Can't find our books? Click here!

 

 We are more than just our genes and that is why we can Understand our genes.

___Stephane Hawking

 

আসলে বিবর্তন এমন একটি বাস্তবতা যেটি আমাদের সচেতন মন গ্রহণ করতে পারেনা এবং আমাদের ব্রেন এ প্রকৃয়াটিকে ভাবতে অভ্যস্ত নয়।এর পেছনে যথেষ্ট কারণও আছে।আমদের সচেতন মন হাজার হাজার বছর তার বিবর্তন সম্পর্কে অচেতন কারণ বিবর্তন চেতনার আড়ালে ঘটে।এটি আমাদের সচেতন মনের চিন্তাপদ্ধতি দ্বারা পরিচালিত নয় এবং আমাদের কোনো আচরণ দ্বারা এটি প্রভাবিত হয়না।নিউটনের মাথায় আপেল পড়ার পূর্বে পৃথিবীর সকল মানুষ মনে করতো আপেল উপর থেকে নিচে পড়বে এটাই স্বাভাবিকতা।কোটি কোটি বছর ধরে সবকিছু উপর থেকে নিচের দিকেই পতিত হয় আকষ্মিক আপেল কেনো উপর থেকে নিচে পড়ে যায়, কেনো আপেল অনন্তকাল উপরের দিকে পাখিদের মতো ডানা মেলে উড়তে থাকেনা; এমন প্রশ্নে আমাদের সচেতন মন বিষ্মিত হয় সে কৌতুক অনুভব করে!

 

পৃথিবীর আট বিলিয়ন মানুষ চিন্তা করে, আইনস্টাইন, স্টিফেন অথবা আমি আমরা সবাই চিন্তা করি, মানব সভ্যতার উদ্ভবের পর থেকেই সে চিন্তা করে এখন আকষ্মিক কেউ যখন প্রশ্ন করবে কেনো আমরা চিন্তা করি তখন আমরা অবাক হই।আমরা শর্টকাট একটা উত্তর বের করি আর সেটা হলো জগতের সবাই সবসময় চিন্তা করতো তাই আমিও চিন্তা করি,আমি কেনো চিন্তা করি এমন প্রশ্ন অবান্তর!আপেল মাটিতে পতিত হয় কারণ শাশ্বত কাল এটি ঘটে আসছে এবং মহাকাশের নক্ষত্ররা মহাকাশে স্থির থাকে কারণ শাশ্বত কাল তারা এভাবেই ছিলো; তারা কেনো এভাবে আছে বা কিভাবে সেটা আমাদের জানার বিষয় নয়, কারণ এটাই নিয়ম আর এটাই আমার নিয়তি।

 

 

মানুষ মনে করে মৃত্যু শাশ্বত সত্য এবং সবাই মৃত্যুবরণ করে এবং এটাই নিয়ম। কিন্ত তারা এটা প্রশ্ন করেনা আমরা কেনো মৃত্যুবরণ করি!পৃথিবীর সব মানুষ মৃত্যুবরণ করে তাই আমিও মৃত্যুবরণ করি, আর পৃথিবীর সকল আপেল উপর থেকে নিচে পড়ে তাই আমার মাথায়ও আপেল পড়ে, এটাই তো স্বাভাবিক!এভাবেই ধর্ম ও দর্শন মহাবিশ্বের সবকিছুকে স্বাভাবিক ভাবে ব্যাখ্যা করে আসছিলো!!যা কিছু সার্বজনীন, যা সবসময় ঘটে, যা সবার ক্ষেত্রেই ঘটে, তা আমার ক্ষেত্রেও ঘটবে, কারণ এটাই নিয়তি!

 

কিন্তু বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে চিন্তা করলে আমরা বুঝতে পারি জগতের কোনোকিছুই আসলে নিয়তি নির্দিষ্ট বলেই অস্তিত্বশীল নয়, সবকিছু ফিজিক্সের সুত্র মেনে কাজ করে, সকল ঘটনার আড়ালে আমাদের চেতনার বাহিরে কিছু সুত্র কাজ করে যে সুত্রগুলি আমরা জানিনা বা জানতে চাইনা।আমরা এসবে অভ্যস্ত হয়ে গেছি তাই আমাদের চেতনা তার শত বছরের অভ্যস্ততার দেয়াল ভেঙে সেই চেতনাতীত প্রকৃয়াকে বুঝতে চায়না!কিন্তু প্রশ্ন জাগে কেনো?

রিচার্ড ডকিন্সের ভাষায়(the God Delusion) যদি বলি তবে, বিবর্তন সময় ও শক্তি অপচয় করার ব্যাপারে খুবই কৃপন।বিবর্তনের উদ্দেশ্য হলো প্রজাতির মিউটেশন,এডাপশন ও আমাদের জিনের টিকে থাকা।আমরা একটি বিশেষ পরিবেশে সঠিকভাবে অভিযোজিত হতে পেরেছি কী’না আমরা প্রজনন ও বংশবিস্তার করতে পারছি কী,না বিবর্তনের কাছে এটাই গুরুত্বপূর্ণ আমরা কীভাবে জগতকে ব্যাখ্যা করছি এবং সে ব্যাখ্যা বৈজ্ঞানিক সত্য কী’না সেটা বিবর্তনের কাছে মূখ্য বিষয় না!

 

কোনো একটি ব্যাখ্যা আমাদের প্রজনন ও বংশবিস্তারের জন্যে যদি উপযোগী হয় তবে সেটি অবৈজ্ঞানিক হলেও আমাদের বিবর্তনীয় মনে সেটি টিকে থাকে!

 

যেমনঃ শিম্পাঞ্জিদের পুরুষরা যৌথভাবে নারীদের সাথে যৌনসঙ্গম করে, তারা মনে করে সন্তান তারা যৌথভাবে জন্ম দেয়, আর সেই সন্তানের লালন পালনে তারা যৌথভাবে অংশগ্রহণ করে, তারা মনে করে ঐ শিশুটির ভবিষ্যত গঠনে তাদের সকলের দায়িত্ব সমান এবং এরকম একটি মনস্তত্ব তাদের টিকে থাকার ক্ষেত্রে বাড়তি উপযোগিতা দেয়।মানব সভ্যতার মধ্যেও এমন প্রথার প্রকাশ দেখতে পাওয়া যায়।আমরা উদাহরণস্বরুপ বলতে পারি, বারী ইন্ডিয়ান সম্প্রদায়ের কথা যারা গোষ্ঠীগত পিতৃতন্ত্রে বিশ্বাস করে, যারা বিশ্বাস করে একটি সন্তান আসলে সামষ্টিক সমাজ থেকে জন্মগ্রহণ করে আর নারীরাও বিশ্বাস করে অধিক পুরুষের সাথে যৌন সঙ্গম করলে তাদের সন্তান বিভিন্ন গুণাবলির অধিকারী হবে যা তাকে অনন্য মানুষে পরিণত করবে।আধুনিক ভ্রুণ তত্বের বিকাশের পূর্বে আমরা জানতাম না যে একজন পিতার ওরসেই সন্তান জন্ম হয়, একাধিক পিতা থেকে নয় কিন্তু তারপরেও এ অবৈজ্ঞানিক যৌথ পিতৃতন্ত্র শিম্পাঞ্জি ও সেপিয়েন্সদের মধ্যে টিকে ছিলো।তার মানে দেখা যাচ্ছে, গোষ্ঠীগত পিতৃতন্ত্র যে যুক্তির উপর প্রতিষ্ঠিত সেটি আমাদের সচেতন মনের তৈরি যেটার সাথে বিজ্ঞানের কোনো সম্পর্ক নেই, এ ব্যাখ্যাগুলি ন্যাচরাল সিলেকশন প্রজাতির মধ্যে তৈরি করেছে যেনো তারা ঐক্যবদ্ধ হতে পারে ও এ অবৈজ্ঞানিক বিশ্বাসের উপর ভর করে তারা শিশুদের দেখাশুনা করে যা প্রজাতির সংরক্ষণ ও টিকে থাকার ক্ষেত্রে একটি টুলস হিসেবে কাজ করবে।অতএব দেখা যাচ্ছে এ ব্যাখ্যাগুলি যদিও অবৈজ্ঞানিক তবুও এদের উপকারীতার কারণে এগুলি প্রকৃতিতে টিকে আছে।এতক্ষণে আপনারা নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন বিবর্তনের মতো একটি বৈজ্ঞানিক প্রকৃয়া প্রজাতির মধ্যে এমনকিছু অবৈজ্ঞানিক ও ভিত্তিহীন আচরণ ও ব্যাখ্যা তৈরি করতে পারে যে ব্যাখ্যাগুলি প্রজাতির টিকে থাকার জন্যে উপযোগী আর এ উপযোগীতাই সেগুলিকে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে স্থানান্তর করে!আজ থেকে ৩০ হাজার বছর পূর্বেও সেপিয়েন্সদের মধ্যে গোষ্ঠিগত পিতৃতন্ত্রের অস্তিত্ব ছিলো।আমরা জেনেটিক্যালি এখনো তখনকার মনস্তত্বে বাস করি যার জন্যে বর্তমানের পরিবার-ভিত্তিক সমাজের সাথে অভিযোজিত হতে পারিনা।আমাদের মন এখনো ৩০-৭০ হাজার বছর অতীতেই পড়ে থাকে আমাদের সচেতনতার আড়ালে,চেতনার বাহিরে।আর বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানীরা মনে করছেন আমাদের আজকের পারিবারিক দ্বন্দ্ব, সংঘাত ও একাকীত্বের কারণ এটাই।আর ঠিক এ কারণেই শিশুদের মন মানসিকতা খুবই জটিল।জেনেটিক্যালি শিশুরা ৭০ হাজার বছর পূর্বের সে অবৈজ্ঞানিক গোষ্ঠীগত পিতৃতান্ত্রিক সমাজে বাস করে!(১)

 

ব্লাইন্ডওয়াচম্যাকার

চিত্রঃ সেপিয়েন্সদের DNA এখনো ৭০০০০ বছর অতীতের শিকারী সংগ্রাহক জীবনেই পড়ে থাকে যা তাদের মানসিক একাকীত্বের কারণ!

 

বিশ্বের সকল আপেল উপর থেকে নিচে পড়ে যায় তাই কোনো আপেল কখনোই মহাকাশে উড়ে চলে যেতে পারেনা এটা কখনোই মধ্যাকর্ষের ব্যাখ্যা নয়।মধ্যাকর্ষ শক্তির ব্যাখ্যা হলো আইনস্টাইনের স্থান ও কালের বক্রতা যে বক্রতাকে ব্যাখ্যা করার জন্যে প্রয়োজন ভেক্টর,টেন্সর সুডোটেন্সর, কার্ভিলিয়ান কো-অর্ডিনেটর!জগতের সব মানুষ চিন্তা করে আর তাই আমিও চিন্তা করি এটা কখনোই আমি কেনো চিন্তা করি তার ব্যাখ্যা নয় আমি কেনো চিন্তা করি তার ব্যাখ্যা জানার জন্যে আমাকে বুঝতে হবে শিম্পাঞ্জি থেকে পৃথক ২৩ হাজার জিন যেটি সেপিয়েন্সদের মস্তিষ্কে ১০ বিলিয়ন মিলিয়ন নিউরাল কানেকশন তৈরি করেছে সেই জিন, নিউরাল কানেকশন এবং মানব মস্তিষ্কের বিবর্তনের সম্পূর্ণ প্রকৃয়াকে!কিন্তু প্রশ্ন হলো কেনো আমরা সবকিছুর একটা স্বাভাবিক ব্যাখ্যা তৈরি করি?কেনো আমরা আমাদের সময় ও শক্তি জ্ঞান অর্জনের জন্যে, মহাবিশ্বের সত্যিকার রহস্য উন্মোচনের জন্যে অপচয় না করে বানোয়াট গল্প ও অবৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা তৈরি করার জন্যে ব্যয় করি!এর উত্তর হলো এনার্জি কনজার্ভেশন “ল”!

 

ন্যাচরাল সিলেশন আমাদের ব্রেনকে ফোর্স করে সে সকল ব্যাখ্যা ও গল্প তৈরি ও প্রচার করতে যে ব্যাখ্যা ও গল্পগুলি সহয ও মন ভোলানো, যে ব্যাখ্যাগুলির মধ্যে আমাদের সার্ভাইভাল ভ্যালু আছে, যে ব্যাখ্যাগুলি আমাদেরকে নির্দিষ্ট পরিবেশে টিকে থাকতে সাহায্য করে।আর তাই আমরা সিলেকশন প্রেসার অতক্রম করে মহাবিশ্ব ও প্রাণের বিবর্তনকে বুঝতে গিয়ে অনর্থক সময় অপচয় করিনা আমরা আমাদের কাল্পনিক গল্পগুলির মাধ্যমেই মহাবিশ্বের সরল একটি ব্যাখ্যা তৈরি করে আমাদের টিকে থাকার গতিকে বজায় রাখি!বিবর্তন নিজেই বিবর্তনকে আমাদের চেতনা থেকে আড়াল করে রাখে সে Blind Watchmaker এর মতো আমাদের প্রজনন ও বংশবিস্তারের অন্ধযুদ্ধে ব্যাস্ত রাখে…!

মৃত্যু আমাদের নিয়তি নয়, মৃত্যু হলো মানব দেহের প্রকৌশলগত সমস্যা, আধুনিক বিজ্ঞান নেনোবোট এবং স্টেমসেল তৈরির মাধ্যমে এ প্রকৌশলগত সমস্যাকে অতিক্রম করছে।সবাই মৃত্যুবরণ করে বলে আমি মৃত্যুবরণ করিনা, আমি মৃত্যুবরণ করি ভাইরাস ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণে অথবা বার্ধ্যকে বা আকষ্মিক দূর্ঘটনায় কিন্তু সবকিছুর সরল ব্যাখ্যা তৈরি করতে গিয়ে ন্যাচরাল সিলেকশন আমাদের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা থেকে কৌশলে সরিয়ে রাখে, এটাও আমাদের নিয়তি নয়, আমরা বিবর্তনকে বুঝতে চাইনা কারণ এটা মানব মস্তিষ্কের প্রকৌশলগত সমস্যা, যে সমস্যাটকে অতিক্রম করার জন্যেই আমরা আজ এখানে!

 

প্রাসঙ্গিক আর্টিকেলঃ

১.একাকীত্বের বিবর্তনীয় ব্যাখ্যা

২.মানুষের বুদ্ধিমত্তার বিবর্তন

রেফারেন্সঃ

১.ইউভাল নোয়া হারারি, সেপিয়েন্স

২.রিচার্ড ডকিন্স, দ্যা ব্লাইন্ড ওয়াচম্যাকার 

 

বিবর্তন ও বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানের উপর পরিচালিত হেলিক্স ভার্চুয়াল ইউনিভার্সিটির “ব্লাইন্ড ওয়াচমেকার কোর্সের প্রেজেন্টেশন ফাইলের একটি পিডিএফ পাঠকদের জন্যে এখানে দেয়া হলো।শিক্ষার্থীদের লিখিত এ প্রেজেন্টেশনটি পড়ে মন্তব্য করার জন্যে অনুরোধ করছি বিজ্ঞ পাঠকদের।Blind-watchmaker-new

%d bloggers like this: