২০২০ সালের দিকে আমি ও আমার বেস্ট ফ্রেন্ড মৃদুলা একটা অন্যায় এক্সপেরিমেন্ট করেছিলাম। আমরা একই ভার্সিটির শিক্ষার্থী। আমরা দুজনই ছিলাম সুপার ফ্র্যাংক এবং রিসেপ্টিভ। একদিন মজা করে আমি তাকে বলেছিলাম, তোমার আইডিটা আমাকে কিছুদিনের জন্য দেবে? আমি একটি এক্সপেরিমেন্ট করতে চাই। মৃদুলা ছিল সাইকোসিস। আমিও কোনো অংশে কম যাই না। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল, পুরুষের সাইকোলজি এক্সপ্লোর করা। প্রথমে আমি মৃদুলাকে বললাম, তুমি তোমার কিছু স্ম্যার্ট ও অ্যাট্রাক্টিভ পিকচার আমাকে সেন্ড কর, আমি আপলোড করতে চাই। যেই কথা সেই কাজ। তারপর আমি পরিকল্পনা অনুযায়ী ভার্সিটির ৩০-৪০ জন ছেলের সাথে তার মেসেঞ্জার থেকে চ্যাট করি। খুবই নরম্যাল আলোচনা। ফ্রেন্ডলি ও প্লেটোনিক। উদাহরণস্বরূপ, “হাই জিসান। কেমন আছো? তুমি খুবই ব্রিলিয়ান্ট। সেদিন তোমার প্রেজেন্টেশন অসাধারণ ছিল! আমি তোমার কাছে কিছু টপিক শিখতে চাই অথবা হাই প্রিজম! কেমন আছো? সেদিন ফুটবল মাঠে ভালো পারফরম্যান্স করেছিলে।”
ব্যাস এতটুকুই! এই ঘটনার পর তার জীবনে সর্বনাশ নেমে আসে। ইউনিভার্সিটিতে মৃদুলার ক্যারিয়ার রাতারাতি চেঞ্জ হয়ে যায়। ৩০-৪০ জন ছেলের সাথে আমি পারসোনাল ডিসকাসন করে যা জানতে পারি, তা আমাকে বিস্মিত করে তোলে। তাদের মতে, “মৃদুলা সুপার সেক্সি ও ক্রেইজি একটা মেয়ে। মেয়েটার ক্যারেক্টার সম্ভবত খুব বেশি ভালো না। আমার দৃঢ় বিশ্বাস সে আমার প্রেমে পড়েছে।” তারপর আমি দেখলাম, মৃদুলাকে নিয়ে তারা এক একটা মাইক্রোস্টোরি দাঁড় করিয়ে ফেলছে। স্টোরির মূল থিম ছিল রোম্যান্টিক ভালোবাসার শুরুর পর্যায়। মৃদুলা সম্পর্কে তারা খুবই সেনসেটিভ, এক্সাইটেড ও কনফিডেন্ট! তারা অনেক অতিরঞ্জিত কথাবার্তা বলছে তাকে নিয়ে। একজন আমাকে বলছিল, কীভাবে সে টয়লেটের গলিতে মৃদুলার স্তনে হাত রেখেছিল কিন্তু সে কিছুই বলেনি। আমি ভয় পেয়ে গেলাম। কয়েকদিন পর দেখি, মৃদুর মেসেঞ্জারে বিভিন্ন হট ও হর্নি পিকচার আসা শুরু করেছে। একটা সময় পর্নোগ্রাফি। আমার মনে একটি প্রশ্ন জাগে, কেন একজন পুরুষ একজন মেয়ের সিম্পল একটা মেসেজকেও প্রেমের সিগন্যাল হিসেবে কাউন্ট করে!! কেন তারা মেয়েদের একটি ইনোসেন্ট এবং প্লেটোনিক হাসিকেও মনে করে সেক্সচুয়াল সিগন্যাল? কেন পুরুষ এই কগনিটিভ বায়াসডে আক্রান্ত? কেন পুরুষ নারীর প্রতি এত উত্তেজিত ও আশাবাদী?
আমার এক বন্ধুর বিশ্বাস ছিল কলেজের সকল মেয়ে তার প্রতি ক্রাশ। একদিন একটা মেয়ে তার দিকে তাকিয়ে জাস্ট হেসেছিল, সে সমস্ত কলেজে নিউজ করেছিল যে মেয়েটি তার প্রেমে উন্মাদ। একটা সময় আমরা সবাই একত্রিত হয়ে মেয়েটিকে প্রশ্ন করি, তুমি কি সত্যি আবিরকে পছন্দ কর? তার উত্তর ছিল, আবির যে কে আমি সেটাই জানি না। কিন্তু আবির এসে মেয়েটির মুখের ওপর বলে বসলো, আমি জানি তোমার এইডস। এজন্য তুমি আমার প্রতি তোমার ভালোবাসার কথা স্বীকার করছো না, কারণ তুমি চাও না আমার এইডস হোক। তাই না? মেয়েটি একেবারেই সারপ্রাইজড। সে সম্ভবত এত বিরাট কৌতুক কোনোদিন শুনেনি। কিন্তু কেন? কেন পুরুষ নারীর একটা ইনোসেন্ট হাসির মধ্যেও সেক্সচুয়াল ইনভাইটেশন দেখে? কেন পুরুষ নারীর সাথে একটি ইনোসেন্ট, ফ্রেন্ডলি ও প্লেটোনিক আলোচনার মধ্যেও যৌনতার ঘ্রাণ পায়? এটা কেবল আমার বন্ধুর সাইকোলজিক্যাল ক্রায়সিস নয়, এটা আমাদের সাইকোলজিক্যাল ক্রাইসিস, এটি পৃথিবীর বিলিয়ন বিলিয়ন পুরুষের মস্তিষ্কের একটি কগনিটিভ বায়াসড। আর পুরুষের মস্তিষ্কের এই কগনিটিভ বায়াসড এক্সপেরিমেন্টালি প্রমাণিত।
আমি নিজেও এটি পর্যবেক্ষণ করেছি, এ পর্যন্ত যত নারী আমার সাথে ফ্রেন্ডলি কনভারসেশন করেছে, আমার মনে হয়েছে, সে আমার সাথে রোম্যান্টিক সম্পর্ক করতে চায়, সে আমার প্রেমে পড়েছে। মেয়েদের সাথে কথা বলার সময় পুরুষের মস্তিষ্কের আনন্দ ও পুরস্কারের সাথে জড়িত কর্টেক্স বেশি সক্রিয় হয়। পুরুষের মস্তিষ্কের এমিগডালা, নিউক্লিয়াস অ্যাকুম্বেন্স, প্রি-ফ্রন্টাল কর্টেক্স ও হাইপোথালামাস মেয়েদের সাথে কথোকপথনের সময় ইন্টারেক্ট করে এবং এই কগনিটিভ বায়াসড জন্ম দেয়।
পুরুষের মস্তিষ্ক যে নারীর প্রতি কগনিটিভ বায়াসডে আক্রান্ত, এটি ল্যাব এক্সপেরিমেন্টের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছিল। এই এক্সপেরিমেন্টে একজন নারী ও পুরুষকে ৫ মিনিট কথা বলার সুযোগ দেয়া হয়েছিল। ৫ মিনিট আলোচনা করার পর পুরুষ পার্টিশিপেন্ট এবং পুরুষ পর্যবেক্ষক দুজনই সাক্ষী দিয়েছিল যে, মেয়েগুলো লুচ্চা এবং অবিশ্বস্ত প্রকৃতির। তাদের মতে, মেয়েরা তাদের প্রতি আসক্ত। পুরুষরা আলোচনার সময় মেয়েদের তুলনায় বেশি সেক্সচুয়াল আকর্ষণ অনুভব করে। পুরুষ ও নারীর সংবেদনের এই পার্থক্য আমাদের কাছে প্রমাণ করে যে, সেক্সের পার্থক্য মানুষের মধ্যে কগনিটিভ বায়াসড জন্ম দেয়।
নারী ও পুরুষের মধ্যে সেক্সের ভিন্নতা থেকে সৃষ্ট এই কগনিটিভ ইল্যুশন থেকে ভুল বোঝাবুঝি জন্ম হয়, শুধুমাত্র ব্যক্তিগত পর্যায়ে নয়, কর্পোরেশন এবং সোসাইটি লেভেলেও। একটি সুপারমার্কেট সেফওয়ের কথা চিন্তা করুন। মনে করুন, একজন মেয়ে আপনাকে কাস্টমার সার্ভিস দিচ্ছে। সুপারমার্কেট সাধারণত তার কর্মীদের এমনভাবে শিক্ষা দেয়, যেন তারা কাস্টমারদের সাথে চোখে চোখ রেখে হাসি হাসি মুখ নিয়ে কথা বলে। যদিও এটি অধিকাংশ ক্ষেত্রে কাজে দেয় কিন্তু পুরুষের সাথে এই পলিসি অ্যাপ্লাই করতে গেলে সমস্যা সৃষ্টি হয়ে যায়। এই বন্ধুসুলভ অঙ্গভঙ্গি মানুষ ভুল বোঝে, নারী নির্যাতনের স্বীকার হয়। মার্টি জি হ্যাসেলটন এবং ডেভিড এম বাস এই সর্বজনীন প্যাটার্নের ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন তাদের “Error Management” থিওরিতে।
এই থিওরি অনুসারে, নারীর প্রতি পুরুষের এই কগনিটিভ বায়াসড বিবর্তিত হয়েছিল একটি অ্যাডাপ্টিভ মেকানিজম হিসেবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, কেন এই কগনিটিভ বায়াসড বিবর্তিত হয়েছিল? কল্পনা করুন, আপনি বোঝার চেষ্টা করছেন যে, কোনো একজন আপনার প্রতি রোম্যান্টিক আকর্ষণ ফিল করে কি না।
আপনি এটা অনুমান করতে গিয়ে দু-ধরনের ভুল করতে পারেন: আপনি ভাবতে পারেন যে, সে আপনার প্রতি ইন্টারেস্টেড, আসলে সে ইন্টারেস্টেড নয় (ফলস পজিটিভ ভুল) অথবা আপনি ভাবতে পারেন যে সে আপনার প্রতি ইন্টারেস্টেড নয়, আসলে সে আপনার প্রতি ইন্টারেস্টেড ( ফলস নেগেটিভ)। পুরুষের জন্য ফলস নেগেটিভ ভুলের মূল্য ফলস পজেটিভ ভুলের মূল্য থেকে অনেক বেশি।
আপনার প্রতি একটা মেয়ে আকৃষ্ট হওয়ার পরও, যদি আপনি মনে করেন, সে আপনার প্রতি আকৃষ্ট নয়, আপনি তার সাথে প্রজননের সার্টিফিকেটই পাবেন না। আর অন্যদিকে, আপনি যদি ভুলক্রমে মনে করে বসেন, একটা মেয়ে আপনার প্রতি রোম্যান্টিক, আপনি তার শাস্তিস্বরূপ সামান্য টার্ন ডাউন হবেন, এর বেশিকিছু তো নয়? আর এজন্য পুরুষের মস্তিষ্ক এমনভাবে বিবর্তিত হয়েছিল যেন, সে নেগেটিভ কগনিটিভ বায়াসড তৈরি করে। আর এজন্যই পুরুষ নারীর আকাঙ্ক্ষাকে মিসইন্টারপ্রিট করে। আপনি আপনার পেছনে একটি বাঘের আওয়াজ শুনে যদি সেটাকে পাতার শব্দ মনে করেন, আপনি মরবেন। কিন্তু আপনি যদি ভুলক্রমে পাতার শব্দকে বাঘের শব্দ মনে করেন, আপনি সামান্য আতঙ্কিত ও প্রতারিত হবেন। এর বেশিকিছু তো নয়? এখন প্রশ্ন হলো, বাঘকে পাতা মনে করার চেয়ে, পাতাকে বাঘ মনে করে প্রতারিত হওয়াটা কী বেশি সুবিধাজনক নয়! ইয়েস! ঠিক তাই।
এজন্যই কোনো মেয়ে মিষ্টি হেসে একজন পুরুষের সাথে কথা বলেল, পুরুষ তাকে সেক্স পার্টনার ভেবে নেয়, সে ভাবে মেয়েটি তার প্রেমে পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে। “Error Management” থিওরি আমাদের আরও বলে, একজন নারী সম্ভাব্য ব্যায়ের কথা ভেবে একজন পুরুষের রোম্যান্টিক কমিটমেন্টকে আন্ডারেস্টিমেট করতে পারে।
কারণ একজন নারী তার প্রেগন্যান্সির আতঙ্কের কথাও চিন্তা করে। তবে মজার ব্যাপার হলো, পুরুষ নারীর আকাঙ্ক্ষাকে ওভারেস্টিমেট করলেও, নিজের বোনের বেলায় সে এটা প্রয়োগ করে না, কারণ বোনকে প্রোটেক্ট করার জন্য এই কৌশল দরকারী। এছাড়া ধর্মের উদ্ভবকেও অ্যানথ্রোমোফর্মিজম (মানুষ নয় এমন কোনো অবজেক্টের ওপর মানবীয় গুণ আরোপ) নামক কগনিটিভ বায়াসড দ্বারা ব্যাখ্যা করা যায়, যেখানে সম্ভাব্য বন্ধু ও শত্রুকে ইগনোর করার চেয়ে ( ফলস নেগেটিভ) সামান্য প্যারানয়েড অথবা অ্যানথ্রোমোফর্মিক হওয়া ভালো (ফলস পজেটিভ)। অন্য কথায়, পাতাকে বাঘ মনে করা, বাঘকে পাতা মনে করার চেয়ে নিরাপদ।
রেফারেন্স:
- Error Management Theory | SpringerLink: This is the original paper by Haselton and Buss that introduced the theory and provided empirical evidence for it.
- Error Management Theory and the Evolution of Misbeliefs: This is a commentary by Haselton and Nettle that discussed how error management theory can explain the evolution of misbeliefs in general, not just in the mating domain.
- Error Management Theory | SpringerLink: This is an entry in the Encyclopedia of Personality and Individual Differences that summarized the main concepts and applications of error management theory.
- False Negatives | SpringerLink: This is an entry in the Encyclopedia of Evolutionary Psychological Science that explained the concept of false negatives and how they relate to error management theory.
এই প্রসঙ্গটির উপর বিস্তারিত জানতে পড়ুন: এক্স ইউনিভার্স: ফেমিনিন ফিউশন। বইটি পাবেন “এখানে”
মেয়েদের মধ্যে পুরুষ কেন ফলস নেগেটিভ দেখে?/ মেয়েদের মধ্যে পুরুষ কেন ফলস নেগেটিভ দেখে?
নারীর মধ্যে পুরুষ কেন ফলস নেগেটিভ দেখে?/ নারীর মধ্যে পুরুষ কেন ফলস নেগেটিভ দেখে?