প্রিজম তার বাথরুমের আয়নাটিতে জমে থাকা বাষ্পগুলি সরিয়ে দেয় । তার চুলের মাঝে আঙুল চালিয়ে , মৃদু হেসে বলে, আজকের দিনটি হেক্টর। সে শরীর থেকে তোয়ালেটা ফেলে দেয় এবং তার মসৃণ পেটের প্রশংসা করে। সে জিমে খুবই আসক্ত, এ কয়েকমাসে সিক্স প্যাকের দুই তৃতীয়াংশ তৈরি হয়ে গেছে । তখন থেকে তার মন চাপা আবেশে চলে যায়: ফেব্রুয়ারি থেকে সে কারো সাথে বাহিরে ছিল না। আরও সুন্দরভাবে বললে, সাত মাস তিন দিন তার কারো সাথে সেক্স হয়নি__সে এটা ভেবে কিছুটা বিরক্ত হলো যে তাকে সঠিক পথ ধরতে হবে। আজ রাতেই তাকে একটা কিছু করতে হবে, এটাই মোক্ষম সময়।
একটি বারে এসে সে সম্ভাব্যনার পরিসংখ্যান শুরু করলো। আজ রাতে এখানে অজস্র আকর্ষণীয় নারী আসবে __কিন্তু এটাই তো আর সবকিছু নয়। তার সেক্স দরকার এটা ঠিক, কিন্তু তার জীবনে একজন মানুষও দরকার, এমন কাউকে যে অকারণেই টেক্সট করবে, এমন কেউ যে প্রতিদিন তার জীবনের ওয়েলকাম পার্ট হবে। তার মধ্যে রোম্যান্টিকতা জেগে উঠেছে যদিও আজ রাত সেক্সের জন্য। একটি উঁচু টেবিলের কাছে গল্পরত বন্ধুর সাথে দাঁড়িয়ে থাকা এক নারীর প্রতি সে চোখ রাখে। তার ছিল ডার্ক হেয়ার এবং ব্রাউন আই। সে তাকে খেয়াল করেছিল কারণ স্যাটার্ডে নাইট ইউনিফর্মের মত কোনো পোশাক তার শরীরে নেইঃ তার পায়ে হাই হিলের পরিবর্তে ফ্লাট জুতা। সে ক্লাবের পোশাকের পরিবর্তে লেভিস পড়েছে। প্রিজম নিজের পরিচয় দেয় এবং তাদের আলোচনা শুরু হয়, খুব দ্রুত ও সহজে। তার নাম ছিল লিসা। এবং সে প্রথম যে কথাটি বলল তা ছিল, সে ব্যাক বিয়ার রাখার পরিবর্তে কার্ডিও পছন্দ করে। আর এভাবেই তাদের মধ্যে লোকাল জিম, ফিটনেস অ্যাপস এবং সকাল ও বিকেল বেলায় জিম করার তুলনামূলক মেরিট ইত্যাদি নিয়ে কথা শুরু হয়। সে রাতে প্রিজম সারারাত তাকে ছেড়ে আসতে পারে নি , আর এইভাবে প্রতিদিন সে একবার লিসার কাছে যাতায়াত শুরু করে।
অজস্র ফ্যাক্টর ছিল যা তাদের দীর্ঘকালীন এক সম্পর্কে বেঁধে দেয়ঃ তাদের কমন ইন্টারেস্ট, একে অন্যের সাথে মেশার স্বাচ্ছন্দ্য, ড্রিংক্স ও সামান্য হতাশা। কিন্তু এসবের কোনোটাই তাদের ভালোবাসার মূল চাবিকাঠি ছিল না। সবচেয়ে বিগ ফ্যাক্টর ছিল এই যে, তাদের দুজনের মস্তিষ্কই মাইন্ড অল্টারিং একটি কেমিক্যালের আধিপত্যের ভেতর ছিল। বারের সবাইকেই সে একই কেমিক্যাল শাসন করছে। আর এটি সক্রিয় বলেই আপনিও এমন।
আনন্দের থেকেও যা বেশি শক্তিশালীঃ
ডোপামিন সর্বপ্রথম ১৯৫৭ সালে ক্যাথলিন মন্টেগু আবিষ্কার করেন। একজন গবেষক যিনি লন্ডনের রানওয়েল হসপিটালের একটি ল্যাবরেটিতে কাজ করতেন। প্রাথমিকভাবে ডোপামিনকে মনে করা হয় আমাদের শরীরের নরপাইনফ্রাইন তৈরির একটি উপায়, এটা হলো তা যাকে আমরা অ্যাড্রেনালিন বলি যখন একে মস্তিষ্কের ভেতর পাওয়া যায়। কিন্তু বিজ্ঞানীরা এক অদ্ভুত জিনিস খেয়াল করলেন। তারা দেখলেন আমাদের মস্তিষ্কের দশ বিলিয়ন সেলের মধ্যে মাত্র ০.০০০৫ শতাংশ সেল ডোপামিন উৎপাদন করতে পারে___দুই মিলিয়ন সেলের মধ্যে মাত্র একটি __অথচ প্রতি দুই মিলিয়নের মধ্যে একটি করে সেলই আমাদের আচরণের উপর সবচেয়ে বেশি আধিপত্য বিস্তার করে আছে। গবেষণায় অংশগ্রহণকারীরা আনন্দ অনুভব করে যখন তাদের মস্তিষ্কে ডোপামিন চালু করে দেয়া হয়। আর এ বিরাট দৈর্ঘ তখনই অর্জিত হয় যখন দুর্লভ এই সেলগুলোর অ্যাক্টিভেশন ট্রিগার করা হয়। প্রকৃতপক্ষে সঠিক পরিস্থিতিতে ডোপামিন অ্যাক্টিভেশনকে প্রতিরোধ করা কঠিন হয়ে উঠে। কিছুকিছু সায়েন্টিস্ট ডোপামিনকে আনন্দের অণু বা প্লেজার মলিকিউল বলে খ্রিষ্ঠান ( স্বীকৃতি) করেছেন এবং ডোপামিন উৎপাদনকারী সেলগুলো যে পথ গ্রহণ করে সে পথের নাম রেখেছেন “রিওয়্যার্ড সার্কিট”! সুখের মলিকিউল হিসেবে ডোপামিনের এ সুখ্যাতি আরো মজবুত হয় যখন ড্রাগ অ্যাডিক্টেডদের উপর এক্সপেরিমেন্ট পরিচালনা করে তারা নিশ্চিত হয়। গবেষকরা তাদের মস্তিষ্কের ভেতর কোকেইন ও রেডিয়োঅ্যাক্টিভ সুগার’ ইনজেক্ট করেন যা তাদের দেখার সুযোগ করে দেয় মস্তিষ্কের কোন অংশটি অধিক ক্যালোরি পোড়ায়।
অন্যান্য গবেষকরাও এ ফলাফল ডুপ্লিকেট করে কিন্তু এবার একটি অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটে। তারা যুক্তি দেখায় এটা একেবারেই অপ্রত্যাশিত যে ডোপামিনের নিউরাল পথগুলি ড্রাগের প্রতি অ্যাডিক্টেড হওয়ার জন্যই বিবর্তিত হয়েছে। সম্ভবত ড্রাগ ডোপামিনকে স্টিমুলেট করার একটি আর্টিফিশিয়াল রুপ। সবচেয়ে বেশি যৌক্তিক এটা বলা ডোপামিনের ব্যবহার হলো এমন একটি বিবর্তনীয় প্রক্রিয়া যেটি আমাদেরকে সার্ভাইভাল ও রিপ্রোডাক্টিক অ্যাক্টিভিটির দিকে পরিচালিত করে৷ তাই তারা কোকেইনের জায়গায় খাদ্য প্রতিস্থাপন করে এবং অপেক্ষা করে একই ফলাফল পাওয়ার জন্য। তারা যা আবিষ্কার করেছিল তা সবার মাঝে বিস্ময় জাগায়। তারা সিদ্ধান্তে আসে ডোপামিন আসলে সুখের অণু নয়। প্লেজার মলিকিউল হিসেবে ডোপামিনের সুখ্যাতি এখান থেকেই সমাপ্ত হতে শুরু করে। তারা আবিষ্কার করেন, ডোপামিন আসলে সবশেষে আনন্দের কোনো বস্তু নয়। ডোপামিন আমাদের মধ্যে অধিক প্রভাবশালী অনুভূতি সৃষ্টি করে মাত্র। ডোপামিন সম্পর্কে আমাদের উপলব্ধি আমাদের চিন্তার পদ্ধতিই বদলে দেয়। এখান থেকেই মানব সভ্যতা বুঝতে শুরু করে কেনো আমরা ছবি আঁকি, কেন সাহিত্য, সংগীত এবং সফলতার সন্ধান; কেন আমরা নতুন বিশ্ব এবং নতুন প্রাকৃতিক আইন অনুসন্ধান করি; কেন আমরা ঈশ্বরকে নিয়ে চিন্তা করি__ আর কেনোই বা আমরা একে অন্যের প্রেমে পড়ি।
যাক এবার গল্পের দ্বিতীয় অংশে আসা যাকঃ
প্রিজম বুঝতে পারলো সে প্রেমে পড়েছে। তার সকল অনিরাপত্তা বিগলিত হয়ে যায়। প্রতিদিন সে একটি সোনালী ভবিষ্যতের দ্বারপ্রান্ত অনুভব করে। লিসার সাথে সে বেশি বেশি সময় কাটায়, তার উত্তেজনা বাড়তে থাকে। তার প্রত্যাশার অনুভূতি ধ্রুব হয়ে যায়। তার প্রতিটি চিন্তার মাঝেই অন্তহীন সম্ভাবনা। সেক্সের জন্য তার কামনা আগের চেয়ে আরো নিদারুণ হয়ে উঠেছে, কিন্তু শুধু মাত্র তার জন্য। অন্য সকল নারী তার চিন্তা থেকে হারিয়ে গেলো। সে স্বীকার করার চেষ্টা করলো, তার জীবনের সকল সুখ লিসা, লিসা তাকে বাধা দিয়ে বলে, আমিও আসলে ঠিক সেটাই ফিল করি। প্রিজম নিশ্চিত হলো সে লিসার সাথে আজীবন থাকবে এবং একদিন সে তাকে প্রস্তাব দিলো। সেও গ্রহণ করলো। হানিমুনের কয়েকমাস পর ঘটনার মোড় ঘুরে যায়। শুরুতে তারা একে অন্যের প্রতি আচ্ছন্ন ছিল কিন্তু এখন তাদের মধ্যে অনুভূতির দূরত্ব ক্রমশ বৃদ্ধি পায়, তারা আগের মত আসক্তি প্রকাশ করেনা। সবকিছুতে
অল্পপরিমাণ আগ্রহ প্রকাশ করে।
তাদের উচ্ছ্বাস হ্রাস পায়। তারা অসুখী নয় কিন্তু পূর্বের মত সন্তোষ তাদের মাঝে এখন আর কাজ করেনা। অসীম সম্ভাবনার সেন্স তাদের নিকট অবাস্তব মনে হতে শুরু করে। তারা এখন আগের মত একে অন্যকে নিয়ে ভাবেনা। অন্যান্য নারীরা প্রিজমের দৃষ্টি আকর্ষণ করে কিন্তু সে তাদের প্রতারিত করতে চায়না। লিসাও এখন মাঝেমাঝে নিজেকে ফ্লার্ট করার অনুমোদন দেয়। তবে সেটা হাসি বিনিময় থেকে বেশিকিছু নয়। তারা একসাথে সুখেই ছিল কিন্তু তাদের এ নতুন জীবনের শুরুর দিকের জ্যোতি হ্রাস পায়, জীবন অতীতের মতোই প্রাচীন হয়ে উঠে। জীবনের জাদু উধাও হয়ে গেছে। লিসা মনে মনে ভাবে, আমার অতীতের প্রেমিকের সাথে আমার সম্পর্ক যেমন ছিল এখনও তো তেমন! তাহলে আমি এখানে কেন এলাম?
বানর ও ইঁদুর এবং কেন ভালোবাসাও হারিয়ে যায়ঃ
কিছুকিছু ক্ষেত্রে মানুষের চেয়ে ইঁদুর নিয়ে গবেষণা বেশি সুবিধাজনক। রিসার্চ এথিক্সের ধারেকাছে না গিয়েও বিজ্ঞানীরা তাদের নিয়ে অনেককিছু করতে পারে। আমরা এখন একটা এক্সপেরিমেন্ট করবো। আমরা একটি হাইপোথিসিস টেস্ট করে দেখবো খাদ্য ও ড্রাগ দুটোই ডোপামিনকে স্টিমুলেট করে কিনা। এ হাইপোথিসিস টেস্ট করার জন্য বিজ্ঞানীরা ইঁদুরের মস্তিষ্কে সরাসরি ইলেক্ট্রোড ইমপ্লান্ট করেন। তারা সরাসরি স্বতন্ত্র নিউরনের অ্যাকটিভিটি পরিমাপ করেন। তারপর তারা একটি খাচা তৈরি করেন যেখানে ছিল খাবার রাখার উপযোগী একটি চুট বা প্রপাত। ফার্মের মুরগীদের খাবার দেয়ার সময় খাচার বাহিরে যে এক পাশ ফাঁকা টিউব ব্যবহার করা হয় সেটার কথা কল্পনা করুন। ফলাফল ছিল একদম প্রত্যাশিত। যখন তারা প্রথম ফুড পেলেট বা খাবারের বটিকা দিলো, ইঁদুরের ডোপামিন সিস্টেম লাইট আপ হলো। সাক্সেস! এখান থেকে প্রমাণ হয় যে কোকেইন এবং অন্যান্য ড্রাগের মত প্রাকৃতিক পুরস্কারও ডোপামিনের অ্যাক্টিভিটি উদ্দীপ্ত করতে পারে।
এবার তারা মূল এক্সপেরিমেন্ট থেকে আলাদা একটা কাজ যোগ করলো। তারা প্রতিদিন খাবারের টুকরোগুলো ঢালার পর ইঁদুরের মস্তিষ্ককে মনিটরিং করতো। কিন্তু ফলাফল ছিল অপ্রত্যাশিত। ইঁদুর যদিও খাবারগুলো উচ্ছ্বাসের সাথে সাবাড় করছে। যদিও তারা দারুণ উপভোগ করছে কিন্তু তাদের ডোপামিনের অ্যাক্টিভিটি সাট ডাউন করলো। প্রশ্ন হলো পুরস্কার আসার পরও কেন মস্তিষ্ক আর ফায়ারিং হচ্ছেনা? এ উত্তর দিয়েছিল, একটি বানর ও একটি বৈদ্যুতিক বাতি।
ওলফ্রাম শুল্টজ ডোপামিনের সবচেয়ে প্রভাবশালী অগ্রগামীদের মধ্যে একজন। সুইজারল্যান্ডের ফ্রাউবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন নিউরোসাইকোলজির প্রফেসর। তিনি শিক্ষার ক্ষেত্রে ডোপামিনের ভূমিকা সম্পর্কে জানার জন্য অত্যন্ত আগ্রহী ছিলেন। ম্যাকাও বানরের মস্তিষ্কের ডোপামিন সেলের একটি দলা বা ক্লাস্টারে তিনি ক্ষুদ্র একটি ইলেক্ট্রোড ইমপ্লান্ট করেন। তিনি বানরটিকে এমন এক যন্ত্রের ভেতর রাখেন যেখানে দুটি লাইট ও দুটি বাক্স আছে। দুটি বাক্সের জন্য দুটি লাইট। লাইটের ভিন্ন ভিন্ন আলো এক একটি বাক্সকে নির্দেশ করবে। একটি লাইট হলো ফুড পেলেটের সিগনাল যে বাক্সটির ভেতর খাবারের দানা পাওয়া যাবে আর অন্য লাইটটি খালি বাক্সকে নির্দেশ করে। এর মানে হলো একদিন না একদিন বানরটি নিশ্চিত বুঝতে পারবে কোন আলোটি ফুড পেলেটের সিগনাল আর কোনটি নয়। প্রথম দিকে অবশ্য তারা বিক্ষিপ্ত আচরণ করবে আর অর্ধেক সময় পর সঠিক কাজটি করতে সক্ষম হবে। যখনই তারা ফুড পেলেট পায় তখন মস্তিষ্কের ডোপামিন সেল ফায়ার হয় ঠিক যেমনি ইঁদুরের ক্ষেত্রে হয়েছে। একটা সময় বানরটি সিগনাল ধরতে পারে আর প্রতিবার সে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়৷ কিন্তু আকস্মিক একটি অস্বাভাবিক ব্যাপার দেখা যায়। আর তা হলো তাদের মস্তিষ্কের ডোপামিন নিঃস্বরণের সময় পরিবর্তন হতে শুরু করে। এখন তাদের ব্রেন খাবার দেখলে নয়, আলো দেখলেই ফায়ার হয়। কিন্ত কেন?
কারণ খুবই সহজ। প্রথমদিকে সঠিক আলো নির্বাচন করাটা ছিল সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত। যখন তারা সঠিক আলো নির্বাচন করতে পারতো তখনই খাবার পেত আর বিস্ময়কর ভাবে এ পদ্ধতিতে খাবার তাদের নিকট আলো আকারেই আসতো, খাবার হিসেবে নয়। এখান থেকে একটি নতুন হাইপোথিসিস জন্ম হয়: ডোপামিনের অ্যাক্টিভিটি সুখের চিহ্ন নয়, এটি হলো অপ্রত্যাশিত কোন কিছুর প্রতি আমাদের ব্রেনের প্রতিক্রিয়া__প্রত্যশা ও আশাবাদের একটি সম্ভাবনা।
আমরা মানুষরাও একই পদ্ধতিতে ডোপামিনের ঝলক পাই, এটি হলো বিস্ময়কর সম্ভাবনা: আপনার ভালোবাসার মানুষের পক্ষ থেকে মিষ্টি একটা নোট( এটি আপনাকে কী বলে?), অনেকদিন যাবত যে বন্ধুটির দেখা নেই তার একটি চিঠি ( এখানে কী এমন সংবাদ আছে), অথবা রোম্যান্সের অনুসন্ধান সেই পূর্বের চির চেনা বারে স্থিরভাবে বসে থাকা টেবিলের পাশে নতুন একজন নারী( এখানে কী ঘটতে যাচ্ছে)। কিন্তু যখন এগুলো রেগুলার ইভেন্ট বা নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপারে পরিণত হয়, এখান থেকে সব নোভেল্টি উধাও হয়ে যায়, ডোপামিন নিঃস্বরণের ক্ষেত্রেও তাই ঘটে __ এখন আর মিষ্টি কোন নোট, বিশাল কোনো ইমেইল অথবা ভালো কোনো টেবিল আপনার ডোপামিনকে ফিরিয়ে আনতে পারেনা।
এ সরল ধারণা অনেক প্রাচীনকালের একটি প্রশ্নের রাসায়নিক ব্যাখ্যা দেয়। আমাদের মস্তিষ্ক অপ্রত্যাশিত কোনোকিছুর প্রতি আসক্তি প্রকাশ করতেই প্রোগ্রামড এবং এ জন্য আমরা ভবিষ্যতের দিকে তাকাই যেখানে সকল উত্তেজনাকর সম্ভাবনার শুরু হয়। কিন্তু যখন কোনোকিছু যেমন ভালোবাসা, অনেক বেশি গতানুগতিক হয়ে যায়, উত্তেজনা স্লিপ করে পড়ে যায় আর তখন আমাদেরকে নতুনকিছু আকর্ষণ করে।
যে সকল বিজ্ঞানী এ ফেনোমেনন নিয়ে কাজ করেছেন তারা এর নাম রেখেছেন buzz। আমরা নতুন পুরস্কার পাই আমাদের প্রেডিকশন এরর বা ভবিষ্যদ্বানীর ভুল থেকে। এর মানে তাই এর নাম যা বলছে। আমরা কন্টিনিউয়াসলি পরবর্তী সময়ে কী হবে তার পূর্বাভাস করার চেষ্টা করি, কোন সময় আমরা কর্মক্ষেত্র ত্যাগ করবো? আমরা যখন ATM কার্ড চেক করবো কী পরিমাণ টাকা আমরা প্রত্যাশা করতে পারি? যখন কোন একটি ঘটনা আমরা সেই ঘটনা সম্পর্কে যা পূর্বাভাস করেছি তার থেকেও ভালো হয় এটি আক্ষরিক অর্থেই আমাদের ভবিষ্যৎ কথনের একটি ভুলঃ হয়তো আমরা কর্মক্ষেত্র থেকে দ্রুত ছুটি পেতে পারি, আমরা এটিএম চেক করার পর একশত ডলার বেশি দেখতে পারি। এই হ্যাপি এরর ( Happy Error) হলো তা যা ডোপামিনকে অ্যাকশনে রূপ দেয়। এটা তাদের জন্য কোনো এক্সট্রা- টাইম অথবা এক্সট্রা-মানি নয়। এটা হলো একটি অপ্রত্যাশিত গুড নিউজ।
প্রকৃতপক্ষে অন্তত তুচ্ছ একটু পূর্বাভাসের ভুলের সম্ভাবনাই ডোপামিনের অ্যাকশনে সুয়িং করার কারণ। কল্পনা করুন, আপনি একটি পরিচিত রাস্তা দিয়ে হাঁটছেন যে রাস্তা দিয়ে আপনি বছরের পর বছর হেঁটেছেন। আকস্মিক আপনি দেখলেন সেই চেনাজানা পথে নতুন একটি ব্যাকারি খোলা হয়েছে। আপনি মুহূর্তেই সেখানে গেলেন এটা দেখার জন্য যে এর ভেতর কী আছে। সাথেসাথেই ডোপামিন চার্য হবে আর এ ফিলিংস কোনোকিছুর স্বাদ, অনুভূতি ও পর্যবেক্ষণ থেকে আলাদা। এটি হলো অপরিচিত ও ভালো কোনোকিছুর সম্ভাবনার প্রত্যাশার প্রতি আনন্দ। আপনি বেকারি সম্পর্কে উত্তেজনাবোধ করবেন, এমনকি যদি আপনি একটি পেস্ট্রিজও না খান, তাদের কোনো কফিই পরখ না করেন এবং যদি এর ভেতর কী আছে সেটা নাও দেখেন। আরও পড়ুনঃ
আপনি ভেতরে যান এবং এক কাপ ডার্ক রোস্ট অর্ডার করেন এবং একটি ক্রসেন্ট। আপনি কফিতে চুমুক দিলেন। জটিল স্বাদ আপনার জিহবা জুড়ে খেলে উঠলো। এবার আপনি ক্রসেন্টে এক কামড় দিলেন। এটি হলো বাটারি এবং ফ্লেকি। ঠিক যেমন আপনি প্যারিসের একটি ক্যাফেতে কয়েক বছর আগে দেখেছিলেন। এখন আপনি কেমন অনুভব করছেন? সম্ভবত, আজকের দিনে অন্যরকম এক অনুভূতির ভেতর দিয়ে আপনার জীবনকে উপভোগ করার নতুন একটি উপায় শুরু হয়েছে। এখন থেকে আপনি প্রতিদিন সকালে সেখানে যাবেন। আপনি আপনার বন্ধুদেরও এটি সম্পর্কে বলবেন। আপনি এই নামে একটি কফির মগও কিনবেন। আজকের পর থেকে আপনার প্রতিটি দিন উত্তেজনার সাথে শুরু হবে কারণ আপনি একটা অসাম ক্যাফে পেয়েছেন। আর এটা এজন্যই যে আপনার ডোপামিন অ্যাকশনে আছে। এটা অনেকটা এমন যে আপনি ক্যাফের প্রেমে পড়েছেন।
মাঝেমাঝে আমরা যদিও আমাদের পছন্দের জিনিস পাই, এটি আমাদেরকে প্রত্যাশিত কোনো আনন্দ দেয় না। ডোপামিনার্জিক এক্সাইটম্যান্ট চিরকাল টিকে থাকে না কারণ অবশেষে ভবিষ্যৎ বর্তমানে পরিণত হয়। অজানার থ্রিলিং সব রহস্যময়তা আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের গতানুগতিকায় পরিণত হয়ে যায়। এখানেই ডোপামিনের কাজ শেষ, এর ক্ষয়ক্ষতি শুরু। কফি ও ক্রসেন্ট ছিল দারুণ, আপনি এই বেকারিকে আপনার প্রাত্যহিক ব্রেকফাস্ট স্টপে পরিণত করেছেন কিন্তু কয়েক সপ্তাহ পর শহরের “সবচেয়ে সেরা কফি ও ক্রসেন্ট” আপনার অতীত সময়ের ব্রেকফাস্টের মতো সাধারণ হয়ে যায়৷
ঠিক তেমনি প্রিজম ও লিসা তারা একে অন্যের প্রতি ততদিনই আসক্ত থাকে যতদিন না তাদের সম্পর্ক অনেক বেশি গতানুগতিক হয়ে যায়। যখন কোনোকিছু আমাদের ডেইলি রুটিনের অংশ হয়ে যায় এখানে আর রিওয়্যার্ড প্রেডিকশন এরর (Reward Prediction Error) কাজ করেনা, আপনাকে ফিলিং অব এক্সাইটম্যান্ট দেয়ার জন্য ডোপামিন আর ট্রিগার্ড হয়না। প্রিজম ও লিসা একে অন্যের অপরিচিত মুখ দেখে প্রথমদিন বিস্মিত হয়েছিল এবং ততদিন পর্যন্ত তারা একে অন্যের প্রতি আসক্ত থাকে যতদিন পর্যন্ত না তাদের অশেষ আনন্দের কাল্পনিক ভবিষ্যৎ শেষ হয়। একটা সময় অজানাকে আইডিয়ালাইজ করার ডোপামিন অ্যাক্টিভিটি শেষ হয় আর এজন্য ডোপামিন শাট ডাউন করে। আমাদের মধ্যে আবেগ তখন জাগ্রত হয় যখন আমরা সম্ভাবনাকে স্বপ্ন দেখি আর উবে যায় যখন আমরা রিয়েলিটির সম্মুখীন হই। কিন্ত কী হচ্ছে এসব?