Can't find our books? Click here!

বৈজ্ঞানিক বিপ্লবের পর মানব সভ্যতা ঈশ্বরকে নিস্তদ্ধ করে দিয়েছে। বর্তমানে সমস্ত পৃথিবী শুধুমাত্র মানুষেরই প্রদর্শনী। মঞ্চে মানব সভ্যতা একা দাঁড়িয়ে আছে , সে নিজের সাথে নিজেই কথা বলছে, কাউকে অস্বীকার না করেই, কোনো প্রকার প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই সে বিপুল পরিমাণ ক্ষমতার অধিকারী হয়ে উঠেছে। পনের বিলিয়ন বছর ধরে চুপ করে থাকা( Muted) ফিজিক্স, ক্যামিস্ট্রি ও বায়োলজির পাঠোদ্ধার করে তারা এখন মহাবিশ্বের নিস্তব্দ পদার্থবিদ্যার সূত্রগুলোকেই তাদের নিজের ইচ্ছায় ব্যবহার করছে! বিলিয়ন বিলিয়ন বছর পদার্থবিজ্ঞানের চেতনা ছিলোনা, তারা নিষ্কাম নিরপেক্ষভাবে কোনোপ্রকার ব্যাখ্যার প্রয়োজনীয়তা বোধ না করেই  এ মহাবিশ্বকে পরিচালনা করেছে, এখন ফিজিক্সের সূত্রগুলোর ঘুম ভেঙে গেছে, থার্মোডায়নামিক্সের সেকেন্ড ‘ল’’ অথবা নিউটনের থার্ড ‘ল’ এখন শার্ট প্যান্ট পরিহিত আধুনিক নর বানরদের মস্তিষ্কের নিউরাল পালসে ,যে নর বানররা মহাবিশ্বকে জানে, ফিজিক্সের সূত্রকে তার মস্তিষ্কের নিউরনগুলো ব্যবহার করে রকেট, বিমান ও কৃত্রিম উপগ্রহ তৈরি করেছে, তৈরি করেছে কম্পিউটার ও আত্মসচেতন রোবট! এমনকি তারা স্বয়ং প্রাকৃতিক নির্বাচন পদ্ধতির ভেতর হস্তক্ষেপ করেছে , আর্টিফিশিয়াল সিলেকশন, ইউজেনিক্স অথবা জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর মাধ্যমে তারা প্রাণিজগতের ডিএনএ ‘কে  নতুন করে লিখছে! আজ থেকে ৩০০ বছর পর মহাবিশ্বে প্রাণের উদ্ভব ব্যাখ্যা করার জন্য ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন প্রয়োজন হবে , আর এ ঈশ্বর অন্য কেউ নয়, প্রাইমেট থেকে বিবর্তিত , ৭০ হাজার বছর পূর্বে তৃণভূমিতে চড়ে বেড়ানো , একটি অতি-সাধারণ আধুনিক নর বানর হোমো সেপিয়েন্স!

গার্ডেন অব ইডেনের গল্পে ঈশ্বর অ্যাডাম এবং ইভকে জ্ঞানের প্রতি কিউরিওসিটির কারণে স্বর্গ থেকে বিতাড়িত করেছিলো। গার্ডেন অব উলস্ট্রোপের মিথে একই কাজ করার অপরাধে নিউটনকে কেউ স্বর্গ থেকে বিতাড়িত করেনি। সেদিন নিউটনের মাথায় আপেল পড়েনি, আপেল পড়েছিলো মানব সভ্যতার মাথার উপর , আপেল যদিও জানতো না , তার কোনো উদ্দেশ্য ছিলো না মানব সভ্যতার ইতিহাস বদলে দেয়ার জন্য , আপেল জানে না যে সে’ই আজকের রোবটিক্স সভ্যতার লেখক, আপেল জানতো না সে নিউটনের ঈশ্বরের খুনি!  মানব সভ্যতার কৌতুহলকে ধন্যবাদ জানানো উচিত মহাবিশ্বকে গভীর ভাবে বোঝার জন্যে, তাদেরকে আরো ক্ষমতাবান হয়ে উঠার জন্যে এবং প্রযুক্তিগত স্বর্গ তৈরি করার উদ্দেশ্যে আরো এক ধাপ এগিয়ে যাওয়ার জন্যে। গণনাতীত সংখ্যক শিক্ষক সমস্ত পৃথিবী জুড়ে নিউটনের এ মিথকে ব্যবহার করেছেন কৌতুহলকে অনুপ্রাণিত করার জন্যে, তারা গুরুত্ব দিয়ে বলেছেন, আমরা পৃথিবীতেই স্বর্গ গড়তে পারবো,  যদি আমরা জ্ঞান অর্জন করি। প্রকৃতপক্ষে ঈশ্বর নিউটনের মিথের মধ্যে উপস্থিত, নিউটন নিজেই ঈশ্বর, যখন ন্যানোটেকনোলজি ও বায়োটেকনোলজি পরিপক্ক হবে তখন হোমো সেপিয়েন্স নিজেই ঈশ্বরে পরিণত হবে এবং বিবলিক্যাল ট্রি অব নলেজের পরিপূর্ণ চক্র সম্পন্ন হবে।

এতে দ্বিমত হওয়ার কোনো কারণ নেই যে, সেপিয়েন্সরা বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাবান সত্ত্বা। তারা নিজেরাও মনে করে যে তারা পরম মাত্রার কোনো গুণের অধিকারী , যা আর কোনো প্রাণীর মাঝে নেই। তারা মনে করে মানব জীবন হাতি, জিরাফ অথবা ষাঁড় থেকে  অনেক উত্তম। মানুষ মনে করে  তারা ফান্ডামেন্টালি অন্যসকল প্রাণীদের থেকে আলাদা কারণ তাদের মধ্যে এমন জাদুকরী কিছু একটা আছে যা অন্য কোনো প্রাণীর মাঝে নেই। ঐতিহ্যবাহী মনোথেইস্টরা মনে করতো, সেপিয়েন্সদের আছে শাশ্বত আত্মা। শরীর মৃত্যুর পর পৃথিবী রয়ে যায়, মহাবিশ্ব রয়ে যায় কিন্তু সেই শাশ্বত আত্মা শরীর থেকে বেরিয়ে অনন্ত সময়ে যাত্রা করে, সে হয়তো পুনর্জন্ম লাভ করে অথবা যাপন করে অনন্ত দুর্ভোগের নরক। অন্য কোনো প্রাণীর মাঝে এ অনন্ত আত্মা নেই। তারা শুধু একজীবনের জন্য সাময়িক অণু-পরমাণুর সংগঠন হিসেবে জন্মগ্রহণ করে। মৃত্যুর পর তাদের দেহের পরমাণুর সাথে তাদের ভেতরের কনশাসনেসও শক্তির সাথে মিশে যায়। সেপিয়েন্স ছাড়া পৃথিবীর অন্য সকল প্রাণী শুধুমাত্র বর্তমানে বাস করে তারা বর্তমানের জন্যেই টিকে থাকে , তাদের কোনো পরকাল নেই, তাদের জন্যে নেই স্বর্গ অথবা নরক। ডারউইনের বিবর্তনতত্ত্ব, সম্ভবত জগতের সবচেয়ে ভয়ানক তত্ত্ব যা সেপিয়েন্সরা এখনো পুরোপুরিভাবে মেনে নিতে পারেনি।

Image result for darwin

স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটিগুলো এখন জানে, আমাদের মহাবিশ্বের সকল পরমাণুর প্রায় ৯৯ ভাগই শূন্যস্থান । এ মহাবিশ্ব পরমাণুর তৈরি নয়, এ মহাবিশ্ব পরমাণুর ভেতরে বিদ্যমান শূন্যস্থানের তৈরিস। আর আমি নিজেই শূন্যস্থান। অথচ শূন্যস্থান শূন্যস্থানের ভেতর পথ চলতে গিয়ে দেয়ালে ধাক্কা খায়, গাড়ি চাপা পড়ে টুকরো টুকরো হয়ে যায় , সমুদ্রে টাইটানিক ডুবে হাজার হাজার সেপিয়েন্স মারা যায়, শূন্যস্থানকে শূন্যস্থানের কাছে কঠিন,তরল ও বায়বীয় মনে হয়! রিয়েলিটির এ ম্যাজিক সেপিয়েন্সরা মেনে নিয়েছে কারণ তারা জানে শূন্যস্থানের ভেতর থাকে অদৃশ্য ফোর্সফিল্ড। মনে করুন,  আজ থেকে বিশ বছর পূর্বে আপনি একটি খুন করেছেন, আপনার বিচার হচ্ছে, বিচার সভায় আপনার পক্ষের উকিল আদালতে যুক্তি দেখালো, আমার মক্কেল বিশ বছর পূর্বে খুন করেনি, সে বিশ বছর পূর্বে ঐ ঘটনাস্থলে ছিলোই না, ঐ ঘটনাস্থলে আমার মক্কেলের শরীরের একটি পরমাণুও যদি উপস্থিত থেকে থাকে তবে আমি মেনে নেবো যে সে  দোষী। আমি ফিজিক্স ও ম্যাথমেটিক্সের মাধ্যমে প্রমাণ করতে সক্ষম যে তার শরীরের পরমাণুগুলো বিশ বছর অতীতের সে ঘটনাটি ঘটায়নি! জাজ প্রশ্ন করলো, তবে সে ঘটনার স্মৃতি তার মস্তিষ্কে এখনো কিভাবে আছে? যার শরীরের পরমাণু ঐ ঘটনাস্থলে ছিলোই না সে কিভাবে জানে যে বিশ বছর পূর্বে এরকম একটি ঘটনা ঘটেছে? আপনার পক্ষের উকিল বলল, কেউ একটা ল্যাপটপ চুরি করে আপনার বাসায় রেখে গেলে তার দায়ে যেমনিভাবে আপনি দায়ী নন, ঠিক তেমনি বিশ বছর পূর্বের কোনো অজ্ঞাত খুনি পরমাণু কোনো খুনের স্মৃতি পরবর্তী পরমাণুর কাছে অন্যায়ভাবে রেখে গেলেও সে খুনের জন্যে আমার মক্কেলও  কোনো ভাবেই দায়ী না! জাজ তখন কী বলবে? যদি কখনো বাস্তবেই এমন কোনো ঘটনা ঘটে থাকে? বিজ্ঞান এভাবেই আমাদের কমনসেন্সকে একের পর এক প্রশ্নবিদ্ধ করে এসেছে!

কোপেনহেগেন ইন্টারপ্রিটেশন অনুসারে পর্যবেক্ষণের পূর্বে একটি পার্টিকেল সম্ভাব্য সকল অবস্থায় বিদ্যমান থাকে, শ্রডিঙ্গার যেটিকে তার বিখ্যাত বেড়ালের মাধ্যমে প্রকাশ করেছিলেন এবং প্রশ্ন করেছিলেন, পর্যবেক্ষণের পূর্বে কি একটি বেড়াল একইসাথে ও একইসময় জীবিত ও মৃত? তার মানে আমাদের ইউনিভার্স পনের বিলিয়ন বছর পূর্বে বিস্ফোরিত হয়েছে আবার এখনও হয়েছে? যেহেতু পর্যবেক্ষণের পূর্বে একটি ঘটনা সম্ভাব্য দুটি স্থানেই নয় ,  সম্ভাব্য দুটি সময়েও একই সময় অবস্থান করে?

ইউনিভার্সিটির স্কলাররা শ্রডিঙ্গার’স ক্যাটের মতো অদ্ভুত  ও দূর্বোধ্য বাস্তবতাকে মেনে নিয়েছে, তারা এটাও মেনে নিয়েছে মহাবিশ্ব শূন্যস্থানের তৈরি , তারা মেনে নিয়েছে , হ্যা, মহাবিস্ফোরণের মধ্য দিয়েই ২৮ বিলিয়ন গিগাপার্সেক রেডিয়াসের এ মহাবিশ্ব সম্প্রসারিত হয়েছে কিন্তু তারা ডারউইনের বিবর্তনের মত এতো সহজ, সরল  বাস্তবসম্মত এবং অগণিত উপায়ে প্রমাণিত থিওরিকে মেনে নিতে পারেনি! প্রাকৃতিক নির্বাচন, গ্রেজুয়ালিজম, স্পেসিয়েশন, জেনেটিক্যাল ড্রিফট, ফসিল রেকর্ড , রেট্রো-ডিকশন বিবর্তন তত্ব দ্বারা প্রেডিক্টেড  এ কয়েকটি ধাপকে বহুবার বহুভাবে বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছে কিন্তু কলেজ ও ইউনিভার্সিটির মহাজ্ঞানী মহাপণ্ডিতরা এতো অফুরন্ত প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও ডারউইনের বিবর্তন তত্ত্ব মানতে পারে না!  কলেজগুলোতে বিবর্তনের পাশাপাশিও সৃষ্টিতত্ব পড়ানো হয়, কিন্তু কখনো কি আপনি শুনেছেন, কোয়ান্টাম ফিজিক্সের বিপরীতে এন্টি কোয়ান্টাম ফিজিক্স পড়ানো হয়েছে? স্পেশাল থিওরি অব রিলেটিভিটির বিপরীতে এন্টি রিলেটিভিটি পড়ানো হয়েছে?  বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিজ্ঞানের আর অন্য কোনো শাখার ব্যাপারে এত আতঙ্কিত ও ভীত সন্ত্রস্ত্র নয়, তারা শুধু ডারউইনের বিবর্তন তত্ত্বকে ভয় পায়, এ প্রতিষ্ঠিত তত্ত্বটিকে সেপিয়েন্সদের মস্তিষ্ক মেনে নিতে পারছেনা কারণ বিবর্তন বুঝলে অবিনশ্বর আত্মার অস্তিত্ব বিনষ্ট হয়ে যায়, মানুষ নিতান্ত সাধারণ একটি নর বানরে পরিণত হয়ে যায়, হোমো সেপিয়েন্সদের কোনো পরকাল থাকেনা, তারাও বর্তমানের কারাগারে অবরুদ্ধ হয়ে যায়, আর তাই শাশ্বত বর্তমানের কারাগার থেকে সেপিয়েন্সরা মুক্তি চায়! তারা এটা ভাবতে চায়না যে আমরা শুধু একবারের জন্যেই এসেছি, মৃত্যুর পর কোনো কনশাসনেস থাকবেনা, সেপিয়েন্সদের চেতনা মৃত্যুরপর তার চেতনাহীনতার কথা ভাবতে কষ্ট পায়, চেতনা চেতনার ভেতর থেকে চেতনাহীনকে ভাবতে অস্বস্তিবোধ করে! ঠিক এ জন্যেই ডারউইনের প্রাকৃতিক নির্বাচনকে ইউনিভার্সাল এসিড বলা হয় কারণ ডারউইন সোলার সিস্টেমের এ নর বানরটির সমস্ত বিশেষত্ব ভেঙে টুকরো টুকরো করে দেয়, তাকে মনে করিয়ে দেয় সে অতি সাধারণ একটি প্রাণী, প্রাকৃতিক নির্বাচনের চাপে সে জাদুকরী এক মস্তিষ্ক প্রাপ্ত হয়েছে, যে মস্তিষ্কটি স্বয়ং বিবর্তন প্রক্রিয়াকেই অস্বীকার করতে পারে, সে মস্তিষ্কটি পারে মস্তিষ্কের আবেগের উন্মাদনায় ফিজিক্সের পরিবর্তে ঈশ্বরকে প্রতিস্থাপন করতে অথবা নিজেকেই  ইকোসিস্টেমের ঈশ্বর দাবি করতে! ইউভাল নোয়া হারারি তার হোমো ডিউস গ্রন্থে বলেছেন,

‘’This is no kindergarten fairy tale, but an extremely powerful myth that continues to shape the lives of billions of humans and animals in the early twenty-first century. The belief that humans have eternal souls whereas animals are just evanescent bodies is a central pillar of our legal, political and economic system. It explains why, for example, it is perfectly okay for humans to kill animals for food, or even just for the fun of it.’’

দূর্ভাগ্যজনকভাবে এ আত্মার ধারণার উপরই মানব সভ্যতার আইন, রাজনীতি ও অর্থনৈতিক সিস্টেম গঠিত। যার অস্তিত্ব আছে কি নেই সে ব্যাপারেই তারা নিশ্চিত নয়,  সে সম্ভাবনার উপর ভর করেই সমস্ত পৃথিবীর সকল সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। ভাইরাস অস্তিত্বশীল কিন্তু সে সমস্ত পৃথিবীকে দখল করতে পারেনি, সিংহ অস্তিত্বশীল কিন্তু সে পৃথিবীর রাজনীতি ও অর্থনীতিতে নাক গলায় না কিন্তু যা অস্তিত্ব ও অনস্তিত্ব কোনোটার মধ্যেই সুস্পষ্টভাবে উপস্থিত নয়, মানুষের কল্পনাশক্তি তাকে সমস্ত পৃথিবীর  মিম পুলে ছড়িয়ে দিয়েছে! মানুষের মধ্যে শাশ্বত আত্মা আছে, তাই মানুষ পৃথিবীর যেকোনো প্রাণীকে খেতে পারে, এমনকি অনেক সময় মজা করেও তারা প্রাণী হত্যা করে! হয়তোবা নিজেদের অপরাধ প্রবণতাকে আড়াল করতেই এ বিবেকবান প্রাণীরা নিজদের শাশ্বত আত্মা বলে সান্ত্বনা দেয় ! সত্যিকারের ল্যাবরেটরির  এক্সপেরিমেন্টে দেখা গেছে, শুকর, ইঁদুর অথবা রিসাস বানর কারোই কোনো শাশ্বত আত্মা নেই, এমনকি হোমো সেপিয়েন্সদের হার্ট ও মস্তিষ্কে প্রায় দশ হাজার উপায়ে অদ্ভুত সব এক্সপেরিমেন্ট চালানো হয়েছে কিন্তু বিজ্ঞানীরা ক্লান্ত পরিশ্রান্ত হয়ে আবিষ্কার করেছে, অন্যান্য প্রাণীর মতো হোমো সেপিয়েন্সদের মধ্যে সেরকম জাদুকরী কোনো বিজলীর অস্তিত্ব নেই, বৈজ্ঞানিক ভাবে আত্মার সাপেক্ষে শূন্য প্রমাণ বিদ্যমান। হোমো সেপিয়েন্সদের কোনো আত্মা নেই।

২০১২ সালের গ্যালোপ পরিসংখ্যানে দেখা গেছে ১২ শতাংশ আমেরিকান  মনে করে হোমো সেপিয়েন্স প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে বিবর্তিত হয়েছে। ৩২ শতাংশ মনে করে মানুষ আদিম জীবনের কাঠামো থেকে বিবর্তিত হয়েছে কিন্তু ঈশ্বই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটিকে নিয়ন্ত্রণ করে। ৪৬ শতাংশ মনে করে ঈশ্বরই হোমো সেপিয়েন্সদের তৈরি করেছে বাইবেলে বর্ণিত আজ থেকে দশ হাজার বছর পূর্বে তার সাম্প্রতিক রুপে। বি এ গ্রেজুয়েটদের ৪৬ শতাংশ বিশ্বাস করে  সেপিয়েন্স বাইবেলে বর্ণিত উপায়ে সৃষ্টি হয়েছে, এদের মধ্যে মাত্র ১৪ শতাংশ মনে করে কোনোপ্রকার স্বর্গীয় হস্তক্ষেপ ছাড়াই সেপিয়েন্স তৈরি হয়েছে। এমনকি এমএ ও পিএইসডি ডিগ্রিধারীদের মধ্যে ২৫ শতাংশ বাইবেলে বিশ্বাস করে এবং ২৯ শতাংশ সেপিয়েন্সদের উদ্ভবের পেছনে ন্যাচরাল সিলেকশনকে ক্রেডিট দেয়। যা হোক, প্রাকৃতিক নির্বাচন সোল বা আত্মাকে স্বীকার করেনা, বিবর্তন তত্ব অনুসারে, জিন হলো প্রাকৃতিক নির্বাচনের একক, স্বার্থপর জিনই তার টিকে থাকার স্বার্থে সার্ভাইভাল মেশিনগুলো তৈরি করেছে, জিনের উদ্দেশ্য মানুষের অমরত্ব বা স্বর্গ লাভ নয়, জিনের উদ্দেশ্য তার নিজের অনুলিপি তৈরি করা, জিন আমাদের বৃদ্ধ শরীরের মৃত্যু ঘটায় কারণ এটি প্রজনন ও বংশবৃদ্ধি করতে অক্ষম । আর এসব বৃদ্ধ শরীরগুলো পরিবারের প্রজননক্ষমদের জন্যে এক একটি বাড়তি বোঝা। আমাদের কনসাসনেস আছে কি নেই তাতে জিনের কিছু আসে যায় না, জিন শুধুমাত্র তার অনুলিপি তৈরি করে, আর অনুলিপিকারক অনুগুলোই নিজেদের অনুলিপি তৈরি করতে গিয়ে  শরীর ও বাহিরের জগতের সময় সিনক্রোনাইজ করার জন্যে মধ্যবর্তী একটি যন্ত্রের প্রয়োজনীয়তা থেকে এক্সিডেন্সিয়ালি মস্তিষ্ক নামক একটি ডিভাইস তৈরি করে,  যেটি চিন্তা করতে সক্ষম ও যেটি মনে করে যে,  আমাদের চেতনার জন্ম জিন থেকে নয়,  ঈশ্বরের অনন্ত আত্মা থেকে! রিচার্ড ডকিন্স বলেন, এন্ড্রোমিডা গ্যালাক্সি থেকে কোনো প্রোগ্রামার যদি পৃথিবীতে কোনো কম্পিউটারের নকশা সেন্ড করে তবে মধ্যবর্তী দূরত্বের কারণে ২.৫ মিলিয়ন বছর পূর্ণ হওয়ার পূর্বে যেমন তারা পৃথিবীতে কম্পিউটারটি তৈরি হয়েছে কি না জানতে পারেনা ঠিক তেমনি জিন ও মস্তিষ্কের মাঝখানে সময় ও কার্যকারণগত পার্থক্যের কারণে জিনও জানেনা তার তৈরি সার্ভাইভাল মেশিনের ভেতর কনসাসনেস আছে এবং এটি চিন্তা করতে পারে, এবং তার তৈরি সেপিয়েন্সরা তার প্রোগ্রামকে অস্বীকার করে কোনো এক ঈশ্বরের ধারণার জন্ম দিয়েছে , তারা বিশ্বাস করে ঈশ্বরই তাদের অস্তিত্বের কারণ! অনুলিপিকারক জিনরা মিলিয়ন মিলিয়ন বছরের বিবর্তনে যে মস্তিষ্কটি তৈরি করেছে , সে মস্তিষ্কের স্নায়ুতন্ত্রের ভেতর নতুন একটি অনুলিপিকারক অণুর জন্ম হয়েছে, তবে সেটি জিনের মতো  কোনো ম্যাটারিয়ালসের তৈরি নয়, সেটি সংস্কৃতির তৈরি, এটিও অনুলিপি তৈরি করে, এ বিবর্তিত অনুলিপিকারক বিভিন্ন ধরণের তথ্য বা ধারণা অনুলিপি করে এবং সেগুলিকে এক মস্তিষ্ক থেকে অন্য মস্তিষ্কে ছড়িয়ে দেয়। এন্ড্রোমিডা গ্যালাক্সি থেকে কোনো প্রোগ্রামার পৃথিবীতে কোনো একটি কম্পিউটার প্রোগ্রাম সেন্ড করলে সেটি কার্যকর হয়েছে কিনা সে তথ্য যেমন ২.৫ মিলিয়ন বছর আগে এন্ড্রোমিডাবাসী জানতে পারেনা,  ঠিক তেমনি জিনও জানে না তার তৈরি মস্তিষ্কের ভেতর আরো এক ধরণের অনুলিপিকারক অণু তৈরি হয়েছে এবং সে অণুগুলো বিভিন্ন রকম অদ্ভুত ও অবান্তর ধারণা অনুলিপি করে! নতুন এ অনুলিপিকারক অণুগুলোকে রিচার্ড ডকিন্স মিম বলে দাবি করেছেন এবং তিনি মনে করেন প্রকৌশলগত দিক থেকে মিমও জিনের মতো জীবিত, তারাও বায়োলজিক্যাল কারণ তারা মস্তিষ্কের  স্নায়ুতন্ত্রে বাস করে এবং জৈব রাসায়নিক উপাদানগুলোর সাথে জটিল মিথস্ক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে, তারা জিনের মতোই নিজের অনুলিপি তৈরি করে ও এক মস্তিষ্ক থেকে অন্য মস্তিষ্কে ঘুরে বেড়ায়। ঈশ্বর ও অবিনশ্বর আত্মাও এমন একটি মিম, কোন ব্যাক্তির মস্তিষ্ক ধবংস হয়ে গেলেও তার মস্তিষ্কের এ ধারণাগুলো ভবিষ্যত প্রজন্মের মস্তিষ্কে টিকে থাকে আর এ অর্থে মিম জৈবিক শরীরেই অবস্থান করে এবং এটি জিনের মতোই প্রাণময়!  ঈশ্বর ও আত্মার অস্তিত্ব আছে  , তবে সেটি আমরা যে অর্থে ভাবি সে অর্থে নয় , ঈশ্বরের অস্তিত্ব আছে আমাদের ডিএনএ ভাইরাসের মতোই কিছুটা ভিন্ন এক ধরণের  নতুন অনুলিপিকারক অণু হিসেবে, সে অণুটি মস্তিষ্কের জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়াকে ব্যবহার করে, তার অনুলিপি তৈরি করে এবং ছড়িয়ে পড়ে মানব সভ্যতার সামগ্রিক স্নায়ুতন্ত্রে! রিচার্ড ডকিন্স বলেছেন, ফিজিক্সের সূত্রগুলি যেমন মহাবিশ্বের সকল বস্তুর উপর সমানভাবে প্রযোজ্য, ফিজিক্সের সূত্রগুলির মধ্যে যেমন একপ্রকার বিশ্বজনীনতা আছে ঠিক তেমনি জীববিজ্ঞানেরও এমন একটি বিশ্বজনীন মূলনীতি থাকা সম্ভব! আপনি টাইম ট্রাভেল করে এক মিলিয়ন বছর অতীতে চলে গেলেও দেয়ালে ধাক্কা খাবেন কারণ দেয়ালের পরমাণুগুলো শূন্যস্থানের তৈরি হলেও সেগুলোর ভেতর তখনও কাজ করে ফোর্সফিল্ড , আপনি উপরের দিক লাফ দিলে নিচে পড়ে যাবেন কারণ পৃথিবীর কেন্দ্রে কাজ করে গ্র‍্যাভিটি। ঠিক তেমনি মহাবিশ্বে যদি কার্বনভিত্তিক জীবনের পরিবর্তে সিলিকন বেস জীবনেরও অস্তিত্ব থাকে, যদি জীবন শরীরের তৈরি না হয়ে কম্পমান ইলেক্ট্রিক্যাল সার্কিটের তৈরিও হয়,  তবুও তাদের মধ্যে নিজেদের অনুলিপি করার সার্বজনীন একটি নীতি কার্যকর থাকবে, তিনি চ্যালেঞ্জ করে বলেছেন, অনুলিপিকারক অনুগুলো আমাদের ডিএনএ হোক অথবা হোক কোনো কম্পিউটার প্রোগ্রাম তাদের প্রত্যেকের মধ্যে নিজেদের অনুলিপি করার বৈশিষ্ট্যটি উপস্থিত থাকবে , আর এ ধরণের অনুলিপিকারক অণুদেরকে আবিষ্কার করার জন্যে নাসার কোনো বিজ্ঞানীকে মিল্কিওয়ের অন্য কোনো গ্রহে ভ্রমণ করার প্রয়োজন নেই, এমন অনুলিপিকারক অণু  আমাদের পৃথিবীতেই জন্ম নিয়েছে, অ্মজন জঙ্গলে নয়, নয় কোনো মহাসমূদ্র অথবা কম্পিউটারে , সেগুলোকে পাওয়া যাবে সরাসরি বিজ্ঞানীর মস্তিষ্কের নিউরাল নেটওয়ার্কে, যদি সে একবারের জন্যে সচেতন হয়!

আউটগ্রোয়িং গড

আত্মার অস্তিত্বকে বিজ্ঞান পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার পর এবার হোমো সেপিয়েন্সরা বলতে শুরু করলো তাদের শাশ্বত মন আছে। তারা মনে করতো, মন ও আত্মা সম্পূর্ণ বিপরীত। তারা বলতে শুরু করলো মন অবিনশ্বর। আমাদের হাত, পা, নাক, চোখ সবকিছু বিলুপ্ত হয়ে গেলেও আমাদের মন বিলুপ্ত হয় না। মন হলো বিভিন্ন সাবজেক্টিভ অভিজ্ঞতার প্রবাহ, যেমন প্রেম,ভালোবাসা, রাগ, অভিমান ইত্যাদি। এ ধরণের মানসিক অভিজ্ঞতা তৈরি হয় পারস্পরিকভাবে সম্পর্কযুক্ত বিভিন্ন সংবেদন, আবেগ ও চিন্তা দ্বারা। এসব অভিজ্ঞতাগুলো আমাদের মস্তিষ্কে কিছুক্ষণ সময়ের জন্যে জাগ্রত হয় আবার অদৃশ্য হয়ে যায়। এ উত্তেজিত অভিজ্ঞতার সংগ্রহই আমাদের চেতনার প্রবাহ তৈরি করে, আত্মা অখন্ড কিন্তু আমাদের মনের বিভিন্ন অংশ আছে , এটি প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে, অতএব এটাকে শাশ্বত ভাবার কোনো কারণ নেই এখানে।

আত্মা এমন একটি গল্প যা কেউ গ্রহণ করলে, কেউ বর্জন করে কিন্তু আমাদের চেতনার স্রোত বিপরীতভাবে একটি মূর্তিমান বাস্তবতা,  যেটিকে আমরা প্রত্যেকটি মুহূর্তে আমাদের মস্তিষ্কে অনুভব করি। আপনি এর অস্তিত্ব নিয়ে কোনো সন্দেহ প্রকাশ করতে পারবেন না। এমনকি যখন আমাদের মনে কোনো সন্দেহ জাগ্রত হয় ; আসলেই কী সাবজেক্টিব রিয়েলিটির অস্তিত্ব আছে কি না , তখনও আমরা নিশ্চিত যে আমরা সন্দেহ নামক একটি অনুভূতির অভিজ্ঞতা অর্জন করছি। প্রত্যেকটি সাবজেক্টিভ অভিজ্ঞতার দুটি মৌলিক চরিত্র আছে, সংবেদন ও আকাঙ্ক্ষা। রোবট এবং কম্পিউটারের কোনো কনশাসনেস নেই কারণ তাদের অসংখ্য ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তারা কোনোকিছুই অনুভব করতে পারেনা এবং তাদের কোনো অভিলাষ নেই। রোবটের সম্ভবত এনার্জি সেন্সর রয়েছে,  যেটি এর সেন্ট্রাল  প্রসেসিং ইউনিটে সিগনাল প্রদান করে,  যখন এর ব্যাটারি চালু থাকে। রোবট হয়তো ইলেক্ট্রিক্যাল শকেটের দিকে মুভ করতে পারে , নিজেকে নিজে প্লাগ ইন করতে পারে এবং তার ব্যাটারিকে রিচার্জ করতে পারে। যাই হোক, সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি সম্পাদিত হওয়ার সময় রোবট কোনোকিছুর অভিজ্ঞতা অর্জন করেনা, একজন মানুষের শরীরে শক্তি হ্রাস পেলে তার ক্ষুধা লাগে এবং এ অস্বস্তিকর সেনসেশন দূর করার জন্য তার মধ্যে তাড়না তৈরি হয় আর এ জন্য আমরা বলতে পারি যে মানুষ চেতনাসম্পন্ন , রোবটের কোনো চেতনা নেই। ঠিক এ জন্যেই একজন মানুষ ক্ষুধা  ও ক্লান্তিতে ঢলে পড়লে তাকে দিয়ে কাজ করানো অপরাধ কিন্তু রোবটের কোনো ক্ষুধা  বা ক্লান্তি নেই, তার ব্যাটারি শেষ হয়ে গেলেও তার মধ্যে কোনো ক্লান্তি বা অশান্তি কাজ করে না আর এজন্যেই রোবটকে তার ব্যাটারির চার্জ শেষ হওয়া অবধি কাজ করালেও কোনো নৈতিক দায়বদ্ধতা তৈরি হয়না!

কিন্তু প্রাণীদের ক্ষেত্রে আমরা কি বলবো? একটি রোবটের ব্যাটারির চার্য শেষ হওয়া অবধি তাকে দিয়ে কাজ করালেও কোনো নৈতিক দায় তৈরি হয়না কিন্তু একই সূত্র কি প্রাণীদের উপরও প্রযোজ্য? একটি ঘোড়াকে কি ক্লান্তিতে ঢলে পড়ার পুর্ব পর্যন্ত কাজ করানো উচিত? সেও কি রোবটের মতো যন্ত্রণা ও  আবেগহীন? সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, সকল মামেল ও পাখি, সরিসৃপ এবং মাছদেরও ইমোশন আছে। কিন্তু আমরা তাদেরকে যন্ত্র থেকে নিকৃষ্ট মনে করি, আমরা শুধু তাদেরকে দিয়ে কাজই করাই না, আমরা তাদেরকে খাই ও খাওয়ার পূর্বে দিনের পর দিন সামাজিক বন্ধনহীন, কৃত্রিম বস্তুগত খামারে  শারীরীক ও মানসিকভাবে অত্যাচার করি। কারণ তাদের ভেতর মন বা কনসাসনেস আছে বলে আমরা সাব-কনসাসলি বিশ্বাস করিনা, আমরা তাদেরকে রোবট মনে করি, আমাদের ব্রেন তাদের প্রতি আবেগ অনুভব করেনা!

যাইহোক, ইউভাল নোয়া হারারি বলেন,  সবচেয়ে অধুনিক তত্ত্ব অনুসারে, সেনসেশন ও ইমোশনবায়োকেমিক্যাল ডাটা-প্রসেসিং এলগোরিদম। যদিও আমরা জানি যে রোবট ও কম্পিউটারও কোনোপ্রকার সাবজেক্টিভ অভিজ্ঞতা ছাড়া ডাটা প্রসেস করে। হয়তোবা প্রাণীদের ক্ষেত্রেও একই প্রসেস কাজ করতে পারে।  তারাও হয়তো রোবটের মতোই এলগোরিদম মেনে চলে কিন্তু তাদের কোনো অভিজ্ঞতা নেই? মূলত, আমরা জানি যে, মানুষের অনেক সেন্সরি ও ইমোশনাল ব্রেন সার্কিট তাদের ভেতর কনসাশনেস ইনপুট হওয়ার পূর্বেই সংঘটিত হয়। অতএব, হয়তো প্রাণীদের সংবেদন ও আবেগের পেছনে আমরা যে ক্ষুধা , আতঙ্ক , ভালোবাসা ও বিশ্বস্ততাকে দায়ী মনে করি সেগুলোও হয়তো অচেতন এলগোরিদম,  কোনোপ্রকার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা হওয়ার পরিবর্তে? এ থিওরিটি আধুনিক দর্শনের পিতা রিন ডেসকার্টিস প্রস্তাব করেছিলেন, তার মতে শুধুমাত্র মানুষের অনুভূতি ও আকাঙ্ক্ষা আছে,  যেখানে অন্য সকল প্রাণী শুধুই মনহীন অটোম্যাটা, যারা অনেকটা রোবট অথবা ভেন্ডিং মেশিন এর মতো। একজন মানুষ যখন কুকুরকে লাথি মারে তখন কুকুরটি কিছুই বুঝতে পারেনা। কুকুরটিকে লাথি মারলে কুকুরটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঝাঁকুনি ও চিৎকার করে ঠিক যেমনি একটি ভেন্ডিং মেশিন কিছু অনুভব না করেই এক কাপ কফি তৈরি করে। এ থিওরিটি ডেসকার্টিসের সময় ব্যাপকভাবে গ্রহণ করা হয়েছিলো,  এমনকি তখন ডাক্তার ও স্কলাররা প্রাণীদের শরীরের ইন্টারনাল অর্গানগুলো কোনো প্রকার এনেসথেটিক ছাড়াই ডাইসেক্ট করে দেখতো! তারা এর মধ্যে খারাপ কিছু দেখতোনা ঠিক যেমনি আমরা একটি ভেন্ডিং মেশিনের লিড খুলে গিয়ার ও কনভেয়ার দেখার সময় খারাপ কিছু অনুভব করি না! একুশ শতকের প্রারম্ভেও বিপুল পরিমাণ মানুষ ছিলো যারা মনে করতো প্রাণীদের কোনো কনসাশনেস নেই, অথবা তাদের সম্পূর্ণ ভিন্ন রকমের ইনফারিয়র কনশাসনেস রয়েছে। আমাদের মতো প্রাণীদের কনসাস মাইন্ড আছে কি না সেটি জানতে হলে প্রথমত আমাদের জানতে হবে, মন কিভাবে কাজ করে! আমরা কিছু মহান প্রযুক্তি সম্পর্কে বুঝতে পারবোনা যদি আমরা এটা না বুঝি যে মন কিভাবে কাজ করে বিশেষ করে আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্সকে বুঝতে হলে আমাদেরকে মনের কার্যপদ্ধতি বুঝতে হবে। এখন আমরা জানবো মন বা কনশাসনেস সম্পর্কে আসলে সাধারণত বিজ্ঞানীরা কি বুঝে। আমরা মানব চেতনার উপর পরিচালিত কিছু গবেষণার উদাহরণ নিতে পারি এক্ষেত্রে যা আমাদের জন্যে অধিক অধিগমনযোগ্য এবং তারপর আমরা প্রাণীদের চেতনায় ফিরে যাবো এবং জানবো যা মানুষের জন্য সত্য তা অন্যদের জন্যে সত্য কি না! সাম্প্রতিক প্রচলিত ধারনা হলো মন হলো আমাদের মস্তিষ্কের ইলেক্ট্রোকেমিক্যাল রি-একশন আর সেজন্যে মেন্টাল অভিজ্ঞতাগুলো কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ফাংশন মেনে চলে। যাইহোক কেউই জানেনা  যে কিভাবে বায়োকেমিক্যাল রি-একশন এবং ইলেক্ট্রিক্যাল কারেন্ট মস্তিষ্কের ভেতর ব্যাথা, রাগ অথবা ভালোবাসার অভিজ্ঞতা তৈরি করে! এখনো পর্যন্ত আমাদের কাছে এর কোনো ব্যাখ্যা নেই, এফএমআরআই স্ক্যান ব্যবহার করে , ইলেক্ট্রোড ও সোফিস্টকেটেড গেজেট স্থাপন করে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিতভাবে মস্তিষ্কের ইলেক্ট্রিক্যাল কারেন্ট ও বিভিন্ন ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার মধ্যকার সংযোগ আবিষ্কার করেছেন। আমি এখন ইউভাল নোয়াহ হারারির হোমো ডিউস থেকে  সাম্প্রতিক বিজ্ঞানের আলোকে সেপিয়েন্সদের চেতনার সায়েন্টিফিক ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করবো। সেপিয়েন্স গ্রন্থের লেখক হারারি তার হোমো ডিউস গ্রন্থে অত্যন্ত চমৎকার ভাবে সেপিয়েন্সদের কনশাসনেসের জীববৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিয়েছেন এবং আধুনিক ব্রেন সায়েন্স ,  এলগোরিদম ও রোবটিক্সের আলোকে এটিকে সম্পূর্ণ রুপে উন্মুচন করেছেন।

আপনার মস্তিষ্কের ব্রেন একটিভিটিজ দেখেই বিজ্ঞানীরা বলে দিতে পারবে আপনি জেগে আছেন অথবা ঘুমোচ্ছেন। তারা খুব স্বল্প সময়ের জন্যে আপনার সামনে একটি ছবি ধরবে এবং আপনার মস্তিষ্কের ইলেক্ট্রিক্যাল একটিভিটিজ পর্যবেক্ষণ করেই বলে দিতে পারবে আপনি ছবিটি দেখেছেন নাকি দেখেন নি, আপনাকে কোনোপ্রকার প্রশ্ন না করেই। তারা মস্তিষ্কের স্বতন্ত্রকিছু নিউরন সেলের সাথে মেন্টাল কন্টেন্টের সম্পর্ক নির্ধারণ করে দিতে পারেন। ২০০৫ সালে UCLA এবং CALTECH স্টাডিতে প্রমাণিত হয়েছে মানুষের মস্তিষ্কের ভিন্ন ভিন্ন কিছু সেল ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তির জন্যে রেসপন্স করে। যেমন বিল ক্লিনটন অথবা জেনিফার এনিস্টন। হল বেরির সাথে সম্পৃক্ত একটি নিউরন আছে , হল বেরির এবস্ট্রাক্ট এন্টিটির কনসেপ্টের প্রতিও এটি রেসপন্স করে , শুধুমাত্র ছবি নয়, হল বেরির প্রকৃত নামও। যখন বিল ক্লিনটন নিউরন অন হয় তখন ঐ ব্যক্তি নিজেকে ৪০ সেকেন্ডের জন্যে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট মনে করে। আরও  বিস্তারিতভাবে বিজ্ঞানীরা এখন জানেন যে,  আপনার মস্তিষ্কের কোনো একটি নির্দিষ্ট এরিয়ায় ইলেক্ট্রিক্যাল স্রোত প্রবাহিত হলে আপনি রাগ অনুভব করেন এবং যদি এই ইলেক্ট্রিক্যল স্রোত ভিন্ন কোনো এরিয়ায় প্রবাহিত হয় তবে সেটি লাইট আপ হয় এবং ব্যক্তি ভালোবাসা অনুভব করে। এমনকি বর্তমানে বিজ্ঞানীরা আপনার মস্তিষ্ককে ইলেক্ট্রিক্যালি স্টিমুলেট করে সেখানে প্রেম ও রাগ তৈরি করতে পারে। কিন্তু কিভাবে পৃথিবীতে ইলেকট্রনদের এক স্থান থেকে অন্যস্থানের মুভমেন্ট বিল ক্লিনটনের সাবজেক্টিভ ইমেজে পরিণত হয়ে যায়? অথবা রাগ এবং ভালোবাসার সাবজেক্টিভ ফিলিংস তৈরি করে? এর সবচেয়ে সাধারণ ব্যাখ্যা হলো, মস্তিষ্ক অত্যন্ত উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন জটিল একটি সিস্টেম , এর রয়েছে ৮০ বিলিয়ন নিউরন সেল যেগুলো  বিলিয়ন বিলিয়ন আভ্যন্তরিণ ওয়েভের সাথে অত্যন্ত গভীরভাবে সম্পৃক্ত, যখন বিলিয়ন নিউরন মস্তিষ্কের সামনে ও পেছনে বিলিয়ন বিলিয়ন ইলেক্ট্রিক্যাল সিগনাল সেন্ড করে তখন সাবজেক্টিভ এক্সপেরিয়েন্স এমার্জ হয়। যদিও নিউরন সেলে বিলিয়ন বিলিয়ন ইলেক্ট্রিক্যাল সিগনালের এ আদান প্রদান অত্যন্ত সাধারণ জৈব রাসায়নিক ঘটনা , কিন্তু এ সকল সিগনালের ইন্টারেকশন এমনকিছু তৈরি করে যা অনেক বেশি কমপ্লেক্স , যেটিকে বলে কনসাসনেসের প্রবাহ! আমরা একই ডায়নামিক্স আরো বিভিন্ন ফিল্ডে পর্যবেক্ষণ করি। যেমন- একটি স্বতন্ত্র গাড়ির কার্যবিধি সরল কিন্তু যখন মিলিয়ন মিলিয়ন গাড়ি এক সাথে মুভ করে এবং সমসাময়িকভাবে ইন্টারেক্ট করে তখন, ট্রাফিকজ্যাম এমার্জ ( EMERGE) হয়। একটি সিঙ্গেল শেয়ার কেনা বেচা সরল কিন্তু যখন মিলিয়ন ট্রেডার্স শেয়ার কেনাবেচা করে এটি অর্থনৈতিক সমস্যার জন্ম দেয় যা যেকোনো বিশেষজ্ঞকেও বোবা করে দিতে পারে! যদিও এ ব্যখ্যা কোনোকিছুই এক্সপ্লেইন করেনা। এটি সমস্যাটিকে আরো জটিল করে তোলে। এগুলো আমাদের কাছে ব্যাখ্যা করেনা কিভাবে মস্তিষ্কের নিউরনগুলো  বিলিয়ন ইলেক্ট্রিক্যাল সিগনালের মুভমেন্টের মাধ্যমে বিভিন্ন রকম সাবজেক্টিভ অভিজ্ঞতা তৈরি করে, যেমন- রাগ অথবা ভালোবাসা! ট্রাফিকজ্যাম এবং ইকোনোমিক ক্রায়সিসের এনালোজিগুলোও ত্রুটিপূর্ণ।

ট্রাফিকজ্যাম কিভাবে তৈরি হয়? আপনি যদি একটি নির্দিষ্ট কারকে ফলো করেন তবে আপনি ব্যপারটি বুঝতে পারবেন না। ট্রাফিকজ্যাম হলো বিপুল পরিমাণ কারের একটি ইন্টারেকশন। কার ‘’এ’’ কার ‘’সি’’ কে প্রভাবিত করে যা ‘’ডি’ এর পথ অবরোধ করে, আর এটি এভাবে চলতে থাকে। তবুও যদি আপনি প্রতিটি প্রাসঙ্গিক কারের মুভমেন্ট ম্যাপ করেন এবং তারা কিভাবে একে অপরকে প্রভাবিত করে , আপনি হয়তো ট্রাফিকজ্যামের কমপ্লিট একাউন্ট পাবেন। কিন্তু এ ধরণের প্রশ্ন করা অবান্তর যে, কিভাবে এসব মুভমেন্ট ট্রাফিকজ্যাম তৈরি করলো? আসলে ট্রাফিকজ্যাম হলো একটি এবস্ট্রাক্ট টার্ম,  যা আমরা মানুষরা বিশেষ কিছু ঘটনার সংগ্রহকে বুঝানোর জন্যে ব্যবহার করি। কিন্তু অপরদিকে, রাগ সম্পূর্ণ কংক্রিট একটি অভিজ্ঞতা, এমনকি পৃথিবীর মানুষ যখন বিদ্যুৎ সম্পর্কে কোনোকিছুই জানতো না তখনও তারা রাগের সাথে পরিচিত ছিলো। আমি যখন বলি যে আমি রাগান্বিত বা আনন্দিত  তখন আমি খুব দৃশ্যমান একটি অনুভূতিকে সঙ্গায়িত করি।

যদি আপনি ডেসক্রাইভ করেন কিভাবে নিউরনের কেমিক্যাল রিয়েকশন ইলেক্ট্রিক সিগনালের জন্ম দিলো, কিভাবে একই ধরণের বিলিয়ন রি-একশন বিলিয়ন নতুন সিগনাল তৈরি করলো। এটি খুব একটা স্বার্থক প্রশ্ন নয়। কিন্তু কিভাবে বিলিয়ন বিলিয়ন ইভেন্ট একে অপরের সাথে একত্রিত হয়ে আমার মাঝে একটি মূর্তিমান রাগ তৈরি করে দিয়ে গেলো অথবা আনন্দ ? যখন হাজার হাজার কার লন্ডনের একটি রাস্তায় ধীরে ধীরে মুভ করে তখন আমরা সেটাকে ট্রাফিকজ্যাম বলি কিন্তু এটি কোনো লন্ডনিয়ান কনসাশনেস তৈরি করেনা, যেটি পিকাডেলির উপর ঘুরে এবং বলে, ব্লিমি, আমার জ্যাম লাগছে সবকিছু! যখন মিলিয়ন ব্যক্তি শেয়ার বিক্রি করে এবং ইকোনোমিক ক্রায়সিস তৈরি হয় তখন ওয়াল স্ট্রিটের আত্মা বলেনা, ধুর, আমি ক্রায়সিসে পড়ে গেছি।

যখন ট্রিলিয়িন মলিকিউল আকাশে একত্রিত হয় এবং মেঘ তৈরি করে , তখন মেঘের কোনো কনসাসনেস বের হয়ে এসে বলে না যে, আমি বৃষ্টি অনুভব করছি। তাহলে কিভাবে আমার মস্তিষ্কে গতিশীল বিলিয়ন ইলেক্ট্রিক্যাল সিগনাল থেকে মন আত্মপ্রকাশ করে এবং বলে, আমি ক্ষিপ্ত? বিজ্ঞান এখনো এর উত্তর সম্পূর্ণ জানেনা। কিন্তু বিজ্ঞানের একটি সুন্দর দিক হলো যখন তারা কোনোকিছু বুঝতে পারেনা,  তখন তারা সকল থিওরি ও কনজাক্সার দিয়ে চেষ্টা করে কিন্তু অবশেষে তারা তাদের অজ্ঞতাকে স্বীকার করে নেয়!

বিজ্ঞানীরা এখনো জানেনা কিভাবে বিলিয়ন বিলিয়ন ইলেক্ট্রিক্যাল সিগনাল সম্মিলিত হয়ে আমাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাগুলো তৈরি করে। এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি সেটি হলো এসকল পেনোমেনোনের বিবর্তনীয় উপযোগীতাই বা কী। মানুষের পা আছে কারণ মিলিয়ন মিলিয়ন বছর ধরে পা আমাদের এনসেস্টরদের খরগোশ শিকার করতে সহযোগীতা করেছে, সহযোগিতা করেছে সিংহের থাবা থেকে পালাতে। আমাদের এনসেস্টরদের চোখ ছিলো কারণ অগণিত বিলিয়ন চোখ আমাদের পূর্বসুরিদের খরগোশ ও সিংহকে সনাক্ত করতে সক্ষম করে তুলেছিল । কিন্তু কেনো মানুষের মাঝে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা কাজ করে, ক্ষুদা ও আতঙ্কের মতো। খুব বেশি দেরি হয়নি বায়োলজিস্টরা এর অত্যন্ত সাধারণ একটি উত্তর দিয়েছিলো, তারা বলেছিলো,  এগুলি আমাদের টিকে থাকার জন্যে জরুরী বলেই টিকে আছে।তারা বলেছিলো আমরা যদি ক্ষুধা  ও আতঙ্ক অনুভব না করতাম তবে আমরা র‍্যাবিট শিকার করার জন্যে নিজেদের ভেতর নির্যাতিত হতাম না এবং সিংহের কবল থেকে পালাতেও ইচ্ছে করতোনা! একজন ব্যক্তি সিংহকে দেখলে কেনো পালিয়ে যায়? বেশ, এর কারণ সে ভয় পায় , ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাই তার কর্মকে ব্যাখ্যা করে।

বর্তমান বিজ্ঞান এটাকে আরো বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করে। যখন একজন ব্যক্তি কোনো একটি সিংহকে দেখে তখন ইলেক্ট্রিক সিগনাল তার চোখ থেকে মস্তিষ্কে প্রবেশ করে। এসব আগত সিগনাল মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট কিছু নিউরনকে স্টিমুলেট করে , এ নিউরনগুলো আরো অধিক সংখ্যক সিগনাল তৈরি করে , এবং এ সিগনালগুলো অন্যান্য নিউরনের কাছে যায়,  আর এভাবে এ প্রক্রিয়া চলতে থাকে । যদি যথেষ্ট যথাযথ নিউরন উদ্দীপিত হয় , কমান্ডটি এড্রেনাল গ্ল্যান্ডে যায় , সমস্ত শরীরে এড্রেনালিন প্রবাহিত হয় , হৃদপিন্ডকে জোরে জোরে বিট করতে নির্দেশনা দেয়া হয়, আর তখন মোটর সেন্টারের নিউরন পায়ের পেশিতে সিগনাল প্রেরণ করে যা সোজা ও সংকুচিত হতে থাকে , মানুষটি সিংহটিকে ছেড়ে পালাতে থাকে । কিন্তু দূর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা যতই ভালোভাবে এ প্রসেসটিকে ম্যাপ করি কনশাস ফিলিংসকে এক্সপ্লেইন করাটা আমাদের জন্যে ততই কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে উঠে। যদি সম্পূর্ণ সিস্টেমটাই ইলেক্ট্রিক্যাল সিগনাল এদিক ওদিক ছোটাছোটির ভেতর দিয়ে কাজ করে তবে আমরা কেনো আতঙ্ক অনুভব করি? যদি চেইন অব ইলেক্ট্রোকেমিক্যাল রি-একশন আমাদের চোখের নার্ভ থেকে পায়ের মুভমেন্ট পর্যন্ত নেতৃত্ব দেয় তবে আমরা কেনো অনর্থক সাবজেক্টিভ অভিজ্ঞতা লাভ করি?

শত শত কাঠের খন্ড একে অপরের উপর পতিত হয় কিন্তু তাদের কোনো ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা তৈরি হয়না। নিউরনগুলো  একে অপরকে স্টিমুলেট করলে কেনো ফিলিংস তৈরি হবে?  কেনো সে এড্রানাল গ্লেন্ডকে প্লাম্পিং শুরু করার জন্যে নির্দেশ দেবে? মূলত, আমাদের ৯৯ শতাংশ শারীরীক একটিভিটিজ , মাংশপেশির আন্দোলন থেকে শুরু করে হরমোনাল সেক্রেশন , সবকিছু সংঘঠিত হয় আমাদের সচেতন অনুভূতির কোনোপ্রকার প্রয়োজনীয়তা ছাড়াই! তাহলে কেনো আমাদের নিউরনস, মাশল এবং গ্লেন্ড শুধুমাত্র ১ শতাংশ ক্ষেত্রে সচেতন অনুভূতি রক্ষা করে? আমরা সচেতনভাবে অনুভব করিনা যে আমাদের দেহের সেলগুলোর ভেতর কিভাবে আমাদের জিন কাজ করছে, আমরা জানিনা কিভাবে আমার শরীরের প্রতিটি অর্গানে রক্ত সঞ্চালিত হচ্ছে, আমরা জানিনা কিভাবে আমাদের ইমিউন সিষ্টেম নিউট্রোফিলস ও টি কিলার সেল ব্যবহার করে মিলিয়ন মিলিয়ন পরজীবির সাথে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে চলেছে , আমরা এটাও জানিনা আমাদের মস্তিষ্কের ৮০ বিলিয়ন সেলের ভেতর কিভাবে ইলেক্ট্রিক পালসগুলো এদিকওদিক ছোটাছোটি করছে, আমাদের শরীরের ৯৯ শতাংশ কর্মকান্ডই আমাদের মস্তিষ্কে কনশাস ফিলিংস ইনপুট হওয়ার পূর্বে সংঘঠিত হচ্ছে কিন্তু প্রশ্ন হলো কেনো তবে আমরা মাত্র ১ শতাংশ কনশাসনেস অনুভব করি, এ এক শতাংশও  সচেতনতাও কী অবচেতনভাবে সংঘঠিত হতে পারতোনা? এ সামান্যতম ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ঠিক কেনো তৈরি হলো?

আপনি হয়তো দাবি করতে পারেন যে আমাদের একটি মন প্রয়োজন মেমোরি স্টোর করার জন্যে, পরিকল্পনা তৈরি করার জন্যে, যাদৃচ্ছিকভাবে নতুন ইমেজ ও আইডিয়া বিচ্ছুরিত করার জন্যে। এটি বাহিরের কোনো উদ্দীপনা দিয়ে প্রভাবিত হয়না। উদাহরণস্বরুপ, যখন একজন ব্যক্তি একটি সিংহকে দেখেন , সে শিকারী প্রাণীটিকে দেখার সাথেসাথে এমনি এমনি রিয়েক্ট করেনা। সে কল্পনা করে এক বছর পূর্বের কথা যখন বাঘ তার চাচিকে খেয়ে ফেলেছে, সে কল্পনা করে তার কেমন লাগবে যদি বাঘ তাকে ছিঁড়ে  টুকরো টুকরো করে। সে তার এতিম বাচ্ছাদের ভাগ্য নিয়ে চিন্তা করে আর সেজন্যেই সে পালায়। মূলত, তার মনের ভেতর তার নিজস্ব উদ্বোগে অসংখ্য চেইন রিয়েকশন সংঘঠিত হয় কোনোপ্রকার এক্সট্রারনাল উদ্দীপনার সহযোগিতা ব্যতীতই। আর এভাবেই পূর্বের কোনো সিংহের স্মৃতি স্বতস্ফূর্তভাবে তার মস্তিষ্কে কটমট করতে থাকে এবং সিংহের উপস্থিতিকে ভয় পাওয়ার জন্যে তাকে চিন্তা করতে বাধ্য করে। তারপর সে গোষ্ঠির সকলকে ডেকে নিয়ে আসে এবং তাদের সকলের সামগ্রিক ব্রেনস্ট্রোম বাঘটিকে তাড়ানোর জন্যে কোনো মহান উপায় আবিষ্কার করে!  কিন্তু এক মিনিট অপেক্ষা করেন, মেমোরি কি, ইমাজিনেশন ও থট কি জিনিস? তাদের লোকেশন কোথায়? আমাদের সাম্প্রতিক বায়োলজিক্যাল থিওরি অনুসারে , স্মৃতি, কল্পনা ও চিন্তা কোনো ইম্যাটারিয়াল ফিল্ডে অবস্থান করেনা। আমাদের মস্তিষ্কের স্মৃতি ,চিন্তা ও কল্পনা হলো বিলিয়ন বিলিয়ন নিউরন থেকে নির্গত ইলেক্ট্রিক্যাল সিগনালের এভাল্যান্সেস বা তুষারঝড়। চলতি সময়ের জীববিজ্ঞানের থিয়োরি অনুসারে, মেমোরি , ইমাজিনেশন এবং থট আসলে অস্তিত্বশীল নয়। আমরা যখন স্মৃতি, কল্পনা ও চিন্তাকে চিত্রায়িত করি আমরা তখনও ইলেক্ট্রোকেমিক্যাল একটিভিটিজের একটি সিরিজ ত্যাগ করি যা বিলিয়ন নিউরন অতিক্রম করে, এ একটিভিটির শেষ হয় এড্রেনাল গ্ল্যান্ড এবং লেগ মাশলে।

এ দীর্ঘ টুইস্টিং ভ্রমণে এমন একটি স্বতন্ত্র পদক্ষেপের কি অস্তিত্ব পাওয়া যাবে যেখানে একটি নিউরনের একশন অন্য নিউরনটিকে প্রভাবিত করবে আর মন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে দ্বিতীয় নিউরনটি ফায়ার হবে কি হবেনা? কোনো স্বতন্ত্র নিউরনের এমন কোনো মুভমেন্ট কি আছে যা ভয়ের সাবজেক্টিভ অভিজ্ঞতার জন্যে দায়ী পূর্ববর্তী পার্টিকেলের প্রভাব দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে? যদি দ্বিতীয় ইলেকট্রনটি প্রথম ইলেক্ট্রনের গতি দ্বারা প্রভাবিত হয়ে গতিশীল হয় তবে আমরা কেনো ভয়ের অভিজ্ঞতা লাভ করি?   আমাদের কাছে এর কোনো ইঙ্গিত নেই। দার্শনিকরা এ ধাঁধাটিকে একটি প্রশ্নে আবদ্ধ করেছেন, মনের মধ্যে কি এমন কিছু ঘটে যা মস্তিষ্কে ঘটেনা? যদি মনের মধ্যে এমন কোনো ঘটনাই সংঘঠিত না হয় যা আমাদের মস্তিষ্কের বিশাল নিউরাল নেটওয়ার্কে ঘটেনা – তবে আমাদের জন্যে কী আদৌ কোনো মনের প্রয়োজন আছে? যদি কোনো কিছু মনের উপরে ঘটে তবে নিউরাল নেটওয়ার্কের উপর কি ঘটে ,  where the hell does it happen?

মনে করুন, আমি আপনাকে জিজ্ঞেস করলাম, হোমার সিম্পসন,  বিল ক্লিনটন  ও মনিকা লিওনস্কির স্ক্যান্ডাল সম্পর্কে কি মনে করে? হয়তো এ ব্যাপারটি নিয়ে আপনি পূর্বে কোনোদিন ভাবেননি। অতএব আপনার মনের জন্যে অতীতের সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক দুটি মেমরি ফিউজ করা প্রয়োজন, সম্ভবত মদ্যপানরত অবস্থায় হোমার প্রেসিডেন্টকে দেখেছে এমন একটি ইমেজ কল্পনা করবে যেখানে রাষ্ট্রপতি তাকে বলছে, আমার সাথে ভদ্র মহিলার কোনো স্ক্যান্ডাল ছিলোনা। এ ফিউশনটি ঠিক কোথায় সংঘঠিত হয়?

কিছু ব্রেন সায়েন্টিস্ট দাবি করেন, এটি সংঘঠিত হয় গ্লোবাল ওয়ার্কপ্লেসে যা গণনাতীত নিউরনের ইন্টারেকশনে তৈরি হয় ,যদিও ওয়ার্কপ্লেস শব্দটি রুপক, এখন প্রশ্ন হলো এ রূপকের পেছনের বাস্তবতাটি কী? ঠিক কোথায় বিভিন্ন রকমের তথ্য একে অপরের সাথে সাক্ষাৎ করে এবং মিশ্রিত হয়?

সাম্প্রতিক থিওরি অনুসারে, এটি নিশ্চিতভাবে প্লেটোনিক ফিফথ ডায়মেনশনে ঘটেনা, তার পরিবর্তে , তারা বলে , যখন অতীতের  সম্পূর্ণ যোগাযোগহীন দুটি নিউরন একে অপরের সাথে আকস্মিক যোগাযোগ করে তখন একে অপরকে সিগনাল ফায়ার করতে শুরু করে। আর ঠিক তখন বিল ক্লিনটন নিউরন এবং হোমার সিম্পসন নিউরনের মধ্য নতুন সাইনাপ্স তৈরি হয়। যদি এটিই ঘটে থাকে তবে কেনো আমাদের স্মৃতির উপরে সচেতন অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হয় এবং দুটি নিউরনের সংযোগের ফিজিক্যল ইভেন্টের উপর। আমরা একই ধাঁধা ম্যাথমেটিক্যাল টার্মের মাধ্যমেও তৈরি করতে পারি। আমাদের সাম্প্রতিককালের প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী অর্গানিজম হলো এলগোরিদম এবং সে সকল এলগোরিদমকে গাণিতিক ফর্মুলায় প্রকাশ করা যায়। আপনি ভেন্ডিং মেশিনের সিরিজ অব স্টেপকে সংখ্যা অথবা গাণিতিক প্রতিকের মাধ্যমেও লিখতে পারেন এবং একটি হরিণের মস্তিষ্কের সিরিজ অব স্টেপগুলোকেও যা মস্তিষ্কটি একটি সিংহকে দেখার পর তৈরি করে। যদি তাই হয়, যদি কনশাস এক্সপেরিয়েন্স কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফাংশন পূরণ করে, তবে তাদেরও মেথমেটিক্যাল রিপ্রেজেন্টেশন অবশ্যই পাওয়া যাবে। আমরা যখন ভয়ের এলগোরিদম লিখবো এবং ভয় ভাঙার, আমরা এর জন্যে কিছু সুনির্দিষ্ট ক্যালকুলেশন করবো। আমাদের এখানে খুঁজে বের করা উচিত , এখানে রয়েছে ৯৩ টি পদক্ষেপ কেলকুলেশনটি সম্পাদন করার জন্যে – আর এটাই ভয়ের সাবজেক্টিভ এক্সপেরিয়েন্স! কিন্তু মেথমেটিক্যাল রিয়েল্মে এমন কোনো এলগোরিদমের অস্তিত্ব কি আছে যা সাবজেক্টিভ এক্সপেরিয়েন্স বহন করবে? আমরা যতদূর জানি, আমরা এমন কোনো এলগোরিদম সম্পর্কে কোনোকিছু জানিনা। যদিও আমরা মেথমেটিক্যাল ফিল্ড ও কম্পিউটার সায়েন্সে ব্যাপক জ্ঞান অর্জন করেছি,  কোনো ডাটা প্রসেসিং সিস্টেমই আমরা তৈরি করতে পারিনি যা সাবজেক্টিভ এক্সপেরিয়েন্সের জন্যে কাজ করতে পারে এবং এদের কোনো কোনোটিই  এখনো  ব্যাথা, সন্তুষ্টি, রাগ ও ভালোবাসা অনুভব করেনি।

সম্ভবত , সাবজেক্টিভ এক্সপেরিয়েন্স আমাদের নিজেকে জানার জন্য  প্রয়োজন ছিলো। একটি প্রাণি নিস্পদ প্রান্তরে ঘুরে বেড়াচ্ছে, সে তার টিকে থাকা ও প্রজননের সম্ভাবনা গণনা করছে যা তার নিজের কর্মকান্ডেরই প্রতিনিধিত্ব করছে এবং মাঝেমাঝে সে অন্য প্রাণীদের সাথে কমিউনিকেশন করছে। এবং মস্তিষ্ক চেষ্টা করছে তার নিজের মডেল তৈরি করার জন্য, এটি তখন একটি অসীম ডিগ্রেসনে পড়ে গেছে এবং অ্যাব্র্যাকডব্রা  ( জাদুকরী শব্দ) । আর এ অসীম ডিগ্রেসনের লুপ থেকে , কনসাসনেস ফটফট করে বেরিয়ে এসেছে । পঞ্চাশ বছর পূর্বেও এটি ছিলো বিশ্বাসযোগ্য। কিন্তু ২০১৬ থেকে ২০২১ এ নয়।  কিছুকিছু কর্পোরেশন, যেমন গুগল ও টেসলা ইচ্ছাশক্তি সম্পন্ন গাড়ি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে যা ইতোমধ্যে রাস্তায় মহড়াও চালায়! যে এলগোরিদম অটোনোমাস গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করে, সেটি প্রতি সেকেন্ডে মিলিয়ন মিলিয়ন গণনা করে অন্যান্য কার , পথচারী, ট্রাফিক লাইট ও পথের গর্ত নিয়ে। অটোনোমাস কার সফলতার সাথেই লাল বাতি জ্বললে থেমে যায় , কোনো প্রতিবন্ধকতা দেখলে সেটি এড়িয়ে যায় এবং অন্যান্য কার থেকে নিরাপদ দূরত্ব রাখে, কোনোপ্রকার আতঙ্ক বা ভয় অনুভব না করেই…! সে গাড়িটির নিজেকেও এক্ষেত্রে গণনায় নিতে হয়, সে নিজের পরিকল্পনা ও আকাঙ্খা  তার চারপাশের গাড়িদের কাছে প্রকাশ করে , কারণ সে ডানদিকে ঘুরতে চায় , এটি করার মাধ্যমে সে অন্যদের আচরণকে প্রভাবিত করে। গাড়িটি এসব করে কোনোপ্রকার সমস্যা ছাড়াই কিন্তু এখনো তার কোনো কনশাসনেস নেই, অটোনোমাস কার এ জন্যে বিশেষ কিছু না!

অনেক কম্পিউটার পোগ্রাম তাদের নিজেদের কর্মের সম্মতি নিজেরাই তৈরি করে কিন্তু তাদের কারো মাঝেই কনশাসনেস নেই এবং এগুলোর কোনটিই আকাঙ্খা অনুভব করেনা! আমরা যদি মনকে এক্সপ্লেইন করতে না পারি এবং যদি আমরা বুঝতে না পারি যে এটি আসলে কি করছে,  তবে কেনো আমরা বিরক্তিকর এ ব্যাপারটিকে বাদ দিতে পারছিনা? এটা নিয়ে কথা বলার কি কোনো প্রয়োজন আছে? বিজ্ঞানের ইতিহাস এমন অসংখ্য উপেক্ষাকৃত কনসেপ্ট ও থিওরি দ্বারা পরিপূর্ণ। উদাহরণস্বরুপ, প্রাচীন বিজ্ঞানীরা আলোর গতিশীলতাকে ব্যাখ্যা করার জন্যে ইথার নামক একটি উপাদানের অস্তিত্ব দাবি করেছিলো যা সম্পূর্ণ মহাবিশ্বে পরিপূর্ণ হয়ে আছে। আলোকে তখন ইথারের তরঙ্গ মনে করা হতো। কিন্তু বিজ্ঞানীরা ইথারের স্থানিক অস্তিত্ব আবিষ্কার করতে ব্যর্থ হোন এবং তারা আলোর বিকল্প ও আরো উন্নততর থিওরিতে উপনিত হোন। আর সাথেসাথেই তারা ইথারের ধারণাকে ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেলে দেন। একইভাবে হাজার হাজার বছর ধরে মানুষ ঈশ্বরের ধারণা ব্যবহার করেছিলো অসংখ্য প্রাকৃতিক ঘটনাকে ব্যাখ্যা করার জন্য।

সমসাময়িক সময়ে দর্শনের কিছু সাব-ফিল্ড ছাড়া কোনো পিয়ার রিভিও জার্নালই ঈশ্বরের অস্তিত্বের সাপেক্ষে কোনো আর্টিকেলকে সিরিয়াসলি গ্রহণ করেনি।হাজার হাজার বছর মানুষ বিশ্বাস করেছিলো আমাদের কর্ম ও সিদ্ধান্ত আত্মা থেকে আসে। কিন্তু কোনোপ্রকার সমর্থনযোগ্য প্রমাণের অভাবে এবং আরো অধিক বিস্তারিত থিয়োরির উপস্থিতি জীবনের বিজ্ঞান থেকে আত্মাকে বাদ দিতে বাধ্য হয়। কিন্তু এখনো ব্যক্তিগতভাবে অনেক জীববিজ্ঞানী এবং ডাক্তার আত্মার অস্তিত্বে বিশ্বাস করে। কিন্তু তারা এ নিয়ে সিরিয়াসলি কোনো আর্টিকেল সায়েন্টিফিক জার্নালগুলোতে জমা দিতে পারেনি। সম্ভবত মন আত্মার সাথে যোগ দিয়েছে। ঈশ্বর এবং ইথার এখন বিজ্ঞানের ডাস্টবিনে। অবশেষে এখনো পর্যন্ত কেউই মাইক্রোস্কোপের নিচে ব্যথা ও ভালোবাসা দেখেনি, এবং আমাদের রয়েছে অনেক বিস্তারিত জৈব রাসায়নিক ব্যাখ্যা ভালোবাসা ও ব্যাথার জন্যে যা সাবজেক্টিভ এক্সপেরিয়েন্সের জন্য কোনো রুম খোলা রাখেনি। যাই হোক, মন ও আত্মার মধ্যে খুব গুরুতর পার্থক্য আছে। যেখানে শাশ্বত আত্মা একটি বিশুদ্ধ অনুমান সেখানে আমাদের ব্যাথার অনুভূতি সম্পূর্ণ স্পষ্ট। আমি যদি আমরা একটা নখ উপড়ে ফেলে দেই তবে আমি ব্যাথা ফিল করবো,  যদিও এ ব্যাথার কোনো সায়েন্টিফিক এক্সপ্লেইনেশন আমার কাছে নেই। কিন্তু আমি এটা নিশ্চিত নই যে,  যদি ঐ ক্ষতস্থান ইফেক্টেড হয় , আমি মারা যাই তবে আমার আত্মা তখনও জীবিত থাকবে। এটি বিশ্বাস করার জন্য ভালো একটি গল্প কিন্তু এর ভেরাসিটি বা সত্যতা সম্পর্কে আমার কাছে সরাসরি কোনো প্রমাণ নেই। আইনস্টাইন, স্টিফেন হকিং এবং নিউটনও পেইন ফিল করে যদিও তারা এর ব্যাখ্যা জানেনা, তারা তাদের ব্যক্তিগত উপলব্ধিকে অস্বীকার করে না। আরো একটি উপায়ে মন ও চেতনার অস্তিত্বকে অস্বীকার করা যায় তার অস্তিত্বের বদৌলে তার প্রাসঙ্গিকতাকে বিবেচনা করে। তার অস্তিত্ব যেভাবেই তৈরি হোক সেটি  প্রাসঙ্গিক কি না! কিছু বিজ্ঞানী যেমন ডেনিয়েল ডেনেট ও স্টেনিসলাস ডিহানি দাবী করেন, মনের সাথে সম্পৃক্ত সকল রেলেভেন্ট প্রশ্নের উত্তর ব্রেন একটিভিটি গবেষণা করে দেয়া যায়, কোনোপ্রকার সাবজেক্টিভ এক্সপেরিয়েন্সের আশ্রয় ছাড়াই। অতএব বিজ্ঞানীরা অত্যন্ত নিরাপত্তার সাথে মন ও চেতনাকে (MIND AND CONSCIOUSNESS)  ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ( Subjective Experience )   ধারণা হিসেবে ডিলিট করে দিতে পারে তাদের শব্দভান্ডার ও আর্টিকেল থেকে। আধুনিক রাজনীতি ও নীতিবিজ্ঞানের সম্পূর্ণ কাব্যগ্রন্থ ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা দিয়ে লেখা এবং কিছু ইথিক্যাল ডায়লেমা সুকঠিনভাবে মস্তিষ্কের কার্যকলাপকে উল্লেখ করার মাধ্যমে সমাধান করা যায়।

উদাহরণস্বরুপ, যদি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাকে বিজ্ঞান অস্বীকার করে তবে ধর্ষণ অথবা নারী নির্যাতনের ক্ষেত্রে কী হবে? সম্পূর্ণ নিউরোলজিক্যাল দৃষ্টিকোণ থেকে , যখন কেউ ধর্ষিত হয় তখন তার মস্তিষ্কের বিভিন্ন শাখার নিউরন থেকে ইলেক্ট্রিক্যাল সিগনাল নির্গত হয়, কারো মস্তিষ্কে ইলেক্ট্রিক্যাল সিগনাল তৈরি করাকে কি ধর্ষণ বলা যাবে? তাহলে ধর্ষিতার সাথে সত্যিকারে ভুলটা কী হয়েছে? অনেক আধুনিক মানুষ ধর্ষণ এবং নির্যাতনের ক্ষেত্রে নৈতিক সংশয়ে ভোগেন , এগুলোকে কি আসলেই সাবজেক্টিভ এক্সপেরিয়েন্স বলা যাবে? যদি বিজ্ঞানীরা বলেন যে, সাবজেক্টিভ এক্সপেরিয়েন্স অপ্রাসঙ্গিক, যদি তাই হয়,  তবে কিভাবে আমরা ধর্ষণ ,নারী ও শিশু নির্যাতনকে ব্যাখ্যা করবো ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার রেফারেন্স ছাড়া? যাইহোক, অবশেষে বিজ্ঞানীরা চেতনাকে বাস্তব হিসেবে মেনে নিয়েছে এবং সম্ভবত এর অনেক মহান নৈতিক ও রাজনৈতিক মর্জাদা আছে কিন্তু এটি কোনো বায়োলজিক্যাল ফাংশন পরিপূর্ণ করেনা। কনসাশাসনেস হলো অব্যবহারযোগ্য নির্দিষ্ট ব্রেন প্রসেসের একটি বাই-প্রোডাক্ট। মানুষের জীবনের জন্যে কার্বন-ডাই-অক্সাইড প্রয়োজন নেই কিন্তু তাদের প্রতিটি নিশ্বাসের সাথে যে বাতাস প্রবেশ করে সে বাতাসে শুধু অক্সিজেন নয়, আরো বিভিন্ন উপাদান বিদ্যমান থাকে। হতে পারে , কনশাসনেস হলো আমাদের নিউরাল নেটওয়ার্ক থেকে তৈরি একপ্রকার মানসিক দূষণ। আমাদের নিশ্বাসের সাথে কার্বন-ডাই অক্সাইড প্রবেশ করলেও এর যেমন কোনো কাজ নেই, ঠিক তেমনি মস্তিষ্কের ভেতর কনশাসনেসেরও কোনো কাজ নেই, এটি শুধু সেখানে প্রেজেন্ট থাকে। যদি এটি সত্যি হয়, এর অন্তর্নিহিত অর্থ হচ্ছে, ব্যাথা ও আনন্দ যা বিলিয়ন বিলিয়ন সৃষ্টি মিলিয়ন মিলিয়ন বছর ধরে অনুভব করে আসছে তার সবটাই শুধুমাত্র মানসিক দূষণ। এটি নিশ্চিতভাবে এমন একটি চিন্তা যা আমাদের কাছে ভাবতে খুব খারাপ লাগে, এমনকি  যদিও এটি মিথ্যা হয়, এটি কনশানেস সম্পর্কে এ পর্যন্ত অত্যন্ত দারুণ একটি অনুভূতি,  এটি সবচেয়ে সেরা থিয়োরি যা সাম্প্রতিক বিজ্ঞান আমাদের উপহার দিয়েছে!

বর্তমানে আমাদের অনেক টেকনোলজি আছে- কম্পিউটার- অতএব আমরা মানুষের মনকে কম্পিউটারের ডাটা প্রসেসিং হিসেবে চিন্তা করতে পারি। কিন্তু এ নতুন এনালজিটি অনেক বেশি নির্বোধ। কারণ কম্পিউটারের কোনো মন নেই। কম্পিউটার কোনো আকাঙ্খা প্রকাশ করেনা যখন তার মধ্যে কোনো বাগ বা  ত্রুটিপূর্ন প্রোগ্রাম দেখা দেয়। ইন্টারনেট কোনো পেইন ফিল করেনা,  যখন তাকে সমস্ত রাষ্ট্রগুলোর ওয়েব থেকে শাসন করা হয়। তাহলে কেনো মনকে বোঝার জন্যে কম্পিউটার মডেল ব্যবহার করা হবে? বেশ, আমরা নিশ্চিতভাবে জানি যে কম্পিউটারের কোনো সংবেদন অথবা আকাঙ্খা নেই। যদিও তেমন কোনো কম্পিউটারের অস্তিত্ব নেই,  কিন্তু কখনো কি সম্ভব এমন কোনো কম্পিউটার তৈরি করা যা কনশাসনেসকে তৈরি করার জন্যে যথেষ্ট জটিল? কিন্তু তাদের মধ্যে যে তখনও চেতনা আছে সেটা আমরা কিভাবে নিশ্চিত হবো? যখন কম্পিউটার আমাদের ড্রাইভার , টিচার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে আমরা কিভাবে বুঝবো যে সে আমাদের অনুভব করছে, তারা তো তখনও মনহীন এলগোরিদম হিসেবেই কাজ করতে পারে! যখন এটি মানুষের কাছে আসবে, আমরা এখন কনশাস মেন্টাল এক্সপেরিয়েন্স ও নন-কনশাস ব্রেন একটিভিটির মধ্যে পার্থক্য তৈরি করতে পারি, যদিও আমরা কনশাসনেসকে বোঝার ক্ষেত্রে অনেক দূরে, বিজ্ঞানীরা শুধুমাত্র কিছু ইলেক্ট্রোকেমিক্যাল সিগনেসারকে শনাক্ত করতে পারে। বিজ্ঞানীরা অনুমান নির্ভর হয়ে বলেন, যখন মানুষ বলে সে কোনোকিছু সম্পর্কে সচেতন তখন সে আসলে বিশ্বাস করে। এ অনুমানের উপর ভিত্তি করে বিজ্ঞানীরা এমনকিছু ব্রেন প্যাটার্ন আলাদা করেছেন , যেগুলো শুধুমাত্র তখন প্রতীয়মান হয় যখন মানুষ কোনোকিছু সম্পর্কে সচেতন হয়েছে বলে দাবি  করে। তারা এমনকিছু ব্রেন প্যাটার্ন সনাক্ত করেন,  যেগুলি শুধু আমাদের সচেতন অভিজ্ঞতার সময় তৈরি হয়, আমরা যখন আনকনসাস থাকি তখন সেগুলো নিষ্ক্রিয় থাকে। ঠিক এখান থেকেই বিজ্ঞানীরা সিদ্ধান্ত আসেন যে , স্ট্রোকের পেশেন্টদেরকে যদিও অচেতন মনে হয় তাদের মধ্যে হয়তো তখনও কনসাসনেস রয়ে গেছে , হয়তো তারা শরীর ও কথা বলার উপর তাদের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে , যদি পেশেন্টের মস্তিষ্ক কনশাসনেসের কোনো চিহ্ন প্রকাশ করে, তবে সম্ভবত এটি কনশাস , এমনকি যদিও সে কথা বলতে পারেনা। মূলত ডাক্তাররা সাম্প্রতিক এফএমারআই ইমেজিং এর মাধ্যমে সে সকল পেশেন্টদের সাথেও যোগাযোগ করেছেন। তারা তাদেরকে হ্যা অথবা না এর মাধ্যমে প্রশ্ন করে। যদি উত্তর হয় ‘’হ্যা’’ তবে তাদেরকে টেনিস বল খেলার দৃশ্য কল্পনা করতে বলে আর উত্তর যদি হয় না তবে তাদের ঘরের অবস্থান কল্পনা করতে বলা হয়। তারা যখন’’হ্য’’ বলে ডাক্তাররা তখন পর্যবেক্ষণ করেন কিভাবে মোটর কর্টেক্স লাইট আপ হয় যখন তারা টেনিস খেলার কথা কল্পনা করে আর যখন উত্তর হয় ‘’না’’ তখন সেটি ইন্ডিকেট করে স্থানিক মেমরির সাথে জড়িত অন্য কোনো এরিয়াকে।

এসব তো গেলো মানুষের কথা কিন্তু কম্পিউটারের ক্ষেত্রে কি ঘটবে? যেহেতু সিলিকন বেস কম্পিউটারের স্ট্রাকচার কার্বন বেস নিউরাল কম্পিউটার থেকে সম্পূর্ণ আলাদা অতএব মানুষের কনসাসনেসের চিহ্ন নিশ্চয় তাদের ক্ষেত্রে রেলেভেন্ট নয়। আমাদের মনে হতে পারে আমরা একটি দুষ্টচক্রের মধ্যে পড়ে গেছি! আমরা একটি প্রাকধারণা দিয়ে শুরু করেছিলাম যে আমরা মানুষকে বিশ্বাস করতে পারি যদি তারা বলে যে তারা সচেতনাবোধ করছে এবং আমরা তার কনশাসনেসের সিগনেসারও সনাক্ত করতে পারি এবং সে সিগনেসার ব্যবহার করে আমরা বলতে পারি যে তারা কনশাস! কিন্তু যখন স্বঘোষিত কোনো ইন্টিলিজেন্ট রোবট বলবে , সে কনশাস , আমাদের কি এটিকে বিশ্বাস করা উচিত? এ পর্যন্ত আমাদের কাছে এর কোনো ভালো উত্তর নেই, ইতোমধ্যে কয়েক হাজার বছর পূর্বে দার্শনিকরা অনুভব করতে পেরেছিলেন যে, এটা কখনো স্বতন্ত্রভাবে প্রমাণ করা সম্ভব নয় ,  একজনের সাপেক্ষে অন্যজনের মন আছে। যদি ঘটনাটি রোবটের ক্ষেত্রে না ঘটে অন্য কোনো মানুষ হতো , আমরা অনুমান করতাম যে, তাদের কনশাসনেস আছে, আর অন্য সকল প্রাণী ও রোবট হলো শুধুমাত্র মনহীন অটোম্যাটা ! সম্ভবত আমি স্বপ্ন দেখছি এবং আমার চারপাশে আমি যে সকল চরিত্রের সাথে দেখা করছি তাদের প্রত্যেকে আমার স্বপ্নের ভেতর। সম্ভবত আমি কোনো ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ডে আটকে ফেঁসে গেছি, আমি আমার চারপাশে যা কিছু দেখছি ,সবকিছু কী আমার তুচ্ছ সিমুলেশন? সাম্প্রতিক বিজ্ঞানের প্রচলিত ধারণা অনুসারে, আমি যে সকল অভিজ্ঞতা অর্জন করছি সবকিছু আমার মস্তিষ্কের ইলেক্ট্রিক্যাল একটিভিটি, এবং এটাও সম্ভবত তাত্বিকভাবে সম্ভব হওয়া উচিত সমগ্র ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ডকে সিমুলেট করা যাকে আমি রিয়েল ওয়ার্ল্ড থেকে পৃথক করতে পারবো না। কিছু মস্তিষ্ক বিজ্ঞানী মনে করেন, অদূর ভবিষ্যতে , আমাদের এমনকিছু করা উচিত! বেশ, সম্ভবত এটা ইতোমধ্যে আপনার সাথে ঘটেছে? আমরা সবাই জানি ২২১৬ সালে আপনি একজন উদাসীন তরুণ হিসেবে ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ডে আত্মপ্রকাশ করবেন। এমন একটি খেলা যা একুশ শতকের প্রাইমিটিভ ও এক্সাইটিং এ জগতকে সিমুলেট করবে। একদিন আপনি একমত হবেন যে এর অতিক্ষুদ্র পরিমাণ সম্ভাবনা আছে কিন্তু গণিত আমাদের অত্যন্ত ভয়ানক সমাধান দিচ্ছে।

যদিও আমাদের রিয়েল ওয়ার্ল্ড একটি কিন্তু পটেনশিয়াল ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ডের সংখ্যা অসীম, আপনার রিয়েল ওয়ার্ল্ডে বসবাস করার সম্ভাবনা যেখানে প্রায় শূন্য। আমাদের কোনো বৈজ্ঞানিক প্রদক্ষেপ এ নিকৃষ্ট সমস্যাটিকে মোকাবিলা করতে পারছেনা। সবচেয়ে শেরা যে টেস্টটি এ পর্যন্ত স্কলাররা অতিক্রম করে এসেছেন সেটিকে বলা হয় টুরিং টেস্ট কিন্তু এটি শুধুমাত্র সামাজিক কনভেনশন পরীক্ষা করে। টুরিং টেস্ট অনুসারে, কম্পিউটারের মন আছে কী নেই সেটি টেস্ট করার জন্যে আপনার উচিত কম্পিউটার ও হিউম্যান উভয়ের সাথে কমিউনিকেশন করা এটা পরীক্ষা করার জন্যে যে কম্পিউটারের মন আছে ! আপনি কম্পিউটারকে যেকোনো প্রশ্ন করতে পারেন অথবা তার সাথে গেম খেলতে পারেন অথবা তার সাথে ফ্লার্ট করতে পারেন , আপনার যতক্ষণ ইচ্ছে আপনি এটি করুন এবং তারপর সিদ্ধান্ত নিন এটি কম্পিউটার নাকি মানুষ। এ জন্যে কম্পিউটার ও মানুষ দুজনকেই আপনার আড়ালে রাখা হবে যেনো আপনি বুঝতে না পারেন আপনি কার সাথে কথা বলছেন। আপনি যদি বুঝতে না পারেন যে এটি কম্পিউটার বা কোনো ভুল করেন তবে কম্পিউটারটি টুরিং টেস্টে পাস করবে এবং প্রমাণিত হবে যে কম্পিউটারের মন আছে। যাই হোক  এটি হয়তো সত্যিকারের প্রমাণ নয়, মনের অস্তিত্বে একমত হওয়া এটি সামাজিক ও লিগ্যাল কনভেনশন। টুরিং টেস্ট আবিষ্কার করেছেন ১৯৫০ সালে ব্রিটিশ ম্যাথমেটিশিয়ান এলান টুরিং, যিনি কম্পিউটার সময়ের একজন গড ফাদার। টুরিং ছিলেন একজন সমকামী। আর সে সময় সমকামীতা ব্রিটেনে অনৈতিক ছিলো। ১৯৫২ সালে তাকে সমকামীতার জন্যে দোষী সব্যস্ত করা হয়, এবং কেমিক্যাল কেস্ট্রেশন নেয়ার জন্য বাধ্য করা হয়। দুই বছর পর এলান টুরিং সুইসাইড করেন। ১৯৫০ সালে জন্ম নেয়া প্রতিটি সমকামীকেই  টুরিং টেস্ট দিতে হয়েছিলো যদিও সেটি ছিলো সামাজিক নীতির কাছে। টুরিং মনে করতেন, এটি কোনো ব্যাপার নয় আপনার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় আপনি কী, প্রকৃত ব্যাপার হলো মানুষ আপনাকে নিয়ে কী ভাবছে। টুরিং এর মতে, কম্পিউটারের ভবিষ্যত হলো ১৯৫০ সালের একজন সমকামী ব্যক্তির মতো। এটা কোনো ব্যপার নয় যে কম্পিউটারের চেতনা আছে কি না , প্রকৃত ব্যাপার হলো মানুষ কম্পিউটার সম্পর্কে কি ভাবছে!( চলবে)

তথ্যসুত্র-

 
প্রাসঙ্গিক আর্টিকেল আর্টিকেল সমূহ-