২২ বছর বয়সে আমার একজন ফিলোসফারের সাথে দেখা হয়েছিল। তিনি আমাকে প্রশ্ন করলেন, কী চাও তুমি? আমি উত্তর দিয়েছিলাম, আমি কিছু চাই না। তিনি আমাকে বলেন, তুমি যদি চাও, তুমি বিল গেটস হতে পার, তোমার বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার থাকবে। তুমি যদি চাও, তবে তুমি মহাকাশচারী হতে পার, সৌরজগতের এই গ্রহ থেকে ঐ গ্রহে তুমি ঘুরে বেড়াবে। তুমি কী হতে চাও? আমি আবারও মাথা নিচু করে রইলাম। চোখ দুটি ডান পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলের নখের দিকে তাক করে মৃদু হেসে বললাম, আমি কিছু চাই না। তিনি আমাকে বলেলন, তুমি যদি বিলগেটস হও, তুমি আলো, বাতাস, মাটি ও পানির তৈরি উপাদান খেয়ে সার্ভাইভ করবে, আবার তুমি যদি একজন সাধারণ মানুষ হও, তখনও তুমি একই আলো, বাতাস, মাটি ও পানির তৈরি উপাদান খেয়ে সার্ভাইভ করবে। মৌলিক রঙ তিনটি কিন্তু এই তিনটি মৌলিক রঙ অদলবদল করে, তুমি ১৬ মিলিয়ন কালার তৈরি করতে পারবে। ঠিক তেমনি তুমি এ মহাবিশ্বে যে অনুক্রমই দখল করো না কেন, মহাবিশ্বের অণু-পরমাণু, ফোর্স ফিল্ড ও পদার্থবিদ্যার নিয়ম একই থাকবে, তুমি কেবল কালার মিক্সিং করতে পার।
তোমার মস্তিষ্কের ডোপামিন, সেরেটোনিন, অক্সিটোসিন ও এন্ডোরপিন মিশিয়ে তুমি মিলিয়ন মিলিয়ন অনুভূতি তৈরি করতে পার।
একটি ভাইরাস যখন একজন মানুষের একটি কোষ দখল করে, তখন তার দেহ থেকে সেরেটোনিন নিঃসৃত হয়। একটি থিওরি অনুসারে, একটি ভাইরাস যখন একজন মানুষের দেহ কোষ দখল করে, তখন সে সুখী হয়। আর একজন নভোচারীর মস্তিষ্ক থেকে সেরেটোনিন রিলিজ হয়, যখন সে মহাকাশের একটি গ্রহ দখল করে। এখন তুমি বল, তুমি কী চাও? আমি তাকে বলেছিলাম, এই মুহূর্ত থেকে আমার আর কিছু চাওয়ার নেই, আজকের পর থেকে আমি বিলগেটস, আমি ৩০০ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরের কোনো এক এক্সট্রা টেরিস্টিয়াল সিভিলাইজেশনের একজন লিডার।
এবার তিনি আমাকে প্রশ্ন করলেন, এমন কেন বলছ? আমি তাকে বললাম, একটি ভাইরাস একজন মানুষের দেহের প্রায় ১০০ ট্রিলিয়ন কোষের একটি কোষ দখল করেই সুখী, আর একটি টাইপ-৫ সিভিলাইজেশন মহাবিশ্বের মিলিয়ন মিলিয়ন নাক্ষত্রিক সিস্টেমে কলোনি বিস্তার করে সুখী। সুখী হওয়ার জন্য মহাবিশ্ব দখল করার দরকার নেই, সুখী হওয়ার জন্য ডোপামিন ও সেরেটোনিনের ইন্টারেকশন দরকার! একটি ভাইরাস যদি একটি কোষ দখল করেই সেরেটোনিন রিলিজ করতে পারে, আমার সেরেটোনিন রিলিজ করার জন্য সৌরজগত দরকার নেই!
তিনি আমায় প্রশ্ন করলেন, তাহলে তুমি এখন কী চাও? কেন তোমার মন খারাপ? আমার কাছে কেন এসেছ? আমি তাকে উত্তর দিয়েছিলাম, আমি তিনটি মৌলিক রঙ সমন্বিত করে কীভাবে বিভিন্ন রঙ তৈরি করা যায়, সেটা শিখতে এসেছিলাম। আমি যা চেয়েছিলাম, আমি তা পেয়ে গেছি। আজ থেকে আমি টাইপ-৫ সিভিলাইজেশন!
যাই হোক। সেদিনের পর থেকে আমি আমার জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলাম যে, আমি একজন চিন্তাশীল মানুষ হব, আমি মহাবিশ্বকে এক্সপ্লোর করব। সেদিনের পর থেকে আমি ফিজিক্যালি পৃথিবীতে থাকলেও, নিউরোকেমিক্যালি ৩০০ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরের কোনো না কোনো নাক্ষত্রিক পদ্ধতিতে ঘুরে বেড়াতাম।
পৃথিবীতে প্রায় ৮.৬ মিলিয়ন প্রজাতি আছে, প্রতিটি প্রজাতির সুখ ও দুঃখের নিউরোট্রান্সমিটার প্রায় একই। দুঃখ বিবর্তিত হয়েছিল আমাদের বিষাক্ত টক্সিন অথবা থ্রেট থেকে রক্ষা করার জন্য আর সুখ বিবর্তিত হয়েছিল আমাদের গুড কেমেস্ট্রির দিকে অনুপ্রাণিত করার জন্য।
আপনার দেহে আগুন লেগে যাওয়ার পরও, যদি আপনি ব্যাথা না পান, আপনার যদি পেইন রিসেপ্টর না থাকে, আপনার দেহ আগুনে পুড়ে বিলুপ্ত হয়ে যাবে। আগুনের উপস্থিতিতে এজন্য, আপনার দেহে স্ট্রেস হর্মোন বৃদ্ধি পাওয়া প্রয়োজন, আপনার সেরেটোনিন শাট ডাউন করা প্রয়োজন, আপনার মনে দুঃখের রসায়ন ছড়িয়ে যাওয়া প্রয়োজন। দুঃখের বিবর্তনই ঘটেছে, আপনাকে প্রোটেক্ট করার জন্য।
আবার আপনি যদি বাইসনের মাংস খেয়ে সুখ না পান, আপনি বাইসন শিকার করতে চাইবেন না, আপনার দেহে পুষ্টি ও শক্তির ঘাটতি দেখা দেবে এবং আপনি একসময় মৃত্যুবরণ করবেন। সুখ ও দুঃখ দুটোই আপনাকে মৃত্যু থেকে বাঁচানোর এক একটি কৌশল। দুটোই এক একটি ডিফেন্স মেকানিজম।
যে সকল হর্মোন ও নিউরোট্রান্সমিটার সুখের সাথে জড়িত, একই নিউরোট্রান্সমিটার দুঃখের সাথেও জড়িত। উদাহরণস্বরূপ, ডোপামিন যদি বুস্ট হয়, আপনি সুখ ও অনুপ্রেরণা অনুভব করেন, আবার ডোপামিন যদি ডাউন হয়, আপনি কষ্ট ও হতাশা অনুভব করেন। সেরেটোনিন যদি বুস্ট হয়, আপনি আত্মবিশ্বাস ও সুখ অনুভব করেন, আবার সেরেটোনিন যদি ডাউন হয়, আপনি আত্মবিশ্বাসহীনতা ও দুঃখ অনুভব করেন।
তার মানে দেখা যাচ্ছে, সুখ ও দুঃখ হলো, আপনার নিউরোট্র্যান্সমিটার ও হর্মোনের এক একটি ফ্ল্যাকচুয়েশন, সুখ ও দুঃখ আলাদা কোনো লোকেশনে অবস্থান করে না। এটি একই স্পেক্ট্রামের এক একটি তরঙ্গ।
একটি হাইপোথিসিস অনুসারে, বিলিয়ন বিলিয়ন বছর প্রকৃতিতে ব্যাথা ও দুঃখের অনুভূতি কাজ করছে কিন্তু সুখের অনুভূতি এসেছিল ৫০০ মিলিয়ন বছর পূর্বে ( রিওয়ার্ড সার্কিট বিবর্তনের সময়)। আদিম জীবরা সুখের জন্য, কোনোকিছু অর্জন করেনি, তারা কোনোকিছু অর্জন করেছিল, মেকানিক্যালি এবং স্ট্রেস রিলিজ করার জন্য। যাই হোক, এটি কেবলই একটি হাইপোথিসিস!
কিন্তু সকল কিছুর পরও মিলিয়ন মিলিয়ন বছর প্রকৃতিতে সুখ ও দুঃখের অনুভূতি একই ছিল। ৬৫ মিলিয়ন বছর পূর্বে যখন মহাকাশ থেকে ডায়নোসরের ওপর একটি প্রলয়ংকারী ধূমকেতু আঘাত করেছিল, তখন তাদের দেহের স্ট্রেস হর্মোন তৈরি হয়েছিল, তারা দুঃখ পেয়েছিল। একটি ৯০ ফুট লম্বা ডায়নোসরের দেহে ধূমকেতুর আঘাতে যে স্ট্রেস হর্মোন দুঃখের অনুভূতি তৈরি করেছিল, আজ কোনো একটি নেগেটিভ কমেন্ট ও ট্রল দেখে আমার মস্তিষ্কে একই দুঃখের অনুভূতি তৈরি হয়।
সম্ভবত, ডায়নোসরের মনের কিছু অংশ আমার মনেও আছে কারণ অল্পকিছু নিউরোট্র্যান্সমিটারে তারতম্য থাকলেও আমরা ডায়নোসরের সাথে একই ডোপামিন ও সেরেটোনিন শেয়ার করেছি।
আজ থেকে ২ মিলিয়ন বছর পূর্বে একজন হোমো ইরেক্টাস একটি গ্যাজেল শিকার করার পর তার মস্তিষ্ক থেকে যে সেরেটোনিন নিঃসৃত হয়েছিল, এই মুহূর্তে আমি একটি অসমাপ্ত কবিতা লিখে শেষ করার পর আমার মস্তিষ্কে একই সেরেটোনিন নিঃসৃত হয়। আমরা আসলে বিবর্তনীয়ভাবে সমগ্র প্ল্যানাটারি কমিউনিটির সাথে সুনির্দিষ্ট মাত্রার কনসাসনেস শেয়ার করেছি ( রেঞ্জ ভিন্ন ভিন্ন ) কারণ আমরা একই পূর্বসূরী শেয়ার করেছি। আমি স্বীকার করছি যে, একটি কুকুরের দুঃখবোধ আর আমার দুঃখবোধ হয়তো এক নয়। কিন্তু তারপরও আমাদের মধ্যে একটি কমন প্যাটার্ন আছে, আঘাত পেলে দুজনই ঘেউ ঘেউ করে আর্তনাদ করি। আমার ধুম করে হুটহাট মন খারাপ হয়ে যাওয়ার এই প্রবণতা আজকের নয়, এটি মিলিয়ন মিলিয়ন বছর পূর্বের আমার শ্রদ্ধেয় পিতা হোমো ইরেক্টাসের জিনোম থেকে পাওয়া।
Reference:
- Best Happiness Books Overall
- Best Books About Happiness For Beginners
- Best Books About Happiness For Advanced Learners
- Best Happiness Books (Positive Thinking)
- Best Books on Happiness (Psychology)
- Best Happiness Books (Work)
- Best Books on Happiness (Mindfulness)
- Best Books on Happiness (Spirituality)
- Best Happiness Books (Minimalism)
Read More:কীভাবে ফিজিক্সের সমীকরণ জীবনের প্রথম তথ্য তৈরি করেছিল?