Can't find our books? Click here!

বিজ্ঞানের কোন থিওরিতে ঈশ্বর আছে?

বিজ্ঞানের কোনো থিওরিতেই ঈশ্বর নেই! মহাবিশ্বের উৎপত্তি ব্যাখ্যায় স্ট্রিং থিওরি ছাড়াও, অন্য যে সকল তত্ত্ব প্রচলিত সেগুলোর কোনোটিতেই আমরা ঈশ্বরকে দেখতে পাইনি:

স্টিডি স্টেট থিওরি: এ থিওরি আমাদের নির্দেশনা দেয় যে, মহাবিশ্বের কোনো শুরু অথবা শেষ নেই, এটি চিরকাল বিদ্যমান। এ থিওরি অনুসারে, মহাবিশ্ব নিরবচ্ছিন্নভাবে সম্প্রসারিত হচ্ছে। আর এজন্য মহাবিশ্বের কোনো সৃষ্টিকর্তা প্রয়োজন নেই কারণ এটি সবসময় বিদ্যমান।

ইটারনাল ইনফ্ল্যাশন থিওরি: এ থিওরি নির্দেশ দেয়, মহাবিশ্ব অস্তিত্বশীল ছিল এবং এটা চিরকাল অস্তিত্বশীল। এ তত্ত্ব অনুসারে, মহাবিশ্ব নিরবচ্ছিন্নভাবে ইনফ্ল্যাট বা স্ফিত হচ্ছে এবং ইনফ্ল্যাটিং স্পেস থেকে নতুন থিওরি তৈরি হচ্ছে। আর এজন্য মহাবিশ্বের কোনো শুরু অথবা শেষ নেই এবং তার কোনো ঈশ্বরও নেই।

মাল্টিভার্স থিওরি: এ তত্ত্ব আমাদের নির্দেশনা দেয়, অজস্র মহাবিশ্বের মধ্যে আমাদের মহাবিশ্ব একটি। নতুন নতুন মহাবিশ্ব নিরবচ্ছিন্নভাবে তৈরি হচ্ছে, এ সকল মহাবিশ্ব আমাদের মহাবিশ্ব পরিচালনাকারী নিয়ম থেকে স্বতন্ত্র। আর তাই মহাবিশ্বের কোনো শুরু অথবা শেষ নেই এবং তার কোনো ঈশ্বরও নেই।

দ্য সাইকেলিক মডেল: এ থিওরি নির্দেশ করছে, মহাবিশ্ব সংকোচন ও সম্প্রসারণের একটি চক্রের ভেতর দিয়ে যায়, প্রতিটি চক্র ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন বছর স্থিতিশীল থাকে। এ থিওরি অনুসারে, মহাবিশ্ব অসীম সংখ্যক চক্রের ভেতর অস্তিত্বশীল। আর তাই মহাবিশ্বের শুরু অথবা শেষ নেই, আর নেই কোনো ঈশ্বর।

কোয়ান্টাম গ্র্যাভিটি থিওরি: এ থিওরি নির্দেশনা দেয় যে, মহাবিশ্ব অসীম পরিমাণ সময় বিদ্যমান ছিল কারণ মহাবিস্ফোরণের পূর্বে কোনো সময় ছিল না। এ তত্ত্ব অনুসারে, মহাবিশ্ব সমসময় কোয়ান্টাম দশায় ছিল এবং এটি তখনই অস্তিত্বে এসেছিল, যখন সঠিক সময় উপস্থিত হয়েছিল। আর তাই মহাবিশ্বের কোনো শুরু অথবা শেষ নেই, তার নেই কোনো ঈশ্বর।

কিন্তু  দুঃখ্যজনক ব্যাপার হলো,কোনো থিওরিই সুনির্দিষ্টভাবে মহাবিশ্বের উদ্ভব ব্যাখ্যা করতে পারেনি। মহাবিস্ফোরণ তত্ত্ব বর্তমানে সুবিস্তৃতভাবে গ্রহণযোগ্য একটি তত্ত্ব। এটি বিপুল পরিমাণ পর্যবেক্ষিত ডেটা দ্বারা সমর্থিত এবং এটি যথাযথভাবে বৈচিত্র্যময় প্রপঞ্চ পূর্বাভাস করতে পারে যেমন কসমিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ড রেডিয়েশন।

কিন্তু  মহাবিস্ফোরণ তত্ত্বের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। এটি আমাদের উত্তর দিতে পারেনি, মহাবিস্ফোরণ কেন ট্রিগার হয়েছিল এবং কী ছিল মহাবিস্ফোরণের পূর্বে। অন্যান্য থিওরি যেমন স্টিডি স্টেট থিওরি ও সাইকেলিক মডেল অতীতে প্রস্তাব করা হলেও, সেগুলো পরীক্ষামূলক প্রমাণের অভাব ও স্ববিরোধের কারণে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। বর্তমানে আমাদের কাছে আছে, স্ট্রিং থিওরি ও কোয়ান্টাম গ্র্যাভিটি থিওরি। সম্ভবত, এ দুটি তত্ত্বই ঈশ্বরহীন মহাবিশ্বের গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা।

কোয়ান্টাম গ্র্যাভিটি থিওরি

কোয়ান্টাম মেকানিক্স অনুসারে, পর্যবেক্ষণের পূর্বে পার্টিকেলদের ডেফিনিট কোনো বৈশিষ্ট্য নেই। পর্যবেক্ষণ ক্রিয়া ওয়েভ ফাংশন কলাপ্স করে, যেটি পার্টিকেলদের প্রপার্টি ডিটারমাইন করে। একইভাবে, আমাদের আদিম মহাবিশ্বে, পরিস্থিতি এমন ছিল যে, সবকিছু সুপারপজিশনে ছিল। সময়ের সাথে মহাবিশ্ব সম্প্রসারিত ও শান্ত হয়। পরিস্থিতি কণা ও ক্লাসিক্যাল ফিজিক্স গঠনের জন্য উপযোগী হয়ে ওঠে, যেখানে এটি অধিক স্থিতিশীল ও সুনির্ধারিত হয়ে যায়, কোয়ান্টাম ইফেক্ট অস্পষ্ট হয়ে যায়।

সংক্ষেপে বলতে গেলে, কোয়ান্টাম মাধ্যাকর্ষ সবসময় সুপারপজিশন দশায় ছিল, যার অর্থ হলো, এর সুনির্দিষ্ট কোনো শুরু অথবা শেষ ছিল না। মহাবিশ্ব কেবল তখনই অস্তিত্বে এসেছিল, যখন পরিস্থিতি ছিল সঠিক এবং এখানে এটাকে অস্তিত্বে নিয়ে আসার জন্য কোনো ক্রিয়েটর প্রয়োজন নেই।

কিন্তু পর্যবেক্ষক ছাড়া কীভাবে সুপারপজিশন কলাপ্স করেছিল?


কোয়ান্টাম গ্র্যাভিটি থিওরি আমাদের নির্দেশনা দেয় যে, মহাবিশ্ব সবসময় কোয়ান্টাম স্টেটে ছিল, যার অর্থ হলো, এটি সবসময় সুপারপজিশনে ছিল, যেখানে সকল সম্ভাব্য দশা একইসাথে ও একইসময় অবস্থান করেছিল। এ থিওরি অনুসারে, মহাবিশ্বের স্পেসিফিক কোনো শুরু নেই, আর তাই এর কোনো সৃষ্টির মুহূর্তও নেই। এ নীতিমালা অনুসারে, পর্যবেক্ষণ ওয়েভ ফাংশন কলাপ্স করে, যেটি পার্টিকেলের বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ করে। একইভাবে, আমাদের আদিম মহাবিশ্বে পরিস্থিতি এমন ছিল যে, কোনো সুনির্দিষ্ট দশাই ছিল না, এবং সবকিছু সুপারপজিশন দশায় ছিল। মহাবিশ্ব যখন শীতল হয়, পরিস্থিতি পার্টিকেল ও ক্লাসিক্যাল ফিজিক্সের জন্য উপযোগী হয়ে ওঠে। এ বিন্দুতে এসে, মহাবিশ্ব ডিকোহারেন্স দশায় প্রবেশ করে, যেখানে এটি অধিক স্থিতিশীল ও সুনির্ধারিত হয়ে ওঠে এবং কোয়ান্টাম ইফেক্ট অস্পষ্ট হয়ে যায়।

কোয়ান্টাম গ্র্যাভিটি একটি সক্রিয় গবেষণা, এটি এখনো মহাবিশ্বের উৎপত্তির সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা হিসেবে সুবিস্তৃতভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। যাইহোক, কয়েকজন প্রখ্যাত বিজ্ঞানী আছেন, যারা এ থিওরিটি সমর্থন করেছিলেন। স্টিফেন হকিং, কার্লো রোভেলি এবং লি স্মোলিন ছিলেন এ সকল বিজ্ঞানীদের মধ্যে অন্যতম। স্টিফেন হকিং ছিলেন শুরুহীন মহাবিশ্বের একজন শক্ত সমর্থক। তার মতে, সময় বলতে আমরা যা বুঝি, তা মহাবিস্ফোরণের পূর্বে অস্তিত্বশীল ছিল না।

তিনি দাবি করেছিলেন, মহাবিশ্ব যদি সবসময় কোয়ান্টাম দশায় থাকে, তবে শুরুর ধারণা মিনিংলেস। অন্যদিকে কার্লো রোভেলি, যিনি কোয়ান্টাম লুপ থিওরির প্রস্তাবক, তিনি প্রস্তাব করেন, কোয়ান্টাম লেভেলে স্থান-কাল মহাবিশ্বের একটি এমার্জেন্ট প্রপার্টি। এ থিওরি অনুসারে, মহাবিশ্বের শুরু অথবা শেষ নেই, এটি সবসময় সুপারপজিশনে ছিল। লি স্মোলিন ছিলেন আর একজন তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী, যিনি লুপ কোয়ান্টাম বিশ্বতত্ত্ব দাবি করেছিলেন, যেটি নির্দেশনা দেয় যে, মহাবিশ্ব অসীম পরিমাণ সময় অস্তিত্বশীল ছিল, যেটি সংকোচন ও সম্প্রসারণের একটি চক্রের ভেতর দিয়ে নিজেকে পুনরাবৃত্তি করেছিল।

এখন প্রশ্ন হলো, কোয়ান্টাম লুপ গ্র্যাভিটি স্থান-কাল সম্পর্কে কী বলে? এ থিওরি অনুসারে, স্থান-কাল হলো মহাবিশ্বের এমার্জেন্ট প্রপার্টি। লুপ কোয়ান্টাম গ্র্যাভিটি তত্ত্বের সাথে স্ট্রিং থিওরির পার্থক্য আছে। এই থিওরি অনুসারে, স্থান-কাল কোয়ান্টাইজড, এটাকে বিক্ষিপ্ত ইউনিট অথবা পরমাণুর টার্ম থেকে আলোচনা করা যায়। লুপ কোয়ান্টাম গ্র্যাভিটি অনুসারে, স্থান-কাল তার পূর্বে বিদ্যমান কোনোকিছু থেকে নির্গত হয়নি। এটি আমাদের বলে, স্থান-কালের পরমাণু মৌলিক, আর  এগুলো সৃষ্টির শুরু থেকেই কোয়ান্টাইজড।

অন্যদিকে স্ট্রিং থিওরিতে স্থান-কালকে মৌলিক বলা হয়নি, কিন্তু  স্থান-কাল স্ট্রিং-এর কম্পন থেকে নির্গত হয়েছিল। স্ট্রিং থিওরি অনুসারে, মহাবিশ্বের মৌলিক ধ্রুবক হলো, একমাত্রিক স্ট্রিং। স্ট্রিং এর ভিন্ন ভিন্ন ভাইব্রেশনাল প্যাটার্ন থেকে স্পেস-টাইমের ভিন্ন ভিন্ন কণা ও বৈশিষ্ট্য তৈরি হয়। এ সেন্স থেকে, স্পেস টাইম নির্গত হয়েছে, স্ট্রিং-এর কম্পন থেকে। লুপ কোয়ান্টাম গ্র্যাভিটির সাথে স্ট্রিং থিওরির পার্থক্যই হলো,  লুপ থিওরি স্থান-কালের কোয়ান্টাইজেশনের দিকে মনোযোগ দেয়, আর অন্যদিকে স্ট্রিং থিওরির মনোযোগ মৌলিক সত্তা হিসেবে স্ট্রিং ও ভাইব্রেশনের দিকে।

যাইহোক, কার্লোর থিওরি অনুসারে, স্থান-কাল সৃষ্টির শুরু থেকেই কোয়ান্টাইজড আর তাই এর কোনো শুরু অথবা শেষ নেই এবং এটি সুপারপজিশনে অবস্থান করে। কার্লো রোভেলির লুপ থিওরি অনুসারে, স্পেস-টাইম মহাবিশ্বের ফান্ডামেন্টাল বিল্ডিং ব্লক নয়, কিন্তু এটি কোয়ান্টাম লেভেলে অতি-পারমাণবিক কণিকাদের মিথস্ক্রিয়া থেকে তৈরি হয়। এ থিওরি অনুসারে, স্থান কোনো নিরবচ্ছিন্ন কিছু নয়, কিন্তু  এটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ইউনিট অথবা লুপ দিয়ে তৈরি, যা একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করে। এ থিওরি অনুসারে, মহাবিশ্বের ডেফিনিট কোনো শুরু নেই এবং সময় কোনো পরম ধ্রুবক নয়, কিন্তু  এটি রিল্যাটিভ যা পার্টিকেলদের ইন্টারেকশন থেকে নির্গত হয়। মহাবিশ্ব সুপারপজিশন দশায় অবস্থান করে, যেখানে সম্ভাব্য সকল দশা একইসাথে ও একইসময় অবস্থান করে পর্যবেক্ষণ অথবা পরিমাপের পূর্বে, এবং একটা নির্দিষ্ট পর্যায়ে ওয়েভ ফাংশন কলাপ্স হয় এবং পদ্ধতির সুনির্দিষ্ট নির্ধারণ করে।

লুপ কোয়ান্টাম গ্র্যাভিটি তত্ত্ব ব্ল্যাকহোল গঠনের একটি পদ্ধতি প্রস্তাব করে, যেটাকে মহাবিশ্বের সবচেয়ে চূড়ান্ত বস্তু মনে করা হয়। এ থিওরি অনুসারে, ব্ল্যাকহোল তখনই গঠিত হয়, যখন বস্তু অসীম ঘনত্বে কলাপ্স করে, কিন্তু  সিঙ্গুলারিটির পরিবর্তে, বস্তু “কোয়ান্টাম বাউন্স” তৈরি করে, যা একটি নতুন মহাবিশ্ব জন্ম দেয়।

রেফারেন্স:

আরও পড়ুন: