হাইপারস্পেস বইটি শেষ করার পর থেকেই আমি ভাবছিলাম বইটির উপর একটি পাবলিক স্পিচ লিখব। কিন্তু বুঝে উঠতে পারছিলাম না কোথা থেকে শুরু করা যায়। সম্পূর্ণ সময় আমি অনেক ফ্যান্টাসি আক্রান্ত ছিলাম। মনে মনে কার্ল স্যাগানকে স্মরণ করলাম। তিনি একবার কিপ থর্নের কাছে চিঠি পাঠিয়ে বলেছিলেন তার উপন্যাস “কন্ট্যাক্ট” লেখার জন্য টাইম মেশিন প্রযুক্তির একটি কাঠামোগত ভিত্তি প্রদানের মাধ্যমে সহযোগিতা করতে। কিপ থর্ন ছিলেন সময় ভ্রমণের ঘোরতর বিরোধী। কিন্তু স্যাগান যে অনুরোধ করেছিলেন তা ছিল ইনোসেন্ট। অন্তত তার সায়েন্স ফিকশনের জন্য হলেও যেন তিনি টাইম মেশিন নিয়ে ভৌতভাবে প্রাসঙ্গিক একটি কাঠামো উপহার দেন স্যাগানকে। যাইহোক একজন মহান জ্যোতির্বিজ্ঞানীর অনুরোধ আর একজন মহান তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী ফেলে দিতে পারেন না।
তিনি সায়েন্স ফিকশনের জন্য টাইম মেশিন নিয়ে ভাবতে শুরু করলেন। কিন্তু আশ্চর্যজনক হলেও খেলাচ্ছলেই তিনি সত্যি সত্যি টাইম মেশিনের একটি নীলনকশা নির্মাণ করে ফেলেছিলেন। যা পরবর্তী সময়ে রিসার্চ পেপারে রূপ নেয়। “Wormholes, Time Machines, and the Weak Energy Condition” শিরোনামে পেপারটি ১৯৮৮ সালে ফিজিক্যাল রিভিউ ল্যাটার্স নামক একটি প্রেস্টিজিয়াস জার্নালে প্রকাশিত হয়েছিল। আমি মাঝে মাঝেই ডোপামিনের প্রভাবে ফ্যান্টাসি আক্রান্ত হয়ে উঠি। আমি বারবার ১৯৮৮ সালে ফিরে যাই। এজন্য আমি থর্নের নিয়ম মেনে আমার মনের ল্যাবে একটি টাইম মেশিন তৈরি করি।
থর্নের টাইম মেশিনের একটি সংস্করণে দুটি চ্যাম্বার রয়েছে, প্রতিটি চ্যাম্বারে একটি করে ধাতব প্লেট রাখতে হয়। এই প্লেটগুলোর মধ্যে তীব্র ইলেক্ট্রিক্যাল ফিল্ড তৈরি হবে। দুটি চ্যাম্বারে রাখা দুটি প্লেট স্থান-কালের ফ্যাব্রিককে ছিঁড়ে ফেলবে। দুটি চ্যাম্বারের মাঝে স্পেস-টাইম ফ্যাব্রিক ছিঁড়ে মহাকাশে একটি টানেল তৈরি করবে। এই ভাবে দুটি চ্যাম্বার ওয়ার্মহোলের মাধ্যমে কানেক্ট হয়ে যায়। তারপর একটি চ্যাম্বারকে রকেটশিপে স্থাপন করা হয় আর অন্যটি রাখা হয় পৃথিবীতে।রকেটের মধ্যে রাখা চ্যাম্বারটির ঘড়ি ধীর গতিতে চলে। আর পৃথিবীর চ্যাম্বারটির ঘড়ি চলে দ্রুত গতিতে। সময়ের বিট দুটি চ্যাম্বারে ভিন্ন ভিন্ন। পৃথিবীর চ্যাম্বার চলে যায় ভবিষ্যৎ সময়ে। আর রকেটশিপে বিশেষ আপেক্ষিকতাজনিত প্রভাবে সময় ধীর হয়ে যাওয়ায় রকেটশিপ থেকে যায় অতীতে। এবার যদি দুটি চ্যাম্বার সংযুক্তকারী ওয়ার্মহোলের ভেতর কেউ প্রবেশ করে সে অতীত ও ভবিষ্যৎ দুটো সময়েই যাতায়াত করতে পারবে। এই মাত্র আমি ১৯৮৮ সাল থেকে কিপ থর্ন ও স্যাগানের সাথে দেখা করে ২০২১ সালে ফিরে এসেছি এবং আর্টিক্যালটি অবশেষে পুনরায় শুরু করেছি। আসলেই কী সময় ভ্রমণ সম্ভব? আমাদের চেয়ে উন্নত কোনো সভ্যতার পক্ষে কী সম্ভব থর্নের এ প্রযুক্তিকে ফিকশন থেকে বের করে আনা? আর্থার সি ক্লার্ক বলেছিলেন, যথেষ্ট উন্নত প্রযুক্তি ম্যাজিক থেকে পৃথক কিছু নয়। আমরা আজ জানিনা একশত বছর পর মানুষ কোন ধরনের প্রযুক্তি উন্নত করবে, ঠিক যেমনি রোমানরা কোনোদিন Satnav এবং মোবাইল ফোনের কথা কল্পনা করেনি। মার্টিন রিচ বলেছিলেন, বিজ্ঞানীরা খুবই আত্মবিশ্বাসের সাথে বলেন টাইম মেশিন চিরকাল সায়েন্স ফিকশনই থেকে যাবে কারণ তাদের নানি যদি শিশুকালেই খুন হয় তবে তারা শিশুহত্যার জন্য নৈতিকভাবে দায়বদ্ধ হবে, এথিক্স ও লজিক দুই লঙ্ঘিত হবে। তারা তাদের নানা-নানির জীবন নিয়ে চিন্তিত!
আর্থার সি ক্লার্ক আরও বলেছিলেন, মিলিয়ন মিলিয়ন বছর বয়সী একটি উন্নত সভ্যতার কাছে আমরা ঠিক তেমন, ঝোপের মধ্যে বসে থাকা একটি ম্যাকাকের বাচ্চা আমাদের কাছে যেমন। তাই যাদৃচ্ছিক উন্নত সভ্যতার ক্ষমতা সম্পর্কে প্রশ্ন করার পূর্বে আমাদের সচেতনতার প্রয়োজন আছে। আইনস্টাইন বলেছিলেন, মহাবিশ্ব সম্পর্কে দুর্বোধ্য বিষয়টি হলো মহাবিশ্ব বোধগম্য। তিনি অবাক হয়েছিলেন কারণ মহাবিশ্বকে তিনি বুঝতে পারছেন।
মার্টিন রিচ বলেন, “আমাদের মন আফ্রিকার সাভানায় বিবর্তিত হয়েছিল কিন্তু সে অ্যাটমের মাইক্রোওয়ার্ল্ড ও মহাবিশ্বের বিশালত্ব বুঝতে পারে। আমরা খুবই অবাক হই মহাবিশ্ব নৈরাজ্যিক নয়, যে আইন আমাদের ল্যাবের একটি পরমাণু মেনে চলে একই আইন মেনে চলে দূরবর্তী একটি গ্যালাক্সি”। এটা খুবই অদ্ভুত যে, আমরা পৃথিবী না ছেড়েই দুরবর্তী গ্যালাক্সির পদার্থবিদ্যার আইন জানতে পেরেছি, আমাদের জন্য কোনো স্পেসশিপ অথবা ডায়মেনশনাল উইন্ডোজ প্রয়োজন হয়নি। আমাদের মহাবিশ্ব আনুমানিক ১৪ বিলিয়ন বছর পূর্বে বেরিয়ে এসেছিল একটি ঘণ উত্তপ্ত বিন্দু থেকে কিন্তু বিস্ময়করভাবে আমরা মহাবিস্ফোরণের পরের এক মাইক্রোসেকেন্ড সম্পর্কেও নির্ভুলভাবে গণনা করতে পারি। পৃথিবীর আর কোনো প্রাণী অ্যাটম ও গ্যালাক্সি সম্পর্কে জানে না, তারা জানে না মহাবিশ্বের উদ্ভব সম্পর্কে। এটা কী গভীর বিস্ময় উৎপাদনের জন্য যথেষ্ট নয়?
এ গ্রহে মানব সভ্যতার শ্রেষ্ঠতম দুটি অর্জন কোয়ান্টাম মেকানিক্স ও জেনারেল রিল্যাটিভিটি। যেগুলো আমাদের একুশ শতকের দুটি মহান স্তম্ভ। আমাদের আধুনিক প্রযুক্তিতে দুটি ক্ষেত্রেরই গভীর প্রভাব রয়েছে। কোয়ান্টাম মেকানিক্সের কারণেই আমরা কম্পিউটার, রেডিও, স্টেরিও, লেজার, সোলার সেল, ইলেক্ট্রোনিক মাইক্রোস্কোপ ও অ্যাটমিক ক্লক পেয়েছি।
যদি কোয়ান্টাম মেকানিক্স ভুল হতো আমাদের দেহ বিচ্ছিন্ন হয়ে যেত, আমরা কয়েক মুহূর্তের ভেতরই টুকরো টুকরো হয়ে যেতাম। ম্যাক্সওয়েলের ইকুয়েশন অনুসারে, অ্যাটমের ভেতর যখন ইলেক্ট্রন স্পিন করে তখন তার এক মাইক্রোসেকেন্ডের মধ্যেই সকল শক্তি হারিয়ে ফেলা উচিত ও নিমজ্জিত হওয়া উচিত নিউক্লিয়াসে। এই আকস্মিক পতনকে প্রতিরোধ করছে কোয়ান্টাম টানেলিং। আর অন্যদিকে রিল্যাটিভিটির প্রভাবেই জিপিএস স্যাটেলাইটে সেকেন্ডের ক্ষুদ্র ভগ্নাংশের জন্য ( 7 microsecond) সময় স্লো হয়ে যায়। গ্র্যাভিটেশনাল ল্যান্সিং-এর কারণে আইনস্টাইন রিং গঠিত হয় তা আজ পরীক্ষামূলকভাবেই প্রমাণিত।
এত সফল থিওরি হওয়ার পরও ডিপেস্ট স্কেলে এ দুটি মহান স্তম্ভ একে অন্যের সাথে কন্ট্র্যাডিক্ট করে, একই মহাবিশ্ব ক্ষুদ্র ও বৃহৎ স্কেলে সম্পূর্ণ পৃথক সেটের নিয়ম মেনে চলে, তাদেরকে সিঙ্গেল ইউনিফায়েড থিওরিতে পরিণত করা যায় না। জ্যোতির্বিদরা গ্রহদের গতি প্রকৃতি নির্ণয়ের সময় কোয়ান্টাম মেকানিক্সের অদ্ভুত জগতকে উপেক্ষা করেন কারণ একটি ইন্টারস্টেলার অবজেক্ট একইসময় দুটি ভিন্ন ভিন্ন লোকেশনে অবস্থান করে না আবার কেমিস্টরাও একটি স্বতন্ত্র অ্যাটম নিয়ে কাজ করার সময় গ্র্যাভিটেশনাল ফোর্সকে সেইফলি এড়িয়ে যান। কারণ এত ক্ষুদ্র পর্যায়ে গ্র্যাভেটি কাজ করে না । আমরা অ্যাস্ট্রোনোমিক্যাল স্কেলে কোয়ান্টাম ফিজিক্সকে প্রয়োগ করি না কিন্তু মহাবিশ্ব যখন ইনফ্যান্ট বা শিশু ছিল, সৃষ্টির শুরুতে যখন সবকিছু ক্ষুদ্র একটি অ্যাটমে চুপসে ছিল তখন কোয়ান্টাম ফ্ল্যাকচুয়েশনই সমগ্র ইউনিভার্সে প্রকম্পিত হয়েছিল।
আপনি সিঁড়ি বেয়ে উপরে ওঠার সময় যে গ্র্যাভিটি আপনাকে টানে, মহাকাশে থেমে যাওয়া একটি বিমানকে যে গ্র্যাভেটি চুরমার করে দেয়, যে গ্র্যাভিটির কারণে সৌরজগতের গ্রহগুলো নিজ নিজ কক্ষপথে আবর্তিত হয়, যে গ্র্যাভিটির কারণে ব্ল্যাকহোল বিশাল বিশাল নক্ষত্রকে চুষে খায়, আশ্চর্যজনকভাবে অ্যাটমের ভেতরের নিউক্লিয়াস তার চারপাশে প্রদক্ষিণরত একটি ইলেক্ট্রনকে কখনোই একই গ্র্যাভিটেশনাল ফোর্স দিয়ে নিজের দিকে টানতে পারে না।
আপনার হয়তো মনে আছে, স্কুল জীবনে মাথার চুলে কলম বা চিরুনি দ্বারা ব্রাশ করে যখন কাগজের টুকরোর উপর ধরেছিলেন তখন কাগজের টুকরোগুলোসমস্ত পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষ ক্ষেত্রকে উপেক্ষা করে ক্ষুদ্র একটি কলমের ইলেক্ট্রনের প্রভাবে লাফিয়ে উঠত । প্রশ্ন আসে, পুরো পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষ ক্ষেত্র থেকে চিরুনি বা কলমের ঢগায় ছুটে চলা কিছু ইলেক্ট্রন কি বেশি শক্তিশালী? ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ফোর্সের কাছে সমস্ত পৃথিবীর গ্র্যাভিটিও কিছুই না? এবার আপনি যদি চান যে একটি ইলেক্ট্রন পরমাণুর ভেতর একটি নিউক্লিয়াসের ভরের প্রতি গ্র্যাভিটেশনাল ফোর্স দ্বারা আকৃষ্ট হয়ে ছুটে চলুক, ইলেক্ট্রিক্যাল ফোর্স দ্বারা নয় তবে সে অ্যাটমটিকে ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন পৃথিবীর সমান হতে হবে বা আমাদের দৃশ্যমান মহাবিশ্ব থেকেও বিশাল । অতএব দেখতেই পাচ্ছেন, ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ফোর্সের সাথে গ্র্যাভিটির বিশাল ফাটল। স্ট্রং ফোর্স, উইকফোর্স, ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ফোর্স পরমাণুর মত ক্ষুদ্র একটি স্পেসের ভেতরও কোয়ান্টা বিনিময়ের মাধ্যমে কাজ করে কিন্তু গ্র্যাভিটি এত ক্ষুদ্রতর পর্যায়ে কাজ করছে না। ( 50 মাইক্রোমিটার পর্যন্ত গ্র্যাভিটি খুবই দূর্বলভাবে কাজ করে)
আইনস্টাইনের স্বপ্ন ছিল তিনি এ চারটি ফান্ডামেন্টাল ফোর্সকে একটি সিঙ্গেল ইকুয়েশনে প্রকাশ করবেন যে স্বপ্ন তিনি কখনোই পূরণ করতে পারেননি। তার জীবনের শেষ ৩০ বছর ছিল তার জন্য চরম যন্ত্রণা ও হতাশার! এটা খুবই বিভ্রান্তিকর ছিল যে, গ্র্যাভিটি কেবল ম্যাক্রোস্কোপিক অবজেক্টের উপরই ক্রিয়াশীল। আর এজন্য আইনস্টাইনের রিল্যাটিভিটি ক্ষুদ্রতর জগতে তার কার্যকারিতা হারায় (কারণ এটা গ্র্যাভিটিকে স্থান-কালের বক্রতা হিসেবে প্রকাশ করে) ।
এখানেই আসে হায়ার ডায়মেনশনের ধারণা। বিজ্ঞানীরা ভাবতে থাকেন, নিশ্চয় অতীতে কোনো এক সময় রিল্যাটিভিটি ও কোয়ান্টাম ফিজিক্স উচ্চতর মাত্রায় একীভূত ছিল আর মহাবিস্ফোরণ তাদের ভেঙে দিয়েছিল যেজন্য আমাদের কাছে এ দুটিকে এখন আলাদা মনে হয়। আমাদের থ্রিডায়মেনশনাল স্পেসে যদি রিল্যাটিভিটি ও কোয়ান্টাম ফিজিক্স’কে কানেক্ট করার জন্য যথেষ্ট রুম খোলা থাকত তবে আমরা হায়ার ডায়মেনশনের কথা চিন্তা করতাম না। আর যদি প্রতিটি ফোর্সই বিপুলভাবে ডিসকানেক্টেড হতো তাহলেও আমরা হায়ার ডায়মেনশনের কথা কল্পনা করতাম না। আমরা ফান্ডামেন্টাল ফোর্সগুলোর মধ্যে নির্দিষ্ট প্রতিসাম্যতা দেখেছি বলেই আমরা সবগুলো ফোর্সকে একীভূত করার ধারণা পেয়েছি।
একটি কাগজের পাতার কথা চিন্তা করুন, এটি দ্বিমাত্রিক, কাগজের পাতায় বসবাসকারী একটি পিঁপড়া কাগজের মতোই চ্যাপ্টা। সে শুধু ডান, বাম, সামনে ও পেছনে চলাচল করতে পারে। “উচ্চতা” বলতে একটি ডায়মেনশন আছে তা এই পিঁপড়াটি জানে না । আর তাই তার কাছে আমাদের মহাবিশ্বের সবকিছুকে চ্যাপ্টা মনে হবে। আমাদের জগতের জটিল কাঠামো সে বুঝতে পারবে না। আপনি যদি দ্বিমাত্রিক জগতে একটি ত্রিমাত্রিক গোলক রাখেন তবে এই দ্বিমাত্রিক সত্তারা কেবল গোলকের পৃষ্ঠতেই মুভ করবে, ‘উঁচু’ ও ‘নিচু’ নামক এ দুটি টার্ম তাদের কাছে কোনো সেন্স তৈরি করবে না। তাদের কাছে গোলকটিকে মনে হবে দ্বিমাত্রিক বৃত্ত।
এবার কল্পনা করুন, আমরা যে মহাবিশ্বে বাস করি সেটি কাগজের পাতার মতোই দ্বিমাত্রিক। আর আমরা মানুষরা সবাই সে দ্বিমাত্রিক পৃষ্ঠে চ্যাপ্টা হয়ে আছি। হাইপারস্পেস তত্ত্ব অনুসারে, এ মহাবিশ্বের সকল ফোর্স একসময় একটি ত্রিমাত্রিক ক্রিস্টালের ( মুক্তাও ভাবতে পারেন) মধ্যে একীভূত ছিল। কিন্তু মহাবিস্ফোরণের সময় এই ত্রিমাত্রিক ক্রিস্টালটি ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। এই ক্রিস্টালটির কিছু অংশ অনেক বেশি মসৃণ, আর কিছু অংশ উঁচুনিচু ও খুঁতখুঁতে। দ্বিমাত্রিক জগতের বিজ্ঞানীরা এই ভাঙা টুকরাগুলোর মধ্যে মসৃণ খণ্ডগুলোকে জোড়া লাগাতে সক্ষম হয় যেটাকে তারা মার্বেল (স্থান-কালের বক্রতা ও গ্র্যাভিটি) নামকরণ করে আর তারা এগুলোকে যে কাঠামোর মাধ্যমে ব্যাখ্যা করে তার নাম প্রদান করে ‘রিল্যাটিভিটি’। কিন্তু যেহেতু ক্রিস্টালটি শুরুতে ত্রিমাত্রিক ছিল তাই এর সকল খণ্ড প্রতিসম নয়, এগুলো বিক্ষিপ্ত ও এলোমেলো, যেটাকে তারা বিরক্ত হয়ে ডাকতে শুরু করে “উড” (সাব- অ্যাটমিক ওয়ার্ল্ড) , আর এই জগতকে তারা যে মডেলের মাধ্যমে আলোচনা করে তাকে বলে কোয়ান্টাম মেকানিক্স বা স্ট্যান্ডার্ড মডেল।
কিন্তু তারা কিছুতেই কোয়ান্টাম ম্যাকানিক্স ও রিল্যাটিভিটিকে একত্রে জোড়া দিতে পারে না কারণ তাদের জগত চ্যাপ্টা। যদি ক্রিস্টালের টুকরোগুলোকে জোড়া লাগাতে হয় তবে প্রতিটি টুকরোকে কেবল পাশাপাশি চ্যাপ্টা স্পেসে সাজালেই হবে না, একটা টুকরাকে অন্য আর একটি টুকরার “উপর” রাখতে হবে। কিন্তু দ্বিমাত্রিক জগতে শুধু ডান, বাম, সামনে ও পেছনে নামক চারটি স্থানাঙ্ক আছে। তাদের জগতে “উপর” বলতে কোনো কনসেপ্ট নেই। আর এজন্য তারা বুঝতে পারছে না কীভাবে এই বিক্ষিপ্ত টুকরোগুলোকে “উপরের” দিকে ভাজ করে একটি ইউনিফায়েড ক্রিস্টাল তৈরি করা যায় ( তাদের “উপর” দিয়ে আলো ভ্রমণ করলেও তারা সেই আলোয় কিছু দেখবে না) ।
।
ঠিক এ কারণেই আমরা কোয়ান্টাম ফিজিক্স ও রিল্যাটিভিটিকে জোড়া লাগাতে পারছি না। এ দুটোকে একীভূত করে একটি ইউনিফায়েড তত্ত্ব তৈরি করতে হলে আমাদেরকে স্পেসের ডায়মেনশনের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে আর সুপারস্ট্রিং তত্ত্ব অনুসারে, স্পেসের ডায়মেনশন: ১০। আমরা যদি স্পেসের ডায়মেনশন দশে উন্নীত করি তাহলেই কেবল মহাবিশ্বের ফান্ডামেন্টাল চারটি ফোর্সকে একটি সুসংগত ইকুয়েশনে একীভূত করা সম্ভব হয়। যেটাকে বলা হচ্ছে “গড ইকুয়েশন”।
চতুর্থ মাত্রায় গড ইকুয়েশন তার সামগ্রিক রূপে সার্ভাইভ করে না। আমরা চতুর্মাত্রিক জগতে ঈশ্বর সমীকরণের লেজ দেখতে পাই কেবল। কিন্ত সত্যিকারে ঈশ্বর (সমীকরণ ) সার্ভাইভ করে টেনথ ডাইমেনশনাল হাইপারস্পেসে।
মার্টিন রিচ বলেন, কী বিস্ফোরণ (Bang) হয়েছিল এবং কেন বিস্ফোরণ হয়েছিল যখন আমরা এ প্রশ্নটির মুখোমুখি দাঁড়াই আইনস্টাইনের তত্ত্ব আর কাজ করে না কারণ এটি স্পেস-টাইমকে স্মুথ ও কন্টিনিউয়াস মনে করে। সফলতার জন্য নতুন অন্তর্দৃষ্টি প্রয়োজন যেটাকে আপনার নিকট সরল এন্টিটি মনে হতে পারে: “তুচ্ছ” এম্পটিস্পেস। আমরা জানি যে, কোনো বস্তুকে যাদৃচ্ছিক ক্ষুদ্র করা যায় না: অবশেষে আপনি বিচ্ছিন্ন অ্যাটম পাবেন। এমনকি স্পেস অ্যান্ড টাইমকেও যাদৃচ্ছিক ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত করা যায় না।
আমাদের কাছে খুবই শক্তিশালী যুক্তি আছে যে অ্যাটমের মতোই স্পেসের ক্ষুদ্রতম স্ট্র্যাকচার আছে__ কিন্ত এটা এমন একটি স্কেলে যেটি অ্যাটম থেকেও ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন গুণ ক্ষুদ্রতর” । স্যার মার্টিন রিচ আরও বলেন, “এটাই একুশ শতাব্দীর অসামাপ্ত কাজের মূল চাবিকাঠি। আমাদের সবচেয়ে অনুকূল তত্ত্ব অনুসারে ,মহাবিশ্বের ফান্ডামেন্টাল সত্তা কোনো অ্যাটম নয়, ফান্ডামেন্টাল সত্তা হলো “লুপ’’, অথবা “স্ট্রিং” এবং বৈচিত্র্যময় সাব-নিউক্লিয়ার পার্টিক্যাল হলো ভাইব্রেশন থেকে সৃষ্ট এক একটি মুড__ তথা এ সকল স্ট্রিং-এর বিভিন্ন হার্মোনি। পদার্থবিজ্ঞানীরা যে পার্টিক্যালগুলোকে স্টাডি করে সেগুলো স্পেসেরই বুনন। স্পেস থেকেই তারা “ওভেন” হয়। তাছাড়া এই স্ট্রিং কোনো অর্ডিন্যারি স্পেসে ভাইব্রেট করে না ( ত্রিমাত্রিক স্থান ও একমাত্রিক কাল), স্ট্রিং ভাইব্রেট করে দশমাত্রিক অথবা এগারমাত্রিক স্পেসে, যেটাকে বলে হাইপারস্পেস”।
আমরা ত্রিমাত্রিক সত্তা: আমরা ডানে, বামে, সামনে, পেছনে, উপরে ও নিচে যেতে পারি এবং এটাই আমাদের সবকিছু। তাহলে এক্সট্রা-ডায়মেনশনগুলো কোথায় গেল, তারা আমাদের থেকে কেন লুকিয়ে? এর কারণ হতে পারে তারা খুবই শক্তভাবে ওয়ার্প বা কুচকে গেছে। দূর থেকে যদি আপনি একটি লম্বা পাইপের দিকে তাকান সেটাকে আপনার কাছে একটা লাইন মনে হবে। কিন্তু যখন আপনি আরও ক্লোজ হবেন আপনি দেখতে পাবেন যে এটি একটি দীর্ঘ সিলিন্ডার (একটি দ্বি-মাত্রিক পৃষ্ঠ) যেটি অত্যন্ত শক্তভাবে গুটিয়ে আছে। আপনি যখন আরও ক্লোজার লুকে আসবেন আপনি দেখতে পাবেন এ সিলিন্ডার এমন ম্যাটারিয়ালসের তৈরি যা অসীমভাবে চিকন নয় কিন্তু এটি থার্ড ডায়মেনশনে বিস্তৃত হয়ে আছে। উপমা হিসেবে, আমাদের ত্রিমাত্রিক স্পেসের প্রতিটি পয়েন্টকে যদি আমরা হিউজলি ম্যাগনিফাই বা জুম করি, তবে আমরা কিছু কমপ্লেক্স স্ট্র্যাকচার দেখতে পাব: অতিরিক্ত সিক্সথ ডায়মেনশন অত্যন্ত শক্তভাবে ক্ষতবিক্ষত অরিগ্যামি হয়ে আছে ( এক ধরনের জাপানিজ কাগজের ভাজ)। কিছু কিছু এক্সট্রা-ডায়মেনশন হয়তো অত্যন্ত ফ্ল্যাক্সিবল বা ল্যুজলি কুচকে আছে যেজন্য তাদের ইফেক্ট আমরা ল্যাবরেটরি এক্সপেরিমেন্টে মাইক্রোস্কোপিক স্কেলে দেখতে পাই আর অন্যদিকে গ্র্যাভিটি সম্ভবত উচ্চমাত্রিক স্পেসের অত্যন্ত টাইট-ফিট লুপ যেজন্য সাব- অ্যাটমিক স্কেলে গ্র্যাভেটি দূর্বল বা ফ্ল্যাক্সিবল : মূলত আশাবাদীরা বিশ্বাস করেন যে জেনেভার লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডর এই এক্সট্র্যা-ডায়মেনশনের সংকেত বের করতে পারবে। স্পেসের মাইক্রোস্কোপিক স্ট্র্যাকচার এতটাই ক্ষুদ্র স্কেলে বাস করে যে আমরা সরাসরি এখানে প্রোব করতে পারি না। একইভাবে, আরও একটি এক্সট্রিম কসমোলজিক্যাল থিওরি আমাদের প্রস্তাব করছে যে, আমরা আমাদের টেলিস্কোপের মুখে যে মহাবিশ্বের ক্ষুদ্র খণ্ডটি দেখি মহাবিশ্ব ভয়ানকভাবে তার থেকেও বেশি এক্সটেনসিভ। অ্যাস্ট্রোনোমাররা যেটাকে ইউনিভার্স বলে__ এটি এমন একটি স্পেস যেটি আমাদের চারপাশে দশ বিলিয়ন লাইট ইয়ার্স পর্যন্ত বিস্তৃত যেখানে বিলিয়নস গ্যালাক্সি আছে যা বিলিয়নস স্ট্যার ধারণ করে, যেখানে রয়েছে বিলিয়নস প্ল্যানেট (এবং সম্ভবত বিলিয়ন বায়োস্পিয়ার)__ এসব কিছু সম্ভবত সামগ্রিক মহাবিশ্বের তুলনায় অসীম ক্ষুদ্র একটি কণা।
আমাদের সরাসরি পর্যবেক্ষণে ইউনিভার্সে একটি মহাজাগতিক ঘটনা দিগন্ত ধরা পড়ে; একটি গোলাকার খোলস ঘিরে রেখেছে মহাবিশ্বের চারপাশ, এভাবে এ খোলসের বাহিরে দিক থেকে মহাবিস্ফোরণের পর থেকে এ পর্যন্ত কোনো আলো আমাদের কাছ পর্যন্ত আসতে পারেনি। আবার এই ঘটনা দিগন্ত ফিজিক্যাল কোনোকিছু নয়। আপনি হয়তো ভাবতে পারেন যে মহাবিশ্বের চারপাশে সত্যিই বস্তুগতভাবে শামুক বা ঝিনুকের মতো একটি খোলস আছে। কিন্তু না! আমরা যখন সমুদ্রের দিকে তাকাই, অনেক দূরে মনে হয় আকাশ সমুদ্রে নেমে গেছে। যদিও আকাশ কখনো সমুদ্রে নামে না। এ ধরনের ঘটনা দিগন্ত আসলে আমাদের দৃষ্টির প্রান্ত সীমা, এর কোনো ভৌত অস্তিত্ব নেই, যদিও মস্তিষ্কের ভেতর সত্যিই আকাশ ভৌতভাবে সমুদ্রে নেমে গেছে বলে প্রতিফলিত হয়। আপনি যদি সমুদ্রের মাঝখানে অবস্থান করেন তবে তার অর্থ এই নয় যে হরাইজনের অতীতে পানি শেষ হয়ে গেছে। ঠিক একইভাবে আমাদের কাছে অনুমান করার জন্য যথেষ্ট যুক্তি আছে যে , মহাবিস্ফোরণের মাধ্যমে মহাবিশ্ব তার থেকেও বেশি সম্প্রসারিত হয়েছে যতটুকু আমরা টেলিস্কোপের সীমায় দেখতে পাই। আমরা যা দেখি তা শেষ নয়। মহাবিস্ফোরণ একমাত্র নয়।
স্যার মার্টিন রিচ তার ২০১২ সালে প্রকাশিত “ From Here to Infinity: A Vision for the Future of Science” নামক বইটিতে বলেছিলেন, আমাদের মহাবিশ্বের পাশাপাশিই অন্য মহাবিশ্ব থাকতে পারে। কল্পনা করুন, একটি পিঁপড়া কাগজের পাতায় হামাগুড়ি খাচ্ছে (তাদের দ্বিমাত্রিক মহাবিশ্বে)। তারা ভিন্ন একটি কাগজের পাতা সম্পর্কে অসচেতন যেটি তাদের পাশেই আছে। ঠিক একইভাবে আমাদের মহাবিশ্ব থেকে মিলিমিটার দূরে অন্য আর একটি মহাবিশ্ব থাকতে পারে (আমাদের মতোই ত্রিমাত্রিক স্থান ও কাল)। কিন্তু আমরা সে মহাবিশ্ব সম্পর্কে অসচেতনই থেকে যাব “যদি সেই মিলিমিটার চতুর্থ স্থানিক মাত্রায় পরিমাপ করা হয়” যেখানে আমরা ত্রিমাত্রিক স্থানের কারাগারে বন্দী।
১৯২০ সালে আইনস্টাইনের থিওরি আমাদের মহাবিশ্বের শুরু সম্পর্কে সবচেয়ে বেস্ট এক্সপ্ল্যানেশন দিয়েছিল। আইনস্টাইনের তত্ত্ব অনুসারে, মহাবিশ্ব শুরু হয়েছিল ১০-২০ বিলিয়ন বছর পূর্বে একটি বিরাট বিস্ফোরণের ভেতর দিয়ে যেটাকে বলে মহাবিস্ফোরণ। মহাবিশ্বের সকল ম্যাটার: স্ট্যার, প্ল্যানেট ও গ্যালাক্সি একটি সুপারডেন্স গোলকে অবরূদ্ধ ছিল, যেটি ভায়োলেন্টলি এক্সপ্লোড হয় ও আমাদের ইউনিভার্সের সম্প্রসারণ ঘটে।
এ থিওরি একটি পর্যবেক্ষিত ডেটা এক্সপ্লেইন করতে পারে যে সকল স্ট্যার ও গ্যালাক্সি সাম্প্রতিক আমাদের মহাবিশ্ব থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। যাইহোক আইনস্টাইনের তত্ত্বে অনেক গ্যাপ আছে। কেন মহাবিশ্ব এক্সপ্লোড হয়েছিল? মহাবিস্ফোরণের পূর্বে কি ঘটেছিল? ধর্মতাত্ত্বিক এবং বিজ্ঞানীরা বিগব্যাং থিওরির অসম্পূর্ণতা অনুভব করতে পেরেছিলেন কারণ এটি স্বয়ং মহাবিস্ফোরণের অরিজিন ও ন্যাচার ব্যাখ্যা করতে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা এ সমস্যাটির সমাধান দেখতে পেয়েছিলাম মিচিও কাকুর ১৯৮৭ সালে প্রকাশিত “Beyond Einstein: the cosmic quest for the theory of the universe ” নামক গ্রন্থে। তিনি সেখানে বলেছিলেন, “অবিশ্বাস্যভাবে সুপারস্ট্রিং থিওরি প্রেডিক্ট করতে পারে মহাবিস্ফোরণের পূর্বে কি ঘটেছিল। সুপারস্ট্রিং থিওরি অনুসারে, ইউনিভার্স আদিতে টেন ডায়মেনশনাল স্পেসে অস্তিত্বশীল ছিল, এটি আজকের মতো চারমাত্রিক ছিল না ( স্পেসের তিনটি ডায়মেনশন ও টাইমের একটি ডায়মেনশন)।
যেহেতু ইউনিভার্স টেন ডায়মেনশনে খুবই অস্থিতিশীল থাকে, এটি দুটি খণ্ডে ভেঙে যায়। ক্ষুদ্র চারমাত্রিক মহাবিশ্ব ছয়মাত্রিক মহাবিশ্ব থেকে খুলে যায়”। এক্ষেত্রে বাতাসে ভেসে থাকা সোপ বাবলের কথা কল্পনা করুন যেটি আস্তে আস্তে ভাইব্রেট করছে। যদি ভাইব্রেশন স্ট্রং হয়ে ওঠে, সোপ বাবল অস্থির হয়ে যায়। কম্পমান সোপ বাবল এই মুহূর্তে যে স্টেজে আটকে আছে সেটাকে বলা যায় “ফলস ভ্যাকুয়াম”।
একটা বেলুনের মধ্যে পানি ভর্তি করে যদি মাধ্যাকর্ষের বিপরীতে উপরে উত্তোলন করেন তবে পানি নিচের দিকে চাপ সৃষ্টি করবে বেলুনের দেয়াল ফাটিয়ে দেয়ার জন্য। পানি মাধ্যাকর্ষের বিপরীতে যে অস্থিতিশীল বা চাপমূলক পর্যায়ে আটকে আছে সেটাই হলো “ফলস ভ্যাকুয়াম” আর যে দিকে বেলুনের দেয়াল ছিঁড়ে পানির প্রবাহ বেরিয়ে আসতে চাইছে সেটাকে বলে “ট্রু ভ্যাকুয়াম”।
নদীর বাঁধের ক্ষেত্রেও আমরা পানিকে ফলস ভ্যাকুয়ামে আটকে থাকতে দেখি। অ্যাটম বোমার ক্ষেত্রেও আমরা বিপুল পরিমাণ শক্তিকে ফলস ভ্যাকুয়াম স্টেটে আটকে থাকতে দেখি। আমরা যদি ইউরেনিয়ামের অস্থিতিশীল নিউক্লিয়াসের ভেতর নিউট্রন দিয়ে গুলি করি তবে ফলস ভ্যাকুয়াম ফেটে যাবে। আর বিপুল শক্তি বেরিয়ে আসবে। এটাকে বলে “সিম্যাট্রি ব্রেক–আপ”। ঠিক একইভাবে টেনথ ডায়মেনশনাল বাবলটি ছিল মহাপ্রতিসম বা সিম্যাট্রিক্যাল। এর ভেতর কম্পন ছিল খুবই অস্থিতিশীল আর তাই অ্যাটম বোমার মতোই সোপ বাবলটি ফিশন হয়ে আরও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বাবলে পরিণত হয়ে যায়। যদি এ থিওরি সঠিক হয় তবে আমাদের মহাবিশ্বের একটি সিস্ট্যার ইউনিভার্স আছে যেটি আমাদের ইউনিভার্সের সাথেই সহাবস্থান করছে। আদি ফিশনিং এতটাই ভায়োলেন্ট ছিল যে এটি একটি বিস্ফোরণ তৈরি করে যাকে আমরা আজ “বিগব্যাং” বলে জানি।
সুপারস্ট্রিং থিওরি এভাবে আমাদের কাছে ব্যাখ্যা করে মহাবিস্ফোরণ তার থেকেও আরও ভায়োলেন্ট একটি “ট্র্যানজিশনের বাইপ্রোডাক্ট”। টেনথ ডায়মেনশনাল ইউনিভার্সের দুটি খণ্ডে ক্র্যাক হয়ে যাওয়া। কিন্তু আপনার দুশ্চিন্তা করার কোনো কারণ নেই যে একদিন রাস্তায় হাঁটতে গিয়ে আপনি আকস্মিক আদার ডায়মেনশনাল ইউনিভার্সে পড়ে যাবেন যেমনটি সায়েন্স ফিকশনে ঘটে থাকে।
সুপারস্ট্রিং থিওরি অনুসারে, আদার ডায়মেনশনাল ইউনিভার্স অ্যাটমের নিউক্লিয়াস থেকেও ১০০ বিলিয়ন বিলিয়ন টাইম ক্ষুদ্র। যেখানে কোনো মানুষের পক্ষে প্রবেশ করা সম্ভব না। নিউট্রোনো পার্টিক্যাল ইলেক্ট্রন থেকে এক মিলিয়ন গুণ ক্ষুদ্র যে জন্য এটি আমাদের দেহকে ভেদ করে চলে যায়। অন্যদিকে প্ল্যাংক ল্যাংথ হলো সৌরজগতের বিশালত্বের কাছে একটি অ্যাটমের সমান। এজন্য ছয়ামত্রিক জগতের সাথে আমরা ধাক্কা খাইনা। এটি ল্যাজারের মতোই আমাদের দেহ ভেদ করে, তাই আমরা এম্পটিস্পেস দেখতে পাই। এটি ছিল একটি অ্যাকাডেমিক প্রশ্ন হায়ার ডায়মেনশনাল স্পেস দেখতে কেমন।
একটি সেন্স থেকে মহাবিশ্ব সৃষ্টির শুরুতেই হায়ার ডায়মেনশনাল স্পেসে ট্র্যাভেল করা যেত। যখন মহাবিশ্ব ছিল টেনথ ডায়মেনশনাল এবং ইন্টারডায়মেনশনাল ট্র্যাভেল ভৌতভাবে অস্তিত্বশীল ছিল। আমরা এ গ্রন্থে দেখব, কীভাবে এখনো অতিরিক্ত ছয়মাত্রা ক্ষুদ্রতর স্কেলে কুচকে আমাদের মহাবিশ্বের সাথেই আটকে আছে। বহুমাত্রিক স্থানের পাশাপাশি, বিজ্ঞান কথাসাহিত্যিকরা কখনও কখনও তাদের উপন্যাসগুলিতে “ড্যার্ক ম্যাটার” নিয়ে আলোচনা করে, যা মহাবিশ্বে পাওয়া যায় না এমন বৈশিষ্ট্য সহ পদার্থের একটি রহস্যময় রূপ। অতীতে ড্যার্ক ম্যাটার সম্পর্কে প্রেডিক্ট করা হয়েছিল কিন্তু বিজ্ঞানীরা যখন ড্যার্ক ম্যাটারের অনুসন্ধানে স্বর্গে টেলিস্কোপ তাক করেছিলেন তারা কেবল শতাধিক পরিচিত উপাদান খুঁজে পান যা একইসাথে আমাদের পৃথিবীতেও অবস্থান করে।
আমরা যদি পৃথিবী ছেড়ে দূরবর্তী নক্ষত্রেও ভ্রমণ করি আমরা দেখতে পাই যে মহাবিশ্ব সাধারণত হাইড্রোজেন, হিলিয়াম, অক্সিজেন, কার্বন ইত্যাদি দিয়ে তৈরি। অন্যকথায়, এটি আমাদের নিশ্চিত করে যে, আমরা আউটার স্পেসে যেখানেই ভ্রমণ করি আমাদের রকেটশিপ একই কেমিক্যাল কম্পাউন্ডের মুখোমুখি হবে যা পৃথিবীতে পাওয়া যায়। অন্যকথায়, এটা কিছুটা হতাশাজনক যে আউটারস্পেসে কোনো সারপ্রাইজ নেই। সুপারস্ট্রিং তত্ত্ব সম্ভবত এ বিষয়টি পরিবর্তন করে দেবে। টেন ডায়মেনশনাল ইউনিভার্স যখন কোয়ান্টাম টানেলিং-এর মাধ্যমে দুটি আলাদা মহাবিশ্বে পৃথক হয়ে গিয়েছিল, এই ফিশনিং প্রসেসের সময় বস্তুর একটি নতুন ফর্ম তৈরি হয়েছিল যাকে আজ আমরা বলছি “ড্যার্ক ম্যাটার”। অন্যান্য পদার্থের মতোই ড্যার্ক ম্যাটারেরও ওজন আছে কিন্তু এটি অদৃশ্য।
ড্যার্কম্যাটার টেস্টলেস এবং এর কোনো স্মেল নেই। এমনকি আমাদের সবচেয়ে সেনসেটিভ ইনসট্র্যুমেন্টও এর উপস্থিতি ডিটেক্ট করতে পারে না। আপনি যদি ড্যার্ক ম্যাটারকে হাতের মুঠোয় ধরেন এটাকে আপনার ভারী মনে হবে কিন্তু অন্য কোনোভাবে একে ডিটেক্ট করা অসম্ভব। আমরা ড্যার্ক ম্যাটারকে কেবল তার ওজন দ্বারা ডিটেক্ট করতে পারি। অন্য কোনো বস্তুর সাথে এটি কোনো ইন্টারেকশন করে না। ড্যার্ক ম্যাটার কসমোলজির একটি পাজল সমাধান করে। যদি মহাবিশ্বে পর্যাপ্ত ম্যাটার থাকত তবে গ্যালাক্সির গ্র্যাভিটেশনাল অ্যাট্র্যাকশন মহাবিশ্বের এক্সপেনশনকে থামিয়ে দিত। সম্ভবত এটাকে রিভার্স করত ও এটি পুনরায় কলাপ্স করত। যাইহোক এখানে কনফ্লিক্টিং ডেটা রয়েছে মহাবিশ্বের এক্সপেনসন রিভার্স করে পুনরায় কলাপ্স ঘটানোর মতো পর্যাপ্ত ম্যাটার আছে কিনা।
জ্যোতির্বিদরা মহাবিশ্বের সকল স্ট্যার ও গ্যালাক্সির শক্তির মোট পরিমাণ গণনা করতে চেয়েছিলেন এবং তারা দেখেছিলেন কলাপ্স ঘটানোর জন্য পর্যাপ্ত ম্যাটার নেই।
যাইহোক, আর একটি ক্যালকুল্যাশন ( রেড শিফট ও লুমিনাস স্ট্যারের উপর ভর করে) ইন্ডিকেট করছে যে মহাবিশ্ব কলাপ্স করবে। এটাকে বলে মিসিং ম্যাস প্রবলেম। যদি সুপারস্ট্রিং তত্ত্ব সঠিক হয় তবে এটি ব্যাখ্যা করতে পারবে কেন জ্যোতির্বিদরা তাদের টেলিস্কোপ ও ইনস্ট্রুমেন্টে এটিকে দেখতে ব্যার্থ হচ্ছে। তাছাড়া ড্যার্ক ম্যাটার যদি সঠিক হয় তবে এটি সমস্ত মহাবিশ্বেই বিস্তারিত (মূলত সাধারণ ম্যাটার থেকে ড্যার্ক ম্যাটারই বেশি)। এদিক থেকে সুপারস্ট্রিং তত্ত্ব কেবল মহাবিস্ফোরণের পূর্বে কি ঘটবে সেটাই পরিস্কার করে না এটি আমাদের বলতে পারে মহাবিশ্বের মৃত্যুর সময় কী ঘটবে।
মিচিও কাকু তার “দ্যা গড ইকুয়েশন” বইতে লিখেছিলেন, আমরা যখন আজ মহাবিশ্বের দিকে তাকাই আমরা দেখি চারটি ফাণ্ডামেন্টাল ফোর্স স্বতন্ত্রভাবে কাজ করছে। গ্র্যাভেটি, লাইট ও নিউক্লিয়ার ফোর্সকে দেখে প্রথম দৃষ্টিতে মনে হবে এদের মধ্যে কমন কিছুই নেই। কিন্তু আপনি যদি সময়ের পেছনের দিকে ভ্রমণ করেন এ ফোর্সগুলো একীভূত হতে শুরু করে, সৃষ্টির শুরুতে শুধু একটাই ফোর্স থাকে । একটি নতুন পিকচার পার্টিক্যাল ফিজিক্সকে বিশ্বতত্ত্বের মহান রহস্য ব্যাখ্যা করতে ব্যবহার করে। দুটি আলাদা ফিল্ড, কোয়ান্টাম মেকানিক্স ও জেনারেল রিল্যাটিভিটি একটিতে পরিণত হতে শুরু করে। এ নতুন ছবিতে, বিগব্যাং মুহূর্তে চারটি মৌলিক বল একটি স্বতন্ত্র সুপার ফোর্সে মিলিত হয়ে যায় যা ম্যাস্ট্যার সিম্যাট্রি মেনে চলে। এ ম্যাস্ট্যার সিম্যাট্রি মহাবিশ্বের সকল পার্টিক্যালকে একটিতে রোটেট করতে পারে । যে ইকুয়েশন এই সুপারফোর্সকে পরিচালনা করেছিল সেটিই ছিল গড ইকুয়েশন”। এর প্রতিসাম্যতা হলো এমন এক প্রতিসাম্যতা যা আইনস্টাইন ও অন্যান্য পদার্থবিদদের সবসময় প্রতারিত করে। তার মানে দেখাই যাচ্ছে যে সৃষ্টির শুরুতে টেনথ ডায়মেনশনাল বাবলের ভেতরেই গড ইকুয়েশন বাস করত। যে দশাটিকে বলা হয় মহাপ্রতিসাম্যতা। কিন্তু এ মহাপ্রতিসাম্যতা স্থিতিশীল ছিল না। এখানে ভাইব্রেশন ছিল খুবই স্ট্রং। বিপুল পরিমাণ শক্তি ফলস ভ্যাকুয়ামে আটকে ছিল। ট্রু-ভ্যাকুয়াম স্টেটে সুপারসিমেট্রি ভেঙে যায়। কোয়ান্টাম টানেলিং-এর মাধ্যমে দশমাত্রিক বাবল ফিশন হয়ে চার ও ছয়মাত্রিক বাবলে বিভক্ত হয়। এটাকে বলে ফেজ ট্র্যানজিশন। আমরা এ ফিশনিং থেকেই মহাবিস্ফোরণ পাই। মহাবিস্ফোরণের পর অনেকগুলো ফেজ ট্র্যানজিশন ঘটেছিল। মৌলিক বলগুলো পৃথক হয়ে গিয়েছিল।
এটা খুবই অবিশ্বাস্য যে আমরা মহাবিশ্ব সৃষ্টির শুরুতে উপস্থিত না থেকেও এসবকিছু জানতে পেরেছি ঠিক যেমনি ডিএনএ অণু অথবা সূর্যের ভেতর প্রবেশ না করেও আমরা তাদের ভেতর কী আছে তা নির্ভুলভাবে বলতে পেরেছি। মানুষের মতো তুচ্ছ একটি প্রজাতি সিঙ্গুলারিটির আগে কি ছিল তা নিয়ে কথা বলছে। পৃথিবীর আর কোনো প্রাণীর পক্ষে যেটা একেবারেই অকল্পনীয়। প্রযুক্তিগতভাবে আমরা কেবল মাধ্যাকর্ষকে ত্যাগ করতে শিখেছি, আমাদের অপরিশোধিত প্রোব ব্যবহার করে আমরা সৌরজগতও ত্যাগ করতে পারিনি, আমাদের মতো নগন্য একটি প্রজাতির কী উচিত থিওরি অব এভরিথিং খুঁজে পাওয়া? মিচিও কাকু বলেছিলেন, ইভোল্যুশন অনুসারে, আমরা বুদ্ধিমান বানর যারা কিছুক্ষণ হলো গাছ থেকে নেমেছি, ভির্গো সুপারক্লাস্টারের পাশে ক্ষুদ্র একটি গ্যালাকটিক গ্রুপের, ক্ষুদ্র একটি গ্যালাকটিক বাহুর, অতি-ক্ষুদ্র একটি নক্ষত্রের তৃতীয় গ্রহে বাস করি।
যদি ইনফ্ল্যাশন থিওরি কারেক্ট হয়, তবে আমাদের দৃশ্যমান সমগ্র মহাবিশ্ব তারচেয়েও বিশাল মহাবিশ্বের অসীম ক্ষুদ্র একটি বুদ্বুদ, তারপরও, বৃহত্তর মহাবিশ্বে আমরা যে প্রায় নগণ্য ভূমিকা পালন করি তা বিবেচনা করলে, এটি আশ্চর্যজনক বলে মনে হয় যে আমাদের থিওরি অব এভরিথিং আবিষ্কার করতে পারা উচিত।
যাইহোক, দশমাত্রিক বাবল ফেটে যাওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত সেকেন্ডের কোন কোন ইনভার্সে কোন কোন ফেজ ট্র্যানজিশন ঘটেছিল আমাদের মস্তিষ্ক ও কম্পিউটার তা নিখুঁত ভাবে বের করতে পেরেছে। আমরা যদি মহাবিস্ফোরণের পর থেকে সেকেন্ডের অতি-ক্ষুদ্র ফ্র্যাকশনগুলো পয়েন্ট করে অনুসন্ধান শুরু করি তবে আমরা নিন্মোক্ত পর্যায়গুলো দেখতে পাই:
- ১০-৪৩ সেকেন্ডের ভেতর দশমাত্রিক মহাবিশ্ব চার ও ছয়মাত্রিক মহাবিশ্বে ব্রেক ডাউন করে। ছয়মাত্রিক মহাবিশ্ব ১০–৩২ আকারে ক্ষুদ্র হয়ে যায়। চতুর্থমাত্রিক মহাবিশ্ব দ্রুত ইনফ্ল্যাট বা স্ফিত হতে শুরু করে। তাপমাত্রা হবে ১০৩২ কেলভিন। ছয়মাত্রিক জগত চারমাত্রিক জগতের সাথে মাইক্রোস্কোপিক স্কেলে কুচকে থাকে কিন্তু ছিঁড়ে যায় না। এ যেন দুজন জোড়া ভাইবোনের একসাথে জন্ম হওয়া।
- ১০–৩৫ সেকেন্ডে GUT ফোর্স ভেঙে যায়; স্ট্রং ফোর্স আর ইলেক্ট্রোউইক ইন্টারেকশনের সাথে একীভূত থাকবে না। SU(3) ভেঙে আলাদা হয়ে যায় GUT প্রতিসাম্যতা থেকে। মহাবিশ্বের অত্যন্ত ক্ষুদ্র একটি ফোটা ফ্যাক্টর ১০৫০ দ্বারা ইনফ্ল্যাট হয় এবং অবশেষে আমাদের দৃশ্যমান মহাবিশ্বে পরিণত হয়।
- ১০–৯ সেকেন্ডে তাপমাত্রা এখন ১০১৫ কেলভিন। এ সময় ইলেক্ট্রোউইক সিম্যাট্রি ভেঙে SU(2) এবং U(1) এ পরিণত হবে। ১০–৩ সেকেন্ডে কোয়ার্ক ‘নিউট্রন ও প্রোটন’-এ ঘনীভূত হতে থাকে। তাপমাত্রা প্রায় 1014 °K।
- তিন মিনিট পর প্রোটন ও নিউট্রন এখন স্থিতিশীল নিউক্লিতে ঘনীভূত হয়ে যায়। র্যান্ডম কোয়ালিশনের কাছে যথেষ্ট পরিমাণ শক্তি থাকে না উদীয়মান নিউক্লির নিউক্লিয়াসকে ভেঙে ফেলার জন্য। স্পেস তখনও অস্বচ্ছ থাকে কারণ আয়ন তখনও ভালোভাবে আলোকে ট্রান্সমিট করতে পারে না।
- ৩০০, ০০০ বছরে ইলেক্ট্রন নিউক্লির চারপাশে ঘনীভূত হতে শুরু করে। অ্যাটম গঠিত হওয়া শুরু হয়। কারণ আলো এখন আর বিক্ষিপ্ত ও শোষিত হয় না, মহাবিশ্ব আলোতে স্বচ্ছ হয়ে ওঠে। মহাশূন্য কালো হতে শুরু করে।
- তিন বিলিয়ন বছর পর প্রথম কোয়েসার দৃশ্যমান হয়।
- ৫ বিলিয়ন বছরে প্রথম গ্যালাক্সি দৃশ্যমান হয়।
- ১০-১৫ বিলিয়ন বছরে সোলার সিস্টেম জন্ম হয়।
- তার আরও কয়েক বিলিয়ন বছর পর পৃথিবীতে প্রথম জীবন দেখা দেয়।
- পনের বিলিয়ন বছর পর আপনি এ মুহূর্তে আমার এই আর্টিক্যালটি পড়ছেন!
আমরা যদি “গড ইকুয়েশন” পুনরায় অ্যাকটিভেট করতে চাই তবে আমাদেরকে এ প্রক্রিয়াটি ল্যাবে রিভার্স করতে হবে ( বিপরীত দিকে চালনা) । মহাবিস্ফোরণকে ল্যাবরেটরিতে উৎপাদন করতে হবে। যে তাপমাত্রায় উইকফোর্স, স্ট্রং ফোর্স, গ্র্যাভিটেশনাল ফোর্স ও ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ফোর্স দশমাত্রিক জগতে কানেক্ট হয়ে যায়, আমরা যদি একই টেম্পারেচার আমাদের সুপার কন্ডাক্টিং কোলাইডরে তৈরি করতে পারি তবেই আমরা কোয়ান্টাম মেকানিক্স ও রিল্যাটিভিটি কানেক্ট করতে পারব। দশমাত্রিক বাবলের ভেতর চারমাত্রিক জগতের পার্টিক্যাল ছয়মাত্রিক জগতে কোনোপ্রকার প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই যাতায়াত করতে পারবে আর ঠিক তখনই ইন্টার ডায়মেনশনাল ট্র্যাভেল সম্ভব হবে।
আমরা যদি ল্যাবরেটরিতে 1032 °K তাপমাত্রা উৎপাদন করতে পারি তবেই দুটি ইউনিভার্সের মধ্যে ডায়মেনশনাল উইন্ডোজ খুলে যাবে যেটি আমাদের এ বইয়ের অনুসন্ধান। আমরা যদি হাইপারস্পেসের লর্ড হতে চাই,আমরা যদি স্থান-কালের ডায়মেনশনালিটির উপর আধিপত্য বিস্তার করতে চাই, আমরা যদি দূরবর্তী স্ট্যার সিস্টেমে ওয়ার্মহোলের মাধ্যমে কলোনি বিস্তার করতে চাই তবে আমাদেরকে অন্তত ১০১৯ কেলভিন তাপমাত্রার ঈশ্বর হতে হবে। আসলে মহাকাশের দুটি সভ্যতার মাঝে দূরত্ব সময়ের নয়, দূরত্ব শক্তির। অ্যান্ড্রোমিডা এজন্যই ২.৫৩৭ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে কারণ আইনস্টাইন-রোজেন ব্রিজ খোলার জন্য আমাদের কাছে শক্তি নেই, আলকুবিয়েরে ওয়ার্প ড্রাইভের মাধ্যমে একটি স্ট্যার সিস্টেমের সাথে আমাদের মধ্যবর্তী স্থানকাল কুচকে এক লাফে কেবল সেই কুচকানো অংশটি পাড়ি দিয়ে সে স্ট্যার সিস্টেমে চলে যাওয়ার শক্তি আমাদের প্রযুক্তির বাহিরে। মহান তাত্ত্বিক পদার্থ বিজ্ঞানী ফ্রীম্যান ডাইসন মিচিও কাকুকে বলেছিলেন, দুটি সভ্যতা মিলিয়ন মিলিন লাইট ইয়ার্স দূরত্ব দ্বারা বিচ্ছিন্ন কারণ প্ল্যাংক এনার্জিই (১০১৯) দুটি মহান বুদ্ধিমান সভ্যতার মাঝখানে একমাত্র দেয়াল। প্রকৃতি নিজেই এই কঠোর দেয়াল টেনে দিয়েছে যা বুদ্ধিমান সভ্যতাগুলোকে পৃথক করে রেখেছে মিলিয়ন মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরত্বে, যেন ব্রিটিশদের মতো কোনো আগ্রাসী সভ্যতা সম্পূর্ণ মহাবিশ্বে উপনিবেশবাদ বিস্তার করতে না পারে, যেন কোনো আগ্রাসী বুদ্ধিমান সভ্যতা অন্যান্য উন্নয়নশীল সভ্যতাকে গ্রাস করতে না পারে, রক্তক্ষয়ী আনফিলিং ইন্টারগ্যালাকটিক যুদ্ধগুলোকে যেন এ মহাবিশ্ব অতিক্রম করতে পারে!
এসএসসি বা সুপার কন্ডাক্টিং কোলাইডর যে পরিমাণ শক্তি অর্জন করতে সক্ষম এ শক্তি তার থেকে ১ কোয়াড্রিলিয়ন গুণ শক্তিশালী। এ পরিমাণ শক্তির ঈশ্বর হতে হলে আপনাকে সমস্ত গ্যালাক্সির অধিকারী হতে হবে। আমাদের সভ্যতা বর্তমানে টাইপ জিরো স্থিতিতে অবস্থান করছে। এ ধরনের দূর্বল একটি সভ্যতার পক্ষে “হাইপারস্পেসের লর্ড” হওয়া সম্ভব না।
তবে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন হয় ব্যাক্টেরিয়ার মত জ্যামিতিক হারে। মানুষ আজ ২ মিলিয়ন বছর এ পৃথিবীতে শুধু সার্ভাইভ করছে কিন্তু তারা কিছুই করতে পারেনি, আমরা আজকের যে রোবটিকস যুগ দেখছি সেটি সৃষ্টি হয়েছে মাত্র ২০০ বছরে যা ২ মিলিয়ন বছরের কাছে হয়তো একটি মুহূর্ত মাত্র। এটা সম্ভব হয়েছে কারণ প্রযুক্তির বৃদ্ধি ঘটে জ্যামিতিক।
আপনি যদি ব্যাক্টেরিয়াকে স্বাধীনভাবে বংশবৃদ্ধির জন্য সুযোগ দেন তবে সাতদিনের মধ্যে ব্যাক্টেরিয়ার কলোনি পৃথিবী আকারের একটি ডিমে পরিণত হবে। কিন্তু বাস্তবে ব্যাক্টেরিয়া কলোনি একটি কয়েন থেকে বেশি বড় হয় না। ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করে দেখা গেছে ব্যাক্টেরিয়াকে স্বাধীনভাবে বংশবৃদ্ধির সুযোগ দেয়ার পরও তারা একটা পর্যায়ে কলাপ্স করে কারণ তারা এত বিপুল পরিমাণ বর্জ্য তৈরি করে যে নিজেদের বর্জ্য পদার্থে নিজেরাই ডুবে মরে যায়। আমাদের মানব সভ্যতার ক্ষেত্রেও একই সত্য প্রযোজ্য। ১০১৯ কেলভিন হিট তৈরির শক্তি অর্জনের পূর্বেই হয়তো আমাদের ইকোসিস্টেম কলাপ্স করবে, আমরা সমুদ্র ও জলবায়ু দুষণ করে নিজেদের বর্জ্যে নিজেরাই ডুবে বিলুপ্ত হয়ে যাব।
দ্বিতীয়ত যেকোনো টাইপ ০ সভ্যতার মধ্যে ধর্ম ও জাতিগত দ্বন্ধ কাজ করে। ড্র্যাক সমীকরণ থেকে বিজ্ঞানীরা ধারণা করেছিলেন যে আমাদের মানব সভ্যতা আফ্রিকার জঙ্গল থেকে বের হওয়ার মিলিয়ন মিলিয়ন বছর আগেও ইউনিভার্সে বুদ্ধিমান সভ্যতা ছিল, আমরা তাদের রেডিয়ো সিগন্যাল পাইনা কারণ তারা আজ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। হয়তো মানুষের বিলুপ্তির মিলিয়ন বছর পরও ইউনিভার্সে সভ্যতার কার্ভ ওঠানামা করবে। এভাবে বিজ্ঞানীরা বুদ্ধিমান সভ্যতার উত্থান ও পতন দেখানোর জন্য একটি গ্রাফ অংকন করেছিলেন, তারা দেখিয়েছিলেন, যে কোনো বুদ্ধিমান সভ্যতা,তারা যখনই ইউরেনিয়ামের উপর অ্যাক্সেস পেয়েছিল তারা আকস্মিক বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে।
নিউরোসায়েন্টিস্টরা বলছেন, কিশোরদের মস্তিষ্কের প্রি-ফ্রন্টাল কর্টেক্স উন্নত নয়, যে কর্টেক্স হায়ার লজিক ও মর্যালিটির সাথে সম্পর্কযুক্ত। শুধু তাই নয় ডেভিড ইগলম্যান বলেছেন, কিশোরদের মস্তিষ্কের প্রি-ফ্রন্টাল কর্টেক্সের কিছু নিউরন বিকশিত হতে ২৫ বছর সময় লেগে যায় আর এজন্যই কিশোররা ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ( আমার বই “ব্রেন তোমার কানেক্টমের গল্প” পড়ুন) । ঠিক একইভাবে একটি সভ্যতার প্রি-ফ্রন্টাল কর্টেক্স বা ম্যাচুরিটি ( রূপক) আসার পূর্বেই যদি তারা ইউরেনিয়ামের উপর অ্যাক্সেস পেয়ে যায় তবে সে সভ্যতার বিলুপ্তির সর্বোচ্চ সম্ভাবনা থাকে। আমরা এ বইতে দেখব অতীতে বেশিরভাগ সভ্যতা বিলুপ্ত হয়েছে গড ভাইরাস ও জাতিগত সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে এসে “প্ল্যানেটারি পলিটিক্যাল সিস্টেম” গঠন করতে পারার নিউরোলজিক্যাল অক্ষমতার কারণে।
আজ রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সঠিক কোনো যোগাযোগ নেই। চাইনিজদের সকল আবিষ্কার অ্যামেরিকানদের কাছে শেয়ার করা হয় না, অ্যামেরিকানদের সকল আবিষ্কার রাশিয়ার কাছে শেয়ার করা হয় না। জাতিগত গল্পে বিশ্বাসের ভিন্নতা ব্যাবচ্ছেদের যে সর্বজনীন দেয়াল রচনা করেছে তার প্রভাবে বিশ্বের মানুষের মধ্যে ডেটা, ইনফরমেশন, জ্ঞান, ইনসাইট ও প্রজ্ঞা সঠিকভাবে বিনিময় হচ্ছে না। আমরা যদি প্রতিটি রাষ্ট্রের জ্ঞান ও প্রযুক্তিকে একত্রিত করতে পারি তবে আমরা চাইলে এ মুহূর্তেই অমরত্বের সিক্রেট জেনে যেতে পারি, প্ল্যানেটারি পলিটিক্যাল সিস্টেম উন্নত করতে পারি, টাইপ ১ স্থিতিতে উন্নীত হতে পারি কিন্তু মানব সভ্যতার জ্ঞান বিক্ষিপ্ত ও সমন্বয়হীন, গ্লোবাল নলেজের উপর সকল রাষ্ট্রের সমান পরিমাণ অ্যাক্সেস নেই।
একটি রাষ্ট্র যদি পরিবেশ দূষণে অনেক বেশি অবদান রাখে তবে তার প্রতিদান সমস্ত প্ল্যানেটকেই দিতে হবে কিন্তু পরিবেশের ব্যাপারে সকল রাষ্ট্র সমানভাবে সচেতন নয় কারণ তারা এখনো প্ল্যানেটারি পলিটিক্যাল সিস্টেম অর্জন করতে পারছে না । যদি একটি রাষ্ট্রের জন্য হোল প্ল্যানেট ক্ষতিগ্রস্ত হয় তবে গ্রহ কী তাকে ছেড়ে দেবে? এমন সমন্বয়হীনতা থেকে পারমাণবিক যুদ্ধ ট্রিগার হবে না? ফুটবল ও ক্রিকেট খেলায় এক টি রাষ্ট্রের বিপক্ষে অন্য আর একটি রাষ্ট্র জয়লাভ করে, একটি গল্পের বিপক্ষে অন্য আর একটি গল্প জয়লাভ করে __ এভাবে আমরা সর্বত্রই বিশ্বের বিভিন্ন ভৌগোলিক পরিবেশে অবস্থানরত মানুষগুলোর মধ্যে আন্তঃজাতি বিচ্ছেদ দেখতে পাই। আজ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষের কাছেই পারমাণবিক বোমা আছে কারণ তারা পৃথিবীকে তাদের হোম প্ল্যানেট মনে করে না, তারা নির্দিষ্ট ভূখণ্ড, জাতিগত গল্প ও পলিটিক্যাল সিস্টেমে বিশ্বাস করে, সেটাই তাদের হোম প্ল্যানেট। আমরা সুস্পষ্টভাবে দেখতে পাচ্ছি মানব সভ্যতার মত একটি টাইপ ০ সভ্যতা “পিটার পেন কমপ্লেক্সে” আক্রান্ত তারা নিজেদের দায়িত্ব ও কর্তব্য বুঝতে চায় না, মানসিক ভাইরাস আক্রান্ত হয়ে তারা নিজেরাই নিজেদের বিপক্ষে পারমাণবিক বোমা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, তারা টাইপ ১ স্থিতিতে প্রবেশের পূর্বে, সৌরজগতের অন্যান্য গ্রহে কলোনি বিস্তার করার অনেক আগেই সুইসাইড করার জন্য প্রস্তুত।
মিলিয়ন মিলিয়ন বছর আগে মহাবিশ্বে এমন অজস্র টাইপ ০ ও টাইপ ১ সভ্যতা “পিটার পেন কমপ্লেক্সে ” আক্রান্ত হয়ে প্রযুক্তির স্পাইকে এসেও বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। আমরা মানব সভ্যতা বর্তমানে এরকম একটি ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে আছি। বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ইন্ডিয়া, ইরান ও আফগানিস্তানের মতো রাষ্ট্রগুলোতে জাতিগত কলহ অত্যন্ত প্রবল কারণ তারা গড ভাইরাসে আক্রান্ত, এ ধরনের রাষ্ট্রগুলোর সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেম ভাইরাসের দখলে। “লর্ড অব হাইপারস্পেস” হতে চাইলে মানব সভ্যতার মধ্যে সর্বপ্রথম পারস্পরিক আন্ডারেস্টিং উন্নত করতে হবে, আমাদেরকে প্ল্যানেটারি দৃষ্টিকোণ অর্জন করতে হবে। তাহলেই হয়তো আমরা আর একটি বরফ যুগ, নেমেসিস, সূর্যের মৃত্যু ও অন্তিমে মহাবিশ্বের মৃত্যুকে এড়িয়ে যেতে পারব।
এ বইটি হবে ফোর্থ ডায়মেনশনের ইতিহাস ও মানব সভ্যতার আল্টিম্যাট আশ্রয়স্থল হাইপারস্পেসেরই ধারাবাহিক বিবরণ।
আমাদের বইসমূহ পেতে ক্লিক করুন: এখানে
বইটি সংগ্রহ করুন এখান থেকে: hyperspace
হাইপারস্পেস বইটির দেহ ব্যাবচ্ছেদ/হাইপারস্পেস বইটির দেহ ব্যাবচ্ছেদ/হাইপারস্পেস বইটির দেহ ব্যাবচ্ছেদ/হাইপারস্পেস বইটির দেহ ব্যাবচ্ছেদ/হাইপারস্পেস বইটির দেহ ব্যাবচ্ছেদ/হাইপারস্পেস বইটির দেহ ব্যাবচ্ছেদ/হাইপারস্পেস বইটির দেহ ব্যাবচ্ছেদ/হাইপারস্পেস বইটির দেহ ব্যাবচ্ছেদ/হাইপারস্পেস বইটির দেহ ব্যাবচ্ছেদ/হাইপারস্পেস বইটির দেহ ব্যাবচ্ছেদ/হাইপারস্পেস বইটির দেহ ব্যাবচ্ছেদ/হাইপারস্পেস বইটির দেহ ব্যাবচ্ছেদ/হাইপারস্পেস বইটির দেহ ব্যাবচ্ছেদ/হাইপারস্পেস বইটির দেহ