ধাক্কা দেওয়া, ঠেলাঠেলি করা বা টান দেওয়া হলো বল প্রয়োগের বিভিন্ন উদাহরণ। বিখ্যাত গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টটলের ধারনা অনুযায়ী, বল প্রয়োগ না করলে বস্তু স্থির থাকে। বস্তুকে গতিশীল রাখতে চাইলে ক্রমাগত বল প্রয়োগ করে যেতে হবে। তিনি মনে করতেন কোন তীর যখন অপরিবর্তনীয় বেগেও চলে তখন একটি বল তীরটাকে গতিশীল রাখে। ( যা এখন আমরা গতিশক্তি হিসেবে জানি) তারপর গ্যালিলিও কিছু এক্সপেরিমেন্টের মাধ্যমে দেখান যে, যদি বাধা না দেয়া হয়, গতিশীল বস্তু সমবেগে চলতেই থাকবে। কেউ বাধা না দিলে বস্তু সে অসীম পর্যন্ত চলবে। স্যার আইজেক নিউটন যিনি অ্যারিস্টটল এবং গ্যালিলিওর ধারণাকে একত্রিত করে তার প্রথম সূত্র দাঁড় করান। তিনি বলেন ” বাহিরে থেকে বল প্রয়োগ না করলে স্থির বস্তু চিরকাল স্থির থাকবে এবং গতিশীল বস্তু সমবেগে চলতেই থাকবে”। এই যে কোন বস্তু নিজে থেকে তার অবস্থা পরিবর্তন করতে চায় না এটাকেই বলা হয় জড়তা। জড়তা মানে হলো ” স্থির বস্তু চিরকাল স্থির থাকতে চায় আর গতিশীল বস্তু চিরকাল গতিশীল থাকতে চায় । এই যে বস্তু গুলোতে চিরকাল একই রকম থাকার প্রবনতা দেখায় সেটাই” আর এই জড়তার বিষয়টা উঠে আসে নিউটন-এর দ্বিতীয় সূত্র থেকে। নিউটন-এর ২য় সূত্র অনুযায়ী, F=ma যেখান থেকে আমরা দেখতে পাই। যদি কোন বস্তুর ভর বেশি হয় তাহলে তাকে তার অবস্থান থেকে সরানোর জন্য বেশি বল প্রয়োগ করতে হবে। এ থেকে আমরা বলতে পারি কোন ভারী বস্তুর উপর ত্বরণ সৃষ্টি করতে হলে বেশি বল প্রয়োগ করতে হবে। আর হালকা বস্তুর উপর ত্বরণ সৃষ্টি করতে কম বল প্রয়োগ করতে হবে। মানে এই যে এখানে ভর হলো জড়তার পরিমাপ যে বস্তুর ভর বেশি হবে সে বস্তুর মধ্যে জড়তার পরিমাণও বেশি কাজ করবে। এবং সে বস্তুতে ত্বরণ সৃষ্টি করতে হলে বেশি বলও প্রয়োগ করতে হবে। কারণ আমরা জানি F=ma বা, a=F/m । এখন যদি ১ কেজি ভরের বস্তুর ভর ৫ নিউটন বল প্রয়োগ করা হয়। তাহলে সে বস্তুর ত্বরন হবে। a=5/1=1ms^-2আবার একটা ১০ কেজি ভরের বস্তুর উপর যদি ঐ একই পরিমন বল প্রয়োগ করা হয়। তাহলে তার ত্বরণ হবে a=5/10=0.5ms^-2সুতরাং আমরা দেখতে পাচ্ছি একই পরিমান বল দুইটা ভিন্ন ভরের বস্তুর উপর প্রয়োগ করলে ভারি বস্তু অপেক্ষায় আলকা বস্তুর মধ্যে ত্বরনের পরিমান অনেক বেশি হয়। যার ফলে হালকা বস্তুকে তার অবস্থান থেকে সরাতে সহজ হয়।

আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রতিনিয়তই বল প্রয়োগ করি নানান কাজে। আমরা হাঁটার সময়ও মাটিতে একটা বল প্রয়োগ করি মাটিও বিপরীতে আরেকটা বল প্রয়োগ করে। নিউটন- এর তৃতীয় সূত্র মেনে ( F=-F)। এছাড়াও আমরা যখন খাবার খাই, গাড়ী চলাচল, এমনকি মোবাইল টেপা প্রতিক্ষেত্রেই আমরা বল প্রয়োগ করে থাকি। মজার বিষয় হলো এ সবগুলো বলকে বিজ্ঞানীরা মাত্র চারটি বলে ভাগ করেছেন। যাকে বলা হয় Fundamental Forces বা মৌলিক বল। এই চারটি বল হলো।
১. মহাকর্ষ বল
২. তাড়িৎ চুম্বকীয় বল।
৩. দূর্বল নিউক্লিয় বল
৪. সবল নিউক্লিয় বল।
মহাকর্ষ বল ( Gravitational Forces)
ভরের কারণে মহাবিশ্বের দুটি বস্তুর মধ্যে যে আকর্ষণ বলের সৃষ্টি হয় সেটাই মহাকর্ষ বল। এই মহাকর্ষ বলের পাল্লা অসীম, পাল্লা মানে যে সীমার মধ্যে একটা বল কাজ করতে পারে। এটি চারটি মৌলিক বলের মধ্যে সবচেয়ে দূর্বল হলেও অসীম পর্যন্ত এই বল কাজ করতে পারে। সপ্তদশ শতকের শেষ দিকে, ১৬৮৭ সালে, এই বলের ব্যাখ্যা দেন স্যার আইজ্যাক নিউটন। বিজ্ঞানের ছাত্রছাত্রীরা স্কুল থেকেই নিউটনের এই মহাকর্ষ সূত্রের সঙ্গে পরিচিত হয়ে ওঠে। এই সূত্রে বলা হয়েছে, মহাবিশ্বের যেকোনো স্থানে অবস্থিত দুটো ভরবিশিষ্ট বস্তু পরস্পরকে একটি বল দিয়ে আকর্ষণ করে, এই বলের নাম মহাকর্ষ এবং এই বল বস্তু দুটোর ভরের গুণফলের সমানুপাতিক এবং এদের মধ্যেকার দূরত্বের ব্যস্তানুপাতিক। গাণিতিক সমীকরণে লিখলে এই সূত্রটির চেহারা দাঁড়ায় এ রকম: Fg=Gm1m2/r2 এখানে m1 ও m2 হচ্ছে যথাক্রমে প্রথম ও দ্বিতীয় বস্তুর ভর এবং r হচ্ছে পরস্পরের মধ্যে দূরত্ব। আর G হলো মহাকর্ষীয় ধ্রুবক, যার মান: G = 6.67 × 10-11 Nm2kg-2
তাঁর এই সূত্র দিয়ে গ্রেভিটেশনাল ঘটনাবলির অনেক কিছুই ব্যাখ্যা করা গিয়েছিল। মহাবিশ্বের যেকোনো গ্রহ-নক্ষত্রে অভিকর্ষজ ত্বরণের মানও নির্ণয় করা যায় এই সূত্রের মাধ্যমে, যদি এর ভর ও ব্যাসার্ধ জানা থাকে।

যেমন পৃথিবীতে অভিকর্ষজ ত্বরণের মান প্রায় ৯.৮ মি/সে২, আর চাঁদে এর মান প্রায় ১.৬২৫ মি/সে২। অভিকর্ষজ ত্বরণের সঙ্গে বস্তুর ভর গুণ করলে এর ওজন নির্ণয় করা যায়। ধরা যাক, আপনার ভর ৫০ কেজি, তাহলে পৃথিবীতে আপনার ওজন ৪৯০ নিউটন আর চাঁদে গেলে আপনার ওজন হবে ৮১ নিউটনের কাছাকাছি। তার মানে চাঁদে গেলে আপনি অনুভব করবেন, আপনার শরীর প্রায় পাখির পালকের মতো হালকা হয়ে গেছে, কারণ যে ভার (ওজন) আপনি এখানে বয়ে বেড়াচ্ছেন, চাঁদে যে তার ছয় ভাগের এক ভাগ হয়ে যাবে! এসব মজার হিসাব, নিউটনের এই সূত্র ব্যবহার করেই করা সম্ভব হয়েছে। তবে বিশ শতকের শুরুতে এসে এই বলের এই নতুন ও অভিনব ব্যাখ্যা হাজির করেন আরেক মহাবিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন। যিনি বলেন মহাকর্ষ হলো স্থান- কালের বক্রতা। এখন এই স্থান কালের বক্রতা কি? স্থানকালের বক্রতা বোঝার আগে আমাদের বোঝতে হবে স্থানকাল আসলে কি? আগে অর্থাৎ অতীতে আমরা সবাই ভাবতাম যে আমাদের পুরো মহাবিশ্বটা হলো ত্রিমাত্রিক মানে শুধু দৈর্ঘ্য, প্রস্থ আর উচ্চতাবিশিষ্ট। কিন্তু আইনস্টাইনের মতে আমাদের মহাবিশ্ব হলো চতুর্মাত্রিক অর্থাৎ দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা আর সময়কে নিয়ে গঠিত। আর এই স্থানের তিন মাত্রা আর সময়ের একমাত্রাকে মিলিতভাবে একসাথে বলে স্থানকাল বা স্পেস-টাইম। সোজা কথায় চতুর্মাত্রিক এই মহাবিশ্বের প্রতিটা অংশই হলো স্থানকাল (Space-time) । যখন একটা বস্তুকে আমরা মহাকাশে স্থাপন করব তখন সেই বস্তুটা তার চারপাশের স্থানকালকে বাকিয়ে ফেলবে। কোনো একটি বস্তুর কারণে স্থানকালের যে ধরণের বক্রতা তৈরী হয় তাকেই বলে স্থানকালের বক্রতা বা Space-time Curvature।


আইনস্টাইন তার জেনারেল থিয়োরি অব রিলেটিভিটিতে বলেন , কোনো বস্তুর উপর স্থানকালের বক্রতার প্রভাবই হলো মহাকর্ষ আর এই প্রভাব কোনো প্রকার আকর্ষণ বল নয়। স্যার আইজ্যাক নিউটন মহাকর্ষের যে নীতি দিয়েছিলেন, মহাকর্ষ তেমন কিছই নয়। মহাকর্ষ বল বস্তুর ভর থেকে উৎপন্ন হয় না। আসলে স্থানকালের বক্রতার জন্য এ ধরনের বল অনুভূত হয়। এই বল আসলে বক্র জ্যামিতির ফল। কোনো একটি বস্তুকে মহাকাশে স্থাপন করলে বস্তুটি শুধুমাত্র তার চারপাশের স্থান বা স্পেসকেই বাকিয়ে ফেলে না বরং সময়কেও বাকিয়ে ফেলে। এইকারণে স্থানকালের বক্রতার কারণে সময় ধীরে চলে, একে বলা হয় মহাকর্ষীয় কাল দীর্ঘায়ন বা Gravitational Time dilation।

আবার একইভাবে কোনো একটি বস্তুর স্থানকালের বক্রতার ফলে বস্তুটির চারপাশের স্পেস বা স্থানও বেঁকে যায়। এখন যদি কোনো বস্তু যথেষ্ট শক্তিশালী স্থানকালের বক্রতা তৈরী করতে পারে তাহলে বস্তুটি তার চারপাশের স্থানকে বা স্পেসকে এমনভাবে বাঁকিয়ে দেয় যে, কোনোকিছু এমনকি আলোও তা থেকে বের হতে পারে না। কারণ তখন বস্তুটির চারপাশের স্পেস এমনভাবে বেঁকে যায় যে, যাই এর ভেতরে একবার ঢোকে তা বার বার একই জায়গায় ফিরে আসে; ফলে তা কখনো বের হতে পারে না। যেমন ব্ল্যাকহোলের ক্ষেত্রে হয়। ব্ল্যাকহোল তার চারপাশের স্পেসকে এমনভাবে বাঁকিয়ে দেয় যে, যা এর ভেতরে একবার ঢোকে তা কখনো বের হতে পারে না।
কিন্তু তারপরেও এখন পর্যন্ত মহাকর্ষ একটা রহস্যই রয়ে গেলো ৷ কারণ আমরা যদি মহাকর্ষকে একটা বল ধরে নি, তাহলে তার একটা কণা থাকা উচিত কিন্তু সেটা কোথাও?। যদিও বিজ্ঞানীরা এই বলের জন্য একটা কণার কথা বলেন যার নাম গ্র্যাভিটন। যা এখনো একটা থিওরি মাত্র। আবার আমরা যদি এটিকে স্থান-কালের বক্রতা হিসেবে চিন্তা করি তাহলে কোয়ান্টাম জগতে এটি কিভাবে কাজ করে সেটা বলতে হবে। কারণ কোয়ান্টাম জগতের পরমাণুর গভীরে এই মহাকর্ষের জন্য বক্রতা সৃষ্টি হওয়ার কথা। এতো সব প্রশ্ন এখনো সমাধান করা সম্ভব হয় নি। আর তাই এই মহাকর্ষ বল আমাদের অতিপরিচিত হলেও এটি আমাদের কাছে আজও একটা রহস্য।

তড়িৎচুম্বকীয় বল!
তড়িৎচুম্বকীয় ক্ষেত্র আহিত বস্তুর উপর যে বল প্রয়োগ করে তাকে তাড়িতচৌম্বক বল বলে। এই বল আকর্ষণধর্মী ও বিকর্ষণধর্মী- উভয় প্রকারের হতে পারে। আগে তড়িৎ ও চুম্বকত্ব এ দুটিকে দুটি ভিন্ন বল মনে করা হত। ১৮৭৩ সালে জেমস র্ক্লাক ম্যাক্সওয়েল প্রমাণ করেন এ দুটি আসলে একই অভিন্ন বলের প্রকাশ। যখন দুটি আহিত কণা স্থির থাকে তখন তাদের মধ্যে কেবল তড়িত্ বল ক্রিয়া করে। আহিত কণাগুলো গতিশীল হলে তড়িত্ বলের পাশাপাশি কণাগুলোর মধ্যে চৌম্বক বলের সৃষ্টি হয়। দুটি চৌম্বক মেরুর আকর্ষণ বা বিকর্ষণ বলও তাড়িতচৌম্বক বল। দুটি আহিত মৌলিক কণার মধ্যে ক্রিয়াশীল তড়িত্ বল এদের মধ্যে ক্রিয়াশীল মহাকর্ষ বলের তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালী। তবুও সবলতার বিচারে তড়িত্ বল হচ্ছে মাঝারি ধরনের। ঘর্ষণ বল, স্প্রিং বল ইত্যাদি আহিত কণাগুলোর মধ্যে তড়িত্ বলের কারণেই সৃষ্টি হয়। এর তীব্রতা 10^2 N আর এর পাল্লা অসীম। আলো একধরনের তড়িৎচুম্বকীয় বল। তড়িৎক্ষেত্র ও চৌম্বকক্ষেত্র মিলে সৃষ্টি হয় তাড়িতচৌম্বক ক্ষেত্র। এই বলের বাহক কণ ফটোন। তাই এই বলের ক্রিয়ার জন্য কোন মাধ্যমের প্রয়োজন হয় না। তবে মাধ্যমের মধ্যেদিয়েও এই বল ক্রিয়া করতে পারে।
দূর্বল নিউক্লীয় বল!
যে স্বল্প পাল্লার ও স্বল্প মানের বল নিউক্লিয়াসের মৌলিক কণাগুলোর মধ্যে ক্রিয়া করে অনেক নিউক্লিয়াসে অস্থিতিশীলতার উদ্ভব ঘটায় তাকে দূর্বল নিউক্লীয় বল বলে। যখন কোন নিউক্লিয়াস থেকে বিটা রশ্মি নির্গমন ঘটে এই বলের উদ্ভব হয়। ১৯৩০ সালে ওলফগ্যাং পাউলি বললেন, নিউট্রন ভেঙে গিয়ে প্রোটন, অ্যান্টি-নিউট্রিনো ও ইলেকট্রন উত্পন্ন হয়। এই অ্যান্টি-নিউট্রিনো ও ইলেকট্রনই বেরিয়ে আসে নিউক্লিয়াস থেকে। আবার অন্য ঘটনাও ঘটে। অর্থাৎ প্রোটন ভেঙে গিয়ে নিউট্রন, নিউট্রিনো ও পজিট্রন উত্পন্ন হয়। কেন এই ধারণাকে বৈপ্লবিক বলছি? কারণ, মানবসভ্যতার ইতিহাসে এই প্রথম পজিট্রন ও অ্যান্টি-নিউট্রিনো নামের দুটো কণার কথা বলা হলো, যারা আসলে কণা নয়, প্রতিকণা (antiparticle)। পজিট্রন হলো ইলেকট্রনের প্রতিকণা এবং এর ভর ইলেকট্রনের সমান হলেও এটি ধনাত্মক চার্জবিশিষ্ট। পজিট্রন শব্দটি এসেছে ‘পজিটিভ ইলেকট্রন’ শব্দযুগল থেকে। তেমনি নিউট্রিনোর প্রতিকণা হলো অ্যান্টি-নিউট্রিনো। সত্যি বলতে কী, এই নিউট্রিনো কণার ধারণাটিও ছিল একেবারেই নতুন। কারণ, এই কণাটি কোনো ধরনের বস্তুর সঙ্গেই মিথস্ক্রিয়া করে না, ফলে একে খুঁজে পাওয়া খুব দুষ্কর। এই ধারণা প্রবর্তনের দুই বছরের মাথায় পজিট্রনের অস্তিত্ব ধরা পড়ে পরীক্ষাগারে। কিন্তু প্রায় ৮৫ বছর পরও নিউট্রিনোর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। এই বিটা কণা বা ইলেকট্রন বিকিরণের জন্য অতি অবশ্যই আরেকটি বল সক্রিয় থাকে। বলা বাহুল্য, সেই বলটি নিউক্লীয় বল, তবে সবল নিউক্লীয় বলের মতো শক্তিশালী নয়। যেহেতু নিউক্লীয় বল হয়েও সে সবল বলের মতো শক্তিশালী নয়, তাই তার নাম দেওয়া হলো দুর্বল নিউক্লীয় বল! দুর্ভাগ্যজনক নাম তার। দেখা গেল, অন্য সব বলের মতো এই বলের মিথস্ক্রিয়ার জন্যও কণার ভূমিকা আছে। দেখা গিয়েছে W, Z বোসন নামক দুই ধরনের কণার বিনিময়ের ফলে এই ধরনের বলের সৃষ্টি হয়।

সবল নিউক্লীয় বল
পরমাণুর নিউক্লিয়াসে নিউক্লিয় উপাদানসমূহকে একত্রে আবদ্ধ রাখে যে শক্তিশালী বল তাকে সবল নিউক্লিয় বল বলে। সবল নিউক্লিয় বল প্রোটন ও নিউট্রনকে নিউক্লিয়াসে আবদ্ধ রাখে। এটা স্পষ্ট যে, কোনো ধরনের আকর্ষণী বল না থাকলে প্রোটনসমূহের মধ্যকার বিকর্ষণী বলের কারণে নিউক্লিয়াস অস্থিতিশীল হয়ে যেতো। এই আকর্ষণী বল মহাকর্ষী বল হতে পারে না কারণ তড়িত বলের তুলনায় মহাকর্ষীয় বল অতি অকিঞ্চিতকর। সুতরাং নিউক্লিয়াসের স্থায়িত্বের জন্যে একটি নতুন বলের প্রয়োজন হয় আর সেই বলই হচ্ছে সবল নিউক্লিয় বল যা সকল মৌলিক বলগুলোর মধ্যে সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী। তাড়িতচৌম্বক বল থেকে এটি প্রায় 100 গুণ বেশি শক্তিশালী। এটি আধান নিরপেক্ষ এবং এটি সমানভাবে প্রোটন-প্রোটন, নিউট্রন-নিউট্রন এবং প্রোটন-নিউট্রনের মধ্যে কার্যকর। এর পাল্লা অত্যন্ত কম, প্রায় নিউক্লিয়াসের ব্যাসার্ধের সমতুল্য অর্থাৎ প্রায় 10-15 m। এই বল নিউক্লিয়াসের স্থায়িত্বের নিয়ামক। আমরা শুরুতেই বলেছিলাম সবচেয়ে দূর্বল বল হলো মহাকর্ষ আর সবচেয়ে শক্তিশালী বল হলো সবল নিউক্লীয় বল। কিন্তু কতটা শক্তিশালী এই সবল নিউক্লীয় বল? আমরা যদি এই সবল নিউক্লীয় বলকে ১ ধরি তাহলে তড়িৎচুম্বকীয় বল হবে ১/১৩৭ আর দূর্বল নিউক্লীয় বল হবে ১/১০০০০০০ আর মহাকর্ষ বল অনেক বাড়াবাড়ি রকমের দূর্বল মানে ১/১০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০ বা ১/১০^৪৩ । এখন হয়তো বিষয়টা বুঝতে পারছেন কতটা দুর্বল এই মহাকর্ষ আর কতটা শক্তিশালী সবল নিউক্লীয় বল।
যদিও আমদের এই আলোচনা অনুযায়ী মনে হতে পারে যে নিউটন এর দেওয়া বলের সংজ্ঞা সঠিক নয়। কিন্তু আমরা চাইলে এই চার ধরনের মৌলিক বল। থেকে নিউটনের বলের সংজ্ঞা ব্যাখ্যা করতে পারি।যেমন নিউটন বলেছিলেন ” যা প্রয়োগ এর ফলে স্থির বস্তু গতিশীল হয় আর গতিশীল বস্তু সমবেগে এগিয়ে চলে এবং দিক পরিবর্তন করে” এখন আমরা কোন বস্তুর উপর যখন বল প্রয়োগ করি হাত দিয়ে তখন আমাদের হাতে থাকা ইলেকট্রন আর ঐ বস্তুর মধ্যে থাকা ইলেকট্রন, এই ইলেকট্রন গুলোর মধ্যেই ঐ ইলেকট্রো-মেগনেটিক বলটা আছে। এখন আমরা যদি একটি একটি করে ইলেকট্রন এর মধ্যে থাকা বলের পরিমান হিসেব করতে যাই সেটা সম্ভব হবে না হিসেব করা। তাই আমরা নরমালি নিউটন এর সূত্রগুলো দিয়ে সহজে হিসেব করে ফেলি।
আমাদের মহাবিশ্ব যখন সৃষ্টি হয় তখন আমাদের এই মৌলিক বলসমূহ এক ছিলো। কন্তু তাপমাত্রা কমার সাথে সাথে তা পৃথক হয়ে যায়। যেমন একটা কঠিন বস্তুকে যখন আমরা তাপ দিতে থাকবো তখন সেটা তরল এবং তরল থেকে গ্যাস এ চলে যাবে। আরো তাপ দিতে থাকলে প্লাজমা এবং ওর সব সাব-এটমিক কণিকা গুলো আলাদা হয়ে যাবে । এখন যদি আরো তাপ দিতে থাকি মানে একদম এস্ট্রোনোমিকাল তাপমাত্রায় নিয়ে যাই (১০^৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াস) তাহলে এর মধ্যে থাকা সকলকণিকা একীভূত হয়ে যাবে মানে সকল ফোর্স তখন একই হয়ে যাবে যাকে সম্ভবত বলা হয় প্রাইমোডিয়াল স্যুপ। হয়তো মহাবিশ্বের শুরুতে ঐ সব বল এমন ছিলো। কিন্তু তাপমাত্রা কমার কারনে তা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
Read more: ফিফথ ফোর্স-নতুন করে লিখতে হবে ফিজিক্সের সূত্র
- তোমাদের জন্য আপেক্ষিকতা (তৌহিদুল রহমান উদায়)
- চা কফি আর জেনেরাল রিলেটিভিটি ( নাঈম হোসেন ফারুকী)
- বিজ্ঞানে অজ্ঞান (নাঈম হোসেন ফারুকী)
- ফিজিক্স ১ পত্র ইন্টারমিডিয়েট
- ফিজিক্স ক্লাস ৯-১০ অপদার্থ বিজ্ঞান (রাতুল খান)
- What If Gravity Isn’t Really Fundamental?, Forbes


