Can't find our books? Click here!

৪০ লাখ বছর পূর্বের বিশ্বাস?

যদি ৪০ লক্ষ বছর পূর্বে আর্ডিওপিথেকাসরা বৃক্ষ থেকে মাটিতে নেমে যাওয়ার পর পরই কম্পিউটার আবিষ্কার হয়ে যেত তবে হয়তো আমরা মানব সভ্যতা মেট্রিওস্কা ব্রেন হয়ে কম্পিউটারের ইন্টিগ্রেটেট সার্কিট হিসেবে সার্ভাইভ করতাম অথবা শিশু মহাবিশ্ব তৈরি করে নতুন সভ্যতার জন্ম দিতাম। এমনও হতে পারে আমরা এ মহাবিশ্ব ছেদ করে কোয়ান্টাম ট্রানজিশনের মাধ্যমে অন্য কোনো মহাবিশ্বে চলে যেতাম। দুর্ভাগ্যজনকভাবে হিউম্যান সিভাইলাইজেশন সূত্রপাত হয়েছে আনুমানিক ১৩ হাজার বছর পূর্বে আর কম্পিউটার আবিষ্কার হয়েছে এই তো মাত্র দুইশত বছর।

প্রশ্ন হলো, মিলিয়ন মিলিয়ন বছর পর্যন্ত কী তবে আমরা এ মহাবিশ্বে কেবল শিকার, প্রজনন ও বংশবৃদ্ধি করেই কাটিয়ে দিয়েছি?

ইভোলিউশনারী বায়োলজিস্টদের মতে, আমাদের বিশ্বাস বিবর্তিত হয়েছে সূদুর অতীতে। নিয়ান্ডারথালদের কবর, এবস্ট্রাক্ট আর্ট এবং সমাধিতে পুষ্প অর্পন দেখে বোঝা যায় তারা বিশ্বাসী ছিল, হোমো এরেক্টাসরা বিশ্বাসী ছিল, ডেনিসোভানরাও বিশ্বাসী ছিল এবং আমাদের আদিম পূর্বসূরী অস্ট্রোলোপিথিসাইনরাও বিশ্বাসী ছিল আর আমরা উত্তরাধিকার সূত্রে তাদেরই জিন পেয়েছি এজন্য আমাদের মধ্যে বিশ্বাস অত্যন্ত কমন ও প্রভাবশালী।

 

A 50,000-year-old Neanderthal skeleton discovered in a cave in France was intentionally buried.

৪০ লাখ বছর পূর্বে প্রায় অস্ত্রহীন আর্ডিওপিথেকাসরা যখন শিকার করতে বের হতো তখন তারা বিশ্বাস করতো তারা শিকার করতে পারবে। আর এ বিশ্বাস তাদের ভেতর থেকে অনিশ্চয়তা ও আশঙ্কা হ্রাস করতো যার ফলে তারা দৃঢ়ভাবে তাদের লক্ষ্যের দিকে মনোযোগী হতে পারতো। ২০ লক্ষ বছর পূর্বে আমাদের আদিম পূর্বসূরী হোমোহেবিয়েলসরাও সম্ভবত বিশ্বাস করতো যত যাইহোক না কেন তাদের পক্ষে শিকার ধরা সম্ভব! আর এ অযৌক্তিকতা তাদেরকে যুদ্ধক্ষেত্রে সাহস ও অনুপ্রেরণা যোগাতো। নয়তোবা তারা বিলুপ্ত হয়ে যেত ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য তারা কোন জিন রেখে যেতে পারতোনা! একটি গ্যাজেল শিকার করতে গিয়ে আপনি যদি সায়েন্টিফিকভাবে শিকার করার পদ্ধতি চিন্তা করতে থাকেন তবে সে সুযোগে একটি ভয়ানক সিংহ এসে আপনাকে হয়তোবা খেয়েও ফেলতে পারে। আর তাই এমার্জেন্সি সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য আমাদের আদিম পূর্বসূরিদের হাতে খুব একটা সময় ছিল না, বিশ্বাসই ছিল তাদের টিকে থাকার একটি প্রধান শক্তি।

Habilis existed from approximately 2 million to 1.6 million years ago in east Africa. 

৬০-১০০ হাজার বছর পূর্বের ফ্লোরেস দ্বীপের হোমো ফ্লোরেনসিয়েসিসদের কথা স্মরণ করুন। ফ্লোরেস দ্বীপ তার মূল ভুখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার পর হোমো ফ্লোরেনসিয়েসিসরা ক্ষুদ্র একটি দ্বীপের কারাগারে বন্ধী হয়ে যায়। মূল ভুখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় সেখানে প্রচুর খাদ্যের অভাব দেখা দেয়। এরকম একটি পরিস্থিতির কবলে পড়ে লম্বা, স্বাস্থ্যবান ও শক্তিশালী ফ্লোরেনসিয়েসরা খাদ্যের অভাবে মরে যায়, কেবল যারা খাটো, বেটে, ও চিকন তারাই অপেক্ষাকৃত কম খেয়ে বেঁচে থাকতে সক্ষম হয়। এতে করে সেই অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ফ্লোরেনসিয়েসিসদের জিনই ভবিষ্যৎ প্রজন্মে স্থানান্তর হওয়ার সুযোগ পায় । শক্তিশালীরা বিলুপ্ত হয়ে যায়, কেবল দূর্বল টিকে থাকে। ২০০৩ সালে ফ্লোরেস দ্বীপে বিজ্ঞানীরা ১.১ মিটার লম্বা সেই হবিটদের খুলি ও ক্ষুদ্রক্ষুদ্র যন্ত্রপাতি আবিষ্কার করেছেন এবং সে দ্বীপের হাতিরাও ছিল ঠিক একইভাবে ক্ষুদ্র। প্রাকৃতিক নির্বাচন দূর্বলদের জন্য আকস্মিক অনুকূল হয়ে যায় আর তাই শত শত জেনারেশন অতিক্রান্ত হওয়ার পর সম্পূর্ণ প্রজাতি 3 ফুট ৬ ইঞ্চি হয়ে উঠে। প্রাকৃতিক নির্বাচন কী এক্সিডেন্সিয়ালি বিশ্বাসীদের জিনকে সেই সুনির্দিষ্ট পরিবেশে ফ্লোরেনসিয়েসিসদের মত বিশেষ সুবিধা দিয়েছিল?

Liang Bua cave on Flores Island, where Homo floresiensis remains were discovered in 2003. Nearby is a village where the pygmies live

যদি বিজ্ঞানমনস্কতা ও নাস্তিকতা টিকে থাকার মানদণ্ড হয়ে থাকে তবে আমাদের আদিম পূর্বসূরী অস্ট্রোলোপিথরাও অযৌক্তিক বিশ্বাস লালন করতো, তারা ফলস পজেটিভ প্যাটার্ন দেখত! কেন তারা বিলুপ্ত হয়ে যায়নি? কীভাবে  তারা তাদের সেই আস্তিক্যবাদী জিনগুলোকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মে বিস্তার করেছে একদম সফলতার সাথে? বিশ্বাসের যদি বিবর্তনীয় উপযোগিতা না থাকতো তবে আমাদের পূর্বসূরীদের মধ্যে কেবল তারাই টিকে থাকতো যারা পিউর নাস্তিক ও যুক্তিবাদী কিন্তু এটা পরীক্ষামূলকভাবে প্রমাণিত নাস্তিকতা ও যুক্তিবাদ বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মাধ্যমে শিক্ষার বিষয় কিন্তু কেউ জিন, ভূত, আত্মা, পরলোক, ঈশ্বর অথবা কুসংস্কার আচ্ছন্ন হতে তেমন কোনো শিক্ষার দরকার হয়না। ফিজিক্স ও ম্যাথমেটিক্স শিখতে হয় কিন্তু মেঘের মধ্যে প্যাটার্ন দেখা অথবা অযৌক্তিকভাবে কোনো কিছু বিশ্বাস করতে তেমনকিছু শিক্ষার প্রয়োজন নেই। এছাড়া শিক্ষার মাধ্যমে আমরা যে সকল অযৌক্তিক সংস্কৃতি ঐতিহাসিকভাবে প্রাপ্ত হই সেগুলোর প্রতি আমাদের অন্ধ এক পক্ষপাত কাজ করে কিন্তু বিজ্ঞানমনস্কতা শেখার জন্য আমাদেরকে বছরের পর বছর সময় দিতে হয়!

এখান থেকে এটাই প্রমাণ হয় যে, ঈশ্বর ও ধর্মে বিশ্বাস অথবা অন্যকোনো অযৌক্তিক এজেন্ডায় বিশ্বাসের কারণে আমাদের পূর্বসূরিরারা সফল ভাবে তাদের জিনকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মে রেখে যেতে পেরেছিল। আর এভাবে দূর্বল ও খর্বকায় হোমো ফ্লোরেনসিয়েসিসের মত ঈশ্বর ও ধর্মে বিশ্বাস টিকে যায় কিন্তু যৌক্তিক ও বৈজ্ঞানিক চিন্তা দূর্লভ হয়ে উঠে! আমরা আজকের পৃথিবীর দিকে তাকালে সুস্পষ্টভাবে বিজ্ঞানের ক্ষমতার প্রমাণ পাই, রকেট আমাদের ভিন্ন গ্রহে নিয়ে যায়, পারমাণবিক বোমা হিরোসিমা ও নাগাসাকি ধবংস করে দেয় কিন্তু আমাদের মস্তিষ্কে প্রায় ৪০ লাখ বছর পূর্বে বাসা বাঁধা বিশ্বাসের তাতে কিছুই যায় আসেনা! যে মাইক্রোসফট ওয়ার্ডে এ মুহূর্তে আপনি  বিজ্ঞানের বিপক্ষে লিখছেন সে মাইক্রোসফটও বিজ্ঞানের অবদান, যে ইন্টারনেটে আপনি ধর্মপ্রচার করছেন সে ইন্টারনেটও প্রযুক্তির উৎকর্ষতা কিন্তু আপনার মস্তিষ্কের গভীরে গেঁথে থাকা বিশ্বাস এ সমস্ত সত্যকে কত সহজে এড়িয়ে যায়! আমাদের আদিম পূর্বসূরিরা চোখের সামনে হিংস্র জন্তু দেখেও যেমন অযৌক্তিক বিশ্বাস থেকে সেই জন্তুকে মোকাবিলা করত আজ আমরাও চোখের সামনের বিজ্ঞানকে ও বিবর্তনকে অস্বীকার করি!

হাসির বিবর্তন ঘটেছিল আজ থেকে ত্রিশ মিলিয়ন বছর পূর্বে কিন্তু ভাষা বিবর্তিত হয়েছে আনুমানিক ৫০, ০০০ বছর।  এজন্য হাসি শিশুদের বায়োলজিক্যাল হার্ডওয়্যার হয়ে গেছে, শিশুদের হাসানোর জন্য তাকে হাসির ব্যাকরণ পড়তে হয়না। তাকে ফেশিয়াল এক্সপ্রেসন শিক্ষা দিতে হয়না। সে যখন খুশি এমনি এমনি হাসে! আমাদের জ্ঞানগত বিপ্লব খুবই সাম্প্রতিক কিছু এক্সট্রা জিনের মিউটেশনের কারণে যার মধ্যে FOXP2 এবং HAR1 জড়িত। কিন্তু আমাদের বিশ্বাস বিবর্তিত হয়েছে ২০ থেকে ৪০ লাখ বছর পূর্বে আর তাই আমাদের মস্তিষ্কের কেন্দ্রেই বিশ্বাস আর বিশ্বাস অনেক বেশি সাধারণ। 

আপনি যদি আমাকে প্রশ্ন করেন আমি বিশ্বাসী কিনা তবে আমি বলবো, বিবর্তনীয় কারণে আমি কমবেশি বিশ্বাসী। কিন্তু বুদ্ধিবৃত্তিক মাত্রায় আমার মধ্যে বিশ্বাস বা অবিশ্বাস গুরুত্বপূর্ণ নয়, আমি একজন সংশয়বাদী ও বিজ্ঞানমনস্ক। বিজ্ঞান শিক্ষার জন্য আমি শুধু আমার পূর্বসূরীদের জিনের উপর নির্ভর করিনি। আমার মস্তিষ্কের নিউরাল কানেকশন পুনর্গঠন করার জন্য বছরের পর বছর যুক্তি ও বিজ্ঞানচর্চা করেছি। এটা সত্য যে একজন শিশু জন্মের পর কোন ধর্ম নিয়ে জন্মায় না, সে নাস্তিকই থাকে। কিন্তু আপনাকে মনে রাখতে হবে সে তার জিনোমে সে সকল পূর্বসূরিদের জিন ধারণ করে যা তাকে যেকোনো কিছুতে বিশ্বাস করতে প্রতারিত করতে পারে!

নোট: আর্টিকেলটি আমার ব্যক্তিগত গবেষণার প্রতিফলন।

তথ্যসূত্র: