Can't find our books? Click here!

ব্রেকিং ডাউন জেন্ডার স্টেরিওটাইপ

Last updated:

“Revel in your femininity! Rise and radiate with your hair unstyled! Speak up and assert, ‘We are not beasts; call us sisters! We are not mere things; call us daughters! We are not commodities; call us human beings!’ Make it clear to all that we will not be reduced to mere decorations or items for others to use, but that we are all human, united and equal in our worth.”__Roquia Sakhawat Hussain[1]

ফেমিনিস্ট স্কলার ও দার্শনিক ডোনা হরওয়ে বলেছিলেন, I would rather be a cyborg than a goddess। সাইবর্গ হলো একটি সাইবারনেটিক জীব যেটি জৈবিক ও প্রযুক্তিগত উপাদানের সমন্বয়ে তৈরি। এটি ন্যাচারাল ও আর্টিফিশিয়ালের সমন্বয়, যা বায়োলজিক্যাল মেকাপ দ্বারা সীমাবদ্ধ নয় বরং প্রযুক্তির মাধ্যমে এটি সম্প্রসারিত। আর অন্যদিকে গডেস অথবা দেবী হলো স্বর্গের প্রতিনিধি, আদর্শিক নারীর রূপ যাকে নিষ্ক্রিয় ও আনুগত হিসেবে চিত্রায়িত করা হয়। এ আর্কিটাইপ প্রত্যাখ্যান করে, হরওয়ে নারীদের অনুপ্রাণিত করেছিলেন, সোসাইটাল প্রত্যাশা পূরণ করার পরিবর্তে  তাদের নিজস্ব ক্ষমতা ও উদ্দেশ্যকে আলিঙ্গন করার জন্য। দেবী নয় তিনি সাইবর্গ হতে চেয়েছিলেন।

২০১৬সালে “Hidden Figures” নামক একটি হার্ট স্টপিং বায়োগ্রাফিক্যাল ড্রামা ফিল্ম মুক্তি পেয়েছিল। এই মুভি আমাদের বলেছিল, তিনজন আফ্রিকান-আমেরিকান ফিমেইল ম্যাথম্যাটিশিয়ান ক্যাথরিন জি জনসন, ডরোথি ভন এবং মেরি জ্যাকসের কথা যারা ১৯৬০ সালে নাসায় (NASA) কাজ করতেন। মুভিটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধ এবং মহাকাশ প্রতিযোগিতার পটভূমিতে রচিত হয়েছিল। এ তিনজন নারী ছিলেন “হিউম্যান কম্পিউটার” টিমের একটি অংশ, যারা জটিল ম্যাথম্যাটিক্যাল ইকুয়েশন নিজ হাতে সমাধান করার জন্য দায়বদ্ধ ছিল। তাদের বুদ্ধিমত্তা ও বিশেষজ্ঞ জ্ঞান থাকার পরও তারা কর্মক্ষেত্রে  বৈষম্য ও রেসিজমের শিকার হয়েছিল, তাদের সুবিধাবঞ্চিত করা হয়েছিল এবং তাদের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল।  এ গল্প আমাদের দেখিয়েছিল এ তিনজন নারী বৈষম্য ও কুসংস্কারের বিপক্ষে কীভাবে সংগ্রাম করেছিলেন, তাদের স্বীকৃতি ও নিজস্ব ফিল্ডে সফলতার জন্য। ক্যাথারিনকে, বিশেষ করে, পৃথিবীর চারপাশে জন গ্লেনের ঐতিহাসিক কক্ষপথের জন্য গাণিতিক গণনা যাচাই করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, যা স্পেস রেসের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। চূড়ান্ত চাপ ও বৈষম্যের শিকার হওয়ার পরও ক্যাথারিনের গণনা আল্টিমেটলি মিশনের সফলতা নিশ্চিত করতে সাহায্য করেছিল।

২০১৫ সালে “Mad Max: Fury Road” নামক একটি পোস্ট-অ্যাকোলিপ্টিক মুভি মুক্তি পেয়েছিল। এ মুভিটির পরিচালক ছিলেন জর্জ মিলার। এ মুভি সেট করা হয়েছিল একটি ডিস্টোপিয়ান বিশ্বে, যেখানে সম্পদের পরিমাণ সীমাবদ্ধ এবং সমাজ পরিচালিত হয় অত্যাচারি শাসক দ্বারা। এ মুভি কয়েকটি শক্তিশালী নারী চরিত্র তুলে ধরেছিল যার মধ্যে ছিলেন ইম্পারেটর ফুরিওসা, যিনি একজন দক্ষ ওয়ারিয়র ও ড্রাইভার এবং ইমোর্টান জো-এর স্ত্রী। তিনি ছিলেন বুদ্ধিমতি ও সম্পদশালী একজন নারী যিনি যৌনতার দাসত্ব অস্বীকার করেছিলেন। এই নারী চরিত্র ঐতিহ্যবাহী জেন্ডার রোলস ও স্টেরিওটাইপ অস্বীকার করেছিল, যেখানে নারীদের প্রায়ই দুর্দশাগ্রস্ত অসহায় মেয়ে হিসেবে চিত্রিত করা হয়। ফুরিওসা ছিল বিশেষ করে, একটি নারীবাদী চরিত্র। তিনি ঐতিহ্যগত লিঙ্গের ভূমিকাকে কঠোরভাবে অস্বীকার করেন এবং ইমোর্টান জো-এর নিপীড়নমূলক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে লড়াই করার সময় প্রবল নেতৃত্ব, বীরত্ব এবং স্বাধীনতার তেজস্ক্রিয়তা প্রদর্শন করেন।

এ মুভি একইসাথে প্রজনন স্বাধীনতা ও শারীরীক স্বেচ্ছাচারিতার থিম অনুসন্ধান করেছিল, ইমোর্টান জোয়ের স্ত্রী হিসেবে সে তার নিজের দেহ ও ভাগ্যের ওপর নিয়ন্ত্রণ চেয়েছিল।

একদম ছোটকাল থেকে আমাদের শিক্ষা দেয়া হয় যে, নারীরা ইমোশনাল ও অযৌক্তিক, তারা যুক্তি থেকে আবেগকে বেশি মূল্যায়ন করে__এ স্টেরিওটাইপ ব্যবহার করে নারীর ব্যক্তিগত মতামত ক্ষুন্ন করা হয় এবং তাদের নেতৃত্বের সক্ষমতা অস্বীকার করা হয়। আমাদের শেখানো হয় নারী ম্যাথ ও সায়েন্সে ভালো নয়- এ মিথ্যাচার  “STEM” ফিল্ডে নারীর প্রতিনিধিত্বের অভাব সৃষ্টি করে এবং তাদের সম্ভাব্য সফলতাকে আঘাত করে। আমাদের শেখানো হয় নারীরা তাদের রূপের প্রতি অবসেসড- এটি নারীদের সৌন্দর্যের অবাস্তব স্টেরিওটাইপ তৈরি করে এবং বডি শেইমিং ও অন্যান্য ক্ষতিকর আচরণের নেতৃত্ব দেয়। আমাদের শেখানো হয় নারী ও পুরুষের মধ্যে সহজাত ভিন্নতা আছে। আমরা গণতান্ত্রিকহারে এ কথা বলতে পছন্দ করি, পুরুষ দৃঢ় ও আগ্রাসী এবং নারী যত্মশীল ও আবেগী। এ স্টেরিওটাইপ শতাব্দীর পর শতাব্দী সার্ভাইভ করছে।  

এটা ঠিক যে নারী ও পুরুষের মাঝে বায়োলজিক্যাল কিছু পার্থক্য আছে কিন্তু বায়োলজিক্যাল পার্থক্য কারও শ্রেষ্ঠত্ব অথবা অশ্রেষ্ঠত্ব নির্ধারণ করে না। আর নারী ও পুরুষ মিলিয়ন মিলিয়ন বছর ধরে ভিন্ন কোনো গ্রহে বিবর্তিত হয়নি যে, তাদের একজন ড্রাগনম্যান আর অন্যজন ডেনিসোভান!

নিয়ান্ডারথাল মানুষের চেয়ে বায়োলজিক্যালি শক্তিশালী ছিল কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে তারা স্পেসশিপ তৈরি করেছে। ফিজিক্যালি ডায়নোসর মানুষের চেয়ে অনেক বিরাট ছিল কিন্ত তার অর্থ এই নয় যে, তাদের বিশালত্ব তাদের গ্রহাণু থেকে রক্ষা করেছিল। আসলে মানুষের সাথে ডায়নোসর অথবা নিয়ান্ডারথালের তুলনা এইপল ভার্সাস অরেঞ্জের তুলনার মতো। কিন্তু তারপরও বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ।

মনে করুন, জিরাফের অনেক বিরাট একটি গলা আছে কিন্তু তাই বলে কী জিরাফ লুকোচুরি খেলতে পারে? মানুষের চেয়ে হাতির বিশাল একটি ব্রেন আছে কিন্তু তার অর্থ কী এই যে সে ভালো ম্যাথ বোঝে?

একটি বিড়ালের নাইট ভিশন ভালো হলেই যেমনি সে ভালো “Horror Movie” দেখে না, ঠিক তেমনি নারী ও পুরুষের শারীরীক ভিন্নতা দিয়ে তাদের সুপারিয়রিটি অথবা ইনফারিয়রিটি প্রমাণ করা যায় না। বায়োলজিক্যাল ভিন্নতা কারও বুদ্ধিমত্তা অথবা প্রিফারেন্স ডিটারমাইন করে এমন কোনো প্রমাণ নেই। প্রকৃতিতে টিকে থাকার জন্য নেকড়ে এবং ঈগলের যেমন নিজস্ব অনন্য কৌশল আছে, তেমনি কোনোপ্রকার সুপারিয়র অথবা ইনফারিয়র ট্যাগ ছাড়াই নারী ও পুরুষের ভিন্ন ভিন্ন এলাকায় দক্ষতা আছে। এ বৈচিত্র্যতাকে সেলিব্রেট করার অক্ষমতাই নারী ও পুরুষের মাঝে বৈষম্যমূলক স্টেরিওটাইপ জন্ম দেয়।

চিন্তা করুন আমাদের চোখের কর্মপদ্ধতির কথা। আমাদের চোখে দু-ধরনের কোষ আছে: রড (rods) এবং কোন (cones)। রড(rods)আমাদের মৃদু আলো দেখতে সাহায্য করে, যেখানে কোন (cones) আমাদের সাহায্য করে কালার ও ডিটেইলস দেখতে। এখন কল্পনা করুন পুরুষ হলো আমাদের চোখের রড। তাদের সে সকল কাজ করার প্রবণতা আছে যার জন্য দৃঢ়তা, স্পিড ও লো-লাইট কন্ডিশনে কাজ সম্পাদন করার ক্ষমতা থাকতে হয়। রড যেমন আমাদের অন্ধকারে দেখতে সাহায্য করে, পুরুষ মাঝেমাঝে সে সকল কাজ করতে পারে, যার জন্য দৃঢ়তা ও সহ্যশক্তি প্রয়োজন। অন্যদিকে নারী হলো কোনের মতো। তারা সে সকল দিকে কাজ করার জন্য ভালো অভিযোজিত যেখানে বিস্তারিত মনোযোগ ও রঙের সংবেদন প্রয়োজন।  ঠিক যেমনি কোন (Cone) কালার ডিটেইলস বুঝতে  সহযোগিতা করে নারীরা মাঝেমাঝে সে সকল কাজ ভালো করে, যেখানে সহানুভূতি, কমিউনিকেশন ও সামাজিক দক্ষতা প্রয়োজন।

স্টিভেন পিঙ্কার তার The Blank Slat: The modern Denial of Human Being  গ্রন্থে বলেছেন, নারী ও পুরুষের বায়োলজিক্যাল তারতম্য আছে আর আমাদের সেটা বোঝা উচিত অথবা তাদের দুজনের সাইকোলজিক্যাল মিসম্যাচ তৈরি হবে। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে, নারী ও পুরুষ তাদের জিন ও হর্মোনের প্রিজনার। জিন ও হর্মোন তাদের যা বলবে তারা ঠিক তাই করবে!

একজন নারী যত্মশীল ও সেবামূলক কাজের প্রবৃত্তি লালন করে বলে, সে ফিজিক্স ও ম্যাথ বুঝবে না__এ কথাটি বৈজ্ঞানিকভাবে সমর্থিত নয়। মনে করুন, আপনি জিনগতভাবে আর্টিস্ট (DRD4জিন)[2], আপনার মস্তিষ্কে আর্টিস্টিক হর্মোন ডোপামিন আছে কিন্তু আপনি কখনো রং পেন্সিল অথবা ক্যানভাস পাননি। তাহলে কী আপনি আপনার জিনগত টেন্ডেন্সি ও হর্মোন দিয়ে  অ্যান্ড্রো বোটিসেলির “The Birth of Venus” অথবা পাবলো পিকাসোর “The Old Guitarist” আঁকতে পারবেন ? দুজন যমজের ওপর এক্সপেরিমেন্ট করে দেখুন, একজনকে আপনি পেন্সিল ও ক্যানভাস দিন আর অন্যজনকে টেকনিক্যাল দৃঢ়ভাবে পড়াশুনা করতে বাধ্য করুন। দেখুন, একই জেনেটিক্যাল প্রপার্টি থাকার পরও পেন্সিল ও ক্যানভাস ছাড়া টেকনিক্যালের ছাত্রটি তার আর্টিস্টিক জিনিয়াস প্রকাশ করতে পেরেছে কি না।

বায়োলজিক্যাল ভিন্নতা সবকিছু ডিটারমাইন করে না। একটি শুক্রাণুর ভেতর একটি ফিটাস তৈরির জেনেটিক্যাল ইনস্ট্র্যাকশন থাকলেও সে মিলিয়ন মিলিয়ন শুক্রাণু অতিক্রম করে পরিপূর্ণ শিশুতে পরিণত হতে পারবে না, যদি সে মাতৃগর্ভে প্রবেশ ও বিকাশের নিউট্রিয়াস পরিবেশ থেকে বঞ্চিত হয় অথবা তাকে অবরশন করে ডাক্তার জন্মের পূর্বেই খুন করে। তেমনি কোনো লিঙ্গই তার বায়োলজিক্যাল ভিন্নতা দিয়ে একা তার সহজাত ফিল্ডে উন্নতি করতে পারে না।

কর্ডেলিয়া ফাইন আর্গুমেন্টে তিনি দাবি করেছিলেন, নারী ও পুরুষের মস্তিষ্কের ভিন্নতা নিয়ে যে সকল গবেষণা প্রমাণ উপস্থাপন করছে সেগুলোর দৃঢ় সায়েন্টিফিক ভিত্তি নেই। তিনি দাবি করেছিলেন, এ সকল গবেষণা মাঝেমাঝে গুরত্বপূর্ণ সামাজিক ও পরিবেশগত ফ্যাক্টরকে উপেক্ষা করে যা জ্ঞানীয় সক্ষমতার উন্নয়নকে প্রভাবিত করতে পারে।

মনে করুন, আপনি গ্রিন হাউজের ভেতর একটি ভিনাস ফ্লাই, ড্রাগন ব্লাড,  অথবা অ্যাডানসোনিয়া বৃক্ষ বৃদ্ধি করতে চান। আপনি গাছটির বৃদ্ধির ওপর ভিন্ন ভিন্ন প্রকার মাটি অ্যাপ্লাই করতে পারেন তাদের আলাদা আলাদা প্রভাব টেস্ট করার জন্য। যাইহোক, আপনি যদি কেবল মাটির দিকেই ফোকাস করেন এবং সূর্যের আলো, তাপমাত্রা ও আর্দ্রতাকে উপেক্ষা করেন, আপনার ফলাফল কখনো যথার্থ হবে না। একইভাবে যদি আপনি ওভেন টেম্পারেচার ও সুগারের পরিমাণ বাদ দিয়ে একটি বেকিং কেক তৈরির প্রসেস এক্সপ্লেইন করতে যান, তবে আপনার ফলাফল কখনোই সঠিক হবে না।

আপনি ব্রেন স্ক্যান করে কম্পিউটার স্ক্রিনে দেখলেন নারী ও পুরুষের মস্তিষ্কের দুটি হেমিস্ফিয়ারের কার্পাস কলোসামের ফাইবার, হিপোক্যাম্পাস ও অ্যামিগডালার আকারে ভিন্নতা আছে, আর আপনি ব্লাইন্ডলি তাদের জেনেটিক ফ্যাক্টরের দিকে ফোকাস করলেন কিন্তু আপনি তাদের মস্তিষ্কের উন্নয়ন ও জ্ঞানের পেছনে সোসাইটাল ও কালচারাল ফ্যাক্টর বিবেচনা করলেন না, তাহলে আপনি কখনো নারী ও পুরুষের মস্তিষ্কের ভিন্নতার পরিপূর্ণ পিকচার পাবেন না এবং আপনি এটাও বুঝতে পারবেন না যে কীভাবে অভিজ্ঞতা ও পরিবেশ তার মস্তিষ্ককে আকার দিতে পারে। আর তাই গ্রিন হাউজ অথবা ওভেনের মতোই নারী ও পুরুষের মস্তিষ্কের সত্যিকার ভিন্নতা বুঝতে হলে আমাদের সবগুলো ফ্যাক্টরের দিকেই গুরুত্ব দিতে হবে।

কল্পনা করুন, দুটি ভিন্ন ভিন্ন এলিয়েন স্পিসিজের কথা, যারা ভিন্ন ভিন্ন দুটি গ্রহে ভিন্ন ভিন্ন অ্যানাটমি ও ব্রেন স্ট্র্যাকচার উন্নত করেছিল। আপনি যদি উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে তাদের ব্রেন পর্যবেক্ষণ করেন, আপনি তাদের মস্তিষ্কের কিছু কিছু অংশে উল্লেখযোগ্য তারতম্য দেখতে পাবেন। কিন্তু আপনি যদি তাদের সোসাইটাল ও কালচারাল ফ্যাক্টর উপেক্ষা করে কেবল জেনেটিক মেকাপের দিকেই ফোকাস করেন আপনি তাদের মস্তিষ্কের সত্যিকার জটিলতা ও অনন্যতা বুঝবেন না। এটা অনেকটা পাজলের অন্যান্য টুকরাগুলো উপেক্ষা করে একটি পাজল সমাধান করা অথবা অ্যাটমোস্ফিয়ারের (বায়ুমণ্ডল) প্রভাব বিবেচনা না করেই কোনো একটি নতুন গ্রহ আবিষ্কার করা।   

চলুন এবার একটি ডাউন টু আর্থ বিশ্লেষণ ব্যবহার করি। মনে করুন, আপনি একজন পুরুষ। আপনার মস্তিষ্কের দুটি হেমিস্ফিয়ার আছে। আপনার লেফট হেমিস্ফিয়ার যৌক্তিক ও বিশ্লেষণাত্মক এবং রাইট হেমিস্ফিয়ার সৃষ্টিশীল ও অন্তদৃষ্টিসম্পন্ন। কিন্তু তাই বলে, কী আপনি একটি হেমিস্ফিয়ারকে অন্য হেমিস্ফিয়ার থেকে পৃথক করে মস্তিষ্কের ভেতর দুটি সম্প্রদায় তৈরি করেন? একটি হেমিস্ফিয়ারকে নির্যাতন ও অত্যাচার করবেন?

সমাজে যেমন আপনি নারীর সুনির্দিষ্ট কিছু অ্যাকটিভিটিকে অবদমন করতে চান, আপনি কী মস্তিষ্কের রাইট হেমস্ফিয়ারে ন্যানোবট পাঠিয়ে তার সুনির্দিষ্ট কিছু অ্যাকটিভিটি অবদমন করে রাখবেন? মনে করুন, আপনি ন্যানোবট পাঠিয়ে আপনার রাইট হেমিস্ফিয়ারকে অবদমন করলেন, এতে করে আপনার সৃষ্টিশীলতা কমে যাবে, আপনার সমস্যা সমাধান করার সক্ষমতা এবং সিদ্ধান্ত ডেমেজ হবে এবং সামগ্রিকভাবে আপনার ইমোশনাল ইন্টিলিজেন্স কমে যাবে। এছাড়া দুটি হেমিস্ফিয়ারের প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হবে ও বিভিন্ন নেতিবাচক সমস্যা সৃষ্টি হবে!

নারী ও পুরুষেরও ভিন্ন ভিন্ন প্রবণতা ও দৃঢ়তা আছে কিন্তু এই তারতম্যকে অতি-সাধারণীকরণ করা যায় না। মস্তিষ্কের দুটি পাশের মতো, দুটি জেন্ডারেরোও ইউনিক কোয়ালিটি আছে । মহাবিশ্বের পরিপূর্ণ মডেল করার তৈরির জন্য যেমনিভাবে মস্তিষ্কের দুটি হেমিস্ফিয়ারের অবদান প্রয়োজন, তেমনি নারী ও পুরুষের মাঝেও সুষম ভারসাম্য প্রয়োজন।

এছাড়া নিউরোপ্লাস্টিটি নামক নিউরোসায়েন্সে একটি কনসেপ্ট আছে। আর তা হলো, মানুষ যখন নতুন নতুন অভিজ্ঞতার শিকার হয়, তখন তার মস্তিষ্কে নতুন নতুন নিউরাল কানেকশন তৈরি হয়, সে অভিজ্ঞতাকে রেসপন্স করার জন্য। আপনি যখন নতুন কোনো কিবোর্ড সংগ্রহ করবেন, তখন আপনার মস্তিষ্ক সেটার সাথে অ্যাডজাস্ট করতে স্ট্র্যাগল করবে, কিন্তু ক্রমাগত চেষ্টার ফলে আপনার মস্তিষ্কের নিউরাল কানেকশন রিওয়্যার হবে এবং একটা সময় আপনি এমনভাবে কিবোর্ড চালনা করবেন, আপনার কোনো কনসাসনেসই প্রয়োজন হবে না এটি চালানোর জন্য, এটাকে মস্তিষ্কের অটোপাইলট বলে।

ইঁদুরের ওপর গবেষণা করে দেখা গেছে, যখন একটি ইঁদুরকে আইসোলেট করে, খেলনাহীন নীরস একটি বাক্সে রাখা হয় তখন তার মস্তিষ্কে ডেনড্রাইড হ্রাস পায় এবং সমৃদ্ধ পরিবেশে ডেনড্রাইড ও সাইন্যাপটিক কানেকশন বৃদ্ধি পায়। আবার ক্যামেরন মট নামক একটি শিশু এপিলেন্সি আক্রান্ত হওয়ার পর যখন তার মস্তিষ্কের লেফট হেমিস্ফিয়ার সম্পূর্ণ কেটে ফেলে দেয়া হয়েছিল তখনও তার রাইট হেমিস্ফিয়ার নতুন পরিবেশকে রেসপন্স করার জন্য নিজের নিউরাল কানেকশন রিওয়্যার বা মেরামত করেছিল যা লেফট হেমিস্ফিয়ারের পূর্বের কিছু ফাংশন  ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়। এখান থেকে প্রমাণিত হয় যে, একজন মানুষ সে নারী বা পুরুষ যাইহোক তার মস্তিষ্ক পরিবেশকে রিফ্লেক্ট করে।

এর আর একটি ব্রেথ টেকিং উদাহরণ হলো লণ্ডনের ট্যাক্সি ড্রাইভারের কেস। গবেষণা দেখিয়েছে, কন্ট্রোল সাবজেক্টের তুলনায় লন্ডনের ট্যাক্সি ড্রাইভারদের মস্তিষ্কের হিপোক্যাম্পি বড়, এটি মস্তিষ্কের এমন একটি কাঠামো যেটি স্থানিক চলাচল ও স্মৃতির সাথে জড়িত। এটা বিশ্বাস করা হয় যে,  ট্যাক্সি ড্রাইভারদের লাইসেন্স পাওয়ার জন্য তাদের ব্যাপক প্রশিক্ষণ দেয়া হয়, যে প্রশিক্ষণের সময় তাদের শহরের হাজার হাজার স্ট্রিট ও ল্যান্ডমার্ক মনে রাখতে হয়। মজার ব্যাপার হলো, ট্যাক্সি ড্রাইভারদের হিপোক্যাম্পাসের আকার তারা কী পরিমাণ সময় ট্যাক্সি ড্রাইভ করেছে তার সাথে সম্পর্কিত, যার অর্থ হলো, মস্তিষ্ক পরিবেগত চাহিদা ও অভিজ্ঞতাকে রেসপন্স করতে গিয়ে নিজেই বদলে যায়! এখান থেকে প্রমাণিত হয় যে, বায়োলজি নারী ও পুরুষের বুদ্ধিমত্তা ডিটারমাইন করতে পারে না। একজন নারী বিজ্ঞানী, দার্শনিক, ম্যাথম্যাটিশিয়ান যে কোনোকিছুই হতে পারে এটি একা তার হর্মোন অথবা জিনের ওপর নির্ভর করছে না, নির্ভর করছে পরিবেশ ও অভিজ্ঞতার ওপর। সিমোন ডি বিউভোয়ার যথার্থই বলেছিলেন, “A woman is not what she is born, but what she must become”।

২০১৪ সালে আমরা “The Theory of Everything” মুভিতে আমাদের এ দাবির সত্যতা দেখতে পাই। এ মুভিতে আমরা দেখেছিলাম তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং মোটর নিউরন ডিজিজে আক্রান্ত হয়েছিলেন এবং তিনি গতিশীলতা ও কথা বলার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছিলেন। কিন্তু এ চ্যালেঞ্জের পরও এ  বিজ্ঞানী থিওরিটিক্যাল ফিজিক্সে গ্রাউন্ড ব্রেকিং সব অবদান রেখেছিলেন, যা আমাদের কাছে মানব মস্তিষ্কের অভিযোজন ও প্রতিবন্ধকতা অতিক্রমের ক্ষমতা সম্পর্কে গভীরভাবে ঈশারা দেয়।

২০০১ সালে মুক্তি পাওয়া “A Beautiful Mind” সিনেমায় আমরা দেখতে পাই, গণিতবিদ জন ন্যাশের গল্প যিনি সিজোফ্রেনিয়ার সাথে যুদ্ধ করছিলেন। তার তীব্র মানসিক অসুস্থ্যতা থাকার পরও তিনি গণিতে মাইন্ড ব্লোয়িং অবদান রেখেছিলেন এবং অবশেষে তিনি নোবেল প্রাইজ পান!

প্রশ্ন হলো, কীভাবে বায়োলজিক্যাল ভিন্নতা একজন নারীর বুদ্ধিমত্তাকে সীমাবদ্ধ করে দিতে পারে? তারা তো মহান বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং অথবা মহান গণিতবিদ জন ন্যাশের মতো মানসিকভাবে অসুস্থ্য কোনো হিউম্যান রেস নয়? কীভাবে আপনি তাদের মস্তিষ্কের দুর্দান্ত ভাবে পরিবেশকে রেসপন্স করার ক্ষমতাকে অস্বীকার করবেন?

উদাহরণস্বরূপ, গবেষকরা দেখেছেন, যে সকল পুরুষের মস্তিষ্কে উচ্চমাপের টেস্টোস্টেরন আছে, তারা নারীর তুলনায় ভালো লিডার হতে পেরেছে এমন কোনো প্রমাণ নেই অথবা সুনির্দিষ্ট কোনো কাজে সে ভালো দক্ষতা প্রদর্শন করেছে এমনও কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। প্রকৃতপক্ষে গবেষণা দেখিয়েছে, একজন নারী পুরুষের মতোই লিডারশিপের ভূমিকা পালন করতে সক্ষম অথবা সক্ষম নিজের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে। আসলে নারী ও পুরুষ ভিন্ন ভিন্ন ইভল্যুশনারী প্রেসারকে রেসপন্স করার জন্য বিবর্তিত হয়েছিল, তারা কেউই কারও থেকে ছোট নয়, টিকে থাকার এই গ্র্যান্ড প্রদর্শনীতে তারা দুজনেই দুর্দান্ত অভিযোজিত।

উদাহরণস্বরূপ, নারী হায়েনার সুডো পেনিস আছে, ভ্যাজাইনা থাকে শরীরের ভেতর, তার প্রজনন হয় পেনিসের মাধ্যমে, ভ্যাজাইনার মাধ্যমে নয়। পুরুষ সী হর্সের পেটে একটি ব্যাগ থাকে, ঐ ব্যাগের ভেতর সে ডিম নিষিক্ত করে, নারী কেবল ব্যাগের ভেতর ডিম রেখে চলে যায়। নারী ও পুরুষের বায়োলজি কীভাবে ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশকে উত্তর দিতে গিয়ে রিভার্স হয় তার এক বিস্ময়কর উদাহরণ পুরুষ অ্যাংলারফিশ। এরা আকারে নারীর থেকে ক্ষুদ্র, সমুদ্রে নারী অ্যাংলারফিশের এতই অভাব যে পুরুষ প্রজননের জন্য নারীর দেহের প্যারাসাইটে পরিণত হয়। তার ডাইজেস্টিভ সিস্টেম ও সার্কুলেটরি সিস্টেম ক্ষয় হয় এবং অবশেষে সে নারীর শরীরের ওপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল হয়ে যায়।

কিছু কিছু প্রাইমেট আছে যারা সামাজিক অনুক্রমে পুরুষের চেয়ে উচ্চস্তরে অবস্থান করে, কারণ অন্যান্য নারীর সাথে তাদের সামাজিক বন্ধন তৈরি ও সন্তান লালন-পালনের ক্ষমতা দুর্দান্ত। এছাড়া মানব সভ্যতার মধ্যেই এমন অনেক মানুষ আছে, তারা পুরুষ অথবা নারী তা সুস্পষ্টভাবে নির্ধারিত নয়, যা নারী ও পুরুষের লিঙ্গ বৈষম্য সম্পর্কে আমাদের বাইনারী থিংকিং পদ্ধতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। ঐতিহ্যবাহী লিঙ্গের ভূমিকা কীভাবে প্রকৃতিতে রিভার্স অথবা ব্লার হয়ে যেতে পারে, এগুলো তার এক একটি সোল স্টিরিং দৃষ্টান্ত!

 নারী ও পুরুষের সুপয়ারিয়রিটির ডেফিনেশন পেনিস ও ভ্যাজাইনা দিয়ে নির্ধারণ করা যায় না, কারণ তারা ভিন্ন ভিন্ন সিলেকশন প্রেসারকে রেসপন্স করতে গিয়ে যার যার সেরা অস্ত্র নিয়েই সুসজ্জিত হয়েছে। এজন্যই সম্ভবত জি.ডি অ্যান্ডারসন বলেছিলেন, “Feminism isn’t about making women stronger. Women are already strong. It’s about changing the way the world perceives that strength”। নারী ও পুরুষ দুজন ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতিতে একই ইকুয়েশনই সমাধান করছে। কিছু কিছু গবেষণা দেখিয়েছে, পুরুষের চেয়ে নারীর ইমোশনাল ইন্টিলিজেন্স অনেক বেশি যা একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ।

বায়োলজিক্যাল ভিন্নতা যে কারও শ্রেষ্ঠত্ব ডিটারমাইন করে না, তার আর একটি উদাহরণ হলো অ্যাথলেটসদের বাস্তবতা। পুরুষের অধিক পেশির ভর ও উচ্চমাপের টেস্টোস্টেরন আছে বলে, এটি অটোম্যাটিক্যালি তাকে নারীর চেয়ে ভালো অ্যাথলেটস তৈরি করে না। জেনেটিক্যালি আইনস্টাইনের ভালো ব্রেন থাকলেও সে আইনস্টাইন হতে পারত না, যদি সে কুং সম্প্রদায়ের মাঝে বেড়ে উঠত কারণ তার মস্তিষ্কের কানেকশন তখন ভিন্ন কোনো অভিজ্ঞতাকে রিফ্লেক্ট করত। প্রকৃতপক্ষে, পৃথিবীতে অসংখ্য নারী খেলোয়াড় আছে, যারা মহান সফলতা অর্জন করেছিল এবং তাদের রেসপেক্টিভ স্পোর্টসে রেকর্ড ভেঙে দিয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ, সিমোন বাইলস, একজন নারী জিমন্যাস্ট ৩০ বার অলিম্পিক এবং ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ন মেডেল জিতেছিলেন, যেখানে  উসাইন বোল্ট একজন পুরুষ স্প্রিন্টার অলিম্পিক ও ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ মেডেল জিতেছিলেন ২৩ বার।

তাছাড়া, পুরুষ সহজাতভাবে আগ্রাসী ও সাংঘর্ষিক মনোভাবের অধিকারী, এটি সায়েন্টিফিক অ্যাভিডেন্স দ্বারা প্রমাণিত না। কারণ আমাদের পূর্বসূরী পুরুষরা শিকারী প্রাণীর উপস্থিতি অথবা দলের ভারসাম্য রক্ষার জন্য আগ্রাসী আচরণ করলেও সেটি পুরুষতান্ত্রিক উন্মাদনা রিপ্রেজেন্ট করে না। এখানে সবাই টিকে থাকার যুদ্ধ করছে, তাই আগ্রাসনের একটি নির্দিষ্ট প্রাকৃতিক সীমা থাকা চাই। এটা ঠিক যে, পুরুষ নারীর থেকে অধিক সংঘর্ষ ও ক্রাইম করে, এটি বিশাল পর্যায়ে সামাজিক একটি ফ্যাক্টর যেমন টক্সিক পুরুষতান্ত্রিক ও পিতৃতান্ত্রিক সামাজিক অবকাঠামো, যা ক্ষমতার জন্য আগ্রাসন প্রমোট করে। এর কারণ এই নয় যে, পুরুষ বায়োলজিক্যালি আগ্রাসনের জন্য পূর্ব-নির্ধারিত।


[1] ভগিনীরা! চুল রগড়াইয়া জাগিয়া উঠুন, অগ্রসর হউন! মাথা ঠুকিয়া বলো মা! আমরা পশু নই; বলো ভগিনী! আমরা আসবাব নই; বলো কন্যে আমরা জড়োয়া অলঙ্কাররূপে লোহার সিন্ধুকে আবদ্ধ থাকিবার বস্তু নই; সকলে সমস্বরে বলো আমরা মানুষ।

[2] সিঙ্গেল কোনো আর্ট জিন নেই, স্পেসিফিক মাল্টিপল কোনো আর্ট জিনও নেই, তবে ডোপামিন রিসেপ্টরের জিনের সাথে সৃষ্টিশীলতার সম্পর্ক আছে।