Can't find our books? Click here!

সায়ানোব্যাক্টেরিয়া থেকে সাইবারসেক্স

প্রকৃতিতে ভালোবাসার সহজ কোনো ডেফিনিশন নেই। আর ভালোবাসায় আমার কোনো বিশ্বাসও নেই! প্রেয়িং মান্টিস অথবা রেডব্যাক স্পাইডার সেক্সের পর তার পুরুষ সঙ্গীকে খেয়ে ফেলে আর এতে করে তারা এক্সট্রা-নিউট্রিয়েন্টস পায়! কারো কারো মতে আস্ত পুরুষকে খেয়ে স্পার্ম ভালোভাবে শোষণ করা যায়, আর এজন্যই নারী এ কাজটি করে, পুরুষও আনন্দের সাথে এ মৃত্যু মেনে নেয় বরং মৃত্যুর সময় তার যৌন উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়। কিন্তু আপনার কেমন লাগবে এটা শুনলে যে, একজন মানব নারীও বিমূর্ত পর্যায়ে রেডব্যাক স্পাইডারের মতো নৃশংস? একজন নারী যে দৃশ্যমানভাবে আপনাকে মন-প্রাণ একাকার করে ভালোবাসে, তার দেহে আপনার স্প্যার্ম প্রবেশ করার পর, তার ডিমের ক্যামোঅ্যাট্রাক্টর আপনার স্প্যার্মকে আণুবীক্ষণিক স্তরে রিজেক্ট করতে পারে এবং একজন ডাকাতের স্পার্মকে সে নিজের প্রতি আকর্ষণ করতে পারে, যদিও ডাকাতের সাথে তার রোম্যান্টিক প্রেমের কোনো সম্পর্ক নেই! এখান থেকে প্রমাণিত হয়, নারীর ব্রেন দৃশ্যমানভাবে যাকে পছন্দ করবে, তার ডিম আণুবীক্ষনিক স্তরে সে পুরুষটির স্প্যার্মকে আকর্ষণ করবে, এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। আর এটি ভালোবাসার প্রথাগত সংজ্ঞাকে মারাত্মকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করে। একজন নারী সচেতনভাবে তার ধর্ষককে ঘৃণা করলেও, ধর্ষকের স্প্যার্মের প্রতি তার ডিম রাসায়নিক ভালোবাসা প্রদর্শন করতে পারে আর এটা সায়েন্টিফিক্যালি প্রমাণিত! এখান থেকে প্রশ্ন জাগে, রিয়েল ভালোবাসা বলতে তাহলে কী বোঝায়? কারও গোস্ত খাওয়া ভালোবাসা? একজন ধর্ষকের স্প্যার্মের প্রতি আনকনসাস আকর্ষণ ভালোবাসা? অথবা আপনি যাকে সচেতনভাবে ভালোবাসেন সেই আপনার প্রকৃত ভালোবাসা?

আমি খুবই অবাক হই বেশিরভাগ মানুষ সেক্স ও রিলেশনশিপের প্রতি সবচেয়ে বেশি সংবেদনশীল। ভালোবাসা, প্রতারণা, পরকীয়া, বিবাহ, বিচ্ছেদ অথবা নৈতিকতা এগুলো আমাকে বেশ ভাবায়। আমি ভাবি, কেন মানুষ এত সংবেদনশীল তাদের প্রেম, ভালোবাসা ও সম্পর্কের ব্যাপারে। আর কেন সম্পর্কগুলো এমন হাস্যকর? প্রতিটি সম্পর্কে একই কন্ডিশনগুলো বারবার পুনরাবৃত্তি হয়, মনে হয় এটা একটা প্রোগ্রাম, এটা এভাবেই কাজ করে! একবার সেক্স নিয়ে ডারউইনের লেখা একটি কন্টেন্ট পড়ছিলাম। আমি একটা প্রশ্নের উত্তর খুঁজছিলাম, মানুষ কেন ডিভোর্স দেয়, প্রতারণা করে, কেন রিলেশনশিপ ব্রেকআপ হয়? ডারউইন উত্তর দিয়েছিলেন, রিলেশনশিপ ব্রেকআপ হয় সন্তান জন্ম দেয়ার জন্য! আমি হাসব না কাঁদব আমি বুঝতে পারছিলাম না! কী বলে এই লোক! আমার এক্স আমাকে ছেড়ে চলে গেছে, তার সাথে সন্তানের সম্পর্ক কী! আমার মনে হয়, আমি ডারউইনের ওপর বেশ রাগই করেছিলাম। মূলত, বিষয়টি বোঝার জন্য আমাকে এক ঘন্টা ভাবতে হয়েছিল। ব্রেকআপ মানে নতুন রিলেশন, নতুন রিলেশন মানে নতুন সঙ্গী, নতুন সঙ্গী মানে নতুন জিন! ইয়েস! ইকুয়েশন মিলে গেছে! আর এটার জন্য এত কান্না-কাটি, এত যুক্তি-তর্ক, এত এত মোটিভেশন? আমি বুঝতে পারি, কারও প্রেমিকা তাকে ছেড়ে চলে যেতে পারে সেক্স করার জন্য, আরও পদ্ধতিগতভাবে বলেল, সন্তান তৈরি অথবা নতুন কম্বিনিশনের জেনেটিক ম্যাটারিয়াল তৈরির জন্য। আমি জানি এগুলো অনেকের কাছে কোনো সেন্স তৈরি করবে না কারণ তারা মানব যৌনতা ও ভালোবাসার বিবর্তনীয় ইতিহাস জানে না। আমি যদি বলি বিবেকের বিবর্তনের পেছনে পরকীয়া প্রেমিকের সাথে নিজের সঙ্গীর মধ্যকার ভারসাম্য রক্ষার সম্পর্ক আছে__এটা অনেকেরই মেনে নিতে কষ্ট হবে! হ্যাঁ, এটা কেবল ইভোলিউশনারী ব্যাখ্যা। সোসাইটাল ও কালচার ফ্যাক্টর এখন কিছুক্ষণের জন্য একপাশে রাখলাম। কথাগুলো বলার কারণ হলো, আপনি বা আমি রিলেশনশিপকে যেভাবে বিশ্লেষণ করি, ইভোলিউশনারী ইকুয়েশন সম্পূর্ণ আলাদা। আমরা বিভিন্ন মোটিভেশনাল ও সাইকোলজি রিলেটেড গ্রুপে হিউম্যান সেক্সচুয়ালিটিকে তার অরিজিনিয়াল রূপ থেকে কয়েক আলোকবর্ষ দূরে নিয়ে যাই। এক একজনের এমন একটা মুভমেন্ট তারা বিশাল সাইকোলজি এক্সপার্ট! হিউম্যান সেক্সচুয়ালিটি নিয়ে এমন অনেক ধারণা আছে যা চূড়ান্তভাবে সজ্ঞাবিরোধী, যেটা মেনে নেয়া তো দূরে থাক, শোনার মতো মানুষও খুব দূর্লভ।

যাইহোক! ছয়মাস পূর্বে কেএম হাসান আমাকে একটি বই পাঠিয়েছিলেন “A History of the Human Brain: From the Sea Sponge to CRISPR, How Our Brain Evolved”। বইটি পড়ার পর অনাকাঙ্খিতভাবে একটি আগন্তুক ধারণার সাথে ধাক্কা খেলাম, সেক্স প্রজননের উদ্দেশ্যে বিবর্তিত হয়নি, সেক্স বিবর্তিত হয়েছিল বিষাক্ত টক্সিনের প্রভাবে। আজ থেকে ২.৬ বিলিয়ন বছর পূর্বে সমুদ্রে সায়ানোব্যাক্টেরিয়া বিবর্তিত হয়েছিল এবং তারা সমুদ্রে অক্সিজেন নিঃস্বরণ করে। এ সময় আদিম জীবন এক ঘন বিলুপ্তির শিকার হয়েছিল কারণ সে সময় অক্সিজেন ছিল জীবনের জন্য ক্ষতিকর একটি টক্সিন। এ টক্সিন থেকে ডিএনএ-কে প্রোটেক্ট করার জন্য বিবর্তন ঘটেছিল সেক্সের! এতদিন জেনে এসেছিলাম সেক্সের বিবর্তন ঘটেছিল সরাসরি প্রজননের জন্য কিন্তু এ বইটি পড়ে আমার চিন্তা সম্পূর্ণ রিভার্স হয়ে যায়। আমি বুঝতে পারি, আমার এ বিষয়ে বিস্তৃত পড়াশুনা করা উচিত। আর তাই সেক্সের ওপর আধুনিক বিজ্ঞানের সকল থিওরি ও হাইপোথিসিস নিয়ে গবেষণা ও লেখালেখি শুরু হয়।

সেক্সের বিবর্তন, নারী ও পুরুষের ভিন্নতা, রোম্যান্টিকতা, পেনিস ও ভ্যাজাইনার একটি সংক্ষিপ্ত আত্মজীবনী, সেক্স করার বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি, নারী ও পুরুষের সাইকোলজি বোঝার পদ্ধতি, একগামিতা, বহুগামিতা ও সমকামিতার ওপর ল্যাটেস্ট থিওরি ও হাইপোথিসিস দ্বারা সমর্থিত প্রায় ২.৬ বিলিয়ন বছরের সংক্ষিপ্ত বৈজ্ঞানিক ইতিহাস ও বিশ্লেষণ আমি ৩০০ পাতায় ক্যাপচার করার চেষ্টা করি। আদিম স্যুপ থেকে পর্নোগ্রাফিক ওয়ার্ল্ড পর্যন্ত আমি সূক্ষ্মভাবে চোখ রাখি।

আমি খুবই অবাক হয়েছিলাম এটা জেনে, নারীর ভ্যাজাইনা শুরুতে বিবর্তিত হয়েছিল ভাইরাস প্রতিহত করার জন্য, সেক্স করার জন্য নয়। তবে আমি খুবই শকড হয়েছিলাম ৫০০ মিলিয়ন বছর পূর্বের কেমব্রিয়ান যুগের পুরুষের প্রথম পেনিসের ফসিল “কলিম্বোসাথন একপ্লেকটিক্স” দেখে। যেখানে নারীর ভ্যাজাইনার সাপেক্ষে প্রথম পরোক্ষ ফসিল পাওয়া যায় ৩০০ মিলিয়ন বছর পূর্বে কার্বনিফেরাস যুগে, ফসিলাইজ মলে!

আমার মনে একটা উদ্ভট প্রশ্ন এসে উপস্থিত হয়, পেনিস ও ভ্যাজাইনা যদি ২০০ মিলিয়ন বছর দূরত্ব দ্বারা বিচ্ছিন্ন হয়, তবে আমরা কোথা থেকে এলাম! ব্যাপারটা আসলেই খুবই হাস্যকর! যাইহোক। কনফিউশনের কোনো কারণ নেই। এ বিষয়ে আমরা আমাদের নতুন এ বইটিতে ডিসকাস করেছি। তবে আমি সবচেয়ে বেশি ভাইব্রেট হয়েছি, এটা শুনে যে, আমরা আজ নারীর দেহে যে ইনফ্লুয়েন্সিয়াল সেক্স অর্গ্যানগুলো দেখি যেমন তার ব্রেস্ট, প্লাসেন্টা ও জরায়ু___ এগুলোর বিবর্তনে সরাসরি ডায়নোসরের প্রভাব আছে! মানব সভ্যতার সেক্স ও ভালোবাসার বিবর্তনের ইতিহাসে ডায়নোসরেরও যে একটি কানেকশন আছে, এটা জেনে আমি এখনও পর্যন্ত শিহরিত ও বিস্মিত।

আপনি শুনলে হয়তো অবাক হবেন, পেনিস ও ভ্যাজাইনা বন্ধু নয়, তারা একে অন্যের শত্রু, তারা টিকে থাকার জন্য যুদ্ধ করছে। ভাইরাস যেমন অ্যান্টিভাইরাস মোকাবিলা করার জন্য ডিফেন্স মেকানিজম তৈরি করে, এরাও একে অন্যের বিপক্ষে ডিফেন্স মেকানিজম ব্যবহার করছে মিলিয়ন মিলিয়ন বছর!

সম্পূর্ণ বইটি আসলে সেক্স ও ভালোবাসার উপর আধুনিক বিজ্ঞানের সবচেয়ে কন্ট্রোভার্সিয়াল তথ্যগুলো দিয়ে লেখা। আর তাই এ বইটির বিভিন্ন কনসেপ্টের সাথে আপনার উন্মুক্তভাবে দ্বিমত প্রকাশ করার সম্ভাবনা আছে, যেটা সূক্ষ্ম চিন্তা ও গভীর বিতর্ককে উৎসাহিত করবে। সত্য আসলে খুবই কঠিন। বিশেষ করে বিবর্তন সেক্স ও ভালোবাসা সম্পর্কে আমাদের কাছে যে সত্য প্রকাশ করে, সে সত্য অনুধাবন করলে, রিলেশনশিপ সংক্রান্ত অনেক জটিলতা সরল হয়ে যায়। জীবনকে আরও সহজভাবে গ্রহণ করা সম্ভব হয়।

বইয়ের নাম: সায়ানোব্যাক্টেরিয়া থেকে সাইবারসেক্স: মানব সভ্যতার যৌনতার প্রাইমাল নেক্সাস ও ল্যাপস

লেখক: এ এইচ লিহন

প্রচ্ছদ: সজল চৌধুরী

প্রকাশনী: হাইপারস্পেস

বইটি এক মাস পর পাওয়া যাবে। প্রি-অর্ডার করতে চাইলে যোগাযোগ করুন: Hyperspace: The Dimension Hoppers

আরও পড়ুন: ভালোবাসার ফসিল