ব্যাখ্যা করতে পারে!
ঠিক একইভাবে আমরা গণমাধ্যমগুলোকে আমাদের মনের জন্য জাঙ্কফুড ভাবতে পারি। সুবিধাজনক কিন্তু পুষ্টিকর নয়। আমাদের মধ্যে সবসময় সম্পদ ও প্রতিপত্তির ক্ষুদা কাজ করে কারণ সেগুলোর মাঝে প্রেস্টিজের আবেদন আছে। যাইহোক, আমাদের আজকের জগত আমাদের অতীত পূর্বসূরি থেকে আলাদা। তখন সেলিব্রেটি ছিলো ভালো শিকারী ও সংগ্রাহক। এখন গান, বাজনা, অভিনয় ও চিত্রকল্পের জন্যও মানুষ সেলিব্রেটি হয়। সেলিব্রেটিদের প্রতি আমাদের আকর্ষণ ডিপেন্ড করে তাদের সুনামের উপর। আমাদের মস্তিষ্ক পূর্ব থেকেই প্রোগ্রামড এসব ব্যক্তিদের অনুকরণ করার জন্য।
কিন্তু আধুনিক সভ্য সমাজে আপনার যতই সুনাম থাকুক না কেনো সেটা কোন ব্যপার না। সুনামের উপর ভর করে তারা আপনার মূল্য নির্ধারণ করেনা। যদিও আমাদের ব্রেন ভেতরগতভাবেই পক্ষপাত দুষ্ট এ ব্যাপারে কিন্তু একুশ শতকে আমরা সুনাম নয়, ব্যক্তির কর্ম দিয়ে তাকে মূল্যায়ন করার ক্ষমতা অর্জন করেছি।
তবুও বাংলাদেশ বা অন্যান্য তৃতীয় শ্রেণীর রাষ্ট্রগুলো এখনো এই ভ্রম থেকে বের হতে পারেনি। আমাদের মস্তিষ্ক বিবর্তনীয়ভাবে এমনভাবে প্রোগ্রামড যে, কী বলেছে সেটা নয় কে বলেছে সেটা দেখো। কিন্তু আমাদের বুদ্ধিমত্তা আমাদের সহযাত প্রবৃত্তির উপর যৌক্তিকভাবে হস্তক্ষেপ করতে জানে। সঠিক শিক্ষা ও যৌক্তিক মনন বিকাশের মাধ্যমে আমরা আমাদের বিবর্তনীয় প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারবো। তবুও জাঙ্কফুডের মতো সেলিব্রেটি সিন্ড্রোম আজ বিলিয়ন মানুষের রক্তে রক্তে কাজ করছে। অস্কার সাইকোলজি অনুসারে, অনেকে সেলিব্রেটিদের চর্চা করতে করতে এমন একটি পর্যায়ে এসে পৌঁছে তখন সে আর নিজেকে সেলিব্রেটি থেকে পৃথক মনে করেনা, সে তখন নিজেই নিজেকে সেলিব্রেটি মনে করে। এটাকে “Borderline Pathological Stage” বলে। এ ধরণের রোগীদের যখন প্রশ্ন করা হয়, আপনার সেলিব্রেটির জন্য কী আপনি কাউকে হত্যা করতে পারবেন, তারা উত্তর দেয়, হ্যাঁ!
(ডিপ্রেসনের বিবর্তনীয় ব্যাখ্যা)
আমাদের ব্রেন কী সেলিব্রেটিদের জন্য বিবর্তিত? আমাদের ব্রেন কী সেলিব্রেটিদের জন্য বিবর্তিত? আমাদের ব্রেন কী সেলিব্রেটিদের জন্য বির্তিত? আমাদের ব্রেন কী সেলিব্রেটিদের জন্য বিবর্তিত?
তথ্যসুত্র-
Viewpoint: Did our brains evolve to foolishly follow celebrities?BBC
Origin of the domestic dog
Curiosity, Wikipedia
Oscar Psychology: Why Celebrities Fascinate Us
The ways of dog to Mann