নারী পুরুষের চেয়ে দুর্বল? ইয়েস! একটি ভাইরাস যেমনি ডায়নোসর থেকে দুর্বল। একটি ভাইরাসের পক্ষে সম্ভব নয়, ডায়নোসরের নাকে ঘুষি মেরে তার নাক ফাটিয়ে দেয়া কিন্তু সে চাইলে ডায়নোসরের ইমিউন ফাংশন হ্যাক করতে পারে। ক্ষমতা ব্যাপারটা আসলে ৬ ইঞ্চি উচ্চতা, শারীরীক শক্তি অথবা আগ্রাসী মনোভাবের ভেতর নয়, এটি আণুবীক্ষণিকও হতে পারে, আর তাই নারীর ক্ষমতা দেখতে আপনার একটি মাইক্রোস্কোপ প্রয়োজন হতে পারে। একটি কম্পিউটার ভাইরাসের ক্ষমতা তার সাইজ নয়, প্রোগ্রামের ওপর নির্ভর করে আর একে বুঝতে কোডিং বুঝতে হয়। নারী যদি পুরুষের চেয়ে সত্যি দুর্বল হয়, তবে শতাব্দীর পর শতাব্দী কেন পুরুষের চেয়ে নারী টিকে থাকার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পারদর্শিতার পরিচয় দিচ্ছে? কেন নারীর গড় আয়ু পুরুষের চেয়ে ৬ বছর বেশি? একটি জিরাফের লম্বা গলা আছে বলেই কী সে লুকোচুরি খেলতে পারে? মানুষের চেয়ে একটি বিড়ালের নাইট ভিশন ভালো বলে কী সে “Horror” মুভি দেখে? যাইহোক। কথা বাড়াতে চাই না। সংক্ষেপে এক্স-ক্রোমোজোমের ক্ষমতার সাথে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেই (মেয়েদের অনুরোধ লেখাটি বড় হলেও, আপনারা পড়ুন প্লিজ):
এক্স ক্রোমোজমের ক্ষমতা: একজন পুরুষের দেহে X এবং Y ক্রোমোজম থাকে। কিন্তু নারীর দেহের ক্রোমোজম XX। মনে করুন, নারীর দেহ কোষের একটি এক্স–ক্রোমোজমে মিউটেশন দেখা দিল। এই মিউটেশনের ফলে তার ক্যান্সার, টিউমার সৃষ্টি হতে পারে অথবা অন্য কোনো জটিল শারীরীক ও মানসিক সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। কিন্তু একটি ক্রোমোজমে মিউটেশন ঘটলেও, আর একটি ক্রোমোজম ফাংশনাল। এর মানে দেখা যাচ্ছে, নারীর দেহে ব্যাকআপ হিসেবে এক্সট্রা-এক্স ক্রোমোজম আছে। কিন্তু পুরুষের দেহের এক্স –ক্রোমোজমে যদি কোনো নেগেটিভ মিউটেশন ঘটে, তবে তার জন্য কোনো ব্যাকআপ নেই। এটা অনেকটা ওয়েবসাইটের মতো। কোনো কারণে যদি আপনার ওয়েবসাইট হ্যাক হয়, তবে আপনি আপনার তথ্য হারাবেন কিন্তু ব্যাকআপ থাকলে, আপনি আপনার ওয়েবসাইটকে পুনরায় জীবন দিতে পারবেন। পুরুষের সেটা নেই। তাই এক্স-ক্রোমোজমের কোনো একটি নেগেটিভ মিউটেশন পুরুষের জীবন কেড়ে নেয়, সে তার জীবনের কোনো ব্যাকআপ ফাইল খুঁজে পায় না!
এক্স-ইনঅ্যাকটিভেশন প্রসেস: নারীদের দেহে দুটি এক্স ক্রোমোজম থাকে। একজন নারী শিশুর জন্মের পর তার দেহ কোষের মধ্যে দুটি এক্স–ক্রোমোজম সক্রিয় থাকে কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথে প্রতিটি সেলে একটি এক্স-ক্রোমোজম এক্সপ্রেস হয় আর অন্যটি সাইলেন্স হয়ে যায়। এ প্রক্রিয়াটিকে বলা হয় এক্স–ইনঅ্যাকটিভেশন প্রসেস। এ প্রসেস নিয়ন্ত্রণ করে MECP2 নামক একটি জিন। কিন্তু কেন নারীর দেহে বয়সের সাথে অসংখ্য এক্স-জিন নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়? যদি কোনো কারণে MECP2 জিন, যেটি কোষের ভেতর একটি এক্স–ক্রোমোজমকে সাইলেন্ট করে দেয়, সেটি মিউটেশনের শিকার হয়, তবে দুটি এক্স-ক্রোমোজম একসাথেই অ্যাকটিভ হয় অথবা অপর ক্রোমোজমগুলো পুরোপুরি সাইলেন্ট হয় না। যে সকল মানুষের দেহে দুটি এক্স ক্রোমোজম একসাথে সক্রিয় (isochromosome X) তারা তাদের মোটর স্কিল হারায়, তাদের মস্তিষ্কের বুদ্ধিবৃত্তিক দুর্বলতা দেখা দেয়, সহজে বেড়ে উঠতে চায় না, সিজার, ক্যান্সার ও হৃদরোগের শিকার হয়। এছাড়া এক্সট্রা এক্স-ক্রোমোজমকে দেখে মাঝেমাঝে ইমিউন সিস্টেম কনফিউজড হতে পারে। আমাদের দেহে T কিলার সেল নামক একটি সেল আছে। তার কাজ হলো, দেহের মধ্যে কোনো শত্রু এসেছে কিনা সেটা শনাক্ত করা। ইমিউন সিস্টেম মাঝেমাঝে এক্সট্রা এক্স-ক্রোমোজম দেখলে তাকে শত্রু মনে করে। অনেকটা বাঘের সামনে তার সমান আর একটি বাঘ এসে দাড়ালে বাঘ যেমন তার সাথে হিংসাত্মকভাবে ফাইট করে। এটাকে অটোইমিউন ডিজিজ বলে। এজন্য বয়স বাড়ার সাথে সাথে কোষের ভেতর একটি ক্রোমোজম সক্রিয় ও একটি ক্রোমোজম নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। কিন্তু এখানে একটা ম্যাজিক আছে!! দেহের এক একটি কোষে এক এক ধরনের এক্স–ক্রোমোজম সাইলেন্স ও এক্সপ্রেস হয়। মনে করুন, আপনার দেহের মধ্যে একটি এক্স-ক্রোমোজম সাইলেন্ট হয়ে গেছে, যে জন্য আপনার ক্যান্সার হতে পারে কিন্তু আর একটি কোষে সেটার একটি কপি আছে!! এটা অনেকটা ক্রোমোজোমাল মোজাইকের মতো। নারীর দেহের কোষে ক্রোমোজমগুলো অনেকটা র্যান্ডমলি অফ ও অন হয়। এজন্য তাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা খুবই জটিল ও ডেঞ্জারাস। নারীর দেহে কোনো জীবাণু প্রবেশ করলে, সে নিজেই কনফিউশনে পড়ে যায়! আর একটি মজার ব্যাপার হলো, MECP2 নামক জিনটি কোষের ভেতর সবগুলো এক্স-ক্রোমোজমকে সাইলেন্ট করতে পারে না, কোনো কোনো কোষে দুইটা এক্স ক্রোমোজমই সক্রিয় থাকে। এতে করে নারীর ইমিউন সিস্টেম আরও জটিল হয়ে ওঠে। নারীর দেহের এই এক্স ক্রোমোজম তার প্রোটেক্টর!
সেক্স ক্রোমোজম এবং বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞান: পুরুষের ওয়াই ক্রোমোজম নারীর এক্স-ক্রোমোজম থেকে আকারে ক্ষুদ্র। কিন্তু কেন? এর কারণ হলো ৩০০ মিলিয়ন বছর পূর্বে প্রথম এক্স-ক্রোমোজম থেকে ওয়াই-ক্রোমোজম আলাদা হয়েছিল। তার আগে এক্স ও ওয়াই-ক্রোমোজমের মধ্যে ফিজিক্যাল তারতম্য ছিল না। কিন্তু কেন ওয়াই ক্রোমোজম আলাদা হলো? আসলে ওয়াই-ক্রোমোজমে একটি জিন আছে, যেটাকে বলে SRY জিন। ৩০০ মিলিয়ন বছর পূর্বে এই জিনটি প্রথম সক্রিয় হয়। এই জিনটি সক্রিয় হওয়ার সাথে সাথে ইতিহাসে প্রথম একজন মানুষের দেহে পুরুষালী দৈহিক বৈশিষ্ট্যের বিবর্তন ঘটে। তার মানে দেখা যাচ্ছে, SRY জিন যদি সক্রিয় না হতো, তবে পুরুষের ডিফল্ট সেক্স হতো একজন নারী ( যদিও ক্রোমোজম আলাদা)। একটি জেনেটিক মিউটেশন বা ভুলের কারণে মানুষ ৩০০ মিলিয়ন বছর আগে দৈহিকভাবে পুরুষে পরিণত হয়েছিল। এখনো তার প্রমাণ মাতৃগর্ভে পাওয়া যায়। একটি ভ্রুণ জন্মের ৬ সপ্তাহ পর্যন্ত বায়োলজিক্যালি নারী হিসেবে অস্তিত্বশীল থাকে। ৩০০ মিলিয়ন বছর আগের সেই আদিম স্মৃতি আজও মাতৃগর্ভে একটি ফিটাস স্মরণ করে। ৬ সপ্তাহ পর SRY জিন অ্যাকটিভ হয় এবং বায়োলজিক্যালি যে ভ্রুণটি এতদিন নারী ছিল তার দেহে স্পার্ম মেশিন ও অন্যান্য পুরুষতান্ত্রিক অর্গানের বিবর্তন ঘটে। কিন্তু কেন ওয়াই ক্রোমোজম ক্ষুদ্র হলো! একটা বিষয় লক্ষ্য করে দেখুন। পুরুষের দেহের সাথে ওয়াই-ক্রোমোজমের সকল জিনের সম্পর্ক নেই, কেবল একটি জিনের সম্পর্ক আছে আর সেটা হলো SRY। এটাই কেবল পুরুষের দেহ তৈরির জন্য কাজে লাগে, বাকিগুলো লাগে না, বা তারা এক্ষেত্রে নন-ফাংশনাল। ন্যাচারাল সিলেকশন অনুসারে, যে সকল জিন পুরুষের জন্য কাজে লাগে, সেগুলো টিকে আছে, আর যেগুলোর ফাংশন নেই, সেগুলো ডিলিট হয়ে যাচ্ছে! এতে করে মিলিয়ন মিলিয়ন বছর ধরে পুরুষের ওয়াই ক্রোমোজম তার জিন হারাচ্ছে। প্রতি এক মিলিয়ন বছরে ওয়াই-ক্রোমোজম থেকে একটি করে জিন ডিলিট হয়ে যাচ্ছে! আর একটি বিষয় স্মরণ করুন, একটা ছেলে পিতার কাছ থেকে একটাই ওয়াই ক্রোমোজম পায়, মায়ের কাছ থেকে পায় না। পিতার জিনে যদি ক্যান্সারের প্রবণতা থাকে, পুত্রের জিনেও সেটা থাকবে, ছেলেটি মায়ের কাছ থেকে কোনো ব্যাকআপ পাবে না। কিন্তু একজন নারী পিতা-মাতা দুজনের কাছ থেকেই ব্যাকআপ পায়। তাই সময়ের সাথে ওয়াই-ক্রোমোজম যে কেবল তার জিনগুলো হারিয়ে ফেলছে তাই নয়, ওয়াই-ক্রোমোজম ধীরে ধীরে দূর্বল হয়ে যাচ্ছে! এছাড়া ওয়াই-ক্রোমোজম আকারে এক্স-ক্রোমোজম থেকে ক্ষুদ্র হয়ে যাওয়ার কারণে তার জিনের সংখ্যা কম, তাই এটি এক্স-ক্রোমোজমের সাথে নিজেকে রিকম্বাইন করতে পারে না কারণ ক্ষুদ্র ও বড় ক্রোমোজম একে অন্যের সাথে ম্যাচ করে না। যার ফলে, ওয়াই-ক্রোমোজমের ক্ষমতা আরও কমে যাচ্ছে। মিলিয়ন মিলিয়ন বছর পর ওয়াই-ক্রোমোজম হয়তো, তার সকল জিন হারিয়ে ফেলবে। এমন একটি সময় আসবে, পুরুষ আর সন্তান জন্ম দিতে পারবে না। কিন্তু নারী তখনও টেকনোলজিক্যালি সন্তান জন্ম দিতে পারবে, তবে এক্ষেত্রে পৃথিবীর সকল মানুষই হবে নারী, পৃথিবীতে কোনো ওয়াই-ক্রোমোজমের অস্তিত্ব থাকবে না।
ইস্ট্রোজেন এবং ইমিউন ফাংশন: ইস্ট্রোজেনের কারণেই আমরা নারীকে আলাদাভাবে ডিফাইন করি। ইস্ট্রোজেনের কারণে নারীর দেহে চর্বির পরিমাণ বেশি। তার চামড়া নরম। আর এই সফট দেহ পুরুষকে লাখ লাখ বছর সেক্সচুয়ালি টর্চার করেছে। কিন্তু কেন? কারণ আদিম জীবনে খাবারের প্রচুর অভাব ছিল, নারীর দেহের এই অতিরিক্ত চর্বি তাদের শক্তির যোগান দিত। পুরুষটি মারা গেলেও নারী জীবিত থাকত, সন্তান মায়ের কাছ থেকে খাবার পেত। আর তাই পুরুষ নারীর নরম চামড়ার পূজা করে আসছে মিলিয়ন বছর। এছাড়া বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, নারীর ইমিউন সিস্টেমে ইস্ট্রোজেন রিসেপ্টর আছে, এটি একটি ইমিউন সেল। এই সেল ইনফেকশনের বিপক্ষে দস্যুর মতো আক্রমণ করে। আর এই হর্মোনাল কারণে নারীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা পুরুষের চেয়ে উন্নত!!
ইমিউন সেল অ্যাকটিভিটি: গবেষণা দেখিয়েছে, নারীর ইমিউন সিস্টেমের দুটি সেল পুরুষের চেয়েও পাওয়ারফুল যেমন T সেল এবং ন্যাচারাল কিলার সেল (NK)। এই সেলগুলো দেহ কোষে কোনো অস্বাভাবিকতা দেখলে হিংস্রভাবে আক্রমণ করে! এজন্য নারীর ইমিউন সিস্টেম পুরুষের চেয়ে উন্নত! নারীর দেহের ন্যাচারাল কিলার সেল শক্তিশালী হওয়ায়, তার মধ্যে ক্যান্সারের ঝুঁকি কম। কিন্তু ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী হওয়ার নারীর একটি বিপদ দেখা দেয়। আমরা জানি, টি-কিলার সেলের কাজ হলো, দেহের মধ্যে কোনো ভাইরাস-ব্যাক্টেরিয়া অথবা অন্য কোনো এলিয়েন অর্গান প্রবেশ করছে কি না সেটা ডিটেক্ট ও আক্রমণ। মর্মান্তিক ব্যাপার হলো, নারীর দেহে যখন তার ভ্রুণ বিকশিত হয়, টি-কিলার সেল সন্তানকে কুকুরের মতো আক্রমণ করে। কারণ সে এই দেহকে তার নিজের দেহের একটি টিউমার বা ক্যান্সার হিসেবে ট্রিট করে। টি-কিলার সেলের হাত থেকে নিষ্কৃতির জন্য, নারীর দেহ সন্তানকে প্ল্যাসেন্টার ভেতর লুকিয়ে রাখে। যেন টি-কিলার সেল তার ওপর সরাসরি আক্রমণ করতে না পারে! এ সময় ভ্রুণকে প্রোটেক্ট করার জন্য মাতৃদেহ থেকে একটি সেনাবাহিনী জেগে ওঠে, যার নাম ট্রেগ বা রেগুলেটরি টি-সেল। ভ্রূণ যখন পেটে আসে টি-কিলার সেলকে শায়েস্তা করার জন্য দলে দলে ট্রেগ নামক এই নতুন সেল সৃষ্টি হয়। এরা টি-কিলার সেলের আগ্রাসী আচরণ ডিটেক্ট করে ও তাকে আক্রমণ করে। এছাড়া একদল আর্মি জেগে ওঠে প্লাসেন্টাকে প্রোটেক্ট করার জন্য, যার সাম সাইটোকিনস। সাইটোকিনস নামক এই অণুটি ভ্রুণ গর্ভে আসার পর নিজেই ইমিউন সিস্টেমে পরিণত হয়ে যায় এবং সে অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেশন ও টলারর্জেনিক দশায় চলে যায়, যেটি ফিটাসের প্রতি টি-কিলার সেলের আগ্রাসী আচরণকে প্রতিরোধ করে! টি-কিলার সেল হলো নারীর দেহের ব্লাইন্ড প্রোটেক্টর! এটা একজন নারীর দেহের ভেতর সেকেন্ড লাভারের মতো, যে অন্ধভাবে নারীর দেহকে সকল প্রকার বিপদ থেকে সুরক্ষা করে। কিন্তু বায়োলজিক্যাল সন্তান গর্ভে আসার পর, নারীর দেহ তার একমাত্র প্রোটেক্টরের (অন্ধ ভক্ত) বিপক্ষে চলে যায় এবং নিজেকে চরম বিপদের মধ্যে ফেলে দেয়। কারণ টি-কিলার সেলের ওপর চতুর্দিক থেকে এই আক্রমণের কারণে ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হয়ে যায় এবং গর্ভকালীন অবস্থায় নারীর ইনফেকশনের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়, নারী ক্রমাগত দুর্বল হয়ে যেতে থাকে! সন্তানের জন্মের পর মায়ের দেহে সন্তানের দেহ থেকে পরিত্যাক্ত মাইক্রোকাইমেরিজম নামক একপ্রকার সেল থেকে যায়। এগুলো মায়ের দেহের ইমিউন সিস্টেমকে বুস্ট করে, টিস্যু মেরামত করে এবং বিভিন্ন রোগের বিপক্ষে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এই সেলগুলো টি-কিলার সেলকে ভয় দেখায়, আর এতে করে টি-কিলার সেলের মধ্যে একটি মেমরি তৈরি হয়, যেন সে ভবিষ্যতে সন্তান জন্ম হওয়ার পর এই অসভ্য আচরণ না করে!
হর্মোনাল ফ্ল্যাকচুয়েশন: নারীর মাসিকের এক একসময় তার হর্মোনাল কন্ডিশন এক একপ্রকার। এমনকি নারীর দেহের ওপর মেডিসিনও এক একসময় এক একভাবে কাজ করে। হর্মোনাল ফ্ল্যাকচুয়েশনের কারণে নারীর ইমোশন দ্রুত শিপট করে। কিন্তু আপনি শুনলে অবাক হবেন, এটা তার দুর্বলতা নয়, এটা তার শক্তি! কেমন? আসলে এক একসময় হর্মোনাল সিচুয়েশন এক একরকম থাকায়, নারীর দেহের ইমিউন সিস্টেমও এক একসময় এক একভাবে রিয়েক্ট করে। নারীর দেহের ইমিউন সেল এমনভাবে বিবর্তিত হয়েছে যেন মাসিকের এক এক সময় সে পরিবেশের পরিবর্তন অনুযায়ী এক একভাবে ফাইট করতে পারে। অন্যকথায়, নারীর দেহের ইমিউন সিস্টেম মাল্টি ডায়মেনশনাল ও জটিল।
পুরুষের চেয়ে নারী অবশ্যই টেকনিক্যালি শক্তিশালী কিন্তু তারপরও অধিকাংশ সময় নারীকে দুর্বলতা ও শারীরীক রোগে ভুগতে দেখা যায়। কিন্তু কেন? আসলে এক কথায় এ প্রশ্নগুলোর উত্তর দেয়া অসম্ভব। আমি তারপরও সংক্ষেপে তিনটি পয়েন্ট উপস্থাপন করছি। আফ্রিকার জঙ্গলে যখন খাবারের অভাব দেখা দিত, তখন একজন নারী পুরুষের চেয়ে বেশি টিকে থাকত। কিন্তু কীভাবে? নারীর দেহের ইস্ট্রোজেন বেশি, যেজন্য তাদের দেহে চর্বির পরিমাণও বেশি। এই অতিরিক্ত চর্বি ক্যালোরির অভাব পূরণে তাদের সাপোর্ট দিয়েছিল কিন্তু এর একটি সাইড ইফেক্ট আছে। এই সাইড ইফেক্ট খুবই ভয়াবহ। অতিরিক্ত চর্বির কারণে নারীর দেহ নরম ও তুলতুলে হয়ে যায়। তারা শারীরীকভাবে পুরুষের চেয়ে কিছুটা দূর্বল হয়ে যায় আর পুরুষ তাদের ইনফারিয়র ভাবতে শুরু করে। দ্বিতীয়ত, আফ্রিকার জঙ্গলে যখন খাবারের অভাব দেখা দিত, নারীর দেহের মেটাবলিজম হ্রাস পেত, এতে করে অত্যন্ত কম ক্যালোরির উপস্থিতিতেও নারীর দেহ অল্প পরিমাণ শক্তি খরচ করে টিকে থাকতে সক্ষম ছিল, যেখানে পুরুষের মৃত্যু ছিল নিশ্চিত। এই ক্ষমতা নারীকে আদিম পরিবেশে সহনশীলতা, ধৈর্য ও ক্ষমতা প্রদান করেছিল। কিন্তু মেটাবলিক ক্ষমতা স্লো হয়ে যাওয়ার কারণে নারীর দেহ দুর্বল হয়ে যেত, তাকে বিভিন্ন ভাইরাস-ব্যাক্টেরিয়া সংক্রমণ করত। তার দেহের মধ্যে সবসময় স্ট্রেস ও স্ট্রেইন কাজ করত। যেটা নারীকে আজও বহন করতে হচ্ছে! পুরুষ আজ নারীকে দুর্বল মনে করে কিন্তু একই পরিস্থিতিতে পড়লে পুরুষ টিকে থাকা তো দূরে থাক, বিলুপ্তই হয়ে যেত। এজন্যই নারীর সামনে ব্যাথা ও প্রতিবন্ধকতা লেগেই আছে। নারীর ইমিউন সিস্টেম ভীষণ শক্তিশালী। কিন্তু ভীষণ শক্তিশালী ইমিউন সিস্টেমের একটি ব্যাকফায়ার বা সাইড ইফেক্ট আছে। নারী দেহের ইমিউন সেলগুলো দেহের ভেতর কোনো ভাইরাস ব্যাক্টেরিয়া প্রবেশ করলে দুর্দান্তভাবে ফাইট করে, কিন্তু মিলিয়ন মিলিয়ন জীবাণুর সাথে ফাইট করার সময়, সে ভুলক্রমে নিজের দেহ কোষের সাথে নিজেই ফাইট করে। কারণ শক্তিশালী ইমিউন সিস্টেম সুপার সেনসেটিভ ও আনকন্ট্রোল। অটোইমিউন রোগের ফলে একজন নারীর রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, লুপাস এবং মাল্টিপল স্ক্লেরোসিসের মতো অবস্থা হতে পারে। হর্মোনাল ফ্ল্যাকচুয়েশনের কারণে নারীর দ্রুত মুড সুয়িং হয়। হর্মোন লেভেলের এই পরিবর্তন তার জন্য কখনো কখনো ক্ষতিকর হতে পারে। যুগ যুগ ধরে সন্তান গর্ভধারণের জন্য নারীকে দুর্বল মনে করা হয়েছিল এবং তাকে তাচ্ছিল্য করা হয়েছিল। ভাবা হয়েছিল সন্তান হলো নারীর সবচেয়ে কোমল জায়গা। কিন্তু না, ভুল। একজন নারীর ইমিউন সিস্টেম কেবল তার নিজের দেহকেই প্রোটেক্ট করে না, সে আর একটি জীবনকেও প্রোটেক্ট করে। নারীর ইমিউন সিস্টেমের মধ্যে ডাবল স্ট্যান্ডার্ড আছে। আর একজন সন্তান জন্মের পর মায়ের দেহে তার যে কোষগুলো রেখে যায়, সেটা মায়ের দেহের ক্ষতস্থান পূরণ করে এবং তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় (অটোইমিউন ডিজিজ ব্যতিক্রম)। এক্স-ক্রোমোজমের বৈচিত্র্যতার কারণে একজন নারী বৈচিত্র্যময় পরিবেশে টিকে থাকতে পারে, যেটা পুরুষ পারে না। পুরুষের হৃদরোগ ও ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি। সমাজে নারীদের মধ্যে গভীর বন্ধন আছে কিন্তু পুরুষ একাকীত্ব ও ডিপ্রেসনে ভোগে কারণ পুরুষ আগ্রাসী এবং স্বার্থপর। পুরুষ মদ, গাঁজা, ইয়াবা ও পর্নোগ্রাফিতে গভীরভাবে আসক্ত হয়, তারা খুবই বিপজ্জনক আচরণ করে, আর এরা অল্প বয়সেই মরে যায়।
নারীর এত বিপুল ক্ষমতা থাকার পরও আমাদের সমাজে নারীকে চরম অযত্ম করা হয়েছে। আমি নিজ চোখে দেখেছি, আমাদের গ্রামে কোনো একটি পরিবারে মেহমান আসলে, সবার খাওয়া শেষ হওয়ার পর পরিত্যাক্ত খাবার ঘরের মা ও বোনদের খেতে দেয়া হয়েছিল!! আমি নিজের চোখে দেখেছি, গর্ভাবস্থায় পরিবার কন্যা সন্তানকে ইনটেনশনালি হত্যা করেছিল! আমি দেখেছি, নদীর পাড়ে কন্যা শিশুর লাশ! আমি নিজের চোখে দেখেছি কীভাবে আমার সমাজ উপার্জনক্ষম পুরুষ সন্তানের প্লেটে সবচেয়ে পুষ্টিকর খাবার তুলে দেয়!
এখনও অসংখ্য সমাজ আছে, যেখানে পুরুষের চেয়ে নারীর মৃত্যু হার বেশি কারণ নারীদের রোগের জন্য কোনো ট্রিটমেন্টই করা হয় না! তাদের অল্পবয়সে বিয়ে করতে বাধ্য করা হয়! তাদের ব্যক্তি স্বাধীনতা হরণ করা হয়! শিক্ষার ক্ষেত্রেও তাদের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ আচরণ করা হয়! তাদের সাথে সংঘর্ষ করা হয়, তাদের ওপর নির্যাতন করা হয়! নিজের ভালোবাসার মানুষটির সাথেও তাদের বেশিরভাগ সময় একসাথে থাকা হয় না! উত্তরাধিকারসূত্রে তাকে পর্যাপ্ত সম্পত্তি দেয়া হয় না। বহুগামিতার ফ্রিডম না দিয়ে, ঘাড়ি ও বাড়ির মতো তাকে একটা পুরুষের কাছে বিক্রি করে দেয়া হয়।
আরও পড়ুন: হাইপারস্পেস বুক স্টোর
X-ইউনিভার্স: ফেমিনিন ফিউশন/ X-ইউনিভার্স: ফেমিনিন ফিউশন / X-ইউনিভার্স: ফেমিনিন ফিউশন / X-ইউনিভার্স: ফেমিনিন ফিউশন