বৃত্ত
যেদিন প্রথম দেখা হয়েছিল, আমার বন্ধু প্রিজম প্রশ্ন করেছিল, আপনি কি পরকালে বিশ্বাস করেন? আমি তাকে বলেছিলাম, আমি পরকালে বিশ্বাস করি। আমার কথা শুনে সে যেন চন্দ্র থেকে পড়লো। কারণ সে বিশ্বাস করতে পারছিল না যে, একজন নাস্তিক পরকালে বিশ্বাস করতে পারে। সে আমাকে আবারও প্রশ্ন করেছিল, আপনি কী ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন? আমি তাকে বলেছিলাম যে, হ্যাঁ, আমি ঈশ্বরে বিশ্বাস করি। তবে সে ঈশ্বর অসীম কোনো সত্তা নয়, সে তিন ফুট উচ্চতাসম্পন্ন একটি জীব, অনেকটা মানুষের বিলুপ্ত প্রজাতি হোমো ফ্লোরেনসিয়েসিস। এভাবেই কথা শুরু হয়েছিল আমাদের।
সে হাসবে নাকি কাঁদবে সে ঠিক বুঝতে পারছিল না। তার চেহারা দেখে আমার মনে হয়েছিল, আমি তার সাথে ভয়ানক কোনো কৌতুক করছি। যাই হোক। আমি তাকে বললাম, মনে করুন, আপনার মৃত্যু হলো, আপনি এখন পরকালে। কিন্তু আপনি পরকালে গিয়ে দেখলেন ঈশ্বর মোটেও জ্ঞানী নয়, সে দেখতে ৩ ফুট ৬ ইঞ্চি আকারের একটি হবিটের মতোই ক্ষুদ্র, আনস্মার্ট ও আনইন্টিলিজেন্ট । এই নির্বোধ ঈশ্বর আপনার কথা কিছুই বুঝতে পারছে না, তাকে আপনার কথার মিনিং বোঝানোর জন্য বিভিন্ন ছবি এঁকে এঁকে দেখাতে হচ্ছে। মাঝে মাঝে, তারা আপনার কথা বুঝতে পেরেছে বলে মাথা নাড়ায়, কিন্তু আসলে তারা আলোচনার ট্র্যাক হারিয়ে ফেলেছে, তারা কনফিউজড। আপনি পরকালে চোখ খোলার পর দেখলেন, এ মানুষগুলো আপনার চারপাশে ছোটাছুটি করছে, তারা আপনাকে নিয়ে খুব উত্তেজিত। তারা আপনাকে কেবল একটাই প্রশ্ন করছে, তোমার কাছে কী এই প্রশ্নের উত্তর আছে? তোমার কাছে কী এই প্রশ্নের উত্তর আছে?
কিন্তু চিন্তা করবেন না, এই জীবগুলো খুবই ইনোসেন্ট ও ক্ষতিহীন। আপনি হয়তো প্রশ্ন করতে পারেন, কী হচ্ছে এসব আমার সাথে? কিন্তু তারা আপনার এক্সপ্রেসনের দিকে ধাঁধার মতো তাকিয়ে থাকবে কারণ তারা আপনার কথা কিছুই বোঝেনি। একটি কুকুর যেমন আইনস্টাইনের সমীকরণ বোঝে না, তার পক্ষেও আপনার কথা বোঝা সম্ভব হচ্ছে না। তারা কৌতুহলের সাথে প্রশ্ন করছে, তোমার কাছে কী এই প্রশ্নটির উত্তর আছে? বল, বল, আমাদের বুঝিয়ে বল। আপনি বিস্মিত হয়ে হয়তো প্রশ্ন করবেন, Where the heck I am ?
প্রিজম এতক্ষণ চুপচাপ শুনছিল, এবার সে সম্ভবত গল্পের মধ্যে ডুবে গেছে, সে আমার দিকে কৌতুহলী চোখে তাকিয়ে বলল, কিন্তু তিন ফুট ছয় ইঞ্চি উচ্চতাসম্পন্ন এই প্রাণীরা কীভাবে আমার ঈশ্বর হয়, আর তারা কেনই বা তাদের সৃষ্টির কাছে প্রশ্ন করবে? কীভাবে একজন ঈশ্বর তার সৃষ্টির চেয়ে নির্বোধ হতে পারে?
আমি বললাম, আপনি এখন কোথায় আছেন, আর কেন এখানে আছেন__ সেটা জানার জন্য আপনাকে কিছুক্ষণ ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক শুনতে হবে। আপনাকে এই ৩ ফুট ৬ ইঞ্চি উচ্চতাসম্পন্ন ঈশ্বরের সোসাইটি সম্পর্কে জানতে হবে। হবিটদের সামাজিক উন্নয়নের এক পর্যায়ে, তারা একটি প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছিল, আমরা কোথা থেকে এসেছি? আমাদের অস্তিত্বের উদ্দেশ্য কী? এটি ছিল খুবই কঠিন একটি প্রশ্ন। এ প্রশ্নটি তাদের কাছে এতটাই কঠিন ছিল যে, তারা এ প্রশ্নটিকে সরাসরি আক্রমণ করতে চায়নি। তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে, এ প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য, তারা একটি সুপারকম্পিউটিং মেশিন তৈরি করবে। আর এটি ইঞ্জিনিয়ার করার জন্য তারা দশ প্রজন্ম পর্যন্ত পরিশ্রম করেছিল। সেই সুপারকম্পিউটার ছিলাম আমরা।
প্রিজম বিস্মিত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে, সে আমাকে বলল, সাংঘাতিক! তার মানে আপনি বলতে চাইছেন, আমরা এই তিন ফুট উচ্চতাসম্পন্ন ঈশ্বরের তৈরি একটি সুপারকম্পিউটার, যাদের ঈশ্বর তৈরি করেছে তার নিজের অস্তিত্বের রহস্য জানার জন্য? কিন্তু প্রশ্ন হলো, কেন তারা আমার কথা বুঝতে পারছে না?
আমি মৃদু হেসে বললাম, অ্যাকসেক্টলি, এখানেই তো মূল সমস্যা। তারা এই মেশিনকে তাদের থেকেও স্মার্ট করতে চেয়েছিল। তারা এই মেশিনকে এত বেশি জটিল করে তুলেছিল যে, একটা সময় তারা মেশিনের ইন্টারনাল জটিলতা বোঝার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। তারা এখন নিজেরাই জানে না, এই মেশিন কোন পদ্ধতিতে কাজ করে। কিন্তু একদিন এই বিশ্বের মানুষগুলোর জীবনের সময় শেষ হয়। যখন তাদের জীবনের টাইম শেষ হয়, ঈশ্বর কম্পিউটার থেকে তাদের সফটওয়্যার বা চেতনা পরীক্ষা করার উদ্দেশ্যে ল্যাবরেটরিতে আপলোড করে।
প্রিজম আমার দিকে সাপের চোখে তাকিয়ে আছে। সে আমাকে বলল, তার মানে আপনি বলতে চাইছেন যে, আমি এ মুহূর্তে মরে গেছি, আমি আমার যে রূপ দেখছি, এটি একটি সফটওয়্যার, আমার ওপর এখন তারা এক্সপেরিমেন্ট করছে?
আমি বললাম, হ্যাঁ, যখন ল্যাবে আপনার সফটওয়্যার আপলোড করা হয়েছিল, ওমনি আপনি জেগে উঠলেন। এখন কী আপনি বুঝতে পেরেছেন, কেন আপনার চারপাশে এত হাজার হাজার মানুষের ভীড়?
প্রিজম বলল, না, আমি এখনো বুঝতে পারিনি।
আমি তাকে বললাম, তারা আসলে তাদের অস্তিত্বের সবচেয়ে বিগ কোয়েশ্চান জানার একটি পদ্ধতি হিসেবে আপনাকে তৈরি করেছে। আমরা মহাকাশে রিচ করার জন্য যেমন স্পেসশিপ তৈরি করি, তারা তাদের অস্তিত্বের অন্তিম প্রশ্নে পৌঁছানোর জন্য আমাদের তৈরি করেছে। কিন্তু আমাদের সৃষ্টি করার পর, আমরা একটি নিজস্ব বিশ্ব তৈরি করেছি, আমরা সমাজ, প্রযুক্তি এবং মেশিন তৈরি করেছি, যেগুলো এতটাই জটিল ছিল যে, তারা কোনোকিছুই বুঝতে পারছে না। তারা আপনাকে তৈরি করেছিল, তাদের অস্তিত্বের অন্তিম প্রশ্ন জানার জন্য, আর আপনি একটি কমপ্লেক্স সিভিলাইজেশন তৈরি করলেন, প্লেন, রকেট, স্পেসশিপ এবং বিশাল বিশাল শহর গড়ে তুলেলন। আপনি সৌরজগত দখল করার জন্য রোভার প্রেরণ করলেন। একটা সময় আপনি গ্যালাক্সিতে কলোনি বিস্তার করলেন। আপনি টাইপ-৫ সিভিলাইজেশনে পরিণত হলেন, যারা মহাবিশ্বের মিলিয়ন মিলিয়ন গ্রহ-নক্ষত্রের সাথে কমিউনিকেশন করতে পারে, যারা প্রাইম ল্যাঙ্গুয়েজের মাধ্যমে মহাবিশ্বের এক গ্রহ থেকে অন্য গ্রহে সংকেত পাঠায় এবং ব্লাকহোল থেকে শক্তি সংগ্রহ করে। কিন্তু আপনি এতদিন জানতেন না যে, আপনি একটি সুপারকম্পিউটার।
আপনাকে তৈরি করেছে ৩ ফুট আকারের একটি নিরীহ সত্তা, যে আপনার ঈশ্বর। সে আপনার কাছে একটি প্রশ্ন করেছিল, কিন্তু আপনি এতটাই জটিল একটি সত্তায় পরিণত হলেন, তারা আপনাকে দেখে কনফিউজড, আপনি কেন সৌরজগতের এক গ্রহ থেকে আর এক গ্রহে ছোটাছুটি করছেন, সেটা তারা সেন্স করতে পারছে না, তারা ভাবছে যে এভাবে ছোটাছুটি করে আপনি তাদের প্রশ্নের উত্তর বোঝানোর চেষ্টা করছেন , তারা আপনার আচরণকে জটিল কোডিং হিসেবে দেখছে। তারা ভাবছে, আপনি বিশাল বিশাল স্পেস স্ট্যাশন ও স্যাটেলাইট তৈরি করে, তাদের প্রশ্নের উত্তর দেয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু তারা কিছুতেই তাদের প্রশ্নের সাথে এই উত্তরগুলো রিলেট করতে পারছিল না।
প্রিজম আমার দিকে খুব গভীর চোখে তাকিয়ে আছে, সে বলল, লিহন, আমার প্রচণ্ড মাথা ঝিমঝিম করছে। তার মানে ঈশ্বর আমাদের সিভিলাইজেশনকে তার প্রশ্নের উত্তর ভেবে কনফিউজড? আমি মাস্টারবেট করছি, আর সেই বুদ্ধিহীন ৩ ফুট লম্বা জীব মনে করছে, এটা আমার কোনো কোডিং, যার মাধ্যমে আমি বোঝানোর চেষ্টা করছি, তাদের অস্তিত্বের উদ্দেশ্য কী? কারণ তারা এতটাই মূর্খ যে, তারা বুঝতেই পারছে না, কেন আমাদের এত এত পারমাণবিক বোমা ও স্পেসশিপ?
আমি প্রিজমকে বলেছিলাম, ইয়েস! একটা মাকড়সাকে রবীন্দ্রনাথের গান শোনালে যেমন সে এটাকে তার মতো করে ব্যাখ্যা করবে, তেমনি তিন ফুট লম্বা এই ঈশ্বর আমাদের এত জটিল করে তৈরি করেছে যে, সে এখন নিজেই বুঝতে পারছে না, আমরা আসলে কী করছি? আমাদের সকল আচার আচরণ থেকে সে অর্থ বের করার চেষ্টা করছে কারণ তার তো উদ্দেশ্য ছিল, আমাদের মাধ্যমে তার অস্তিত্বের উদ্দেশ্য জানা।
যাই হোক, আপনি তাদের অনেক বোঝানোর চেষ্টা করলেন যে, আমরা নিজেরাই আবার মেশিন তৈরি করেছি, আমাদের অস্তিত্বের রহস্য সমাধান করার জন্য, আমরা তোমার অস্তিত্বের রহস্য সমাধান করছি না। কিন্তু তারা আপনার কোনো শব্দই বুঝতে পারছে না, ঠিক যেমনি একটি ভাইরাসকে কম্পিউটারের কোড বোঝানো সম্ভব না। তারা আমাদের মেশিনগুলো দেখেও কিছু রিয়ালাইজ করতে পারছে না।
যেই সিভিলাইজেশন সুপার কম্পিউটার তৈরি করেছিল, তার অস্তিত্বের উদ্দেশ্য জানার জন্য, তারই তৈরি সুপারকম্পিউটার হয়ে আপনি অজস্র মেশিন তৈরি করলেন, আপনার নিজের অস্তিত্বের রহস্য জানার জন্য। একটি পারফেক্ট বৃত্ত।
স্কেল
এমন একটি সময় ছিল যখন আমরা ঈশ্বর থেকে বিচ্ছিন্ন বলে দুশ্চিন্তা করেছিলাম। যাই হোক, আমাদের এই আতঙ্ক দূর হয়েছিল, যখন প্রফেট আমাদের কাছে একটি নতুন দৃষ্টিকোণ উপস্থাপন করেন যে আমরা ঈশ্বরের এক একটি অর্গ্যান। আমরা ঈশ্বরের হাত ও চোখ। ঈশ্বর মহাবিশ্বকে এক্সপ্লোর করছেন, আমরা হলাম মহাবিশ্বকে এক্সপ্লোর করার এক একটি উপায়। এই অনুভূতি আমাদের স্বস্তি প্রদান করেছিল, এটি আমাদের একটি গভীর সংযোগ প্রদান করেছিল__ অপরিহার্যভাবে, আমরা সবাই গড বায়োলজির অংশ। কিন্তু একটা সময় আমরা এটা পরিস্কার হয়েছিলাম যে, আমরা ঈশ্বরের সেন্সরি অর্গ্যান থেকেও ক্ষুদ্র, আমরা তার হাত বা পায়ের মতো বিশাল কোনো অর্গ্যান নয়, আমরা বিগ স্কেল থেকে তার সাথে কন্ট্যাক্ট করতে পারি না এবং আমরা তার দেহের ইন্টারনাল অর্গ্যান।
আস্তিক ও নাস্তিক দুজনই সম্মত হয়েছিল যে, আমরা আছি বলেই ঈশ্বর অস্তিত্বশীল। আমরা যদি তাকে প্রত্যাখ্যান করি, ঈশ্বর মারা যাবে।
আমরা নিজেদের ঈশ্বরের দেহের একটি কোষ বা বিল্ডিং ব্লক ভেবে সম্মানবোধ করছি কিন্তু একটা সময় আমরা আবিষ্কার করি, আমরা ঈশ্বরের দেহের ভালো কোনো সেল নয়, আমরা ঈশ্বরের ক্যান্সার কোষ।
আমরা বুঝতে পারি যে ঈশ্বর আমাদের ওপর কন্ট্রোল হারিয়েছেন!!
আমরা নিজেদের অনুলিপি তৈরি করছি এবং জ্যামিতিক হারে সংখ্যা বৃদ্ধি করছি। আমরা ঈশ্বরের বায়োলজিক্যাল এনভায়রমেন্ট থেকে কোনো সিগন্যালই গ্রহণ করছি না।
ক্যান্সার কোষের একটি মূল বৈশিষ্ট্যই হলো, এটি মৃত্যুর বিপক্ষে রেজিস্টেন্স। একটি সাধারণ কোষ ক্ষয় অথবা ডিসফাংশন হয়। ক্যান্সার কোষ এ প্রক্রিয়া লঙ্গন করে। তারা সে সিগন্যাল অমান্য করে, যা তাদের বলে মৃত্যু বরণ কর। তাদের ডিএনএ রিপেয়ার মেকানিজমও আছে, যার অনুপস্থিতি সাধারণত কোষের মৃত্যু ট্রিগার করে।
ঈশ্বর এবং তার ডাক্তার অনেক চেষ্টা করলেন, আমাদের থামোনোর জন্য কিন্তু তিনি আমাদের প্রতিহত করতে ব্যর্থ হয়, আমরা তার দেহের টিউমারে পরিণত হই এবং তার রক্তপ্রবাহে গোলযোগ তৈরি করি। ঈশ্বরের নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। তিনি খুবই ক্লান্ত।আমরা খুবই শক্তিশালী। যখন আমাদের ওপর ঝড়, ভূমিকম্প এবং রোগ এসে উপস্থিত হয়, আমরা কিছুতেই হাল ছেড়ে দেই না। আমরা বিক্ষিপ্ত হই, আবার দলবদ্ধ হই এবং আমাদের কৌশল উন্নত করি। আমরা রেজিস্টেন্স তৈরি করি এবং আমাদের সংখ্যা বৃদ্ধি করতেই থাকি।
একদিন তিনি একটি সবুজ অ্যান্টিসেপটিক করিডরে শান্তিতে শুয়ে থাকেন। তিনি ভাবতে থাকেন, আমাদের কোনো উদ্দেশ্য আছে কি না। তার ভালোবাসার সৃষ্টি কী তাকে এক্সপ্লোর করছে? তার ধমনী এবং শিরার ভেতর মেটাস্টেসিস প্রক্রিয়ায় টিউমার ছড়িয়ে, তারা কী কোনো বিগ এক্সপেরিমেন্ট পরিচালনা করছে?
ঈশ্বর কিছুতেই বুঝতে পারছিলেন না যে, আমাদের এই ভ্রমণ মোটেও নিষ্পাপ নয়, তার এই সৃষ্টি জানেও না যে, তারা কেন এমন করছে!
যদিও তিনি আমাদের থামাতে অথবা আঘাত করতে পারছেন না। তিনি আমাদের পর্যবেক্ষণ করে দেখেন, আমরাও মাইক্রোস্কোপিক স্কেলে হেলথ ক্রায়সিস ফেস করছি। আমরা লিউকেমিয়াস, লিম্ফোমাস, সারকোমাস এবং মেলানোমাসের মতো অসংখ্য কন্ডিশন ফেস করছি। আমরা কেমোথেরাপি ও রেডিয়েশন থেরাপির মাধ্যমে আমাদের চিকিৎসা করছি।
তিনি দেখতে পান, মানুষ তার দেহের অসংখ্য কোষের ওপর আক্রমণ করছে, যে কোষগুলো তার নিজের দেহ তৈরি করেছে।
সেদিন বিছানায় শুয়ে থাকা অবস্থায় ঈশ্বরের মস্তিষ্কে একটি বিপ্লব সৃষ্টি হয়, তিনি একটি মহাজাগতিক সত্য অনুধাবন করতে পারেন: এ মহাবিশ্বে যা কিছু ক্ষুদ্রতর স্কেল থেকে গঠিত হয়, সবকিছু একই স্কেল থেকে ধ্বংস হয়ে যায়!
ঈশ্বর
শেষ বিচার বা আল্টিম্যাটামের গল্প আপনারা সবাই জানেন। গড একটি বিশাল কসমিক মাঠে একে একে পৃথিবীর সকল মানুষের বিচার করবেন। এক এক জনের বিচার প্রক্রিয়া শেষ করতে করতেই ৭০ হাজার বছর কেটে যাবে। প্রশ্ন হলো, এ বিচার প্রক্রিয়ায় কী কেবল মানুষই অন্তর্ভুক্ত থাকবে? যদি অস্ট্রোলোপিথিকাস থেকে শুরু করে হোমোসেপিয়েন্স পর্যন্ত সকল মানুষের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়, তাহলে ঈশ্বরের ভাগ্যে কী ঘটবে? মনে করুন, অস্ট্রোলোপিথ থেকে এ পর্যন্ত আনুমানিক দুই ট্রিলিয়ন মানুষ জন্ম নিয়েছিল।
দুই ট্রিলিয়ন মানুষের বিচার প্রক্রিয়া শেষ করতে ঈশ্বরের ১৪০ কোয়াড্রিলিয়ন বছর সময় লাগবে। এ সময়ের ভেতর মানুষ ও অন্যান্য প্রাইমেটরা প্রেম করবে এবং নতুন করে সন্তান জন্ম দেবে। কল্পনা করুন, তারা প্রতি বছর মাত্র একটি করে সন্তান জন্ম দিল। তাহলে ১৪০ কোয়াড্রিলিয়ন বছরে, আরও ১৪০ কোয়াড্রিলিয়ন সন্তান জন্ম হবে। তাদের বিচার কখন হবে? ঈশ্বর তো একটি ইনফিনিট লুপে আটকে যাবে, তাই নয় কী? এখন ঈশ্বরকে কে উদ্ধার করবে?
যাই হোক, ঈশ্বর তার আদরের সন্তানদের ভালো ও মন্দ ক্যালকুলেট করতে গিয়ে আরও একটি প্যারাডক্সের সম্মুখীন হলেন, তিনি দেখলেন একজন ব্যক্তির একটি কাজ একইসাথে ভালো ও মন্দ দুটোই হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, সাইট্রাস সাইলিড নামক একটি পতঙ্গ আছে, এটি একটি লেবু গাছে বাস করে। যখন কোনো একটি শিকারী পাখি তাকে খেতে আসে, সে গাছের ঘ্রাণ মিমিক করে শিকারকে বিভ্রান্ত করে। শিকারি পাখি পতঙ্গটিকে গাছের শরীর ভেবে বিভ্রান্ত হয় এবং আর এভাবে সাইলিড শিকারি পাখির পেট থেকে নিজেকে উদ্ধার করে।
সে যদি পাখির সাথে প্রতারণা না করত, তাহলে তাকে পাখিটি খেয়ে ফেলত। আর পাখিটি যদি তাকে খেয়ে ফেলত, তার নিজের ও নিজের সন্তানের জীবন নষ্ট হয়ে যেত। আবার অন্যদিকে সাইলিডের এই ক্রমাগত প্রতারণার কারণে আজ সেই এলাকার বেশিরভাগ শিকারী পাখি বিলুপ্তির পথে। প্রশ্ন হলো, এখানে কে ভালো আর কে মন্দ? ঈশ্বর আবিষ্কার করলেন, একজন মানুষ মাল্টিডায়মেনশনাল। তিনি মানুষকে তৈরি করেছিল বাইনারী ক্যাটাগরিতে, কিন্তু এখন তিনি বিচার করতে গিয়ে একটি ট্র্যাপের মধ্যে আটকে গেলেন। মানুষের ভালো-মন্দের জাজমেন্ট করার জন্য ঈশ্বর অবশেষে একটি সুপারকম্পিউটার তৈরি করলেন এবং সুপার কম্পিউটারকে অজস্র ফ্যাক্টর দিয়ে একটি ফর্মুলা ফিড করলেন। তিনি সুপার কম্পিউটারে একটি বিশাল সিমুলেশন রান করলেন। কিন্তু সুপার কম্পিউটার তাকে, অসীম সংখ্যক ডিসিশন প্রদান করল! ঈশ্বর খুবই সেনসেটিভ হয়ে উঠলেন!
সর্বশেষ তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, ভালো ও মন্দের কোনো অস্তিত্ব নেই। আমার সকল ক্রিয়েচার সমান। আর তাই তিনি আস্তিক, নাস্তিক, জ্ঞানী ও মূর্খ নির্বিশেষে সকল মানুষকে স্বর্গ প্রদান করলেন, এটি ছিল এমন এক স্বর্গ, যেখানে সকল মানুষই অসীম পরিমাণ স্বাধীনতার অধিকারী। এখানে একজন জ্ঞানীর জন্য যেমন অসীম স্বাধীনতা, একজন মূর্খের জন্যেও অসীম স্বাধীনতা, সকলের জন্যই ঈশ্বর অনন্ত কোটি অসীম উপহার দিলেন। হিলবার্টের ইনফিনিটি হোটেলের মতোই, এখানে স্বাধীনতার কোনো শেষ নেই।
কিন্তু কমিউনিস্টরা ঈশ্বরের প্রতি খুবই রাগান্বিত, তাদের মন অশান্ত । তারা এতদিন যে ইউটোপিয়ার স্বপ্ন দেখেছিল, সেটি শেষ পর্যন্ত ঈশ্বরের সহযোগিতায় বাস্তবায়িত হলো, এটা তারা মেনে নিতে পারছে না! তারা খুবই অসম্মানবোধ করছে কারণ যে ঈশ্বরকে তারা কোনোদিনও বিশ্বাস করত না, সে ঈশ্বরের হস্তক্ষেপেই তাদের কাল্পনিক স্বর্গ অর্জিত হয়েছে। তাই তাদের খুব মন খারাপ!
আইনস্টাইন ও নিউটনের (প্রতিভাবান) ভীষণ মন খারাপ, কারণ ঐশ্বরিক নোবেল কমিউনিটি থেকে তাদের কোনো নোবেল প্রাইজ দেয়া হয় না এখানে। একজন চোর ছেঁচরার জন্য যে অনন্ত অসীম, একজন আইনস্টাইন ও নিউটনের জন্যেও একই অনন্ত অসীম। যে জীবনে কোনো নোবেল প্রাইজ নেই, যে সমাজে তাদের প্রতিভার কোনো স্পেশালিটি নেই, সেখানে প্রতিভাবান হয়ে আর কী লাভ? আইনস্টাইন ও নিউটন ঈশ্বরের কাছে সুইসাইড করার জন্য আবেদন পত্র লিখে পাঠালেন। কিন্তু স্বর্গে কারও মৃত্যু নেই, তাই তারা শান্তি মতো মরতেও পারছে না!!
রিচার্ড ফাইনম্যান ও ডারউইন অনেকবার পটাশিয়াম সায়ানাইড খেয়েছিল কিন্তু কোনোকিছুতেই কোনো কাজ হয় না। তারা মৃত্যুর জন্য জটিল জটিল ইকুয়েশন আবিষ্কার করছে। তাদের সবার খুব খুব মন খারাপ। এদিকে আস্তিকরা ইট-পাটকেল নিয়ে ঈশ্বরকে তাড়া করতে শুরু করেছে। বাংলাদেশের দেলোয়ার হোসেন সাঈদিকে দেখেছিলাম, এরকম একটি বিশাল দলের লিডার। নাস্তিকদের স্বর্গ উপহার দেয়ায় তারা কসমিক মাঠে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলেছে। তিনি চিৎকার দিয়ে বলছিলেন, ঐ ধর! ধর! ধর! সালার ব্যাটারে! স্বর্গ নরকে পরিণত হয়! মহান ঈশ্বর তার জিলিয়ন জিলিয়ন বছর বয়সী থ্রোন ( আরশ) ভেঙে হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে পালিয়ে যান।